নারায়ণোপনিষদ্‌: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
অঙ্গরাগ রায় (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
Samir pondit (আলোচনা | অবদান)
নতুন যোগ করেছি
ট্যাগ: পুনর্বহালকৃত দৃশ্যমান সম্পাদনা মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
৪৩ নং লাইন:
{{Quote|
<poem>
নারায়ণ অন্তরের আনন্দ, ব্রহ্ম, পুরুষ, অ, উ ও ম- এই তিন পবিত্র অক্ষর দ্বারা গঠিত [[ওঁ|ওঙ্কারের]] সঙ্গে ব্যক্তির মধ্যে বিলীন হন।</poem> ''নারায়ণোপনিষদ্‌'' ৫.১|পল ডুসেনের অনুবাদ অবলম্বনে<ref name=deussen803/>}}নারায়ণ উপনিষদ্
 
১৮-তম উপনিষদ
 
কৃষ্ণযজুর্বেদীয় উপনিষদ্ ; 'ওঁ সহনাববতু' ইত্যাদি শাস্তিবাচন। গদ্যে বিরচিত মাত্র পাঁচটি মন্ত্র সমন্বিত এই উপনিষদটি সংক্ষিপ্ত হলেও অত্যন্ত তেজোময় এবং মাহাত্ম্যপূর্ণ। শ্রীমন্ নারায়ণের এটি একটি অপূর্ব অনবদ্য প্রশস্তি-মন্ত্র। এই উপনিষদের চারটি মন্ত্র-অনুচ্ছেদ পাঠে ঋগ্বেদ সামবেদ যজুর্বেদ ও অথর্ববেদের শির বা মুখ্য মর্মার্থ পাঠ করা হল বলে ধরা হয়। উপনিষদটি ছোট্ট অথচ সবিশেষ তেজোময় ও মাহাত্ম্যপূর্ণ বিধায়, আমরা এখানে সমগ্র উপনিষদটি উদ্ধৃত করছি।
 
♥ নারায়ণই সবকিছুর স্রষ্টাঃ
 
ওঁ অথ পুরুষো হ বৈ নারায়ণঃ অকাময়ত প্রজাঃ সৃজেয় ইতি। নারায়ণাৎ প্রাণো জায়তে মনঃ সৰ্বেন্দ্রিয়াণি চ, খং বায়ুঃ জ্যোতিঃ আপঃ পৃথিবী বিশ্বস্য ধারিণী। নারায়ণাৎ ব্রহ্মা জায়তে। নারায়ণাৎ রুদ্রো জায়তে। নারায়ণাৎ ইন্দ্রো জায়তে। নারায়ণাৎ প্রজাপতিঃ প্রজায়তে। নারায়ণাৎ দ্বাদশাদিত্যা রুদ্রা বসবঃ সর্বাণি ছন্দাংসি নারায়ণাৎ এব সমুৎপদ্যন্তে, নারায়ণাৎ প্রবর্ত্তন্তে, নারায়ণে প্রলীয়ন্তে। এতদ ঋগ্বেদশিরঃ অধীতে৷ ১ ৷৷
 
—ওঁ। পরমপুরুষ নারায়ণ কামনা করলেন, আমি প্রজা সৃষ্টি করব। নারায়ণ থেকে প্রাণ জাত হয় ; মন সর্বেন্দ্রিয় আকাশ বায়ু আলো জল এবং ধরিত্রী পৃথিবীও। নারায়ণ থেকে ব্রহ্মা জাত হন। নারায়ণ থেকে রুদ্র জাত হন। নারায়ণ থেকে ইন্দ্র জাত হন। নারায়ণ থেকে প্রজাপতি প্রজাত হন। দ্বাদশ আদিত্য একাদশ রুদ্র অষ্ট বসু বেদাদি ছন্দসমূহ নারায়ণ হতেই উৎপন্ন, নারায়ণ হতে সক্রিয় এবং নারায়ণে বিলীন হয়। এটি পাঠে ঋগ্বেদের শির বা সারাংশ পাঠ করা হয়।
 
