শিন্ডলার্স লিস্ট: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ও অন্যান্য সংশোধন
Prodeep Roy (আলোচনা | অবদান)
→‎কাহিনী সংক্ষেপ: তথ্যসূত্র, পরিষ্কারকরণ, অনুবাদ
৩৭ নং লাইন:
 
== কাহিনী সংক্ষেপ ==
১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বর। জার্মান বাহিনীর কাছে মাত্র দুই সপ্তাহের যুদ্ধে পোলিশ বাহিনী পরাজিত। জার্মান বাহিনীর দখলে চলে যায় [[পোল্যান্ড]]। [[নাৎসি পার্টি]]<nowiki/>র নির্দেশে সারা দেশ থেকে দলে দলে ইহুদিরা জড়ো হতে থাকে 'ক্রাকোউ' শরণার্থী শিবিরে। এরই মাঝে আগমন ঘটে অস্কার শিন্ডলার্সের। সুদর্শন এই মানুষটি জাতে জার্মান ব্যবসায়ী, নাৎসি পার্টির সমর্থক। পোল্যান্ডে তার আগমন নিজের ভাগ্যের চাকা সচল করতে। গোপনে সে যোগাযোগ করতে থাকে [[ইহুদি|ইহুদী]] ব্যাবসায়ীদের সাথে। মূল লক্ষ্য তাদের কাছে থেকে মূলধন সংগ্রহ করে ব্যবসার সূচনা। তাকে সাহায্য করার জন্য নিযুক্ত করেন ইহুদি ব্যাংকার ইটঝ্যাক স্টার্নের। শুরু হয় তাদের ব্যবসা। শিন্ডলার সেনাবাহিনীর জন্য কুকারিজ তৈরী করে। শ্রমিক হিসাবে যোগ দিতে থাকে শরনার্থীর বাসিন্দারা। স্টার্ন শরণার্থীদের মাঝে থেকে সংগ্রহ করতে থাকে। আবির্ভাব ঘটে নাৎসি বাহিনীর সেনা অফিসার অ্যামন গোথের। ইহুদিদের উপর অত্যাচারে সে কুখ্যাত। ইহুদি হত্যা করে সে এক ধরণের দানবীয় আনন্দ অনুভব করত। নির্বিচারে হত্যায় সে মেতে ওঠে। এদিকে শিন্ডলারের শ্রমিকদের অনেকেই মারা মরতে থাকে গোথের হাতে।&nbsp;
 
১৯৩৯ সালে জার্মান নাৎসি বাহিনী দুই সপ্তাহে পোলিশ বাহিনীকে পরাজিত করে পোল্যান্ড দখলের মধ্যদিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়। সিনেমাটির গল্প শুরু হয়েছে জার্মানির পোল্যান্ড দখলের শুরুর দিনগুলোর ঘটনা নিয়ে।
একজন জার্মান হয়েও এই হত্যাযজ্ঞ তার কাছে চরম অবিচার মনে হয়। সে গোথের সাথে বন্ধুত্বের শুরু করে তার শ্রমিকদের রক্ষা করতে। গোথ কিছু ঘুষের বিনিময়ে রাজি হয়ে যায়। কিছুদিন পর পর নাৎসি বাহিনীর ট্রেন আসে ক্রাকোউ-তে। তারা নিয়ে যায় সুস্থ-স্বাভাবিক ইহুদিদের গোপন কোনো জায়গা বা গ্যাস চেম্বারে হত্যা করার জন্য। হাজার হাজার মানুষ হত্যা করে পুড়িয়ে ফেলা হয়। শিন্ডলারের মনে গভীর ছাপ ফেলে যায় এইসব ঘটনায়। এই মানষগুলোকে রক্ষায় সে এক কৌশল বের করে। সে তার শ্রমিকদের নিয়ে নিজ শহরে চলে যেতে চায়। কিন্তু গোথ তাতে রাজি নয়। অবশেষে প্রচুর টাকার বিনিময়ে গোথ রাজি হয়। শুরু হয় শিন্ডলারের লিস্ট তৈরী। কয়েকশ মানুষকে নিয়ে দু’টি ট্রেনে সে রওনা হয়। কিন্তু একটি ট্রেন ভুলে চলে যায় আস্টুইটজ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প-এ, যেখানে গ্যাস চেম্বারে মানুষ হত্যা করা হত। শিন্ডালার ছুটে যায় সেখানে, অফিসারদের প্রচুর টাকার বিনিময়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসে তাদের। মানুষ বাঁচানোর অদ্ভুত এক নেশা তাকে পেয়ে বসে। নিজের প্রায় সব অর্থ শুধু সে মানুষকে রক্ষার জন্য খরচ করতে থাকে। এক সময় যুদ্ধ শেষ হয় কিন্তু তার উপলব্ধি হয় আরো অনেক মানুষকে হয়তো সে রক্ষা করতে পারতো।&nbsp;ছবির শেষে দেখা যায় বহু মানুষের জীবন দান করা অস্কার শিন্ডলার্সের কবর। সেখানে সেই সমস্ত মানুষেরা দল বেঁধে আসেন শ্রদ্ধা জানাতে যাদের তিনি বাঁচিয়েছিলেন।
 
গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছেন অস্কার সিন্ডলার নামের এক জার্মান ব্যবসায়ী যিনি নাৎসি বাহিনীতে যোগ দিয়ে পোল্যান্ডে এসেছেন ‘যুদ্ধের সুবিধা’ কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীক ভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে। নাৎসি এসএস বাহিনীর প্রধানদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে এবং তাদের প্রচুর টাকা ঘুষ দিয়ে পোল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তর শহর ক্র্যাকোতে তিনি 'ডিইএফ' নামে একটি কারখানা তৈরি করেন।
 
সিন্ডলার তাঁর কারখানায় কাজের জন্য শুধুমাত্র পোল্যান্ডের ইহুদিদের নেন । সিন্ডলার তাঁর কারখানায় অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবে ইটজাক স্ট্যার্ন নামের এক ইহুদিকে নিয়োগ দেন যিনি কালোবাজারী এবং ইহুদিদের ব্যবসায়িক গোষ্ঠির সাথে যোগাযোগ রেখে সিন্ডলারকে নানাভাবে সাহায্য করেন।
 
সিন্ডলার তাঁর কারখানায় ইহুদিদের নিয়োগ দেন কারণ ইহুদিরা সস্তা শ্রম দেবে এবং এতে তাঁর অনেক টাকা বেঁচে যাবে এই উদ্দেশ্য।  একদিন কারখানায় নিয়োগ পাওয়া এক হাতওয়ালা এক বৃদ্ধ ইহুদি এসে সিন্ডলারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে কারখানায় নিয়োগ দিয়ে জার্মান বাহিনীর অত্যাচার থেকে তাঁকে বাঁচানোর জন্য।
 
ইহুদিদের অসহায়ত্ব সিন্ডলারের মনে করুণার জন্ম দেয়। জার্মান বাহিনী ইহুদিদের ট্রেনে করে অনেক দূরে ইহুদি কলোনিতে পাঠাতে শুরু করে পরে যেখান থেকে তাদের পাঠানো হবে মৃত্যু শিবির কনসেনট্রেশন ক্যাম্পগুলোতে। ঘটনাচক্রে সিন্ডলারের অ্যাকাউন্ট্যান্ট ইটজাক স্ট্যার্নকেও একটি ট্রেনে উঠতে হয়। সিন্ডলার নাৎসি বাহিনীর প্রধানদের সাথে তাঁর সুসম্পর্ক কাজে লাগিয়ে স্ট্যার্নকে উদ্ধার করেন।
 
