বাঘা যতীন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
অ বট: আন্তঃউইকি সংযোগ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, যা এখন উইকিউপাত্ত ... |
অ সম্প্রসারণ |
||
১৯ নং লাইন:
}}
'''যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়''' ([[৭ ডিসেম্বর]], [[১৮৭৯]] - [[১০ সেপ্টেম্বর]], [[১৯১৫]]) ছিলেন একজন [[বাঙালি]] [[ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন|ব্রিটিশ-বিরোধী]] বিপ্লবী নেতা। তিনি '''বাঘা যতীন''' নামেই সকলের কাছে সমধিক পরিচিত।
[[ব্রিটিশ ভারত|ভারতে]] ব্রিটিশ-বিরোধী [[ভারতের স্বাধীনতার বিপ্লবী আন্দোলন|সশস্ত্র আন্দোলনে]] তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। বাঘা যতীন ছিলেন [[বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি|বাংলার]] প্রধান বিপ্লবী সংগঠন [[যুগান্তর দল|যুগান্তর দলের]] প্রধান নেতা। [[প্রথম বিশ্বযুদ্ধ|প্রথম বিশ্বযুদ্ধের]] অব্যবহিত পূর্বে কলকাতায় জার্মান যুবরাজের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করে তিনি জার্মানি থেকে অস্ত্র ও রসদের প্রতিশ্রুতি অর্জন করেছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে [[যুগান্তর দল#জার্মান প্লট|জার্মান প্লট]] তাঁরই মস্তিস্কপ্রসূত।<ref>"Nixon Report", in ''Terrorism in Bengal'',[abbreviation ''Terrorism''] Edited and Compiled by A.K. Samanta, Government of West Bengal, Calcutta, 1995, Vol. II, p.625.</ref>
সশস্ত্র সংগ্রামের এক পর্যায়ে সম্মুখ যুদ্ধে [[উড়িষ্যা|উড়িষ্যার]] [[বালাসোর|বালাসোরে]] তিনি গুরুতর আহত হন এবং বালাসোর হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। [[এন্ট্রান্স পরীক্ষা]] পাস করার পর তিনি [[সাঁটলিপি]] ও [[টাইপ]] শেখেন এবং পরবর্তী সময়ে বেঙ্গল গভর্নমেন্টের [[স্ট্যানোগ্রাফার]] হিসেবে নিযুক্ত হন। যতীন ছিলেন শক্ত-সমর্থ ও নির্ভীক চিত্তধারী এক যুবক। অচিরেই তিনি একজন আন্তরিক, সৎ, অনুগত এবং পরিশ্রমী কর্মচারী হিসেবে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেন। একই সঙ্গে তাঁর মধ্যে দৃঢ আত্মমর্যাদা ও জাতীয়তাবোধ জন্মেছিল।
==প্রাথমিক জীবন==
৪৬ ⟶ ৪৫ নং লাইন:
১৯০৩ সালে যোগেন্দ্রনাথ বিদ্যাভূষণের বাড়িতে শ্রী অরবিন্দের সাথে পরিচিত হয়ে যতীন বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে জড়িত হন। সরকারী নথিপত্রে যতীন পরিচিত হন শ্রী অরবিন্দের দক্ষিণহস্ত হিসাবে।<ref name="gobwb">"Terrorism in Bengal", Government of West Bengal, 1995, Vol. V, p. 63 (Sealy's report)</ref> [[অরবিন্দ ঘোষ|অরবিন্দ ঘোষের]] সংস্পর্শে এসে যতীন শরীর গঠন আখড়ায় গাছে চড়া, সাঁতার কাটা ও বন্দুক ছোঁড়ার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। যুগান্তর দলে কাজ করার সময় নরেনের (এম.এন রায়) সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় এবং অচিরেই একে-অপরের আস্থাভাজন হন।
