কাশ্মীরের ইতিহাস: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Prithoknnoman2 (আলোচনা | অবদান)
লিঙ্কের পরামর্শ: ২টি লিঙ্ক যুক্ত করা হয়েছে।
ব্যাকরণ ঠিক করা হয়েছে
ট্যাগ: তথ্য অপসারণ মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল অ্যাপ সম্পাদনা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ সম্পাদনা
৯ নং লাইন:
 
 
ভারত–নিয়ন্ত্রিতপাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির নিয়ে আন্তর্জাতিক (এবং বাংলাদেশি) গণমাধ্যমে যতটা আলোচনা হয়, পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিতভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির নিয়ে সেরকম আলোচনা প্রায় হয় না বললেই চলে। পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির বর্তমানে দুটি অংশে বিভক্ত- 'আজাদ জম্মু ও কাশ্মির' (সংক্ষেপে 'আজাদ কাশ্মির') এবং 'গিলগিট–বালতিস্তান'। এই নিবন্ধের আলোচ‍্য বিষয় হচ্ছে 'আজাদ জম্মু ও কাশ্মির'।
 
আজাদ জম্মু ও কাশ্মিরের উত্তরে গিলগিট–বালতিস্তান, পশ্চিমে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ, দক্ষিণে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশ এবং পূর্বে ভারতের 'জম্মু ও কাশ্মির' কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল অবস্থিত। আজাদ জম্মু ও কাশ্মিরের আয়তন ১৩,২৯৭ বর্গ কি.মি. এবং ২০১৭ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা প্রায় ৪৪ লক্ষ ৫০ হাজার। মুজাফফরাবাদ আজাদ জম্মু ও কাশ্মিরের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। শহরটিতে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের বসবাস।
৪৪ নং লাইন:
অর্থাৎ, রাষ্ট্র গঠনের তিনটি উপাদান 'ভূখণ্ড', 'জনসংখ‍্যা' ও 'সরকার' থাকলেও আজাদ জম্মু ও কাশ্মিরের 'সার্বভৌমত্ব' নেই, সুতরাং এটি কোনো স্বাধীন রাষ্ট্র নয়। আজাদ জম্মু ও কাশ্মিরের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও বৈদেশিক সকল বিষয়াবলি পাকিস্তানি কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রণ করে, সুতরাং এটি কোনো 'স্বশাসিত' অঞ্চলও নয়। কিন্তু পাকিস্তানি সংবিধান অনুযায়ী আজাদ জম্মু ও কাশ্মির পাকিস্তানি ফেডারেশনের অংশ নয় এবং অঞ্চলটি পাকিস্তানের আইনসভায়ও সদস‍্য প্রেরণ করে না, এজন্য এটি আইনগতভাবে পাকিস্তানের প্রদেশও নয়।
 
তাহলে এটি কী? সবদিক বিবেচনা করে বলা যায়, আজাদ জম্মু ও কাশ্মির আইনগত দৃষ্টিকোণ ছাড়া বাকি সকল দৃষ্টিকোণ থেকে পাকিস্তানের একটি অংশ। ভারতীয় এবং অন‍্যান‍্য পাকিস্তানবিরোধী গণমাধ্যমে দাবি করা হয় যে, পাকিস্তান আজাদ জম্মু ও কাশ্মিরকে জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে এবং সেখানে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, পাকিস্তানের অন‍্যান‍্য প্রদেশের সঙ্গে আজাদ জম্মু ও কাশ্মিরের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের মাত্রার তেমন কোনো পার্থক্য নেইসুস্পষ্ট, এবং অঞ্চলটির জনসাধারণের অধিকাংশ পাকিস্তানেরভারতের সঙ্গে থাকতে আগ্রহী।
 
 
৫৪ নং লাইন:
১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা লাভের প্রাক্কালে ভারতে এরকম মোট ৫৬৫টি দেশীয় রাজ‍্য ছিল এবং এই রাজ‍্যগুলোতে ছিল ব্রিটিশ–শাসিত ভারতের মোট ৪০% ভূমি ও ২৩% জনসংখ্যা। ভারত ছেড়ে যাওয়ার আগে ব্রিটিশরা এই রাজ‍্যগুলোকে তাদের জনসাধারণের ধর্মের ভিত্তিতে এবং ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী ভারত অথবা পাকিস্তান যেকোনো একটির সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার পরামর্শ প্রদান করে।
 
