রূপসা উপজেলা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Ferdous (আলোচনা | অবদান)
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
৪৪ নং লাইন:
# টি এস বাহিরদিয়া ইউনিয়ন
# ঘাটভোগ ইউনিয়ন
 
==খুলনা জেলা: গঠনপর্বের প্রাক - ইতিহাস==
 
বৃটিশ ভারত তথা অবিভক্ত বাংলার প্রথম মহকুমা খুলনা -১৯৮৩ সালের প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস - পূর্বকালে আয়তনের হিসেবে ছিল বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম জেলা। লোকসংখ্যায় দশম। এসময় ‘খুলনা জেলা’ বলতে বুঝাতো খুলনা সদর ,বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা মহকুমা-র সম্মিলিত ভূভাগকে (অতঃপর প্রায়শ ‘বৃহত্তর খুলনা’ হিশেবে উল্লিখিত), যার মোট আয়তন ছিল ৪,৬৯৭ বর্গমাইল (নদী এলাকাসহ)। তবে প্রশাসনিক পুর্বিন্যাসের কারনে খুলনার পরিমাণফল দাঁড়ায় ৪,৩৯৪ বর্গকিলোমিটার; এবারে হয় দেশের চতুর্থ বৃহত্তম জেলা।জেলা গঠনকালের অব্যবহিত পূর্বের বা আরও নির্দিষ্ট করে বললে ১৮৮১ সালের ‘বঙ্গীয় জনগণনা’ (Census of Bengal, 1818) অনুযায়ী বৃটিশ শাসনাধীন ‘বঙ্গপ্রদেশ’ বলতে বুঝাতো বাংলা, বিহার ওড়িশ ও ছোটনাগপুর এবং কোচবিহার -পার্বত্য ত্রিপুরা প্রভৃতি ৩টি সামন্তরাজ্য মিলিয়ে ১,৫০,৫৮৮ বর্গমাইলব্যাপী (সুন্দরবন ও বড়ো বড়ো নদী এলাকা ব্যতীত) বিস্তৃত ভূভাগকে। এর মধ্যে বর্তমান বাংলাদেশের যেসব জেলা আজকের প্রচলিত নামেই বঙ্গপ্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল যথা ’প্রেসিডেন্সি’ বিভাগাধীন যশোর ও খুলনা ( কুষ্টিয়া তখন ছিল নদীয়া জেলাভুক্ত); রাজশাহী বিভাগাধীন দিনাজপুর, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়া ও পাবনা; ঢাকা বিভাগাধীন ঢাকা, ফরিদপুর, বাকেরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ এবং চট্টগ্রাম বিভাগাধীন চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ত্রিপুরা (কুমিল্লা) ও পার্বত্য চট্টগ্রাম - এই ১৫ টি জেলার মধ্যে আয়তনের দিক দিয়ে খুলনা ছিল দ্বাদশ স্থানীয়। অন্যদিকে দেশবিভাগ তথা ৪৭- পরবর্তীকালে বর্ণিত পনেরো জেলা ও কুষ্টিয়া মিলিয়ে মোট ১৬টি জেলার মধ্যে খুলনা ছিল আয়তনে তৃতীয় এবং লোকসংখ্যার হিসাবে একাদশ।যাই হোক শুরুতেই জেলা হিসেবে খুলনার গঠন বা সৃষ্টি সম্বন্ধে কিছু জরুরি জ্ঞাতব্য তুলে ধরতে চাই। বস্ত্তত বর্তমান আলোচনায় এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে আমরা মনে করি। কেননা এ জেলার সৃষ্টি ও গঠনকাল সম^ন্ধে এযাবৎ যেসব খ্যাত - অল্পখ্যাত আধুনিক লেখক ও ঐতিহাসিক তাঁদের মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন ও প্রবন্ধ লিখেছেন, তাঁরা সম্ভবত এসংক্রান্ত সরকারি মূল প্রজ্ঞাপনটি ( Gazdtte Notification ) আদৌ পরীক্ষা না করে পরম্পরাগতভাবে ভ্রান্ত তথ্য উপস্থাপন করে গেছেন (এটি ঘটেছে মূলত পূর্বসূরী কোনো একজনের লেখা থেকে বাছবিচারহীনভাবে তথ্য বা উদ্ধৃতি গ্রহণের কারণে)। সুতরাং এ ভুলের স্থায়ী নিরসন এবং সপ্রমাণ প্রকৃত তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশিত হওয়া দরকার। ফলত এই দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা এটাকে শুধু প্রাসঙ্গিক ও নতুন-ই বলবো না, উপরন্তু তা আমাদের কাছে এক ধরনের আবিষ্কারও বটে। তথ্য - প্রমাণের ভিত্তিতে একথা নির্ভুলভাবে বলা যায় যে বৃটিশ প্রশাসনিক স্তর হিসেবে খুলনা জেলা গঠিত হয়েছিল ১৮৮২ সালের ১লা জুন তারিখে। এ ব্যাপারে তৎকালীন সরকারি প্রধান মুখপাত্র ’ The Calcutta Gazette’ এর ১৯ ও ২৬ শে এপ্রিল তারিখের সংখ্যায় দুটি প্রজ্ঞাপন মুদ্রিত/ প্রকাশিত হয়েছিল, যদিও এদের ঘোষণা বা জারির তারিখ ছিল যথাক্রমে ১৪ই ও ২৫শে এপ্রিল। আমাদের পরবর্তী আলোচনার সুবিধার্থে নীচে প্রথম ১৪ই এপ্রিল তারিখের প্রজ্ঞাপনটি হুবহু উদ্ধৃত করা হলো; যা থেকে স্পষ্ট দেখা যাবে ‘খুলনা জেলা’ গঠিত হয়েছিল তৎকালীন যশোর জেলার বিদ্যমান খুলনা সদর (১৮৪২) ও বাগেরহাট মহকুমা (১৮৬১) এবং ২৪-পরগণা জেলার সাতক্ষীরা (১৮৬৩) মহকুমা -এ তিনের সমন্বয়ে, এবং জেলা চালুর প্রথম তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ মে, ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দ (স্থুলাক্ষর আমাদের)
 