নারায়ণ হলেন এখানে পরব্রহ্ম বা ব্রহ্মপুরুষ স্বয়ং। ব্রহ্মের কামনা থেকেই এই জগদ্বব্রহ্মাণ্ডের উদ্ভব—একথা তৈত্তিরীয় উপনিষদ্-এর ২।৬ মন্ত্রেও আমরাপাই—সঃ অকাময়ত, বহুস্যাং প্রজায়েয় ইতি'—তিনি কামনা করলেন, আমি বহু হয়ে জন্মাব। যিনি পূর্ণ নিষ্কাম, তাঁর তথাকথিত কামনা লীলার জন্য মাত্র, কোনও তাড়না বা প্রয়োজনবশত নয়।
 
এই চারটি ছোট্ট অনুচ্ছেদ-মন্ত্র পাঠ করলে, চারবেদের শির বা মর্মার্থ পাঠ করা হয়, এটি কি অত্যুক্তি নয় ? না। বেদপাঠ হল স্বাধ্যায়ের অঙ্গবিশেষ। স্বাধ্যায়ে যে অভিনিবেশ, তন্ময়তা ও সমাধিভাব লাভ হয়, এই মন্ত্রকয়টির সশ্রদ্ধ আবৃত্তিতে তা-ই সংক্ষেপে লাভ হয়—এটিই হল এর তাৎপর্য্য।
 
♥ সবকিছুই নারায়ণ
 
অথ নিত্যঃ নারায়ণঃ। ব্রহ্মা নারায়ণঃ । শিবশ্চ নারায়ণঃ। শত্রুশ্চ নারায়ণঃ। কালশ্চ নারায়ণঃ। দিশশ্চ নারায়ণঃ। বিদিশশ্চ নারায়ণঃ। ঊর্ধংচ নারায়ণঃ। অধশ্চ নারায়ণঃ। অন্তঃবহিশ্চ নারায়ণঃ। নারায়ণ এবেদং সর্বং যদ্ ভূতং যশ্চ ভব্যম্। নিষ্কলঙ্কঃ নিরঞ্জনঃ নির্বিকল্পঃ নিরাখ্যাতঃ শুদ্ধঃ দেবঃ একঃ নারায়ণঃ, ন দ্বিতীয়ঃ অস্তি কশ্চিৎ। য এবং বেদ স বিষ্ণুঃ এব ভবতি, স বিষ্ণুঃ এর ভবতি। এতদ্ যজুর্বেদশিরঃ অধীতে। ২।।
 
—নারায়ণ হলেন নিত্য । ব্রহ্মা হলেন নারায়ণ। শিবও নারায়ণ। ইন্দ্রও নারায়ণ। কালও নারায়ণ। দিকসমূহ নারায়ণ। দিকসমূহের অতীতে যা কিছু তাও নারায়ণ। নারায়ণ হলেন উপরে, নারায়ণ হলেন নীচে। ভিতরবাহির সর্বকিছুই নারায়ণ। এই সবকিছুই হল নারায়ণ—যা হয়েছে এবং হবে। নারায়ণ হলেন নিষ্কলঙ্ক নিরঞ্জন নির্বিকল্প নামাতীত শুদ্ধ একেশ্বর, যাঁর দ্বিতীয় কিছু নাই। যিনি এরকম জানতে পারেন, তিনি বিষ্ণুই হয়ে যান, তিনি বিষ্ণুই হয়ে যান। এই মন্ত্রপাঠে যজুঃবেদের সূক্ষ্ম সারাংশ পাঠ করা হয়।২।।
 
নারায়ণের মধ্যে সমস্ত দেবতার সম্মিলন; সমস্ত দিকের সমস্ত কালের সমাবেশ ও সমন্বয়। অদ্বয় পরমপুরুষ এই নারায়ণ হলেন নিষ্কলঙ্ক, নিরঞ্জন, নির্বিকল্প ও অনবদ্য।
 
