বুধ গ্রহ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
→‎অভ্যন্তরীক গঠন: বানান ঠিক করা হয়েছে
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল অ্যাপ সম্পাদনা
আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
টেমপ্লেটে সংশোধন
১০৫ নং লাইন:
<!---| temp_name3 = 90°N<ref name=vasa /> |min_temp3=180K |mean_temp3=180K | max_temp_3 = 180 K (−93 °C) -->
| pronounced = {{IPAc-en|audio=en-us-Mercury.ogg|ˈ|m|ɜr|k|j|ə|r|i}}
| adjectives = Mercurian,<ref name="webster" /> Hermian<ref name="Wiktionary">{{citeওয়েব webউদ্ধৃতি | url=https://en.wiktionary.org/wiki/Hermian | title=Hermian | work=Wiktionary | date=August 2, 2010 | accessdate=2 November 2013}}</ref>
| atmosphere = yes
| surface_pressure = trace
১২৮ নং লাইন:
 
== অভ্যন্তরীক গঠন ==
বুধ চারটি পার্থিব গ্রহের একটি অর্থাৎ এরও পৃথিবীর মত কঠিন পৃষ্ঠভূমি রয়েছে। চারটি পার্থিব গ্রহের মধ্যে এর আকার সবচেয়ে ছোট; বিষুবীয় অঞ্চলে এর ব্যাস ৪৮৭৯ কিমি। বুধের গাঠনিক উপাদানসমূহের মধ্যে ৭০% [[ধাতু|ধাতব]] এবং বাকি ৩০% [[সিলিকেট]] জাতীয়। এর ঘনত্ব সৌর জাগতিক বস্তসমূহের ঘনত্বের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, ৫.৪৩ গ্রাম/সেমি³; পৃথিবী থেকে সামান্য কম। মহাকর্ষীয় সংকোচনের প্রভাব সম্পূর্ণ উদ্ধার করতে পারলে বুধের গাঠনিক উপাদানসমূহের ঘনত্ব আরও বেশি হত।<ref>{{citeওয়েব webউদ্ধৃতি |url=http://astrogeology.usgs.gov/Projects/BrowseTheGeologicSolarSystem/MercuryBack.html |title=Mercury |publisher=U.S. Geological Survey |accessdate=2006-11-26}}</ref>
[[চিত্র:Mercury inside Lmb.png|thumb|left|200px|বুধের বৃহৎ কেন্দ্র]]
 
১৬৬ নং লাইন:
 
== চুম্বক গোলক ==
যদিও বুধ দীর্ঘ ১৭৬ দিনে একবার নিজ অক্ষে আবর্তন করে তথাপি এর একটি অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী এবং আপাতভাবে আঞ্চলিক [[চৌম্বক ক্ষেত্র]] রয়েছে। এটি পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের ০.১%।<ref>{{citeবই bookউদ্ধৃতি| title=Astronomy: The Solar System and Beyond| first=Michael A.| last= Seeds| year=2004| isbn=0534421113| publisher=Brooks Cole| edition=4th}}</ref> বুধের চৌম্বক ক্ষেত্রের উৎপত্তির কারণ পৃথিবীর মত হতে পারে; অর্থাৎ হয়ত বুধেও ঘূর্ণনরত তরল পদার্থ দ্বারা সৃষ্ট এক ধরণের [[ডায়নামো]] থেকেই বুধ গ্রহে এই চৌম্বক ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বুধের কেন্দ্র কোন তরল পদার্থের উপস্থিতির বিষয়টি নিয়ে বেশ সন্দীহান, কারণ দীর্ঘ ৪.৫ বিলিয়ন বছর ধরে গ্রহটি ধীরে ধীরে শীতল হচ্ছে।<ref>Spohn, T.; Breuer, D.; ''Core Composition and the Magnetic Field of Mercury'', American Geophysical Union, Spring Meeting 2005</ref> এখনও কেন্দ্রে তরল থেকে থাকলে তা থাকার একটি কারণ বর্তমানে দাড় করানো হয়েছে। মূলত একটি পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে যার মাধ্যমে বুধের কেন্দ্রে তরল কঠিনে রুপান্তরিত হয়নি। হতে পারে, অতি উচ্চ কক্ষীয় উৎকেন্দ্রিকতা বিশিষ্ট পর্যায় চলাকালীন সময়ে জোয়ার-ভাটার প্রভাব কেন্দ্রে কিছু তরল রয়ে যেতে সাহায্য করেছে। আবার এমনও হতে পারে, বুধের বর্তমান চৌম্বক ক্ষেত্র একটি আদি [[ডায়নামো তত্ত্ব|ডায়নামো প্রভাবের]] অবশিষ্ট হিসেবে রয়ে গেছে, যদিও উক্ত প্রভাবটির কোন অস্তিত্ব বর্তমানে নেই। বর্তমানে চৌম্বক ক্ষেত্র কঠিন হয়ে যাওয়া চৌম্বক পদার্থের ভিতরে জমাটবদ্ধ হয়ে আছে। বুধ গ্রহের চৌম্বক ক্ষেত্র এর চারপাশের সকল সৌর বায়ুকে বিক্ষিপ্ত করার মত যথেষ্ট শক্তিশালী। প্রকৃতপক্ষে এই চৌম্বক ক্ষেত্র গ্রহটির চারপাশে [[চুম্বক গোলক]] নামক একটি আস্তরণের সৃষ্টি করেছে সৌর বায়ু যাকে অতিক্রম করতে পারে না। চাঁদের সাথে বুধের মূল পার্থক্য এখানেই। চাঁদের চৌম্বক ক্ষেত্র বেশ দূর্বল হওয়ায় কোন চুম্বক গোলক নেই, যার ফলে সৌর বায়ু চন্দ্রপৃষ্ঠে চলে আসে অতি সহজেই।
 