[Part 1.] THE CALCUTTA GAZETTE, APRIL 19, 1882.365
 
[First Publication.]
 
NOTFICATION.The 14th April 1882.-It is hereby notified for general information that with the previous sanction of His Excellency the Governor-General in Council, and of the Right Hon’ble the Secretary of State for India, the Sub-division of Satkhira, hitherto forming part of the district of the 24-Perunahs, and the Sub-division of Khoolna and Bagirhat, hitherto forming parts of the district of Jessore, are formed into a new district to be styled the Khoolna district, and with head-quarters at the station of Khoolna.
 
This notification will take effect from 1st May 1882.Pending completion of the necessary arrangements for the office and treasury of the Collector at Khoolna, all payments of land revenue, and of road and public works cess made on account of property situated in the Sub-division of Satkhira will continue to be received at the treasury of the district of the 24- Pergunnahs, and all similar payment on account of property siuated int the Sub-division of Khoolna and Bagirhat will continue to be received at the Jessore treasury.
 
D. BARBOUR
 
Offg. Secy. to the Govt. of Bengal.
 
কিন্তু পরবর্তীকালে ২৫শে এপ্রিল তারিখে ভিন্ন একটি প্রজ্ঞাপন জারি বলে ১৪ই এপ্রিল তারিখের প্রজ্ঞাপনের ১ম ও ৩য় অনুচ্ছেদ হুবহু একই রেখে ২য় অনুচ্ছেদ অর্থাৎ জেলা চালুর তারিখের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনয়ন এবং ৪র্থ অনুচ্ছেদ সংযোজন মূলে ইতঃপূর্বে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনটি বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়েছিল।
 
এরও প্রাসঙ্গিক অংশও নীচে হুবহু উদ্ধৃত করা হলো:
 
THE CALCUTTA GAZETTE, APRIL 26, 1882.393
 
[First Publication.]
 
NOTIFICATION.
 
The 25th April 1882.-It is ……Khoolna.
 
This notification will take effect from 1st June 1882.
 
Pending completion ……… treasury.
 
This cancels the notification of the 14th April 1882, publication at page 365 of Part I of the Calcutta Gazette of the 19th idem.
 
A.P. MACDONNELL
 
ffg.Secy.to the Govt. of Bengal.
 
