বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন

বিল এবং মেলিন্ডা গেটস দম্পতির প্রতিষ্ঠিত মার্কিন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান

গেটস ফাউন্ডেশন[] (পূর্ণনাম: বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন), পূর্বতন উইলিয়াম এইচ. গেটস ফাউন্ডেশন; যা বিল এবং মেলিন্ডা গেটস দম্পতির প্রতিষ্ঠিত একটি আমেরিকান বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। ওয়াশিংটনের সিয়াটলে এটি ২০০০ সালে চালু হয়েছিল। এবং প্রতিষ্ঠানটির সম্পদের পরিমাণ $46.8 বিলিয়ন[] থাকায় বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারী ফাউন্ডেশন হিসাবে সংবাদে প্রকাশিত হয়[]। ফাউন্ডেশনের প্রাথমিক লক্ষ্যগুলি হলো, বিশ্বব্যাপী, স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধি ও চরম দারিদ্র্য হ্রাস; এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, শিক্ষাগত সুযোগগুলি প্রসারিত করা এবং তথ্য প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার বা প্রবেশের সুযোগ প্রদান। প্রতিষ্ঠানটি তার ৩জন Trustees বা জিম্মাদারগণদ্বারা নিয়ন্ত্রিত: বিল ও মেলিন্ডা গেটস এবং ওয়ারেন বাফেট। অন্যান্য প্রধান কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন সহ-চেয়ার উইলিয়াম এইচ. গেটস, সিনিয়র এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক সুজম্যান[][]

গেটস ফাউন্ডেশন
The Gates Foundation headquarters in 2022
গঠিত২০০০; ২৫ বছর আগে (2000)[]
প্রতিষ্ঠাতা
ধরনNon-operating private foundation[]
আইনি অবস্থা501(c)(3) organization
উদ্দেশ্যHealthcare, education, fighting poverty
সদরদপ্তরSeattle, Washington, U.S.
স্থানাঙ্ক৪৭°৩৭′২৫″ উত্তর ১২২°২০′৪৪″ পশ্চিম / ৪৭.৬২৩৬১° উত্তর ১২২.৩৪৫৫৬° পশ্চিম / 47.62361; -122.34556
এলাকাগত সেবা
Worldwide
পদ্ধতিDonations, grants
মূল ব্যক্তিত্ব
  • Bill Gates (Chair)
  • Mark Suzman (CEO)[]
ভাতা প্রদান$75.2 billion (2023)[]
কর্মী সংখ্যা
2,026 (2023)[]
ওয়েবসাইটwww.gatesfoundation.org
প্রাক্তন নাম
  • Bill & Melinda Gates Foundation (2000–2024)
  • William H. Gates Foundation
  • Gates Learning Foundation

২০০৭ সালে, এর প্রতিষ্ঠাতাবৃন্দ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় এবং ওয়ারেন বাফেট প্রথম বৃহত্তম উদারপ্রেমী হিসাবে স্থান পেয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গেটস কেমব্রিজ বৃত্তি প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন সামাজিক, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার বিভিন্ন উন্নয়নের বুদ্ধিদীপ্ত অলঙ্করণ ও সহযোগিতা প্রদান করেছে।

এশিয়া-আফ্রিকার অনুন্নত দেশসমূহে প্রতিবছর বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। একটি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, সচেতন, শিক্ষিত ও স্বাস্থ্যবান বিশ্ব গড়ে তোলা এ সংস্থার প্রধান উদ্দেশ্য। সংস্থাটি টেকসই শিক্ষা ব্যবস্থা, অনুন্নত দেশগুলোতে স্বাস্থ্য খাতে অনুদান, কৃষি খাতের আধুনিকায়ন, প্রাণঘাতী ব্যাধির ভ্যাকসিন আবিষ্কারে বিনিয়োগ ও অনুন্নত দেশগুলোতে অর্থনৈতিক সাহায্য দিয়ে থাকে। বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, বিল গেটসের দাতব্য সংস্থা কোনো ধর্মীয় কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তাদের দাতব্য কাজ চালায় না, পৃথিবীর প্রতি নিজেদের দায়িত্ববোধ থেকেই তারা এমনটা করে থাকে।

