বালিশ বা উপাধান হল নরম পদার্থে (যেমন তুলা, পালক, ফোম, ইত্যাদি) পূর্ণ এক ধরনের কাপড়ের থলে যা ঘুমানো, শোওয়া বা বসার সময় আরাম প্রদান বা কদাচিৎ চিকিৎসার উদ্দেশ্যে মাথা, গলা বা শরীরের অন্যান্য অংশকে অবলম্বন প্রদান করতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া বালিশ ঘরের শোভাবর্ধনেও ব্যবহৃত হতে পারে। বিছানা, বসার আসন (চেয়ার বা সোফা), ইত্যাদির শোভাবর্ধনের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত ছোট মাপের বালিশ "কুশন" নামেও পরিচিত।[১][২]

বিছানার কোনায় স্তুপ করে রাখা নকশা করা বালিশ।
একটি প্রাচীন মিশরীয় কাঠের বালিশ
সূচিকার্য করা তুর্কি বালিশ

সমসাময়িক পশ্চিমা সংষ্কৃতিতে বালিশ একরঙা বা বহুরঙা বর্ণিল কাপড়ের আচ্ছাদনে (বালিশের ওয়াড়) ঢাকা থাকে যার ভেতর নরম জিনিস যেমন নরম পালক, কৃত্রিম ফোম যেকোনও কিছু দিয়ে গঠিত হয়। অন্যান্য সংষ্কৃতিতে বালিশ কাঠ অথবা পাথর দিয়েও তৈরী হতে পারে। বিছানার বালিশ সাধারণত কাপড়ের নরম ওয়াড় দিয়ে আবৃত থাকে। বৈঠকখানায় ব্যবহৃত বালিশে সাধারণত অপেক্ষাকৃত শক্ত কাপড়ের আবরণ থাকে।

ব্যুৎপত্তি সম্পাদনা

বাংলা "বালিশ" শব্দটি ফার্সি ভাষার শব্দ بالش (ব'লেশ) থেকে এসেছে, যার অর্থ একই।

ইংরেজি সম্পাদনা

বালিশের ইংরেজি পিলো শব্দটি এসেছে মধ্যযুগের ইংলিশ পিলইউ থেকে, যার উৎস প্রাচীন ইংরেজি শব্দ পাইল (প্রাচিন জার্মান ফুলউইর সদৃশ্য) থেকে এবং ল্যাটিন পালভিনাস থেকে। ১২তম শতাব্দীর আগে পিলো শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল বলে জানা যায়।[৩]

ইতিহাস সম্পাদনা

আবির্ভাব সম্পাদনা

৭০০০ অব্দে প্রাচীন মেসোপ্টেমিয়ায় বসবাসকারী লোকেরা প্রথম বালিশ ব্যবহার প্রচলন করেছিল।[৪] এই সময়ে কেবল ধনীরাই বালিশ ব্যবহার করতো। বালিশের সংখ্যা মর্যাদার প্রতীক ছিল,সুতরাং একজনের যতবেশি বালিশ থাকতো সে তত বেশি সমৃদ্ধ বলে  ধরা হতো।[৪] ঘুমানোর সময় বারবার হওয়া গলা, পিঠ ও কাধের ব্যাথা দুর করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে পৃথিবীব্যাপি বালিশ উৎপদিত হয়ে আসছে।[৫] ঘুমানোর সময় মানুষের চুল,মুখ,নাক এবং কান থেকে পোকামাকড়কে দূরে রাখতেও বালিশ ব্যবহৃত হতো।[৫]