 
সুতরাং স্পষ্টত প্রমাণিত হচ্ছে যে খুলনা জেলা চালু হয়েছিল ১৮৮২ সালের ১লা জুন তারিখ থেকে এবং নবসৃষ্ট জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল খুলনা সদর,বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা -এই ৩টি মহকুমা।বলাবাহুল্য, জেলা চালুর প্রকৃত তারিখ ও যেসব মহকুমা নিয়ে খুলনা গঠিত হয়েছিল, সেসম্বন্ধে প্রকৃত সত্য উদঘাটন না করে এঅঞ্চলের লেখক-ঐতিহাসিকগণ ক্রমাগতভাবে যে ভুল ও পারস্পরিক বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করে যাচ্ছেন , তার কিছু নমুনা নীচে তুলে ধরা হলো।আগেই জানিয়ে রাখি যে, বাংলাভাষায় খুলনা ও যশোর জেলার ওপওে লিখিত সবচেয়ে বৃহৎ, প্রশংসনীয় ও চমৎকার কাজ স্বনামধন্য ঐতিহাসিক শ্রীসতীশচন্দ্র মিত্র মহাশয়ের ২-খন্ডের ‘যশোহর -খুলনার ইতিহাস’ শীর্ষক গ্রন্থ। এতে খুলনা জেলার গঠনকাল সম্পর্কে লেখক কোনো সুনির্দিষ্ট তারিখের উল্লেখ না করলেও ‘সাল’ উল্লেখ করেছেন ১ম খন্ডে ১৮৮২ এবং ২য় খন্ডে ১১ ১৮৮১-২ অব্দ; সুতরাং এটা সামান্য হলেও বিভ্রান্তিকর । তবে লেখক মহকুমার নামোল্লেখ সঠিকভাবেই করেছেন।এঁর পরবর্তী সবচেয়ে আলোচিত ও খ্যাত ঐতিহাসিক -এ্যাডভোকেট এ. এফ. এম. আবদুল জলীল প্রণীত ৩খন্ডের ‘সুন্দরবনের ইতিহাস’।আলোচ্য বিষয়ে তিনি লিখেছেন :‘‘খুলনা সদর ও বাগেরহাট যশোর (?)এবং সাতক্ষি(ী)রা মহকুমা ২৪ পরগণা হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া খুলনা জেলার সৃষ্টি হয়। ’’জনাব জলীল আরও উল্লেখ করেছেন :‘‘ ১৮৮১ সালে কলিকাতা হইতে দৈনিক ‘‘ষ্টেটসম্যান’’ পত্রিকার ২রা মে তারিখের এক খবরে প্রকাশিত হয়: / ` New District : From the first instant the talked new district of Khulna formed of the Sub-division of Satkhira , Narail, Khulna and part of Basirhat has been organized at Headquarters of the Sub-division bearing the name of the district. The district is a third class one, having a district Magistrate and Collector at its head of affairs. The chief civil authority for the time being is a Subordinate judge. The civil and the Session Judge of Jessore, it has been arranged will hold Sessions form time to time at the Head quarters.
 
 
প্রথমোক্ত বর্ণনায় খুলনা সদর,বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা মহকুমা নিয়ে খুূলনা জেলা গঠনের কথা স্বীকার করেছেন এ ঐতিহাসিক। লক্ষ্যণীয় যে খুলনা জেলা সৃষ্টি সম্পর্কিত সরকারি প্রজ্ঞাপনটি যেখানে ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ও জারি হয়েছে, সেখানে ‘দৈনিক স্টেট্সম্যান’ পত্রিকা কোন তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ‘১৮৮১’ সালে জেলা সৃষ্টির ‘খবর ’ প্রচার করলো ? [নাকি এটি ১৮৮২ হবে? জলীল সাল ভুল উদ্ধৃত করেছেন ? অথবা তাঁর গ্রন্থে মুদ্রণ প্রমাদ ঘটেছে ? ] অধিকন্তু ‘বাগেরহাট ' -কে বাদ দিয়ে এবং নতুনভাবে দুটি মহকুমা যথা ‘নড়াইল’ ও ‘বসিরহাট’ -কে যুক্ত করে খুূলনা জেলা গঠিত হওয়ার চরম বিভ্রান্তিকর ‘খবর’ তারা প্রচার করলো ? তিনি (জনাব জলীল )‘খবর’ হিসেবে এসব অবলীলায় উদ্ধৃত করলেও এর ভুল বা বেঠিকতা সম্বন্ধে একটি মন্তব্য ও করেননি। বলাবাহুল্য প্রকৃত সত্য তুলে ধরার সপক্ষে এটি তাঁর করা উচিত ছিল বলে আমরা মনে করি। তা না করায় পরবর্তীকালে তাঁকে যারা উৎস করেছেন, তারাও খুলনা সম্পর্কে লিখতে গিয়ে এই ভুল তথ্য পরিবেশন করে গেছেন।১৯৮৩ সালের প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস -পূর্ব খুলনার এককালীন জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ নূরুল ইসলাম তাঁর ‘খুলনা জেলা ’ নামক গ্রন্থে এসম্বন্ধে দুজায়গায় দুরকম তথ্য উল্লেখ করেছেন, যা নিম্নরূপ :আলোচ্য গ্রন্থের ১৭২ পৃষ্ঠায় জনাব ইসলাম লিখেছেন: ‘‘ ১৮৮২ খৃষ্টাব্দে ১লা মে তারিখে খুলনাকে একটা পৃথক জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। নতুন জেলায় প্রক্তণ(ন) যশোর জেলার খুলনা এবং বাগেরহাট মহকুমা এবং ২৪-পরগণা জেলার সাতক্ষীরা মহকুমা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বস্ত্ততঃ গেজেট বিজ্ঞপ্তি হয় ২৫শে এপ্রিল, ১৮৮২ খৃষ্টাব্দে। ’’আবার ৩৯৮ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন: ‘‘ ১৮৮২ খৃষ্টাব্দের ২৫শে এপ্রিল নতুন জেলার গেজেট নোটিফিকেশন হয়। ঐ বছর ১লা জুন থেকে জেলার কাজ শুরু হয়। ’’লক্ষ্যণীয় যে প্রথমোক্ত উদ্ধৃতিতে তিনি খুলনা জেলার গঠনকাল ১৮৮২ সালের ১লা মে বলে উল্লেখ করলেও গেজেট বিজ্ঞপ্তির কথা বলেছেন ২৫শে এপ্রিল। অথচ আমরা আগেই দেখিয়েছি ১লা মে তারিখে জেলা চালু হওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয় ১৪ই এপ্রিল তারিখে জারিকৃত প্রজ্ঞাপন মূলে। দ্বিতীয়োক্ত বিবৃতি যেটি জনাব ইসলাম ‘‘ Bangladesh District Gazetteer : Khulna এর সূত্রে গ্রন্থিত করেছেন, সেটিই বস্ত্তত সঠিক। প্রসঙ্গত বর্ণিত গেজেটে যা পাওয়া যায় তা এ রকম :
 
`The district was fromed in 1882 out of Khulna and Barerhat subdivisions of Jessore district and the Satkhira subdivision of the 24-Parganas (India) ……… The sanction of the Government of India and of the Secretary of State was otained. A nofification issued on the 25th April, 1882, took effect from the first June of the same year.”
 
একই রকম ভুল করেছেন প্রখ্যাত গবেষক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহম্মদ আবূ তালিব। স্বীয় ‘খুলনা জেলায় ইসলাম ’ শীর্ষক গ্রন্থে তিনি লিখেছেন:
 
