বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন:
[[Image:Bismillah.svg|thumb|200px|বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম|alt=Written version of the Basmala]]
পবিত্র কোরআন শরীফের ১১৪টি সূরার মধ্যে সূরা তওবা বাদে অন্য বাকি ১১৩টি সূরা শুরু করা হয়েছে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দিয়ে যার অর্থ পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। এছাড়া হাদীস থেকে জানা যায়, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) প্রতিটি কাজ শুরু করার আগে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম বলে শুরু করতেন।<ref name="alhudaonline">[http://alhudaonline.com/?p=386 আল কুরআনই একমাত্র যুক্তিগ্রাহ্য ও বিজ্ঞানসম্মত ধর্মগ্রন্থ], প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ৮, ২০১০।</ref>
বিসমিল্লাহ বাক্যটি তিনটি শব্দ দ্বারা গঠিত। প্রথমত: "বা " বর্ণ দ্বিতীয়ত: ইসম ও তৃতীয়ত: আল্লাহ। আরবী ভাষায় "বা "বর্ণটি অনেক অর্থে ব্যবহৃত হয়। তন্মধ্যে তিনটি এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে এবং তিনটির যে কোন ‌একটি এ ক্ষেত্রে গ্রহণ করা যেতে পারে। এক, সংযোজন অর্থ্যাৎ এক বস্তুকে অপর বস্তুর সাথে মিলানো বা সংযোগ ঘটানো অর্থে । দুই ,এস্তেয়ানাত অর্থ্যাৎ কোন বন্তুর সাহায্য নেয়া । তিন, কোন বস্তু থেকে বরকত হাসিল করা।
 
ইসম শব্দের ব্যাখ্যা অত্যন্ত ব্যাপক। ইসম নামকে বলা হয়। আল্লাহ শব্দটি সৃষ্টিকর্তার নামসমূহের মধ্যে সবচেয়ে মহত্তর ও তাঁর যাবতীয় গুনাবলীর সম্মিলিত রুপ।এ নামটি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য প্রযোজ্য নয়। কেননা আল্লাহ এক, তাঁর শরীক নেই। আল্লাহ এমন এক সত্ত্বার নাম যে সত্ত্বা পালনর্কতার সমস্ত গুনাবলীর এক অসাধারণ প্রকাশবাচক। তিনি অদ্বিতীয় ও নজীরবিহীন । এজন্য বিসমিল্লাহ শব্দের মধ্যে "বা" এর তিনটি অর্থের সামঞ্জস্য হচ্ছে , আল্লাহর নামের সাথে, তাঁর নামের সাহায্যে এবং তাঁর নামের বরকতে।
 
== বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম ==
২০ ⟶ ১৮ নং লাইন:
 
== তাৎপর্য ==
তাফসির-ই-ইবনে আবি হাতিমে রয়েছে, ‘উসমান বিন আফফান রা: রাসূলুল্লাহ (সা:) কে ‘বিসমিল্লাহ’ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। তখন তিনি উত্তরে বলেছিলেন, এতে আল্লাহ তায়ালার নাম। আল্লাহর বড় নাম এবং এই বিসমিল্লাহর মধ্যে এতদূর নৈকট্য রয়েছে যেমন রয়েছে চুর কালো অংশ ও সাদা অংশের মধ্যে। ইবনে মরদুওয়াইর তাফসিরে রয়েছে, ‘রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, আমার ওপর এমন একটি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে যার মতো আয়াত হজরত সুলাইমান ছাড়া অন্য কোনো নবীর ওপর অবতীর্ণ হয়নি। আয়াতটি হলো, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’। হজরত জাবির রা: বর্ণনা করেন, যখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন পূর্ব দিকে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায়, বায়ুমণ্ডলী স্তব্ধ হয়ে যায়, তরঙ্গ বিুব্ধ সমুদ্র প্রশান্ত হয়ে ওঠে, জন্তুগুলো কান লাগিয়ে শয়তানকে বিতাড়ন করে এবং বিশ্বপ্রভু স্বীয় সম্মান ও মর্যাদার কসম করে বলেন, ‘যে জিনিসের ওপর আমার এ নাম নেয়া যাবে তাতে অবশ্যই বরকত হবে। (তাফসির ইবনে কাসির)<ref name="islam.masudkabir">[http://islam.masudkabir.com/others/%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%B0-%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A7%8E%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AF/ বিসমিল্লাহর তাৎপর্য], জি এম মুজিবুর রহমান।</ref>
 
