বাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকা

উইকিমিডিয়ার তালিকা নিবন্ধ

বাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকা নিচে দেওয়া হয়েছে।

প্রবাদ-প্রবচন অর্থ
অকণ্টকবিদ্ধ কি জানে কাঁটাফুটা কী? সুখী মানুষ জীবনযন্ত্রণা কাকে বলে জানে না; সমতুল্য- 'কি যাতনা বিষে বুঝিবে সে কিসে কভু আশীবিষে দংশেনি যারে?'
অকর্মা নাপিতের ধামাভরা ক্ষুর অক্ষমতার দুর্বলতা ঢাকতে অকর্মারা বেশি ভড়ং দেখায়; তুলনীয়- 'হরিনামে খোঁজ নেই স্ফটিকের রাঙা থোপ'; পাঠান্তর- 'অকেজো নাপিতের থলিভরা ক্ষুর'।
অকর্মারা সর্বদাই ক্ষুধার্ত অকর্মারা একটি কাজই জানে শুধু বসে বসে খাওয়া।
অকস্মাৎ/বিনামেঘে বজ্রাঘাত অপ্রত্যাশিতভাবে কোন বিপদের সংঘটন।
অকারণে কিছু হয় না বিনাকারণে গাছের একটি পাতাও নড়ে ন; সমতুল্য- 'ধোঁয়া থাকলে আগুন আছে'।
অকারণে হৈ চৈ অহেতুক চিন্তা; সমতুল্য-'মাথা নেই তার মাথাব্যাথা'।
অকালকুস্মাণ্ড১ অকালে জাত চালকুমড়ার পূজায় বলি হয় না ভাবার্থে- অকর্মণ্য; অকেজো; কোন কাজের নয় ইত্যাদি।
অকালকুষ্মাণ্ড২ পরিবারের অনিষ্টকারী সদস্য; (উৎসকাহিনী- গান্ধারী অকালে কুষ্মাণ্ডাকার এক মাংসপিণ্ড প্রসব করেন; এই মাংসপিণ্ড থেকে শতপুত্র জন্ম নেয়; শতপুত্রের কারণে কুরুবংশ ধ্বংস হয়।)
অকাল গেল সুকাল এল পাকল কাঁটাল কোষ, আজ বন্ধু ছেড়ে যাও, দিয়ে আমার দোষ অসময়ে উপকৃত হয়ে নানা অজুহাতে সুসময়ে উপকারীকে অস্বীকার করা।
অকালমেঘ অকালে মেঘ উদয়ের মত সম্পদ হঠাৎ আসে হঠাৎ চলে যায়।
অকালে/আকালে কী না খায় অসময় বা দুর্ভিক্ষের সময়ে খাবারের বাচবিচার করা সম্ভব হয় না, যা হাতের কাছে পায় তাই খেতে বাধ্য হয়; সমতুল্য- 'প্রয়োজনীয়তা কোন নিয়ম মানে না'।
অকালে খেয়েছ কচু, মনে রেখ কিছুকিছু সুখদুঃখমিশ্রিত জীবনের সুখের দিনগুলিতে দুঃখের দিনগুলি ভুলে যাওয়া ঠিক নয়।
অকালে না নোয় বাঁশ পাকলে করে ট্যাঁশট্যাঁশ কাঁচা অবস্থায় বাঁশ না নোয়ালে পাকলে পরে কটকট শব্দ করে; শিশুকালে নীতিশিক্ষা না দিলে উত্তরকালে হাজার উপদেশ দিলেও তা বৃথা যায়।
অকালে বাড়ে সকালে মরতে দ্রুত বৃদ্ধি দ্রুত মৃত্যু ডেকে আনে।
অকালের তাল বড়ই মিষ্টি অকালে দুস্প্রাপ্য জিনিস পেলে তৃপ্তিবোধ মাত্রাতিরিক্ত হয়।
অকালের বাদল/বাদলা অপ্রত্যাশিত বাধা।
অকুলীনোহপি শাস্ত্রজ্ঞো দৈবতৈরপি পূজ্যতে কুলীনবংশে জন্মগ্রহণ না করলেও শাস্ত্রজ্ঞকে দেবতারা পর্যন্ত সমাদর করেন; সম্পর্কীত প্রবাদ-'কিং কুলেন বিশালেন গুণহীনস্তু যো নরঃ'।
অকৃতজ্ঞ মানুষ অপেক্ষা কৃতজ্ঞ কুকুর শ্রেয় কুকুরের বিশ্বাসযোগ্যতা মানুষ থেকে অনেক বেশি; তুলনীয়- 'যতই মানুষকে দেখছি ততই কুকুরকে ভাল লাগছে'।
অকৃতজ্ঞের নরকবাস অকৃতজ্ঞের কঠোর শাস্তি প্রাপ্য; সমতুল্য- 'আত্মপ্রচার করো না এবং অকৃতজ্ঞ হয়ো না'।
অকেজো নাপিতের থলিভরা ক্ষুর 'অকর্মা নাপিতের ধামাভরা ক্ষুর'- দ্রষ্টব্য; পাঠান্তর- 'অকেজো মিস্ত্রির থলিভরা যন্ত্র'।
অকেজো বউ লাউ কুটতে দড় যে কোন কাজ জানে না সে সহজ কাজটা আগে বেছে নেয়।
অকেজো মিস্ত্রি যন্ত্রের দোষ ধরে অকর্মণ্যের অজুহাতের অভাব হয় না; সমতুল্য- 'নাচতে না জানলে উঠোনের দোষ; হিন্দি পাঠান্তর- 'নাচ না আওয়ে/জানে অঙ্গন টেরা'।
অকেজো মানুষের কথা বেশি কাজ কম কাজে ফাঁকি দিতে বা অক্ষমতা ঢাকতে নানা অজুহাত দেখায়; ফলে বেশি কথা বলার প্রয়োজন হয়।
অকেজোর তিন কাজ বড়, ভোজন ক্রোধ নিদ্রা দড় অকম্মারা তিনটি বিষয়ে বড় গুণধর- খায় বেশি; রাগ দেখায় বেশি; আর ঘুমায় বেশি।
অক্ষমের অজুহাত খাড়া অক্ষমের অজুহাতের অভাব হয় না।
অখণ্ডিত রত্ন মেলে না রত্ন একটি সম্পূর্ণ ধারণা।
অগভীর জলে সফরি ফরফরায় অল্পবিদ্যানেরা সর্বদা বেশি বিদ্যার জাহির করে; সংস্কৃত পাঠান্তর- 'গণ্ডূষজলমাত্রেণ সফরী ফর্ফরায়তে'।
অগরমগর করনা কিছু করা বা না করার পক্ষে নানা উক্তি দেখানো।
অগস্ত্যযাত্রা চিরদিনের জন্য প্রস্থান; যে-যাত্রায় বিদেশযাত্রী আর ফিরে আসে না; (উৎসকাহিনী- সুমেরুপর্বতকে প্রদক্ষিণ করে ঘুরতে দেখে সূর্যকে বিন্ধ্যপর্বত বলে তাকেও যেন সে প্রদক্ষিণ করে; সূর্য তাতে অসম্মত হয়; বিন্ধ্যপর্বত ক্রুদ্ধ হয়ে নিজের আকার বৃদ্ধি ক’রে সূর্যের গতিপথ রুদ্ধ করে; জগৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে; সকলে বিন্ধ্যপর্বতক সঙ্কুচিত হতে অনেক অনুরোধ করে; বিন্ধ্যপর্বত অসম্মত হলে সকলে বিন্ধ্যপর্বতের গুরু অগস্ত্যমুনিকে সমস্যার প্রতিকার করতে অনুরোধ করে; অগস্ত্যমুনি বিন্ধ্যপর্বতের কাছে উপস্থিত হলে বিন্ধ্য নতমস্তকে গুরুকে প্রণাম করে; গুরু তাকে আশীর্বাদ ক’রে বলেন, ‘বৎস, আমি দক্ষিণাপথে যাচ্ছি, যতদিন না আমি ফিরি তুমি এই অবস্থায় অবস্থান কর'; অগস্ত্যমুনি সেই যে গেলেন আর উত্তরাপথে ফিরলেন না; বিন্ধ্যও আর মাথা তুলতে পারল না; ভাদ্রমাসের পয়লা দিনে অগস্ত্যমুনি দক্ষিণে যাত্রা ক’রেছিলেন এবং আর ফিরে আসেন নি বলে মাসের প্রথমদিনে বিদেশযাত্রা নিষিদ্ধ।)
অগা লোকের কাজ ঝকমারি অকাজের লোকেরা কাজের ক্ষেত্রে বিভ্রাট সৃষ্টি করে।
অগাধজলসঞ্চারী বিকারী ন চ রোহিত, গণ্ডূষজলমাত্রেণ সফরী ফর্ফরায়তে১ অগাধজলে থেকেও রুইমাছের বিকার নেই অর্থাৎ অহঙ্কারী হয় না; অথচ অল্পজলে পুঁটিমাছ ফরফর করে গর্বে লাফায়।
অগাধজলসঞ্চারী বিকারী ন চ রোহিতঃ, গণ্ডূষজলমাত্রেণ সফরী ফর্ফরায়তে২ জ্ঞানীপুরুষেরা জানে যে তারা অতি অল্প জানে; তাই তারা বিনয়ী হয়; কিন্তু অল্পজ্ঞানীরা মনে করে যেন তারা বড় বেশী জানে; তাই তারা অহঙ্কারী হয়।
অগুণ মানুষ গুণ না চিনে, মূষা না চিনে বিড়ালী; অপ্রেমী যে প্রেম না চিনে, কাঠ না চিনে কুড়ালী। মানুষের চেতনার বড় অভাব; বুদ্ধিশুদ্ধি একটু কম।
অগুণস্য হতং রূপম নির্গুণব্যক্তি রূপবান হলেও সেই রূপ বৃথা।
অগুরু চন্দন ফেলে চায় শেওড়া কাঠ, কোকিলের ধ্বনি ফেলে বানরের নাট ভালো ছেড়ে মন্দের প্রতি মানুষের অযৌক্তিক আকর্ষণ থাকে; স্বভাবদোষে মানুষ মন্দের প্রতি আকৃষ্ট হয়।
অগ্নি, ব্যাধি ও ঋণ, রেখোনা তিনের চিন (চিহ্ন) আগুন, ব্যাধি ও ঋণের শেষ রাখতে নেই; থাকলে এগুলি ক্রমশঃ বাড়তে থাকে; আগুন নিবিয়ে ফেলা, রোগ সারিয়ে ফেলা এবং ঋণ শোধ করে ফেলা আশু কর্তব্য।
অঘটন ঘটায় বিধি বিধানকর্তা ভালমন্দ সব ঘটনার কারিগর।
অঘটনে স্বজন চেনা যায় দুর্বিপাকে পড়লে প্রকৃত বন্ধু পাশে এসে দাঁড়ায়।
অঘটির (আদেখলা) ঘটি হল, জল খেতে খেতে প্রাণটা গেল কোন জিনিসের প্রথম প্রাপক আনন্দের আতিশয্যে একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলে; সমতুল্য-'অদন্তের দাঁত হলো, কামড় খেতে খেতে প্রাণটা গেল'।
অঙ্গারঃ শতধৌতেন মলিনত্বং ন মুঞ্চতি কয়লা হাজার ধুলেও যেমন রঙ বদলায় না তেমনিই কুলোক কখনো কুপ্রবৃত্তি ছাড়ে না; সমতুল্য- 'ইল্লৎ যায় না ধুলে'; 'যা রীত ছাড়ে কদাচিৎ'; 'স্বভাব যায় না মলে' ইত্যাদি; বাংলা পাঠান্তর-'অঙ্গার হাজার ধুলেও ময়লা ছাড়ে না'।
অচিন্ত্যং হি ফলং সূতে সদ্যঃ সুকৃতপাদপঃ পূণ্যরূপ বৃক্ষ তাৎক্ষণিক অভাবনীয় ফলদান করে।
অচেনা/অজানা বন্ধু থেকে চেনা/জানা শত্রু ভাল অজানা বিষয় থেকে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি থাকে।
অচেনা পথ আর জঙ্গল সমান অজানা জল আর জানা শ্মশান এই চারটি বিষয় জীবনে চলার পথে বিপদের কারণ হতে পারে।
অজগরকা দাতা রাম অজগর নিশ্চলভাবে এক জায়গায় পড়ে থাকে; মুখের কাছে খাবে এলে তবে খায়; তার খাবারের অভাব হয় না; রামই তার খাবার যুগিয়ে দেন; ভগবানই জীবের অন্নদাতা; তুলনীয়- 'অনাথো দেবরক্ষকঃ'; সমতুল্য- 'জিভ দিয়েছেন যিনি আহার যোগান তিনি'; বাংলা পাঠান্তর- 'অজগরের দাতা রাম'।
অজানা পথ আর জঙ্গল সমান, অজানা জল আর জানা শ্মশান এগুলি হল ভয়ের কারণ।
অজাযুদ্ধে ঋষিশ্রাদ্ধে প্রভাতে মেঘডম্বরে দাম্পত্যকলহে চৈব বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া অজার লড়াই, ঋষির শ্রাদ্ধ, সকালের মেঘগর্জন ও দাম্পত্যকলহে প্রথমে একটু বাড়াবাড়ি হয় তবে শেষে ফল সামান্যই হয়।
অজার যুদ্ধে আঁটুনি সার ছাগল অন্য ছাগল দেখলে দূর থেকে লাফিয়ে আসে; কিন্তু সামনে এলে ভুলে যায়; আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনে ফললাভের সম্ভাবনা সামান্য হলে প্রবাদটি বলা হয়।
অজুহাত মিথ্যার চেয়ে খারাপ অজুহাত মিথ্যাকে রক্ষা করে।
অজীর্ণে ভোজনং বিষমং হজমের আগে পুনরায় ভোজন বিষতুল্য।
অজীর্ণে ভেষজং বারি; জীর্ণে বারি বলপ্রদম্ বদহজমের একমাত্র ওষুধ জল; দুর্বলকে জল শক্তি যোগায়।
অজ্ঞতাই ভক্তি করে, ভক্তি হলো অজ্ঞতার কন্যা অজ্ঞান ও ভয় থেকে মানুষের মনে ভক্তিভাবের উদয় হয়।
অজ্ঞাতকুলশীলস্য বাসো দেয়ো ন কস্যচিৎ কখনো অচেনা লোককে গৃহে স্থান দিতে নেই।
অজ্ঞানতা শ্রেষ্ট দারিদ্র্য অজ্ঞানের সারাজীবনটা বৃথা যায়; অজ্ঞানের মত দীন আর কেউ নয়।
অজ্ঞান বন্ধু থেকে জ্ঞানী শত্রু অনেক ভালো বন্ধু হলেও অবোধের কাছ থেকে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি থাকে।
অজ্ঞানে আকস্মিক ও দৈব ঘটনার যুক্তি খাড়া করে কিছুই আকস্মিক নয়; অকারণে কিছু হয় না; ব্যাখ্যায় অক্ষম হলে লোকে দৈবের দোহাই দেয়; সমতুল্য-'পরুষ্কারেণ বিনা দৈব ন সিদ্ধতি'; বিরুদ্ধ উক্তি- 'ভাগ্যং ফলতি সর্বত্র ন চ বিদ্যা ন পৌরুষম্'।
অজ্ঞানে করে পাপ জ্ঞান হলে মনস্তাপ শিশুবয়সে না বুঝে দোষত্রুটি হয়; বড়বয়সে জ্ঞান হলে সেগুলি শুধরে নেওয়া যায়; কিন্তু জ্ঞানকৃত পাপ কখনো খণ্ডায় না; পাঠান্তর- অজ্ঞানে করে পাপ জ্ঞান হলে সরে; সজ্ঞানে করে পাপ সঙ্গে সঙ্গে ফেরে'।
অজ্ঞানে আগামীকালের জন্য অপেক্ষা করে, জ্ঞানী আজরাত্রের মধ্যেই কাজ শেষ করে। জ্ঞানীরা অনিশ্চিতের মধ্যে থাকে না; তুলনীয় উক্তি- আগামীকাল আর আসে না'; 'কাল করলে আজ নয় কেন, আজ করলে এখন নয় কেন'।
অজ্ঞানে বাপান্ত করে জ্ঞানবানে তাই কি ধরে? অজ্ঞরা কিছু দোষ করে ফেলতে পারে; জ্ঞানীরা সেই দোষ ধরে না; তুলনীয়- 'নীচ যদি উচ্চ ভাষে সুবুদ্ধি উড়ায় হাসে'।
অজ্ঞানের কানদুটো ছোট ও জিভটা বড় হয় অজ্ঞানেরা শোনে খুব কম, কিন্তু কথা বলে বড় বেশি।
অজ্ঞানের কালে জানে না, অমানুষের কালে মানে না শিশুরা বুঝতে পারে না বলে দোষ করে; বয়স্করা কিন্তু দোষকে অগ্রাহ্য করে; অপকর্মকে অপকর্ম বলে স্বীকার করে না; মানুষের স্বভাবই হল দোষ করা; স্বভাবদোষে মানুষ অপকর্ম করে।
অতি অস্পষ্ট কালির লেখাও উৎকৃষ্ট স্মরণশক্তি থেকে বেশি উজ্জ্বল স্মৃতিশক্তি বড়ই দুর্বল; লেখা কিন্তু চিরস্থায়ী।
অতি আশ সর্বনাশ অতি আশা প্রবঞ্চনা করে; বেশি লোভ করলে বেশি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে; সমতুল্য- 'অতি লোভে তাঁতি নষ্ট';'খাচ্ছিল তাঁতী তাঁত বুনে কাল হল তার এঁড়ে/হেলে গরু কিনে' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'অতি আশায় মরে চাষা'।
অতিকথায় বার্তা নষ্ট বাকচাতুর্যে মূলবক্তব্য হারিয়ে যায়; সমতুল্য- 'ভাষা ভাব লুকায়'।
অতি ক্ষুধা যার হাড় কাটা তার বেশি খেলে শরীর নষ্ট হয়।
অতিগর্জনে/মেঘে ফোঁটাবৃষ্টি হাঁকডাকওয়ালারা কাজের বেলায় অষ্টরম্ভা; অকর্মারা বকে বেশি; যে বেশি বকে সে কাজ অষ্টরম্ভা।
অতি ঘরন্তী না পায় ঘর অতি বরন্তী না পায় বর ভাগ্যদোষে অতি নিপুণা ঘরণীও সংসার পাততে পারে না এবং পতিকর্তব্য সম্পর্কে শিক্ষাপ্রাপ্তা বরাঙ্গনাও বর পায়।
অতি চতুরের ভাত নেই, অতি সুন্দরীর ভাতার নেই বেশি চালাকের অন্ন জোটে না, বেশি সুন্দরীর বর জোটে না; বাছবিচারে সময় চলে যায়; তুলনীয়- 'অতি চালাকের গলায় দড়ি'।
অতি চালাকের গলায় দড়ি বেশি চালাকি করে অপরকে ঠকাতা চাইলে নিজেকেও বিপদে পড়তে হয়।
অতি চালাকের গলায় দড়ি, অতি বোকার পায়ে বেড়ি বেশি চালাক ও বেশি বোকা- উভয়ই বিপদে বেশি পড়ে; অতি ভাল ভাল নয়।
অতি চেনার কদর নেই সহজলভ্য জিনিসের মূল্য নাই; সমতুল্য- 'গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না।
অতি জ্বালে ব্যঞ্জন নষ্ট বেশি জ্বাল দিলে দ্রব্যগুণ নষ্ট হয়; কোন কিছুতেই বাড়াবাড়ি ভাল নয়।
অতিথির্বালকশ্চৈব রাজা ভার্যা তথৈবচ, অস্তি নাস্তি নয়া জানন্তি দেহি দেহি পুনঃপুনঃ অতিথি, বালক, রাজা ও পত্নী- এরা আছে কি নেই বিবেচনা করে ন, কেবল বলে দাও দাও।
অতিথি সর্বময় গুরুঃ/পূজ্যঃ অতিথি গুরুর মতই পূজনীয়; তুলনীয়- 'সর্বদেবময়োহতিথি'।
অতিদর্পে হতা লঙ্কা অহংকার করলে পতন অনিবার্য; সমতুল্য- 'অত্যুচ্চায় পতনায়'; 'সর্বমত্যন্তমগর্হিতম'।
অতি দর্পে হতা লঙ্কা, অতিমানে চ কৌরবাঃ, অতিদানে বলির্বদ্ধঃ সর্বমত্যন্তম গর্হিতম্ অতিরিক্ত অহঙ্কারে লঙ্কা বিনষ্ট হয়; অতিরিক্ত অভিমানে কৌরবেরা বিনষ্ট হয়; অতিরিক্ত দানে বলি বামনের কাছে বন্দী হয়; কোনকিছুতে বাড়াবাড়ি ভালো না; মাত্রাতিরিক্তের পরিণাম সুখকর হয় না।
অতি দানে বলির পাতালে হল ঠাঁই অতিরিক্ত দান করতে গিয়ে বলি বামনের কাছে বন্দী হয়; সৎকাজে নিয়োজিত ব্যক্তি অন্যের কৌশলে ভোগান্তির শিকার হয়; সুতরাং অতিশয় কিছু ভালো নয়।
অতি পীরিত যেখানে অতি বিচ্ছেদ সেখান পীরিত বেশি হলে তাড়াতাড়ি বিচ্ছেদের আশঙ্কা থাকে।
অতি পীরিত যেখানে, নিত্য যাবে না সেখানে; যদি যাবে নিত্যি, ঘটবে একটা কীর্তি যেখানে ভালোবাসা গভীর শেখানে প্রতিদিন না যাওয়াই ভালো; তা না হলে কলঙ্ক বা বিরোধ ঘটতে পারে।
অতিপ্রেমে অমিত বিচ্ছেদ যেখানে ভালোবাসার বাড়াবাড়ি সেখানে বিচ্ছেদবেদনাও তীব্র হয়; সম্পর্কীত প্রবা্দ- 'যতহাসি ততকান্না, বলে গেছে রামসন্না(শর্মা)'।
অতিবড় ঘরণী না পায় ঘর, অতিবড় সুন্দরী না পায় বর বেশি বাছাবাছি করতে গিয়ে প্রায়শঃ ঘরকন্নার কাজে অতিনিপুণা নারীর স্বামীর ঘর এবং বরাঙ্গনার বর জোটে না। কোনবিষয়ে অনন্যসাধারণ হলে সবসময় তার জুড়ি খুঁজে পাওয়া যায় না।
অতিবড় সোদর (সহোদর ও সহোদরা) তিনদিন করবে আদর যত প্রীতির সম্পর্কই হোক না কেন তার কাছ থেকে অতি পাওয়ায় আদর ক্রমশঃ কমতে থাকে।
অতিবাড় বেড়ো না ঝড়েতে উড়াবে, অতি ছোট হয়ো না ছাগলে মুড়োবে অহঙ্কার বেড়ে গেলে পতন হবেই; আবার বেশি বিনীত হলেও উপেক্ষিত হবে; সুতরাং চরমপন্থা নয়, মধ্যপন্থাই শ্রেষ্ঠপন্থা; তুলনীয়- 'অত্যুচ্ছায় পতনায়'; পাঠান্তর- 'অতি বাড় ভাল নয়'।
অতিপরিচয়ে দোষ ব্যক্ত অন্তরঙ্গতায় লুকানো দোষ প্রকাশ হয়ে পড়ে।
অতিপরিচিতি উপেক্ষার জন্ম দেয় কোন বিষয় বেশি পেলে তার প্রতি আকর্ষণ, আগ্রহ কমে।
অতিবুদ্ধির কোমরে/গলায়/হাতে দড়ি, অতি বোকার পায়ে বেড়ি অতিচালাকি করতে গিয়ে মানুষ মরে;একইভাবে অতিবোকামির জন্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়; সুতরাং বেশি বাড়বাড়ি কখনো ভালো নয়।
অতিবুদ্ধির হা-ভাত চালাকি করতে গিয়ে অস্থিরতার কারণে ভাত যোগাড় করতে ব্যর্থ হয়; সুতরাং ভাল নয় অতিশয়।
অতিভক্তি চোরের লক্ষণ১ ভক্তির আতিশয্যে গোপন উদ্দেশ্য প্রচ্ছন্ন থাকে; অসঙ্গতমাত্রায় কিছু করলে স্বাভাবিকভাবেই মনে সন্দেহ জাগে; সমতুল্য- 'কেশব, গোপাল, হরিহরি, হরহর'।
অতিভক্তি চোরের লক্ষণ২ খারাপ উদ্দেশ্য প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ভয়ে সাধু সাজার চেষ্টা।
অতি ভালো, ভালো নয় সব বাড়াবাড়িই শেষপর্যন্ত বিপদ ডেকে আনে; সমতুল্য- 'অল্প আগুনে গা গরম হয়; বেশি আগুনে ঘর পোড়ে'; 'সর্বম্‌ অত্যন্তম্‌ গর্হিতম্‌' ইত্যাদি।
অতিভুক্তিরতীবোক্তিঃ সদ্য প্রাণাপহারিণী অতিরিক্ত ভোজন ও বাচালত্য সদ্য প্রাণনাশক।
অতিমন্থনে বাসুকীর বিষ উৎসকাহিনী-ক্ষীরোদসাগর মন্থনে প্রথমে অমৃত ওঠে; কিন্তু অমৃত নিয়ে দেবাসুরে ঝগড়া শুরু হলে দ্বিতীয়বার সমুদ্রমন্থন করা হয়; এবার ওঠে বিষ; কোন ভালদ্রব্য নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি করলে দ্রব্যগুণ নষ্ট; অনেকসময় বারবার শোনা ভালকথাও মন্দ মনে হয়; সমতুল্য- 'লেবু চটকালে তেতো হয়'; পাঠান্তর- 'অতিমন্থনে বিষ উঠে'; 'অতিমন্থনে মিঠা তিতা'।
অতিমেঘে অনাবৃষ্টি/ফোঁটাবৃষ্টি বেশি মেঘ জমলে বৃষ্টি না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে; আড়ম্বর বেশি হলে কাজ ভাল হয় না; সমতুল্য-'অতি গর্জনে অনাবৃষ্টি/ফোঁটাবৃষ্টি'; 'অধিক গর্জনে অল্পবর্ষণ';'অনেক গর্জনে ফোঁটাবৃষ্টি' ইত্যাদি।
অতিযত্নে মরণফাঁদ বেশি যত্ন নিলে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়; সম্পর্কীত প্রবাদ- শরীরের নাম মহাশয়; যা সহাইবে তাই সয়'।
অতির কিছুই ভাল নয় দান, দয়া, প্রেম, মান ইত্যাদি কোন গুণাবলীও মাত্রাতিরিক্ত হলে সেটা ভাল হয় না।
অতিলোভে তাঁতি নষ্ট বেশি লোভ করলে নিজেরই ক্ষতি হয়; সর্বস্ব খোয়ানোর আশঙ্কা থাকে; বেশি বাড়াবাড়ি ভাল নয়; (উৎসকাহিনী- এক রাজার এক গরু ছিল; একদিন দুধ দিতে দুরন্তপনা করায় রাজা বলেন, 'কাল সকালে উঠে যার মুখ দেখব তাকেই গরু দিয়ে দেব'; পথ চলতি এক তাঁতী কথাটা শুনতে পায়; লোভী তাঁতী ঘরে ফিরে সারাদিন ধরে ঘরে যত সূতা ছিল তা দিয়ে দড়ি বানিয়ে পরের দিন সকালবেলা রাজদরবার উপস্থিত হয়ে রাজাকে গরুটি দিতে বলে; ক্রোধে রাজা দ্বারী দিয়ে তাকে পিটিয়ে বিদায় করেন; তাঁতীর গরুতো পাওয়া হল না পরন্তু বেজায় মার খেল এবং সম্বল সব সূতা হারাল); সমতুল্য- 'অতি আশ সর্বনাশ';'অতি আশায় মরে চাষা'; 'খাচ্ছিল তাঁতী তাঁত বুনে কাল হল তার এঁড়ে গরু কিনে' ইত্যাদি।
