বারেক টিলা

বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের একটি দর্শনীয় স্থান।

মূলত এটি বড়গোপ টিলা হিসেবে পরিচিত। স্কুল, মসজিদ, মাদরাসার সাইনবোর্ড গুলোতেও এই নামের প্রতিনিধিত্ব করছে। দলিল, দস্তাবেজ কাগজপত্রেও এই নাম। একসময় আদিবাসীরা এখানে বসবাস করতেন এই পাহাড়ি টিলায়। টিলাটির নিচে পূর্ব ও উত্তরে পাহাড়ি নদী যাদুকাটা। এখন টিলার উত্তরের অংশে আদিবাসী জনগোষ্ঠী বসবাস করেন। দক্ষিণের অংশে ভাগ্যন্বেষনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লোকজন বসবাস করেন। তাই আদিবাসীরা বাস্তুসংস্থান হারিয়ে উত্তরে চলে এসেছেন। ভাগ্যন্বেষণে আসা এক ভবঘুরে ব্যক্তি ও তার স্বজনরা প্রায় ২০ বছর ধরে বড়োপটিলার বদলে এটিকে বারেকের টিলা নাম দিয়েছেন। আর স্থানীয় সংস্কৃতি ও ইতিহাসের প্রতি উদাসীন পর্যটকরা মূল নামে বদলে দিয়েছেন। বারেক টিলা (যা বারিক্কা টিলা, বারেকের টিলা নামেও পরিচিত) সবুজে মোড়া উঁচু টিলার একপাশে পাহাড়, অন্যপাশে স্বচ্ছ জলের নদী। টিলার ওপর দাঁড়ালে হাতছানি দেয় মেঘ-পাহাড়। হাওর-নদী-পাহাড়ের এই অপরূপ সৌন্দর্যের এ লীলাভূমি একটি উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান।[১][২]

বরগোপ টিলা

অবস্থান সম্পাদনা

বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বড়দল উত্তর ইউনিয়নের লাউড়েরগড় এলাকায় ভারত সীমান্ত ঘেঁষে। [১][৩] একপাশে বাংলাদেশের সীমান্ত, ওপাশে ভারতের মেঘালয়, খাসিয়া পাহাড়[৪] বারিক্কা টিলাতে রয়েছে ৪০ টির মত আদিবাসীদের পরিবার।[৩] এই এলাকায় ৩৬৫ একর জায়গাজুড়ে রয়েছে রঙ-বেরঙের নানা প্রজাতির গাছপালা।[৪][৫]

বর্ণনা সম্পাদনা

দূরে পাহাড়, এক পাশে টিলা, তার পাশ দিয়ে নদী, সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য।[৬] ভারতের পাহাড়ে রয়েছে একটি তীর্থস্থান ও একটি মাজার। বছরের নির্দিষ্ট ভিন্ন ভিন্ন দিনে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের হাজার হাজার লোক জড় হয় পূণ্য স্নান ও উরসে, তখন ২-১ দিনের জন্য সীমান্ত উন্মুক্ত করা হয়।[৬] বর্ষায় উত্তর দিকে মেঘালয় পাহাড়ে মেঘগুলো মনে হয় হাত বাড়ালেই ধরা যাবে। পাহাড়ের গায়ে নানা রঙের মেঘের খেলা। মেঘ কখনো সবুজ পাহাড়কে ডেকে দিচ্ছে, আবার কখনো বৃষ্টি হয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে তার আপন ভালোবাসায়।[২] পাহাড় আর মেঘের সম্মিলনে এক অপরূপ শোভা। দেখা যায়, মেঘালয় পাহাড়ের আঁকাবাঁকা সড়কপথে চলাচল করছে ভারতীয় বিভিন্ন যানবাহন।[১][৩]

পবিবেশ বিপর্যয় সম্পাদনা

আম, জাম, কাঁঠল, জলপাই, লিচুসহ নানা ধরনের গাছ টিলা থেকে কেটে বাজারে বিক্রি ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। একসময় বারেকটিলায় স্থানীয় আদিবাসী গারো সম্প্রদায়ের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তখন আনারস, লেবু, কমলা, পানিজাম, বেল, কমলালেবু, টিলাজুড়ে বেত উলুবন ও কাশবনের বাগান শোভা পেত। বর্তমানে বৃক্ষহীন বারেকটিলায় পাথর উত্তোলনের জন্য আবাধে যত্রতত্র মাটি খোঁড়াখুঁড়ি, গাছ কেটে ফেলার কারণে টিলাগুলো দেখতে এখন কবরস্থানের মতো মনে হয়।[৩][৫][৬]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "সুনামগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থান"বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ২৬ জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুন ২০১৯ 
  2. "নান্দনিক সৌন্দর্যে ঘেরা বারেক টিলা"দৈনিক প্রথম আলো। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০১৯ 
  3. "পর্যটনকেন্দ্র গড়ার আগেই বারেক টিলায় দখলের থাবা"দৈনিক প্রথম আলো। ১১ মার্চ ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুন ২০১৯ 
  4. "বারেক টিলা পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা"দৈনিক ইত্তেফাক। ১৯ নভেম্বর ২০১৫। ২৬ জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুন ২০১৯ 
  5. "তাহিরপুর সীমান্তের বড়গোফ টিলার গাছ ও পাথর কেটে নিয়ে যাচ্ছে অসাধু চক্র"দৈনিক মানব্জমিন। ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮। ২৬ জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুন ২০১৯ 
  6. "অবহেলিত অপরূপ বারেকের টিলা"দৈনিক সমকাল। ১ অক্টোবর ২০১৬। ২৬ জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুন ২০১৯ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

সুনামগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থান - বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন