গদ্য: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
নতুন নিবন্ধের শুরু (পনুর্লিখন, সম্পাদনা আবশ্যক)
 
১১ নং লাইন:
তবে নিংসংকোচে বলা চলে যে এর ফলে বাংলা গদ্যের আঙ্গিক ও স্বাদ বহুলাংশে বদলে গিয়েছিল। অন্যদিকে গদ্য লাভ করেছিল বক্তব্য প্রকাশের গভীরতর শক্তি ও বিস্তৃত অবকাশ। [[জীবনানন্দ দাশ|জীবনানন্দের]] গদ্য এই ঘরানারই উচ্চতর বিকাশ। তাঁর গদ্যভাষাতেও লক্ষ্য করা যায় অনুরূপ দীর্ঘ বাক্যে বহুতর বক্তব্য ধারণের প্রয়াস। অত্যূক্তি হবে না যে এভাবেই বাংলায় প্রবন্ধের যথোপযুক্ত একটি গদ্যভাষার প্রবর্তনা হয়েছিল। কিন্তু জীবনানন্দের রূপবন্ধ ও জটিলতা কেবল বাক্যপ্রকরণ রীতির মধ্যে সূত্রাবদ্ধ নয়, তাঁর শব্দব্যবহার রীতিও অনন্যসাধারণ। শব্দচয়নে তিনি অক্লেশে তৎসম শব্দের আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁর ব্যবহৃত সমসাবদ্ধ পদগুলো গদ্যের প্রকাশক্ষমতাকে বিস্তৃত করেছে। তায়র ''কবিতার তথা'' তেকে একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারেঃ <blockquote>. . . আমি বলতে চাই না যে কাব্যের সঙ্গে জীবনের কোনো সম্বন্ধ নেই ; সম্বন্ধ রয়েছে, কিন্তু প্রসিদ্ধ প্রকট ভাবে নেই। কবিতা ও জীবন একই জিনিসেরই দুই রকম উৎসারণ ; জীবন বলতে আমরা সচরাচর যা বুঝি তার ভিতর বাস্তব নামে আমরা সাধারণত যা জানি তা রয়েছে, কিন্তু এই অসংলগ্ন অব্যবস্থিত জীবনের দিকে তাকিয়ে কবির কল্পনা-প্রতিভা কিংবা মানুষের ইমাজিনেশন সম্পূর্ণ ভাবে তৃপ্ত হয় না ; কিন্তু কবিতা সৃষ্টি করে কবির বিবেক সান্তনা পায়, তার কল্পনা-মনীষা শান্তি বোধ করে, পাঠকের ইমাজিনেশন তৃপ্তি পায়। কিন্তু সাধারণত বাস্তব বলতে আমরা যা বুঝি তার সম্পুর্ণ পুনর্গঠন তবুও কাব্যের ভিতর থাকে না ; আমরা এক নতুন প্রদেশে প্রবেশ করেছি। পৃথিবীর সমস্ত জল ছেড়ে দিয়ে যদি এক নতুন জলের কল্পনা করা যায় কিংবা পৃথিবীর সমস্ত দীপ ছেড়ে দিয়ে এক নতুন প্রদীপের কল্পনা করা যায়, তাহলে পৃথিবীর এই দিন, রাত্রি, মানুষ ও তার আকাক্সক্ষ এবং সৃষ্টির সমস্ত ধুলো সমস্ত কঙ্কাল ও সমস্ত নক্ষত্রকে ছেড়ে দিয়ে এক নতুন ব্যবহারের কল্পনা করা যেতে পারে। যা কাব্য;- অথচ জীবনের সঙ্গে যার গোপনীয় সুড়ঙ্গলালিত সর্ম্পূর্র্ণ সম্বন্ধ ; সম্বন্ধের ধুসরতা ও নূতনতা। সৃষ্টির ভিতর মাঝে মাঝে এমন শব্দ শোনা যায়, এমন বর্ণ দেখা যায়, এমন আঘ্রাণ পাওয়া যায়, এমন মানুষের বা এমন অমানবীয় সংঘাত লাভ করা যা কিংবা প্রভূত বেদনার সঙ্গে পরিচয় হয়, যে মনে হয় এই সমস্ত জিনিসই অনেকদিন থেকে প্রতিফলিত হয়ে কোথাও যেন ছিল ; এবং ভঙ্গুর হয়ে নয়, সংহত হয়ে, আরো অনেকদিন পর্যন্ত, হয়তো মানুষের সভ্যতার শেষ জাফরান রৌদ্রলোক পর্যন্ত, কোথাও যেন রয়ে যাবে ; এই সবের অপরূপ উদগীরণ ভিতর এসে হৃদয়ে অনুভুতির জন্ম হয়, নীহারিকা যেমন নক্ষত্রের আকার ধারণ করতে থাকে তেমনি বস্তু-সঙ্গতির প্রসব হতে থাকে যেন হৃদয়ের ভিতরে ; এবং সেই প্রতিফলিত অনুচ্চারিত দেশ ধীরে ধীরে উচ্চারণ করে ওঠে যেন, সুরের জন্ম হয় ; এই বস্তু ও সুরের পরিণয় শুধু নয়, কোনো কোনো মানুষের কল্পনামনীষার ভিতর তাদের একাত্মতা ঘটে, কাব্য জন্ম লাভ করে।’ </blockquote>
 