অতি লোভো ন কর্তব্যঃ, লব্ধং নৈব পরিত্যজেৎ বেশী লোভ করতে নেই; আবার পাওয়া জিনিসও ছাড়তে নেই।
অতিশয় ভালো নয় বুদ্ধি হলেই পড়তে হয় বেশি বুদ্ধি হলে পতন অনিবার্য; সমতুল্য- 'অতি চালাকের গলায় দড়ি'।
অতি সাধ অতি বিষাদ বেশি আশা পূর্ণ না হলে মনে বিষাদে ভরে যায়; ক্রিয়ার সমান প্রতিক্রিয়া
অতি সোদর হয় গালে তুলে দেয়, টিকলেতো/গিললেতো হয় ভাই বলে কেউ যদি তোমার মুখে মিষ্টি তুলে দেয়, সেটা গিলতে না পারলে কোন লাভ নেই; ব্যবহার করতে না জানলে কোন বস্তু নিয়ে লাভ নেই।
অতীত থেকে শিক্ষা নাও, ভবিষ্যতে ভুল হবে না অতীতকে জানলেই ভবিষ্যৎ জানা যায়।
অতীতকে শুধরানো যায় না অতীতকালে ফিরে যাওয়া যায় না; সমতুল্য- 'গতস্য শোচনা নাস্তি', 'যা গেছে তা গেছে' ইত্যাদি।
অতুভুক্তিরতীবোক্তি সদ্যঃ তীব্র প্রাণাপহারিণী অপরিমিত আহারে স্বাস্থ্যনাশ হয়।
অতৃণে পতিত বহ্নিঃ স্বয়ামেবোপশাম্যতি ঘাসহীনস্থানে আগুন পড়লে আপনাহতেই নিভে যায়।
অত্তাস কুত্তা বত্তাস ভূঁকৈ ভীতু কুকুর বাতাসের শব্দে ভয় পেয়ে ঘেউঘেউ করে;অনাবশ্যক ভয় পেয়ে ভীতু লোকেরা চিৎকার জুড়ে দেয়; সমতুল্য- 'ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়'।
অত্যুচ্ছায়ঃ পতনায়ন্তে/পতনহেতুঃ বেশি বাড়লে পতন অনিবার্য; অতিবাড় পতনের কারণ; সমতুল্য- 'অত দর্পে হত লঙ্কা'; 'সর্বমত্যন্তমগর্হিতম'; পাঠান্তর- 'অত্যুচ্চায়ঃ পতনায়'; 'অত্যুচ্চায়ো পতনহেতুঃ'।
অদন্তের দাঁত হলো, কামড় খেতে খেতে প্রাণটা গেল শিশুর দাঁত উঠলে কামড়ে পাগল করে দেয়; কোন নতুন দ্রব্য পেয়ে অত্যধিক ব্যবহার করলে এই প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়; সমতূল্য- 'অঘটির ঘটি হল, জল খেতে খেতে প্রাণটা গেল'।
অদন্তের হাসি দেখতে ভালোবাসি দন্তহীন বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের হাসি দেখে কৌতুকে এই প্রবাদটি বলা হয়।
অদাতা বংশদোষেণ কর্মদোষাদ্ দরিদ্রতা, উন্মাদো মাতৃদোষেণ পিতৃদোষেণ মূর্খতা বংশদোষে কৃপণ, কর্মদোষে দরিদ্র, মাতৃদোষে পাগল এবং পিতৃদোষে মূর্খ হয়।
অদৃষ্টে করলা ভাতে, বীচি কচকচ করে তাতে; পড়ল বীচি বুড়োর পাতে ভাগ্যে লেখা থাকলে দুর্ভোগ পোহাতে হবেই; দুখীর ভাগ্যে সুখ লেখা নেই।
অদৃষ্টের কিল ভূতেও কিলোয় অদৃষ্ট খারাপ হলোে নির্বিচারে সবাই ভোগায়; পাঠান্তর- 'অদৃষ্টের কিল পুতেও (ছেলে) কিলোয়'।
অদৃষ্টের ফল কে খণ্ডাবে বল কপালের লিখন কেউ খণ্ডাতে পারে না; কপালে যা লেখা আছে তা ঘটবেই; সমতুল্য- 'নিয়তিঃ কেন বাধ্যতে'; বিরুদ্ধ উক্তি- অদৃষ্টের ফের কাপুরুষের উক্তি; পাঠান্তর- 'অদৃষ্টের লিখন না যায় খণ্ডন'।
অদ্য ভক্ষ্য ধনুর্গুণ১ গল্পের শিয়ালের মত না ভেবে কাজ করা; অদূরদর্শিতার লক্ষণ; বিচারবিবেচনা না করে কাজ করলে বিপদ অনিবার্য।
অদ্য ভক্ষ্যো ধনুর্গুণ২ ঘরে অন্নাভাব; দুর্ভিক্ষের করাল ছায়া; সমতুল্য- 'আজকের খেয়ে নেড়া নাচে'।
অধনশ্চ/অধনেন ধনং প্রাপ্য তৃণবন্মন্যতে জগৎ নির্ধনের ধন হলে সে সকলকে তৃণজ্ঞানে তুচ্ছ করে; অর্থের সামর্থ হলোে অহঙ্কারে অধমের মাটিতে পা পড়ে না।
অধমা ধনমিচ্ছতি ধনং, মানং চ মধ্যমা, উত্তমা মানোমিচ্ছন্তি মানং মানো হি মহতাং ধনম অধম ধন চায়, মধ্যম ধন ও মান চায়; উত্তম শুধু মান চায়।
অধরেস্বমৃতং হি যোষিতাং হৃদি হলাহলমেব কেবলম রমণীদের অধরে অমৃত কিন্তু হৃদয়ে বিষ থাকে।
অধর্মবিষবৃক্ষস্য পচ্যতে স্বাদু কিং ফলম? অধর্মরূপ বিষবৃক্ষে কী স্বাদু ফল ফলে?
অধর্মের পথ বড়ই পিচ্ছিল অধর্মের পথে চলতে গিয়ে একবার পড়লে সোজা হয়ে দাঁড়ানো কঠিন; নরকের দ্বার থেকে আর ফেরা যায় না।
অধর্মের পথ বড়ই সরল অধর্মের পথে চলতে কোন অনুশাসন, নিয়মশৃঙ্খলা মানার প্রশ্ন থাকে না; তাই মানুষ মনোরম মন্দপথেই চলতে পছন্দ করে; সমতুল্য- 'নরকের দ্বার খোলা'।
অধিক খেতে করে আশা, তার নাম বুদ্ধিনাশা বেশি খাওয়া স্বাস্থের পক্ষে ক্ষতিকর; পেটুক না হলে কেউ বেশি খায় না।
অধিক দিন থাকলে গাজন কে করত শিবের ভজন? আধিক্যে সোনার মূল্যও হ্রাস পায়।
অধিকগর্জনে অল্পবর্ষণ আড়ম্বর অনুসারে কার্য হয় না; যে বেশি বকে, সে কাজে বেশিদূর এগোয় না; সমতুল্য- 'অতিমেঘে অনা/ফোঁটা বৃষ্টি';'অনেকগর্জনে ফোঁটা বৃষ্টি';'ঘেউঘেউ করা কুত্তা কদাচিৎ কামড়ায়'; ইত্যাদি।
অধিক/অনেক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট এক কাজে অনেক লোক জুটে গেলে মতভেদের কারণে কাজ পণ্ড হয় সমতুল্য-'অনেক রাঁধুনীতে ব্যঞ্জন নষ্ট'; 'এক হেঁসেলে দুই রাঁধুনি, পুড়ে গেল তার ফেনগালুনি';'ঘরের মধ্যে ঘর, সবাই মাতব্বর';'ঠেলাঠেলির ঘর, খোদায় রক্ষা কর';'দশ পাগলের ঘর, খোদায় রক্ষা কর';'সাত সতীনের ঘর খোদায় রক্ষা কর' ইত্যাদি। বিরুদ্ধ উক্তি- 'দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ'।
অধিকন্তু ন দোষায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত হলে ক্ষতি নেই, তবে যদি সেটা সৎকার্য হয়; বরং কম হলেই দোষের হয়; বিরুদ্ধ উক্তি-'অতি ভাল ভাল নয়';'সর্বম্‌ অত্যন্তম্‌ গর্হিতম্‌'ইত্যাদি।
অধিকার দায়িত্ব আরোপ করে সমাজে অগ্রগণ্য ও উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের কাছ থেকে সামাজিক দায়িত্ব পালনের উদারতা আশা করা হয়।
অধিগুণে মোঘা যাচ্ঞা (অপি) বরম অধমে লম্বকামা গুণবানের কাছে বিফল প্রার্থনা, সেও ভালো, কিন্তু অধম ব্যক্তির কাছে সফল প্রার্থনা ভালো নয়; তুলনীয়- 'বরং রামান্ন রাবণাৎ'; 'বরঞ্চ পণ্ডিতঃ শত্ৰ ন চ মূর্থেণ মিত্রত'।
অধ্যয়নং তপঃ অধ্যয়ন তপস্যার সমান।
অনটনের তিনগুণ ব্য়য একাধিকদ্রব্য একসাথে কিনলে বা একটা দ্রব্য বেশি পরিমাণ কিনলে দামে সস্তা হয়; কিন্তু অর্থের টানাটানিতে একটা একটা করে একটু একটু করে একাধিকবার কিনলে ব্যয় তিনগুণ হয়।
অনটনের সংসারে দুনো ব্যয় অভাবগ্রস্তের সংসার খরচ নানাকারণে দ্বিগুন হয়ে যায়।
অনন্ত শাস্ত্রং বহুবেদিতব্যম শাস্ত্রের শেষ নেই; বহু বিষয় জানার আছে।
অনাথো দেবরক্ষকঃ অসহায়ের সহায় স্বয়ং ভগবান; তুলনীয়- 'অজগরের দাতা রাম'।
অনায়কা বিনশ্যন্তি, নশ্যন্তি শিশুনায়কাঃ, স্ত্রীনায়কা বিনশ্যন্তি, নশ্যন্তি বহুনায়কাঃ। পরিচালিকহীন, শিশু, নারী ও বহুজনদ্বারা পরিচালিত জন বিনাশপ্রাপ্ত হয়; তুলনীয়- 'অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট'।
অনবসরে যাচিতমিতি সৎপাত্রমপি কুপ্যতে দাতা সৎপাত্রও অসময়ে যাচ্ঞা করলে দাতা কুপিত হন।
অনভ্যস্তা বিষং বিদ্যা বৃদ্ধস্য তরুণী বিষম, আরোগে তু বিষং বৈদ্যা অজীর্ণে ভোজনং বিষম অনভ্যস্ত বিদ্যা বিষের সমান; যুবতীনারী বৃদ্ধের কাছে বিষের সমান; নীরোগব্যক্তির পক্ষে বৈদ্য বিষের সমান; হজমের আগে পুনরায় ভোজন বিষের সমান।
অনভ্যাসের ফোঁটা কপাল চড়চড় করে অনভ্যস্ত কাজে হাত দিলে প্রথমে একটু কষ্ট হয় বা একটু অস্বস্তিবোধ হয়; অনভ্যস্ত কাজ কাউকে দিলে তার কষ্ট হয়।
অনাথো দৈবরক্ষক অনাথের রক্ষক স্বয়ং ভগবান; ভগবানে বিশ্বাস করেই সে বেঁচে থাকে; একমাত্র বিশ্বাসই তার বেঁচে থাকার রসদ; হরি হে দীনবন্ধু; বিরুদ্ধ উক্তি-'অভাগা যেদিকে চায় সাগর শুকায়ে যায়';'অভাগার যমও নাই'; পাঠান্তর- 'অনাথের দৈব সখা'।
অনাগত বিধাতা চ প্রত্যুন্মতিসস্তথা, দ্বাধেতি সুখমেষেতে যদ্ভবিষ্যো বিনাশ্যতি যে অনাগত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়ে প্রত্যুৎপন্নন্মতিত্বের পরিচয় দেয় সে সুখী হয়; যে ভাগ্যের দোহাই দিয়ে নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকে সে বিনাশপ্রাপ্ত হয়।
অনাবৃষ্টে রাজ্য মজে, পাপে মজে ধর্ম; কোটালে গৃহস্থ মজে, আলস্যে মজে কর্ম। বৃষ্টি না হলে দেশের ক্ষতি; পাপে ধর্ম বিপদগ্রস্ত; নদীর বাড়ে লোকালয় বিপদগ্রস্ত; অলসতায় কর্ম নষ্ট।
অনাহ্বানের নিমন্ত্রণ, না আঁচালে বিশ্বাস নেই উপযাচকের ইচ্ছা অনেকসময় পূর্ণ হয় না; যেকোন কাজেই সমাধান না হওয়া পর্যন্ত অনিশ্চয়তার আশঙ্কা থাকে; সম্পর্কীত প্তবাদ- 'কাপ ও ঠোঁটের মধ্যে অনেক ফাঁক আছে'।
অনিচ্ছুক গাধা/ঘোড়াকে জল খাওয়ানো যায় না অনিচ্ছুক হলে কারো কাছ থেকে কাজ আদায় করা অসম্ভব।
অনিশ্চিতের আশায় নিশ্চিত ত্যাগ করো না সম্ভব ছেড়ে অসম্ভবের পিছনে ছূটো না; সমতুল্য- 'হাতের একটা পাখি বনের দুটো পাখির সমান'।
অনিষ্ট হতে ইষ্ট লাভ মন্দঘটনা থেকে ভাল ঘটনার উৎপত্তি; সমতুল্য- 'অহিতে বিপরীত'; 'শাপে বর'; বিরুদ্ধ উক্তি- হিতে বিপরীত'।
অনুপস্থিতি হৃদয়কে অনুরাগী করে তোলে দুরত্ব প্রেমিক প্রেমিকার আকর্ষণ তীব্র করে; কালিদাস তাঁর মেঘদূত কাব্যে তা ছত্রেছত্রে বর্ণনা করে গেছেন। বিরুদ্ধ উক্তি- 'চোখের আড়াল হলেই মনের আড়াল'।
অনুরাগ বিনে গৌর আসবে কেনে? প্রীতি ও প্রেমের পূণ্যবাঁধনে স্বর্গ রচিত হয়।
অনুরোধে ঢেঁকি গেলা অনুরুদ্ধ হয়ে নিতান্ত বাধ্য হয়ে কোন কাজ সম্পাদন করা।
অনুশীলনে পাথর ক্ষয় হয় পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই; সমতুল্য- পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই; বিরুদ্ধ উক্তি- নুড়ি সহস্রবছর জলে থাকলেও রসসিক্ত হয় না'।
অনুশীলনে মানুষ নিঁখুত/সম্পূর্ণ হয় দক্ষতা অর্জনে ধারাবাহিক অনুশীলন একান্ত জরুরি; সমতুল্য- 'পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই'; বিরুদ্ধ উক্তি- 'কোন মানুষ নিখুঁত/সম্পূর্ণ নয়'; চাঁদেরও খুঁত আছে'।
অনেক কালের ছিল পাপ ছেলে হল সতীনের বাপ সবই কর্মফল; পাপ করলে শাস্তি আছেই; পাপ বাপকেও ছাড়ে না; পাপের ফলভোগ কোন-না-কোনভাবে করতেই হয়; পাঠান্তর- 'অনেক কালের ছিল পাপ বড়ছেলে সতীনের বাপ'।
অনেক খেলে অল্প খাবে; অল্প খেলে অনেক খাবে সারাজীবনের আহার নির্দিষ্ট; প্রতিদিন বেশিবেশি খেলে অল্পদিনে তা ফুরিয়ে যাবে অর্থাৎ সল্পায়ু হবে; অপরপক্ষে অল্পঅল্প খেলে তা বেশিদিন ধরে খাবে অর্থাৎ দীর্ঘায়ু হবে; মিতাহারের পক্ষে সওয়াল; পাঠান্তর- 'অনেক খাবে তো অল্প খাও, অল্প খাবে তো অনেক খাও'।
অনেক গর্জনে ফোঁটা বৃষ্টি অকর্মারা বেশি হাঁকাহাঁকি করে; সমতুল্য- অতিমেঘে অনাবৃষ্টি/ফোঁটাবৃষ্টি; 'যত গর্জে তত বর্ষে না'; 'বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া' ইত্যাদি।
অনেক/অগাধ/গভীর জলের মাছ সহজে ধরা দেয় না এমন সুচতুর ব্যক্তি; অবিচলিত চিত্ত গম্ভীর-স্বভাবযুক্ত ব্যক্তিসম্পর্কে প্রযোজ্য উক্তি
অনেক দক্ষতা কোন দক্ষতা নয়- জাপানী প্রবাদ বেশি কাজের লোক হলে কাজ হয় না; বেশি জানলে কিছুই জানা হয় না; অনেক কাজের কাজী কোন কাজের হয় না; সবজান্তারা সম্যক কিছু জানে না।
অনেক যদি মাছ পায় বিড়াল কাঁটা বেছে খায় প্রয়োজনের বেশি উপলব্ধ হলে নির্বাচনের প্রশ্ন আসে।
অনেক রাঁধুনিতে ব্যঞ্জন নষ্ট এক কাজে অনেক লোক জুটে গেলে মতভেদের কারণে সে কাজ পণ্ড হয়; পাঠান্তর- 'অনেক ফকিরে দরগা নষ্ট'; 'অনেক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্'; 'অনেক মাতব্বরে বিচার নষ্ট'।
অনেক সুখ যদি কপালে ছেঁড়া কাঁথা কেন বগলে কপাল বলে কিছু নেই; মানুষ কর্মদোষে দুঃখ ভোগ করে।
অনেক হল পাপ এবার ছাড়ো বাপ সারাজীবনে ভোগবিলাস অনেক হয়েছে; এবার দিনান্তে এসে ওসব ছেড়ে ধর্মেকর্মে মন দাও।
অন্তঃসারবিহিনানামুপদেশ ন বিদ্যতে অন্তঃসারশূন্য ব্যক্তিদের নানা উপদেশ দিলেও কোন ফললাভ হয় না; সমতুল্য- চন্দনগাছের সংসর্গে এলেও বাঁশ চন্দন হয় না; বিরুদ্ধ উক্তি- চন্দঙ্গআছের সংস্পর্শে এলে শেওড়াগাছও চন্দনগন্ধ পায়।
অন্তরে এত খলতা, মুখে তোর অতি শীলতা অতিভক্তি সন্দেহ জাগায়; অতিভক্তি চোরের লক্ষণ
অন্ধ কয়বার নড়ি (লাঠি) হারায় একবারও না; যার যেটা একমাত্র অবলম্বন সেই বিষয়ে সে খুব সতর্ক থাকে।
অন্ধকার আছে বলেই আলোর কদর বদগুণ ভালো নয় বলেই সদগুণের কদর; সমতুল্য- 'মেঘ আছে বলেই সুর্যের কদর'।
অন্ধকার আলো দূর করে না, আলো অন্ধকার দূর করে জ্ঞানের আলোতে মনের অন্ধকার দূর হয়।
অন্ধকার ঘরে কালো বেড়াল খোঁজা নিস্ফল প্রচেষ্টা, যা হবার নয়; সমতুল্য-'খড়ের গাদায় সূচের খোঁজ'; পাঠান্তর- 'অন্ধকারে উকুন বাছা'।
অন্ধকার রাত্রির পরেই ঊষার আগমন কখনো নিরাশ হ’তে নেই; সুসময়ের অপেক্ষায় থাকতে হয়; সমতুল্য- 'মেঘ দেখে তুই করিসনে ভয় আড়ালে তার সূর্য হাসে'।
অন্ধকারকে অভিশাপ দেওয়া থেকে একটি প্রদীপ জ্বালানো ভাল কোন সমস্যা সম্পর্কে অভিযোগ না জানিয়ে সমস্যাটির সমাধানে সচেষ্ট হওয়া উচিত।
অন্ধকারে ঢিল/ঢেলা ছোঁড়া/মারা নিস্ফল/বৃথা প্রচেষ্টা; ফল কি হবে না জেনে আন্দাজে কাজ করা; সমতুল্য- 'এ কেবল দিনেরাত্রে জল ঢেলে ফুটা পাত্রে. বৃথা চেষ্টা তৃষ্ণা মিটাবারে'; পাঠান্তর- 'অন্ধকারে লাউ কোটা'।
অন্ধকারে সব বিড়ালকে ধূসর দেখায়১ অস্পষ্ট বিষয়ে অনুমান করতে ভুল হয়।
অন্ধকারে সব বিড়ালকে ধূসর দেখায়২ বাহ্যিক সৌন্দর্য্যের গুরুত্ব নেই; বাহ্যিক চেহারার নীচে সব মানুষ দেখতে একরকম।
অন্ধকে দর্পণ দেখানো১ নির্বোধকে নীতিজ্ঞান দেওয়া
অন্ধকে দর্পণ দেখানো২ নিস্ফল প্রচেষ্টা
অন্ধজনে দেহ আলো, মৃতজনে দেহ প্রাণ- রবীন্দ্রনাথ সকলের মনের অন্ধকার দূর কর; অজ্ঞানকে জ্ঞানী কর; সমতুল্য- 'তমোসা মা জ্যোতির্গময়'।
অন্ধ জাগো না কিবা রাত্রি কিবা দিন যার কষ্টের সীমা-পরিসীমা নেই সে সব বিষয়েই নিস্পৃহ; সকল অবস্থাই যাদের কাছে সমান তাদের ক্ষেত্রে এই প্রবাদ প্রযোজ্য; পাঠান্তর- 'অন্ধের কিবা রাত্রি কিবা দিন'।
অন্ধস্য দীপো, বধিরস্য গীতং, মুর্খস্য শাস্ত্রং কিমু সানুরাগং যার যে ইন্দ্রীয় নেই তার সেই ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য বিষয় লাভের চেষ্টা বৃথা।
অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ হয় না- সুধীন্দ্রনাথ দত্ত জগৎ চলে তার নিজের নিয়মে, ব্যক্তি সেখানে নিমিত্তমাত্র; পাঠান্তর- 'চক্ষু বুজলেই প্রলয় বন্ধ হয় না'।
অন্ধের কিবা রাত্রি কিবা দিন১ যে দিন ও রাত্রির প্রভেদ বোঝে না তার কাছে দিন রাত্রি দুই সমান।
অন্ধের কিবা রাত্রি কিবা দিন২ যে অন্যের কাজের ফলভোগ করতে অক্ষম তার কাছে দিনরাত্রির কোন প্রভেদ নেই, দুই সমান।
অন্ধের কিবা রাত্রি কিবা দিন৩ যে অভাগার কষ্টের সীমাপরিসীমা নেই তার কোনকিছুর বাছবিচার করা বাতুলতা; তুলনীয়- 'শালগ্রামশিলার শোয়া আর বসা'।
অন্ধের দেশে কানা রাজা১ অজ্ঞানদের মধ্যে একজন স্বল্পজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি বিরাট জ্ঞানী।
অন্ধের দেশে কানা রাজা২ দুইই সমান অপদার্থ
অন্ধের দোকানে কালা খরিদ্দার দুজনেই সমান অপদার্থ; সমতুল্য-'গুরু বোবা, শিষ্য কালা'; 'দাদা কানা, আমি দেখিনা'; 'হব/হবুচন্দ্র রাজাঢ় গব/গবুচন্দ্র মন্ত্রী' ইত্যাদি।
অন্ধের নগরী চৌপট রাজা টাকা সের ভাজি টাকা সের খাজা- হিন্দি প্রবাদ যে রাজার শাসন কোন শাসন নয়; যে রাজ্যে শাসন ব্যবস্থায় কোন অনুশাসন নেই; এমন এক রাজ্য যেখানে মুড়িড়কির সমান দর; কোথাও চূড়ান্ত অপশাসন দেখা দিলে এই উক্তি করা হয়।
অন্ধের নড়ি/যষ্ঠি অন্ধ চোখে দেখে না তাই সে লাঠির ওপর-ই ভরসা করে চলে; লাঠিই তার একমাত্র অবলম্বন।
অন্ধের নড়ি, কৃপণের কড়ি কৃপণের কাছে কড়ি এবং অন্ধের কাছে লাঠি- উভয়ই মহামুল্যবান।
অন্ধের নাম নয়নসুখ গুণহীনকে গুণবান করার হাস্যকর প্রয়াস; সমতুল্য- 'কানাছেলের নাম পদ্মলোচন';'কালোছেলের নাম গৌরাঙ্গসুন্দর'; 'ঘুঁটেকুড়ানীর ছেলের নাম চন্দবিলাস' ইত্যাদি।
অন্ধের বৌয়ের প্রসাধনের প্রয়োজন নেই যখন কোন বিষয়ের বাইরের দেখাটা গুরুত্বপূর্ণ নয় তখন এই উক্তি করা হয়।
অন্ধের মত চলা১ সতর্ক হয়ে চলা; পা ফেলার যায়গা পরীক্ষা না করে অন্ধ পা ফেলে না।
অন্ধের মত চলা২ অসতর্ক হয়ে চলা; কিছু-না-বুঝে কোন কাজ করা; না চলার পক্ষে ওকালতি; সম্পর্কীত প্রবাদ- চলৎ একেন পাদেন তিষ্টতি বুদ্ধিমান'।
অন্ধের হস্তীদর্শন পরিষ্কার ধারণা না নিয়ে শুধু অংশবিশেষ পর্যালোচনা করে কোন বিষয়সম্পর্কে সম্পুর্ণ মতামত ব্যক্ত করা ভুল।
অন্ন আর অর্থবিনা কোন কাজ সঠিক হয় না পেটে ভাত আর পকেটে টাকা না থাকলে কোন কাজ ঠিকমত হয় না; সম্পর্কীত প্রবাদ- অন্নচিন্তা চমৎকারা কালিদাস বুদ্ধিহারা'।
অন্নচিন্তা চমৎকারা কাতরে কবিতা কুতঃ ঘরে অন্নের চিন্তা থাকলে কোন কাজই সফল হয় না; (উৎসকাহিনী- একদিন কালিদাস রাজসভার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন; এমন সময় গৃহিণী তাঁকে বলেন, 'ঘরে তণ্ডুল বাড়ন্ত; আসার সময় তণ্ডুল নিয়ে এসো'; কালিদাস ভাবতে ভাবতে রাজসভায় উপস্থিত হন; সেদিন রাজা বিক্রমাদিত্য কয়েকটি সমস্যা সমাধানের জন্য কালিদাসকে দেন; তিনি কিন্তু কোন সমস্যারই সমাধান করতে পারেন না; বিস্মিত রাজা কালিদাসক কারণ জিজ্ঞাসা কর'লে কালিদাস বলেন- ‘অন্নচিন্তা চমৎকারা, কাতরে কবিতা কুতঃ’।); পাঠান্তর- 'অন্নচিন্তা চমৎকারা কালিদাস বুদ্ধিহারা'; 'অন্নচিন্তা চমৎকারা ঘরে ভাত নাই জীয়ন্তে মরা'।
অন্নজলের বরাত ওঠা১ জীবনান্ত; পরমায়ু শেষ
অন্নজলের বরাত ওঠা২ জীবিকা অর্জনের উপায় শেষ
অন্নজলের নাড়ী কোটা শিশুর ভাতজল খাওয়ার তথা অন্নপ্রাসনের বয়স হওয়া।
অন্নদাতা ভয়ত্রাতা যস্য কন্যা বিবাহিতা, জনয়িতোপনতা চ পঞ্চৈতে পিতরঃস্মৃতা যিনি অন্ন দান করেন, যিনি ভয় থেকে রক্ষা করেন, যিনি কন্যা দান করেন (শ্বশুর), যিনি জন্মদান করেন, যিনি উপনয়ন দান করেন- এই পাঁচজন পিতার স্বীকৃতি পান। (পঞ্চপিতা কারা?)
অন্নদানাৎ পরং দানং, ন ভূতং ন ভবিষ্যতি অন্নদানের পর আর কোন দান নেই; পূর্বেও ছিল না, ভবিষ্যতেও হবে না।
অন্ন দেখে দেবে ঘি, পাত্র দেখে দেবে ঝি ভালো ভাতে ঘি দিলে ভাত সুস্বাদু হয়; সুপাত্রে দান করলে কন্যা সুখী হয়; সববিষয়ে ভেবেচিন্তে নির্বাচন করা উচিত; মহার্ঘবস্তুর অপব্যবহার করা অনুচিত।
অন্ন নাই যার ঘরে, তার মানে কি বা করে হাভাতের কোন মানসম্মান নেই।
অন্নপূর্ণা যার ঘরে, সে কাঁদে অন্নের তরে এমনই দুরদৃষ্ট যে চাষীর মুখে অন্ন জোটে না।
অন্নপ্রাশনের ভাত উগরে ওঠা বৃদ্ধবয়সে ছোটবেলার স্মৃতিচারণা করা।
অন্নবল নেই, অগ্নিবল আছে অভাগার অন্ন যোগাড় করার অর্থ নেই, কিন্তু ক্ষুধার জ্বালা আছে।
অন্নবিনা চর্ম গড়ি, তৈলবিনা গায়ে খড়ি পেটে অন্ন না পড়লে শরীরে চাকচিক্য আসে না; অন্নাভাবে দূরবস্থা; পাঠান্তর- 'অন্নবিনা ছন্নছাড়া'।
অন্নাদষ্টগুণং পিষ্ট পিষ্টাদষ্টগুণং পয়, পয়সোহষ্টগুণং মাংসং মাংসাদষ্টগুণং ঘৃতম্‌ অন্নের তুলনায় পিষ্টক আটগুণ পুষ্টি দান করে; পিষ্টকের তুলনায় দুগ্ধ আটগুণ পুষ্টি দান করে; দুগ্ধের তুলনায় মাংস আটগুণ পুষ্টি দান করে; এবং মাংসের তুলনায় ঘৃত আটগুণ পুষ্টি দান করে।
অন্নেন ধার্যতে সর্বং জগদেতচ্চরাচরং সমগ্র চরাচর একমাত্র অন্নদ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
অন্নের জ্বালা বড় জ্বালা একদিনে লাগে তালা পেটে ভাত না পড়লে জীবন ওষ্ঠাগত সবকিছু গোলমাল হয়ে যায়; পাaঠান্তর- অন্নের বড় জ্বালারে ভাই অন্নের বড় জ্বালা, দুই হাঁটু ঠকঠক করে কর্ণে লাগে তালা।
অন্যলোকে ভুরা (গুড়ের নিকৃষ্ট অংশ) দেয় ভাগ্যে আমি চিনি সেয়ানা লোককে ঠকানো সহজ নয়। (ভারতচন্দ্রের বিদ্যাসুন্দর কাব্যের হীরা মালিনীর উক্তি)
অন্যলক্ষিতকার্যস্য যতঃ সিদ্ধিঃ ন জায়তে যে কাজের কথা অন্যলোক আগেই জেনে ফেলে সে কাজে সাফল্য আসে না।
অন্যায় করাটা কিছুই না, যদি না তুমি সেটা সর্বক্ষণ মনে রাখো- কনফুসিয়াস অজ্ঞানে অন্যায় করলে সেটা ভুল; জ্ঞানতঃ অন্যায় করলে সেটা পাপ; পাপীই অন্যায় করার ইচ্ছা মনের মধ্যে পুষে রাখে।
অন্যে পরে কা কথা বিধাতার বিড়ম্বনায়- রামের বনবাস হয়েছিল; সীতা আগুনে পুড়েছিলেন; কৃষ্ণ অপঘাতে নারা যান; অন্যেরও তাই হবে- এর আর বেশি কথা কি।
অন্যে যার গুণ গায় সে নির্গুণ হলেও গুণী; নিজের গুণগানে ইন্দ্রও ছোট হয় গুণীলোক পরের গুণ গায়; নির্গুণ শুধু নিজের ঢাক পিটিয়ে ছোট হয়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'আপনাকে বড় বলে বড় সেই নয় লোকে যারে বড় বলে বড় সেই হয়'।
অন্যের যা খারাপ মনে কর নিজের মধ্যেও তা খারাপ মনে করতে শেখো স্বভাবদোষে মানুষ নিজের দোষ দেখে না; এটা করতে পারলে সবার মঙ্গল হত।
অন্যের মধ্যে কি দোষ আছে অন্বেষণ করো না বরং নিজের মধ্যে কি দোষ অন্বেষণ কর- কনফুসিয়াস আগে নিজেকে সংশোধন করা উচিত।
অপচয়ে লক্ষ্মীনাশ/লক্ষ্মী ছাড়ে অপচয়ে অর্থসঙ্কট দেখা দেয়।
অপদার্থ যেখান থেকে শুরু করে সেখানেই ফিরে আসে অপদার্থের কাজের নীটফল শূন্য।
অপচয়/অপব্যয় করো না, অভাবে পড়ো না আয় বুঝে ব্যয় করলে অভাব হয় না; যে কোনদিন অপচয় করে নি সে প্রয়োজনের সময় সব পায়।
অপব্যয়ে লক্ষ্মী ছাড়ে অকারণে ব্যয় করলে কুবেরের সম্পত্তিও একদিন শেষ হয়; সমতুল্য-'যে জন দিবসে মনের হরষে জ্বালায় মোমের বাতি আশু গৃহে তার দেখিবে না আর নিশিতে প্রদীপ ভাতি'।
অপমানের পরাণ সম্মানকে ডরান অতি বিনযী ও নম্রপ্রকৃতির মানুষ সম্মানকে অতি তুচ্ছ মনে করে।
অপরং বা কিং ভবিষ্যতি (যা যা ঘটার নয় তার সবই ঘটল); না জানি আর কি বা কপালে আছে; সমতুল্য- 'অদৃষ্টের লখন না যায় খণ্ডন';
অপরাধবোধের ফরিয়াদীর প্রয়োজন হয় না অপরাধী অপরাধ স্বীকার করলে অভিযোগ জানানোর প্রয়োজন হয় না।
অপরের মন্দ নিজের হিত, না করিও কদাচিৎ এইপ্রকার চিন্তাভাবনা পাপবোধের জন্ম দেয়।
অপাত্রঃ পাত্রতাং যাতি যত্রো পাত্রো ন বিদ্যতে, নিরস্ত পাদপদেশে এণ্ডোহপি দ্রূমায়তে যেখানে গুণীব্যক্তি নাই সেখানে নির্গুণব্যক্তি পূজিত হয়; যেদেশে বৃক্ষ নাই সেদেশে এরণ্ডবৃক্ষও বৃক্ষের স্বীকৃতি পায়।
অপেক্ষা কর প্রতিটি কুকুরের দিন আছে সবার জীবনেরই সৌভাগ্য বা সাফল্যের একটা সময় থাকে; যখন কোন ব্যক্তি জীবনে সৌভাগ্য বা সাফল্যের দেখা পায় না তখন এই উক্তিটি করা হয়; বিরুদ্ধ উক্তি- 'অপেক্ষার সময় শেষ হয় না'।
অপেক্ষার সময় শেষ হয় না কিছু পাবার আশায় বসে থাকলে অনন্তকাল বসে থাকতে হবে; অপেক্ষায় কার্যসিদ্ধি হয় না; অপেক্ষা করায় রাবণ স্বর্গের সিঁড়ি বানাতে পারেন নি।
অপ্রিয় সত্য কথা বলিও না অপ্রিয় সত্য কথা শুনতে কেউ চায় না।
অপ্রিয়স্য চ পথ্যস্য বক্তা শ্রোতা চ দুর্লভঃ হিতকর বাক্যের বক্তা ও শ্রোতা দুই দুর্লভ; এমন বাক্য কেউ বলতে বা শুনতে চায় না।
অবরকে/অবুঝকে বুঝাব কত বুঝ নাহি মানে, ঢেঁকিকে বুঝাব কত নিত্য ধান ভানে-প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় মুর্খকে সদুপদেশ দিতে নাই।
অবংশো পতিতো রাজা মুর্খপুত্রশ্চ পণ্ডিতঃ, অধনস্য ধনং প্রাপ্য তৃণবন্মন্যতে জগৎ অযোগ্যব্যক্তি যদি রাজপদ পায়, মূর্খের পুত্র যদি পণ্ডিত হয় এবং দরিদ্র যদি হঠাৎ বড়লোক হয় তবে তারা জগতকে তৃণের মত জ্ঞান করে।
অবলা বোলে দড়, অফলা ফলে দড় শারীরিক বল কম থাকায় অবলা মুখের বোলে তা পুষিয়ে নেয়; অবলার মুখ ছোটে বেশি; একবার বকতে শুরু করলে তাকে থামানো মুশকিল; যে গাছে ফল ধরে না সে গাছে একবার ধরলে প্রচুর পরিমাণে ফলে; পাঠান্তর- 'অবলার মুখই বল'; 'অফলা ফলে বেশি অবলা বলে বেশি'; 'আগাছার বাড় বেশি'।
অবলানাং রোদনাং বলং অবলাদের ক্রন্দনই বলস্বরূপ; কথায় বলে কেঁদে জেতা।
অবশ্যমেব ভোক্তব্যং কৃতং কর্ম শুভাশুভম শুভই হোক আর অশুভই হোক কৃতকর্মের ফল জীবকে ভুগতেই হবে।
অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা সামর্থের বাইরে কখনো যেও না; সমতুল্য়- 'আয় বুঝে ব্যয় করা'; 'ওজন বুঝে চলা'; খাট ভাঙলে ভূমিশয্যা'; 'কাপড় বুঝে জামা কাটা'; 'যখন যেমন তখন তেমন' ইত্যাদি।
অবাক করলি ভবি/রাধা অম্বলে দিলি আদা গৃহকর্মে অনিপুণ বউ কাজ থেকে অকাজ বেশি করে; যা করার নয় তাই করলে এই উক্তি করা হয়।
অবাক্ কল্লে নাকের নথে, কাজ কি আমার কানবালাতে নাকের নথেই রূপ খুলেছে তখন কানপাশার আর প্রয়োজন নেই; কুরূপার সাজসজ্জার প্রতি ব্যঙ্গোক্তি।
অবাক কলির অবতার, ছুঁচোর গলায় চন্দ্রহার অযোগ্যের হাতে উৎকৃষ্ট দ্রব্য দেখে খেদ বিস্ময় বা বেদনাপ্রকাশ।
অবিদ্যং জীবনং শূন্যং দিক্ শূন্যা চেদবান্ধবা, পুত্রহীনং গৃহং শূন্যং সর্বশূন্যা দরিদ্রতা বিদ্যাহীনের জীবন শূন্য; বন্ধুহীনের সকলদিক শূন্য, পুত্রহীনের গৃহ শূন্য আর দরিদ্রের সকলই শূন্য।
অবিবেকঃ পরমাস্পদম বিবেকশূন্যতাই সব আপদের মূল।
অবিমিশ্র সুখ হয় না শুধু ভাল হয় না; ভালমন্দ মিশিয়ে থাকে; সমতুল্য- 'আলার পিছে কালা আছে', 'কলঙ্কবিনা চাঁদ নাই'; 'কাঁটাবিনা গোলাপ/পদ্ম হয় না'; 'প্রদীপের নীচে অন্ধকার' ইত্যাদি।
অবিয়ন্তির ঠুনকোর (স্তন) ব্যথা যে নারীর সন্তান হয় নি তার স্তনে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা নেই; যা হবার নয় তা শুনলে লোকে এই প্রবাদ বলে।
অবিশ্বস্তকে বিশ্বাস করবে না; বিশ্বস্ত বন্ধুকেও অতিরিক্ত বিশ্বাস করবে না বিচার বিবেচনা না করে বিশ্বাস করা ভাল নয়; বিনা বিচারে কিছু মানা ঠিক নয়; বিরুদ্ধ উক্তি- অবিশ্বাস করে ঠকা থেকে বিশ্বাস করে ঠকা ভাল'; 'মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো মহাপাপ'।
অবিশ্বাস করে ঠকা থেকে বিশ্বাস করে ঠকা অনেক ভাল অবিশ্বাস করে ঠকলে একটি বিশ্বাসীলোককে হারাতে হয়; বিশ্বাসীলোক হাজারে একটা হয়; সুতরাং কোনভাবেই অবিশ্বাসকে মনে স্থান দেওয়া নেই।
অবুঝে/অবোধারে বুঝাব কত বুঝ নাহি মানে; ঢেঁকিরে বুঝাব কত নিত্য ধান ভানে। অজ্ঞানে সদু উপদেশ নিস্ফলা; যে কিছু বোঝে না তাকে অতিরিক্ত কিছু বোঝানো চেষ্টা বৃথা; ঢেঁকি ধানভানা ছাড়া অন্য কাজ জানে না; সমতুল্য- 'ভৈঁসকে আগে বীণ বাজাওয়ে ভৈঁশ ঠাঢ় পগুরায়'।
অবোধারে মারে বোধায়, বোধারে মারে খোদায় বোকাকে চালাক ঠকায়; চালাকলোক বিধাতার কাছে শাস্তি পায়।
অবোধের খাটনি ভারি বোকাকে বেশি খাটানো যায়; সমতুল্য-'গাধার পিঠে ভারী বোঝা'।
অবোধের গোবধে আনন্দ বোকারা দুস্কর্ম করে বেশি আনন্দ পায়; নির্বোধের পাপপূণ্য বোধ নেই।
অবোধের সাত খুন মাপ অজ্ঞানকৃত গুরুতর অপরাধও মার্জনীয়; পাগলের শাস্তি হয় না।
অবোলা চলে বড় অফলা ফলে বড় পথ চলতে চলতে যে কথা বলে না সে অনেকটা পথ যায়; যে গাছে ফল ধরে না সে গাছে একবার ফল ধরলে প্রচুর পরিমাণে ফলে।
অব্রাহ্মণের দীর্ঘফোঁটা অক্ষম বেশি ভান করে; সমতুল্য- 'ভণ্ড ব্রাহ্মণের ভড়ং বেশি'।
অভদ্রা বর্ষাকাল হরিণী চাটে বাঘের গাল; শোনরে হরিণী তোরে কই সময়গুণে সবই সই প্রচণ্ড বর্ষায় খাবারের অভাবে বাঘ মৃতপ্রায়; হরিণ এসে তার গাল চাটছে; বাঘ বলছে- ওরে হরিণ তুই আমার খাদ্য; এখন তুই এসে স্বচ্ছন্দে আমার গাল চাটছিস; মন্দভাগ্যে আমি তাই সহ্য করছি; মন্দসময়ে প্রবলব্যক্তি অসহায় হয়ে পড়লে দুর্বলব্যক্তিও তাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে; সমতূল্য- 'হাতি কাদায় পড়লে চামচিকেতে লাথি মারে'।
অভাগা চোর যে বাড়ী যায় হয় কুকুর ডাকে নয় রাত পোহায় ভাগ্য অভাগাকে সবদিক থেকেই মারে।
অভাগা যায় বঙ্গে, কপাল যায় সঙ্গে যেখানেই যাও না কেন অদৃষ্টও তোমার সঙ্গে সঙ্গে যাবে; সমতুল্য- 'অভাগা যেদিকে চায় সাগর শুকায়ে যায়'; 'পোড়া কপাল জোড়া লাগে না'; 'ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'আম যাই বঙ্গে, কপাল যায় সঙ্গে'।
অভাগা যদ্যপি/যেদিকে চায় সাগর শুকায়ে যায়১ ভাগ্য নিতান্ত মন্দ হলে অভাগা কোনোদিক থেকেই সাহায্য পায় না; বিত্তশালীরাও মুখ ফিরিয়ে নেয়।
অভাগা যদ্যপি/যেদিকে চায় সাগর শুকায়ে যায়২ অভাগা যাতেই হাত দেয় তাতেই ব্যর্থ হয়।
অভাগার গরু মরে শকুনের ভাগ্য বাড়ে একজনের ক্ষতি হলে অবশ্যই অন্য একজনের লাভ হয়; সমতুল্য- কারও পৌষমাস কারও সর্বনাশ'।
অভাগার গরু মরে ভাগ্যবানের বউ/মাগ মরে গরু মরলে মূলধনের ক্ষতি, সেই অর্থে মালিক অভাগা; বউ মরলে দ্বিতীয়বার বিয়ে করে অর্থলাভ হয়, সেই অর্থে পুরুষ সৌভাগ্যবান।
অভাগার যমও নেই এমনই দুর্ভাগ্য যে মরে একটু শান্তি পাবে শে তারও উপায় নেই; যম তাকে সেই সুযোগ দেয় নাই; জীবনযন্ত্রণায় বিদ্ধস্ত ব্যক্তিমন চিরঘুমে শান্তি খোঁজে।
অভাগার হারাবার কিছু নাই যার কিছু নাই তার কিছু হারাবার ভয় নাই।
অভাগীর লগনে চাঁদ নাই গগনে অভাগীর ভাগ্যাকাশে পূর্ণিমার চাঁদ থাকে না থাকে শুধু অমাবস্যার অন্ধকার।
অভাগিনী দুয়ো, নেটি পেটি সুয়ো কোন লোকের দুই স্ত্রী থাকলে সুয়ো স্বামী সোহাগিনী হয় এবং দুয়ো অভিমানী হয়ে পড়ে।
অভাগিনীর দুটি পুত একটি দানা একটি ভূত সৌভাগ্যবতীর পুত্র হয়; কিন্তু দুটো পুত্রই যদি বদ হয় তবে সে নারী অভাগিনী ছাড়া আর কিছু নয়।
অভাব যখন দুয়ারে এসে দাঁড়ায় ভালবাসা তখন জানলা দিয়ে পালায়- সেক্সপিয়র অভাব মনের সব সুকুমার অনুভূতি নষ্ট করে।
অভাবে স্বভাব নষ্ট অভাব হলে অবস্থার চাপে ভালো মানুষও অসৎ হয়; সৎ থাকা খুবই কষ্টকর; সমতুল্য- 'স্বভাবে করে না অভাবে করে'।
অভাবের সময়ের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু কঠিন সময়ে প্রকৃতবন্ধুর কাছ থেকে সৎ পরামর্শ পাওয়া যায়।
অভাবে স্বভাব নষ্ট মুখ নষ্ট বরণে; ঝরায় ক্ষেত নষ্ট স্ত্রী নষ্ট মারণে। অভাব মানুষকে নষ্ট করে; ব্রণ মুখের শ্রী নষ্ট করে; ঝড় চাষ নষ্ট করে এবং মারধোর করলে স্ত্রী নষ্ট হয়।
অভিজ্ঞতা হল চিরুনীর মত, সব চুল পড়ে গেলে প্রকৃতি যা আমাদের দেয় জীবনযন্ত্রণায় পোড় খেতে খেতে মানুষ অভিজ্ঞ হয়।
অভিজ্ঞতায় মানুষ বিজ্ঞ হয় অভিজ্ঞতায় পোড় খাওয়া লোক সহজে বোকা হয় না।
অভিমানে বলির পাতালে হল ঠাঁই বড় দাতা বলে বলির অভিমান ছিল; তাই বামনরূপী নারায়ণ তাঁকে পাতালে ঠেলে পাঠান।
অভেদাত্মা হরিহর অভিন্নহৃদয়ের দুইবন্ধু; পুরাণে হরি এবং হর অভেদাত্মা বলে বর্ণিত।
অভ্যাস অভ্যাস সারায় বাজে অভ্যাস সারাতে হলে ভাল অভ্যাস করা চাই।
অভ্যাস দড়ির মত আমরা প্রতিদিন দড়ি পাকাই এবং শেষপর্যন্ত সেটা ছিঁড়তে পারি না অভ্যাস ছাড়া বড় কঠিন; বদ অভ্যাস হলে তো কথাই নেই; সমতুল্য- অভ্যাস দ্বিতীয় প্রকৃতি
অভ্যাস দোষ না ছাড়ে চোরে শূন্য ভিটায় মাটি খোঁড়ে মানুষ অভ্যাসের দাস; অভ্যাস একক্সময় স্বভাবে দাঁড়ায়; কোন মানুষ অভ্যাসের বশবর্তী হয়ে কোন বদকাজ করলে ব্যঙ্গ করে এই উক্তি করা হয়; সমতুল্য- 'কুকুরের আড়াই পাক'; 'বিড়ালের তিন পা' ইত্যাদি।
অভ্যাস দ্বিতীয় প্রকৃতি অভ্যাস থেকেই মানুষের স্বভাব গড়ে ওঠে।
অভ্যাস প্রথমে মাকড়সার জাল শেষে মোটা রশি অভ্যাস শেষে প্রকৃতিতে পরিণত হয় যা ছাড়া কঠিন।
অভ্যাসহীন বিদ্যা বিষতুল্য অধিতবিদ্যার চর্চা না হলে তার ফল নেই।
অভ্যাসে সয় অনভ্যাসে নয় অনায়াসে কিছু হয় না; অভ্যাসেও আয়াস লাগে; সম্পর্কীত প্রবাদ- শরীরের নাম মহাশয়, যা সহাইবে তাই সয়'।
অভ্যুথানাং হি পতনায় বৃদ্ধি হলে পতন হবে; বৃদ্ধি পতনের মূল কারণ; তুলনীয়- 'অতি বাড় ভাল নয়'।
'অমানিশায় অন্ধকার ঘরে অনুপস্থিত অসিত অশ্বডিম্বের অন্বেষণ নিস্ফল প্রচেষ্টা; যা হবার নয়; লক্ষনীয়- এটি একটি অসাধারণ অ-এর অনুপ্রাস; সমতুল্য- 'অন্ধকার ঘরে কালো বেড়াল খোঁজা'।
অমাবস্যায় আর পূর্ণিমায় যেবা ধরে হাল তার দুঃখ থাকে চিরকাল; তার বলদের হয় বাত, ঘরেতে না থাকে ভাত- খনা অমাবস্যায় আর পূর্ণিমায় হাল ধরতে নেই; যে ধরে তার ঘরে চিরকাল দুঃখ বাঁধা থাকে; বাতে বলদ কাবু হয়; নানাকারণে তার চাষ নিস্ফল হয়; ঘরে অন্নাভাব দেখা দেয়।
অমাবস্যার চাঁদ অমাবস্যায় আকাশে চাঁদ ওঠে না, অদৃশ্য থাকে; দুতরাং- অসম্ভব ঘটনা; কোন অসম্ভব ঘটনা বর্ণনা করা হলে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়।
অমাবস্যার প্রদীপ টিপটিপ করে১ ঘোর অন্ধকারে প্রদীপের টিমটিমে আলো যথেষ্ট নয়।
অমাবস্যার প্রদীপ টিপটিপ করে২ ঘোর বিপদে মৌখিক সান্ত্বনা যথেষ্ট নয়।
অমৃত ও বিষ উভয়েরই আকর জিভ জিভ থেকেই অমৃত উৎপন্ন হয়; বিষও উৎপন্ন।
