মহাভারত: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

[অপরীক্ষিত সংশোধন][অপরীক্ষিত সংশোধন]
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
WikitanvirBot (আলোচনা | অবদান)
বট বানান ঠিক করছে, কোনো সমস্যায় তানভিরের আলাপ পাতায় বার্তা রাখুন
Debjitpaul10 (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১৫ নং লাইন:
=== গ্রন্থ রচনা ===
[[File:Ganesa writing the Mahabharat.jpeg|thumb|236x236px|[[ব্যাসদেব|ব্যাসদেবের]] কাহিনীটিকে [[গণেশ]] লিখিত রূপ দিচ্ছেন|left]]
মহাভারতে বর্ণিত হয়েছে, মহর্ষি [[ব্যাসদেব|বেদব্যাস]] [[হিমালয় পর্বতমালা|হিমালয়ের]] এক পবিত্র গুহায় [[ধ্যান|তপস্যা]] করবার পর মহাভারতের সম্পূর্ণ ঘটনাটি স্মরণ করেন এবং মনে মনেই এর রচনা করেন।<ref name="ReferenceA">মহাভারত-গীতা প্রেস গোরখ্‌পুর, আদি পর্ব অধ্যায় ১, শ্লোক-৯৯-১০৯</ref> ব্যাসদেব চাইলেন এই মহান কাহিনীকাহিনি সিদ্ধিদাতা গণেশের দ্বারা লিপিবদ্ধ হোক। গণেশ লিখতে সম্মত হলেন, কিন্তু তিনি শর্ত করলেন যে, তিনি একবার লেখা শুরু করলে তার শেষ না হওয়া পর্যন্ত [[ব্যাসদেব|ব্যাসদেবের]] [[আবৃত্তি]] একটিবারও থামতে পারবে না। তখন ব্যাসদেব বুদ্ধুমতোবুদ্ধিমতো পাল্টা একটি শর্ত উপস্থাপনা করলেন – ‘গণেশ"গণেশ যে শ্লোকটি লিখবেন, তার মর্মার্থ না বুঝে লিখতে পারবেন না’।না"। ভগবান গণেশ এই প্রস্তাব স্বীকার করলেন। এইভাবে ব্যাসদেব মাঝে মাঝে কিছু কঠিন শ্লোক রচনা করে ফেলতেন, যার ফলে [[গণেশ]]কে শ্লোকটির অর্থ বুঝতে সময় লাগত এবং সেই অবসরে ব্যাসদেব তাঁর পরবর্তী নতুন শ্লোকগুলি ভেবে নিতে পারতেন। এইরূপে সম্পূর্ণ মহাভারত রচনা করতে প্রায় ৩ বৎসর লেগে যায়।<ref>[http://jaihindi.blogspot.com/2009/08/blog-post_03.html महाभारत किसने लिखा?]। जयहिन्दी। बालसुब्रमण्यम। ३ अगस्त २००९। अभिगमन तिथि:१ मई २०१०</ref><ref>মহাভারত-গীতা প্রেস গোরখ্‌পুর, আদি পর্ব অধ্যায় ১, শ্লোক-২২-৭০</ref> [[ব্যাসদেব]] প্রথমে অধর্মের বিরুদ্ধে ধর্মের জয় সূচক উপাখ্যান যুক্ত ১০০০০০ শ্লোক সমন্বিত আদ্য জয় গ্রন্থ রচনা করেন। সর্বশেষে তিনি ষাট লক্ষ শ্লোক সমন্বিত অপর একটি গ্রন্থ রচনা করেন, যে গ্রন্থের ৩০ লক্ষ শ্লোক দেবলোকে, ১৫ লক্ষ শ্লোক পিতৃলোকে, ১৪ লক্ষ রক্ষোযক্ষ লোকে স্থান পেয়েছে এবং অবশিষ্ট মাত্র ১ লক্ষ শ্লোক এই মনুষ্যলোকে ‘মহাভারত’ নামে সমাদৃত হয়েছে। এই সম্বন্ধে মহাভারতেই বর্ণিত হয়েছে : {{cquote2|'''ত্রিংশচ্ছতসহস্রঞ্চ দেবলোকে প্রতিষ্ঠিতম্॥'''<br />'''পিত্রে পঞ্চদশ প্রোক্তং রক্ষোযক্ষে চতুর্দ্দশ।'''<br />'''একং শতসহস্রন্তু মানুষেষু প্রতিষ্ঠিতম্॥'''}}
 