▲==দেশপ্রেমিক, প্রতিবাদী ও কৌশলী দৃষ্টিভংগী==
[[১৯০০]] সাল থেকে মূল 'অনুশীলন সমিতি'র প্রতিষ্ঠাতাদের সংগে হাত মিলিয়ে জেলায় জেলায় যতীন পত্তন করেন এই গুপ্তসমিতির শাখা। পথে-ঘাটে ভারতীয় নাগরিকদের লাঞ্ছনার প্রতিবাদে সদা প্রস্তুত যতীনের এই দেশাত্মবোধ গুণগ্রাহী হুইলারের মনে কৌতুক জাগাত।
[[১৯০৫]] সালে যুবরাজের ভারত সফরকালে কলকাতায় বিরাট [[শোভাযাত্রা]] উপলক্ষে যতীন স্থির করলেন এদেশে ইংরেজদের আচরণ প্রত্যক্ষ করাবেন যুবরাজকে। একটি ঘোড়াগাড়ির ছাদে একদল [[সৈনিক]] বসে মজা লুটছে, তাদের বুটসমেত পা দুলছে গাড়ীর [[যাত্রী]], কয়েকজন দেশী মহিলার নাকের সামনে। যুবরাজ নিকটবর্তী হওয়ামাত্র যতীন অনুরোধ করলেন [[গোরা|গোরাদের]] নেমে আসতে। অশালীন রসিকতায় মুখর গোরাদের হতভম্ব করে একছুটে যতীন গাড়ীর ছাদে ওঠামাত্রা একজোটে গোরারা তাকেঁ আক্রমণ করে। ইতিমধ্যে নিছক
যতীন জানতেন, নিয়মিত লণ্ডনে ভারত-সচিব মর্লি'র দফতরে অভিযোগ পুঞ্জীভূত হয় এইসব [[দুষ্কৃতকারী]] ইংরেজদের বিরুদ্ধে। যুবরাজ দেশে ফিরে গিয়ে [[১৯০৬]] সালে [[১০ মে]] দীর্ঘ আলোচনা করেন [[মর্লি|মর্লি'র]] সংগে এর প্রতিকার চেয়ে।<ref>India under Morley and Minto, M.N. Das, George Allen and Unwin, London, 1964, p. 25</ref>
৫৬ ⟶ ৫৪ নং লাইন:
==বারীণের সাথে মতবিরোধ==
অতীন্দ্রের অকাল মৃত্যুর শোকে মুহ্যমান যতীন দিদি বিনোদবালা আর স্ত্রী ইন্দুবালাকে নিয়ে তীর্থভ্রমণে বের হন। হরিদ্বারে তাঁরা [[স্বামী ভোলানন্দ গিরি|স্বামী ভোলানন্দ গিরি'র]] কাছে দীক্ষা নিয়ে অন্তরের শান্তি ফিরে পেলেন। গিরিজি জানতে পারেন যতীনের দেশসেবার কথা এবং পূর্ণ সম্মতি জানান এই পন্থায় অগ্রসর হবার সপক্ষে।
১৯০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে স্বপরিবারে যতীন [[দেওঘর|দেওঘরে]] বাস করতে থাকেন, [[বারীণ ঘোষ|বারীণ ঘোষের]] সংগে একটি বোমা কারখানা প্রতিষ্ঠা করে। এই কারখানার অভিজ্ঞতা নিয়ে অবিলম্বে কলকাতার [[মানিকতলা|মানিকতলায়]] বারীণ আরো বড় করে কারখানা খোলেন। যতীন চাইতেন প্রথমে একদল একক শহীদ এসে দেশের লোকের চেতনায় নাড়া দেবে; দ্বিতীয় ক্ষেপে আসবে ছোট ছোট দল বেঁধে ইতস্তত খণ্ডযুদ্ধ; তৃতীয় পর্বে দেশব্যাপী এক সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণআন্দোলন। বারীণ চাইতেন আচমকা সন্ত্রাসের মধ্যে দিয়ে হাউইয়ের মতো জ্বলে উঠে ফুরিয়ে যেতে। সংগঠনের দিক থেকে বারীণ তাঁর একচ্ছত্র নেতৃত্বে বিশ্বাস করতেন। যতীন চাইতেন জেলায় জেলায় আঞ্চলিক নেতাদের অধীনে গুপ্তসমিতি শক্তিশালী হয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সহযোগিতা করবে। আপাতদৃষ্ট [[স্বেচ্ছাসেবক]] বাহিনী গড়ে বন্যাত্রাণে, কুন্তিমেলায়, অধোদয়যোগে, [[শ্রীরামকৃষ্ণ|শ্রীরামকৃষ্ণের]] জন্মোৎসবে মিলিত হয়ে দলের ঐক্য ও শক্তি পরীক্ষার সুযোগ পেতেন তাঁরা।<ref>Political Trouble in India: 1907-1917, James Campbell Ker, 1917-1973 First Reprint, Delhi, p. 9; Tegart's Report in Terrorism in India, Vol. IV, p. 1366</ref>
==সামরিক অফিসারের সাথে মারামারি==
[[১৯০৭]] সালে বিশেষ কর্ম-দায়িত্ব নিয়ে হুইলারের সচিবদের সংগে যতীন সপরিবারে [[দার্জিলিং|দার্জিলিংয়ে]] স্থানান্তরিত হলেন। সমস্ত উত্তর বাংলার মতো এখানেও যতীন "অনুশীলন"-এর সক্রিয় শাখা স্থাপন করেছিলেন। [[১৯০৮]] সালের এপ্রিল মাসে ক্যাপ্টেন [[মার্ফি]] ও লেফটেন্যান্ট [[সমারভিল]] প্রমুখ চারজন সামরিক অফিসারের
[[হুইলার]] একদিন ঠাট্টা করে যতীনকে জিজ্ঞাসা করেনঃ "আচ্ছা, একা হাতে ক'টা লোককে আপনি শায়েস্তা করতে পারেন?" হেসে যতীন বলেন, '''"ভাল মানুষ হয় যদি, একটাও নয়; দুর্বৃত্ত হলে যতগুলি খুশি সামলাতে পারব।"'''▼
▲[[হুইলার]] একদিন ঠাট্টা করে যতীনকে জিজ্ঞাসা
==দৃঢ়চেতা মনোভাবী ও সমাজ সংস্কারক==
[[১৯০৬]] সাল থেকে [[স্যার ডেনিয়েল হ্যামিলটন|স্যার ডেনিয়েল হ্যামিলটনের]] সহযোগিতায় যতীন একাধিক মেধাবী ছাত্রকে [[বৃত্তি]] দিয়ে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। শুরু হয় [[তারকনাথ দাস|তারকনাথ দাসকে]] দিয়ে; পরপর তাঁর পিছু পিছু রওনা হন [[গুরনদিৎ কুমার]], [[শ্রীশ সেন]], [[অধর লস্কর]], [[সত্যেন সেন]], [[জিতেন লাহিড়ি]], [[শৈলেন ঘোষ]]। ...... এদের কাছে নির্দেশ ছিল, উচ্চশিক্ষার সংগে সংগে আধুনিক লড়াইয়ের কায়দা ও [[বিস্ফোরক]] প্রস্তুতের তালিম নিয়ে আসতে এবং বিদেশের সর্বত্র ভারতের [[স্বাধীনতা]] সংগ্রামের প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টি করতে। [[১৯০৮]] সালে বারীণ ঘোষের প্রথম প্রচেষ্টা মারাত্মকভাবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলে সবাই যখন হাল ছেড়ে দিয়েছে, তখন গোপনে [[শ্রীঅরবিন্দ|শ্রীঅরবিন্দের]] ঘনিষ্ঠ দুই প্রধান [[বিপ্লবী]] কানে কানে রটিয়ে
==বিপ্লবীদেরকে অস্ত্র শিক্ষা ও ইংরেজ সরকার==