প্রাচীন মিশরে সম্পাদনা

খ্রীষ্টপূর্বাব্দ ২০৫৫-১৯৮৫ এর প্রাচীন মিশরে  মমি ও কবরের সাথে বালিশ ব্যবহারকে জড়িত করা হয়েছে। প্রাচীন মিশরের বালিশ ছিল কাঠের অথবা পাথরের তৈরি মাথা রাখার স্থান।[৬] এইসব বালিশ মৃতের মাথার নিচে রেখে ব্যবহার করা হতো কারণ মনে করা হতো মানুষের মাথা জীবনের মূল এবং পবিত্র। প্রাচীন মিশ্রীয়রা শবের মাথাকে সাপোর্ট দিতে, দেহতেজ উন্নত রাখতে,রক্ত সঞ্চালন চালু রাখতে এবং ওশুভ শক্তিকে দূরে রাখতে এসব কাঠের বা পাথরের বালিশ ব্যবহার করতো।[৬]

প্রাচীন ইউরোপে সম্পাদনা

প্রাচীন ইউরোপের রোমান ও গ্রীকরা নরম বালিশ তৈরীর কৌশল আয়ত্ত করেছিল। বালিশগুলোকে নরম ও আরামদায়ক  করার জন্য তাদের ভেতর খাগড়া,পালক এবং খড় পুর্ন করা হতো।[৭] শুধু উচ্চশ্রেনীর লোকেরা এগুলোর মালিক  ছিল, যদিও ঘুমানোর সময় আরামের জন্য সকল শ্রেনীর মানুষের বিভিন্ন প্রকার বালিশ ব্যবহার করতো। প্রাচীন ইউরোপের মানুষেরা গীর্যায় গিয়ে হাটু মুড়ে বসে প্রার্থনার জন্য ও পবিত্র বই রাখার জন্য বালিশ ব্যবহার শুরু করেছিল।[৮] এই প্রথা এখনো চালু আছে। এছাড়াও রোমান ও গ্রীকরা প্রাচীন মিশরীয়দের মত মৃতের মাথার নিচে বালিশ ব্যবহার করতো।[৭]

প্রাচীন চীনে সম্পাদনা

 
জিন রাজ বংশের(১১১৫-১২৩৪) একটি মাটির বালিশ।

চৈনিক বালিশ ছিল ঐতিহ্যগত ভাবে নিরেট, যদিও মাঝে মাঝে তাদের উপর নরম কাপড় ব্যবহৃত হতো।[৯] বহু চৈনিক রাজবংশ জুড়ে বিভিন্ন প্রকার উপাদান যার মধ্যে বাশ, পীলু, পোর্সেলিন, কাঠ এবং ব্রঞ্জ ইত্যাদি থেকে বালিশ বানানো হতো। এর মধ্যে সিরামিকের বালিশ সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়েছিল। ৫৮১ এবং ৬১৮ সাল এর মধ্যে সুই রাজবংশে সিরামিকের বালিশ প্রথম দেখা গিয়েছিল এবং ৬১৮ ও ৯০৭ এর মধ্যে ট্যাং রাজবংশের সময় বৃহত পরিসরে উতপাদন দেখা দিয়েছিল।[৯] চৈনিকরা তাদের বালিশ বিভিন্ন আকারে তৈরী করে ও তাদের উপর জীবজন্তু, মানুষ ও গাছ এঁকে সাজাতো।মাটির পাত্রাদি নির্মাণের একটি সাধারণ  কৌশল হল সিজৌ ওয়ার। ১০ ও ১৪সশ  শতাব্দীর মধ্যে স্নগ,জিন এবং ইউয়ান রাজবংশের সময়ে উৎপাদন ও ব্যবহারের দিক থেকে সিরামিকের বালিশ শীর্ষে  পৌছেছিল, কিন্তু ১৩৬৮ হতে ১৯১১ এর মধ্যে মিং ও কিং রাজবংশের সময়ে বালিশ তৈরীর নতুন উপাদানের আবির্ভাবের ফলে তা কমে যায়।[৯]