অমৃত না জানি কি পদার্থ খেয়ে দেখি না জল না-ব্যবহার-করা দ্রব্য নিয়ে কতই-না ভ্রান্তধারণা থাকে; ব্যবহারে ধরা পড়ে যে এদের অনেকগুলিই অতি সাধারণ বস্তু; সমতুল্য- 'গঙ্গা গঙ্গা না জানি কত রঙ্গা চঙ্গা'।
অমৃতং বালভাষিতম শিশুর কথা বড়ই শ্রুতিমধুর; তাদের অসংযত কথাবার্তাও কারো বিরক্তি উদ্রেগ করে না।
অমৃতং সুভাষিতম সুবচন/সুভাষিত বচন অমৃতসমান।
অমোঘাঃ পশ্চিমে মেঘাঃ পশ্চিমদিকে মেঘ হলোে বৃষ্টি হবেই; শীতকালে পশ্চিমীঝঞ্ঝায় বৃষ্টিপাত হয়।
অম্বল, কম্বল, ডম্বল তিন শীতের সম্বল টক, কম্বল ও ব্য়াযাম তিন থাকলে শীত কাবু থাকে।
অযথা বিপদের মধ্যে যাওয়া যুক্তিযুক্ত নয় বিপদ এড়িয়ে চলা বুদ্ধিমানের কাজ।
অরগুণ নাই বরগুণ আছে অন্তর্গুণ নেই বহির্গুণ আছে; কোন ভালগুণ নেই, শুধু মন্দগুণ আছে; দুঃখনাশের গুণ নেই, শুধু দুঃখবৃদ্ধির গুণ আছে; সমতুল্য- 'আরগুণ নাই ছারগুণ আছে'।
অরণ্যে রোদন করা নিস্ফল প্রার্থনা করা; বৃথা কান্নাকাটি করা; সমতুল্য- 'পাথরে মাথা ঠোকা'।
অরণ্যে শৃগালঃ ধূর্তং পক্ষী ধূর্তং বায়সাঃ। নরানাং নাপিত ধূর্তং দেব ধূর্তং নারদা। (চাণক্য) বনে শিয়াল ধূর্ত; পাখীদের মধ্যে কাক ধূর্ত; মানুষের মধ্যে নাপিত ধূর্ত এবং দেবতাদের মধ্যে নারদ ধূর্ত।
অরসিকেষু রসস্য নিবেদনম রসের কথা শুধু রসিককেই বলা যায়; অরসিককে বলা অর্থহীন; নির্গুণের কাছে গুণের কোন কদর নেই; সমতুল্য- 'উলুবনে/বেনাবনে মুক্তা ছড়ানো'; 'ভৈঁসকে আগে বীণ বাজাওয়ে'।
অরসিকেষু রসস্য নিবেদনম শিরসি মা লিখ মা লিখ মা লিখ কবি দুঃখ করে বলেছেন- হে বিধাতা তুমি আমার অদৃষ্টে অন্য যতপ্রকার দুঃখ আছে দাও কিন্তু অরসিকলোকের কাছে রসের নিবেদনরূপ দুঃখ আমার অদৃষ্টে লিখিও না, লিখিও না, লিখিও না।
অরাঁধুনির হাতে পড়ে কই/রুই মাছ কাঁদে; না জানি রাঁধুনি আমার কেমন করে রাঁধে রাঁধুনী ভাল না হলে কইমাছের ঝাল বা রুইমাছে কালিয়া বিস্বাদ হয়ে যায়; উত্তমবস্তু পেতে গেলে উপযুক্ত লোককে দায়িত্ব দিতে হবে।
অরুচির অম্বল, শীতের কম্বল; বর্ষার ছাতি, ভটচায্যির পাঁতি (পুথি) অরুচিতে অম্বল খুব কার্যকরী; শীতকালে কম্বল খুব প্রিয়; বর্ষাকালে ছাতা অবশ্য প্রয়োজনীয়; ব্রাহ্মণ/পণ্ডিতের ক্রিয়াকর্মে পুথি অপরিহার্য।
অর্থং অনর্থং ভাবয় নিত্যং সবসময় ভাবো অর্থই অনর্থের কারণ/মূল।
অর্থ অর্থ আনে/টানে অর্থই সবকিছুর উৎস; সমতুল্য- 'টাকা টাকা বল ভাই টাকার মত জিনিস নাই টাকাবিনে সংসারেতে সব যন্ত্রণা'; বিরুদ্ধ প্রবচন- 'অর্থই অনর্থের মূল'।
অর্থ তোমার নয় আমার নয়, অর্থ প্রয়োজনের সার্থক কাজে না লাগলে সে অর্থ থাকা না-থাকা সমান।
অর্থ থাকলে অভাবের অভাব হয় অভাবের অভিজ্ঞতা না থাকলে সম্পদের প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব বোঝা যায় না; অর্থশালীরা বোঝে না অভাবের প্রয়োজনীয়াতা কি।
অর্থ নষ্ট কিছুই নষ্ট নয়; স্বাস্থা নষ্ট সামান্য নষ্ট; চরিত্র নষ্ট তো সব নষ্ট চরিত্র হল মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ; চরিত্রের জোরে মানুষ সোজা দাঁড়ায়।
অর্থ নিজেই শয়তানকে কিনতে পারে অর্থের অপরিসীম শক্তি।
অর্থবিনা জীবন বৃথা, অর্থসহ জীবন সুখের নয় অর্থ থাকা বা না-থাকা উভয়ই সমান, উভয়ই দুঃখের কারণ হয়; সমতুল্য- 'অর্থই অনর্থের মূল'।
অর্থ যার মামলা/শক্তি তার অর্থ সব যায়গায় আধিপত্য বিস্তার করে।
অর্থই অনর্থের মূল অর্থের কারণে, অর্থের জন্য এবং অর্থদ্বারা যত গণ্ডগোল হাঙ্গামার সৃষ্টি হয়;
অর্থতুরাণাং ন গুরুঃ ন বন্ধুঃ অর্থলোলুপ ব্যক্তির গুরু বা বন্ধু কেউ নেই।
অর্থনাশং মনস্তাপং গৃহে দুশ্চরিতানি চ, বঞ্চনঞ্চাপমানঞ্চ মতিমান্ ন প্রকাশয়েৎ ধনক্ষয়, মনঃকষ্ট, ঘরের দুরাচার, বঞ্চনা ও অপমানের কথা প্রাজ্ঞ অন্যের কাছে ব্যক্ত করে না।
অর্থশালীর কাছে আইন আকাশের মত, অর্থহীনের কাছে আইন মাকড়সার জালের মত বড়লোক আইনে জালে জড়ায় না; গরিবলোক আইনের জালে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যায়।
অর্থস্য পুরুষো দাসঃ, দাসস্ত্বর্থো ন কস্যচিৎ অর্থ কারো দাস নয় বরং পুরুষই অর্থের দাস।
অর্থে যে সমস্যার সমাধান হয় সেটা সমস্যা নয়, পণ্যমুল্য সমস্যার কেনাবেচা হয় না।
অর্থেন সর্বে বশাঃ অর্থদ্বারা সকলকেই বশ করা যায়।
অর্থের অপ্রতুলতার জন্য সবাই অভিযোগ করে, বুদ্ধির অপ্রতুলতার জন্য কেউ অভিযোগ করে না সবাই ভাবে সে বেশি বুদ্ধি ধরে; সুতরাং অভিযোগ জানানোর কোন প্রশ্নই নেই।
অর্ধসত্য মিথ্যা অপেক্ষা ভয়ঙ্কর আলো-আঁধারে ধাঁধা বেশি হয়।
অর্ধেক বললে গাধাও বোঝে, সব বললে কে না বোঝে? সবাই বুঝনদার; কিছু বোঝে না- এমন কেউ নেই।
অর্ধো ঘটো ঘোষোমুপৈতি নুনম কলস আধা-পূর্ণ হলেই শব্দ করে; অল্পবিদ্যানেরা বেশি বিদ্যার জাহির করে; সমতুল্য- 'উনা কলসীর দুনা শব্দ'।
অলকার তিলক সার অলকা-তিলকা বৃথাই গেল কাজে এলো না।
অলক্ষ্মীর দ্বিগুণ ক্ষুধা অলক্ষ্মীর একটাই কাজ- পড়েপড়ে শুধু খাওয়া; অন্নহীনের খিদে প্রবল হয়।
অলক্ষ্মীর নিদ্রা বেশি কাঙালের ক্ষুধা বেশি অলক্ষ্মীরা শুধু পড়ে পড়ে ঘুমায়; কাঙাল শুধু খাই খাই করে।
অলভ্যের বাণিজ্যে কচকচিই সার যে কাজে লাভ নেই সেখানে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকে ।
অলমতিবিস্তরেণ আর বেশি বলার বা লেখার কিছু নেই; বাহুল্যে প্রয়োজন নেই; পাঠান্তর- 'অলম অতি বিস্তরেণ'।
অলমিতিবিস্তরেণ অধিক কি লিখিব; এখানেই লেখা শেষ করছি; পাঠান্তর- 'অলম ইতি বিস্তরেণ'।
অলস ভেড়া ভাবে তার পশম বড় ভারী অলস একটু ভারও বইতে নারাজ; অলসের ফিরে শুতেও কষ্ট হয়।
অলস মস্তিষ্ক শয়তানের বাসা কিছু করার না থাকলে অকাজ করার চিন্তা সবসময় মাথায় ঘুরঘুর করে, যত উদ্ভটরকমের চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খায়; বিরুদ্ধ উক্তি- 'অলসতা মনে জং ধরায়'।
অলসতা দারিদ্র ডেকে আনে কাজ না করায় অন্ন জোটে না; কষ্ট ছাড়া কেষ্ট নাই।
অলসতা মনে জং ধরায় চিন্তাভাবনা করার ইচ্ছা মনে জাগে না।
অলসস্য কুতো বিদ্যা, অবিদ্যাস্য কুতো ধনম্‌, অধনস্য কুতো মিত্রম্‌, অমিত্রস্য কুতো সুখম্‌ অলসের বিদ্যা কোথায়; অবিদ্যার ধন কোথায়; নির্ধনের বান্ধব কোথায় এবং নির্বান্ধবের সুখ কোথায়?
অলসব্যক্তি বাকপটুতায় নিরলস অলসব্যক্তি বকে বেশি।
অলসের অন্ন জোটে না অলসের ভাগ্য অলসের মতই শুয়ে থাকে।
অলসের অলব্ধ-লাভ হয় না অলসের প্রাপ্তি শূন্য
অল্প আগুনে গা গরম হয়; বেশি আগুনে ঘর পোড়ে সব বিষয়ে মাত্রাজ্ঞান থাকা দরকার; সম্পর্কীত প্রবাদ- ভাল নয় অতিশয়'; 'সর্বম অত্যন্তম গর্হিতম্‌'; পাঠান্তর- 'অল্প আগুনে শীত হরে, বেশি আগুন পুড়িয়ে মারে'।
অল্পকথাতেই জ্ঞানীরা বোঝে জ্ঞানীরা সারসংক্ষেপ পছন্দ করে।
অল্প খেলে বেশি খাবে, বেশি খেলে অল্প খাবে অল্প খেলে আয়ু বেশি দিন হয় ফলে বেশি দিন ধরে খাওয়া যায়।
অল্পগর্জনে অতিবৃষ্টি/ভারীবর্ষণ কাজের লোকেরা কম কথা বলে; বাজে লোকের বেশি কথা বলে।
অল্পজলে সফরি ফরফরায়তে অল্পবিদ্যার অধিকারীরাই বেশি বিদ্যা জাহির করে; অল্পজ্ঞানীরা অহঙ্কারী হয়।
অল্পজলে পুঁটিমাছ ফরফর করে; অগাধজলে কাৎলামাছ নিঃশব্দে সরে অল্পজ্ঞানীদের অহঙ্কার বেশি হয় এবং সেই অহঙ্কারে কথাবার্তায় জাহির করে; জ্ঞানীরা নিঃশব্দে কাজ সারে।
অল্পজলের মাছ১ অসারব্যক্তি
অল্পজলের মাছ২ চঞ্চলপ্রকৃতির লোক
অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী সামান্য বিদ্যা খুব ক্ষতিকর কারণ এতে অহংকার জন্মে অথচ প্রকৃত পাণ্ডিত্য লাভ হয় না; অল্প লেখাপড়া জানা ব্যক্তিরা অতিদর্প দেখায়; এরা যেখানেই হাত দেয় সেখানেই অনর্থ বাঁধায়।
অল্পবৃষ্টিতে কাদা বেশিবৃষ্টিতে সাদা১ অল্পজ্ঞানীর ভাবনাচিন্তা অসচ্ছ হয়; জ্ঞানীপুরুষের ভাবনাচিন্তা সচ্ছ হয়।
অল্পবৃষ্টিতে কাদা বেশিবৃষ্টিতে সাদা২ অল্পকান্নায় শোক বৃদ্ধি পায়, কিন্তু টানাকান্নায় শোকের অনেকটা লাঘব হয়।
অল্পশোকে কাতর অধিকশোকে পাথর অল্পশোকে মানুষ হা-হুতাশ করে, কিন্তু বেশি শোকে শোক প্রকাশের পথ না পেয়ে দুঃখী মূক, নিথর বা নিঃসাড় হয়ে যায়।
অশক্তস্তস্করঃ সাধুঃ কুরূপা চ পতিব্রতা চুরি করতে অক্ষম হলে চোর সাধু হয়; নারী কুরূপা হলে পতিব্রতা হয়; এককথায় নাচারে পড়ে লোক সৎপথে যায়; সমতুল্য- 'কারে পড়ে আল্লার নাম'; 'কারে পড়ে গঙ্গাস্নান'; 'ঠেলায় পড়ে ঢেলায় প্রণাম' ইত্যাদি।
অশুভস্য কালহরনম অশুভ কাজে কালক্ষেপণ কর্তব্য।
অশ্ন তে স হি কল্যাণং ব্যসনে যো ন মুহ্যতি যে ব্যক্তি বিপদে মুহ্যমান হয় না সে শ্রেয় প্রাপ্ত হয়।
অশ্বডিম্ব অসম্ভব ব্যাপার, যা হয় না; সমতুল্য- আঁটকুড়ের ব্যাটা, আকাশকুসুম, এঁড়ে গরুর দুধ, কাঁঠালের আমসস্ত্ব, ঘোড়ার ডিম, পশ্চিমে সূর্যোদয়, ভস্মকীট, সোনার পাথরবাটি, সোনার হরিণ; সাপের পাঁচ-পা ইত্যাদি
অশ্বতরী (গাধী) গর্ভ ধরে আপন মরণে ধারণা করা হয় যে গর্ভবতী অশ্বতরী সন্তানপ্রসবের সময় যন্ত্রণায় মৃত্যুমুখে পতিত হয়; এ যেন ইচ্ছা করে বিপজ্জনক কাজে অগ্রসর হওয়া; বিপজ্জনক কাজে অগ্রসর হলে বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী।
অশ্বত্থামা হত ইতি গজ অসত্যকে কৌশলে সত্যরূপে প্রকাশ করা; সত্যের আড়ালে মিথ্যা কথন; সব কথা না বলে কিছু কথা গোপন করা; মহাভারতে যুধিষ্ঠিরের একবারমাত্র মিথ্যাভাষণের উল্লেখ আছে।
অশ্বত্থের ছায়াই ছায়া, মায়ের মায়াই মায়া অশ্বত্থগাছ বিরাট ও বিশাল; তার ছায়া সুশীতল; আশ্রয় নিতে হলে অশ্বত্থগাছে মত মহতের কাছে নিতে হয়; মায়ের স্নেহ ও মমতারও কোন তুলনা হয় না; আসলের কাছেই আসল জিনিস পাওয়া যায়।
অসংভাব্যং ন বক্তব্যং প্রত্যক্ষমপি দৃশ্যতে অসম্ভব ঘটনা স্বচক্ষে ঘটতে দেখলেও বলা উচিত নয়।
অসৎ আনন্দের চেয়ে পবিত্র বেদনা অনেক ভালো কোন মন্দই ভালো নয়।
অসৎ কাজের অসৎ পরিণতি হয় অশুভকাজের ফল শুভ হয় না; সমতুল্য- 'যেমন কর্ম তেমন ফল'; পাঠান্তর- 'অসৎকাজের বিপরীতফল'।
অসৎপথের আয় অসৎপথেই যায় অসৎপথের আয়ের সঠিক ভোগ হয় না; সমতুল্য- 'উৎপাতের আয় চিৎপাতে যায়'; 'পাপের ধন প্রায়শ্চিত্তে যায়' ইত্যাদি।
অসৎ সঙ্গ থেকে নিঃসঙ্গতা ভাল দুর্জনের সংসর্গ কাম্য নয়; সমতুল্য- 'দুষ্ট গরু থেকে শূন্য গোয়াল ভাল'; বিরুদ্ধ প্রবাদ- 'নেই-মামার চেয়ে কানামামা ভালো'।
অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ; সৎসঙ্গে স্বর্গবাস সঙ্গদোষে মানুষ নষ্ট হয়; সঙ্গগুণে সম্মান বৃদ্ধি পায়।
অসতী নারী, ফুটো হাঁড়ি ও ভগ্নপ্রায় বাড়ী পরিত্যজ্য তিনই বিপদ ডেকে আনতে পারে।
অসতো মা সদ্গময় তমসো মা জ্যোতির্গময় মৃত্যোর্মা অমৃতং গময় আমাকে নিয়ে চলো অসত্য থেকে সত্যে, অন্ধকার থেকে আলোকে, মৃত্যু থেকে অমৃতে।
অসত্য ও ছলনার মাধ্যমে লাভবান হওয়া থেকে সত্য ও সঠিক পথে থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ভাল অসৎপথে লাভবান হওয়া ন্যায়ের পথ নয়।
অসন্তুষ্টা দ্বিজা নষ্টা দ্বিজ অসন্তুষ্ট হলে বিনষ্ট হয়।
অসময়ের দিনগুলি দীর্ঘতর হয় অসময়ের দিনগুলি কাটতেই চায় না।
অসময়ের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু প্রয়োজন বন্ধুত্ব বিচারের কষ্টিপাথর; প্রয়োজন না হওয়া পর্যন্ত বন্ধু চেনা যায় না।
অসময়ে সকলি সই, শোনরে দুঃখ তোরে কই দুর্ভাগ্যের সব ফের গা-সহা হয়ে গেছে।
অসম্ভব কোন কাজ বলা সহজ করা কঠিন বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধা বলা সহজ, করা কঠিন।
অসম্ভবের পিছনে ছোটো না যা হয় না তা পাওয়ার চেষ্ঠা করা বৃথা।
অসম্মানীয় ব্যক্তি অপরকে অসম্মান করে যার সম্মানবোধ নেই সে কাউকে সম্মান করতে জানে না
অসহ্যং জ্ঞাতিদুর্ব্বাক্যং মেঘান্তরিত রৌদ্রবৎ জ্ঞাতিজনের দুর্বাক্য মেঘমুক্ত আকাশের রৌদ্রতাপের মতই অসহ্য।
অসাধারণ জ্ঞানীরা অবোধ বলে প্রতিভাত হয় অতিজ্ঞানীদের কাণ্ডজ্ঞান কম হয়; ধরণধারণ একটু বিপরীত হয়।
অসারে খলু সংসারে সারমেতচ্চতুষ্টয়ম। কাশ্যাংবাসঃ সতাং সঙ্গো গঙ্গাম্ভ শিবপূজনম।। অসার এই সংসারে মাত্র চারটি সার বস্তু আছে, যথা- কাশীবাস, সাধুজনের সঙ্গলাভ, গঙ্গাজল ও শিবপূজা।
অসারে খলু সংসারে সারং শ্বশুরমন্দিরম্‌ অসার সংসারে সার শ্বশুরের ঘর; কৌতুকে- জামাই আদরের কথা বলা হয়েছে।
অসারে জলসার১ সার না থাকলে জলই সারের কাজ করে।
অসারে জলসার২ যখন আর কোন আশা নেই তখন কোন উপায় অবলম্বন করে কার্যসিদ্ধি করার চেষ্টা।
অসারের তর্জন গর্জন সার১ গুণহীন অক্ষম ব্যক্তিরা বৃথা আস্ফালন করে; 'গুণহীনের গুণহীন নয়' প্রমাণের বৃথা চেষ্টা;
অসারের তর্জন গর্জন সার২ ক্ষমতাহীন ব্যক্তি সাধারণতঃ আস্ফালন বেশী করে; আসলে অনেক ক্ষমতা ধরে বোঝানোর ব্যর্থ প্রয়াস; সমতুল্য- 'ফাঁকা কলসি বাজে বেশি','ফোঁপরা ঢেঁকির চোপর বেশি' ইত্যাদি।
অসি থেকে মসী বড় পেশীর জোর থেকে বুদ্ধির জোর বেশি; বিরুদ্ধ প্রবাদ- 'কথার চেয়ে কাজের গলার জোর বেশি'।
অসৈরণ সইতে নারি অসহ্য ব্যাপার সহ্য হয় না।
অস্তি নাস্তি না জানন্তি দেহি দেহি পুনঃপুনঃ আছে কি নেই ভাবে না, কেবল বলে দাও দাও; প্রবাদটি অতিথি শিশু ও স্ত্রীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
অস্থানে তুলসী অপাত্রে রূপসী উৎকৃষ্ট বিষয়ের অপব্যবহার; অপবিত্র জায়গায় তুলসীগাছ মানানসই নয়; তেমনি কোন সুন্দরী নারীর অযোগ্য/অসুন্দর বরের সাথে বিয়ে হলে তা মানানসই হয় না; সমতুল্য- 'বানরের গলায় মুক্তোর মালা'।
অস্থির চিত্ত প্রতিষ্ঠা পায় না অশান্ত মনে কার্যসিদ্ধি হয় না।
অস্থির পতঙ্গ আগুনে পোড়ে অস্থিরচিত্তের প্রতিষ্ঠা নেই; অস্থির মন নানাদিক থেকে বিপদে পড়ে; পাঠান্তর- 'অস্থির পোকা জালে পড়ে'; 'অস্থির বাঘ জালে পড়ে'।
অস্থির মধ্যে যা পুষ্ট তা মাংস ভেদ করে বাইরে আসে না সযত্নে লালিত বিষয় নষ্ট হয় না।
অহংকারীরা অল্পজ্ঞানী হয় অল্পজ্ঞানীরা বিনয় কি বস্তু জানে না।
অহংকারে গদগদ, মাটিতে পড়ে না পদ অহংকারীরা সাধারণ মানুষকে মানুষ বলে গ্রাহ্য করে না।
অহংকার পতনের মূল অহঙ্কারে পতন অনিবার্য; পাঠান্তর- 'অহঙ্কার পতন ডেকে আনে'; 'অহঙ্কারে ছারখার'।
অহংকারে পথ দেখতে পায় না অহংকারীর বিচারশক্তি থাকে না; গর্বী মানুষ মাথা উঁচু করে হাঁটে; নীচের দিকে পথ চেয়ে চলে না; ফলে সে পথ দেখতে পায় না।
অহন্যহনি ভূতানি গচ্ছন্তি যমমন্দিরম, শেষা স্থিরত্বমিচ্ছন্তি কিমাশ্চর্যমতঃপরম প্রতিদিন মানুষ যমালয়ে যাচ্ছে দেখেও অবশিষ্টরা ভাবে তাদের মৃত্যু হবে না; এর থেকে আশ্চর্যের আর কি হতে পারে?