জেলার সুবিদিত অস্ত্র-ব্যবসায়ী [[নূর খাঁ|নূর খাঁ'র]] কাছে [[আগ্নেয়াস্ত্র]] কিনে যতীন নিয়মিত [[বাদা]] অঞ্চলে গিয়ে নির্বাচিত কর্মীদের তালিম দিতেন।
[[আলিপুর]] বোমা মামলার অভিযুক্ত বিপ্লবীদের ব্যয়ভার বহন, [[অস্ত্র]] সংগ্রহ ইত্যাদির জন্য অর্থের প্রয়োজন মেটানো ছাড়াও যতীন এইবার গণ-চেতনায় প্রত্যয় জাগানোর জন্য দুর্ধর্ষ কিছু স্বদেশী ডাকাতির আয়োজন করলেন। [[১৯০৮]] সালের [[২ জুন]] থেকে ধাপে ধাপে এই [[অভিযান]] হয়ে উঠল [[ইংরেজ সরকার|ইংরেজ সরকারের]] বিভীষিকা। এই পর্যায়ের তুংগস্থান এসে পড়ল [[১৯০৯]] সালের [[১০ ফেব্রুয়ারি]] প্রসিকিউটর আশু বিশ্বাসের হত্যা এবং ১৯১০ সালের ২৪ জানুয়ারি [[ডেপুটি কমিশনার]] শামসুল আলমের হত্যাঃ এঁরা দু'জনে সোনায় সোহাগার মতো যথেচ্ছভাবে আলিপুর বোমার আসামীদের ঠেলে দিচ্ছিলেন মর্মান্তিক পরিণামের দিকে; মূল অভিসন্ধি ছিল শ্রীঅরবিন্দকে চরম দণ্ড দেওয়া। [[২৫ জানুয়ারি]] প্রকাশ্য সভায় [[বড়লাট মিন্টো]] ঘোষণা
==একটিমাত্র অপরাধী==
[[২৭
'''"দুই বাংলাতেই আজ শাসনব্যবস্থা বিফল"''', মরিয়া হার্ডিঞ্জ অনুযোগ করে ক্ষাণ্ত নন; কারামুক্ত যতীনকে [[গৃহবন্দী]] রেখে সরকার তৎপর হল শাসন ব্যবস্থায় শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে। পুলিশী রিপোর্টে [[নিক্সন সাহেব]] লিখেছেন যে, মহাযুদ্ধ বেঁধে গেলে স্বাধীনতা-লাভের পথ প্রশস্ত হবে, এটা সম্যক উপলদ্ধি করেন যতীন মুখার্জি। [[জার্মান]] [[যুবরাজ]] [[কোলকাতা|কলকাতায়]] সফর করতে এলে যতীন তাঁর সংগে সাক্ষাৎ করেন এবং যুবরাজের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পান-সশস্ত্র অভ্যুত্থানের জন্য জার্মানী থেকে [[অর্থ]] ও অস্ত্র সাহায্য পাওয়া যাবে।<ref>Terrorism in Bengal, Vol. II, p. 625 (Nixon's Report)</ref> সমস্ত সন্ত্রাসমূলক কাজ স্থগিত রেখে যতীন পরামর্শ দিলেন জেলায় জেলায়, কেন্দ্রে কেন্দ্রে শক্তি সংহরণে নিবিষ্ট হতে। আকস্মিক এই সন্ত্রাস-বিরতি দিয়ে যতীন প্রমাণ করলেন যে, সুনিয়ন্ত্রিত পথেই তিনি হিংসাত্মক কর্মে নেমেছিলেন কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার প্রয়োজনে-যেটা [[টোরিটোরা|টোরিটোরার]] সময়ে [[গান্ধী|গান্ধীজির]] হাত ফসকে শোচনীয় আকার নেয়।
==পুলিশের চোখে ধুলো==
৮৬ ⟶ ৭৮ নং লাইন:
[[১৯১৩]] সালে বাংলা এবং বাংলার বাইরের বিভিন্ন শাখার কর্মী ও নেতারা মিলিত হলেন [[বর্ধমান|বর্ধমানে]] বন্যাত্রাণ উপলক্ষে। উত্তর ভারত থেকে [[রাসবিহারী বসু]] এসে যতীনের সংগে আলোচনা করে নূতন প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হলেনঃ [[অমরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়|অমরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের]] মাধ্যমে যতীনের সংগে একাধিক বৈঠকে রাসবিহারী সিদ্ধান্ত নিলেন [[ফোর্ট উইলিয়াম|ফোর্ট উইলিয়ামের]] সৈন্য-বহরের পরিচালকদের সহযোগিতায় কলকাতা থেকে [[পেশোয়ার]] অবধি বিদ্রোহের আগুন জ্বলবে [[১৮৫৭]] সালের দৃষ্টান্তকে সামনে রেখে।<ref>Two Great ....., p. 119; also Jadugopal Mukharjee's Biplabi jivaner smriti, 2nd ed., p. 537</ref>
==ভারত-জার্মান ষড়যন্ত্র==
৯৩ ⟶ ৮৪ নং লাইন:
যতীনের চিঠি নিয়ে পিংলে ও কর্তারসিং গেলেন রাসবিহারী'র সংগে দেখা করতে। টেগার্টের রিপোর্টে দেখা যায়, এই সময়ে সত্যেন সেনকে নিয়ে যতীন কলকাতার বিভিন্ন রেজিমেন্টের অফিসারদের সংগে আলোচনায় ব্যস্ত।<ref>Terrorism........, Vol. III, p. 505 (Tegart's Report)</ref> ভারতের এই যজ্ঞ-অনলে ইন্ধন দেবার জন্য সাজসাজ পড়ে গেল [[দূরপ্রাচ্য|দূরপ্রাচ্যে]] [[আমেরিকা|আমেরিকায়]], [[ইউরোপ|ইউরোপে]], [[মধ্যপ্রাচ্য|মধ্যপ্রাচ্যে]]। [[ভূপতি মজুমদার]] স্পষ্ট লিখে গিয়েছেন যে, আন্তর্জাতিক এই সহযোগিতার উদ্ভাবন করেন স্বয়ং যতীন মুখার্জি। ইতিহাসে একে অভিহিত করা হয় [["ভারত-জার্মান ষড়যন্ত্র"]] নামে।
সমাগত 'গদর' কর্মীরা কাজে নামতে চান, জার্মান অস্ত্র আসার জন্য তাদেঁর তর সইছে না। যতীনের
▲সমাগত 'গদর' কর্মীরা কাজে নামতে চান, জার্মান অস্ত্র আসার জন্য তাদেঁর তর সইছে না। যতীনের সংগে পরামর্শ করে রাসবিহারী দিন ধার্য্য করলেন [[২১ ফেব্রুয়ারী]] অভ্যুত্থানের জন্য। মিঞাসির (মহীসুর), [[লাহোর]], [[ফিরোজপুর]], [[রাওয়ালপিণ্ডি]], [[জব্বলপুর]], [[বেনারস]]-সর্বত্র [[তেরংগা]] [[ঝাণ্ডা]] উড়িয়ে দেওয়া হবেঃ [[নীল]] হবে মুসলমান কর্মীদের প্রতীক; হলদে [[শিখ]]; [[লাল]] হিন্দু। কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম দখল করে সমস্ত [[রেলপথ]] উড়িয়ে দেওয়া হবে, যাতে করে সরকার পক্ষ প্রত্যুত্তরের জন্য সৈন্যবাহিনী না আনাতে পারে। ইতিমধ্যে [[২৬ আগস্ট ১৯১৪]] সালে কলকাতার [[রডা কোম্পানী]] থেকে বিপ্লবীরা যথেষ্ট শক্তিশালী [[মাউজার পিস্তল]] সংগ্রহ করেছেন, প্রয়োজনমতো যা দূরপাল্লার [[রাইফেল|রাইফেলের]] মতো ব্যবহার করা চলে। রাসবিহারী'র অনুরোধে অর্থ সংগ্রহ করতে যতীন নতুন একপ্রস্থ হিংসাত্মক অভিযানের শরণ নিলেন- মোটরচালিত [[ট্যাক্সি|ট্যাক্সির]] সাহায্যে অভিনব এই ডাকাতির পদ্ধতি অবিলম্বে [[ফ্রান্স|ফ্রান্সে]] দেখা যাবে, প্রখ্যাত নৈরাজ্যবাদী সর্দার "বোনো"র পরিচালনায়। পরিশীলিত, শৃংখলাবদ্ধ দুঃসাহসিক এই কীর্তির সামনে মুগ্ধ আতংকে ইংরেজ সরকার হতবুদ্ধি হয়ে রইল।