গঠন এবং অংশসমূহ সম্পাদনা

 
জালির ব্যাগে প্লাস্টিক নলে ভর্তি একটি জাপানিজ বালিশ
 
ভারতে ঐতিহ্যগতভাবে সাধারণত বালিশ তৈরী হয় উদ্ভিজ্জ উপাদান যেমন রেশমী-তুলা গাছের তুলতুলে, উজ্জ্বল ফলের আশ থেকে (Ceiba pentandra (ছবি দেখা যাচ্ছে) এবং 'Bombax ceiba')

বালিশের ভেতর ভাগ ফোম, কৃত্রিম প্লাস্টিকের তন্তু, পালক বা নরম বস্তু এবং ভিস্কোইলাস্টিক ফোম ও রাবারের নির্যাস থেকে তৈরী ফিলার দিয়ে গঠিত। [৩] ঐতিহাসিকভাবে খড় দ্বারা বালিশ পুর্ন হতো, কিন্তু এটা অসুবিধাজনক এবং বর্তমানে কম ব্যবহৃত হয়। পালক ও নরম বস্তু সবচেয়ে ব্যায়বহুল এবং সবচেয়ে আরামদায়ক; এগুলোর সুবিধা হল এগুলো নরম এবং ফোম বা তন্তু বালিশের চেয়ে ব্যবহারকারিদের সুবিধা মত আকৃতি পরিবর্তনের সক্ষম। পালক ভর্তি বালিশের অন্যতম অসুবিধা হল ব্যবহারকারিদের এলার্জিক প্রতিক্রিয়া। বর্তমানে হাইপোএলার্জিক প্রজাতির পালকের বালিশ আছে যা পালকের প্রতি সংবেদনশীল মানুষকে পালক বা নরম বালিশের আরাম উপভোগের সুযোগ করে দেয়। এশিয়ায় বাজরা ও প্লাস্টিকের নকল একটি সাধারণ ফিলার।এরকম বালিশ সাধারণ বালিশের চেয়ে ছোট হয়। ভারতে তুলা একটি সাধারণ ফিলার।

ভিতরের বস্তু কাপড় যেমন রেশমি আবরন দিয়ে আবৃত থাকে, যা বালিশের আবরন বা পিলো স্লিপ নামে পরিচিত। কিছু বালিশের সামনে নামের অলঙ্কৃত আবরন থাকে যা সবদিকে বন্ধ ও সাধারণত পিছনে একটি চির থাকে যার মাধ্যমে বালিশটিকে রাখা হয়। আয়তাকার প্রমাণ বালিশের আবরনের সাধারণত যিপার থাকে না, একদিক সবসময় খোলা থাকে,যদিও জিপারওয়ালা বালিশ ওয়াড় প্রায়ই প্রমাণ বালিশে ব্যবহৃত। সবরকম বালিসশের কভার নির্দিষ্ট সময় অন্তর ধোয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয় কারণ তারা মানুশের দেহের সংস্পর্শে থাকে। ধোয়ার উপযোগি বালিশ ধোয়ার পর ধুলা এবং জীবাণু দূর হয়। প্রস্তুতকারকরা তাদের পরিষ্কার করার জন্য প্রতি সপ্তাহে পনের মিনিট টামবেল ড্রাইং এর জন্য সুপারিশ করে এবং অত্যাল্প ধুলা পরিষ্কারের জন্য গরম করতে বলে। বালিশের স্বাভাবিক জীবনকাল দুই থেক চার বছর।[১০]

প্রকারভেদ সম্পাদনা

দেহ ও মাথার সাপোর্ট এবং আরামের জন্য বালিশ তৈরী করা হয়। তিন প্রকার বালিশ আছে যেমন, বিছানার বালিশ, অর্থোপেডিক বালিশ এবং নকশা করা  বালিশ,এবং কিছু কাজের দিক থেকে এদের মাঝামাঝি। বালিশের সঠিক আকার বিছানার উপর নির্ভর করে। প্রমাণ আকারের চেয়ে বড় বালিশ কুইন এবং কিং সাইজ বিছানার জন্য ব্যবহৃত হয়।

বিছানার বালিশ নির্বাচন কিছু পরিমানে নির্ভর করে শোবার অবস্থানের উপরঃ প্রস্তুতকারি মুখ নিচে দিয়ে ঘুমানোর জন্য পাতলা ও নরম বালিশ,পিঠ দিয়ে ঘুমানোর জন্য মধ্যম সাপোর্ট এবং পাশ ফিরে ঘুমানোর জন্য মোটা ও শক্ত বালিশ সুপারিশ করে।[১০]

বিছানা সম্পাদনা

 
বিছানায় কয়েকটি বালিশ

গতানুগতিক বিছানার বালিশ সাধারণত বর্গাকার বা আয়তাকার। যুক্তরাস্ট্রে এই তিনটি আকার পরিচিত (ইঞ্চিতে); প্রমাণ(২০x২৬ ইঞ্চি), কুইন(২০x৩০ ইঞ্চি) এবং কিং(২০x৩৬ ইঞ্চি)। এবং কম পরিচিত আকার হল  জাম্বো (২০x২৮ ইঞ্চি), যা প্রমাণ আকার থেকে বড় কিন্তু কুইন সাইজ থেকে ছোট।

বালিশ সাধারণত অপসারনযোগ্য বালিশের আবরন দিয়ে আবৃত থাকে, যা ধোয়া যায়। রঙ এবং কোন উপাদান থেকে তৈরী তা ছাড়াও বালিশের আবরনকে তিনটি বৈশিষ্টের দ্বারা বর্ণনা করা যায়ঃ

  • আকার
  • বৈশিষ্ট
  • খোলা/বন্ধ করা

আবরনের আকার বালিশের উপযোগি হয়।তাদের দৃষ্টান্তস্বরুপ এভাবে বর্ণনা করা হয়ঃ

প্রমাণ
১৬ ইঞ্চি × ১৬ ইঞ্চি (৪১০ মিমি × ৪১০ মিমি) (চারকোনা)
বর্গকার
২৬ ইঞ্চি × ২৬ ইঞ্চি (৬৬০ মিমি × ৬৬০ মিমি)
প্রমাণ
২০ ইঞ্চি × ২৬ ইঞ্চি (৫১০ মিমি × ৬৬০ মিমি)
কুইন
২০ ইঞ্চি × ৩০ ইঞ্চি (৫১০ মিমি × ৭৬০ মিমি)
কিং
২০ ইঞ্চি × ৩৬ ইঞ্চি (৫১০ মিমি × ৯১০ মিমি)

স্কয়ারকে যুক্তরাজ্যে তে কন্টিনেন্টাল বলে। জার্মান বালিশের আকার ৮০x৮০সেমি (পুরাতন) বা ৪০x৮০সেমি (নতুন)। বিছানার বালিশের উপশ্রেনি বিবেচনা করলে, ইউরো বালিশ সাকল্যে ২৬x২৬ইঞ্চি এবং পুরানো রীতির ভ্রমণ বালিশ সাকল্যে ১২x১৬ ইঞ্চি।

প্রধান পার্থক্যকারি বৈশিষ্ট হল বালিশের আবরণটি সরল না চারধারে ঝালরযুক্ত। প্রথম ক্ষেত্রে একে বলা হয় 'সরল রীতি' এবং পরেরটিকে বলা হয় 'অক্সফোর্ড রীতি'।

"অক্সফোর্ডের সেলাই দেওয়া পাড় বা ঝালরের ভিতরের চার ধারের রঙিন নকশাসহ ৫ সেমি -১০সেমি ঝালর আছে চারপাশে।"

বালিশের আবরন খোলা বা পরানো যুক্তরাষ্ট্রের সহজ "থলে রীতি" থেকে ইউরোপে অধিক পরিচিত"গৃহিনি রীতি"পর্যন্ত বিস্তৃত,বালিশ পুরা ধারণ করার জন্য খোলা প্রান্তের ভিতর একটি পকেট থাকে।