অহিংসা পরমো ধর্মঃ দয়াই শ্রেষ্ঠ ধর্ম; কারো হিংসা না করা বা অনিষ্ট না করাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম।
অহিতে বিপরীত খারাপ হতে গিয়ে ভাল হয়ে যাওয়া; দুর্ভাগ্য অনেক স্থলে সৌভাগ্যের কারণ হয; সমতুল্য- 'শাপে বর'; বিপরীত উক্তি- 'হিতে বিপরীত'।

প্রবাদ-প্রবচন অর্থ
আইতেও একা যাইতেও একা কার সঙ্গে বা কার দেখা কেউ কারো নয়; কেউ কারো সঙ্গে আসে না এবং কাউকেও সঙ্গে নিয়েও যায় না।
আইতে ছাগল যাইতে পাগল দেরী সয় না; বড় তড়বড়ে।
আইতে শাল যাইতে শাল তার নাম বরিশাল বরিশালের একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াত করতে গেলে শালতি ছাড়া সম্ভব নয়।
আইন বিত্তশালীর কাছে আকাশের মত বিত্তহীনের কাছে মাকড়সার জালের মত আইন বড়লোকদের রক্ষা করে এবং গরিবদের সংহার করে।
আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানো আইনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে অবৈধ কাজে লিপ্ত থাকা।
আইবুড়ো নাম খণ্ডানো/ঘুচানো বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়া সত্বেও বিবাহিত/বিবাহিতা না হওয়ার কালিমা ঘুচানো
আউশধানের চাষ লাগে তিনমাস- খনা রোপণের তিনমাসের মধ্যে আউশধান ঘরে তোলা হয়।
আওয়াজওয়ালা বিড়াল ইঁদুর ধরে না ধীরস্থির না হলে কাজে সাফল্য আসে না; সমতুল্য- 'চিল্লানে কুত্তা কামড়ায় না'।
আওলে (অস্থির) বাঘ জালে পড়ে অস্থির মন সমস্যায় জড়ায়।
আঁখ কে অন্ধে গাঁট কে পুরে মুর্খ ধনবান, টাকার বেলায় টনটনে জ্ঞান।
আঁখ কে অন্ধে নাম নয়নসুখ গুণহীনকে গুণবান করার হাস্যকর প্রয়াস; সমতুল্য- 'কানাছেলের নাম পদ্মলোচন';'কালোছেলের নাম গৌরাঙ্গসুন্দর'ইত্যাদি।
আঁচ আছে আগুন নাই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন।
আঁটকুড়ের ব্যাটা/পুত নিঃসন্তানের সন্তান অসম্ভব ব্যাপার; থাকলে নিশ্চয়ই সে অবৈধ সন্তান- ভাবার্থে জারজসন্তান বলে গালি
আঁটকুড়েরা মানুষ নয় নিঃসন্তানের বাৎসল্যবোধ থাকে না।
আঁটাআঁটি হলেই লাঠালাঠি হয় মন কষাকষি হলেই ঝগড়াঝাটিতে পরিণত হয়।
আঁটি চোষা পদার্থের সার অংশ থেকে বঞ্চিত হওয়া; অসার কাজে ব্যস্ত থাকা।
আঁটুনিকসুনি সার কেবল সরগরম করা; কাজের কিছুই নয়।
আঁত পাওয়া ভার মনের অন্ত পাওয়া ভার; মনোভাব বোঝা কঠিন।
আঁতে ঘা দেওয়া অন্তরে আঘাত দেওয়া; মর্মপীড়া দেওয়া।
আঁতর টান নাড়ির টান; রক্তের টান।
আঁধার ঘরের মাণিক পরম আদরের সন্তান।
আঁস্তাকুড়ের পাত কখনো স্বর্গে যায় না১ নীচ কখনও উচ্ভাচপদ প্সায় না।
আঁস্তাকুড়ের পাত কখনো স্বর্গে যায় না১ মন্দব্যক্তি ভালসঙ্গ পায় না।
আকন্দে যদি মধু পাই তবে কেন পর্বতে যাই সহজে কিছু পেলে কেউ কষ্ট স্বীকার করতে চায় না; সমতুল্য-'আমড়াতলায় আম পেলে, আমতলায় কেবা যায়'; 'হাতে যদি ফল পাই তবে কেন আঁকুশি চাই'।
আকস্মিকপ্রাপ্তি কাকতালীয়, দৈবঘটনা নয় অকারণে কিছু হয় না; বিধি পুরুষাকারের জন্য অপেক্ষা করে; বিরুদ্ধ প্রবচন-'কাশীধামে কাক মরেছে কালিঘাটে/কুমিল্লাতে হাহাকার
আকাটা নায়ের সাজ বেশি নৌকা তৈরী হওয়ার আগেই সাজসঞ্জাম প্রস্তুত; বেশি বাড়াবাড়ি; তুলনীয়- 'ডোলি না কাহার বিবি বৈঠা হায় তৈয়ার'; রামের আগে রামায়ণ;
আকামের মাঝু কদু কুটনের যম। অকর্মা বউ লাউ কুটতে খুব ওস্তাদ।
আকালে কিনা খায় পাগলে কি না কয়/বলে আকালে সবাই সবকিছু খায়, বাচবিচার করে না; পাগলেও না বুঝে বাচ্য অবাচ্য অনেক কথা বলে; অজ্ঞানের কথাবার্তা না ধরাই শ্রেয়।
আকালে কিনা খায়, বিবাদে কিনা যায় দুর্ভিক্ষে খাবারের বাছবিচার চলে না; ঝগড়াবিবাদে জড়ালে অর্থ, সুখ, শান্তি- সবই নষ্ট হয়।
আকালের ভাতযুগের খোঁটা অসময়ে কোন উপকার করে সারাজীবন ধরে তারজন্য কথা শোনানো হলে এই প্রবাদ বলা হয়।
আকাঙ্ক্ষার কোন শেষ/সীমা নাই চাওয়ার কোন শেষ নেই; একটা মিটলে আরেকটা এসে উপস্থিত হয়।
আকাশকুসুম কল্পনা যে চিন্তা কোনদিন বাস্তবায়িত হবে না; অসম্ভব ব্যাপার যা হবার নয়; সমতুল্য- অশ্বডিম্ব; এঁড়েগরুর দুধ; কাঁঠালের আমসস্ত্ব; ঘোড়ার ডিম; পশ্চিমে সূর্যোদয়; ভস্মকীট; সোনার পাথরবাটি; সোনার হরিণ; সাপের পাঁচ-পা ইত্যাদি।
আকাশপাতাল চিন্তা/ভাবনা নানারকমের দুশ্চিন্তা।
আকাশে থুতু ফেললে নিজের গায়ে পড়ে১ আত্মীয়স্বজনের নিন্দা করলে নিজেরই নিন্দা করা হয়; পাঠান্তর- 'আকাশে ধূলো ছোঁড়ে, আপনচোখে এসে পড়'।
আকাশে থুতু ফেললে নিজের গায়ে পড়ে বোকার মত কাজ করলে নিজের ক্ষতি হয়।
আকাশে ফাঁদ পেতে চাঁদ ধরতে চায় দূরাশায় বসে থাকা; যা হয় না তার জন্য চেষ্টা করা; বৃথা চেষ্টা থেকে কোন ফললাভ হয় না; পাঠান্তর- 'আকাশে ফাঁদ পেতে বনের পাখি ধরতে চায়'।
আকাশে যত ঝড় ওঠে গোয়ালে তত গরু ছোটে পূর্ব বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা থেকে বিপদের আশঙ্কায় দিশেহারা হয়।
আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া দুর্লভবস্তু হাতে পাওয়া।
আকাশের নীচে কিছুই অসম্ভব নয় বাস্তবঘটনা অনেকসময় কল্পনাকেও হার মানায়।
আকৃতি থেকে প্রকৃতি/আচরণ ভালো১ রূপ থেকে গুণের কদর বেশি।
আকৃতি থেকে প্রকৃতি/আচরণ ভালো২ সুন্দর কাজের মধ্য দিয়ে ব্যক্তির সৌন্দর্য ফুটে ওঠে।
আক্কেলে সকল বন্দী, জালে বন্দী মাছ; স্ত্রীর কাছে পুরুষ বন্দী ছালে বন্দী গাছ কেউ স্বাধীন নয়; জন্মের পরমুহূর্ত থেকে সবাই কোথাও-না-কোথায় বন্দী অবস্থায় থাকে।
আক্রমণই প্রতিরোধের প্রকৃষ্ট উপায় সেক্ষেত্রে প্রতিপক্ষকে অপ্রস্তুত অবস্থায় পাওয়াঢ় সম্ভাবনা থাকে।
আখ আর সর্ষে না পিষলে রস কিসে? রস পেতে হলে রসেভরা জিনিস কচলাতে হয়; রসিকমনের কাছে না গেলে রসের খোঁজ পাওয়া যায় না; কষ্ট না করলে কেষ্ট নাই।
আগ নাংলা যেদিকে যায় পাছ নাংলা সেদিকে যায় চাষে লাঙলকে পিছনের লাঙলগুলি সারি বেঁধে অনুসরণ করে; অন্ধভাবে কারো কাজের অনুকরণ করলে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়।
আগচ্ছতি/আজগাম যদা লক্ষ্মীর্নারিকেলফলাম্বুবৎ নারকেলে জল কোথা থেকে আসে যেমন কেউ জানে না তেমনই লক্ষ্মী সবার অলক্ষেে আসেন; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'নির্গচ্ছতি/নির্জগাম যদা লক্ষ্মীর্গজভুক্ত কপিত্থবৎ'।
আগাছা ছাড়া বাগান হয় না দোষেগুণে মানুষ; সংসারে ভালোমন্দ মিশিয়ে মানুষ আছে; সমতুল্য- 'অবিমিশ্র সুখ বা দুঃখ হয় না'।
আগাছার বাড় বেশি জগতে অপ্রয়োজনীয় বস্তুর প্রাচুর্য বেশি হয়; বিনা পরিশ্রমে যেমন প্রয়োজনীয় বস্তু পাওয়া যায় না তেমনি বিনা পরিচর্যায় যোগ্যমানুষ হয় না; সমতুল্য- 'ধান একগুণ ঘাস শতগুণ'; 'অবলা বলে বেশি, অফলা ফলে বেশি'; 'ধানের আগে উড়ি ফুলে'; 'ঠগ বাচতে গাঁ উজাড়' ইত্যাদি; বিরুদ্ধ প্রবচন- 'আগাছে ফল বেশী'।
আগামীকাল কখনো আসে না ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত; আজকের জন্য বাঁচো আগামীকাল কখনও আসবে না; কাল করবো বলে কোন কাজ কেউ ফেলে রাখলে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়।
আগামীকাল জন্মায় নি, গতকাল মৃ্‌ত, আজই সত্য আজ খাওদাও আনন্দ কর, ভূতভবিষ্যৎ ভেবে কোন লাভ নেই; আগামীকাল আমরা সবাই থাকবো না।
আগামীকাল নিজের যত্ন নেবে- আরবী প্রবাদ আগামীকালের জন্য আগাম ভাবার কোন প্রয়োজন নেই।
আগামীকাল নিয়ে চিন্তা করা মানেই আজকে অসুখী হওয়া আগাম দুশ্চিন্তা করে অনর্থক স্বাস্থ্যহানি করার প্রয়োজন নেই।
আগামীকাল সর্বদাই আছে- আরবী প্রবাদ আগামীকালের জন্য আগাম ভাবার কোন প্রয়োজন নেই।
আগামীকালের একটি হাঁস থেকে আজকের একটি ডিম বেশি দামী আগামী কাল থেকে আজকের দাম অনেক বেশি; আগামীকাল অনিশ্চয়তায় ভরা; সমতুল্য- 'নগদ যা পাও হাত পেতে নাও বাকীর খাতায় শূন্য থাক, দুরের বাদ্য লাভ কি শুনে মাঝখানেতে বেজায় ফাঁক'; 'হাতের একটি পাখি বনের দুটি পাখির সমান'।
আগামীকালের জন্য অজ্ঞানে অপেক্ষা করে; জ্ঞানী আজরাত্রের মধ্যেই কাজ শেষ করে জ্ঞানীরা অনিশ্চিতের মধ্যে থাকে না; বিপরীত প্রবচন- জ্ঞানীরা বলেন, 'সবুরে মেওয়া ফলে'।
আগুন কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না সত্য গোপন করা যায় না; পাঠান্তর- 'আগুন চাপা থাকে না'; 'আগুন ছাইচাপা থাকে না'।
আগুন কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না পাপ কখনো ঢাকা থাকে না।
আগুন দিয়ে আগুন তাড়ানো/নেভনো যায় না শত্রুতায় শত্রুনাশ হয় না, প্রেমে হয়।
আগুন ছাড়া ধোঁয়া হয় না কার্যের পিছনে কারণ থাকে; অকারণে কিছু হয় না; তুলনীয়- 'অকারণে গাছের একটি পাতাও নড়ে না।
আগুন নিয়ে খেলা বিপজ্জনক বিষয় নিয়ে নাড়াচাড়া করা।
আগুন পোহাতে গেলে ধোঁয়া সইতে হয় অবিমিশ্র সুখ হয় না; জীবনের সবক্ষেত্রেই কিছু অর্জন করতে হলে, কিছু ঝামেলা সহ্য করতে হয়; সমতুল্য- 'কষ্টবিনা কেষ্ট নাই'; 'গোলাপ তুলতে গেলে কাঁটা সইতে হয়';'ন হি সুখং দুঃখৈর্বিনা লভ্যতে'।
আগুনে পুড়ে সোনা/সীতা খাঁটি জীবনযন্ত্রণায় না পুড়লে মানুষ অভিজ্ঞ বা খাঁটি হয় না।
আগুনে হাত দিলে ইচ্ছাতেও পোড়ে, অনিচ্ছাতেও পোড়ে১ আগুনের কোন বাছবিচার নেই
আগুনে হাত দিলে ইচ্ছাতেও পোড়ে, অনিচ্ছাতেও পোড়ে২ বিপদকে আহ্বান করলে বিপদ এসে জড়িয়ে ধরে; বিপজ্জনক জিনিস নিয়ে নাড়াচাড়া করতে নেই।
আগুনের কাছে ঘি নারী ঘির সমান; পুরুষ আগুনের সমান; পুরুষের সামনে নারী স্থির থাকে না; সমতুল্য- 'ঘৃতকুম্ভসমা নারী তপ্তাঙ্গারসমঃ পুমান'; পাঠান্তর- আগুনের কাছে ঘি গাঢ় থাকে না'।
আগুনের শেষ রাখতে নেই আগুন সম্পূর্ণ নির্মূল না করলে পরে জ্বলে উঠতে পারে; সমতুল্য- 'ঋণের শেষ রাখতে নেই'; 'ঋণের শেষ রাখতে নেই';'শত্রুর শেষ রাখতে নেই'।
আগুয়ান ঘটনা সামনে তার ছায়া ফেলে কি ঘটতে চলেছে আগেভাগেই তা অনুমান করা যায়।
আগে আপন পরে পর আপন সামালে পরকে ধর পরের দোষ না দেখে আগে নিজের দোষের খোঁজ ন্যায়; পরে নিজের ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটতে পারে; পাঠান্তর- 'আগে আপন সামাল কর পরে গিয়ে পরকে ধর'।
আগে আপন পরে পর, আপন সামালে পরকে ধর২ নিজে ভাল না থাকলে পরের ভালো করা যায় না; বৈদ্য আগে নিজেকে সামলায় পরে পরকে সামলায়।
আগে আমি, পরে বাপ আগে নিজের স্বার্থ সামলাও পরে অপরের স্বার্থ সামলাবে; সমতুল্য- 'আপনি বাঁচলে বাপের নাম'; বিরুদ্ধ প্রবচন-'পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি এ জীবন মন সকলি দাও, তার মত সুখ কোথাও কি আছে আপনার কথা ভুলিয়া যাও'।
আগে উপযুক্ত হও, পরে আকাঙ্ক্ষা কর কিছু চাইতে গেলে আগে পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হয়।
আগে কড়ি পিছে কাজ মাগনায় কিছু হয় না; নগদ দাম দাও, তবে জিনিস দেব; সমতুল্য- 'ফেলো কড়ি মাখো তেল, তুমি কি আমার পর'।
আগে কাজ পিছে আরাম/বাত কাজের দাবী সর্বাগ্রে; কাজ ফেলে অকাজ করা নেই; পাঠান্তর- 'আগে লাথ পিছে বাত'। বাদ
আগে কুঁয়া, পিছে খাই (খাল) উভয়সঙ্কট, দুদিকেই বিপদ; কোন নিস্তার নেই; সমতুল্য-'জলে কুমীর, ডাঙায় বাঘ'; 'এগুলে রাবণ, পিছুলে রাম' ইত্যাদি।
আগে গেলে বাঘে খায়, পাছে গেলে টাকা/সোনা পায়১ যে আগে থাকে বাঘ আগে তাকেই আক্রমণ করে; ঝড়ঝাপ্টা আগের লোককেই প্রথমে লাগে।
আগে গেলে বাঘে খায়, পাছে গেলে টাকা/সোনা পায়২ তাড়াতাড়ি করা নেই, তাতে কাজে ভুল হয়; কার্যসিদ্ধির জন্য সময় লাগে; সমতুল্য-'বিলম্বে কার্যসিদ্ধি'; 'যে সয় সে রয়'; 'সবুরে মেওয়া ফলে';'সয়ে গেলে রয়ে যায় ইত্যাদি; বিরুদ্ধ উক্তি-'আগের/ভোরের পাখি পোকা/মাছি ধরে'।
আগে গেলেও দোষ পাছে গেলেও দোষ১ উভয়সঙ্কট।
আগে গেলেও দোষ পাছে গেলেও দোষ২ ভাগ্য বিরূপ হলে সব কাজই বিফল হবে।
আগে গেলেও নির্বংশের ব্যাটা পাছে গেলেও নির্বংশের ব্যাটা এমন এক অবস্থা যেখানে নিন্দাছাড়া সাধুবাদ নাই; কোন অবস্থাতেই প্রশংসা লাভের আশা নেই; পাঠান্তর- 'আগে গেলেও ভেড়ের ভেড়ে, পাছে গেলেও ভেড়ের ভেড়ে'।
আগে গেলেও নির্বংশের ব্যাটা পাছে গেলেও নির্বংশের ব্যাটা২ দুর্ভোগ যেন পিছু ছাড়তে চাইছে না।
আগে ঘর পরে পর ঘর সামলে পরকে ধর খয়রাত ঘর থেকে শুরু হয়; প্রবাদটিতে স্বার্থের গন্ধ আছে; সমতুল্য- 'আগে আমি পরে বাপ'; 'আত্ম রেখে ধর্ম তবে পিতৃকর্ম'; 'আপনি বাঁচলে বাপের নাম'; 'চাচা আপন প্রাণ বাঁচা' ইত্যাদি।
আগে (যাচ্‌লে) জামাই কাঁঠাল খান না শেষে জামাই ভোঁতাও পান না অনেকে আছে, যাদের সাধাসাধি করলে উপেক্ষা করে; তাদের ভাগ্যে কিন্তু শেষপর্যন্ত কিছু জোটে না।
আগে তিতা শেষে মিঠা১ স্বাস্থ্যের কারণে বৈদ্যের বিধান- তিতা দিয়ে আহার শুরু মিষ্টি দিয়ে আহার শেষ করা উচিৎ।
আগে তিতা, শেষে মিঠা২ অনেককিছুই প্রথমে অপ্রীতিকর মনে হয় শেষে সেটাই সুখকর হয়।
আগে দর্শনদারী পরে গুণ বিচারী বাহ্যিকসৌন্দর্যই প্রথম দৃষ্টি আকর্ষণ করে; চটকই প্রথম চোখ টানে;

দেখতে ভাল হলেই আদর পায়; শুধু গুণে আকৃষ্ট হতে কিছু সময় লাগে; সমতুল্য- 'যো দেখতা হ্যায় উয়ো বিক্‌তা হায়';'ঠাট-ঠমকে বিকোয় ঘোড়া' ইত্যাদি; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'রূপের চেয়ে গুণের কদর বেশি'; 'শুধু দেখনাই ভাল হলেই চলে না গুণ থাকা চাই' ইত্যাদি।

আগে দুখ পরে সুখ তাতে মানসিক কষ্ট কম হয়, শান্তি বেশি হয়।
আগে দেও কড়ি, তবে দেবো বড়ি নগদদাম দাও তবে জিনিস দেবো; নগদ লেনদেনের পক্ষে ওকালতি; সমতুল্য- 'ফেলো কড়ি, মাখো তেল'; 'রোখা কড়ি চোখা মাল'
আগে দেখ পরে লও শেষে দাও কড়ি আগে দেখে পছন্দ কর তারপর দাম দিয়ে জিনিস নেবে তা-না-হলে ঠকতে পারো ঠকার সম্ভাবনার প্রতি চেতাবনী।
আগে দেখো, পরে লাফাও বিপদের কথা চিন্তা না করে কোন সিদ্ধান্ত নিও না; বিচার বিবেচনা করে কাজ কর; বিবেচক এক পা দেখে এক পা রাখে।
আগে না বুঝিলে বাছা যৌবনের ভরে, পশ্চাতে কাঁদিতে হবে নয়নের ঝোরে যৌবনের অহঙ্কারে বেহিসাবী হলোে বৃদ্ধবয়সে পস্তাতে হতে পারে; ভুল পথে গেলে শেষে আফশোস করবে এবং কেঁদে কূল পাবে না; সমতুল্য- 'যৌবনে অন্যায় ব্যয়ে বয়সে কাঙালি'।
আগে নিজেকে সংশোধন কর, পরে অপরের সংশোধন করবে নিজে ভালো না হলে পরের ভাল করা যায় না; সমতুল্য- আপনি আচরি ধর্ম অপরে শিখাও'।
আগেপাছে লন্ঠন কাজের বেলায় ঠনঠন আয়োজনের আড়ম্বরে বাড়াবাড়ি কাজের বেলায় ফাঁকি।
আগে পাজি, পরে কাজী, পরে হাজী, শেষে গাজী শুরুতে দুস্কৃতি; পরে সুবুদ্ধিসম্পন্ন; তারপরে ধর্মভীরু, শেষে ধর্মব্যবসায়ী; সুতরাং শুরু যেখানে শেষ সেখানে; ধর্মব্যবসায়ীরা পাকা শয়তানস্বরূপ; পাঠান্তর-

আজের কাজী, পরে হাজী, পরে গাজী'।

আগেপিঠে দড় তবে ঘোড়ার পিঠে চড় শক্তি ও সামর্থ থাকলে তবেই কঠিন কাজে হাত দাও।
আগে ফাঁসি পরে বিচার উদ্ভট কার্যকলাপ; উল্টোপুরাণ।
আগে ভাল ছিল জেলে জালদড়া বুনে, কি কাজ করিল জেলে এঁড়ে গরু কিনে বেশি লোভ করলে ফল খারাপ হয়; অভ্যস্ত কাজ ছেড়ে অনভ্যস্ত কাজে হাত দিলে ফল ভালো হয় না।
আগের চেয়ে দেরী ভালো ভালো কাজ হলে ভেবেচিন্তে দেরীতে করাই ভালো; সমতুল্য- 'আগে গেলে বাঘে খায় পাছে গেলে টাকা পায়';'সবুরে মেওয়া ফলে'।
আগের (ভোরের) পাখি পোকা/মাছি ধরে সামনের লোকের সুযোগ সদব্যবহারের সম্ভাবনা বেশি থাকে; বিরুদ্ধ প্রবাদ- 'আগে গেলে বাঘে খায়, পাছে গেলে সোনা পায়'; 'বিলম্বে কার্যসিদ্ধি'; 'যে সয় সে রয়';'সবুরে মেওয়া ফলে'; 'সয়ে গেলে রয়ে যায়' ইত্যাদি।
আগের লাঙল (হাল) যে দিকে যায় পাছের লাঙল/হাল সে দিকে যায় অন্ধভাবে অন্যের অনুকরণ করা মানুষের স্বভাব; আমরা সবাই ভেড়ার পাল।
আগে রামনাম পরে সবকাম দুর্বলচিত্তের লোক ভগবানের নাম নিয়ে সবকাজ শুরু করে।
আগে রাহ বাতায়ে পাছে গোঁতা প্রথমে পথ দেখায় পরে ধাক্কা মারে; সমতুল্য- 'গাছে তুলে মই কেড়ে নেওয়া'।
আগে সামলা ধাক্কা, পরে যাবি মক্কা আগে তো বাঁচো; পরে ভগবানের নাম করা যাবে।
আগে হলাম আমি, পিছে হল মা; হাসতে হাসতে দাদা হলো বাবা হলো না অর্থহীন হেঁয়ালি; অসংলগ্ন কথাবার্তা; কথার কোন মাথামুণ্ড নেই; পাগলের প্রলাপ; অর্থহীন আজেবাজে কথা বললে এই প্রবাদ বলা হয়।