== কক্ষপথ ও ঘূর্ণন ==
২১৩ নং লাইন:
অন্যান্য গ্রহগুলোর তুলনায় বুধ গ্রহকে অনেক কম পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। [[১৮০০]] সালে [[''Johann Schröter'']] বুধের পৃষ্ঠতলীয় বৈশিষ্ট্যসমূহ পর্যবেক্ষণ করেন, কিন্তু তিনি এর কক্ষীয় পর্যায় পরিমাপ করেন প্রায় ২৪ ঘণ্টা যা ছিল ভুল। ১৮৮০-এর দশকে [[''Giovanni Schiaparelli'']] বুধের বিস্তৃত মানচিত্র নির্ণয় করেন এবং বলেন, এর কক্ষীয় পর্যায় ৮৮ দিন। tidal locking-এর সময় বুধের কক্ষীয় পর্যায় ৮৮ দিনই পরিমাপ করা হয়েছিল।<ref>Holden, E. S.; ''Announcement of the Discovery of the Rotation Period of Mercury [by Professor Schiaparelli]'', Publications of the Astronomical Society of the Pacific, Vol. 2 (1890), p. 79</ref> এই ঘটনাটিকে [[সঙ্কালিক ঘূর্ণন]] (synchronous rotation) নামে অভিহিত করা হয়। পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদের ক্ষেত্রেও এটি ঘটতে দেখা যায়।
 
বুধের ঘূর্ণন যে সঙ্কালিক (synchronous) তা সকলেই গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু ১৯৬০-এর দশকে বেতার পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যখন এই প্রক্রিয়াটি প্রশ্নবিদ্ধ হয় তখন অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানীই বিশেষ আহত হন। এই গ্রহের জোয়ার-ভাটার আবদ্ধতার (tidally locked) কারণে এর অন্ধকার অংশ প্রচণ্ড ঠাণ্ডা হওয়ার কথা। কিন্তু তা থেকে প্রাপ্ত বেতার নিঃসরণ পরিমাপ করে দেখা গেছে অন্ধকার অংশের তাপমাত্রা আকাঙ্ক্ষিত তাপমাত্রার চেয়ে বেশি। অর্থাৎ বুধের অন্ধকার অংশও অতটা ঠাণ্ডা নয়, যতটা মানুষ এককালে মনে করতো। এই পর্যবেক্ষণের কারণেই বুধের সঙ্কালিক ঘূর্ণন বৈশিষ্ট্য সন্দেহের সম্মুখীন হয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এর বদলে শক্তিশালী তাপ-বন্টন তত্ত্ব এবং এর মতো আরও বেশ কয়েকটি পদ্ধতির কথা উল্লেখ করতে থাকেন। এসময়, তথা [[১৯৬৫]] সালে রাডারের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করার ফলস্বরূপ এটি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছিল যে, বুধের ঘূর্ণনকাল ৫৯ দিন। এই পর্যবেক্ষণের পর ইতালীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী [[Giuseppe Colombo]] লক্ষ্য করেন, ঘূর্ণনকালের এই মান বুধের কক্ষীয় পর্যায়কালের দুই-তৃতীয়াংশ। এর প্রেক্ষিতে তিনি নতুন একটি তত্ত্বের কথা বলেন। তার মতে বুধে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু ব্যতিক্রম ধরণের জোয়ার-ভাটা সংক্রান্ত আবদ্ধতার (tidal locking) সৃষ্টি হয়েছে। কারণ স্বাভাবিক আবদ্ধতা থাকলে গ্রহটির ঘূর্ণনকাল ও কক্ষীয় পর্যায়ের অনুপাত ১:১ হওয়ার কথা যা রেজোন্যান্স সৃষ্টি করে থাকে। কিন্তু বুধের ক্ষেত্রে সৃষ্ট টাইডাল লকিংয়ের কারণে এই অনুপাতটি হয়েছে ৩:২। এই অনুপাতটি একটি গ্রহের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট এবং এর কারণেই গ্রহগোলো একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য হয়।<ref>Colombo, G., ''Rotational Period of the Planet Mercury'', Nature, Vol. 208 (1965), p. 575</ref> Data from Mariner 10 subsequently confirmed this view.<ref>{{citeওয়েব webউদ্ধৃতি |url=http://history.nasa.gov/SP-423/mariner.htm |title=SP-423 Atlas of Mercury |publisher=NASA |accessdate=2007-03-09}}</ref>
 