"হাউজওয়াইফ আসলে  বালিশের আবরনের খোলা প্রান্তে পিছনে একে ধরে রাখার জন্য ফ্ল্যাপসহ একটি ব্যাগ"

বালিশ ওয়াড়ে ঢোকানোর আরও উপায় হল ফিতা অথবা বোতাম/বোতামের ছিদ্র।

 
নীল রঙের বালিশের আবরন সহ একটি পাশবালিশ

বডি পিলো বা পাশবালিশ পূর্নবয়স্ক মানুষের সমান হয়, এটি উপরে মাথা ও গলাকে  ও হাটু এবং পায়ের নিচের অংশকে সাপোর্ট দেয়। যারা পাশ ফিরে ঘুমায় বা গর্ভবতী মহিলার জন্য এইরকম বালিশ বিশেষভাবে উপকারি।আকার  ৪০x৪০ সেমি।

অর্থোপেডিক সম্পাদনা

 
পান্ডা আকৃতির ভ্রমণ বালিশ

মাথা রাখার জন্য জায়গার ব্যবস্থা করে এবং ঘুমানোর সময় মেরুদন্ডের সাপেক্ষে গলা সোজা রাখার ব্যবস্থা করে নেকপিলো গলাকে সাপোর্ট দেয়। এগুলো সার্ভিকাল বালিশ হিসাবে পরিচিত। অর্থোপেদিক, থেরাপেটিক এবং শল্য চিকিৎসা গ্রহণের রোগিদের আরামদায়ক অবস্থানে ধরে রাখতে সার্ভিকাল বালিশ সাহায্য করে।[১১]

ভ্রমণ বালিশ বসা অবস্থায় গলাকে সাপোর্ট দেয়। তাদের ইউ আকৃতি গলার পিছনে গলার চারধারে বসে এবং মাথাকে অস্বস্তিকর ও সম্ভাব্য ক্ষতিকর অবস্থানে চলে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। যদিও ইউ আকৃতির বালিশ মাঝে মাঝে মাথাকে জোর করে সামনে ঠেলে  দিয়ে গলার অসাড়তা সৃষ্টি করতে পারে।

বসার সময় টেইলবোনে চাপ দূর করার জন্য মাঝখানে জায়গাসহ টোরাস আকৃতির দৃঢ় বালিশ হল ডোনাট বালিশ। যারা টেইলবোন অঞ্চলের আঘাতে ভুগেছে বা হেমোরয়েডের ব্যাথায় ভুগেছে বা মলাশয়ের অন্যান্য অসুখে ভুগেছে প্রাথমিকভাবে তারা এসব বালিশ ব্যবহার করে।

বসা অবস্থায় পিঠের নিচের অংশ ও চেয়ারের পিঠের মধ্যে সৃষ্ট স্থান পুরন করে পিঠের নিচের অংশের ভেতরমুখি বাককে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য লাম্বার বালিশ বানানো হয়। এসব বালিশ গাড়ি চালানো বা অফিসে বসার সময় পিঠের নিচের অংশকে সাপোর্ট দেওয়ার জনয় ব্যবহৃত হয়। অর্থোপেডিক বালিশ মেমরি ফোম বালিশের মত একইরকম।

