আধুনিকতা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Zunaedsifat (আলোচনা | অবদান)
ইতিহাসঃ শুরু চলছে
 
Zunaedsifat (আলোচনা | অবদান)
ফ্রান্সে আধুনিকতাবাদের শুরু চলছে
১৫ নং লাইন:
 
ইংরেজ কবি এবং চিত্রশিল্পীরা তাদের "অনুপ্রেরণা ছাড়া কারিগরি দক্ষতা বিরোধী" মনোভাব থেকে প্রিটোফিলাইট ব্রাদারহুড গঠন করে ১৮৫০ সাল থেকে ভিক্টোরিয়ান ইংল্যান্ডে শিল্পের প্রভাবশালী হয়ে উঠার প্রবণতার বিরোধিতা করেন। তারা শিল্প সমালোচক জন রেসকিন (১৮১৯-১৯০০) দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন, যিনি ব্রিটেনের দ্রুত বর্ধমান শিল্পকেন্দ্রগুলিতে শহুরে শ্রমজীবী মানুষের জীবন উন্নত করার ক্ষেত্রে শিল্পের ভূমিকা সম্পর্কে দৃঢ় অনুভূতি ধারণ করতেন। শিল্প সমালোচক ক্লিমেন্ট গ্রিনবার্গ প্রিটোফিলাইট ব্রাদারহুডকে প্রাক-আধুনিকতাবাদী বলে বর্ননা করেনঃ "সেখানে লোকদের মধ্যে প্রিটোফিলাইট ব্রাদারহুড ছিল প্রাক-আধুনিকবাদী(তাদেরও আগে জার্মান নাজারিনরা ছিল প্রাক-প্রাক-আধুনিকবাদী)। র‍্যাফেলাইটরা মনেটের (১৮৩২-১৮৮৩) পূর্বাভাস দেয়, যার মাধ্যমে আধুনিকতাবাদী চিত্রকলা শুরু হয়। তারা সেই সময়ে প্রচলিত বাস্তববাদী চিত্রকলা যথেষ্ট সত্য নয় বলে মনে করে এর উপর অসন্তুষ্ট ছিলেন। দার্শনিক সেরেন কোয়ের্কেগার্ড (১৮১৩-১৮৫৫) এবং ফ্রেডরিখ নিৎশে (১৮৪৪-১৯০০) যুক্তিবাদের বিরোধিতা করেন। এদের দুজনেরই অস্তিত্ববাদের ধারণার উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ছিল।
 
যাইহোক, শিল্প বিপ্লব অব্যাহত থাকল। এর প্রভাবশালী উদ্ভাবনের মধ্যে রয়েছে বাষ্পচালিত শিল্পায়ন এবং বিশেষ করে ১৮৩০ এর দশক থেকে ব্রিটেনে রেলওয়ের উন্নয়ন, এবং পরবর্তীতে পদার্থবিজ্ঞান, প্রকৌশল এবং স্থাপত্যের অগ্রগতি এর সাথে যুক্ত হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর একটি প্রকৌশল কৃতিত্ব ছিল ১৮৫১ সালে দ্য গ্রেট এক্সিবিশনের জন্য নির্মিত বিশাল ঢালাই লোহা ও প্লেট গ্লাসের তৈরি প্রদর্শনী হল ক্রিস্টাল প্যালেস। প্যাডিংটন স্টেশন (১৮৫৪) এবং কিং অফ ক্রস স্টেশনসহ (১৮৫২) লন্ডনের প্রধান রেলওয়ে টার্মিনালগুলির নির্মাণে একটি অনুরূপ গ্লাস ও লোহার তৈরি স্মৃতিস্তম্ভ ব্যবহার করা হয়েছিল। এই প্রযুক্তিগত অগ্রগতিগুলো পরবর্তীতে ব্রুকলিন সেতু (১৮৮৩) এবং আইফেল টাওয়ারের (১৮৮২) মত কাঠামো নির্মাণের পথ তৈরি করে। আইফেল টাওয়ার মানুষের তৈরি বস্তুগুলি কত উঁচু হতে পারে তার সব সীমাবদ্ধতাগুলি অতিক্রম করে। প্রকৌশলের এসব কীর্তি ঊনিশ শতকের শহুরে পরিবেশ এবং মানুষের দৈনন্দিন জীবনে মৌলিক পরিবর্তন আনে। ১৮৩৭ সাল থেকে ইলেকট্রিক টেলিগ্রাফের বিকাশ এবং ১৮৩৫ সাল থেকে ব্রিটিশ রেলওয়ে কোম্পানির এবং পরের অর্ধশতাব্দীতে বিশ্বের বাকি অংশে প্রমাণ সময় গ্রহণের ফলে সময় সম্পর্কে মানুষের অভিজ্ঞতারও পরিবর্তন ঘটেছিল।
 