জীবনানন্দ দাশ একই বাক্যে ধারণ করেছেন বক্তব্যের নিহিতার্থ ও তার শর্ত ; একই বাক্যে রয়েছে বক্তব্য ও তার বিশেষায়িত টীকা। একটি বাক্যের একদিকে রয়েছে মূল বক্তব্য অন্যদিকে রয়েছে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা। পূর্ণ বাক্য শেষে পূর্ণ যতি’র পরিবর্তে জীবনানন্দ দাশ অর্ধ-যতি ব্যবহার ক’রে যুক্ত করেছেন আরেকটি পূর্ণ বাক্য ; ফলে বাক্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেয়েছে, অনুপ্রবেশ করেছে জটিলতা। সন্দেহ নেই এর ফলে ভাষার নির্মলতা হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু অন্য দিকে তাঁর গদ্যভঙ্গীতে প্রোথিত হয়েছে সুললিত দার্ঢ্য যা গভীর ও সূক্ষ্ম চিন্তাসূত্রকে ধারণ করতে সক্ষম। এই গদ্য রীতির সঙ্গে ইয়োরোপীয় প্রবন্ধ সাহিত্যের গদ্যরীতির সাযুজ্য পরিলক্ষিত হয়।হয়।তথাপি লক্ষ্যণীয় যে, জীবনানন্দে তাঁর গদ্যে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত বাক্যে-পদ-স্থাপনার রীতি অনুসরণ করেছেন। বস্তুত: তার মূল অবদান একই বাক্যের কাঠামোতে যুক্তিসম্মত বিবিধ বাক্য, অনুবাক্য ও বাক্যাংশের সমাবেশ। ফলে ভাষার লৌকিক রীতি পরিত্যাক্ত হয়েছে ; প্রণীত হয়েছে এমন একটি বাক্যকাঠামো যাতে একই বাক্যে একটি জটিল অথচ পূর্ণাঙ্গ চিন্তাসূত্র স্থান লাভ করেছে। লৌকিক ভাষায় বক্তব্য প্রকাশের যে পরম্পরা আমরা লক্ষ্য করি, জীবনানন্দের গদ্যভাষা তার বিপরীতে প্রবাহিত হয়েছে। লৌকিক ভাষার স্বভাবী শিথিলতা দূরীভূত ক’রে জীবনানন্দ দাশ বাংলা গদ্যকে দিয়েছেন গভীর মননশীল বক্তব্য প্রকাশের অপরিমেয় শক্তি।
 
==অতি-আধুনিক বাংলা গদ্য==
==বাংলা গদ্যের ব্যাকরণ==
'https://bn.wikipedia.org/wiki/গদ্য' থেকে আনীত