=== গ্রন্থ প্রচার ===
[[File:Snakesacrifice.jpg|thumb|236x236px|মহারাজ [[জন্মেজয়|জন্মেজয়ের]] সর্পযজ্ঞ]]
মহাভারত রচনা সম্পূর্ণ হলে ব্যাসদেব এই কাব্য তাঁর পুত্র [[শুকদেব]]কে দিয়ে অধ্যয়ন করান, পরে শিষ্য পরম্পরায় গ্রন্থটি [[বৈশম্পায়ন]], পৈল, [[জৈমিনি]], অসিত-দেবল প্রভৃতি ঋষি দ্বারা পঠিত হয়। শুকদেব এই গ্রন্থটির কাহিনীকাহিনি গন্ধর্ব, যক্ষ ও [[অসুর|রাক্ষস]]দের মধ্যে, দেবর্ষি [[নারদ]] দেবতাদের মধ্যে ও অসিত-দেবল পিতৃদের মধ্যে প্রচারিত করেন।<ref name="ReferenceB">মহাভারত-গীতা প্রেস গোরখ্‌পুর, আদি পর্ব অধ্যায় ১, শ্লোক-১০৩-১০৭</ref> বৈশম্পায়ন এই কাহিনীটিকাহিনিটি প্রথম মনুষ্যদের মধ্যে 'ভারত' নামে প্রচার করেন। [[অর্জুন|অর্জুনের]] প্রপৌত্র মহারাজ [[জন্মেজয়|জন্মেজয়ে]]র মহাযজ্ঞে ঋষি বৈশম্পায়ন ওই কাহিনীকাহিনি জন্মেজয় সহ সৌতি এবং উপস্থিত মুনি-ঋষিদের শোনান।<ref name="ReferenceB"/>
 
একদা সম্রাট [[পরীক্ষিৎ]] তক্ষক নাগের দংশনে মারা গেলে ক্রোধের বশে পরীক্ষিৎপুত্র [[জনমেজয়]] বিশ্বের সমস্ত সাপেদের ধ্বংস করবার পণ নিয়ে সর্পযজ্ঞের আয়োজন করেন। কিন্তু তক্ষকের অনুরোধে আস্তিক মুনি এই যজ্ঞ পণ্ড করে দেন। জনমেজয়ের অনুতাপ হয় ও পাপ খণ্ডন করতে [[অশ্বমেধ যজ্ঞ|অশ্বমেধ যজ্ঞের]] আয়োজন করেন। কিন্তু, কলিযুগে অশ্বমেধ যজ্ঞ করা অনর্থের কারণ মনে করে [[ইন্দ্র|দেবরাজ ইন্দ্র]] ছল করে এই যজ্ঞও নষ্ট করেন ও জনমেজয়ের ওপর ব্রাহ্মণহত্যারব্রহ্মহত্যার পাপ পড়ে। এই মহাপাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে তিনি [[ব্যাসদেব|ব্যাসদেবের]] পরামর্শ মতো ঋষি বৈশম্পায়নের কাছ থেকে পবিত্র মহাভারতের কাহিনি শ্রবণ করে পাপমুক্ত হন। পরে ঐ যজ্ঞে উপস্থিত গল্পকথক [[সৌতি|উগ্রশ্রবা সৌতি]] কাহিনিটি শুনে তা নৈমিষারণ্যে যজ্ঞরত শৌনক ও অন্যান্য মুনিদের শোনান। এইরূপে মনুষ্যসমাজে মহাভারতের কাহিনীকাহিনি প্রচারিত হয়।<ref>'''কাশীদাসী মহাভারত''', দেব সাহিত্য কুটীর।</ref>
 