ভূ-কেন্দ্রিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সৌর জগতের সবচেয়ে ভিতরের দিকে অবস্থিত এই গ্রহটি সম্বন্ধে আর তেমন কিছু জানা যায়নি। মানুষ যখন বুধের উদ্দেশ্যে মহাজাগতিক [[সন্ধানী যান]] প্রেরণ করে তখন এই গ্রহ সম্বন্ধে আরও অনেক কিছু জানা সম্ভব হয়। বর্তমানে বুধের অধিকাংশ মৌলিক ধর্মই মানুষ জানতে পেরেছে। অবশ্য অতি সাম্প্রতিককালে বুধ গ্রহ পর্যবেক্ষণের জন্য আরও শক্তিশালী ও নিখুঁত ভূ-কেন্দ্রিক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। [[২০০০]] সালে [[মাউন্ট উইলসন মানমন্দির|মাউন্ট উইলসন মানমন্দিরে]] অবস্থিত ৬০-ইঞ্চি দূরবীনের সাহায্যে বুধের পৃষ্ঠতলের বেশ কিছু উচ্চ রিজল্যুশনবিশিষ্ট ছবি তোলা হয়েছে। এমনকি বুধ অভিযানে প্রেরিত মেরিনার মহাকাশযান দ্বারাও এই অংশের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। মাউন্ট উইলসন মানমন্দির থেকে তোলা এ ধরণের ছবিগুলোকে [[লাকি ইমেজিং]]-এর অন্যতম দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে।<ref>Dantowitz, R. F.; Teare, S. W.; Kozubal, M. J.; [http://ukads.nottingham.ac.uk/cgi-bin/nph-bib_query?bibcode=2000AJ....119.2455D&amp;db_key=AST ''Ground-based High-Resolution Imaging of Mercury''], Astronomical Journal, Vol. 119 (2000), pp. 2455-2457</ref> এরপর তোলা আরও কিছু ছবির মাধ্যমে বুধে একটি সুবৃহৎ দুই রিং বিশিষ্ট ইমপ্যাক্ট অববাহিকার (double ringed impact bsin) অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়েছে। এই অববাহিকাটি এমনকি [[ক্যালরিস বেসিন|ক্যালরিস বেসিনের]] চেয়েও বড়। মেরিনার মহাকাশযানের মাধ্যমে এই বেসিন যে গোলার্ধে অবস্থিত তার ছবি ধারণ করা সম্ভব হয়নি। আপাতত এই বেসিনটির নাম দেয়া হয়েছে [[স্কিনাকাস অববাহিকা]]।<ref name=Ksa06>{{cite journal|author =Ksanfomality, L. V.|title= ''Earth-based optical imaging of Mercury''| journal= Advances in Space Research |volume= 38|pages= 594|year= 2006|url= http://adsabs.harvard.edu/cgi-bin/nph-bib_query?bibcode=2006AdSpR..38..594K&amp;db_key=AST&amp;data_type=HTML&amp;format=&amp;high=461152a03222956}}</ref>
২২৬ নং লাইন:
{{মূল|মেরিনার ১০}}
 