আগে হাঁটে, পাঁঠা কাটে, প্রদীপ উস্কোয়, দই বাঁটে; ভাণ্ডারী, কাণ্ডারী, রাঁধুনী বামুন, যশ পায় না এই সাতজন এই সাত কাজের লোকেরা ঠিকঠাক কাজ করলে প্রশংসা পায় না; কিন্তু একটু ভুল হলেই নিন্দার ঝড় বয়ে যায়।
আগ্রার মানুষ তাজমহল দেখে না সহজলভ্য জিনিসের আকর্ষণ বা মূল্য নেই; সমতুল্য- 'কালিঘাটের মানুষ কালীদর্শন করে নঢ়;'গির্জার পাশের মানুষ গির্জায় যায় না'; 'মক্কার মানুষ হজ্জ পায় না';'যত মন্দিরের কাছে তত ঈশ্বর থেকে দূরে' ইত্যাদি।
আঘাত করলে প্রত্যাঘাত খেতে হয় অন্যের ক্ষতি করলে নিজেরও ক্ষতি হয়; সমতুল্য-'আয়না যেমুখ দেখে সেইমুখ দেখায়'; 'ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়'; 'ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া থাকে'; 'চড় মারলে চড় খেতে হয়';'ধ্বনির প্রতিধ্বনি আছে/থাকে' ইত্যাদি।
আঙুর ফল টক অলভ্য জিনিস মন্দ হয়; মন্র সান্ত্বনা; সমতুল্য-'কর্তা পান না তাই খান না'।
আঙুল ঘুরিয়ে পাঁচিল দেওয়া ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় বিরাট কাজ সম্পন্ন করার প্রয়াস
আঙুল ফুলে কলাগাছ১ অবৈধপথে দ্রুত উন্নতি লাভ।
আঙুল ফুলে কলাগাছ২ হঠাৎ বিশালী; অল্পদিনে নির্ধনের ধন হলে বিদ্রূপে এই প্রবচন ব্যবহৃত হয়।
আচরণ দ্বিতীয়প্রকৃতি আচরণ থেকেই স্বভাব গড়ে ওঠে।
আচরণ দড়ির মত, আমরা প্রতিদিন দড়ি পাকাই এবং শেষপর্যন্ত সেটা ছিঁড়তে পারি না অভ্যাস বা আচরণ সহজে ছাড়া যায় না; আমরা সবাই গুটিপোকার মত নিজের সূতায় নিজে বাঁধা;
আচার ভ্রষ্ট, সদা কষ্ট অনুশাসন না মানলে জীবনে ভোগান্তি আছে।
আচারে বাড়া বিচারে এড়া আচারসর্বস্ব ব্যক্তি, যে যুক্তির ধার ধারে না।
আচারে লক্ষ্মী, বিচারে পণ্ডিত সর্ব্যবগুণসম্পন্ন/সম্পন্না।
আছে কাজ তাই সকালসকাল সাজ কাজ থাকলে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হয়।
আছে গরু না পায় হালে, দুঃখ না ছাড়ে কোন কালে- খনা গরু আছে অথচ চাষ করে না, তার অভাব কখনই যাবে না; পরিশ্রমবিনা সৌভাগ্য আসেনা।
আছে যথেষ্ট নেই অদৃষ্ট ভাগ্য না থাকলে সম্পদ ঠেকেও ভোগ হয় না।
আজ আমীর/বাদশা কাল ফকির সবদিন কারো সমান যায় না; সমতুল্য- 'চক্রবৎ পরিবর্তন্তে দুখানি চ সুখানি চ'; 'চিরদিন কারো সমান নাহি যায়'; পাঠান্তর- 'আজ রাজা কাল ভিখারী ফুটানি করে দিন দুচারি'; 'আজ যে রাজা কাল সে ফকির'।
আজই সত্য, আগামীকাল কখনো আসে না আজকের কথা আজ ভাব, কালকের কথা কাল হবে; অনিশ্চিতের পিছনে ছোটা নেই।
আজ খেতে কাল নেই কোনরকমে দিন চলে; সমতুল্য- 'দিন আনে দিন খায়'; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'নূন আনতে পান্তা ফুরায়'।
আজ খায় না রাগে, কাল সবার আগে ঠাণ্ডামাথায় বুদ্ধি খোলে; রক্ত গরম হলে বুদ্ধি গলে।
আজ নগদ কাল ধার ধারের পায়ে নমস্কার যতদূর সম্ভব নগদ অর্থে কাজ-কারবার করার পরামর্শ।
আজ বুঝলি না বুঝবি কাল, বুক চাপড়াবি পাড়বি গাল সময়ের কাজ সময়ে না করলে উল্টোবিপত্তি হতে পারে সেই সম্পর্কে চেতাবনি; কাউকে বারবার সাবধান করা সত্বেও না শুনলে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়।
আজ মরলে কাল দুদিন হবে দুঃসহ জীবনযন্ত্রণা; ভোগান্তির দিনগুলি যেন কাটতেই চায় না।
আজ মুচি কাল শুচি ব্যবহারগুণে ব্যক্তির চরিত্র পরিবর্তিত হয়।
আজ রাজা কাল ভিখারী ফুটানি করে দিন দুচারি 'আজ আমীর/বাদশা কাল ফকির'- দ্রষ্টব্য
আজের কাজী, পরে হাজী, পরে গাজী আগে পাজি, পরে কাজী, পরে হাজী, শেষে গাজী- দ্রষ্টব্য
আটঘাট বাঁধা অনিষ্ট হওয়ার সম্ভাব্য সকল পথ বন্ধ করা; প্রস্তুতি নেওয়া; (উৎসকাহিনী- তবলার আনুসঙ্গিকসরঞ্জাম থেকে প্রবাদটির উৎপত্তি হয়েছে; তবলার গায়ে ছোটছোট ঘুঁটি বাঁধার জন্য ঘুঁটির ওপর চামড়ায় থাকা দুটি ফিতার মধ্যস্থ চাকের অংশকে ঘাট বলে; প্রতিটি তবলাতে আটটি ঘাট থাকে। দুটি ফিতার মাঝখানে আটটি ঘুঁটি আটকানো থাকে; কোন ঘাট বেসুরে না বাজার জন্য তবলাবাদক বাজনা শুরুর আগে হাতুড়ি দিয়ে ঘুঁটিগুলিকে ঠুকেঠুকে সুর বেঁধে নেয়। তার থেকেই প্রবাদটির উৎপত্তি।
আটে কাটে/পিঠে দড় ত ঘোড়ার পিঠে চড় দক্ষতা ও নৈপুণ্য থাকলে বা চৌকশ হলেপরে দুরূহ কাজ করতে যাওয়া উচিত।
আঠারো মাসে বছর ফুরায় অতিশয় দীর্ঘসূত্রতা; সমতুল্য- 'বত্রিশ দিনে মাস ফুরায়'।
আড়াই আঙ্গুল দড়ি, সৃষ্টি জুড়ে বেড়ি অল্প আয়োজনে সব প্রয়োজন মেটাবার আপ্রাণ চেষ্টা; সামান্য উপায়ে বিশাল কাজ সম্পাদনের চেষ্টা; সমতুল্য- আঙুল ঘুরিয়ে পাঁচিল দেওয়ার চেষ্টা'।
আড়াই কড়ার কাসুন্দি, হাজার কাকের গোল অল্প পরিমাণ দ্রব্য পাওয়ার জন্য অনেক দাবীদার; ফলে সকলের মধ্যে কাড়াকাড়ি; যোগান অত্যল্প চাহিদা প্রচুর হলে সকলের মধ্যে কাড়াকাড়ি পড়ে যায়; এমন পরিস্থিতির উদভব হলে প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়; সমতুল্য- 'এক আনার সৌ বীমার'; 'একরত্তি সোনা স্যাঁকরা হাজার জনা'।
আড়াই দিনের বাদশাহী অল্পদিনের ফুটফুটানি।
আড়ে নাই অসাড়ে (অসার)১ দৈর্ঘ্যে নাই প্রস্থেও নাই।
আড়ে নাই অসাড়ে (অসার)২ কাজে নেই, অকাজে দড়।
আড়ে হাতে লওয়া ভীষণ শত্রুতা করা।
আড়ে হাতে লাগা১ প্রাণপণ চেষ্টা করা।
আড়ে হাতে লাগা২ ভীষণ শত্রুতা করা।
আড়ের সাঁত আর ছিরে বুড়োর মাড়ি সাধারণে দাঁত দিয়ে যা করে বৃদ্ধ শ্রীরাম মাড়িতে তাই করে; অপরে আয়াসে এবং সুবিধা পেলে যে কাজ করে ব্যক্তিবিশেষে অসুবিধাসত্বেও সেই কাজ অনায়াসে সম্পন্ন করে।
আতি চোর পাতি চোর হ’তে হ’তে সিঁদেল চোর ক্রমশঃ দাগী আসামীতে পরিণত; সামান্য অপরাধ করতে করতে শেষে বিরাট অপরাধ করে ফেলে।
আতুরে নিয়ম নাস্তি অসমর্থের পক্ষে নিয়ম খাটে না; রোগীর পক্ষে উপবাস নিয়ম নিষিদ্ধ; সংস্কৃত পাঠান্তর- 'আতুরে নিয়মো নাস্তি'।
আত্মচ্ছিদ্রং ন জানাতি পরচ্ছিদ্রানুসারিণঃ নিজের দোষ দেখে না পরের দোষ খুঁজে বেড়ায়; সমতুল্য- 'আপনার কথা কয় না শালী পরকে বলে টেবোগালী'; 'চালুনি বলে ছুঁচ তোর মার্গে কেন ছেঁদা'; 'চোখ নিজেকে দেখতে পায় না'; পাঠান্তর- 'আত্মচ্ছিদ্রং ন জানাতি পরচ্ছিদ্রং পদেপদে'।
আত্মতুষ্টি সঙ্কীর্ণ মনের পরিচয় শুধু নিজেরটা হলেই হল এমন ভাবনা সঙ্কীর্ণমনের পরিচয়।
আত্মনং বিদ্ধি নিজেকে জানাই প্রথম কাজ।
আত্মনং সততং রক্ষেৎ পশ্চাদ্দার ধনানি চ (যেকোন মূল্যে) নিজেকে সর্বদা রক্ষা করবে; তারপর স্ত্রী ও ধনাদি রক্ষা করবে; সমতুল্য- আপনি বাঁচলে বাপের নাম'; 'চাচা আপন প্রাণ বাঁচা'।
আত্মবৎ সর্বভূতেষু য পশ্যতি সে পণ্ডিত যিনি সকলপ্রাণীকে আত্মসম বিবেচনা করেন তিনি পণ্ডিত।
আত্মবন্মন্যতে জগৎ আপনার মত জগৎ দেখা; যে যেরূপ প্রকৃতির ব্যক্তি সে জগতের সকলকে সেইরূপ জ্ঞান করে; গুণী কোন নির্গুণ খুঁজে পায় না, নির্গুণ আবার কোন গুণী খুঁজে পায় না; পাঠান্তর-'আত্মবৎ মন্যতে জগৎ'।
আত্মবুদ্ধি শুভকরী/শুভঙ্করী নিজের বুদ্ধি কল্যাণকর; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'পরবুদ্ধিঃ বিনাশায়'; 'স্ত্রীবুদ্ধি প্রলয়ঙ্করী'।-
আত্মানং সততং রক্ষেৎ পশ্চাদ্দার ধনানি চ নিজের জীবনকে সর্বদা রক্ষা করবে; পরে ধন পরিজন রক্ষা করবে; এটাই ধর্ম; তুলনীয়- 'আপনি বাঁচলে বাপের নাম'; 'চাচা আপন প্রাণ বাঁচা'।
আত্ম রেখে ধর্ম পরে পিতৃকর্ম আপনি বাঁচলে বাপের নাম; নিজেকে দিয়েই দানছত্র শুরু করা উচিত; দাতব্য ঘরেই শুরু হয়।
আত্মারাম খাঁচাছাড়া প্রচণ্ড ভয়ে বিবর্ণ; প্রাণপাখি উড়ে গেছে।
আত্মার্থে পৃথিবীং ত্যজেৎ নিজের জীবন রক্ষার্থে পার্থিব সবকিছু পরিত্যাগ করবে।
আদব শেখো বেয়াদবের কাছে বেয়াদব যা করে তার উল্টোটাই হল আদবকায়দা।
আদম ছিলেন প্রথম ভাগ্যবান ব্যক্তি যার শাশুড়ি ছিল না- ইহুদি প্রবাদ দজ্জাল শাশুড়িদের প্রতি বক্রোক্তি।
আদর যখন জুটে, ফুটকলাই দিয়ে ফুটে; আদর যখন টুটে, ঢেঁকি দিয়ে কুটে আদর যখন করে ফুটকড়াইয়ের মত ভরে দেয়; তিরস্কার যখন করে ঢেঁকিতে চাল কোটার মত কোটে; সবতাতেই বাড়াবাড়ি; আদিখ্যেতা।
আদরে বাঁদর বনে প্রশ্রয়ে চরিত্রগুণ নষ্ট হয়।
আদরের ভোজন কি করে ব্যঞ্জন প্রীতিভরে খাওয়ালে প্রীতিতেই পেট ভরে যায়, ব্যঞ্জনে নজর থাকে না; সমতুল্য- 'বড়লোকের ভুরিভোজ থেকে গরিবের শাকান্ন ভাল', 'রাজার ভুরিভোজ থেকে বিদুরের শাকান্ন ভাল' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'আদরের ডাল-ভাতও ভাল, বিনা আদরের ঘি-ভাতও ভাল না'।
আদা ওষুধের আধা আদা্র ঔষধি গুণ এমন যে আদা খেলে যে কোন রোগ অর্ধেক ভালো হয়ে যায়।
আদা কাঁচকলাসম্বন্ধ / আদায় কাঁচকলায় আদা ও কাঁচকলা একসাথে সিদ্ধ হয় না; সুতরাং পরস্পর বিরুদ্ধগুণবিশিষ্ট; চির বৈরীভাব; স্বভাব-শত্রুতা
আদাজল খেয়ে লাগা কার্যসিদ্ধির জন্য কষ্ট করে প্রাণপণ চেষ্টা করা; দৃঢ়সংকল্পে উদ্যমের সাথে কাজে লাগা; পূর্ণোদ্যমে কাজে লাগা; সমস্ত বাধা অতিক্রম করে কোন কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা; সমার্থক বাগধারা- উঠে পড়ে লাগা
আদা ঝালের গাদা গুণহীন পুরুষের রাগরূপ ঝাল বেশী।
আদা শুকালেও ঝাল যায় না আদা কাঁচা অবস্থায় যেমন ঝাল শুকালেও তেমনই ঝাল থাকে;

দ্রব্যের স্বাভাবিক ধর্ম কোনকালেই লোপ পায় না; দুষ্টলোক দমিত হলেও দুষ্টবুদ্ধি ছাড়ে না; সমতুল্য- 'কয়লা ধুলেও ময়লা যায় না'; 'মূলো খেলে মূলোর ঢেঁকুর ওঠে'; 'যার যা রীত ছাড়ে কদাচিৎ'; 'রসুন ধুলেও গন্ধ যায় না';'স্বভাব যায় না মলে' ইত্যাদি।

আদাড়গাঁয়ে/বনে শিয়াল বাঘ/রাজা বুনোগাঁয়ে শিয়ালকেই বাঘ বলে মনে হয়; যেখানে বিদ্বান লোক নেই সেখানে অল্পবিদ্বানেরা পাণ্ডিত্য ফলায়; সমতুল্য- 'দূর্বাবনে খটাশই বাঘ'; 'বনগাঁয়ে শিয়াল রাজা'; 'ভেড়ার গোয়ালে বাছুর মোড়ল'; 'নিরস্তপাদপদেশে এড়েণ্ডোহপি দ্রূমায়তে';'সোঁদর বনে বানর রাজা ইত্যাদি।
আদায় কাঁচকলায় সম্পর্ক আদা রেচক কাঁচকলা ধারক; দু'য়ে একসাথে সিদ্ধ হয় না; তাদের মধ্যে চিরবৈরীতা তিক্তসম্পর্ক; তারা শত্রুভাবাপন্ন ও বিরুদ্ধ স্বভাবযুক্ত; সমতুল্য- অহিনকুলসম্পর্ক; দা-কুমড়া সম্পর্ক; বাঘে-গরুতে সম্পর্ক; বুনো ওল-বাঘা তেঁতুলসম্পর্ক;; সাপ-নেউল সম্পর্ক (আধা কাঁচকলা সম্পর্ক দ্রষ্টব্য)
আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবর নেয় তুচ্ছলোকেরা বড় ব্যাপারে নাক গলায়; অনধিকার চর্চার বিষয়; সমতুল্য-'বামন হয়ে চাঁদ ধরতে চায়'; 'ভিক্ষা করতে এসে গাঁয়ের খবর নেয়'; 'মশা এসে হাতীর ওজন জানতে চায়' ইত্যাদি।
আদি অন্ত পাওয়া ভার ভেবে কূলকিনারা পাওয়া যাচ্ছে না; সমস্যার অন্ত নেই।
আদি/আদ্দি কহিলে মানুষ রুষ্ট কুলের কথা শুনতে কারও ভাল লাগে না; মানুষ অতীত ঘাটতে চায় না; অতীত ঘাটলে অনেক অপ্রীতিকর কথা সামনে এসে যায়; তাতে মানুষ রুষ্ট হয়।
আদুরে গোপাল অত্যন্ত আদরে পালিত সন্তান; লাই দিয়ে যার ইহকাল পরকাল ঝরঝরে করা হয়েছে; সমতুল্য- 'আলালের ঘরের দুলাল।'
আদেখলার ঘটি হল, জল খেতে খেতে পরাণ গেল আগে একদম দেখেনি এমন কিছু দেখলে মানুষ সাধারণতঃ প্রথমে একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলে।
আদ্দিকালের বদ্দিবুড়ো অতিবৃদ্ধব্যক্তি; থুত্থুড়ে বুড়ো।
আধা কাঁচকলাসম্বন্ধ জাতিবিরোধসম্পর্ক, যেখানে একটা কাঁচকলাকেও অর্ধেক করে ভাগ করা হয়; ফলে জাতিগতবৈরিতা সৃষ্টি হয়; সমতুল্য- 'তেলের শিশি ভাঙল বলে খুকুর পরে রাগ কর; তোমরা যে সব ধেড়েখোকা ভারত ভেঙে ভাগ কর'- অন্নদাশঙ্কর রায়।
আধা বটের আধা তিতর আধাখেঁচড়া; অসম্পূর্ণ; বটের, তিতির ইত্যাদি পাখী সম্পূর্ণ নয়; তারা আধা-খেচর।
আধিক্যে কুফল আছে বেশি টানাটানি করলে সূতা ছিঁড়ে যায়; বাড়াবাড়ি ভাল নয়; সমতুল্য- 'কষতে কষতে বাঁধন ছেঁড়ে'; 'ভাল নয় অতিশয়'; 'সর্বম অত্যন্তম গর্হিতম'।
আন্‌ কাপাস নে তুলো কাঁচামাল আনো জিনিস নিয়ে যাও; পণ্যবিনিময় প্রথা
আন শুনতে কান/ধান শোনে কালা; উল্টোপাল্টা শোনে।
আন (অন্য) মাগীর আন (অন্য) চিন্তে, দুয়ো মাগীর পতি চিন্তে অন্যান্য নারীরা সংসারের নানাচিন্তায় ব্যস্ত থাকে; যে নারীর সতীন আছে, সে স্বামীছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারে না।
আন (অন্য) সতীনে নাড়ে চাড়ে, বোন সতীনে পুড়িয়ে মারে নিজের লোকেরাই বেশি আঘাত হানে; রক্তের সম্পর্কের লোকেরা বেশি অনিষ্ট করে; সমতুল্য- 'আপন থেকে পর ভাল'; 'ভাই ভাই ঠাঁই ঠাঁই'; 'যত রক্তের কাছাকাছি তত রক্তারক্তি' ইত্যাদি।
আনন্দ ও কাজ সময়কে সংক্ষিপ্ত করে মনের আনন্দে কাজ করতে করতে কীভাবে যে সময় কেটে যায় বা কিভাবে যে কাজ সম্পন্ন হয়ে যায় তা বোঝা যায় না।
আনারস বলে কাঁঠাল ভাই তুমি বড় খসখসে পরছিদ্রান্বেষী; নিজের দোষ না দেখে পরের দোষ খুঁজে বেড়ায়; সমতুল্য-'চালুনি বলে ছুঁচ তোর পিছন দেখি ছ্যাঁদা';'চালুনি বলে ধুচুনিভায়া তুমি বড় ফুটো';'ঝাঁজরি বলে খৈ-চালা, তুই বেজায় ফোঁড়ওয়ালা'; 'নিজের পাছায় ন'মণ গু আমারে বলে তোর খান ধু'; 'হাঁড়ি বলে কড়াই তোর পিছনটা বড় কালা' ইত্যাদি।
আন্ধেরা নগরী চৌপট রাজা; টাকা সের ভাজী, টাকা সের খাজা- হিন্দি প্রবাদ১ অসারের মেলায় গুণের কদর নেই।
আন্ধেরা নগরী চৌপট রাজা; টাকা সের ভাজী, টাকা সের খাজা- হিন্দি প্রবাদ২ এমন অরাজক অবস্থা যে মুড়ি মুড়কির একদর; কোথাও চূড়ান্ত অপশাসন দেখা দিলে এই প্রবাদ ব্যবহার করা হয়।
আন্ধা-এ দোকানদেরে, খরিদ করে কালে দোকানদার অন্ধ; খরিদ্দার কালা- দুইই সমান অপদার্থ।
আপৎসু বৈরাণি সমুদ্ভবন্তি আপৎকালে নানাপ্রকার বৈরিতা উৎপন্ন হয়; তুলনীয়- 'ক্ষতে প্রহারা নিপতন্তি'; 'ছিদ্রেস্বনর্থা বহুলী ভবন্তী'; 'ধনক্ষয়ে মুর্ছতি জাঠরাগ্নি'।
আপ্ ভলা তো জগ্/সব ভলা ভালোর চোখে সবই ভালো; যে নিজে ভালো সে সবকে ভালো দেখে এবং সবাই তাকে ভালো দেখে।
আপন কখনো পর হয় না কাছের মানুষ কখনো দূরের হয় না; সমতুল্য-'বসূধৈব কুটুম্বম'; বিরুদ্ধ প্রবাদ-'আপন থেকে পর ভাল'; 'কাছের লোক কাছের নয়'; 'বারো রাজপুতের তেরো হাঁড়ি';'ভাইভাই ঠাঁই ঠাঁই';'যত রক্তের কাছাকাছি তত রক্তারক্তি' ইত্যাদি।
আপন/আপনার কোটে পাই চিঁড়ে কুটে খাই নিজের আয়ত্বে কাউকে পেলে আর ছেড়ে কথা নেই; তাকে নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করা যায়।
আপন/আপনার কোলে ঝোল সবাই টানে সবাই নিজের স্বার্থ দেখে, পরার্থের কথা ভাবেই না।
আপন/আপনার গাঁয়ে কুকুর/শিয়াল রাজা নিজের ঘরে সবাই রাজা; নিজের এলাকায় সবাই কর্তৃত্ব ফলায়; নিজের গণ্ডীতে সবাই নিজেকে বড় মনে করে; জিন্দি পাঠান্তর- 'আপনা মহল্লামে কুত্তা শের'।
আপন/আপনি গেলে ঘোল পায় না চাকরকে পাঠায় দুধের তরে যেখানে নিজের অনুরোধ রক্ষা হয় না সেখানে অপরকে দিয়ে কোন কাজ করার ব্যর্থ চেষ্টা; যখন আগে থেকেই অনুমান করা যায় যে কারো প্রচেষ্ঠা ব্যর্থ হবে, তখন তার প্রচেষ্টাকে ব্যঙ্গ করে এই প্রবাদ বলা হয়; সমতুল্য-'মনিব গেলে ঘোল পায় না বেঁশোকে পাঠায় দুধের তরে'।
আপন/আপনার ঘর রাজপ্রাসাদ নিজের ঘরের মত সুন্দর স্থান জগতে নেই।
আপন/আপনার ঘরে সবাই রাজা নিজের ঘরে যেমন প্রভুত্ব করা যায় অন্যত্র তেমন পারা যায় না।
আপন/আপনার ঘোল কেউ টক বলে না নিজের জিনিস খারাপ বলে বিক্রেতা দাম কমায় না।
আপন/আপনার চরকায় তেল দাও নিজের কাজে মন দেওয়া উচিৎ; পরনিন্দা, পরচর্চা করা কাম্য নয়।
আপন/আপনার চেয়ে পর ভালো, পর চেয়ে জঙ্গল ভালো নিজের লোক নিজের হয় না; অনেকক্ষেত্রেই আত্মীয় উপেক্ষা করে; অনাত্মীয়রা সাহায্যের হাত বাড়ায়; সমতুল্য-'বারো রাজপুতের তেরো হাঁড়ি';'ভাইভাই ঠাঁইঠাঁই';'যতই রক্তের কাছাকাছি তঈই রক্তারক্তি' ইত্যাদি; বিরুদ্ধ উক্তি- 'আপন কখনো পর হয় না'; 'বসূধৈব কুটুম্বম' ইত্যাদি।
আপন/আপনার ছাগল বেঁধে রাখি পরের ছাগল হাততালি দিই হাততালি দিলে ছাগল পালায় এবং তাকে ধরতে কষ্ট হয়; নিজে সাবধান থেকে পরের অনিষ্ট করলে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়।
আপন/আপনার ছিদ্র জানে না পরের ছিদ্র খোঁজে লোকে নিজের দোষ দেখে না শুধু পরের দোষ খুঁজে বেড়ায়; সমতুল্য- ছুঁচ বলে চালুনি তোর পিছন কেন ছ্যাঁদা?