শিক্ষাখাতে অবদান

সম্পাদনা

১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পিছিয়ে পড়া ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য উইলিয়াম এইচ ফাউন্ডেশন (দ্য বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের আগের নাম) ১,৫২৫ কোটি ডলারের বৃত্তি দেয়, যা শিক্ষাখাতে আমেরিকার ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সর্বাধিক অনুদান। এ অনুদান আমেরিকায় উচ্চশিক্ষায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে। এর মাধ্যমে প্রতি বছর ১,০০০ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় সহায়তা লাভ করে।

স্নাতক সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের জন্য ২০০০ সালে বিল গেটস ‘গেটস কেমব্রিজ’ বৃত্তি চালু করেন। ’গেটস কেমব্রিজ’ বৃত্তি বর্তমান পৃথিবীতে আর্থিক অনুদানের দিক দিয়ে সর্ববৃহৎ ও সেরা শিক্ষাবৃত্তি। এ বৃত্তির আওতায় প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্র ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশের শতাধিক মেধাবী মেধাবৃত্তি পেয়ে থাকে।

  • সংস্থাটি কে -১২ প্রকল্পের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ পর্যায়ে মানসম্মত শিক্ষার উন্নয়নে ২০০৯ সালে ৩৭৩ মিলিয়ন ডলার খরচ করে।
  • ২০১৮ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ ও আফ্রিকার অনুন্নত ১০ দেশে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নতিকল্পে ৬৮ মিলিয়ন ডলার অনুদান প্রদান করে।
  • এমআইটিসহ সারা বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্কুলে প্রতিবছর শিক্ষা বিস্তার ও আধুনিকায়নে কয়েক বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেন বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন।

স্বাস্থ্য

সম্পাদনা

অনগ্রসর দেশসমূহে দ্য বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন প্রচুর পরিমাণ অর্থ দান করে থাকে।প্রতিবছর প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার তারা ব্যয় করে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে।

১৯৯৯ সালে গেটস ফাউন্ডেশন গাবিকে (প্রাণঘাতী রোগের ভ্যাকসিন ও টিকা আবিষ্কারে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক সংস্থা) ৭৫ কোটি ডলারের আর্থিক সহায়তা দেয়। ২০০৫ সালে আরও ৩৭ কোটি ৫০ লক্ষ ডলারের আর্থিক সহায়তা দেয়। ২০০৭ সালে তারা গাবিকে আবারও ৯৫ কোটি ৭০ লাখ ডলারের অনুদান দেয়, যার মাধ্যমে পৃথিবীর অনুন্নত ৭৪টি দেশ স্বাস্থ্যখাতে সাহায্য পেয়ে থাকে প্রতিবছর। তাদের এ অর্থ মূলত নিউমোনিয়া, পোলিও, ম্যালেরিয়া রোগের ভ্যাকসিন তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে।

  • বিল গেটস ২০০৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ৬৮ কোটি ২৩ লাখ মার্কিন ডলারের অনুদান দেন পোলিও প্রতিরোধের জন্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফান্ডে ইতিহাসে এত টাকা আর কোনো ব্যক্তি একসাথে দেননি।
  • ২০০৬ ও ২০১১ সালে বিল গেটস এইডস, টিবি এবং ম্যালেরিয়া প্রতিরোধকল্পে বৈশ্বিক তহবিলে ৫০ কোটি ও ৭৫ কোটি ডলারের আর্থিক অনুদান দেন।
  • ২০১২ সালে ফাউন্ডেশনটি ২০ কোটি ৭৭ লক্ষ ডলারের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে ‘গ্লোবাল টিবি ভ্যাকসিন ফাউন্ডেশন’কে।

বর্তমানে মহামারি করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ১৫০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। প্রয়োজনে তা ২৫০ মিলিয়ন ডলারের উন্নীত করার আশ্বাস দিয়েছেন বিল গেটস।

আফ্রিকা মহাদেশের ১০টি দেশ এবং ৪৫টি জাতির মধ্যে নিয়মিত স্বাস্থ্য এবং পুষ্টি, স্যানিটেশন

রোগ প্রতিরোধ, গবেষণা এবং স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন।