বুধ গ্রহ অভিযানে প্রেরিত একমাত্র মাজাগতিক সন্ধানী যানের নাম [[মেরিনার ১০]]। মার্কিন [[মহাকাশ]] সংস্থা [[নাসা]] ১৯৭৪-৭৫ সালে এই যান প্রেরণ করে।<ref name="Dunne" /> কাজটি বেশ কষ্টকর ছিল। এজন্য মেরিনার ১০ [[শুক্র গ্রহ|শুক্র গ্রহের]] অভিকর্ষকে কাজে লাগিয়েছে। মূলত শুক্রের অভিকর্ষকে কাজে লাগিয়ে মেরিনার ১০ তার কক্ষীয় বেগকে নিয়ন্ত্রণ করে বুধের দিকে অগ্রসর হতে পেরেছে। [[মহাকর্ষীয় স্লিংশট]] নামক এই প্রভাব মেরিনার ১০ই প্রথমবারের মত ব্যবহার করেছে। মেরিনার ১০ প্রথমবারের মত বুধের অতি কাছ থেকে প্রচুর ছবি পাঠাতে সক্ষম হয়েছে। এর ফলে প্রচুর খাদবিশিষ্ট বুধ পৃষ্ঠের প্রকৃত চিত্র সম্বন্ধে জানা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া আরও অনেকগুলো ভূ-তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য আবিষ্কৃত হয়েছে। যেমন সুবৃহৎ খাড়া ঢালু গর্ত। এই গর্তগুলোকে পরবর্তীতে বুধের ঠাণ্ডা [[লোহা|লৌহ]] কেন্দ্রের কারণে সৃষ্ট বলে বর্ণনা করা হয়েছে।<ref>{{citeওয়েব webউদ্ধৃতি|title=''NASA - 2006 Transit of Mercury''|accessdate=March 28|accessyear=2007|url=http://www.nasa.gov/vision/universe/solarsystem/20oct_transitofmercury.html}}</ref> দুর্ভাগ্যবশত মেরিনার ১০এর কক্ষীয় পর্যায় ঠিক বুধের ৩ নাক্ষত্রিক দিনের সমান ছিল। এর কারণে মেরিনার ১০ যখনই বুধের কাছাকাছি হতে পেরেছে তখন সবসময়ই বুধের একটিমাত্র পৃষ্ঠ মহাকাশযানটির সামনে আসতে পেরেছে। ফলস্বরুপ বুধের সমগ্র পৃষ্ঠের মাত্র ৪৫% মানচিত্রের মাধ্যমে চিত্রিত করা সম্ভব হয়েছে।
 
সন্ধানী যানটি তিন তিনবার বুধের খুব সন্নিকটে যেতে পেরেছিল। এর মধ্যে নিকটতম ছিল বুধ পৃষ্ঠের ৩২৭ কিমি দূর পর্যন্ত। প্রথমবার কাছে যাওয়ার মাধ্যমে মেরিনার ১০ বুধে একটি অভাবনীয় চৌম্বক ক্ষেত্রের অস্তিত্ব আবিষ্কার করে। ভূ-তত্ত্ববিদরা সবাই এতে আশ্চর্য হয়েছিলেন। তারা দেখেন বুধের ঘূর্ণন বেগ যা ধরা হয়েছিল তার চেয়ে বেশ খানিকটা ধীর। এর ফলে উক্ত চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে সেখানে একটি [[ডায়নামো]] ক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। দ্বিতীয়বার যখন মেরিনার ১০ বুধের খুব সন্নিকটে যায় তখন বুধ পৃষ্ঠের প্রচুর ছবি তোলা সম্ভব হয়। কিন্তু তৃতীয়বার নিকটবর্তী হওয়াটা ছিল আরও কার্যকরী। কারণ তখন গ্রহটির চৌম্বক ধর্ম সম্বন্ধে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাত্ত জানা সম্ভব হয়। উপাত্তগুলো থেকে বোঝা যায়, গ্রহটির চৌম্বক ক্ষেত্র অনেকটা পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের মত যা গ্রহের চারপাশের [[সৌর বায়ু|সৌর বায়ুকে]] পথচ্যুত করতে পারে। অবশ্য বুধের চৌম্বক ক্ষেত্রের উৎপত্তি সম্বন্ধে এখনও বিতর্ক রয়ে গেছে এবং এ সম্বন্ধে বেশ কয়েকটি তত্ত্ব উপস্থাপিত হয়েছে। শেষবারের মত বুধের সন্নিকটে যাওয়ার পর মেরিনার ১০-এর জ্বালানী প্রায় ফুরিয়ে যায়। এর ফলে [[পৃথিবী]] থেকে এই অভিযানের নিয়ন্ত্রণ রক্ষা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠে। অবশেষে পৃথিবীর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অভিযানের কার্যকলাপ বন্ধ করে দেয়। মূলত পৃথিবী থেকে সঙ্কেত দেয়া হয়েছিল যেন, মেরিনার ১০ নিজেই নিজের কার্যকলাপ বন্ধ করে দেয়। ধারণা করা হয় মেরিনার ১০ এখনও সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে এবং প্রতি কয়েকমাসে একবার করে বুধ গ্রহের সন্নিকটে যাচ্ছে।<ref>{{citeওয়েব webউদ্ধৃতি|title=''NSSDC Master Catalog Display: Mariner 10''|accessdate=October 20|accessyear=2005|url=http://nssdc.gsfc.nasa.gov/nmc/tmp/1973-085A.html}}</ref>
 