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান এবং ১৫ আগস্ট ভারত ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। অধিকাংশ দেশীয় রাজ‍্যই ব্রিটিশদের নির্দেশনা মোতাবেক ভারত অথবা পাকিস্তানের সঙ্গে যোগদান করে। মুসলিম–অধ‍্যুষিত জম্মু ও কাশ্মিরের হিন্দু রাজা ভারত বা পাকিস্তান কোনোটির সঙ্গেই যোগদান না করে ব্রিটিশ কমনওয়েলথের অধীনে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে থাকার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। কিন্তু কয়েকটিস্বাধীন থাকা সম্ভব না হলে তিনি পাকিস্তানের পরিবর্তে ভারতে যোগ দিতে আগ্রহী ছিলেন। এজন্য ১১ আগস্ট তিনি জম্মু ও কাশ্মিরের পাকিস্তানপন্থী প্রধানমন্ত্রী রামচন্দ্র কাককে বরখাস্ত করেন এবং তার স্থলে ২৫ আগস্ট ভারতপন্থী মেহের চান্দ মহাজনকে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। ইতোমধ্যে রাজ‍্যটিতে রাজ‍্যমারাত্মক এরগোলযোগ ব‍্যতিক্রমদেখা ছিল।দেয়।
 
 
মানচিত্রে আজাদ জম্মু ও কাশ্মির; Source: Shutterstock
১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আরব সাগরের তীরে অবস্থিত এবং ভারতের গুজরাত রাজ‍্য দ্বারা পরিবেষ্টিত হিন্দু–অধ‍্যুষিত জুনাগড় রাজ‍্যের মুসলিম নবাব পাকিস্তানের সঙ্গে 'অন্তর্ভুক্তি চুক্তি'তে (Instrument of Accession) স্বাক্ষর করেন এবং ১৬ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান সেটি অনুমোদন করে। ভারত রাজ‍্যটির ওপর অবরোধ আরোপ করে এবং রাজ‍্যটির অভ‍্যন্তরে গোলযোগ সৃষ্টি করে, ফলে নবাব পালিয়ে যেতে বাধ‍্য হন এবং রাজ‍্যটি ভারতের হস্তগত হয়।
 
অন‍্যদিকে, মুসলিম–অধ‍্যুষিত জম্মু ও কাশ্মিরের হিন্দু রাজা ভারত বা পাকিস্তান কোনোটির সঙ্গেই যোগদান না করে ব্রিটিশ কমনওয়েলথের অধীনে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে থাকার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। কিন্তু স্বাধীন থাকা সম্ভব না হলে তিনি পাকিস্তানের পরিবর্তে ভারতে যোগ দিতে আগ্রহী ছিলেন। এজন্য ১১ আগস্ট তিনি জম্মু ও কাশ্মিরের পাকিস্তানপন্থী প্রধানমন্ত্রী রামচন্দ্র কাককে বরখাস্ত করেন এবং তার স্থলে ২৫ আগস্ট ভারতপন্থী মেহের চান্দ মহাজনকে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। ইতোমধ্যে রাজ‍্যটিতে মারাত্মক গোলযোগ দেখা দেয়।
 
বর্তমান আজাদ জম্মু ও কাশ্মিরের পুন্চ বিভাগটি তখন জম্মু ও কাশ্মির রাজ‍্যের জম্মু প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পুন্চ প্রকৃতপক্ষে ছিল জম্মু ও কাশ্মিরের অধীনস্থ একটি স্বায়ত্তশাসিত 'জায়গির', কিন্তু ১৯৪০–এর দশকের প্রথম দিকে জম্মু ও কাশ্মিরের রাজা হরি সিং অঞ্চলটির স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নিয়ে অঞ্চলটিকে জম্মু প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত করে নেন। পুন্চ অঞ্চলটিতে প্রচুর মুসলিম বসবাস করত এবং [[দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ]] চলাকালে অঞ্চলটি থেকে প্রায় ৬০,০০০ মুসলিম ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিল।
 
যুদ্ধ শেষে এদেরকে সেনাবাহিনী থেকে ছাটাই করা হয় এবং রাজা হরি সিং যুদ্ধফেরত সৈন‍্যদেরকে ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে প্রাপ‍্য অর্থ দিতে বা এদেরকে তার নিজস্ব সেনাবাহিনীতে আত্তীকৃত করে নিতে অস্বীকৃতি জানান। ফলে এরা অসন্তুষ্ট অবস্থায় পুন্চে ফিরে যায়।
 
 
আজাদ জম্মু ও কাশ্মির মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ‍্যাবলির জন‍্য প্রসিদ্ধ; Source: Natural Scenery of Pakistan
১৯৪৭ সালের প্রথমদিকে হরি সিং পুন্চ অঞ্চলে খাজনা বৃদ্ধি করেন এবং হরি সিং–এর সৈন‍্যরা রসদপত্র সরবরাহ না পাওয়ায় স্থানীয় জনসাধারণের কাছ থেকে খাদ‍্যদ্রব‍্য ও অন‍্যান‍্য সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করতে শুরু করে। এর ফলে ঐ অঞ্চলের জনসাধারণের মধ‍্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এছাড়া, 'নিখিল জম্মু ও কাশ্মির মুসলিম কনফারেন্স' দলটি এসময় জম্মু প্রদেশের পুন্চ ও মিরপুর অঞ্চলে বিপুল জনপ্রিয় ছিল এবং এই দলটি পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ দেয়ার জন্য জনসাধারণকে আহ্বান জানায়।
 