শোভাবর্ধক সম্পাদনা

 
সোফার উপর স্তুপ করা বালিশ

শোভাবর্ধক বালিশ দ্বৈত উদ্দেশ্য সাধন করে। তাদের প্রায়ই উজ্জ্বল আবরন থাকে যা তারা যে কক্ষে থাকে তার শোভাবর্ধনের কাজ করে। যেহেতু শোভাবর্ধক কাপড় প্রস্থে ৫৪ ইঞ্চি হয়,অনেক শোভাবর্ধক বালিশ সাকল্যে ১৭x১৭ ইঞ্চির হয়। (৫৪/৩=১৮ কম সেলাই অনুমোদিত) সম্পূর্ণ সাজানো বিছানায় ব্যবহৃত হলে, শোভাবর্ধক বালিশ শোবার সময় সরিয়ে রাখা হয়, যেহেতু ধোয়ার উপযোগি বালিশের ওয়াড়ে তারা আবৃত থাকেনা, বিছানাতে পাওয়া গেলেও তারা সেখানে শোভাবর্ধনের জন্য থাকে, ফলে তারা এই শ্রেনিতে পড়ে। এসব বালিশ পেশাদার অথবা মুক্তপেশাজীবিদের দ্বারা তৈরি হতে পারে।

বাড়ির সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত অংশ, যেমন সোফা,চেয়ার এবং উইন্ডোসিটে শোভাবর্ধক বালিশ পাওয়া যায়। এখানে এদের সাধারণ ব্যবহার অর্থোপেডিক ও বিছানার বালিশ উভয়কেই ওভারল্যাপ করতে পারে। উদাহরণ স্বরুপ কোন ব্যক্তির নির্দিষ্ট কোন মেডিকাল কারণ না থাকলে তিনি সোফায় বসার সময়,ছোট শোভাবর্ধক বালিশ ব্যবহার করবেন। একইভাবে, সাময়িক ঘুমের জন্য মাথা ও গলাকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য শোভাবর্ধক বালিশ সুবিধাজনক, যদিও তারা বিছানার বালিশের মত বালিশের ওয়াড়ে আবৃত থাকে  না।

বাসায় ব্যবহার অনুযায়ী শোভাবর্ধক বালিশের পাচটি প্রতিশব্দ আছে।"একসেন্ট" পিলো গৃহসজ্জার অন্য অংশের উপর জোর দেয়।"সোফা পিলো" এবং "কুশন পিলো" শোভাবর্ধক বালিশ সাধারণত যেখানে পাওয়া যায় তা নির্দেশ করে। "টস পিলো" ও "থ্রো পিলো" তাদের স্থানে যে উপায়ে এসেছে তা নির্দেশ  করে।

নভেল্টি বালিশ হাস্যকর বস্তুর আদলে হয়(কলা, ডাকতে থাকা পাখি, মানুষের পা, যান্ত্রিক কুড়াল, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট) এবং তারা কক্ষ বা লাউঞ্জ এলাকাতে ঔজ্জ্বল্য ও কৌতুক রসবোধ যোগ করতে ব্যবহৃত হয়।

বিছানা সজানোর এক স্তুপ বালিশের সামনে টেন্ট-ফ্ল্যাপ বালিশ রাখা হয়। "টেন্ট-ফ্ল্যাপ" শব্দটি বালিশের উপর আটকানো ও মুখের উপর নিচের দিকে গুটানো আলাদা কাপড়ের ফ্ল্যাপকে বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। টেন্ট-ফ্ল্যাপ ঢিলা অথবা আলগাভাবে সেলাই করা হতে পারে; ফ্ল্যাপ ঢিলা হলে ফ্ল্যাপকে ভারীভাবে চাপ দেওয়ার জন্য শোভাবর্ধক ঝালর ব্যবহার করা হয় যতে এটি  ভালভাবে ঝুলে থাকে।[১২]

ফ্লোর পিলো শোভাবর্ধক বালিশের আরেকটি উপশ্রেনি। এই বালিসের আকার ২৬x২৬ ইঞ্চি (কাপড়ের প্রস্থের অর্ধেক,কম সেলাই অনুমোদিত)