==== মেসেঞ্জার ====
২৩৫ নং লাইন:
বুধের উদ্দেশ্যে [[নাসা]] কর্তৃক প্রেরিত দ্বিতীয় অভিযান ছিল [[মেসেঞ্জার (নভোযান)|মেসেঞ্জার]] ('''ME S S EN GE R''' - '''ME'''rcury '''S'''urface, '''S'''pace '''EN'''vironment, '''GE'''ochemistry, and '''R'''anging) যা [[২০০৪]] সালের [[আগস্ট ৩]] তারিখে প্রেরিত হয়। । একটি [[বোয়িং ডেল্টা ২]] রকেটের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের [[কেপ ক্যানাভেরাল মহাশূন্য স্টেশন]] থেকে এটি প্রেরণ করা হয়েছিল। এই সন্ধানী যানটি বেশ কয়েকবার বুধের সন্নিকটে যেতে সমর্থ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। একে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে তা সুনির্দিষ্ট প্রাসে চলার মাধ্যমে বুধের চারদিকে নিজস্ব একটি কক্ষপথ তৈরীতে সমর্থ হয়। ২০০৫ সালের আগস্ট মাসে এটি পৃথিবীর কাছ দিয়ে উড়ে যায় এবং [[২০০৭]] সালের অক্টোবর ও জুন মাসে [[শুক্র গ্রহ|শুক্র গ্রহের]] কাছ দিয়ে উড়ে যায়। এই যানটি বুধের নিকট দিয়ে তিন তিনবার উড়ে যাবে বলে শিডিউল করা হয়েছে। এর উড়ে যাওয়ার সময়গুলো হবে জানুয়ারি ২০০৮, অক্টোবর ২০০৮ এবং সেপ্টেম্বর ২০০৯। এর পর তা ২০১১ সালের মার্চ মাসে বুধ গ্রহের চারপাশে কক্ষপথে প্রবেশ করবে।
 
মেসেঞ্জারকে পাঠানো হয়েছে মূলত বুধের ছয়টি মৌলিক বিষয়ে অনুসন্ধান করার জন্য। এগুলো হচ্ছে: বুধের উচ্চ ঘনত্ব, এর ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস, এর [[চৌম্বক ক্ষেত্র|চৌম্বক ক্ষেত্রের]] প্রকৃতি, এর কেন্দ্রের গঠন, এর মেরু অঞ্চলসমূহে আসলেই বরফ রয়েছে কিনা, এবং এর পাতলা বায়ুমণ্ডল কোথা থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে সন্ধানী যানটিতে মেরিনার ১০-এর চেয়ে আরও শক্তিশালী ইমেজিং যন্ত্রপাতি সন্নিবেশিত করা হয়েছে যাতে বুধের আরও কাছ থেকে অপেক্ষাকৃত অধিক রিজল্যুশনবিশিষ্ট ছবি তোলা যায়। এছাড়া এতে রয়েছে যুতসই [[বর্ণালীবীক্ষণ যন্ত্র]] যার সাহায্যে বুধের ভূত্বকে মৌলসমূহের প্রাচুর্য নির্ণয় করা সম্ভব, রয়েছে [[ম্যাগনেটোমিটার]] এবং আয়নিত কণিকাসমূহের গতিবেগ নির্ণয়ের যন্ত্রাবলী। সন্ধানী যানটি যখন বুধকে কেন্দ্র করে তার কক্ষপথ বরাবর আবর্তন করবে তখন এর গতিবেগের সূক্ষ্মতম পরিবর্তন পরিমাপের জন্য এই গতিমাপক পন্ত্রগুলো দেয়া হয়েছে। এই পরিবর্তন পরিমাপের মাধ্যমে বুধের অভ্যন্তরীন গঠন সম্বন্ধে বিস্তারিত জানা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।<ref>{{citeওয়েব webউদ্ধৃতি|title=Johns Hopkins University’s MESSENGER mission web pages|accessdate=27 April|accessyear=2006|url=http://messenger.jhuapl.edu/}}</ref>
 
