বাইকান্দের যুদ্ধ
বাইকান্দের যুদ্ধ ৭২৯ সালে উমাইয়া খিলাফত এবং তুরগেশ খাগানাত ও তাদের সোগদিয়ান মিত্রদের মধ্যে বুখারার নিকটে বাইকান্দে সংঘটিত হয়। সোগদিয়ান শাসকদের একটি বড় আকারের বিদ্রোহ দমন করার জন্য খোরাসানের গভর্নর আশরাস ইবনে আবদুল্লাহ আল-সুলামির নেতৃত্বে আরব বাহিনী অভিযান চালায়। এই বিদ্রোহে তুরগেশদের সমর্থন ছিল। আরবরা বুখারার দিকে অগ্রসর হওয়ার পর তুরগেশরা তাদের ঘিরে ফেলে পানির উৎস থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। শুরুতে প্রতিপক্ষ সুবিধা অর্জন করলেও কয়েকজন নেতার দক্ষতায় আরবরা তাদের প্রতিহত করা বুখারা পৌছে অবরোধ আরোপ করতে সক্ষম হয়।
বাইকান্দের যুদ্ধ | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
মূল যুদ্ধ: উমাইয়া-তুরগেশ যুদ্ধ ও মুসলিমদের মাওয়ারাননহর বিজয় | |||||||
৮ম শতাব্দীতে খোরাসান ও মাওয়ারাননহরের মানচিত্র | |||||||
| |||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||
উমাইয়া খিলাফত | তুরগেশ খাগানাত ও মাওয়ারাননহরের মিত্রবাহিনী | ||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||
আশরাস ইবনে আবদুল্লাহ আল-সুলামি কাতান ইবনে কুতাইবা গুরাক | সুলুক |
পটভূমি
সম্পাদনাখলিফা প্রথম আল-ওয়ালিদের শাসনামলে কুতাইবা ইবনে মুসলিম মাওয়ারাননহর জয় করেন।[১][২] ৭১৯ সালে স্থানীয় শাসকরা উমাইয়াদের বিরুদ্ধে চীন ও তুরগেশের সামরিক সমর্থনের আবেদন জানান।[৩] এতে সমর্থন দিয়ে তুরগেশরা ৭২০ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে মাওয়ারাননহরের মুসলিমদের উপর হামলা করতে থাকে। একইসাথে স্থানীয় সোগদিয়ান শাসকরা বিদ্রোহ করে। উমাইয়া গভর্নররা প্রাথমিকভাবে অস্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হলেও ফারগানার নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতছাড়া হয়।[৪][৫] ৭২৪ সালে গভর্নর মুসলিম ইবনে সাইদ আল-কিলাবি ফারগানা পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করার সময় তুরগেশদের কাছে পরাজিত হন। ফলে মাওয়ারাননহরে আরবদের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে।[৬][৭]
আশরাস আল-সুলামির অভিযান
সম্পাদনাএই সঙ্কটাবস্থায় খলিফা হিশাম ইবনে আবদুল মালিক ভিন্ন পদক্ষেপ নেন। তিনি খোরাসানকে ইরাক থেকে পৃথক করে আলাদা প্রদেশ গঠন করেন। জাজিরায় সেনাপতি আশরাস ইবনে আবদুল্লাহ আল-সুলামিকে প্রদেশের দায়িত্ব দেয়া হয়।[৮][৯] তিনি স্থানীয়দের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এদিকে তুরগেশরা তাদের সাথে যোগ দেয়ায় পরিস্থিতি আরো অস্থিতিশীল হয়। তুরগেশদের যোগ দেয়ার সময় মাওয়ারাননহরে আরবদের হাতে শুধু সমরকন্দ এবং কামারজা ও দাবুসিয়ার দুইটি দুর্গ ছিল।[১০][১১]
তুরগেশদের মোকাবেলার জন্য আশরাস খোরাসানে সেনা সমাবেশ করে আমুলের দিকে রওয়ানা হন। কুতাইবা ইবনে মুসলিমের ছেলে কাতানের নেতৃত্বে একটি অগ্রবর্তী বাহিনী নদীর অপর পাড়ে প্রেরিত হয়। কিন্তু স্থানীয় সোগদিয়ান ও তুরগেশ বাহিনী উপস্থিত হওয়ার পর দীর্ঘদিন তারা নদী অতিক্রম করতে পারেনি। এসময় কাতানের সেনাদলের সামনে তুরগেশরা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আশরাস তার অশ্বারোহীদের নেতৃত্ব সাবিত কুতনাহকে প্রদান করেন। তিনি হামলাকারীদের উপর পাল্টা হামলা চালিয়ে তাদের আমুল থেকে বের করে দেন। এতে আরবরা জয়ী হলেও তুরগেশদের অতিরিক্ত সৈন্য এসে পড়ায় তারা নদীর অপর পাড়ে পৌছে যায়।[১২][১৩] শেষপর্যন্ত আশরাস বুখারা অভিমুখে যাত্রা করেন। আরবরা বুখারার কিছু দূরে বাইকান্দে শিবির স্থাপন করার পর তুরগেশ ও সোগদিয়ানরা তাদের পানির সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।[১৩][১৪]