কিন্তু প্রযুক্তির এই অগ্রগতি অব্যাহত থাকলেও ১৮৭০ এর দশক থেকে , ইতিহাস ও সভ্যতা স্বভাবগতভাবে প্রগতিশীল এবং এই গতি সর্বদা কল্যাণকর এ ধারণা আক্রমণের শিকার হতে থাকে। যুক্তি উত্থাপিত হয় যে শিল্পী এবং সমাজের মূল্যবোধ কেবল ভিন্নই ছিল না, বরং তা সমাজের অগ্রগতিবিরোধী ছিল, এবং অগ্রসর হয়ে বর্তমান প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারেনি। দার্শনিক সোফেনহার (১৭৮৮-১৮৬০ খ্রি.) (ইচ্ছাশক্তি এবং প্রতিনিধিত্ব হিসাবে বিশ্ব, ১৮১৯) আশাবাদ সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করে, এবং নিৎশেসহ পরবর্তী চিন্তাবিদদের উপর তাঁর এ ধারণার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ছিল। সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাবিদদের মধ্যে দুজন ছিলেন প্রাকৃতিক নির্বাচনের আলোকে জীবের উদ্ভবের (১৮৫৯) লেখক জীববিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন (১৮০৯-১৮৮২) এবং দাস ক্যাপিটালের (১৮৬৭) লেখক রাজনৈতিক বিজ্ঞানী কার্ল মার্কস (১৮১৮-১৮৮৩)। ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তনের তত্ত্ব ধর্মীয় নিশ্চিততা এবং মানুষের সাতন্ত্র্যের ধারণাকে সীমাবদ্ধ করে দেয়। বিশেষ করে, মানুষও অন্যান্য "নিম্ন প্রাণী"র মত প্রবৃত্তির তাড়নায় তাড়িত হয় এই ধারণা কোনো মাহাত্ম্যবাদী আধ্যাত্মিকতা ধারণা সঙ্গে মেলানো কঠিন। কার্ল মার্কস যুক্তি দেন যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মধ্যে মৌলিক পরস্পরবিরোধিতা রয়েছে এবং শ্রমিকরা কোনোভাবেই স্বাধীন নয়।
 
=== ফ্রান্সে আধুনিকতাবাদের শুরু ===
আধুনিকতাবাদের সূচনাকাল হিসাবে বিভিন্ন বিষয়ের ঐতিহাসিক ও লেখকগণ ভিন্ন ভিন্ন সময়ের কথা বলেন। উদাহরণস্বরূপ, ইতিহাসবিদ উইলিয়াম এভারডেলের মতে আধুনিকতা ১৮৭০ এর দশকে শুরু হয়েছিল, যখন গণিতবিদ রিচার্ড ডেডেকিন্ডের (১৮৩১-১৯১৬) ডেডেকিন্ড বিভাজন এবং লুডভিগ বোল্টজম্যানের (১৮৪৪-১৯০৬) পরিসংখ্যানগত তাপগতিবিদ্যা রূপক (বা দার্শনিক) অবিচ্ছিন্নতা ভেঙে যেতে শুরু করে। ইভারডেল মনে করেন যে ১৮৮৫-৮৬ সালে সিউরাতের "লা গ্রান্ডে জট দ্বীপে একটি রবিবারের বিকেল" নামের ছবি আঁকায় "বিন্দু" ব্যবহারের মাধ্যমে বিভাগীয়ীকরণের সাথে সাথে চিত্রকলার আধুনিকতা শুরু হয়েছিল। অন্য দিকে, দৃশ্যশিল্পের সমালোচক ক্লিম্ট গ্রিনবার্গ ইমানুয়েল কান্টকে (১৭২৪-১৮০৪) "প্রথম বাস্তব আধুনিকবাদী" বলে ডাকতেন, যদিও তিনি লিখেছিলেন, "ফ্রান্সে স্থানীয়ভাবে সাহিত্যে বোদলেয়ার, চিত্রকলায় মনেট এবং কথাসাহিত্যে ফ্লোবার্টের সঙ্গে সঙ্গে গত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে সুরক্ষিতভাবে আধুনিকবাদ প্রবর্তিত হয়েছে বলা যায় (সঙ্গীত এবং স্থাপত্যে আধুনিকবাদের শুরু কিছুটা পরে এবং স্থানীয়ভাবে নয়)"। কবি বোদলেয়ারের Les Fleurs du mal (শয়তানের ফুল) এবং ফ্লাবার্টের উপন্যাস মাদাম বোওয়ারি উভয়ই ১৮৫৭ সালে প্রকাশিত হয়।
 