বিসমিল্লাহ দিয়েই সব কাজ শুরু করতে হয়। কাজ ও কথার শুরুতেই বিসমিল্লাহ বলা মুস্তাহাব। হাদিসে এসেছে, যে কাজ বিসমিল্লাহ দ্বারা শুরু করা না হয় তা কল্যাণহীন ও বরকতশূন্য থাকে। এ জন্য বিসমিল্লাহ সব কাজের সূচনাধ্বনি। এর মাধ্যমে কাজের শুরুতে আল্লাহর আনুগত্য করা হয় এবং মানুষের অমতা ও বিনয় ভাব প্রকাশ পায়। এ বাক্যের মাধ্যমে কর্ম শুরু করলে শয়তানের অসওয়াসা থেকে মুক্ত থাকা যায়।<ref name="islam.masudkabir"></ref>
 
বিসমিল্লাহ দিয়ে শুরু করলে আল্লাহ তাকে করুণা করেন, হেফাজতে রাখেন ও কাজে বরকত দান করেন।
আনাস রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলে, ‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাহ বিল্লাহ’ অর্থাৎ ‘আল্লাহর নামে বের হলাম, আল্লাহর ওপর ভরসা করলাম, আমার কোনো উপায় নেই, মতা নেই আল্লাহ ছাড়া’ তখন তাকে বলা হয় তুমি পথ পেলে, উপায় পেলে ও রা পেলে। তারপর শয়তান তার থেকে দূর হয়ে যায়। তখন আর এক শয়তান এ শয়তানকে বলে, তুমি লোকটিকে কেমন পেলে? তখন সে বলে, তাকে হেদায়েত দেয়া হয়েছে, পথ দেয়া হয়েছে ও রা করা হয়েছে’ (মিশকাত হা-২৪৪৩)<ref name="islam.masudkabir"></ref>
 
হুজায়ফা (রা:) বলেন, নবী করীম সা: বলেছেন, ‘শয়তান সেই খাদ্যকে নিজের জন্য হালাল করে নেয়, যে খাদ্যের ওপর বিসমিল্লাহ বলা হয় না।’ (মুসলিম হা-২০১৭, আবু দাউদ হা-৩৭৬৬)
জাবির (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘বিসমিল্লাহ বলে তুমি তোমার দরজা বন্ধ করো। কারণ শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। বিসমিল্লাহ বলে বাতি নিভিয়ে দাও। একটু কাঠখড়ি হলেও আড়াআড়িভাবে বিসমিল্লাহ বলে পাত্রের মুখ ঢেকে রাখো। বিসমিল্লাহ বলে পানির পাত্র ঢেকে রাখো।’ (বুখারি হা-৩২৮০, মুসলিম হা-২০১২, আবু দাউদ হা-৩৭৩১, তিরমিজি হা-২৮৫৭)<ref name="islam.masudkabir"></ref>
 
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হওয়ার ইচ্ছা করে, সে বলবে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবিনাশ শায়তানা অজান্নিবিশ শায়তানা মা রাজাকতানা’ (অর্থাৎ) আল্লাহর নামে মিলন শুরু করছি। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের শয়তান থেকে দূরে রাখো এবং শয়তানকে দূরে রাখো, আমাদের মাঝে কোনো সন্তান নির্ধারণ করলে শয়তান কখনো তার কোনো তি করতে পারবে না।’ (বুখারি হা-১৪৩৪, আবু দাউদ হা-২১৬১, তিরমিজি হা-১০৯২, ইবনু মাজাহ হা-১৯১৯)।<ref name="islam.masudkabir"></ref>
 