পানির অভাবের ফলে আরবরা বাইকান্দ ত্যাগ করে বুখারার দিকে অগ্রসর হয়। কাতান অগ্রবর্তী সেনাদলের নেতৃত্বে ছিলেন। এসময় তুরগেশ ও সোগদিয়ানরা হামলা করার ফলে তারা মূল বাহিনী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। সমরকন্দের শাসক গুরাক এসময় পর্যন্ত আরবদের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু এরপর তিনি পক্ষ বদল করে ফেলেন। আল-তাবারির বর্ণনা অনুযায়ী আল-হারিস ইবনে সুরাইজ এসময় সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বলেন "তৃষ্ণায় মৃত্যুর চেয়ে তলোয়ারের মৃত্যু এই পৃথিবীতে সম্মানের এবং আল্লাহর প্রতিদানের বেশি উপযোগী"।[১৫] তার কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অশ্বারোহীরা হারিস ও কাতানের নেতৃত্বে অগ্রসর হয়ে তুরগেশদের ব্যুহ ভেঙে ফেলে পানির উৎসের কাছে পৌছায়। এর ফলে আশরাস বুখারার দিকে অগ্রসর হতে সক্ষম হন।[১৩][১৬]
পরবর্তী অবস্থা
সম্পাদনাবাইকান্দের কয়েকটি লড়াইয়ের পর তুরগেশরা উত্তরে সমরকন্দে ফিরে যায়। এখানে তারা কামারজা দুর্গে হামলা চালায়। এসময় আশরাস বুখারা অবরোধ করেছিলেন।[১৭][১৮] তবে দুই পক্ষের যুদ্ধ তখনো শেষ হয়ে যায়নি এবং আরবদের পক্ষে অবস্থা তখনো সুবিধাজনক ছিল না। ৭৩০ সালে আশরাসের উত্তরসূরি জুনাইদ ইবনে আবদুর রহমান আল-মুররি বুখারায় অবস্থানরত আরবদের সাথে যোগ দেয়ার সময় তুরগেশদের হামলার মুখে পড়েন।[১৯][২০] পরবর্তীতে গভর্নর নাসের ইবনে সাইয়ার সমরকন্দ পর্যন্ত খিলাফতের কর্তৃত্ব পুনপ্রতিষ্ঠিত করেন।[২১]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Blankinship 1994, পৃ. 19, 29–30।
- ↑ Gibb 1923, পৃ. 29–58।
- ↑ Blankinship 1994, পৃ. 109–110।
- ↑ Blankinship 1994, পৃ. 125–126।
- ↑ Gibb 1923, পৃ. 61–65।
- ↑ Blankinship 1994, পৃ. 126–127।
- ↑ Gibb 1923, পৃ. 65–69।
- ↑ Blankinship 1994, পৃ. 127।
- ↑ Gibb 1923, পৃ. 69।
- ↑ Blankinship 1994, পৃ. 127–128।
- ↑ Gibb 1923, পৃ. 69–70।
- ↑ Blankinship 1989, পৃ. 50।
- ↑ ক খ গ Gibb 1923, পৃ. 70।
- ↑ Blankinship 1989, পৃ. 50–51।
- ↑ Blankinship 1989, পৃ. 52।
- ↑ Blankinship 1989, পৃ. 51–54।
- ↑ Blankinship 1994, পৃ. 128।
- ↑ Gibb 1923, পৃ. 70–71।
- ↑ Blankinship 1994, পৃ. 128, 155।
- ↑ Gibb 1923, পৃ. 72।
- ↑ Blankinship 1994, পৃ. 176–185।
উৎস
সম্পাদনা- Blankinship, Khalid Yahya, সম্পাদক (১৯৮৯)। The History of al-Ṭabarī, Volume XXV: The End of Expansion. The Caliphate of Hishām, A.D. 724–738/A.H. 105–120। Albany, New York: State University of New York Press। আইএসবিএন 0-88706-569-4।
- Blankinship, Khalid Yahya (১৯৯৪)। The End of the Jihâd State: The Reign of Hishām ibn ʻAbd al-Malik and the Collapse of the Umayyads। Albany, NY: State University of New York Press। আইএসবিএন 978-0-7914-1827-7।
- Gibb, H. A. R. (১৯২৩)। The Arab Conquests in Central Asia। London: The Royal Asiatic Society। ওসিএলসি 499987512।