হুমায়ুন কবির (কবি): সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে
Muhsin uddin (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১১ নং লাইন:
১৯৭২ সালের ৬ জুন তিনি আততায়ীর গুলিতে ঢাকায় নিহত হন। তাঁকে তৎকালীন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি সেলিম শাহনেওয়াজ ফজলু ও সুলতান চক্রের সক্রিয়, ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করে। ৬ জুন রাত ৯টায় ঢাকার ইন্দিরা রোডের বাড়ি থেকে তাঁকে ডেকে এনে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই খতমে অংশগ্রহণকারী গেরিলাদের পরবর্তীতে অভিনন্দন জানিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। হুমায়ুন কবিরের বোনকে বিয়ে করেছিলেন সেলিম শাহনেওয়াজ ফজলু। এই আত্মীয়তার সম্পর্ক ছাড়াও হুমায়ুন কবিরের ব্যাপারে পার্টিতে অভিযোগ ওঠে তাঁর ভাই ফিরোজ কবিরের বহিষ্কারকে মেনে না নেয়া। ফিরোজ কবিরকে ইতিপূর্বে একজন "কমরেড" হত্যার অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। হুমায়ুন কবির হত্যার কারণ হিসেবে পার্টির বক্তব্যে বলা হয়, 'সাহিত্যিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করার পুরোপুরি বুর্জোয়া দৃষ্টিকোণ সম্পন্ন হওয়ায় স্বভাবতই হুমায়ুন কবিরের মধ্যে ব্যক্তি স্বার্থের প্রাধান্য ছিলো'। হুমায়ুন কবিরের হতযাকে পরবর্তীতে পার্টি 'খতম করাটা ভুল হয়েছে' বলে মূল্যায়ন করে।<ref>আশরাফ কায়সার, ''বাংলাদেশে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড'', মাওলা ব্রাদার্স, ঢাকা, দ্বিতীয় মুদ্রণ, জুলাই ১৯৯৮, পৃষ্ঠা ১৫৪-১৫৫।</ref>
 
===== লেখক জীবন =====
==প্রকাশিত গ্রন্থ==
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অব্যবহিত পূর্ব-মুহূর্তে বাংলার আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার পাশাপাশি বাংলার প্রগতিশীল লেখক-সমাজও কলম ছেড়ে সরাসরি রাস্তায় নেমে আসেন। এই সংগ্রামী তরুণ লেখক গোষ্ঠির উদ্যোগে এ সময়ে সংগঠিত হয় ‘লেখক সংগ্রাম শিবির’। বাংলাদেশের ভৌগোলিক স্বাধীনতা অর্জিত হওয়ার পরপরই এই তরুণ লেখক গোষ্ঠির উদ্যোগে গঠিত হয় ‘বাংলাদেশ লেখক শিবির’ । শুরুতেই একটি ‘আন্দোলন’ হিসেবে লেখক শিবিরের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এ পর্যায়ে হুমায়ুন কবির ও কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা ‘বাংলাদেশ লেখক শিবির’ এর আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ লেখক শিবিরের তৎকালীন তরুণ কর্মীদের মধ্যে সর্বজনাব আহম্মদ ছফা, ফরহাদ মাজহার, রফিক কায়সার, মুনতাসীর মামুন, হেলাল হাফিজ, রফিক নওশাদ প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ‘বাংলাদেশ লেখক শিবিরের’ অন্যতম আহ্বায়ক থাকাকালেই ১৯৭২ সালের ৬ই জুন অজ্ঞাত আততায়ীর গুলিতে হুমায়ুন কবির নিহত হন। এ সময়ে তিনি ইন্দিরা রোডে একটি ভাড়া বাসায় বাস করতেন।
তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ হচ্ছে ''কুসুমিত ইস্পাত'' (১৯৭২) কবিতাগ্রন্থ এবং ১৯৮৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, [[বাংলা একাডেমী]] থেকে প্রকাশিত ''হুমায়ুন কবির রচনাবলী''।<ref name="একাডেমী">[[সেলিনা হোসেন]] ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত; ''বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান''; ঢাকা; এপ্রিল ২০০৩; পৃষ্ঠা- ৪৪০- ৪৪১।</ref>
জীবদ্দশায় জনাব হুমায়ুনের কোনো গ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি। মৃত্যুর কয়েক মাস পূর্বে তিনি গ্রন্থ প্রকাশের কথা সক্রিয়ভাবে ভাবতে শুরু করেন। সৌভাগ্যক্রমে তাঁর অন্যতম শুভানুধ্যায়ী ও বন্ধু জনাব আহমদ ছফার মাধ্যমে তিনি তাঁর প্রথম কাব্য গ্রন্থের জন্য একজন প্রকাশকও পেয়ে যান। কাব্যগ্রন্থের প্রকাশক পাওয়া কঠিন। তাই তিনি তাঁর প্রথম পাণ্ডুলিপিতে যথাসম্ভব বেশি কবিতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তৈরি হয় ৭৪টি কবিতা সম্বলিত পাণ্ডুলিপি ‘কুসুমিত ইস্পাত’। গ্রন্থটি যখন ছাপাখানায় পুরোপুরি কম্পোজ হয়ে গেছে তখনই হুমায়ুন লোকান্তরিত হলেন। নিজের মুদ্রিতগ্রন্থের প্রথম কপিটি দেখার সৌভাগ্য তাঁর হলো না।
বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘হুমায়ুন কবির রচনাবলী’তে ‘রক্তের ঋণ’ নামে কবি হুমায়ুন কবিরের আরেকটি কাব্যগ্রন্থ সংকলিত হয়েছে। এই পাণ্ডুলিপিটি হুমায়ুন নিজ হাতে তৈরী করে যান নি। তাঁর মৃত্যুর পর ঢাকার একটি বিখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের অনুরোধে জনাব আলী মনোয়ার, মিসেস সুলতানা রেবু ও কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা এ গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি তৈরি করেন। এই পাণ্ডুলিপিতে হুমায়ুনের গণ-জাগরণ-মূলক কবিতাগুলোর প্রাধান্য রয়েছে। ‘রক্তের ঋণে’র বাইরে প্রাপ্ত হুমায়ুনের অন্যান্য কবিতাবলী ‘অগ্রন্থিত কবিতা’ শিরোনামে উক্ত রচনাবলীতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। হুমায়ুন কবিরের কবিতা প্রসঙ্গে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন যে কবিতার শরীর নির্মাণে, বিশেষতঃ উপমা, উৎপ্রেক্ষা ও শব্দনির্মাণে হুমায়ুন বরাবরই জীবনানন্দীয় পরিমণ্ডলের অধিবাসী।
‘হুমায়ুন কবির রচনাবলী’ শীর্ষক উক্ত সংকলনে যে সব কবিতা অন্তর্ভূক্ত তার বাইরেও হুমায়ুনের কিছু কবিতা রয়েছে।
কবিতা ছাড়াও হুমায়ুন কবির কিছু প্রবন্ধ ও কিছু গল্পও লিখেছেন। জীবনানন্দ সম্পর্কিত প্রবন্ধাবলী ছাড়াও সাহিত্য, ও সমাজ, বিশেষতঃ ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে হুমায়ুন কবির বেশ কিছু তীক্ষ্ণধী প্রবন্ধ লিখেছেন। ‘কণ্ঠস্বর’ পত্রিকাকে কেন্দ্র করে ষাটের দশকে যে কৃত্রিম গদ্যচর্চার আবহ সৃষ্টি হয়েছিলেণা, হুমায়ুনের বাক্যবিন্যাস সেই আবহেরই অনুবর্তী বলে অনুমিত হয়। হুমায়ুন কবির গল্প লিখেছেন অনেকটা খেয়ালের বশে। সত্তুরের দশকের শুরুতে রফিক নওশাদ সম্পাদিত গল্পপত্রিকা ‘সূচীপত্র’-ই ছিল তাঁর গল্পরচনার প্রধান প্রেরণা। তাঁর গল্পগুলোও কাব্যগন্ধী, সংক্ষিপ্ত ও প্রতীকী।
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা লিখছেন যে জনাব হুমায়ুনের বন্ধু-ভাগ্য ছিলো সুপ্রসন্ন। তাঁর মৃত্যুর পর একথা বিশেষভাবে প্রমাণিত। অসংখ্য তরুণ কবি তার সম্পর্কে কবিতা লিখেছেন। ফরহাদ মাজহার লিখেছেন তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘আমি ডেকে বলতে পারতুম হুমায়ুন’। তাৎক্ষনিকভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে মুহম্মদ নূরুল হুদা নিজেও রফিক নওশাদ সম্পাদিত কবিতা পত্রিকা ‘কালপুরুষ’-এ (আগস্ট, ১৯৭২) স্পন্দিত গদ্যে লিখলেনঃ ‘আরেক লোরকা তিনি, বঙ্গ দেশীয় লোরকা, রক্তাক্ত হয়েছেন জীবনে, মৃত্যুতে এবং কবিতায়।’ <ref>{{বই উদ্ধৃতি|last1=মুহসিন|first1=মুহম্মদ|title=চরিতাভিধান: রাজাপুরের গুণী ও বিশিষ্টজন|publisher=নালন্দালোক}}</ref>
===== পরিবার =====
জনাব হুমায়ুনের স্ত্রী ছিলেন তাঁরই সহপাঠিনী সুলতানা রেবু। মৃত্যুকালে হুমায়ুন এক পুত্র (আদিত্য কবির, ডাক নাম ‘সেতু’) ও এক কন্যার (অদিতি কবীর, ডাক নাম ‘খেয়া’) জনক ছিলেন। মৃত্যুর কিছুদিন পর জন্মগ্রহণ করে তাঁর দ্বিতীয় পুত্র অনিন্দ্য কবির, ডাক নাম ‘অভীক’।
 
==তথ্যসূত্র==