<ref>Rowlatt Report, p. 68-71 ("Notable leaders, Jatin Mukherjee and Bepin Ganguli")</ref> আর পুলকে মুগ্ধ দেশবাসী প্রত্যয় ফিরে পেল বিপ্লবীদের কর্মক্ষমতায়। ১২/২/১৯১৫, ২২/২/১৯১৫ - দুই দু'টো চোখ ধাঁধানো [[ডাকাতি|ডাকাতির]] সংবাদ ছড়িয়ে পড়ল সারাদেশে। ২৪/২/১৯১৫ যতীন এক গুপ্ত বৈঠকে কর্মসূচী নির্ধারণ করছেন, এমন সময়ে এক সরকারী [[গোয়েন্দা]] সেখানে উপস্থিত দেখে নেতার ইংগিতক্রমে [[চিত্তপ্রিয়]] তাকে [[গুলি]] করেন। গুপ্তচরটি তখনো মরেনি। মরার আগে সে যতীনকে তার হত্যাকারী বলে সনাক্ত করে।
থরহরিকম্পা পুলিশ রিপোর্টে অসহায় [[টেলিগ্রাম]] দেখা যায় "চড়া ইনাম ঘোষণা করেও যতীনের হদিশ মিলছে না। এখনো তিনি ছদ্মবেশে কলকাতায় বহাল তবিয়তে যাতায়াত করছেন, কিন্তু তাঁর মতো উগ্র চরিত্রের নাগাল পাবার যোগ্য [[চর]] পাওয়া দূর্লভ, বিশেষত সর্বদাই তিনি সশস্ত্র থাকেন"। [[যাদুগোপাল মুখোপাধ্যায়]] তাঁর [[আত্মজীবনী|আত্মজীবনীতে]] লিখেছেনঃ "কলকাতায় Flying Squad, Armoured Car-এর সশস্ত্র [[পাহাড়া|পাহাড়ার]] ব্যবস্থা হল। বড় রাস্তাগুলিতে ড্রপ-গেট করা হল - রেললাইন বন্ধ করার যেরূপ [[লোহা|লোহার]] পাল্লা খাড়া রাখা হয়, ঠিক তেমনি। থানায় সাইরেন বসানো হল। কলকাতা থেকে উত্তর ও পূর্বদিকে খাল পার হবার যত পোল আছে - [[চিৎপুর]], [[টালা]], [[বেলগেছে]], [[মানিকতলা]], [[নারকেলডাংগা]] ও [[হাওড়া|হাওড়ার]] পোলে সশস্ত্র [[প্রহরী]] দেওয়া হল। যাকে-তাকে এবং যে-কোনও গাড়ীকে ধরে তল্লাশ করা হতে লাগল। ''**তথ্যসূত্র অস্পষ্ট, .......... ২য় সংস্করণ, ১৯৮২, পৃ. ৩২৮''
==কৃপাল সিং: বিশ্বাসঘাতক 'গদর' কর্মী==
কোন মহৎ সাধনার পথে যতীন নেমেছেন, তা স্মরণে রেখে পুলিশের দেশী কর্মচারীরা পর্যন্ত মনেপ্রাণে যতীনের অনুরাগী হয়ে উঠলেন। ব্যতিক্রম ছিলেন পুলিশ ইন্সপেক্টর সুরেশ মুখার্জি। তিনি বিপ্লবীদের জব্দ করতে বদ্ধপরিকর। বারেবারে সুরেশের ব্যবহারে বিরক্ত হয়ে একদিন যতীন বললেন, '''"যতক্ষণ না সুরেশকে সরানো হচ্ছে, ততক্ষণ আমি জলস্পর্শ করব না"'''। ২৮/২/১৯১৫ তারিখে ভোরবেলা সুরেশ সদলবলে [[টহল|টহলে]] বেরিয়েছেন [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়|কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে]] [[বড়লাট]] যাবেন-তাঁর নিরাপত্তার ব্যবস্থা পাকা করতে। নিপুণহাতে সুরেশকে নিধন করে যতীনের সহকারীরা গা ঢাকা দিলেন। এদেঁর কর্মতৎপরতায় এমনকি [[টেগার্ট]]ও মুগ্ধ হয়ে পরবর্তীকালে স্বীকৃতি জানিয়েছেন যে,