একসময় ক্র্যাকোতে আগমন ঘটে এসএস ক্যাপ্টেন নরপিশাচ অ্যামন গুথ-এর। তিনি ক্র্যাকোতে “ক্র্যাকো-প্লাসজো কনসেনট্রেশন ক্যাম্প” নামে একটি কনসেনট্রেশন ক্যাম্প তৈরি করেন।  ক্যাম্পের কাজ শেষ হলে ইহুদিদের ক্যাম্পে ধরে আনার জন্য অ্যামন তাঁর বাহিনী নিয়ে সারা ক্র্যাকোতে চষে বেড়াতে শুরু করেন এবং তাঁর বাহিনী অসংখ্য ইহুদিকে নির্মমভাবে হত্যা করে। সিন্ডলার ও তাঁর স্ত্রী এমিলি পাহাড়ের উপর থেকে নাৎসি বাহিনীর এসব নির্মমতা দেখে বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।  সিন্ডলার অ্যামন গুথের সাথে বন্ধুত্ব তৈরি করেন এবং নানা উপায়ে কনসেনট্রেশন ক্যাম্প থেকে ইহুদি শ্রমিক সংগ্রহ করে তাঁর কারখানায় নিয়োগ দিতে শুরু করেন।  তিনি বুঝতে পারেন ক্যাম্প থেকে ইহুদিদের এনে তাঁর কারখানায় নিয়োগ দিলে তারা প্রাণে বেঁচে যাবে।  তার কাছে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকার পরও ক্যাম্প কতৃপক্ষকে লাইটার, ঘড়ি প্রভৃতি ঘুষ হিসেবে দিয়ে ইহুদি শ্রমিকদের এনে তাঁর কারখানায় নিয়োগ দেন।  সিন্ডলার ইহুদিদের বাঁচানোর জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যান।
 
ক্র্যাকো-প্লাসজো কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে ইহুদিদের উপর নাৎসি বাহিনীর অবর্ননীয় অত্যাচার এবং সিন্ডলারের ইহুদি শ্রমিক সংগ্রহের ঘটনা নিয়ে সিনেমার গল্প এগিয়ে যায়।
 
একসময় যদ্ধের গতি বদলাতে শুরু করে। জার্মানরা ইউরোপের নানা জায়গায় আমেরিকান, রাশিয়ান, ইংলিশ বাহিনীর কাছে দখলকৃত দেশ/অঞ্চলসমূহ হারাতে শুরু করে।  পরাজয়ের আসংখ্যা বুঝতে পেরে বার্লিন থেকে অর্ডার আসে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের কাজ বন্ধ করে মৃত ইহুদিদের দেহাবশেষ পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে জীবিতদের আউশভিৎজ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিতে। সিন্ডলার জানেন কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে যাওয়া মানে অবর্ননীয় অত্যাচার এবং তারপর মৃত্যু।  সিন্ডলার তাঁর কর্মীদের বাঁচানোর উদ্দেশ্যে অ্যামন গুথকে বলেন, তিনি তাঁর কর্মীদের ব্রিনলিতস-এ অবস্থিত পুরনো কারখানায় নিয়ে যেতে চান। অ্যামন প্রতিটি শ্রমিকের জন্য নির্ধারিত হারে অনেক টাকা দাবী করেন। সিন্ডলার ও তাঁর সহকারী স্ট্যার্ন ১১০০ জনের একটি তালিকা তৈরি করেন (যেটি “সিন্ডলার্স লিস্ট” নামে পরিচিত) যাদের আউশভিৎজ-এ না পাঠিয়ে তিনি তাঁর কারখানায় নিয়ে যাবেন। প্রত্যেকের জন্য সিন্ডলার অ্যামনকে নির্ধারিত হারে টাকা দেন।  অধিকাংশ শ্রমিক ট্রেনে নিরাপদে ব্রিনলিতস-এ পৌঁছে যায় কিন্তু ইহুদি নারী এবং শিশুদের বহনকারী ট্রেনটি ‘পেপার ওয়ার্ক মিসটেকের’ দরুন ভুলক্রমে আউশভিৎজ কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে চলে যায়। সিন্ডলার নিজে আউশভিৎজ-এ যান এবং ক্যাম্প কমান্ডার রুডলফ হুসকে এক পটলা হীরা ঘুষ দিয়ে তাদের উদ্ধার করেন।
 