♥ অষ্টাক্ষর মহামন্ত্র
 
ওঁ ইতি অগ্নে ব্যাহরেৎ। নমঃ ইতি পশ্চাৎ। নারায়ণায় ইতি উপরিষ্টাং। ওঁ ইতি একাক্ষরম্। নমঃ ইতি দ্বে অক্ষরে । নারায়ণায় ইতি পঞ্চাক্ষরাণি।এতদ্‌ বৈ নারায়ণস্য অষ্টাক্ষরম্ পদম্। যঃ হ বৈ নারায়ণস্য অষ্টাক্ষরং পদম্‌ অধ্যেতি, অনপব্ৰুবঃ সর্বম্ আয়ুঃ এতি। বিন্দতে প্রাজাপত্যং রায়স্য পোষ গৌপত্যং, ততঃ অমৃতত্বম্ অশ্রুতে, ততঃ অমৃতত্বম্ অপ্লুত ইতি। এতদ সামবেদশিরঃ অধীতে।৩।।
 
—'ওঁ' প্রথমে উচ্চারণ করবে, পরে ‘নমঃ', এর পর 'নারায়ণায়’। 'ও হলেন একাক্ষর । ‘নমঃ' দুই অক্ষর। ‘নারায়ণায়’ হল পাঁচ অক্ষরবিশিষ্ট। এই হল নারায়ণের অষ্টাক্ষর মন্ত্র। যিনি নারায়ণের এই অষ্টাক্ষর মন্ত্র পাঠ করেন, তিনি নির্বিঘ্নে পূর্ণ আয়ু লাভ করেন। তিনিই প্রজাপতির ঐশ্চর্য্য ও আধিপত্য লাভ করেন এবং মৃত্যুর পর অমৃতত্ব প্রাপ্ত হন, অমৃতত্ব প্রাপ্ত হন। এই পাঠে সামবেদের শির বা সূক্ষ্ম সারাংশ পাঠ করা হয়।৩।।
 
মূল মন্ত্রকে সরাসরি না বলে, ভেঙ্গে বা ঘুরিয়ে বলার একটা রীতি অতি সুপ্রাচীন ও সুপ্রচলিত। শ্রদ্ধা নিষ্ঠা ও প্রেম প্রগাঢ় রাখতে এবং বিরুদ্ধভাব কটূক্তি ইত্যাদি পরিহার করতেই বোধহয় এই রীতি। সিদ্ধান্ত এই, মহামন্ত্র জপের ফলে ইহলোকে নিরুপদ্রব দীর্ঘায়ু এবং দেহান্তে অমরত্ব লাভ হয়।
 
♥ প্রণব ও নারায়ণ অভিন্ন
 
প্রত্যক্ আনন্দং ব্রহ্মপুরুষং প্রণবস্বরূপম্ । অকার উকার মকার ইতি । তা অনেকধা সমভবৎ তৎ এতৎ ওম্ ইতি। যম্ উত্ত্বা মুচ্যন্তে যোগী জন্মসংসারবন্ধনাৎ। ওঁ নমো নারায়ণায় ইতি মন্ত্রোপাসকঃ বৈকুণ্ঠভুবনং গমিষ্যতি। তদ্ ইদং পুণ্ডরীকং বিজ্ঞানঘনং তস্মাৎ তড়িৎ-আভমাত্রম্ । ব্রহ্মণ্যঃ দেবকীপুত্রঃ ব্রহ্মণ্যঃ মধুসুদনঃ। ব্রহ্মণ্যঃ পুণ্ডরীকাক্ষঃ ব্রহ্মণ্যঃ বিষ্ণুঃ অচ্যুতঃ ইতি। সর্বভূতস্থং একং বৈ নারায়ণং কারণপুরুষম্ অকারণং পরং ব্রহ্ম ওম্। এতদ অথবশিরঃ অধীতে।৪।।
 
