দ্বিজেন শর্মা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
অনেক কপিরাইটেড লেখা, তাই লুকিয়ে রেখে প্রয়োজনীয় অংশ যোগ করার কাজ চলছে...
১ নং লাইন:
'''দ্বিজেন শর্মা''' (জন্ম: [[২৯শে মে]], [[১৯২৯]]) বাংলাদেশী প্রকৃতিবিদ, জীববিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান লেখক। তিনি [[১৯৬২]] সাল থেকে [[১৯৭৪]] সাল পর্যন্ত [[নটর ডেম কলেজ|নটর ডেম কলেজের]] উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন।<ref>{{cite book |title=সুবর্ন স্মারক |origyear=[[১৯৯৯]] |origmonth=[[১১ নভেম্বর]] |format=ম্যাগাজিন |language=বাংলা |pages=১৩৩}}</ref> এছাড়া নটর ডেম কলেজের প্রাকৃতিক পরিবেশ গঠনেও তাঁর প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিলো।
 
==জন্ম ও শৈশব==
== ব্যক্তিগত জীবন ==
দ্বিজেন শর্মা ১৯২৯ সালের ২৯ মে [[সিলেট বিভাগ|সিলেট বিভাগের]] [তৎকালীন] [[বড়লেখা উপজেলা|বড়লেখা থানার]] শিমুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ভিষক চন্দ্রকাণ্ড শর্মা এবং মাতার নাম মগ্নময়ী দেবী। বাবা ভিষক বা গ্রাম্যভাষায় কবিরাজ ছিলেন, আর মা ছিলেন সমাজসেবী। শৈশবে [[পাথারিয়া পাহাড়|পাথারিয়া পাহাড়ের]] জঙ্গলে ঘুরে বেড়িয়েছেন অনেক, আর সেখান থেকেই হয়তো গাছপালার প্রতি তার অসীম ভালোবাসা জন্মে। কবিরাজ বাড়ি বলে বাড়ির বাগানেই অজস্র গাছগাছালি ছিল, তার মাঝে ছিল স্বর্ণচাঁপা, কনকচাঁপা, মধুমালতীসহ নানা রঙবেরঙের ফুল। বসন্ত শেষের বৃষ্টির পর সারা বাড়ি যখন ফুলে ফুলে ভরে উঠতো, দ্বিজেন শর্মা তখন সকালে [[পূজা|পূজার]] ফুল তুলতেন। সেসময়ই মনের অজান্তে দ্বিজেন শর্মাও প্রকৃতির প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভক্ত। আড্ডা, বিশেষ করে তরুণদের সাথে আড্ডা দিতে খুব পছন্দ করেন।<ref>সাক্ষাৎকার: ''যা নিয়ে আছি:মর্ত্যে স্বর্গের আলো'', সাক্ষাৎকার গ্রহণে: মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ, অন্য আলো, দৈনিক প্রথম আলো, পৃষ্ঠা ২, ১০ ডিসেম্বর ২০১০।</ref>
 
==শিক্ষাজীবন
দ্বিজেন শর্মা
শৈশবেই গ্রামের পাঠশালায় তাঁর হাতেখড়ি হয়। তারপর করিমগঞ্জ পাবলিক হাইস্কুলে পড়াশুনা।লেখাপড়া করেছেন। যদিও মায়ের ইচ্ছে ছিল ছেলেতিনি বড় হয়ে ডাক্তার হবেহবেন, কিন্তু প্রকৃতিপ্রেম তাঁকেতাকে উদ্ভিদবিজ্ঞানেরউদ্ভিদবিদ প্রতিহতে আকৃষ্ট করল।করে। আর তাই [[কলকাতা সিটি কলেজ|কলকাতা সিটি কলেজে]] স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর তিনি [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]] থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর (১৯৫৮) ডিগ্রি লাভ করেন।
 