=== বিশালতা ===
মহাভারতের বিশালতা তথা দার্শনিক গূঢ়তা কেবল [[ভারত মহাসাগর|ভারতের]] [[পুরাণ|পৌরাণিক আখ্যান]]ই নয়, বরং এটিকে সমগ্র [[হিন্দু ধর্ম]] এবং [[বেদ|বৈদিক দর্শন]] ও সাহিত্যের সারসংক্ষেপ বলা যেতে পারে। 'মহাভারত' নামটির উৎপত্তি প্রসঙ্গে একটি আখ্যান প্রচলিত যে, [[দেবতা]]রা তুলাযন্ত্রের একদিকে চারটি [[বেদ]] রাখেন ও অন্যদিকে বৈশম্পায়ন প্রচারিত ভারত গ্রন্থটি রাখলে দেখা যায় ভারত গ্রন্থটির ভার চারটি বেদের চেয়েও অনেক বেশি। সেকারণেসেই কারণে ভারত গ্রন্থের বিশালতা দেখে দেবগণ ও ঋষিগণ এর নামকরণ করলেন 'মহাভারত'। আবার একে ''''পঞ্চম বেদ'''<nowiki/>'ও বলা হয়। জগতের তাবৎ শ্রেষ্ঠ বস্তুর সঙ্গে একে তুলনা করে বলা হয়েছে: "'''মহত্ত্বাদ্ ভারতবত্ত্বাচ্চ মহাভারতমুচ্যতে।'''"<ref>'''কাশীদাসী মহাভারত''', দেব সাহিত্য কুটীর, পৃষ্ঠা-১২১৮, পরিশিষ্ট-মহাভারত পরিচয়।</ref>
 
[[বাংলা ভাষা|বাংলাতেও]] মহাভারতের বিশালতা সম্পর্কিত একটি সুপ্রচলিত প্রবাদ রয়েছে: {{cquote2|'''যা নেই ভারতে, তা নেই ভারতে।''' }}
১৫৭ নং লাইন:
[[File:Karwar Pictures - Yogesa 19.JPG|thumb|235x235px|[[কর্ণাটক|কর্ণাটকের]] মুরুদেশ্বর মন্দিরে ([[ভারত]]) রূপায়িত ব্যাস ও গণেশের মহাভারত রচনা]]
 
মহর্ষি [[ব্যাসদেব|বেদব্যাস]] কথিত মহাভারতের কাহিনী রচনা করতে সম্ভবত ৩ বৎসর কাল অতিবাহিত হয়েছিল, এর দ্বারা অনুমান করা যেতে পারে, ঐ সময় লিখন পদ্ধতি তেমন আধুনিক ছিল না, সে কালে প্রচলিত নানা বৈদিক সাহিত্যগুলোকে মুনিঋষিরা গুরু-শিষ্য [[পরম্পরা]] অনুসারে নিজেরা মৌখিক রূপে স্মরণ করে রাখতেন। সে সময় [[আর্য]] ভাষা [[সংস্কৃত]] ও [[ব্রাহ্মী]] ঋষিদের মান্য ভাষার মর্যাদা পেয়েছিল।<ref>'''রাজবদ্ রুপ্বেষৌ তে ব্রাহ্মী বাচং বিভর্ষি চ।''''''কো নাম ত্বং কুত চ অসি কস্য পুত্র চ শংস মে ॥'''
 
(মহাভারত আদিপর্ব ৮১/১৩)
</ref> এই রূপে সমগ্র [[বেদ|বৈদিক সাহিত্য]] তথাকথিত গুরু-শিষ্য পরম্পরায় মৌখিক রূপে সংরক্ষিত থাকত। এরপর সময়ের সাথে সাথে বৈদিক যুগের পতন হয় এবং সেই প্রাচীন গুরু-শিষ্য পরম্পরায় স্মরণ করার রীতি লুপ্ত হয়, তখন সেই সমস্ত সাহিত্যগুলিকে লিখিত রূপে সংরক্ষণের রীতি প্রচলিত হল।হয়। এই সময় [[ব্রাহ্মী লিপি পরিবার|ব্রাহ্মী লিপির]] মাধ্যমে লেখার প্রচলন ঘটে। বর্তমান পণ্ডিতগণের ধারণা যে, মহাভারত প্রাচীন অবস্থা থেকে বর্তমান অবস্থায় পৌঁছানো কয়েকটি ধাপের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়। গবেষকদের মতে, মহাভারতের রচনাকাল ৩টি প্রারম্ভিক স্তরে বিভক্ত।<ref name=":0">'''রামায়ণ-মহাভারত: কাল, ইতিহাস, সিদ্ধান্ত''' -লেখক বাসুদেব পোদ্দার</ref> এই ৩ স্তরের সময়কাল নিম্নরূপ:
* '''৩১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ'''<ref name=":1">ওমিলোস মেলিটন কালচারাল ইন্সটিটিউট</ref>
ক. সর্বপ্রথমে [[ব্যাসদেব]] ১০০ পর্ব ও এক লাখ শ্লোক সমন্বিত 'জয়' গ্রন্থ রচনা করেন, যা পরবর্তী কালে মহাভারত নামে প্রসিদ্ধ হয়।
 