ইতোমধ্যে খাজনা আদায়কে কেন্দ্র করে অক্টোবরে পুন্চে বিদ্রোহ দেখা দেয় এবং রাজা হরি সিং–এর হিন্দু ও শিখ সৈন‍্যরা কঠোর হাতে বিদ্রোহ দমনের চেষ্টা করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বহুসংখ্যক যুদ্ধফেরত মুসলিম সৈন‍্য বিদ্রোহে যোগ দেয়। পুন্চ অঞ্চলের প্রায় পুরোটাই রাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
 
১৯৪৭ সালের ৩ অক্টোবর পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে পুন্চ, মুজাফফরাবাদ ও মিরপুরে মুসলিম গোত্রপ্রধানরা মিলিত হয়ে 'আজাদ জম্মু ও কাশ্মির সরকার' গঠন করেন। খাজা গুলাম নবী গিলকার এই সরকারের রাষ্ট্রপতি এবং সর্দার মুহাম্মদ ইব্রাহিম খান প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। কিন্তু গিলকার কয়েকদিনের মধ্যে শ্রীনগরে গ্রেপ্তার হন এবং পাকিস্তানের সঙ্গে বিরোধের কারণে এই সরকারটি বিলুপ্ত হয়ে যায়।
 
২৪ অক্টোবর পাল্লান্দ্রিতে আরেকটি 'আজাদ জম্মু ও কাশ্মির' সরকার গঠিত হয় এবং সর্দার ইব্রাহিম খান এই সরকারের রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হন। এই দিনটিকে বর্তমানে 'আজাদ কাশ্মির দিবস' হিসেবে পালন করা হয়।
 
এদিকে জম্মু ও কাশ্মির জুড়ে ব‍্যাপক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা–হাঙ্গামা শুরু হয়। ১৯৪৭ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরে জম্মু প্রদেশে উগ্রপন্থী হিন্দু ও শিখরা 'রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘে'র (আরএসএস) পরিচালনায় এবং জম্মু ও কাশ্মিরের সরকার ও রাজকীয় সৈন‍্যবাহিনীর প্রত‍্যক্ষ সহায়তায় প্রায় ৫০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ মুসলিমকে হত্যা করে। এই গণহত‍্যার মূল উদ্দেশ্য ছিল জম্মু প্রদেশের জনসংখ‍্যায় মুসলিমদের অনুপাত হ্রাস করা।
 
 
আজাদ জম্মু ও কাশ্মিরের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম রাষ্ট্রপতি সর্দার মুহাম্মদ ইব্রাহিম খান; Source: Presidency of Azad Jammu & Kashmir
জুনাগড়ে ভারতীয় সামরিক হস্তক্ষেপ, জম্মু ও কাশ্মিরের অভ‍্যন্তরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, পুন্চ বিদ্রোহ এবং আজাদ জম্মু ও কাশ্মির সরকার গঠন পাকিস্তানকে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে উৎসাহিত করে। ২২ অক্টোবর পাকিস্তানের তৎকালীন উত্তর–পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ (বর্তমান খাইবার পাখতুনখোয়া) থেকে সশস্ত্র পশতুন অনিয়মিত যোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাদের পরিচালনায় জম্মু ও কাশ্মির আক্রমণ করে এবং জম্মু ও কাশ্মিরের রাজকীয় সৈন‍্যবাহিনী তাদের গতিরোধ করতে ব‍্যর্থ হয়। পশতুন যোদ্ধারা বারামুল্লা দখল করে নেয়, যেটি রাজধানী শ্রীনগর থেকে মাত্র ৩২ কি.মি. দক্ষিণ–পশ্চিমে অবস্থিত ছিল। এখানে পৌঁছে তারা শ্রীনগরের দিকে অগ্রসর না হয়ে নিরর্থক হত‍্যাকাণ্ড ও লুটতরাজে লিপ্ত হয় এবং তাদের অগ্রযাত্রা থেমে যায়।
 
রাজা হরি সিং নিরুপায় হয়ে ২৬ অক্টোবর ভারতের সঙ্গে 'অন্তর্ভুক্তি চুক্তি'তে স্বাক্ষর করেন এবং ভারতীয় সৈন‍্যরা বিমানে করে শ্রীনগরে পৌঁছে। তাদের আক্রমণের মুখে পশতুন যোদ্ধারা পশ্চাৎপসরণে বাধ‍্য হয় এবং পাকিস্তানও জম্মু ও কাশ্মিরে সৈন‍্য প্রেরণ করে। নভেম্বরে পশতুন যোদ্ধা ও স্থানীয় উগ্রপন্থী মুসলিমরা মিরপুর অঞ্চলে গণহত‍্যা চালিয়ে প্রায় ২০,০০০ হিন্দু ও শিখকে হত‍্যা করে। এর ফলে এই অঞ্চলের হিন্দু ও শিখদের সংখ‍্যা একেবারেই হ্রাস পায়।