পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Sam jhang (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
Sam jhang (আলোচনা | অবদান)
লিঙ্ক, তথ্য যোগ।
১২ নং লাইন:
}}
 
'''পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার''' বা '''সোমপুর বিহার''' বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের [[নওগাঁ জেলা|নওগাঁ জেলার]] বদলগাছি থানায় পাহাড়পুর গ্রামে অবস্থিত। এটি [[প্লাইস্টোসীন যুগ|প্লাইস্টোসীন যুগের]] বরেন্দ্র নামক অনুচ্চ এলাকার অন্তর্ভুক্ত। মাটিতে লৌহজাত পদার্থের উপস্থিতির কারণে মাটি লালচে। অবশ্য বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত মাটি অধিকাংশ স্থানে পললের নিচে ঢাকা পড়েছে। এ যাবৎ আবিষ্কৃতএকটি প্রাচীন [[বৌদ্ধ বিহার]] গুলোর মধ্যে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার দ্বিতীয় বৃহত্তম। [[পালবংশ|পালবংশের]] দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।[[১৮৭৯]] সালে স্যার [[কানিংহাম]] এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন। [[১৯৮৫]] সালে [[ইউনেস্কো]] এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান (World Heritage Site) এর মর্যাদা দেয়।
 
==অবস্থান ও আয়তন==
 
পুন্ড্রবর্ধনের রাজধানী [[পুন্ড্রনগর]] (বর্তমান মহাস্থান) এবং অপর শহর কোটিবর্ষ (বর্তমান বানগড়)এর মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত ছিল সোমপুর মহাবিহার। এর ধ্বংসাবশেষটি বর্তমান বাংলাদেশের বৃহত্তর রাজশাহীর অন্তর্গত [[নওগাঁ জেলা|নওগাঁ জেলার]] [[বাদলগাছি উপজেলা|বাদলগাছি উপজেলার]] পাহাড়পুর গ্রামে অবস্থিত। অপর দিকে জয়পুরহাট জেলার জামালগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে এর দূরত্ব পশ্চিমদিকে মাত্র ৫ কিমি। এর ভৌগলিক অবস্থান ২৫°০´ উত্তর থেকে ২৫°১৫´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৫০´ পূর্ব থেকে ৮৯°১০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত। গ্রামের মধ্যে প্রায় ০.১০ [[কিলোমিটার|বর্গ কিলোমিটার]] (১০ [[হেক্টর]]) অঞ্চল জুড়ে এই পুরাকীর্তিটি অবস্থিত। এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটি চতুর্ভূজ আকৃতির যার বাইরের অংশের প্রতিটি পার্শ্বের দৈর্ঘৈ ২৭৫ মিটার।<ref>'''পাহাড়পুর (প্রাকৃতিক কাঠামো)''' - [[বাংলাপিডিয়া] নিবন্ধ; লেখক: সিফাতুল কাদের চৌধুরী</ref> এটি বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের প্লাবন সমভূমিতে অবস্থিত। বিস্তীর্ণ সমভূমির মধ্যে একটি সুউচ্চ (পার্শ্ববর্তী সমতল ভূমি থেকে প্রায় ২৪ মিটার উচুতে অবস্থিত) পাহাড় সদৃশ স্থাপনা হিসেবে এটি টিকে রয়েছে। স্থানীয় লোকজন একে 'গোপাল চিতার পাহাড়' আখ্যায়িত করত। সেই থেকেই এর নাম হয়েছে পাহাড়পুর।<br />
গ্রামের মধ্যে প্রায় ০.১০ [[কিলোমিটার|বর্গ কিলোমিটার]] (১০ [[হেক্টর]]) অঞ্চল জুড়ে এই পুরাকীর্তিটি অবস্থিত। প্রত্নতাত্ত্বিক এই নিদর্শনটির ভূমি পরিকল্পনা চতুর্ভূজ আকৃতির। <ref>'''পাহাড়পুর (প্রাকৃতিক কাঠামো)''' - [[বাংলাপিডিয়া] নিবন্ধ; লেখক: সিফাতুল কাদের চৌধুরী</ref> এটি বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের প্লাবন সমভূমিতে অবস্থিত, [[প্লাইস্টোসীন যুগ|প্লাইস্টোসীন যুগের]] বরেন্দ্র নামক অনুচ্চ এলাকার অন্তর্ভুক্ত। মাটিতে লৌহজাত পদার্থের উপস্থিতির কারণে মাটি লালচে। অবশ্য বর্তমানে এ মাটি অধিকাংশ স্থানে পললের নিচে ঢাকা পড়েছে। পার্শ্ববর্তী সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৩০.৩০ মিটার উচুতে অবস্থিত পাহাড় সদৃশ স্থাপনা হিসেবে এটি টিকে রয়েছে। স্থানীয় লোকজন একে 'গোপাল চিতার পাহাড়' আখ্যায়িত করত। সেই থেকেই এর নাম হয়েছে পাহাড়পুর, যদিও এর প্রকৃত নাম সোমপুর বিহার।<br />
 
==ঐতিহাসিক পটভূমি==
২১ ⟶ ২৩ নং লাইন:
 