খ. পরে ব্যাস প্রচারিত ঐ কাহিনীটিকেকাহিনিটিকে তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়ন [[জনমেজয়|জনমেজয়ের]] মহা যজ্ঞে জনমেজয় সহ [[সৌতি]] অন্যান্য মুনিদের শোনান। এই সময় গ্রন্থটির নাম হয় 'ভারত'।
 
* '''২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ'''<ref name=":1" />
 
তৃতীয় বার বৈশম্পায়ন কথিত ভারত কাহিনীটিকেকাহিনিটিকে [[সৌতি]] ১৮টি খণ্ডে বিভক্ত করেন ও নৈমিষারণ্যে স্থিত [[শৌনক]] ও অন্যান্য মুনিদের গল্পের আকারে শোনান। সৌতির এই গল্পটিই 'মহাভারত' নামে সমগ্র বিশ্বে প্রচারিত হয়।<ref name=":2">'''রামায়ণ-মহাভারত: কাল, ইতিহাস, সিদ্ধান্ত''' -লেখক বাসুদেব পোদ্দার, পৃষ্ঠা ১৯৭</ref>
 
* '''১২০০-৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ'''<ref name=":1" />
 
পরে লিখন পদ্ধতির উন্নতি হলে সৌতি প্রচারিত এই প্রসিদ্ধ মহাভারতের কাহিনী [[পাণ্ডুলিপি]] বা পুঁথিতে [[ব্রাহ্মী]] ([[ব্রাহ্মী লিপি পরিবার]]) কিংবা [[সংস্কৃত|সংস্কৃতে]] লিখিত হয়। এর পরও নানা মুনি ও পণ্ডিতরা নিজস্ব শৈলীতে মহাভারতের মূল কাহিনীর সাথে আরও অনেক সমসাময়িক কাহিনীরকাহিনির সংযোজন করেন।
[[File:Kan-terra-cota-11.jpg|left|thumb|252x252px|[[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] [[কান্তনগর মন্দির|কান্তনগর মন্দিরে]] খোদিত [[টেরাকোটা|টেরাকোটায়]] মহাভারতের দৃশ্য, ১৮ শতকে জমিদার প্রাণনাথ রায় কর্তৃক নির্মিত।]]
 
১৮২ নং লাইন:
* '''৬০০-৪০০খ্রিস্টপূর্বাব্দ'''
 
[[পাণিনি]] রচিত '''[[অষ্টাধ্যায়ী|অষ্টাধ্যায়ীতে]]''' (৬০০-৪০০ খ্রিঃপূঃ) মহাভারতের কাহিনীকাহিনি ও কৃষ্ণার্জুনের কিছু প্রসঙ্গ রয়েছে। অতএব মহাভারত যে পাণিনির যুগের অনেক আগে থেকেই প্রচলিত ছিল, তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।<ref name=":0" /><ref name=":3" />
 