== ব্যক্তিগত জীবন ==
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কার্জন হলের সামনে বোটানিক্যাল উদ্যানের লাগোয়া গ্লিরিসিডিয়া গাছটির সঙ্গে পরিচয় ভোলার নয় দ্বিজেন শর্মার। "বসন্তের শুরুতেই নিষ্পত্র শাখাগুলিতে বেগুনির আঁচ মেশানো সাদা ফুলের ঢল নামতো। একটি কোকিল গাছটিতে বসে সারাদিন অবিরাম ডাকতো। দক্ষিণ হাওয়ায় একটি দু'টি করে ফুল ঝরতো। আমরা প্রতি সন্ধ্যায় ওই গাছতলায় আড্ডা বসাতাম। আবছা আলোয় ক্রমে কার্জন হলের মোগল স্থাপত্য রহস্যময় হয়ে উঠতো। কার্জন হলের কাছে সেগুন বাগিচার মোড়ের পথ দ্বীপে পুরনো বটগাছের আশ্রয়ে বেড়ে ওঠা বাগানবিলাসের একটি লতা ম্যাজেন্টা রঙের ফুলের ধ্বজা উড়িয়ে শহরে বসন্তের আগমনী ঘোষণা করত। স্পেক্টাবিলিস জাতের ওই বাগানবিলাসটি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাবাসী বহু প্রজন্মের জীবনের সঙ্গে অজান্তেই জড়িয়ে গিয়েছিল। সেই তো আমাদের জানাতো 'ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে।' সাতাত্তরের বৃক্ষনিধনে বেইলী রোডে নাগলিঙ্গম, রমনা পার্কের লাগোয়া সেগুনবীথি, নিউমার্কেটের পাশের বটগাছের সারির সঙ্গে আমাদের যৌবন দিনের স্মারণিক ওই বাগানবিলাসটিও নিহত হয়।" কথাগুলো বলতে বলতে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন দ্বিজেন শর্মা। গাছের প্রাণের সঙ্গে নিজের প্রাণের অস্তিত্ব যিনি অনুভব করেন তাঁর পক্ষেই নিজের সন্তানের মতো বৃক্ষকে আপন করে নেওয়া সম্ভব। আর দ্বিজেন শর্মা তাঁর জীবনভর সেই কাজটিই করেছেন। নিভৃতচারী ও প্রচারবিমুখ এই উদ্ভিদবিদ, বিজ্ঞান মনস্ক শিক্ষাবিদ-তাঁর নিসর্গ প্রেমকে ধারণ করেছেন নিজস্ব আঁধারে। গাছের সঙ্গে কথা বলা আর তাদের ভালোবাসা আদান-প্রদানের মাঝেই কেটে গেছে তাঁর জীবনের অনেকটা পথ।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি [[রবীন্দ্র সংগীত|রবীন্দ্রসঙ্গীতের]] ভক্ত। আড্ডা, বিশেষ করে তরুণদের সাথে আড্ডা দিতে খুব পছন্দ করেন।<ref>সাক্ষাৎকার: ''যা নিয়ে আছি:মর্ত্যে স্বর্গের আলো'', সাক্ষাৎকার গ্রহণে: মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ, অন্য আলো, [[দৈনিক প্রথম আলো]], পৃষ্ঠা ২, ১০ ডিসেম্বর ২০১০।</ref>
 
জন্ম ও পারিবারিক পরিচয়
 
১৯২৯ সালের ২৯ মে সিলেট বিভাগের বড়লেখা থানার শিমুলিয়া গ্রামে ভিষক চন্দ্রকাণ্ড শর্মা ও সমাজসেবী মগ্নময়ী দেবীর ঘরে জন্ম নেন দ্বিজেন শর্মা৷ বাবা ভিষক বা গ্রাম্যভাষায় কবিরাজ ছিলেন বলে বাড়িতেই দেখেছেন নানা লতা-পাতা আর বৃক্ষের সমাহার। প্রজাপতি ডানা মেলা দিনগুলোতে পাথারিয়া পাহাড়ের আরণ্যক নিসর্গে ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। সেখান থেকেই হয়তো গাছ-পালার প্রতি তাঁর এই ভালোবাসার জন্ম।
 
শৈশবকাল
 
ফুলের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের সেই মধুর দিনক্ষণটি দ্বিজেন শর্মার মনে নেই। কিন্তু শৈশব-কৈশোরেই যে তিনি গাছের জন্য রক্তের মাঝে টান অনুভব করতেন, তা বেশ মনে পড়ে। বাড়ির বাগানে অজস্র গাছগাছালির মধ্যে ছিল স্বর্ণচাঁপা, কনকচাঁপা, মধুমালতীসহ নানা রঙবেরঙের ফুল। বসন্ত শেষের বৃষ্টির পর সারা বাড়ি ফুলে ফুলে ভরে উঠতো। দ্বিজেন শর্মা সকালে পূজার ফুল তুলতেন। সেখানে দেখতেন অশোক পরেছে সারা গায়ে থোকা থোকা লাল-হলুদ জড়োয়া আর ফুলের তোড়া হয়ে উঠেছে পুষ্পপাগল গোলকচাঁপার গাছটি। ভোরের আলোয় কাঁপতো কচিপাতার সবুজ বাতাস, উতলা হতো ফুলের মধুগন্ধে। সেইসব আশ্চর্য দিনে পৃথিবীর সব কিশোরের মতো দ্বিজেন শর্মাও প্রকৃতির প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন। তিনি কৈশোরের একটি দিনের কথা বললেন, "সরস্বতী পূজার সময় ফুল খুঁজতে গিয়ে ভিন্ন গাঁয়ে এক বৈষ্ণবীর আখড়ায় গাঁদা ফুলের একটি আশ্চর্য বাগান দেখেছিলাম। সারা উঠোনে ফুলের সে কী সমারোহ : হলুদ, কমলা, গাঢ় লাল, যেন রঙের বিস্ফোরণ। তার গোপালসেবার জন্য মানতি বলে বৈষ্ণবী আমাকে একটি ফুলও তুলতে দেননি। সেদিন বাড়ি ফেরার সময় পথ হারিয়ে এক বিলের কাছে পৌঁছে যে দৃশ্য দেখেছিলাম, আজও তা মনে আছে। আদিগন্ত দুর্বাশ্যামল মাঠ, মাঝে মাঝে হিজলবন, ছড়ানো ছিটানো বনগোলাপ আর পুষ্পিত ভুঁইওকরার ঝোপ, বিলের স্বচ্ছ জলে রঙ বেরঙের হাঁস, যেন এক স্বপ্নের দেশ। অনেকক্ষণ ওখানে দাঁড়িয়ে ফুল না পাওয়ার দুঃখটাই ভুলে গিয়েছিলাম।"
 