শিল্প এবং চিঠির ক্ষেত্রে ফ্রান্সে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ পন্থার উদ্ভব হয়। প্রথমটি হল চিত্রকলায় প্রতিচ্ছায়াবাদ, যা স্টুডিওয়ের ভেতরের বাইরে খোলা জায়গায় ছবি আঁকায় গুরুত্ব দিত। প্রতিচ্ছায়াবাদী ছবিগুলো দেখায় মানুষ বস্তু দেখে না, বরং আলোকেই দেখতে পায়। এর অনুশীলনকারীদের মধ্যে বিভিন্ন উপদল থাকলেও এইটি প্রচুর সমর্থক পায় এবং প্রভাবশালী হয়ে উঠে। প্রাথমিকভাবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় হওয়া সে সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক প্রদর্শনী প্যারিস স্যালন থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে প্রতিচ্ছায়াবাদীরা ১৮৭০ ও ১৮৮০ এর দশকে বাণিজ্যিক সড়কগুলিতে প্যারিস স্যালনের সময়ের সাথে মিলিয়ে বার্ষিক দলীয় প্রদর্শনী আয়োজন করে। ১৯৬৩ সালের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল প্যারিস স্যালন থেকে প্রত্যাখ্যাত সমস্ত ছবি প্রদর্শন করার জন্য সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়নের Salon des Refusés। যদিও বেশিরভাগ ছবিই নিচুমানের শিল্পীদের ভালো ছবি ছিল, মনেটের কাজ প্রচুর মনোযোগ লাভ করে এবং আন্দোলনের বাণিজ্যিকীকরণের দরজা খুলে দেয়। দ্বিতীয় ফরাসি ধারাটি ছিল প্রতীকবাদ, সাহিত্যিক-ঐতিহাসিক চার্লস বোদলেয়ার (১৮২১-৬৭) এবং, আর্থার রিমবোদের (১৮৫৪-৯১) Une Saison en Enfer (নরকে এককাল, ১৮৭৩), পল ভারলেইন (১৮৪৪-৯৬), স্টিফানে মালার্মি (১৮৪২-৯৮), এবং পল ভেলেরি (১৮৭১-১৯৪৫).এর মত পরবর্তী সময়ের কবিরা যার অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রতীকবাদীরা "সরাসরি বর্ণনা এবং স্পষ্ট উপমার চেয়ে অভিভাবন এবং স্মৃতিচারণে জোর দেন", এবং "ভাষার গীতিময় বৈশিষ্ট্যে" বিশেষভাবে আগ্রহী ছিল। বলা হয় ১৮৮১ সালে ফ্রান্সের মন্টমার্ট্রে ব্ল্যাক ক্যাটের উদ্বোধনের মাধ্যমে কাবারেট (ফরাসি সরাইখানা) উদ্ভব হয়, পরবর্তীকালে চলচ্চিত্রের অগ্রদূত একক নাটকসহ নানা শিল্পের জন্মস্থান হিসাবে কাজ করে এবং ফ্রান্সের অবিচ্ছেদ্য শিল্পসংঘ তৈরি করে।
 
আধুনিকতাবাদের প্রাথমিক পর্যায়ে সিগমুন্ড ফ্রয়েডের (1856-1939) তত্ত্ব বেশ প্রভাবশালী ছিল। ফ্রয়েডের প্রধান কাজ হল জোসেফ ব্রুয়ারের সাথে মৃগীরোগ সংক্রান্ত গবেষণা (1895)। ফ্রয়েডের চিন্তাভাবনার মূল "মানসিক জীবনে অবচেতন সত্ত্বার প্রাধান্যের" ধারণা, যাতে সমস্ত ব্যক্তিক বাস্তবতা মৌলিক তাড়না এবং প্রবৃত্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়, যার মাধ্যমে মানুষ বাইরের বিশ্বকে অনুভব করে। ফ্রয়েডের ব্যক্তিত্ত্বের বর্ণনাগুলির মধ্যে আবেগী এবং সামাজিক মূল্যবোধ থেকে প্রাপ্ত স্ব-আরোপিত বিধিনিষেধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি অবচেতন মন রয়েছে।