==আবিষ্কারের প্রেক্ষাপট==
ভারতীয় উপমহাদেশে ইংরেজদের আগমনের পর তারা সকল স্থানে জরিপ কাজ চালানো শুরু করে। পূর্ব ভারতে জরিপ কাজ পরিচালনা করেন [[বুকানন হ্যামিল্টন]] যিনি [[১৮০৭]] থেকে [[১৮১২]] সালের মধ্যে কোন এক সময়ে পাহাড়পুর পরিদর্শন করেন। এটিই ছিল পাহাড়পুরপাহাড়পুরে প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক পরিদর্শন। এরপর এই প্রত্নস্থল পরিদর্শনে আসেন [[ওয়েস্টম্যাকট]]। এঁরা দেশে ফিরে তাঁদের অভিজ্ঞতা সম্বলিত বিবরণ পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ করেন। এ সূত্র ধরেই [[১৮৭৯]] সালে স্যার [[আলেকজান্ডার কানিংহাম]] এই ঐতিহাসিক স্থানটি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের পর এই জমিটি ব্যাপক হানে খনন করার প্রতি তিনি আগ্রহ দেখান। কিন্তু জমির মালিক [[বলিহার|বলিহারের]] তদানীন্তন জমিদার তাকে এই কাজে বাঁধা দেয়।দেন। তাই তিনি বিহার এলাকার সামান্য অংশে এবং পুরাকীর্তির কেন্দ্রীয় ঢিবির শীর্ষভাগের সামান্য অংশে খনন কাজ চালিয়েই অব্যাহতি দেন। এই খননকার্যের সময় কেন্দ্রীয় ঢিবির অংশে চারপাশে উদ্‌গত অংশ বিশিষ্ট একটি বর্গাকার ইমারত আবিষ্কার করেন যার দৈর্ঘ্য ছিল ২২ ফুট।<ref>'''পাহাড়পুর''' - [[বাংলাপিডিয়া]] নিবন্ধ; লেখক: মোঃ শফিকুল আলম</ref> অবশেষে ১৯০৪ সালের প্রত্নতাত্ত্বিক আইনের আওতায় এ স্থান ১৯১৯ সালে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসাবে ঘোষিত হয়।
 
 
==প্রত্নতাত্ত্বিক খনন==
পাহাড়পুরের খননকার্যকে দুভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমতঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতাপূর্বকালীন সময়ে মূলত বৃটিশ যুগে, এবং দ্বিতীয়তঃ স্বাধীনতা-উত্তর কালে আশির দশকে।<br />
১৮৭৯ সালে কানিংহাম প্রথম উদ্যোগটি নেন। কিন্তু বলিহারের জমিদারের বিরোধিতায় কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় ঢিবির শীর্ষভাগ খনন করে তাঁকে থেমে যেতে হয়। এ খননে চারপাশে উদগত অংশযুক্ত প্রায় ৭মি উঁচু একটি কক্ষ আবিষ্কৃত হয়। এর দীর্ঘদিন পর ১৯২৩ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বরেন্দ্র গবেষণা পরিষদ ও ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগের যৌথ প্রচেষ্টায় এবং দিঘাপতিয়ার[[দিঘাপতিয়া]]র জমিদার পরিবারের সদস্য শরৎ কুমার রায়ের অর্থানুকূল্যে পুনরায় খননকাজ শুরু হয়। এ বছর ঐতিহাসিক [[ডি.আর.ভান্ডারকর|ডি.আর.ভান্ডারকরের]] নেতৃত্বে প্রত্নস্থলটির দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে খনন পরিচালিত হলে উত্তর-দক্ষিণে বিন্যস্ত একসারি কক্ষ এবং চত্বরের অংশবিশেষ পাওয়া যায়। [[রাখালদাস বন্দোপাধ্যায়]] [[১৯২৫]]-[[১৯২৬|২৬]] সালে খনন করে কেন্দ্রীয় ঢিবির উত্তরে প্রধান সিঁড়ি, পোড়ামাটির ফলকচিত্র শোভিত দেয়াল ও প্রদক্ষিণ পথসহ উত্তর দিকের মন্ডপ বা হল ঘর আবিষ্কার করেন। ফলে প্রথমবারের মত এ বিহারের ভূমিপরিকল্পনা ও দেয়ালচিত্রণ সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়। [[১৯৩০]]-[[১৯৩১|৩১]] এবং [[১৯৩১]]-[[১৯৩২|৩২]] সালে [[জি.সি.চন্দ্র]] বিহারের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ ও সংলগ্ন চত্বর খনন করেন। [[১৯৩৩]]-[[১৯৩৪|৩৪]] সালে [[কাশিনাথ দীক্ষিত|কাশিনাথ দীক্ষিতের]] তত্ত্বাবধানে ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ পুনরায় খনন করে। এতে বিহার ও মন্দিরের অবশিষ্ট অংশ এবং [[সত্যপীরের ভিটা]]য় একগুচ্ছ স্তূপসহ একটি তারা মন্দিরের ধ্বংশাবশেষ পাওয়া যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রফিক মোঘল পূর্ব বাহুর কয়েকটি কক্ষে গভীর উৎখনন পরিচালনা করেন।
 
স্বাধীনতার পরবর্তিপরবর্তী সময়ে [[১৯৮১]]-[[১৯৮৩|৮৩ ]] সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ 'নতুন তথ্যের অনুসন্ধান এবং ইতোপূর্বে দীক্ষিতের আবিষ্কৃত কক্ষসমূহের প্রাপ্ত নিদর্শনাবলী সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া'র উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ের খনন কাজ শুরু করে। [[১৯৮৭]]-[[১৯৮৯|৮৯]] সালে পুনরায় খনন পরিচালিত হয় বিহার অঙ্গন থেকে অপ্রয়োজনীয় জঞ্জাল ও পূর্ববর্তী খননের স্তূপীকৃত মাটি অপসারণ করে সুশৃঙ্খল পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যেন বিহারে বিদ্যমান জলাবদ্ধতা দূরীভূত হয় এবং লবণাক্ততা হ্রাস পায়।
 
==স্থাবর স্থাপত্য নিদর্শন সমূহ==