আপন/আপনার নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ খ্যাঁদা নাক দর্শন বিদেশযাত্রার পক্ষে অশুভ বিবেচনা করা হয়; তাই নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করার চেষ্টা; নিজের অনিষ্ট করে পরের অনিষ্ট করার অপচেষ্টা।
আপন/আপনার পাঁজি পরকে দিয়ে দৈবজ্ঞ বেড়ায় মাথায় হাত দিয়ে এক জ্যোতিষী নিজের পাঁজি অন্যকে দেওয়ায় গণনা করতে পারে না; ফলে তার রুজিরোজগার বন্ধ হয়ে যায়; অন্যের উপকার করতে গিয়ে কেউ নিজের ক্ষতি করলে তার অবস্থা বর্ণনা করতে এই প্রবাদ বলা হয়; পাঠান্তর- 'আপন/আপনার পাঁজি পরকে দিয়ে দৈবজ্ঞ বেড়ায় পথে পথে'।
আপন/আপনার পাঁঠা লেজে কাটি স্ব-ইচ্ছা কাজ করার পক্ষে ওকালতি; নিজের অধিকারে থাকা সব কাজ স্বাধীনভাবে করা যায়।
আপন/আপনার পানে চায় না শালি পরকে বলে তোবড়াগালি স্বার্থপর অহঙ্কারী নারীরা নিজের রূপকে ভুলে গিয়ে পরের রূপ বিচার করতে যায়, যা উচিত নয়।
আপন/আপনার পায়ে কুড়াল মারা নির্বুদ্ধিবশতঃ জেনেশুনে নিজের ক্ষতি করা।
আপন/আপনার বুদ্ধিতে ছিল ভাল, পরবুদ্ধিতে পাগল হল // আপন বুদ্ধিতে তর, পরবুদ্ধিতে মর নিজের বুদ্ধিতে চলা ভালো; পরের বুদ্ধিতে চলা ঠিক নয়; পরের বুদ্ধিতে চলে যদি কোন ক্ষতি হয় তবে আফশোসের সীমা থাকে না।
আপন/আপনার বুদ্ধিতে ফকির হই, পর বুদ্ধিতে বাদশা নই নিজের বুদ্ধি অনেক ভালো; ভাল হোক বা মন্দ হোক অনেকে এই গোঁ ধরেই কাজ করে; পাঠান্তর- 'আপন বুদ্ধিতে ভাত, পরের বুদ্ধিতে হা-ভাত'।
আপন/আপনার বেলায় আঁটিসাটি, পরের বেলায় দাঁতকপাটি নিজের স্বার্থের দিকে ষোলআনা নজর; পরের স্বার্থ চুলোক যাক।
আপন/আপনার বেলায় চাপন-চোপন পরের বেলায় ঝুরঝুরে মাপন ক্রেতা হলোে ওজনে ঝুঁকতি চায়; বিক্রেতা হলোে পাল্লার কাঁটার দিকে নজর রাখে; আপনার দিকে ঝোঁক বেশি রাখে পরকে দেয় সামান্য।
আপন/আপনার বোন ভাত পায়না শালীর তরে মন্ডা একপেশে সঙ্কীর্ণ বিচার; ন্যায্য দাবীদারকে উপেক্ষা করে অপর কাউকে সাহায্য করা; বৌয়ের আঁচলধরা ব্যক্তি; যখন কোন ন্যায্য দাবীকে উপেক্ষা করে কেউ অপরকে সাহায্য করে তখন তাকে তিরস্কার করতে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়; পাঠান্তর- 'আপন ভাই ভাত পায় না শালার তরে মণ্ডা'।
আপন ভাল তো জগৎ ভাল ভালোর চোখে সবই ভাল; হিন্দি পাঠান্তর- 'আপ ভলা তো জগ ভলা'।
আপন ভাল পাগলও বোঝে যার বিন্দুমাত্র বোধজ্ঞান আছে সেও নিজের স্বার্থটা ভালো বোঝে; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'জাতে মাতাল তালে ঠিক'।
আপন মান আপন/আপনার ঠাঁই নিজের মান নিজের আশ্রয়।
আপন মান আপনি রাখো, কাটা কান চুলদে ঢাকো১ ঘরের কুৎসা বাইরে প্রচার করতে নেই।
আপন মান আপনি রাখো, কাটা কান চুলদে ঢাকো২ নিজের সম্মান নিজে বাঁচাও।
আপনা গলিমে কুত্তা শের নিজের ঘরে সবাই রাজা; নিজের এলাকায় সবাই কর্তৃত্ব ফলায়; পাঠান্তর-আপনা মহল্লামে কুত্তা শের
আপনা মাংসে হরিণা বৈরি১ হরিণের শত্রু তার নিজের মাংস;
আপনা মাংসে হরিণা বৈরি২ কারো কোন ভালকাজ যখন ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায় তখন প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়।
আপনা মুঁহ মিয়াঁ মিট্‌ঠু বনানা- আত্মপ্রশংসা করা; সজ্জন লোকের আত্মপ্রশংসা করা উচিত নয়।
আপনা হাত জগন্নাথ খুব কৃপণস্বভাবের লোক; কাউকে কিছু দিতে হলোে একেবারে ঠুঁটো (হস্তহীন) জগন্নাথ হয়ে পড়ে।
আপনা হাত জগন্নাথ, পরের হাত এঁটো পাত নিজের সব জিনিস ভালো, সমর্পযায়ের পরের সব জিনিস খারাপ; পরের জিনিসকে ঘৃণা করার প্রবণতাকে ব্যঙ্গ করতে এই প্রবাদ বলা হয়।
আপনাকে বড় বলে বড় সেই নয়, লোকে যারে বড় বলে বড় সেই হয়- ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত নিজেকে যে বড় বলে সে তত ছোট হয়; 'মানুষ হল ভগ্নাংশের মত; লব হল সে নিজে এবং হর হল সে নিজেকে যা ভাবে; নিজেকে সে যত বড় ভাবে ততই সে ছোট হতে থাকে'- টলস্টয়।
আপনার আপনার কিছু নয়, জগৎ কেবল মায়াময় এই সংসারে আমার তোমার বলে কিছু নেই, সবই অনিত্য।
আপনার আপনি ডোর আর কাপনি সন্ন্যাসীর কাছে লেঙ্গট আর কটিবন্ধই সব; শে অন্যলোকসম্পর্কে ভাবনা-চিন্তাহীন; শুধু নিজের চিন্তাতেই মগ্ন; নিজের পাওনাটা হলেই হল।
আপনার কথা কয় না শালী পরকে বলে টেবোগালী নিজের ছিদ্র জানে না পরের ছিদ্র খুঁজে বেড়ায়; সমতুল্য- 'চালুনী বলে সুঁই তোর মার্গে কেন ছেঁদা'; 'চালুনী বলে ধুচুনিভাই তুমি বড় ফুটো'; আত্মচ্ছিদ্রং ন জানাতি পরচ্ছিদ্রং পদেপদে' ইত্যাদি।
আপনার ঢাক আপনি বাজায়/পেটায় নিজেই নিজের গুণগান করে; নিজের কথা পুনঃপুনঃ উল্লেখ করে; নিজের বক্ত্যব্যকে গুরুত্ব দেয়; পাঠান্তর- 'আপনার কথা পাঁচকাহন'।
আপনার কিছু নয়, জগৎ মায়াময় এই সংসারে তোমার আমার বলে কিছু নেই, সবই অনিত্য; এ মায়া প্রপঞ্চময়।
আপনার গায়ে/গুয়ে গন্ধ নেই পরের গায়ে/গুয়ে গন্ধ নিজের সব ভালো; পরের সব খারাপ; পাঠান্তর- 'আপনার ঘামে/বগলে গন্ধ নেই পরের ঘামে/বগলে গন্ধ'।
আপনার ঘোল কেউ টক বলে না১ নিজের জিনিস কেউ খারাপ বলে না।
আপনার ঘোল কেউ টক বলে না২ নিজের দোষ কেউ দেখে না।
আপনার চড়কায় তেল দাও নিজের কাজ কর পরের কাজে নাক গলিয়ো না।
আপনার চেয়ে পর ভাল; পরের চেয়ে জঙ্গল ভাল আমার নিজের বা আমার আপন জন ধারণাটাই সম্পূর্ণ ভ্রান্ত বা মিথ্যা।
আপনার ছিদ্র জানে না পরের ছিদ্র খোঁজে নিজের দোষ দেখে না পরের দোষ খোঁজে; সমতুল্য- চালুনি করে ছুঁচের বিচার'; 'কাঁঠাল ভাই তুমি বড় খসখসে';'ঝাঁজরি বলে খৈচালা তুই বেজায় ফোঁড়ওয়ালা';'নিজের পাছায় ন'মন গু আমারে বলে তোরখান ধু' ইত্যাদি।
আপনার ছেলেটি খায় এতটি চলে/বেড়ায় যেন ঠাকুরটি; পরের ছেলেটা খায় এতটা, চলে/বেড়ায় যেন বানরটা মন্দ হলেও নিজের বস্তু ভালো; ভালো হলেও পরের বস্তু মন্দ; নিজের ছেলের প্রতি যত্ন-আত্তি; পরের ছেলের প্রতি তুচ্ছতাচ্ছিল্য।
আপনারটা ঢাকা থাক পরেরটা বিকিয়ে যাক পরের অনিষ্ট হয় হোক নিজের স্বার্থ বজায় থাকলেই হলো।
আপনার ঢোল আপনি পেটায়/বাজায় আত্মপ্রশংসায় পঞ্চমুখ।
আপনার ধন পরকে দিয়ে দেবকী মরে মাথা খুঁড়ে আগে অধিকার ছেড়ে পরে হাহুতাশ করে; সম্পদ বিলিয়ে দিলে শেষে পরের অনুগ্রহে বাঁচতে হয়; পাঠান্তর- 'আপনার ধন পরকে দিয়ে মর এখন পাত কুড়িয়ে'।
আপনার নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করা নিজের ক্ষতি স্বীকার করে পরের ক্ষতি করা।
আপনার পাঁজি পরকে দিয়ে দৈবজ্ঞ বেড়ায় মাথায় হাত দিয়ে অন্যের উপকার করতে গিয়ে নিজের ক্ষতি করা; প্রয়োজনীয় জিনিস পরের হাতে থাকলে দরকারের সময় অনেক অসুবিধা হয়।
আপনার পাঁঠা লেজে কাটে আপনার বিষয়ে যা খুসি করা যায়; তাতে কারো কিছু বলার থাকে না; নিজের ভাল সবাই বোঝে।
আপনার পায়ে কুড়ুল মারে জেনেশুনে নির্বুদ্ধিতায় নিজের ক্ষতি করে।
আপনার বেলায় আঁটিসাটি পরের বেলায় দাঁতকপাটি নিজের বেলায় কড়াকড়ি; পরের বেলায় কিছু না।
আপনার বিড়াল পথ্যি পায় না যার নিজের অন্নের সংস্থান নেই তার পক্ষে অন্যকে সাহায্য করা অসম্ভব।
আপনার বেলায় পাঁচকড়ায় গণ্ডা নিজের স্বার্থ বিলক্ষণ বোঝা; নিজের জন্য সুবিধাজনক ব্যবস্থা, পরের বেলায় বিপরীত; পাঠান্তর- 'আপনার বেলায় ছকড়ায় গণ্ডা, পরের বেলায় তিনকড়ায় গণ্ডা'।
আপনার ভাল পাগলেও বোঝে আপনার ভাল সবাই বোঝে; যার সামান্য বুদ্ধি আছে সেও স্বার্থটা ভালো বোঝে।
আপনার মত জগৎ দেখা নিজের আয়নায় পরকে দেখা; গুণী কোন নির্গুণ খুঁজে পায় না, নির্গুণ আবার কোন গুণী খুঁজে পায় না; সমতুল্য- 'আত্মবৎ মন্যতে জগৎ'।
আপনার মাথা আপনি খায় নিজের ক্ষতি নিজেই করে।
আপনার মন দিয়ে পরের মন জানা নিজেকে দিয়ে পরের বিচার করা; নিজের আয়নায় পরকে দেখা।
আপনার মান আপনি রাখি কাটা কান চুলদে ঢাকি আত্মসম্মান নিজের হাতে; নিজের মান নিজেকেই বাঁচাতে হয়; ঘরের কথা বাইরে যে বলে সে আহাম্মক; পাঠান্তর- 'আপনার মান আপনার কাছে/হাত'।
আপনার পায়ে আপনি কুড়ুল মারা জেনেশুনে নিজের সর্বনাশ করা।
আপনারটা ঢাকা থাক পরেরটা বিকিয়ে যাক পরেরটা নষ্ট হয় হোক, নিজেরটা ভালো থাকলেই হল।
আপনারটা ষোলআনা পরেরটা কিছু না নিজের বেলায় সবটাই নেবো, পরের বেলায় কিছু দেবো না।
আপনারটা সবাই বড় দেখে নিজের জিনিস অন্যের জিনিসের তুলনায় মুল্যবান মনে হয়।
আপনারে বড় বলে বড় সেই নয়; লোকে যারে বলে বড় সেই হয়- ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত আত্মপ্রশংসা মান্যতা পায় না।
আপনি আচরি ধর্ম অন্যেরে/অপরে শিখাও যে আচরণ অপরকে শেখাবে তা নিজে আগে শেখ; নিজে আচরণ করে পরকে অনুপ্রাণিত করতে হয়; যা নিজে মানো না তা অপরকে শেখাতে যেও না; সমতুল্য- 'উপদেশ অপেক্ষা উদাহরণ/দৃষ্টান্ত ভাল'; বিরুদ্ধ উক্তি- 'যা বলি তাই কর, যা করি তাই করো না'।
আপনি খেতে ভাত পায় না শঙ্করাকে ডাকে অন্যের দয়ায় বেঁচে থেকে অন্যকে সাহায্য করার চেষ্টা; নিজের আয় দিয়ে নিজের চলে না; অথচ অন্যের জন্য খরচ করে; আহাম্মকের রকম-ফের; পাঠান্তর- আপনি ঠাকুর ভাত পায় না শঙ্করাকে ডাকে; 'আপনি শুতে ঠাঁই পায় না শঙ্করাকে ডাকে'।
আপনি গেলে ঘোল পায় না চাকরকে পাঠায় দুধের তরে যেখানে নিজের অনুরোধ রক্ষা হয় না সেখানে অপরকে দিয়ে কোন কাজ করার চেষ্টা; যখন আগে থেকেই অনুমান করা যায় যে কারো প্রচেষ্ঠা ব্যর্থ হবে, তখন তার প্রচেষ্টাকে ব্যঙ্গ করে এই প্রবাদ বলা হয়; সমতুল্য-'মনিব গেলে ঘোল পায় না বেঁশোকে পাঠায় দুধের তরে'।
আপনি তুষ্টে জগৎ তুষ্ট নিজে সন্তুষ্ট থাকলে জগৎ সন্তুষ্ট থাকে।
আপনি পাগল ভাতার পাগল পাগল তার চেলা; এক পাগলে রক্ষা নেই তিন পাগলের মেলা- লালন বাউলের ভাববাদী দর্শন; এই সংসার পাগলের মেলা।
আপনি পায় না পরকে বিলায় অবিবেচনাপ্রসূত কাজ।
আপনি বড় ভালো, তাই লোককে বলেন কালো নিজে মন্দ হয়েও অপরকে মন্দ বলে-এমন নীচব্যক্তির প্রতি বক্রোক্তি।
আপনি বাঁচলে বাপের নাম আত্মরক্ষাই সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম; নিজের জীবনের মূল্য অন্য সবকিছু থেকে বেশি; নিজের স্বার্থ দেখা বা নিজেকে বাঁচিয়ে চলা উচিত; সমতুল্য-'আগে ঘর পরে পর, ঘর সামলে পরকে ধর'; 'আত্ম রেখে ধর্ম তবে পিতৃকর্ম';'চাচা আপন প্রাণ বাঁচা' ইত্যাদি।
আপনি ভালো তো জগৎ ভালো নিজে ভালো হলোে অন্যরাও ভালো হয়।
আপনি ভালো তো জগৎ ভালো তারই মান থাকে, আপনি মন্দ তো জগৎ মন্দ কে তার মান রাখে? ভালো লোকেরা সমাজে সম্মানির হয়; মন্দলোকেদের কেউ পোছেও না।
আপনি যেমন জগৎ তেমন আপনার আশিতে পরকে দেখা; আপনি ভালো তো জগৎ ভালো' সমতুল্য- 'আপ ভালা তো জগৎ ভালা'।
আপনি যেমন ঢেমন জগৎ দেখি তেমন যে নিজে দুশ্চরিত্র, সে অপরকে দুশ্চরিত্র ভাবে।
আপনি যেমন বীজ বপন করবেন তেমন ফসল পাবেন মানুষ কর্মফল অনুসারে তিরস্কৃত ও পুরস্কৃত হয়; সমতুল্য-'যেমন কর্ম তেমন ফল'; 'যেমন শয্যা তেমন শয়ন'।
আপনি শুতে ঠাঁই নাই শঙ্করাকে ডাকে যার নিজের শোয়ার স্থান নেই তার পক্ষে অন্যকে শুতে আহ্বান করা নির্বুদ্ধিতা; বিরুদ্ধ উক্তি- 'যদি হয় সুজন তেঁতুল পাতায় নজন'।
আপনে গলিমে/মহল্লামে কুত্তা শের নিজের এলাকায় সবাই কর্তৃত্ব ফলায়; সুযোগ পেলে ভৃত্যও প্রভুত্ব করে।
আপনে রামকো ভজৈ, রিঝ ভজে বা খিজ ইষ্টদেবতাকে যেভাবেই ভজনা কর-না-কেন তিনি ঠিক বুঝতে পারেন।
আপ ভলা তো জগৎ/সব ভলা নিজের মন ভাল হলে সবাইকে ভাল মনে হয় এবং সবার কাছে ভাল ব্যবহার পাওয়া যায়।
আপ রুচি খানা, পোর রুচি পরনা (পিহনা) নিজের রুচিমত খাও তবে অন্যের চোখে যে বেশ ভালো দেখায় তাই পরিধান কর।
আপেল গাছের তলাতেই পড়ে বংশধররা সাধারণত পূর্বপুরুষদের মতোই হয়। শিশুরা বড় হয়ে তাদের পিতামাতার মত হয়; তুলনীয়- 'নরানাং মাতুলাক্রম'; পাঠান্তর- 'আপেল গাছের দূরে পড়ে না।
আবর তাঁতী গোবর খায় স্ত্রীর বাক্যে মরতে যায় আগে ধারণা ছিল তাঁতীরা খুব বোকা হয়; এই ভাবার্থে কোন বুদ্ধিহীন লোক সম্পর্কে এই প্রবাদটি প্রযুক্ত হয়।
আবাগের বেটা ভূত হতভাগ্যের বেটা অপদার্থ,কাণ্ডজ্ঞানহীন- গালি বিশেষ
আবালে না নোয়ালে বাঁশ, বাঁশ করে টাঁশ টাঁশ 'কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ বাঁশ করে টাঁশ টাঁশ'- দ্রষ্টব্য
আবিল দৃষ্টি সব হলদে দেখে মন্দের চোখে সবই মন্দ; সমতুল্য- 'কামলার চোখে সব শ্যামলা মনে হয়'।
আবুহোসেন গিরীশ ঘোষ প্রণীত রঙ্গনাটক 'আবুহোসেনের' প্রধান চরিত্র; অপব্যয়ী বিলাসী যুবকের উপমাস্থল; ছেঁড়া কাথায় শুয়ে যারা লাখ টাকার স্বপ্ন দেখে তাদের বিদ্রূপ করে আবুহোসেন আখ্যা দেওয়া হয়।
আবৃত্তিঃ সর্বশাত্রাণাং বোধাদপি গরিয়সী সব শাস্ত্রবোধ থেকে আবৃত্তির গৌরব অনেক বেশি।
আম না থাকলে আমড়া চোষে সারবস্তু না পেলে অসারবস্তু উপভোগ করতে বাধ্য হয়; সার না পেলে অসারই সই; একটা কিছু হলেই হল; অভাগার এর বেশি কিছু জোটে না; পাঠান্তর- ১আম না পেয়ে আটিঁ চোষে'।
আম না হতে আমসত্ব কাজ না হতেই ফলের আশা; আগাম সুখকল্পনা; সাফল্যের সম্ভাবনা নিয়ে অতিরিক্ত আশাবাদী হওয়া; সমতুল্য- 'কালনেমির লঙ্কাভাগ'; 'গাছে না উঠতেই এককাঁদি'; 'রাবণের ছাদনাতলা' ইত্যাদি।
আম পাকলে মিঠা, মানুষ পাকলে তিতা পরিণতবুদ্ধি হলে মানুষ স্বার্থান্বেষী হয়; নিজের ভালো ও পরের মন্দ খোঁজে।
আম শুকালে আমসী যৌবন ফুরালে কাঁদতে বসি বয়স বাড়লে রস শুকায়; নারীর যৌবন ফুরালে আদর থাকে না।
আমও গেল ছালাও গেল লাভ করতে গিয়ে সর্বস্ব হারানো।
আমড়াগাছে আম ফলে না কুবংশে সুসন্তান জন্মায় না; মন্দলোকের কাছে ভালো ব্যবহার প্রত্যাশা করা যায় না; সমতুল্য- 'ছাগলের লোমে পশম হয় না'।
আমড়াতলায় আম পেলে আমতলায় কেবা যায় সহজে কিছু পেলে কেউ কষ্ট স্বীকার করতে চায় না; সমতুল্য- 'আকন্দে যদি মধু পাই তবে কেন পর্বতে যাই'; 'হাতে যদি ফল পাই তবে কেন আঁকুশি চাই'।
আমরা বাঁচার সাথে সাথে একটু একটু করে মরি বয়স দিনেদিনে বৃদ্ধি পায়; আয়ু দিনেদিনে ক্ষয় হয়; সমতুল্য- 'আয়ুর্যাতি দিনে দিনে'।
আমরা যতই জানি ততই নিজের অজ্ঞানতা আবিস্কার করি জ্ঞানী জানে যে সে কিছুই জানে না; বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি- রবীন্দ্রনাথ।
আমাদের প্রধান বিশ্বাসগুলি হল অন্ধবিশ্বাস রিপু নামক অন্ধকারের তাড়নায় কেউ আলোর (সত্য) খোঁজ পায় না; বিশ্বাস যুক্তির ধার ধরে না।
আমার আমার যত করি, চিনির বলদ হয়ে মরি সংসারীরা আসলে ভারবাহী জন্তুছাড়া আর কিছু নয়; সংসারের ভার বইতে গিয়ে তারা সুখ আর উপভোগ করতে পারে না।
আমার নাম নিতাই, এক খাই আর এক থিতাই অতি সতর্কলোক, যে বর্তমানের সাথে সাথে ভবিষ্যতেরও সংস্থান করে থাকে; যে ব্যক্তি অভিষ্ট বস্তু পাওয়ার পর পুনরায় সেটা পাওয়ার চেষ্টা করে তার ক্ষেত্রে এই প্রবাদ প্রযোজ্য।