কিন্তু ট্রেনে উঠার সময় এসএস অফিসাররা শিশুদের আটকে দেয়। সিন্ডলার তাদের যুক্তি দেখান এই শিশুদের ছোট আঙ্গুল ৪৫ মিলিমিটারের শেল মেটাল ক্যাসিংয়ের ভিতরের অংশটি পালিশ করতে কাজে লাগে। তাঁর কথায় কাজ হয়, শিশুরা প্রাণে বেঁচে যায়। এদের সবাইকে সিন্ডলার ব্রিনলিতস-এর কারখানায় এনে নিরাপদে রাখেন।  এসএস সৈন্যদের তিনি এই বলে সতর্ক করে দেন যে কোন সৈন্য যদি কারখানার কোন শ্রমিকের উপর অত্যাচার চালায় কিংবা তাদের গুলি করে তাহলে তিনি তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
 
একসময় রেডিওতে ইউরোপে জার্মানদের পরাজয় এবং সোভিয়েত রেড আর্মির জার্মানি আক্রমণের খবর প্রচারিত হয়। সিন্ডলার তাঁর কারখানার ১১০০ শ্রমিকের উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ দেন। তিনি নিজে জার্মান নাৎসি দলের সদস্য তাই আমেরিকান ও রাশিয়ান বাহিনীর কাছে গ্রেপ্তার এড়িয়ে গা ঢাকা দেয়ার জন্য কারখানার শ্রমিকদের কাছ থেকে বিদায় নেন।
 
বিদায় বেলা কারখানার সমস্ত শ্রমিকের উপস্থিতিতে -সমস্ত শ্রমিকের সাক্ষরসহ একটি চিঠি সিন্ডলারকে দেয়া হয়।  ইটজাক স্ট্যার্ন কারখানার একজন শ্রমিকের বাঁধানো দাঁত দিয়ে তৈরি একটি সোনার আংটি সিন্ডলারের হাতে তুলে দেন যাতে হিব্রু ভাষায় লেখা "যিনি একজনের জীবন বাঁচান তিনি সমস্ত পৃথিবীকে বাঁচান"।
 
সিন্ডলার বিদায় জানিয়ে স্ট্যার্নের সাথে হাত মেলানোর সময় এই বলে অনুশোচনা করেন যে, তিনি আরও কিছু টাকা খরচ করে আরও মানুষকে বাঁচাতে পারতেন কিন্তু বাঁচান নি। স্ট্যার্ন তাঁকে সান্তনা দিয়ে বলেন, “এই ১১০০ শ্রমিকের দিকে তাকিয়ে দেখুন এরা আজ আপনার জন্যই জীবিত রয়েছে।”
 
কিন্তু কোন কথাতেই সিন্ডলার সান্ত্বনা পান না। তিনি যে গাড়িটি ব্যবহার করেন সেটির বিনিময়ে আরও ১০ জন মানুষকে বাঁচাতে পারতেন, তিনি যে সোনার পিনটি ব্যবহার করেন সেটির বিনিময়ে আরও ২ জন মানুষকে বাঁচাতে পারতেন এসব বলে অনুশোচনা করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
 
অতপর সকাল হওয়ার আগেই সিন্ডলার কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের বন্দিদের পোশাক পড়ে সবার কাছ থেকে শেষবারের মত বিদায় নিয়ে সস্ত্রীক সে স্থান ত্যাগ করেন। পরদিন সোভিয়েত রেড আর্মির এক সদস্য এসে কারখানার শ্রমিকদের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। অ্যামন গুথ সোভিয়েত রেড আর্মির হাতে ধরা পড়েন এবং মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
 
ইহুদি না হয়েও যিনি হলোকাস্টের সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইহুদিদের জীবন বাঁচিয়েছেন তাঁদের ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল "রাইচাস এমং দ্যা ন্যাশন" সন্মাননায় ভূষিত করে। অস্কার সিন্ডলারের মৃত্যুর পর ইসরাইল সরকার তাঁর মৃতদেহ জার্মানি থেকে এনে তাঁকে এই সন্মাননা দিয়ে জেরুজালেমে সমাহিত করে।
 
শেষদিকে সিন্ডলার যেসব ইহুদিদের বাঁচিয়েছেন তাঁদের পরবর্তি প্রজন্ম জেরুজালেমে সিন্ডলারের সমাধিতে এসে একে একে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে এবং এর মধ্য দিয়ে সিনেমাটির ইতি ঘটি।
 
== অভিনয়শিল্পী ==