জটিল এই পরিস্থিতিতে যতীনের আর কলকাতা থাকা সমীচীন নয়, বিবেচনা করে তাঁর শিষ্য ও সহকারীরা খুঁজে পেলেন [[বালেশ্বর]] (বালাসোর)-এর আশ্রয়। ওখানকার উপকূলেই জার্মান অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রধান জাহাজটি আসার কথা। তার প্রতীক্ষায় যতীন ওখানে চার-পাঁচজন কর্মীকে নিয়ে আস্তানা গাড়লেন। স্থানীয় অভিভাবকরূপে রইলেন [[মনীন্দ্র চক্রবর্তী]]। দীর্ঘ ছ'মাস তিনি বুকের পাঁজরের মতো আগলে থেকেছেন মহানায়কের এই অজ্ঞাতবাসের আস্তানা। যতীনকে বালেশ্বরে নিরাপদ দেখে [[নরেন ভট্টাচার্য]] (এম.এন. রায়) রওনা হলেন [[বাটাভিয়া]] অভিমুখে, বীরেন চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশমাফিক; সেখানে [[হেলফেরিষ্]] ভ্রাতাদের কাছে বিশদ অবগত হলেন জার্মান অস্ত্র নিয়ে জাহাজ আসার পাকা খবর; ফিরে এসে নাটকীয়ভাবে [[গুরু|গুরুর]] চরণে একথলে [[মোহর]] ঢেলে দিয়ে [[প্রণাম]] করে জানালেন, জার্মান সহযোগিতার দরুণ প্রাপ্য অর্থের এটি প্রথম কিস্তি। মনীন্দ্র সবই দেখেছেন। সবই জানতেন। বিশাল ঝুঁকি নিয়ে তবু তিনি এঁদের আশ্রয় দিয়েছেন। মুগ্ধ হয়ে এঁদের সান্নিধ্য উপভোগ করেছেন।<ref>মনীন্দ্র চক্রবর্তীর খাতা থেকে, নলীনিকান্ত করের লিখিত বিবৃতিও</ref> ইতিমধ্যে রাসবিহারী'র প্রচেষ্টা যেমন উত্তরাঞ্চলে ভেস্তে যায় কৃপাল সিং নামে [[বিশ্বাসঘাতক]] 'গদর' কর্মীর জন্য, তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে [[চেকোস্লোভাকিয়া]] থেকে সমাগত বিপ্লবীরা ইন্দো-জার্মান সহযোগিতার সংবাদ ফাঁস করে দেয় মার্কিন ও ব্রিটিশ সরকারের দপ্তরে-প্রতিদানে নিজেদের সংগ্রামের অনুকূল সহানুভূতি পাবার প্রত্যাশায়। মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের উদ্যোগে জার্মান সরকারের সংগে জার্মান বিভিন্ন দূতাবাসের পত্র ও [[তারবার্তা]] হস্তগত করে ব্যাপক এই আন্তর্জাতিক সংগঠনের মূল উপড়ে ফেলতে উদ্যত হল সমবেত ব্রিটিশ ও মার্কিন সুরক্ষা বিভাগ।<ref>CSmagasin, Ross Hedvisek, Spren 2006</ref> পেনাং'এর একটি সংবাদপত্রের কাটিং থেকে যতীন খবর পেলেন যে, অস্ত্রশস্ত্রসমেত জাহাজ ধরা পড়ে গিয়েছে। মারাত্মক এই নিরাশায় তিনি ভেংগে পড়বেন ভয় ছিল সহকারীদের। পরিবর্তে তিনি হেসে উঠলেন, যেন কিছুই তেমন ঘটেনি: '''"দেশের সুরাহা বাইরে থেকে নয়, তা আসবে অভ্যন্তর থেকে!"''' রোজ বিকেলে বনভূমির নীরব আশ্রয়ে যতীন [[গীতা|গীতার]] ক্লাস নিতেন। [[শিষ্য]] [[নলিনীকান্ত কর]] তাঁর [[স্মৃতিকথা|স্মৃতিকথায়]] লিখেছেন, '''"মনে হত যেন [[গৌতম মুনি|গৌতম মুনির]] কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে [[বেদমন্ত্র]]"'''। ক্লাসের শেষে অস্তসূর্যের আলোকে একাকী যতীন কিছুক্ষণ ধ্যান করতেন। একদিন মনীন্দ্রও বসে রইলেন। হঠাৎ যতীন অদূরবর্তী মনীন্দ্রের হাত ছুঁয়ে বলে উঠলেন: "ওই দ্যাখ! [[কৃষ্ণ]] আমাদের দিকে হাসিমুখে চেয়ে আছেন!" মনীন্দ্র সেই দৃষ্টির অভাবে প্রত্যক্ষ করলেন-যতীনের স্পর্শে এক তীব্র পুলকের স্রোত।