আয়েশা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কোনো ব্যক্তি খাদ্য খাবে সে যেন বিসমিল্লাহ বলে। যদি বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায় তাহলে সে যেন বলে, বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু’ (আবু দাউদ হা-৩৭৬৭, ইবনু মাজাহ হা-৩২৬৪)।<ref name="islam.masudkabir"></ref>
 
বিসমিল্লাহর গুরুত্ব ও বরকত অপরিসীম। বিসমিল্লাহ না বলার কারণে একটি হালাল খাদ্য আমাদের জন্য হারাম হয়ে যায়, আবার বিসমিল্লাহ না বলার কারণে নেক নিয়ত থাকলেও অনেক কর্মে বরকত না হওয়ায় বেইজ্জতি হতে হয়। পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত একটি উত্তম কাজ কিন্তু উত্তম কাজ এমনি এমনি করলে হবে না, বরং তিলাওয়াতের শুরুতেও বিসমিল্লাহ… বলতে হবে। বিসমিল্লাহ… দিয়েই সূরা শুরু করা হয়েছে। কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা হলে সে কাজে আল্লাহর রহমত ও বরকত অবতারিত হতে থাকে। শয়তান সেখানে অবস্থান নিতে পারে না। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর কাছে প্রথম ওহি নাজিলের সময়ও এই উত্তম বাক্য পড়ানো হয়েছিল।<ref name="islam.masudkabir"></ref>
 
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস বলেন, ‘জিবরাইল আ: সর্বপ্রথম মুহাম্মদ সা:-এর প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন, তা হচ্ছে জিবরাইল আ: বললেন, হে মুহাম্মদ! আপনি আশ্রয় চান। মুহাম্মদ সা: বললেন, আমি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞাতা আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান থেকে আশ্রয় চাই। অতঃপর জিবরাইল আ: বললেন, হে নবী! আপনি বলুন, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। অতঃপর জিবরাঈল আ: বললেন, ইক্রা বিসমি… অর্থাৎ আপনি পড়–ন, আপনার প্রতিপালকের নামে, যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা: বলেন, এটাই প্রথম সূরা, যা আল্লাহ তায়ালা জিবরাইল আ: এর মাধ্যমে মুহাম্মদ সা:-এর প্রতি অবতীর্ণ করেন।’ (ত্বাবারি, তাফসির ইবনু কাছির হা-২৬৩)<ref name="islam.masudkabir"></ref>
 
‘বিসমিল্লাহ’ হলো সব কাজের সূচনাবাক্য। আল্লাহর নির্দেশিত ও ইসলামি বিধান মতে সমর্থিত কাজ শুরুর প্রাক্কালেই ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে হয়। তাই বলে অন্যায় কাজ ও ইসলামবহির্ভূত কর্মের জন্য ‘বিসমিল্লাহ’ বলা হাস্যকর ও আল্লাহদ্রোহিতার শামিল। অমূল্য ও অতুলনীয় এই বাক্যের মাধ্যমে আলাহর আনুগত্য ও মুমিন হৃদয়ের অমতা সহজে প্রকাশ পায়। সুন্দর ও মাধুর্যমণ্ডিত এই শব্দমালা কর্মের আগে প্রকাশ করার মাধ্যমে স্বতঃস্ফূর্ত আমল সম্পাদন করা এবং ইসলামী সংস্কৃতির অনুসরণ করা যায়। এটিকে অস্বীকার বা মানা না হলে কর্ম অর্থহীন হয়ে যায়।<ref name="islam.masudkabir"></ref>
 
মহানবী (সা:) বলেছেন ‘প্রত্যেক ভালো কাজের শুরুতে যদি ‘বিসমিল্লাহ’ বলা না হয় তা হলে তা অসম্পূর্ণ ও নিম্নমানের থেকে যায়।’ (আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ)।<ref name="islam.masudkabir"></ref>
 
==আরও দেখুন==