—অন্তর্নিহিত আনন্দময় ব্রহ্মপুরুষ হলেন প্রণবস্বরূপ—অকার উকার মকার (এই তিনের সমন্বয়)। তিনি অনেক প্রকার হয়েছিলেন এবং তাই থেকে তাঁর নাম ‘ওঁ’—যে নাম উচ্চারণ করে যোগী সংসারবন্ধন থেকে মুক্ত হন।' ‘ওঁ নমো নারায়ণায়’ এই মন্ত্রের উপাসক বৈকুণ্ঠভুবনে গমন করেন। সেই বৈকুণ্ঠ হলেন পদ্মের ন্যায় জ্ঞানোজ্জ্বল, অতএব বিদ্যুৎপ্রভাবিশিষ্ট। ব্রহ্মময়দেবকীপুত্র হলেন ব্রহ্মময় মধুসূদন। ব্রহ্মময় পুণ্ডরীকাক্ষ হলেন সর্ববস্তু ও প্রাণীতে অধিষ্ঠিত এবং তিনি হলেন কারণাতীত ব্রহ্মস্বরূপ ওঙ্কার। এই পাঠে অথর্ববেদের সূক্ষ্ম সারাংশ পাঠ করা হয়।৪।।
 
এই ব্রহ্মপুরুষ নারায়ণ হলেন ওঙ্কারস্বরূপ। সর্বভূতস্থ কারণ পুরুষ নারায়ণ এবং অকারণ আদ্যস্তহীন পরব্রহ্ম ওঙ্কার—এই উভয়ে হলেন অভিন্ন সত্তা ও তত্ত্ব।
 
♥ ফলশ্রুতি
 
প্রাতঃ অধীয়ানো রাত্রিকৃতং পাপং নাশয়তি। সায়ম্ অধীয়ানঃ দিবসকৃতং পাপং নাশয়তি। তৎ সায়ং প্রাতঃ অধীয়ানঃ পাপঃ অপাপঃ ভবতি। মধ্যং দিনম্ আদিত্যাভিমুখঃ অধীয়ানঃ পঞ্চমহাপাতক-উপপাতকাৎ প্রমুচ্যতে। সর্ববেদপারায়ণপুণ্যং লভতে । নারায়ণসাযুজ্যম্ অবাপ্নোতি শ্রীমন্ নারায়ণসাযুজ্যম্ অবাপ্নোতি য এবং বেদ।৫।।
 
—এই উপনিষদটি প্রাতে পাঠ করলে পাঠকের রাত্রিকৃত পাপ নাশ হয়, সন্ধ্যায় পাঠ করলে দিবসকৃত পাপ নাশ হয়। সকাল ও সন্ধ্যায় পাঠ করলে, তাঁর পাপ আর হয় না। মধ্যদিবসে সূর্য্যাভিমুখী হয়ে পাঠ করলে, পঞ্চমহাপাতক ও উপপাতক থেকে মুক্তিলাভ ঘটে; সকল বেদপাঠের পুণ্যলাভ হয়। যিনি এরকম জানেন, তাঁর নারায়ণের সঙ্গে সাযুজ্যলাভ ঘটে, শ্রীমন্ নারায়ণের সঙ্গে সাযুজ্যলাভ হয়।।৫।।
 
পাপ মানে যা আমাদের মনেপ্রাণে গ্লানির প্রাদুর্ভাব ঘটায়। পাপ আমাদের মনপ্রাণকে, দ্রুত বা ধীরে, দমিত নিস্তেজ নির্বীর্য করবেই, আপাতভাবে পাপী যত বড় গলাই করুক না কেন। পাপ করব আর এই মন্ত্রপাঠ করলেই আমাদের পাপ কেটে যাবে—ব্যাপারটি তা নয়। পরমেশ্বরের একনিষ্ঠ জপ ধ্যান আরাধনা আমাদের ভিতরের পাপপ্রবৃত্তিকে ক্রমশ ক্ষীণ করে, পাপকর্ম ক্রমে আলুনি নীরস বোধ হয়, মনের ময়লা কেটে যায় এবং নিজের ভিতরের সমুজ্জ্বল স্বরূপটি আপনিই ফুটে উঠে। এরই পরিণামে আমরা নারায়ণসাযুজ্য বা ব্রহ্মসাযুজ্য লাভ করি।
 
জয় শ্রীকৃষ্ণ
 
সমীর চন্দ্র পন্ডিত
 
সনাতন ধর্মের প্রচার।
 
==তথ্যসূত্র==