এছাড়া সারা বিশ্বে মাতৃস্বাস্থ্য, শিশু স্বাস্থ্য, নতুন জন্ম নেয়া শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথেই কাজ করে যাচ্ছে ফাউন্ডেশনটি। উপর্যুক্ত কাজগুলো ছাড়াও পৃথিবী জুড়ে নিরাপদ পানি, মানসম্মত টয়লেট নিশ্চিতকরণে কাজ করছে তারা।

কৃষির উন্নয়ন

সম্পাদনা

কৃষির আধুনিকায়ন এবং উন্নয়নের জন্য বিল গেটস যুগান্তকারী অবদান রেখে চলেছেন। আফ্রিকার অনুন্নত দেশগুলোতে অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তনের জন্য তিনি কৃষিখাতে প্রচুর পরিমাণ অর্থ সাহায্য দেন। গত এক দশকে বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন আফ্রিকার দেশগুলোতে কৃষিখাতে

প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। ইথিওপিয়া, তানজানিয়া, নাইজেরিয়ার মতো দেশগুলোতে সরকারের সাথে সমন্বয় করে ফাউন্ডেশনটি কৃষিখাতে বিপ্লব ঘটানোর চেষ্টা করছে। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের তিনটি রাজ্যে কৃষিখাতের আধুনিকায়ন ও ফলন বৃদ্ধিতে কাজ করছে তারা।এ ফাউন্ডেশন বিশেষত চারটি বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে–

১. কৃষিজাত উৎপাদন বৃদ্ধি।

২. কৃষকদের আয় বৃদ্ধি।

৩. কৃষকদের বছরব্যাপী নিরাপদ ও সাশ্রয়ী মূল্যের পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করা।

৪. কৃষিকাজে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি।

২০০৭ ও ২০১০ সালে 'ইরি' (আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা সংস্থা)-কে প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দেয় তারা। পৃথিবীর পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর অবস্থার উন্নতি এবং দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য কৃষিখাতে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেছে বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন ।

সমগ্র পৃথিবীর পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজনীয় মানসম্মত পুষ্টিকর খাবার সাশ্রয়ী মূল্যে

নিশ্চিত করার জন্য বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন কাজ করে যাচ্ছে এবং প্রচুর অর্থ সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীতে যেকোনো দুর্যোগে কিংবা মহামারিতে বিল গেটসের ফাউন্ডেশন সবার আগে দাতব্য কাজে এগিয়ে আসছে গত দুই দশক ধরে।

বিল গেটস শুধু দাতব্য কাজে নিজে একা যুক্ত থাকেননি, পৃথিবীর অন্য ধনকুবেরদেরও নিজের প্রতিষ্ঠিত মানবিক কাজে সম্পৃক্ত করেছেন। তার মতো মহৎপ্রাণ দানবীর পৃথিবীর আঁধার দূর করার জন্য যে অবদান রেখে যাচ্ছেন, সেজন্য পৃথিবীবাসী তার কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে চিরকাল।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "History"Bill & Melinda Gates Foundation (ইংরেজি ভাষায়)। 
  2. Bill & Melinda Gates Foundation, FoundationCenter.org, accessed February 10, 2016.
  3. "About Mark Suzman" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত জুন ২৪, ২০২১ তারিখে, Bill & Melinda Gates Foundation: ". . . holds a doctorate in international relations from Oxford University, where he was a Rhodes scholar."
  4. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; FactSheet নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  5. "Bill & Melinda Gates Foundation"www.gatesfoundation.org। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১২, ২০২০ 
  6. "FOUNDATION FACT SHEET"gatesfoundation.org। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১২, ২০২০ 
  7. Chepkemoi, Joyce (এপ্রিল ২৫, ২০১৭)। "The Wealthiest Charitable Foundations In The World"www.worldatlas.com। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১২, ২০২০ 
  8. "Mark Suzman"Bill & Melinda Gates Foundation। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১২, ২০২০ 
  9. Schleifer, Theodore (২০১৯-১২-০৫)। "The Gates Foundation has enormous impact. Its CEO leaving could have an enormous impact, too."vox.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-১২ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা