বাজারজাতকরণ পরিকল্পনা

বাজারজাতকরণ পরিকল্পনা হলো একটি কোম্পানীর পণ্য উৎপাদনের সমস্ত লক্ষ্যার্জনের নিমিত্তে বাজারজাতকরণ কৌশলগুলোর ব্যাপারে রূপরেখা প্রণয়ন করা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সমুদয় কার্যাবলী।পণ্য,ব্যবসায় একক এমনকি একটি ব্র্যান্ডের জন্যও বাজারজাতকরণ পরিকল্পনা জরুরি। মূলত বাজারজাতকরণ পরিকল্পনা প্রতিপাদন করে ব্যবসায় এককগুলো দিয়ে কী কী করা হবে।

বাজারজাতকরণ পরিকল্পনার উপাদান সম্পাদনা

একটি সফল বাজারজাতকরণ পরিকল্পনায় কয়েকটি মৌলিক উপাদান থাকে। এই উপাদানগুলোর ব্যাপারে বাজারজাতকরণ গবেষকেরা সবাই একমত না হলেও কিছু সাধারণ উপাদান সকল গবেষকই মূল্যায়ন করে থাকেন। যেমন:
নির্বাহী সারসংক্ষেপ
পরিকল্পনার যাবতীয় বিষয়বস্তুর সারসংক্ষেপ নির্বাহীর তরফ থেকে উপস্থাপন করা হয়। এতে কোম্পানীর প্রধান লক্ষ্য এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পরামর্শসমূহ উপস্থাপিত হয়। এই নির্বাহী সারসংক্ষেপের সাথেই পুরো পরিকল্পনার একটি সূচিপত্র থাকে, যা পরিকল্পনাকে একস্থানে উপস্থাপনে সহায়ক হয়।
সমসাময়িক বাজার অবস্থা
এস্তরে কোম্পানীর লক্ষ্য-বাজার এবং সেই বাজারে কোম্পানীর অবস্থান সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়। এতে বাজার সম্বন্ধে তথ্য, পণ্য দক্ষতা, প্রতিযোগিতা এবং বণ্টন বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এতে অন্তর্ভুক্ত থাকে-

  • বাজার বর্ণনা, যাতে বাজার এবং এর প্রধান ভাগসমূহ, ক্রেতা চাহিদা এবং ক্রেতার ক্রয়কে প্রভাবিত করতে পারে এমন বাজারজাতকরণ পরিবেশ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
  • পণ্য আলোচনা, যাতে পণ্যের মূল্য, বিক্রয়, সাধারণ লাভ (Gross margin), এবং পণ্য সারির প্রধান প্রধান পণ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়।
  • প্রতিযোগিতার ধরন, যাতে প্রধান প্রধান প্রতিযোগী, এবং তাদের প্রেক্ষিতে বাজারে কোম্পানীর অবস্থান এবং প্রতিযোগীকে টেক্কা দিতে বাজারজাতকরণ মিশ্রণের বিন্যাস বা কৌশল কেমন হবে তা আলোচিত হয়।
  • বণ্টনের আলোচনা, যাতে সমসাময়িক সাম্প্রতিক বিক্রয় বিবেচনা করা হয় এবং বণ্টনের প্রধান প্রধান মাধ্যমগুলোতে কী কী উন্নয়ন করতে হবে তার আলোচনা স্থান পায়।

হুমকি ও সুযোগ বিশ্লেষণ
বাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় টিকে থাকার ক্ষমতা যাচাই করার জন্য কোম্পানীর সামনে সম্ভাব্য হুমকি আর সুযোগগুলো খুঁজে বের করে লিপিবদ্ধ করা হয়। এবং সেই সুযোগ ও হুমকির প্রেক্ষিতে করণীয় সম্বন্ধে আলোকপাত করা হয়।
উদ্দেশ্য সংজ্ঞায়ন
বাজারজাতকরণের উদ্দেশ্য সংজ্ঞায়নের চেষ্টা করা হয় এবং সেই উদ্দেশ্য কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তার পরামর্শ দেয়া হয়।
বাজারজাতকরণ কৌশল
বাজারজাতকরণ উদ্দেশ্য অর্জন সম্ভব এমন বাজারজাতকরণ যুক্তি উপস্থাপিত হয় এ অংশে। এখানে উদ্দেশ্যের আলোচনার বিস্তারণ ঘটিয়ে প্রতিটি অংশের জন্য কৌশল প্রণয়ন করে তার উল্লেখ করা হয়।
কর্মকৌশল
এ অংশে প্রতিপাদন করা হয় বাজারজাতকরণ কৌশলগুলো কীভাবে বাস্তবে রূপায়িত করা যায়। এই অংশে কতিপয় উত্তর বের করার চেষ্টা করা হয়: কী করা হবে? কখন করা হবে? কে একাজ করতে দায়ী থাকবে? কত খরচ এজন্য হবে?
বাজেট
পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কত ব্যয় হতে পারে তজ্জন্য একটি সম্পূর্ণ মার্কেটিং বাজেট প্রণয়ন করতে হয়, যাতে সম্ভাব্য লাভ-ক্ষতি হিসাব থাকবে। যখন এই পুরো বাজেটটি উচ্চস্তরের ব্যবস্থাকগণ অনুমোদন দিয়ে দিবেন, তখন এর ভিত্তিতেই যাবতীয় ক্রয়-ব্যয় পরিচালিত হবে।
নিয়ন্ত্রণ
পুরো পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে কীভাবে পরিকল্পনার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং উচ্চতর ব্যবস্থাপনা কীভাবে কাজের অগ্রগতি মূল্যায়ন করবেন তার বিবরণ লিপিবদ্ধ করা হয়।

এছাড়াও কতিপয় বাজারজাতকরণ গবেষক "লক্ষ্য-বাজারের বর্ণনা" অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষেও মত দিয়ে থাকেন। আর এরকম একটি সামগ্রিক কাঠামোর উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠে একটি পূর্ণাঙ্গ বাজারজাতকরণ পরিকল্পনা, যা বাজারজাতকরণ কার্যক্রমের সম্মুখে অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা