সতীদাহ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Dexbot (আলোচনা | অবদান)
Removing Link GA template (handled by wikidata)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন:
{{নারীর প্রতি সহিংসতা}}
 
'''সতীদাহ প্রথা''' হচ্ছে [[হিন্দু ধর্মাবলম্বী]] বিধবা নারীদের স্বামীর চিতায় সহমরণে বা আত্মহুতি দেবার ঐতিহাসিক প্রথা, যা [[রামমোহন রায়|রাজা রামমোহন রায়ের]] ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বন্ধ হয়।
 
== সতীদাহ প্রথার ইতিহাস ==
==ঐতিহাসিক প্রমাণ===
[[চিত্র:Burning of a Widow.jpg|thumb|250px|''"Ceremony of Burning a Hindu Widow with the Body of her Late Husband"'', from ''Pictorial History of China and India'', 1851.]]
গুপ্ত সাম্রাজ্যের (খৃষ্টাব্দ [[৪০০]]) পূর্ব হতেই এ প্রথার প্রচলন সম্পর্কে ঐতিহাসিক ভিত্তি পাওয়া যায়। গ্রিক দিগ্বিজয়ী সম্রাট আলেকজান্ডারের সাথে ভারতে এসেছিলেন ক্যাসান্ড্রিয়ার ঐতিহাসিক এরিস্টোবুলুস। তিনি টাক্সিলা ([[তক্ষশীলা]]) শহরে সতীদাহ প্রথার ঘটনা তার লিখনিতেলেখনিতে সংরক্ষণ করেছিলেন। গ্রিক জেনারেল [[ইউমেনেস]] এর এক ভারতীয় সৈন্যের মৃত্যুতে তার দুই স্ত্রীই স্বপ্রণোদিতস্বত:প্রণোদিত হয়ে সহমরণে যায়; এ ঘটনা ঘটে খৃষ্ট পূর্বাব্দ ৩১৬ সালে।
===পৌরানিক ও মধ্যযুগীয় আদর্শ===
 
মূলতঃ স্বপ্রণোদিতস্বত:প্রণোদিত হয়েই পতির মৃত্যুতে স্ত্রী অগ্নিতে আত্মাহুতি দিত। পৌরাণিক কাহিনীতে এ আত্মাহুতি অতিমাত্রায় শোকের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই দেখা হত। [[মহাভারত]] অনুসারে [[পাণ্ডু|পাণ্ডুর]] দ্বিতীয় স্ত্রী [[মাদ্রী]] সহমরণে যান কারণ মাদ্রী মনে করেছিলেন পান্ডুর মৃত্যুর জন্য তিনি দায়ী যেহূতু পান্ডুকে যৌনসহবাসে মৃত্যুদন্ডের অভিশাপ দেওয়া হয়েছিল। রাজপুতানায় "[[জহর ব্রত]]" প্রচলিত যাতে কোন শহর দখল হবার পূর্বেই পুরনারীরা আত্মসম্মান রক্ষার্থে আগুনে ঝাঁপ (বা জহর বা বিষ) দিয়ে স্বেছায় মৃত্যুবরণ করতেন, যা সতীদাহের অনুরূপ। কিন্তু কালক্রমে বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে হিন্দু স্ত্রীকে সহমরণে[[সহমরণ]]এ বাধ্য করা হত। বিশেষ করে কোন ধনী লোকের মৃত্যুর সম্পত্তি অধিকার করার লোভে তার আত্মীয়রা তার সদ্যবিধবা স্ত্রীকে ধরে বেঁধে, ঢাক-ঢোলের শব্দ দ্বারা তার কান্নার আওয়াজকে চাপা দিয়ে তার স্বামীর সাথে চিতায় শুইয়ে পুড়িয়ে মারতো।
 
[[চিত্র:Hindu Suttee.jpg|thumb|250px|right|"A Hindu Suttee"]]
==সতীদাহ প্রথা রদ==
 
[[১৮২৯]] সালের [[ডিসেম্বর ৪]] এ বৃটিশ [[ভারত|ভারতের]] বেঙ্গল প্রেসিডেন্সীতে সতিদাহ প্রথাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল ঘোষণা করা হয়। এসময় বেঙ্গলের গভর্ণর ছিলেন [[লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংক]]। অবশ্য এ আইনী কার্যক্রম গৃহীত হয় মূলতঃ [[রামমোহন রায়|রাজা রামমোহন রায়ের]] সামাজিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতেই। এই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে লন্ডনের প্রিভি কাউন্সিলে মামলা করা হয় । প্রিভি কাউন্সিল [[১৮৩২]] সালে বেঙ্গলের গভর্ণর লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংকের ১৮২৯ এর আদেশ বহাল রাখেন। খুব অণ্পসময়ের মধ্যে ভারতের অন্যান্য কোম্পানী অঞ্চলেও সতীদাহ প্রথাকে বাতিল ঘোষণা করা হয়।
 
১৬ ⟶ ১৭ নং লাইন:
পাশ্চাত্যের গবেষকদের অনেকের মাঝে দ্বন্দ্ব থাকলেও ভারতীয় বেদ ভাষ্যকারগণদের মতে বেদে সতীদাহের উল্লেখ নেই। বরং স্বামীর মৃত্যুর পর পুনর্বিবাহের ব্যাপারেই তাঁরা মত দিয়েছেন। এ বিষয়ে অথর্ববেদের দুটি মন্ত্র প্রণিধানযোগ্য:
 
[[অথর্ববেদ]] ১৮.৩.১
ইয়ং নারী পতি লোকং বৃণানা নিপদ্যত উপত্ব্য মর্ন্ত্য প্রেতম্।
ধর্মং পুরাণমনু পালয়ন্তী তস্ম্যৈ প্রজাং দ্রবিণং চেহ ধেহি।।
হে মনুষ্য!এই স্ত্রী পুনর্বিবাহের আকাঙ্খা করিয়া মৃত পতির পরে তোমার নিকট আসিয়াছে।সে সনাতন ধর্মকে পালন করিয়া যাতে সন্তানাদি এবং সুখভোগ করতে পারে।<ref>আনন্দলোক-আচার্য সুভাষ শাস্ত্রী পৃঃ-৭৭, বৈদিক সাহিত্য কেন্দ্র, যশোর</ref><ref>ATHARVA VEDA, vol. II, page 552, English translation by Dr. Tulsi Ram</ref>
 
[[অথর্ববেদ]] ১৮.৩.২ (এই মন্ত্রটি ঋগবেদ ১০.১৮.৮ এ ও আছে)
উদীষর্ব নার্ষ্যভি জীবলোকং গতাসুমেতমুপশেষ এহি।
হস্তাগ্রাভস্য দিধিষোস্তবেদং পত্যুর্জনিত্বমভি সংবভূব।।
হে নারী!মৃত পতির শোকে অচল হয়ে লাভ কি?বাস্তব জীবনে ফিরে এস।পুনরায় তোমার পাণিগ্রহনকারী পতির সাথে তোমার আবার পত্নীত্ব তৈরী হবে।<ref>আনন্দলোক-আচার্য সুভাষ শাস্ত্রী পৃঃ-৭৭, বৈদিক সাহিত্য কেন্দ্র, যশোর</ref><ref>ATHARVA VEDA, vol. II, page 553, English translation by Dr. Tulsi Ram</ref>
 
বেদের অন্যতম ভাষ্যকার সায়ণাচার্যওসায়নাচার্যও তাঁর তৈত্তিরীয় আরণ্যক ভাষ্যে এই মতই প্রদান করেন।<ref>Taittiriya Aranyak Sayana Bhasya, T. A. 6/1/13-14</ref>
 
==মুসলিম শাসকদের মনোভাব==
[[দিল্লি সুলতানি]] রাজত্বকালে সতীদাহ প্রথার জন্য যাতে বিধবাকে বাধ্য না করা হয় তাই সতীর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে সতীদাহ প্রথা সম্পাদন করার রীতি ছিল। যদিও পরে এটি একটি প্রথানুগামিতার রুপরূপ নেয়।<ref name="Central Sati Act">[http://www.pucl.org/from-archives/Gender/sati.htm Central Sati Act - An analysis] by Maja Daruwala is an advocate practising in the Delhi High Court. Courtsy: The Lawyers January 1988. The web site is called "[http://www.pucl.org/history.htm People's Union for Civil Liberties]"</ref> মুঘল সম্রাটরা স্থানীয় চলিত প্রথায় সাধারণত অন্তর্ভুক্ত হতেন না কিন্তু তারা এই প্রথা বন্ধের ব্যাপারে সচেষ্ট ছিলেন।<ref name=Columbia>[http://www.columbia.edu/itc/mealac/pritchett/00islamlinks/ikram/part2_17.html XVII. "Economic and Social Developments under the Mughals"] from ''Muslim Civilization in India'' by S. M. Ikram edited by Ainslie T. Embree New York: Columbia University Press, 1964. This page maintained by Prof. [[Frances Pritchett]], [[Columbia University]]</ref> মুঘল সম্রাট হুমায়ুন (১৫০৮-১৫৫৬) সর্বপ্রথম সতীদাহের বিরুদ্ধে রাজকীয় হুকুম দেন।<ref name="Central Sati Act"/> এরপর সম্রাট আকবর (১৫৪২-১৬০৫) সতীদাহ আটকানোর জন্য সরকারীভাবে আদেশ জারি করেন যে, কোন নারী, প্রধান পুলিশ কর্মকর্তার সুনির্দিষ্ট অনুমতি ছাড়া সতীদাহ প্রথা পালন করতে পারবেন না।<ref name="Central Sati Act"/><ref name=Columbia/> এছাড়াও এই প্রথা রদের জন্য তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের অধিকার দেন যা তারা যতদিন সম্ভব ততদিন সতীর দাহের সিদ্ধান্তে বিলম্ব করতে পারেন।<ref name="Central Sati Act"/> বিধবাদেরকে উত্তরবেতন, উপহার, পুনর্বাসন ইতাদি সাহা্য্যসাহায্য দিয়েও এই প্রথা না পালনে উত্সাহিত করা হত।<ref name="Central Sati Act"/> ফরাসি বণিক এবং ভ্রমণকারী তাভেনিয়ের লেখা থেকে জানা যায় যে, সম্রাট শাহ জাহানের রাজত্বে সঙ্গে শিশু আছে এমন বিধবাদেরকে কোনমতেই পুড়িয়ে মারতে দেওয়া হত না এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে, গভর্নররা তড়িঘড়ি সতীদাহের অনুমতি দিতেন না, কিন্তু ঘুষ দিয়ে করান যেত।<ref name=Columbia/><ref>Tavernier's own chapter on ''sati'' here, {{cite book|last1=Tavernier|first1=Jean Baptiste|url=https://archive.org/stream/sixvoyagesJohnB00Tave#page/169/mode/2up/|pages=169–173|year=1678|last2=P.|first2=J. (tr.)|chapter= 2.2.10|title=The six voyages of John Baptista Tavernier|publisher=R.L. and M.P.|location=London}}</ref>
 
==তথ্যসূত্র==
৩৭ ⟶ ৩৮ নং লাইন:
 
[[বিষয়শ্রেণী:হিন্দু ধর্ম]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলার সামাজিক ব্যবস্থা]]
 
[[বিষয়শ্রেণী:নারীর প্রতি সহিংসতা]]