দ্বিজেন শর্মার বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে উত্তরে তাকালে দেখা যেত নিকড়ি নদী, মৌলভী সাহেবের মাজার, ধানক্ষেত, দূর দিগন্তে খাসিয়া পাহাড়ের নীলাভ ঢেউ। মাজারের কাছেই ছিল কয়েকটি জারুল গাছ। প্রতি গ্রীষ্মে গাছগুলি বেগুনি রঙের ফুলে আচ্ছন্ন হতো, রঙিন মিনারের মতো দাঁড়িয়ে থাকা ওই গাছগুলির ঝরে পড়া ফুলে কবর ভূমি ঢেকে যেত। জন্মভূমির এই অনুপম দৃশ্যপট দ্বিজেন শর্মার আজও মনে পড়ে। শৈশব- কৈশোরের স্মৃতিতে অম্লান হয়ে আছে লাল ঘন্টা ফুল আর কাঞ্চনের সঙ্গে পাহাড়ী পথ। নিবিড় অরণ্যঘেরা ওই নির্জন পথের দু'পাশে ফুটতো সাদা নাগবল্লী, জংলী জুঁই সহ বহুজাতের অর্কিড। আরও ছিল ফুলকে হার মানানো রঙ বেরঙের পাখিরা- কালো ময়না, সবুজ-পাটকিলে ডানার হরিয়াল, সিঁদুর-লাল আলতাপরী, লালবুক শ্যামা, সুকন্ঠী ভিংরাজ এবং ওদের কলকাকলীর অপূর্ব অর্কেস্ট্রা। কোনও দিন হঠাত্‍ দমকা হওয়ায় অরণ্যে দোলা লাগতো। মাটির বন্ধনমুক্তির ব্যর্থ আর্তিতে অরণ্য যেন মাথা কুটতো৷ জল মর্মরের মতো সেই গোঙানি কিছুতেই শেষ হতো না। পুষ্পিত বনজুঁই কেঁপে কেঁপে ফুল ঝরাত আর দ্বিজেন শর্মা নির্বাক বিস্ময়ে দাঁড়িয়ে তা দেখতেন। এভাবেই অরণ্যের মাঝে কেটে যায় তাঁর শৈশবের আনন্দময় দিনগুলি।
 
শিক্ষাজীবন
 
শৈশবেই গ্রামের পাঠশালায় তাঁর হাতেখড়ি হয়। তারপর করিমগঞ্জ পাবলিক হাইস্কুলে পড়াশুনা। মায়ের ইচ্ছে ছিল ছেলে ডাক্তার হবে কিন্তু প্রকৃতিপ্রেম তাঁকে উদ্ভিদবিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট করল। আর তাই কলকাতা সিটি কলেজে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর (১৯৫৮) ডিগ্রি লাভ করেন।
 
<!--
কর্মজীবন
 
১৪২ ⟶ ১৩১ নং লাইন:
দ্বিজেন শর্মা অনূদিত বইয়ের সংখ্যা ৩০। আর মৌলিক বই ১৫টি। দ্বিজেন শর্মা বলেন, ‘এখন আমি পরিবেশ নিয়ে পড়াশোনা করি। আর্থসামাজিক ইতিহাস, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আমার প্রিয় বিষয়। বছরে দু-তিনবার সিলেটের পাথারিয়ায় যাই, বরিশালে যাই। আমার বাবা চন্দ্রকান্ত শর্মা কবিরাজ ছিলেন। তিনি অনেক গাছ লাগাতেন। গাছের বাকল, পাতা দিয়ে ওষুধ তৈরি করতেন। ঔষধি গাছ সম্পর্কে বাবার কাছেই জেনেছি।’
দ্বিজেন শর্মার এক ছেলে চিকিত্সক, থাকেন মস্কোতে। এক মেয়ে অণুজীববিজ্ঞানী, লন্ডনে থাকেন। দ্বিজেন শর্মা থাকেন সিদ্ধেশ্বরীতে। তিনি প্রায়ই রমনা পার্কে যান, গাছ দেখেন। এখনো গাছ লাগান।
-->
 
== তথ্যসূত্র ==