বারদী ইউনিয়ন
{{উৎস : ঘুরে আসুন বারদী : দেওয়ান সামছুর রহমান, দৈনিক যুগান্তর, ঘরে বাইরে পাতা, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার }} প্রাচীন বাংলার রাজধানী ও এক সময়ের সমৃদ্ধশালী জনপদ সোনারগাঁ। বারদী ইতিহাসখ্যাত সোনারগাঁয়ের প্রসিদ্ধ একটি গ্রাম। বর্তমানে সোনারগাঁয়ের দশটি ইউনিয়নের একটি হল বারদী ইউনিয়ন। বাংলার বার ভূঁইয়ার অন্যতম ঈশা খাঁর রাজধানী সোনারগাঁ, সম্রাট আকবরের শাসনামলে। আর ইলিয়াস শাহী শাসনামলের ইতিহাসখ্যাত নায়ক সুলতান গিয়াসউদ্দীন আযম শাহের স্বর্ণযুগের সোনারগাঁ এদেশের ইতিহাসে স্থায়ীভাবে আসন পাওয়া ইতিহাস সমৃদ্ধ একটি স্থান। যেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য ঐতিহ্যবাহী স্থান, স্থাপনা ও নিদর্শ,যা কিনা প্রাচীন বাংলার ইতিহাস বহন করছে। সোনারগাঁয়ের এমনই একটি উল্লেখযোগ্য স্থান বারদী। চারদিকে নদীবেষ্ঠিত সোনারগাঁয়ের বিশাল অঞ্চলের পূর্ব প্রান্তে মেঘনা নদীর উত্তর পাশে যে অঞ্চল অবস্থিত, তারই নাম বারদী। পানিপথের কারণে সেই প্রাচীনকাল হতেই সোনারগাঁয়ের প্রসিদ্ধ গ্রাম বারদী।
ইতিহাস
সম্পাদনাব্রিটিশ শাসনামলে হিন্দু নাগ জমিদারদের দোর্দণ্ড প্রতাপের কেন্দ্রস্থল ছিল বারদী। বারদী আজ অবহেলিত হলেও এক সময় যে বেশ সমৃদ্ধ ছিল, তা বিভিন্ন জমিদার বাড়ির ধ্বংসাবশেষ, ইমারতের গায়ে বিভিন্ন স্থাপত্যকর্ম, পুরনো আমলের দীঘি, পুকুরপাড়ের শেওলা ধরা, ইট ধসে পড়া শান বাঁধানো ঘাট প্রভৃতি দেখে সহজেই অনুমান করা যায়। বর্তমান বারদীর নাগপাড়ায় পুরনো আমলের যেসব ইমারতের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়, তাতে অনুমান করা যায়- এসব ইমারত শতবর্ষেরও অনেক পুরনো। সিকদার শাহ এবং তার পুত্র গিয়াসউদ্দীন আযম শাহের অনেকগুলো মুদ্রা সোনারগাঁয়ের মোয়াজ্জমাবাদ টাঁকশাল থেকে মুদ্রিত হয়েছিল। বর্তমান বারদীর ব্যাপক পরিচিতি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সাধক পুরুষ শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রমের কল্যাণে। প্রতিদিন শত শত হিন্দু দূর-দূরান্ত থেকে এসে বারদীতে উপস্থিত হয় পুণ্য লাভের আশায়। বারদীতে অত্যন্ত প্রাচীন হিন্দুদের দুটি মঠও রয়েছে। উপমহাদেশের প্রখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা ও পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জ্যোতিবসুর পৈতৃক বাড়ি এই বারদীতে। বারদীর অতীত ইতিহাস গৌরবময়। ইতিহাস আর ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ প্রাচীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁয়ের সমৃদ্ধ জনপদ বারদী।
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রম
সম্পাদনাবর্তমান বারদীর ব্যাপক পরিচিতি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাধক পুরুষ শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রমের কারণে। এ মহাপুরুষ আজ থেকে প্রায় দেড়শ’ বছরের অধিক সময় আগে বারদীতে এসে আসন তৈরি করেন। প্রতিদিন শত শত ভক্ত পুণ্য লাভের আশায় দূরদূরান্ত থেকে বারদীতে আসেন। আর ব্রহ্মচারীর তিরোধান দিবস ১৯ জ্যৈষ্ঠ উপলক্ষে হাজার হাজার সনাতন ধর্ম অবলম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয় বারদী। শুধু দেশ নয় ভারত কিংবা নেপাল থেকেও ভক্তরা আসেন, বারদীতে। আশ্রমের দক্ষিণ পাশে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে বিশাল মাঠ আর উত্তর পাশে এর কোলঘেঁষে বয়ে চলেছে ছাগল বামনী নদী।