‘‘বর্তমান খুূলনা জেলার সৃষ্টি হয় ১২৮৯ সাল/ ১৮৮২ ঈসায়ী, ১লা মে থেকে। ১২৪৯ সাল / ১৮৪২ ঈসায়ীতে ভিত্তি হয় খুলনা মহকুমার, তারও আগে নয়াবাদের থানা রূপে খুলনা থানার (১৭৮১ ঈ, )। ...চবিবশ পরগণা জেলার বসিরহাট, যশোর জিলার নড়াইল ও খুূলনা সদর মহকুমা সমবায়ে খুলনা জেলার পত্তন হয়।’’তিনিও সমকালীন ‘দ্য স্টেট্সম্যান’ পত্রিকার পূর্বোক্ত বিভ্রান্তিকর সংবাদটি কোনোরূপ প্রশ্ন না তুলেই উদ্ধৃত করেছেন। তবে এ. এফ. এম. আবদুল জলীল যেখানে ১৮৮১ সাল উল্লেখ করেছেন , সেখানে জনাব আবূ তালিব বলেছেন ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দের কথা , এই যা পার্থক্য ।সাম্প্রতিককালে খুলনা জেলা নিয়ে সবচেয়ে বিশাল কলেবরে বই লিখেছেন অধ্যাপক ড. শেখ গাউস মিয়া। বইটির নাম ‘মহানগরী খুলনা : ইতিহাসের আলোকে’। ইতিহাসের আলো বিতরণ করতে গিয়ে আলোচ্য বিষয়ে তিনি কী লিখেছেন, সেটিও একনজর দেখা যেতে পারে:‘‘১৮৮২ সালে যশোর জেলার মধ্য হতে খুলনা ও বাগেরহাট মহকুমা এবং ২৪ পরগণার মধ্য থেকে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ ও বসন্তপুর নিয়ে এ জেলা গঠিত হয়। জেলা হওয়ার সময় নড়াইলের অংশটুকু খুলনা থেকে বাদ দিয়ে যশোর জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ সময় খুলনা জেলার আয়তন ছিল ৪,৬৩০ বর্গমাইল। এর মধ্যে সুন্দরবনের আয়তন ছিল ২৬২০ বর্গমাইল। ’’তিনিও দ্বিধাহীনচিত্তে ‘দৈনিক স্টেট্সম্যান’ -এর উক্ত ভুল সংবাদটি পরিবেশন করেছেন । কিন্তু তার চেয়েও আশ্চর্যের ও লক্ষ্যণীয় ব্যাপার তাঁর বক্তব্যের সাতক্ষীরার ‘কালীগঞ্জ’ ও ‘বসন্তপুর’ এবং খুলনার তৎকালীন আয়তনসম্পর্কিত তথ্যগুলো। লক্ষ্যণীয় যে, এসব তিনি কোথা থেকে পেয়েছেন তার কোন সূত্র উল্লেখ করেননি। ফলে সমকালীন বিভিন্ন তথ্য -প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা এটা পরীক্ষা করে দেখতে চাই।প্রথমত আগেই দেখানো হয়েছে, খুলনা জেলার গঠনসম্পর্কিত সরকারি প্রজ্ঞাপন দুটিতে ‘সাতক্ষীরা’ মহকুমার উল্লেখ আছে ; কালীগঞ্জ ও বসন্তপুরের নাম - গন্ধও সেখানে নেই বা ছিল না। তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন হতে পারে,অধ্যাপক গাউস এগুলো কোথায় পেলেন ? এখানে একটা বিষয় অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, তাঁর দৃষ্টিতে যদি সাতক্ষীরার অংশবিশেষও খুলনা জেলাভুক্ত করা হয়ে থাকে, তবে সেক্ষেত্রে কোনো থানা করারই কথা । ফলে আমরা একনজর দেখতে পারি এসময় সাতক্ষীরার অন্তর্গত কয়টি পুলিশ চৌকি বা থানা ছিল ?