==== বেপিকলম্বো ====
২৪৩ নং লাইন:
[[জাপান]] [[ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি|ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির]] সাথে যৌথভাবে একটি অভিযানের পরিকল্পনা করছে যা [[বেপিকলম্বো]] নামে পরিচিত। এই অভিযানে দুই সন্ধানী যান ব্যবহৃত হবে যারা বুধের কক্ষপথ পরিভ্রমণ করবে। দুটি সন্ধানী যানের একটি বুধের মানচিত্র প্রণয়নের কাজ করবে এবং অপরটি এর [[ম্যাগনেটোস্ফিয়ার]] নিয়ে গবেষণায় ব্যবহৃত হবে। একটি ল্যান্ডার সহ মূল পরিকল্পনাটি করা হয়ে গেছে। ২০১৩ সালে [[রাশিয়া|রাশিয়ার]] [[সয়ুজ লাউঞ্চ ভেহিক্‌ল|সয়ুজ]] রকেটসমূহ এই সন্ধানী যানটি বহনের কাজ করবে। মেসেঞ্জারের সাথেই বেপিকলম্বো বেশ কয়েকবার বুধের অতি সন্নিকটে যাবে। একইভাবে এটি চাঁদ এবং শুক্র গ্রহের নিকট দিয়ে উড়ে গিয়ে বুধের কক্ষপথে প্রবেশ করার পূর্ব বেশ কয়েকবার এর নিকটবর্তী হবে। আনুমানিক ২০১৯ সালের দিকে এটি বুধের কক্ষপথে প্রবেশ করবে এবং প্রায় এক বছর ধরে একে অধ্যয়ন করবে।
 
সন্ধানী যান দুটি মেসেঞ্জারের মতই একটি বর্ণালীবীক্ষণ অ্যারে বহন করবে এবং গ্রহটিকে অনেকগুলো তরঙ্গদৈর্ঘ্য্যে পর্যবেক্ষণ করবে। ধর্তব্য তরঙ্গদৈর্ঘ্য্যের মধ্যে রয়েছে [[অবলোহিত]], [[অতিবেগুনী রশ্মি|অতিবেগুণী]], [[রঞ্জন রশ্মি]] এবং [[গামা রশ্মি]]। কার্যকরভাবে বুধ গ্রহ অধ্যয়নের পাশাপাশি বিজ্ঞানীরা বেপিকলম্বোর মাধ্যমে আরেকটি কাজ করার ব্যাপারে আশাবাদী। এটি হচ্ছে সূর্যের সাথে সন্ধানী যানটির নৈকট্যকে ব্যবহার করে [[সাধারণ আপেক্ষিকতা]] তত্ত্বের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো পরীক্ষা করা। বেশ নিখুঁতভাবে এটি করা সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। এই অভিযানটির নামকরণ করা হয়েছে বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী [[গিউসেপ কলম্বো|গিউসেপ (বেপি) কলম্বোর]] (Giuseppe Colombo) নামানুসারে। তিনিই প্রথম সূর্যের সাথে বুধের কক্ষীয় [[রেজোন্যান্স]] নির্ণয় করেছিলেন। এছাড়াও তিনি [[১৯৭৪]] সালে মেরিনার ১০ মহাকাশযানের অভিকর্ষ-প্রভাবিত প্রাস নির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।<ref name="ESA pages">{{citeওয়েব webউদ্ধৃতি|title=''ESA Science & Technology: BepiColombo''|accessdate=27 April|accessyear=2006|url=http://sci.esa.int/science-e/www/area/index.cfm?fareaid=30}}</ref>
 
== তথ্যসূত্র ==