বিবিধ রীতি সম্পাদনা

 
তিনটি ফায়ার স্টপ পিলো
  • ডাকিমাকুরা নামক আলিঙ্গনের বালিশের উৎপত্তি  জাপানে।
  • গালিং নামক লম্বা আলিঙ্গনের বালিশের উৎপত্তি ইন্দোনেশিয়া্য।
  • আব্রাজাদর নামক লম্বা আলিঙ্গনের বালিশের উৎপত্তি ফিলিপাইনে।
  • ফায়ারস্টপ  পিলো কারিগরিগতভাবে ফায়ারস্টপ পণ্য,নিষ্ক্রিয় অগ্নি প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়।
  •   হাজবেন্ড পিলো (বয়ফ্রেন্ড পিলো নামেও পরিচিত) দুই বাহু বিশিষ্ট বড় উচু পিঠের বালিশ। ব্যবহারকারিদের বিছানা বা মাটিতে শুয়ে টিভি দেখা বা পড়ার সময় ঠেকনা দেওয়র জন্য ব্যবহৃত হয়। এই সাধারণ ব্যবহারের জন্য,হাজবেন্ড পিলোকে রিডিং পিলোও বলা হয়।
  •   চাইনিজ পাথরের  বালিশ  প্রাচীন চীনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতো। পিলু থেকে তৈরী বালিশগুলো পাথর থেকে মানব মস্তিসকে শক্তি স্থানন্তরিত করে বলে বিশ্বাস করা হতো। মিং রাজবংশে উৎপন্ন, এই উপাদান মাথা ব্যাথা  বা বিষন্নতা সারাতে পারে, অথবা যারা ব্যবহার করে  তাদের বুদ্ধিমত্তা উন্নত করে বলে বিশ্বাস করা হতো। এটা রাজবংশীয় ব্যক্তিদের মধ্যে খুব পরিচিত ছিল কারণ এটা খুব ব্যায়বহুল ও দুর্লভ ছিল।পরিবার প্রায়ই এসব বালিশের গুনাগুন দেখে সন্তানদের বিয়ে দিতো। আজকের দিনে চীনে এখনো গ্রিষ্মের মাসগুলোতে পাথরের বালিশ সাধারণত ব্যবহৃত হয়।

আরও দেখুন সম্পাদনা

  • বালিশ (মিষ্টি)
  • ব্লস্টার
  • ডাভেট
  • আই পিলো
  • আই পিলো
  • পিলো ফাইট
  • স্যাচেট(সেন্টেড ব্যাগ)
  • আপহোলস্টারি

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Pillow" 
  2. ""Pillow, n.1a". Oxford English Dictionary"।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য);
  3. "Definition of PILLOW" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০২-০৩ 
  4. Levy, Joel (২০০২)। Really Useful: The Origins of Everyday Things। Buffalo, NY: Firefly। 
  5. Soane, Ely Banister (২০০৭)। To Mesopotamia and Kurdistan In Disguise। Cosmino, Inc.। পৃষ্ঠা 13। 
  6. Seath, J.; A.P. Gize; A.R. David, K. Hall; P. Lythgoe; R. Speak; S. Caldwell (২০০৬)। "An atypical Ancient Egyptian pillow from Sedment el-Gebel: evidence for migrant worker trading and technology"। Journal of Archeological Science। পৃষ্ঠা 546–550.। 
  7. Smith, William (১৮৭৫)। A Dictionary of Greek and Roman Antiquities। London: John Murray। পৃষ্ঠা 456, 472, 473.। 
  8. Fehrman, Cherie (২৪ এপ্রিল ২০১৩)। "Fine Pillows For Collectors: A Brief History"। Fehrman Books। 
  9. "Porcelain Pillows"। ২০০৬-০৩-১৬। Archived from the original on ২০০৬-০৩-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০২-০৩ 
  10. "Help > Pillow Guide" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০২-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০২-০৩ 
  11. "Cervical Pillow"Surgical Units (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-১১-২৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০২-০৩ 
  12. Tobel, Jackie Von (২০১৪-০৩-২৬)। The Design Directory of Bedding (ইংরেজি ভাষায়)। Gibbs Smith। আইএসবিএন 9781423612445