সুবিখ্যাত ইংরেজ ঐতিহাসিক ও পরিসংখ্যানবিদ এর ’ ’ সূত্রে জানা যায় ১৮৭৫ সাল নাগাদ ২৪ পরগণা জেলার অন্তর্গত মোট ৮টি মহকুমার মধ্যে সাতক্ষীরা -য় ছিল ৫টি থানা, যথা (১) কলারোয়া, (২) সাতক্ষীরা , (৩) মাগুরা, (৪) কালীগঞ্জ ও (৫) আশাশুনি। এগুলোর সম্মিলিত আয়তন ছিল ৭১৩ বর্গমাইল । ফলে দেখা যাচ্ছে, জনাব গাউস কথিত ‘বসন্তপুর ’ এখানে অনুপস্থিত। পরন্তু তাঁর দেওয়া তথ্যে বিশ্বাস করলে ধরে নিতে হবে যে, ‘কালীগঞ্জ’ ব্যতীত অন্য থানাগুলোর ভূমি এসময় খুলনার অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এতে করে স্বভাবতই সাতক্ষীরা থেকে খুলনা জেলায় অন্তর্ভুক্ত ভূমির পরিমাণ বহুলাংশে কমে যাবে বা যাওয়ার কথা। আবার এর থেকে জানা যায় ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ খুলনা ও বাগেরহাট মহকুমার মোট আয়তন ছিল যথাক্রমে ৬৯৫ ও ৬৮০ বর্গমাইল। ফলত খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা মহকুমার মোট আয়তন এসময় ছিল (৬৯৫+৬৮০+৭১৩) মোটামুটি ২০৮৮ বর্গমাইল । প্রসঙ্গত স্মর্তব্য যে, ১৮৮১ (প্রকাশ ১৮৮৩ ) এবং , ১৮৯১ (প্রকাশ ১৮৯৩) অনুযায়ী খুলনা জেলার আয়তন ছিল ২০৭৭ বর্গমাইল, অর্থাৎ স্যার হান্টারের চেয়ে মাত্র ১১ বর্গমাইল কম। ফলে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, অধ্যাপক গাউস এর দেওয়া তথ্য আদৌ সত্য নয়, অন্যকথায় খুলনা জেলা তৎকালীন সাতক্ষীরা মহকুমার শুধু ‘কালীগঞ্জ’ ও ‘বসন্তপুর’ নিয়ে গঠিত হয়নি। তাছাড়া তিনি বলেছেন যে এসময় খুলনা জেলার আয়তন ছিল ৪৬৩০ বর্গমাইল, যার মধ্যে সুন্দরবনের ভাগ ছিল ২৬২০। কিন্তু আমরা সমকালীন নির্ভরযোগ্য সরকারি তথ্য দিয়ে প্রমাণ করেছি যে, তখন খুলনার আয়তন ছিল ২০৭৭ বর্গমাইল, যা, ড. গাউসের হিসাবে ৪৬৩০ থেকে ২৬২০ বাদ দিলে হয় ২০২০ বর্গমাইল। এটিও সঠিক নয়। সুতরাং আমরা মনে করি এ বিষয়ে তথ্যপঞ্জি উদ্ধৃত করার আগে আমাদের আরও নিশ্চিত ও সতর্ক হওয়া উচিত। এবার ওপারবাংলা তথা পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট গবেষক ও ইতিহাসের প্রাচীন গ্রন্থর স্বনামধন্য সংকলক/ সংগ্রাহক/ সম্পাদক শ্রীকমল চৌধুরী (তাঁর এ ধরনের কঠিন পরিশ্রমসাধ্য উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় ও সময়োচিত কাজ ) পরিবেশিত একটি ভুল তথ্য ও উদ্ধৃত করা প্রয়োজন মনে করি।উল্লেখ্য যে সতীশচন্দ্র মিত্র মহাশয়ের ‘যশোহর -খুলনার ইতিহাস’ গ্রন্থ দুটিতে তাঁর (কমল চৌধুরী) যে মূল্যবান ‘সংযোজন’ রয়েছে (তিনিও ‘দ্য স্টেটসম্যান’ -এর বিভ্রান্তিকর সংবাদের কথা উল্লেখ করেছেন ) তাতে তিনি লিখেছেন:
 
‘‘স্বতন্ত্র জেলা হিসাবে খুলনার জন্ম ১৮৮১ সালে। ’’
 
যদিও অব্যবহিত পরের পৃষ্ঠাতেই উল্লেখ করেছেন :
 
‘‘ ১৮৮২ সালে নতুন জেলা গঠিত হয় সাতক্ষীরা , নড়াইল, খুলনা এবং বসিরহাটের অংশবিশেষ নিয়ে । ’’
 
সুতরাং খুলনা জেলার গঠনকাল ও মহকুমার সমাবেশ সম্পর্কিত আধুনিক ঐতিহাসিকদের বিভ্রান্তি কী ভয়াবহ পর্যায়ে গিয়েছে বা পৌঁছেছে তা সহজেই অনুমেয়।
 
এপর্যায়ে এখানে আরও একটি বিষয়ের উল্লেখ করে আমরা এ আলোচনা শেষ করবো।
 
ইতোমধ্যেই দেখিয়েছি যে খুলনা জেলার সৃষ্টি ও গঠনকাল সম্পর্কে যাঁরাই লিখেছেন তাঁদের প্রত্যেকেই জেলার গঠনুকাঠামোয় বিদ্যমান খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা মহকুমার উল্লেখ করলেও একই সঙ্গে তৎকালীন ‘দৈনিক স্টেটসম্যান’ এর পরিবেশিত চরম বিভ্রান্তিকর সংবাদটিও জুড়ে দিয়েছেন, যাতে ‘নড়াইল’ ও ‘বসিরহাট’ মহকুমাও খুলনার সঙ্গে যোগ হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছিল। তবে আমাদের ধারণা (পত্রিকার উক্ত সংখ্যাটি আমাদের পক্ষে বাস্তব কারণে দেখা সম্ভব হয়নি ) পত্রিকায় ‘নড়াইল’ ব্যতীত যেক্ষেত্রে ‘বসিরহাট’ শব্দটি ছিল, তা সম্ভবত ‘বসিরহাট’ না হয়ে হবে ‘বাগিরহাট ’ । স্মর্তব্য প্রচলিত এর ইংরেজি বানান মূল প্রজ্ঞাপনে লেখা হয়েছিল। যদিও আপাতদৃষ্টিতে এখানে একটি মাত্র অক্ষরের () ব্যবহারিক বা স্থান বিপর্যয় ঘটেছে, যা সংবাদদাতার বা সংশিষ্ট পত্রিকার ‘মুদ্রণ-প্রমাণ’ বা পত্রিকা থেকে যিনি প্রথম এটি সংকলিত বা উদ্ধৃত করেছিলেন তার ভুল হওয়াও বিচিত্র নয়, কিন্তু আদতে তা একটি জনপদের প্রাথমিক গঠন সম্পর্কেই বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে তা বলাইবাহুল্য। ‘খুলনা’র সুপ্রচলিত ইংরেজি বানান মূল প্রজ্ঞাপনে রূপে লেখা হয়েছিল । এই বানান ব্যবহারের কিছু নমুনা পরবর্তীকালে খুলনা জেলা কালেক্টরেটের সরকারি কোনো কোনো ‘সীলে’ ও লক্ষ্য করা গিয়েছে, যেমন । প্রসঙ্গত আরও উল্লেখ্য যে, খুলনার সুপ্রচলিত ইংরেজি বানান খোদ ইংরেজ যুগেই বিভিন্ন ঐতিহাসিক -প্রশাসক বিভিন্নভাবে লিখেছিলেন। উদাহরণত এর কথা বলা যায়। তাঁর অধুনা দুপ্রাপ্য কিন্তু বহু মূল্যবান তথ্যসংবলিত (১৮৬৮) শীর্ষক রিপোর্টে গ্যাস্ট্রেল লিখেছেন ’ (পৃষ্ঠা ২৬,৩৯,৪১) ; ‘বোর্ড অফ রেভেন্যু ’-র অপিসিয়েটিং সেক্রেটারি (১৮৫৪) লিখেছেন (দেখুন, ৬০-৭২); তৎকালীন (১৮৬৬-৬৭)শিক্ষা বিভাগীয় মহাপরিচালক ও উপ-মহাপরিচালক যথাক্রমে লিখেছেন (দেখুন, (দেখুন, ১৮৬৬-৬৭, ১৮৬৮, ১৯); ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে লিখেছিলেন ( (দেখুন, )। তবে প্রচলিত বানানে লেখারও বহু নিদর্শন পাওয়া যায়। যেমন,
 
অন্যদিকে যশোরের এককালীন (১৮৭২-৭৩) ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর শ্রীযুক্ত তাঁর -এ দুরকম বানান লিখেছেন, যথা (পৃষ্ঠা ২৩) ও (দ্বিতীয়াংশ, পৃষ্ঠা ২৫)।এ পর্যায়ে নীচে তিনটি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে খুলনা জেলার সৃষ্টি বা গঠনকালের ৩ মহকুমা যথা খুলনা সদর,বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা-র সংশিষ্টতা সম্পর্কিত তথ্য উদ্ধৃত করা হলো :যাই হোক এক্ষণে নিঃসন্দেহে আশা করা যায়, উপরের এই দীর্ঘ ও সপ্রমাণ আলোচনা -পর্যালোচনার পর এ জাতীয় বিভ্রান্তির স্থায়ী অপনোদন ঘটবে।তথ্যসূত্র/ উল্লেখপঞ্জি/ টীকাএ সম্পর্কে জানার জন্য দেখুন মৎপ্রণীত ‘বাংলাদেশের ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা, তৃতীয় খন্ড,’ ২০০৩, পৃষ্ঠা ২১৭-২০।প্রথম রাঙ্গামাটি (৬১১৬ বর্গকিলোমিটার ), দ্বিতীয় চট্টগ্রাম (৫২৮৩) বর্গকিলোমিটার ) ও তৃতীয় বান্দরবান (৪৪৭৯) বর্গকিলোমিটার ); সূত্র :দেখুন,দেখুন,যশোহর -খুলনার ইতিহাস , ১ম খন্ড ,
 
== ইতিহাস ==