* '''১ম শতাব্দী'''
২৩২ নং লাইন:
* ''[[পাণ্ডু]]'' :<span lang="BN"> বিচিত্রবীর্য ও অম্বালিকার পুত্র, যার পাঁচ পুত্র পাণ্ডব নামে পরিচিত।</span>
* ''[[বিদুর]]'' :'''<span lang="BN"></span>''' <span lang="BN">অম্বিকার দাসীর ধর্মজ্ঞানী পুত্র, পাণ্ডব ও কৌরবদের সম্পর্কে কাকা হন।</span>
* ''[[ব্যাসদেব]]'' :<span lang="BN"> মহাভারতের রচয়িতা মহান ঋষি, যদিও কাহিনীতেওকাহিনিতেও এঁর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, ধৃতরাষ্ট্র ও পাণ্ডু এঁরই ঔরসজাত।</span>
* ''[[ভীম]]'' :'''<span lang="BN"></span>''' <span lang="BN">পবনদেবের বরজাত দ্বিতীয় পাণ্ডব, মহাশক্তিধর গদাধারী, মহাযুদ্ধে দুর্যোধনকে হত্যা করেন।</span>
* ''[[ভীষ্ম]]'' :'''<span lang="BN"></span>''' <span lang="BN">মহারাজ শান্তনু ও গঙ্গাদেবীর বীর পুত্র, পিতৃসত্য পালনের জন্য ব্রহ্মচর্য গ্রহণ করেন।</span>
৩৬৪ নং লাইন:
১৬শ শতকের শেষার্ধে কাশীরাম দাস বর্তমান [[বর্ধমান জেলা|বর্ধমান জেলার]] কাটোয়া মহকুমার অধীনে ইন্দ্রাণী পরগনার অন্তর্গত সিঙ্গী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।<ref>'''কাশীদাসী মহাভারত''', দেব সাহিত্য কুটীর, পৃষ্ঠা-১২২৪, পরিশিষ্ট-কাশীরাম দাসের পরিচয়।</ref> তাঁর পিতার নাম ছিল কমলাকান্ত। কাব্য রচনায় তাঁর পরিবারের সুনাম ছিল। তাঁর জ্যেষ্ঠভ্রাতা কৃষ্ণদাস ‘[[শ্রীকৃষ্ণবিলাস]]’ কাব্য রচনা করেন ও কনিষ্ঠ ভ্রাতা গদাধর ‘[[জগন্নাথমঙ্গল]]’ কাব্য রচনা করেন। কাশীরাম ছিলেন দেব-উপাধিধারী কায়স্থ। সম্ভবত তিনি সপ্তদশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলা মহাভারত রচনা শুরু করেন। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, কাহিনির বিরাট পর্ব অবধি লিখবার পর তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র নন্দরাম সম্ভবত কাব্যের বাকি অংশ সম্পূর্ণ করেন। কাশীরাম মেদিনীপুর জেলার আওয়াসগড়ের রাজার শাসনাধীন স্থানে এক পাঠশালায় শিক্ষকতা করতেন। কাশীরাম [[সংস্কৃত ভাষা|সংস্কৃত]] ও কাব্যশাস্ত্রে সুপণ্ডিত ছিলেন, কিন্তু তিনি মূল সংস্কৃত মহাভারতের যথাযথ অনুবাদ না করে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা মূল কাহিনিকে কিছুটা বদলে রচনা করেছেন। [[চৈতন্য মহাপ্রভু|চৈতন্য]]-পরবর্তী যুগে রচিত এই গ্রন্থে বৈষ্ণব কাশীরামের ভক্তিবাদের প্রাধান্য স্থানে স্থানে পরিলক্ষিত হয়েছে। সম্পূর্ণ গ্রন্থটি পয়ার চতুর্দশপদী ও ত্রিপদী ছন্দে লিখিত হয়েছে।<ref>'''কাশীদাসী মহাভারত''', দেব সাহিত্য কুটীর, পৃষ্ঠা ১২২৪-১২২৯, পরিশিষ্ট-কাশীরাম দাসের পরিচয়-কাশীরামের কাব্য বৈশিষ্ট্য।</ref> গ্রন্থটিতে কাশীরামের একটি জনপ্রিয় ভণিতা (পদের শেষে কবির নামযুক্ত পঙ্‌ক্তি) পাওয়া যায়: {{cquote2|'''মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।'''<br />'''কাশীরাম দাস কহে, শুনে পুণ্যবান্॥'''}}
 