==অসমসাহসিক যুদ্ধ ও শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ==
কলকাতা থেকে খবর এল, একের পর এক বিপ্লবীদের কেন্দ্রগুলিতে তল্লাস চালাচ্ছে পুলিশ। বালেশ্বরের সন্ধান পেতে দেরী নেই। দুর্গম [[ডুভিগর]] [[পর্বতশ্রেণী]] দিয়ে গা ঢাকা দেবার উপযোগিতা নিয়ে কেউ কেউ যখন জল্পনা-কল্পনা করছেন, যতীন দৃঢ়স্বরে জানালেন, '''"আর পালানো নয়। যুদ্ধ করে আমরা মরব। তাতেই দেশ জাগবে।"''' [[উড়িষ্যা|উড়িষ্যার]] মহাফেজখানায় রক্ষিত নথিপত্র থেকে পুংখানুপুংখভাবে উদ্ধার করা গিয়েছে চারজন অনুচরসমেত কী অসমসাহসিক যুদ্ধ করলেন যতীন-বিপুলসংখ্যক সশস্ত্র পুলিশের মুখোমুখি। তথ্যসূত্র অস্পষ্ট: সাধক বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ, পৃথ্বীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, পশ্চিমবংগ রাজ্য পুস্তক পর্ষৎ, .....।
এমন নজির ইতিপূর্বে দেখেননি বলে মেনে নিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী ইংরেজ কুশীলবেরা। [[৯ সেপ্টেম্বর]] [[১৯১৫]] সালে সূর্যাস্তের সংগে অবসান হল এই যুদ্ধের। পরদিন বালেশ্বর সরকারী হাসপাতালে যতীন [[শেষ নিঃশ্বাস]] ত্যাগ করলেন। তখনো রক্তবমি হচ্ছে। হেসে বললেন:
'''''"এত রক্ত ছিল শরীরে?'''''
'''''ভাগ্যক্রমে, প্রতিটি বিন্দু অর্পণ করে গেলাম দেশমাতার চরণে।"'''''
==কয়েকটি পত্র==
===যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের কয়েকটি পত্রঃ-===
[১৯১০ সালের ৪ঠা এপ্রিল তারিখে আলিপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে দিদি '''বিনোদবালা''' দেবীকে লেখা]
১৩৪ ⟶ ১১৬ নং লাইন:
জ্যোতি
}}
===২০ অগাস্ট, ১৯১০-এর পত্র===
১৪৯ ⟶ ১৩০ নং লাইন:
প্রণত সেবক জ্যোতি
}}
===১৯১৫ সালের মে মাসের পত্র===
১৬৬ ⟶ ১৪৬ নং লাইন:
[[(অস্পষ্ট)]]
}}
===১৯১৫ সালের মে মাসে অজ্ঞাতবাস থেকে লেখা===
১৮৮ ⟶ ১৬৭ নং লাইন:
Image:BaghaJatinPostage.jpg|ভারতীয় ডাকটিকেটে বাঘা যতীন।
</gallery>
==তথ্যসূত্র==
<references />
==বহিঃসংযোগ==
* {{cite web|url=http://www.biplobiderkotha.com/index.php?option=com_content&view=article&id=269:2010-12-19-09-20-15&catid=36:bengali-revolutionary-&Itemid=27|title= বিপ্লবীদের কথা.কম}}
{{হিন্দু-জার্মানি ষড়যন্ত্র}}
[[Category:বাঙালি বিপ্লবী]]▼
[[category:১৮৭৯-এ জন্ম]]
[[category:১৯১৫-এ মৃত্যু]]
[[Category:ভারতবর্ষে ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলন]]
[[Category:বাংলাদেশী]]
▲[[Category:বাঙালি বিপ্লবী]]
|