কাশীরাম রচিত এই মহাভারকটি ''ভারত-পাঁচালী'' বা ‘[[কাশীদাসী মহাভারত|''কাশীদাসী মহাভারত'']]’ নামে বাঙালীর ঘরে ঘরেবাংলায় সমাদৃত। এছাড়াও [[কালীপ্রসন্ন সিংহ]], [[কবীন্দ্র পরমেশ্বর]] ও [[শ্রীকর নন্দী|শ্রীকর নন্দীর]] লেখা মহাভারতও বাংলায় প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।
* '''অন্যান্য অনুবাদ'''
[[ইংরেজি ভাষা|ইংরেজি ভাষায়]] মহাভারত প্রথম অনুবাদ করেন কিশোরীমোহন গঙ্গোপাধ্যায়, মুনশিরাম মনোহরলাল প্রকাশনীতে ১৮৮৩ থেকে ১৮৯৬ সালের মধ্যে। গীতা প্রেসের পক্ষ থেকে পণ্ডিত রামনারায়ণদত্ত শাস্ত্রী পাণ্ডে রাম [[হিন্দি ভাষা|হিন্দী ভাষায়]] মহাভারতের অনুবাদ করেছেন। অষ্টাদশ শতাব্দীতে সম্রাট [[আকবর|আকবরের]] পৃষ্ঠপোষকতায় ফয়জ়ি ও অব্দ্ অল-কাদীর বদাউনি [[ফার্সি ভাষা|ফারসি ভাষায়]] মহাভারত অনুবাদ করেন, যার নামকরণ করা হয় ‘রজ়্‌ম্নামেহ্’। [[তামিল ভাষা|তামিল ভাষায়]] মহাভারতের অনুবাদ করেছেন মানালুর রঙ্গচরিয়ার।
৩৭১ নং লাইন:
সময়ের সাথে সাথে মহাভারতের বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্করণ প্রকাশিত হয়, যাদের অধিকাংশের মধ্যেই মূল কাহিনীর সামান্য অদলবদল অথবা সমসাময়িক প্রচলিত কাহিনির সংযোজন করা হয়েছে। ভারতে মহাভারতের তিনটি পৃথক সংস্করণ পাওয়া যায় – উত্তর ভারতীয়, দক্ষিণ ভারতীয় ও মালাবারী। মালাবারী মহাভারত আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতকে পরিপূর্ণতা লাভ করে। বাকি দু’টি সম্ভবত আরও কিছুকাল পরে পরিপূর্ণ হয়ে আধুনিক রূপ লাভ করেছে।
 
মহাভারতের তামিল সংস্করণটি তেরুক্কুট্টু বা কাত্তৈক্কুট্টু নামে মঞ্চে অভিনীত হয়, এতে প্রধানত দ্রৌপদীর চরিত্রের ওপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরে, [[ইন্দোনেশিয়া|ইন্দোনেশিয়ায়]] একাদশ শতকে [[জাভা দ্বীপ|জাভার]] রাজা ধর্মবংশের পৃষ্ঠপোষকতায় ককবিন ভারতযুদ্ধ নামে মহাভারতের একটি সংস্করণ বিকশিত হয়, যেটি পরে বর্তমান হিন্দু প্রধান বালী দ্বীপে প্রসিদ্ধি লাভ করে। এর থেকে উদ্ভূত নৃত্যনাটক ওয়ায়াঙ্গ ওয়ঙ জাভা সংস্কৃতি ও সাহিত্যকে পুষ্ট করেছে। এই সংস্করণটি ভারতীয় সংস্করণ থেকে অতি স্বল্প পৃথক। উদাহরণ হিসেবে এতে দ্রৌপদীর পঞ্চস্বামী ছিলেন না, তাঁর বিবাহ শুধু যুধিষ্ঠিরের সাথেই হয়; শিখণ্ডীকে অর্জুনের স্ত্রী হিসেবে বর্ণিত হয়েছে, যিনি যুদ্ধে পুরুষদেহ না ধারণ করেই এক স্ত্রীযোদ্ধা হিসেবে অংশগ্রহণ করেন; আবার এতে গান্ধারীকে মহীয়সী নারী হিসেবে না দেখিয়ে এক খলচরিত্র হিসেবে দেখানো হয়েছে। এতে সেমর, পেত্রুক, গরেঙ্গ্ নামে কিছু চরিত্র সংযোজিত হয়েছে, যা মূল মহাভারতে নেই। মহাভারতের একটি অসম্পূর্ণ কাওয়ী সংস্করণ ইন্দোনেশিয়ার বালীবালি দ্বীপে প্রাপ্ত হয়েছে।
 
=== চলচ্চিত্র ও দূরদর্শন ===