আমার পরে পৃথিবী ধ্বংস/মহাপ্লাবন আমি নেই তো পৃথিবী নেই; সুতরাং আমার কোন ভাবনাও নেই; তুলনীয়- 'চোখ বুজলে সব অন্ধকার'।
আমার বুদ্ধি শোনো, ঘরদোর ভেঙে ফেলে নটে শাক বোনো মানুষ ভাবে সে বড় বুদ্ধিমান; স্বভাবদোষে সবাইকে পরামর্শ দেয়; এমনকি যে নিজের ভালমন্দ বোঝে না সেই নির্বোধও অপরকে পরামর্শ দিয়ে যায়; আহাম্মক আহাম্মকের মতই পরামর্শ দেয়; তাদের ক্ষেত্রে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়।
আমার হাতদুটি ধর, তাহলোেই তোমার হাতদুটি আমার ধরা হবে মানুষ মানুষের জন্য; জীবন জীবনের জন্য; একতাই বল; আমরা পরস্পর পরস্পরের সহযোগিতায় বাঁচি।
‘আমি আমি’ করেই মানুষ মল অহংকারেই মানুষ মরে।
আমিও ফকির হলাম দেশেও আকাল (মন্বন্তর) এলো জীবিকা নির্বাহের জন্য একব্যক্তি ফকির হয়েছিল এই আশায় যে ভিক্ষালব্ধ অর্থে জীবনধারণ করবে; কিন্তু তার এমনই দুর্ভাগ্য যে সেই সময় দেশে আকাল এলো; ফলে তার ভিক্ষা পাওয়া দুরূহ হয়ে উঠল; কোন কাজ অস্বাভাবিকভাবে বাধাপ্রাত হলে এই প্রবাদ প্রযুক্ত হয়।
আমি কম্বল ছেড়ে দিয়েছি কিন্তু কম্বল আমায় ছাড়ছে না বিপদ এড়াতে চাইলে কি হবে, বিপদ আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে থাকে; (উৎসকাহিনী- একটা ভাল্লুক নদীতে ভেসে যাচ্ছিল; ভাল্লুককে কম্বল ভেবে সেটা নিতে একটি লোক নদীতে নামে; সে ভাল্লুককে জড়িয়ে ধরলে ভাল্লুকও তাকে জড়িয়ে ধরে; কেউ কাকে ছাড়ে না; লোকটি ডুবে যাচ্ছে দেখে তীরের বন্ধু তাকে কম্বল ছেড়ে দিয়ে উঠে আসতে বলে; উত্তরে লোকটি তখন উপরোক্ত বাক্যটি বলে; কোন বিরক্তিকর কাজ ছেড়ে দিতে চাইলেও ঘটনাক্রমে সেই কাজ থেকে মুক্তি না পেলে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়; হিন্দি পাঠান্তর- 'হাম ছোড়া লেকিন কমলি ছোড়তা নেহি'।
আমি কি নাচতে জানিনে, মাজার ব্যাথায় পারিনে মিথ্যা ওজরে নিজের অক্ষমতা ঢাকার অপচেষ্টা।
আমি কি নেড়ি ভেড়ি আমার পাঁচখানা কাপড় ধোপার বাড়ী গরিবের বড়লোকী চাল; কিছু নেই তবু তার বড়াইয়ে কার্পণ্য নেই; সম্পদের প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা।
আমি জানি না-বলতে শেখাটাই সবচেয়ে বড় শিক্ষা-হিব্রু প্রবাদ কারো পক্ষে সব জানা সম্ভব নয়; জানতে জানতে জানা যায়; জানার কোন শেষ নাই।
আমি জীবনপাত্রের তলানিটুকু নিঃশেষে পান করব- মিলটন জীবন চুটিয়ে ভোগ করার লিপ্সা; চার্বাকী দর্শন- 'হেসে খেলে নাও দুদিন বইতো নয়'।
আমি নেই তো জগৎ নেই আমি মরল সব শেষ; ভবিষ্যৎ সম্পর্কেে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই; সঙ্কীর্ণ স্বার্থপরের মত চিন্তাধারা; সমতুল্য- 'আমার পরে মহাপ্লাব'; 'চোখ বুজলে সব অন্ধকার'।
আমি যাই বঙ্গে কপাল যায় সঙ্গে হতভাগ্যের ভাগ্য কখনো ফেরে না; অভাগার অদৃষ্ট কখনো সঙ্গ ছাড়ে না; সমতুল্য- 'অভাগা যে দিকে চায় সাগর শুকায়ে যায়'; 'ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে'; 'পোড়া কপাল জোড়া লাগে না'।
আমি যা বলি তাই কর আমি যা করি তা নয় এমন অনেক মহানচরিত্রের মানুষ আছেন যাঁরা সদুপদেশ দেন কিন্তু নিজেরা অনুরূপ আচরণ করেন না; তাঁরা অবশ্য নিজেদের চারিত্রিক দুর্বলতাসম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন এবং সেটা তারা স্বীকারও করেন; তুলনায়- 'মাকড় মারলে ধোকড় হয়'; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'পরোপদেশে পাণ্ডিত্যং সর্বেষাং সুকরং নৃণাম্'।
‘আমি’ যাবে মলে অহমহমিকাবোধ নিয়ে মানুষ মরে।
আমি যার করি আশ সেই করে সর্বনাশ যার কাছ থেকে সাহায্য প্রত্যাশা করা হয় সেই উল্টে সর্বনাশ করে।
আমে দুধে এক হয়, আঁটি যায় গড়াগড়ি১ উপরতলায় গলাগলি, নীচের তলায় হেলাফেলা; পাঠান্তর- 'আমে দুধে এক হয়,আদাড়ের আঁটি আদাড়ে যায়'।
আমে দুধে এক হয়, আঁটি যায় গড়াগড়ি যোগ্য যোগ্যের সাথে মিলিত হয়, নিস্প্রয়োজনীয় বস্তু ফেলা যায়।
আমে দুধে এক হয়, আঁটি যায় গড়াগড়ি৩ দুইপক্ষের মধ্যে মিমাংসা হয়ে গেলে মধ্যস্থকারী সরে যায়।
আমে ধান তেঁতুলে বান- খনা আমের ফলন বেশি হলে ধান বেশি ফলে; তেঁতুলের ফলন বেশি হলে দেশে বন্যা হয়।
আয় বুঝে ব্যয় কর অপব্যয় করো না, মিতব্যয়ী হও; সমতুল্য- 'অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নাও'; 'ওজন বুঝে চল'; 'কাপড় বুঝে জামা কাটো'; 'জিত্‌নি চদ্দর দেখো, উৎনি পৈর ফৈলাও' ইত্যাদি
আয়না যে মুখ দেখে সেই মুখ দেখায় অন্যের ক্ষতি করলে নিজেরও ক্ষতি হয়; ধাক্কা দিলে পাল্টা ধাক্কা খেতে হয়; সমতুল্য-'আঘাত করলে প্রত্যাঘাত খেতে হয়'; 'ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়';'ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া থাকে','চড় মারলে চড় খেতে হয়';'ধ্বনির প্রতিধ্বনি আছে/থাকে' ইত্যাদি।
আয়-ব্যয় শূন্যস্থিতি যা আয় হয় সব খরচ হয়ে যায়, কিছুই বাঁচে না; টানাটানির সংসার।
আয়ুর্ম্মর্ম্মাণি রক্ষতি সকলসঙ্কট থেকে আয়ু প্রাণকে রক্ষা করে; আয়ু থাকলে কেউ মরে না; তুলনীয়- 'রাখে কেষ্ট/হরি মারে কে?'
আয়ুর্যাতি দিনেদিনে আয়ু দিনেদিনে ক্ষয় হয়; বয়বৃদ্ধির সাথেসাথে আমরা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলি।
আর কি নেড়া বেলতলায় যায় যে একবার ঠকেছে সে খুব সতর্ক থাকে যাতে দু'বার ঠকতে না হয়।
আর গাব খাব না, গাবতলা দিয়ে যাব না; গাব খাব না ত খাব কি, গাবের মত আছে কি তৃপ্তিসাধনে কিছু করে বিপদে পড়লে দ্বিতীয়বার তা না করার প্রতিজ্ঞা করে; কিন্তু বিপদ থেকে মুক্ত হলেই আগের মূর্তি ধরে; লোভ-রিপুকে সম্বরণ করা বড়ই কঠিন ব্যাপার।
আরগুণ নাই ছারগুণ আছে আর কোন গুণ নেই, শুধু নষ্ট করার গুণ আছে; কোন ভালগুণ নেই, শুধু মন্দগুণ আছে; দুঃখনাশের গুণ নেই, শুধু দুঃখবৃদ্ধির গুণ আছে; পাঠান্তর- 'অরগুণ নাই বরগুণ আছে'।
আরম্ভ করলে শেষ হতে আর কতক্ষণ? আরম্ভ করতেই অর্ধেক সময় যায়; আরম্ভ করলেই অর্ধেক কাজ সমাপ্ত
আরম্ভ করলে শেষ দেখে ছাড়তে হয় আধা-খেঁচড়া কাজ করা উচিত নয়।
আরম্ভসদৃশোদয়ঃ যেভাবে আরম্ভ হয় শেষ বা সমাপ্তিও সেইভাবে হয়।
আরশোলা হল পাখি, রইল কী আর দেখতে বাকি ডানা থাকলেই পাখি হয় না; কাগজ নাড়াচাড়া করলেই বিচারক হয় না; দুই অসম বিষয়ের তুলনা হয় না; কিসে আরে কিসে সোনা আর সিসে; যে যা নয় সেই দাবী করলে এই প্রবাদ তার প্রতি ব্যঙ্গ হিসাবে প্রযোজ্য হয়; পাঠান্তর-আরশোলাও পাখি, মুন্সেফও হাকিম'।
আরাম অলসের ধন অলসব্যক্তি খুব আরামপ্রিয় হয়।
আরাম হারাম হায় আরাম করা স্বাস্থ্যের পক্ষে হানিকর; পরিশ্রমই শেষ কথা।
আরের দাঁত আড় ছিরে বুড়োর মাড়ি সমর্থলোক দাঁত দিয়ে যে কাজ করতে পারে একটা বুড়োলোক মাড়ি দিয়ে সেইকাজ অনায়াসে করতে পারে; অপরে বহু আয়াসে যেকাজ করতে পারে ব্যক্তিবিশেষে সেই কাজ অনায়াসে করতে পারে।
আরের মন আর দিকে চোরের মন বোঁচকার দিকে কোন লোকে কেবল নিজের স্বার্থের দিকে নজর রাখলে এই বাক্য প্রযুক্ত হয়
আলখাল্লা/আলখিল্লা পরলেই মোল্লা হয় না পোষাক সত্যকথা বলে না; বাহ্যিক আড়ম্বরে ধার্মিক হওয়া যায় না; অন্তরে ভক্তি ও নিষ্ঠা থাকা প্রয়োজন; সমতুল্য-'চকচক করলেই সোনা হয় না'; 'তিলক পরলেই বৈষ্ণব হয় না';'পৈতা থাকলেই বামুন হয় না'; 'মন্দিরে গেলেই সাধু হয় না' ইত্যাদি।
আলগা চুলে খোঁপা বাঁধা১ দুর্বলের উপর সবলের বলপ্রয়োগ।
আলগা চুলে খোঁপা বাঁধা২ শিথিলব্যবস্থাকে অনুশাসনের মধ্যে আনা।
আলগা জিহ্বা দুষ্ট দুটোহাত থেকেও খারাপ অসংযত কথাবার্তা বলে মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আলগা পেলে সন্ন্যাসীও মাতে কঠোর অনুশাসন কারও মনঃপুত নয়; মনোরম ঢিলেঢালা জীবন পরম আদরণীয়; সবাই রিপুর অধীন; সাধুসন্ন্যাসীরাও বাদ যায় না।
আলগা মাটিতে বিড়াল আঁচড়ায়/হাগে নরম লোক পেলে সাবাই তার উপর আধিপত্য ফলায়।
আল ভেঙে জল যাচ্ছে, ভালুকে তালি মারছে একজনের ক্ষতিতে অন্যজনের আনন্দ প্রকাশ।
আলস্যং হি মনুষ্যানাং শরীরস্থো মহান রিপু শরীরের আলস্য মানুষের প্রধান শত্রু;
আলস্য হেন ধন থাকতে দুঃখের অভাব কি? অলসে দুঃখভোগ করবে এটা সুনিশ্চিত; অলসের প্রতি ব্যঙ্গোক্তি।
আলার নীচেই কালা রয়েছে প্রদীপের নীচেই অন্ধকার থাকে; ঈশ্বরের পিছনেই শয়তানের বাস; শয়তান পিছু ছাড়ে না; পারস্পরিক সহাবস্থান।
আলালের ঘরের দুলাল ধনীর ঘরের অতি আদরের ও আবদারে সন্তান যে অতিরিক্ত আদরযত্ন পেয়ে উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়েছে।
আলো এলে অন্ধকার পালায় জ্ঞানের আলোতে মানুষের মনের অন্ধকার দূর হয়।
আলোচাল দেখলে ভেড়ার মুখ চুলকায় ঈপ্সিতলোভের জিনিস দেখলে সবারই লালসা বৃদ্ধি পায়।
আলো বাতাস বেঁধো না, রোগ ঘরে ডেকো না- খনা শরীরমন সুস্থ রাখার জন্য ঘরে আলোবাতাস থাকা/খেলা প্রয়োজন।
আলোর পর আঁধার আসে সুখ ও দুঃখ ঘুরে ফিরে আসে; সমতুল্য- 'চক্রবৎ পরিবর্তন্তে সুখানি চ দুখানি চ'।
আল্লা যারে দেয় ছাদ ফুঁইড়া দেয ঈশ্বর যখন দেন ঢেলেই দেন; তুলনীয়- 'ভাগ্যবানের বোঝা ভগবানে বয়'; 'ভাগ্যবানের প্রতি ভগবান অকৃপণ'; 'সৌভাগ্যবান বিধির বরপুত্র'।
আল্লা হরি আমি গাছের থেকে পড়ি মনে সন্দেহ থাকলে কার্যসিদ্ধি হয় না; (উৎসকাহিনী- এক মুসলমান ও এক হিন্দুর মধ্যে তর্ক বাঁধে- আল্লা বড় না, হরি বড়; মুসলমান বলে আল্লা বড়; হিন্দু বলে হরি বড়; তর্কের মিমাংসায় তারা স্থির করে- নিজেদের ইষ্টদেবতার নাম করে গাছ থেকে ঝাঁপ দেবে; সেই অনুসারে মুসলমান আল্লা বলে উঁচুগাছ থেকে ঝাঁপ দেয়; তার কোন ক্ষতি হয় না; সন্দেহবাতিক হিন্দু 'আল্লা হরি আমি গাছের থেকে পড়ি' বলে গাছ থেকে ঝাঁপ দেয় এবং ঠ্যাংদুটি ভাঙে।)
আশমান জমিক ফারাক বিরাট তফাৎ; আকাশ ও পাতালের মত বিশাল দুরত্ব।
আশা আর ফুঁ আছে, দুধ আর বাটি নেই গরম দু্ধ ফুঁ দিয়ে খাবার ইচ্ছা হয়, কিন্তু দুধও নেই বাটিও নেই; ঈপ্সিত বস্তুর অভাব হলে এই বাক্য ব্যবহৃর হয়; অভাগার হাহুতাশ।
আশা আর বাসা ছোট করতে নেই আশা থাকলে তা পাওয়ার চেষ্টা থাকে; চেষ্টা থাকলে সাফল্য আসে; সুতরাং আশা বড় হলে সাফল্যও বড় হয়; ছোটকুঠরীতে স্বচ্ছন্দে বাস কর যায় না; ছোটছোট বিষয় মনকে সঙ্কীর্ণ করে, হতাশাগ্রস্ত করে।
আশাই পরম সুখ আশাই পরম দুখ সীমাহীন আশার একটা পূর্ণ হলে আরেকটা এসে উপস্থিত হয়; সুতরাং সুখভোগ আর হয় না; আশা নিবৃত্ত করতে পারলে নৈরাশ্যের যন্ত্রণা ভোগ করতে হয় না।
আশা করে ঘর বাঁধে কেউ হাসে কেউ কাঁদে সবার ঘর-সংসার করা সুখের হয় না।
আশা করেছেন কাও পাকলে খাবেন ডেও যেদিন ড্যাফল পাকবে সেসিন খাবে সেই আশায় কাক অপেক্ষা করে আছে; খুব দূরবর্তী আশা করে কেউ বসে থাকলে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়।
আশা গরিবের খাদ্য আশা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে।
আশাবধিং কো গতঃ আশার অবধি বা শেষ নেই; আশার সীমা পর্যন্ত কেউ পৌঁছাতে পারে না; আশা অনন্ত ও অসীম।
আশা বৈতরণী নদী পাপীরা যার অন্ত পায় না (পাপীরা স্বর্গে যেতে পারে না) সেই বৈতরণী নদীর মত আশারও কোন অন্ত নাই।
আশমান জমিন ফারাক বিপুল পার্থক্য।
আশায় আমার পড়ল ছাই এখন বল কোথায় যাই আশাভঙ্গে চরম হতাশা।
আশায় খেলিছে পাশা মানুষ আশা নিয়ে বাঁচে, আশা নিয়ে মরে।
আশায় বাঁচে চাষা গরিবেরা এই আশা নিয়েই বেঁচে থাকে যে একদিন-না-একদিন তাঁদের ভাগ্য ফিরবে, সুদিন আসবে।
আশায় মরে চাষা আষাঢ়মাসে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ার আশায় এবং না হওয়ার আশঙ্কায় সবসময় চাষা আতঙ্কিত থাকে।
আশার অর্ধেক ফল সবসময় আশানুরূপ ফল হয় না; অর্ধেক হলেই যথেষ্ট পাওয়া হয়; যথা লাভ।
আশার চেয়ে নিরাশা ভাল, হয়ে গেল তো হয়ে গেল আশায় না থাকলে নিরাশ হতে হয় না; ফলে দুঃখ পেতে হয় না।
আশার শেষ নেই আশা কুহকিনী; দরিদ্র চায় লাখোপতি হতে; লাখোপতি চায় ক্রোড়পতি হতে; ক্রোড়পতি চায় কুবেরের ধন; কামনা-বাসনার কোন শেষ নেই।
আশাহি পরমং দুঃখং, নৈরাশ্যং পরমং সুখং আশার সীমা নেই; একটা আশা পূর্ণ হলে আরেকটা আশার জন্ম হয়; সুখভোগ আর হয় না; সুতরাং আশা ত্যাগ করতে পারলেই প্রকৃত সুখলাভ হয়।
আশ্বিন মাসে কুঠে (কুষ্ঠরোগগ্রস্ত) পাঁঠাতেও কড়ি দুর্গাপুজার সময় সকল প্রকার পাঁঠা চড়া দরে বিক্রি হয়; দরকারের সময় মন্দ জিনিসও ভালও দামে বিক্রি হয়; উপযুক্ত সময়ে লোকে লাভবান হয়।
আশ্রয়, ফল ও ছায়া বড়গাছের তলায় নিতে হয় বটগাছের তলায় আশ্রয় নিলে ফল না পেলেও আশ্রয় ও ছায়াতো পাওয়া যাবে; সবসময় বড়ঘাটে খেয়া বাঁধতে হয়, ক্ষমতাবান লোকের ছত্রছায়ায় আশ্রয় নিতে হয়।
আষাঢ়মাস চাষার আশ চাষা আশা করে বসে থাকে আষাঢ় মাসে সময়মত বৃষ্টি আসবে এবং প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হবে।
আষাঢ়ে গল্প কল্পনামূলক, আজব বা অবাস্তব গল্প; উৎস-আষাঢ় মাসের অঝোরে বৃষ্টি পড়ার কালে অলস মুহূর্তের গল্পের আসর থেকেই ‘আষাঢ়ে গল্প’ প্রবাদটির সৃষ্টি হয়েছে।
আষাঢ়ে না হলে সূত, হা সূত যো সুত; ষোলতে না হলে পুত হা পুত যো পুত আষাঢ়মাসের দিনগুলি দীর্ঘ হয়; সেইসময় সূতা না কাটলে সূতা পেতে কষ্ট হয়; ষোলবৎসর বয়সে কোন স্ত্রীলোকের সন্তান না হলে পরে সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে; সময়ের কাজ সময়ে করার জন্য চেতাবনী।
আসতেও একা, যেতেও একা, কার সঙ্গে বা কার দেখা কেউ কারো নয়, জগত মায়াময়; সমতুল্য- 'তুমি কার, কে তোমার, কারে বলরে আপনার'?
আসনং চালয়েৎ দৃষ্ট্বা পথি নারী বিবর্জিতা। জাগরণে ভয়ং নাস্তি অতিক্রোধো নিবর্যতে।। (চাণক্য) আসন দেখে চালনা করতে বসতে হয়; পথ চলতে ত্রীলোককে সঙ্গে নিতে নেই; জেগে থাকলে ভয় নেই; ক্রোধ সবসময় সংবরণ করবে।
আসন্নকালে বিপরীতা বুদ্ধি১ মৃত্যু আসন্ন হলে ভালকে মন্দ এবং মন্দকে ভাল মনে হয়; তুলনীয়- 'বিনাশ/মরণ কালে বিপরীতবুদ্ধি'।
আসন্নকালে বিপরতা বুদ্ধি২ অবস্থা শোচনীয় হলে কার্যকলাপও দুর্বুদ্ধিপ্রসূত হয়; উচ্ছন্নে যাওয়ার সময় লোকের মন্দবুদ্ধি বেশি কাজ করে।
আসন্নকালে বিপরীতা বুদ্ধি৩ বিপদকালে মানুষের বুদ্ধিভ্রম হয়; সঠিক কাজ করতে গিয়ে ভুল করে ফেলে।
আসলঘরে মশাল নেই হেঁশেলঘরে চাঁদোয়া১ নিজের ঘর না সামলে পরের ঘর সামলানো; পাঠান্তর-'আসলে মুষল নেই ঢেঁকি ঘরে চাঁদোয়া'।
আসলঘরে মশাল নেই হেঁশেলঘরে চাঁদোয়া২ প্রয়োজনের দিকে নজর নেই অপ্রয়োজন নিয়ে বাড়াবাড়ি; আবশ্যক কাজে অবহেলা অনাবশ্যক কাজে গুরুত্ব দেওয়া।
আসলঘরে মশাল নেই হেঁশেলঘরে চাঁদোয়া৩ সংগতিহীন হয়েও বড়মানুষি চাল; সমতুল্য- 'ভিতরে ছুঁচোঁর কেত্তন, বাইরে কোঁচার পত্তন'।
আসল ছেড়ে ছায়ার পিছনে ছূটো না অনিশ্চিতের আশায় নিশ্চিত ত্যাগ করো না; ঘরের মুরগী ছেড়ে বনের মুরগীর পিছনে ছুটো না।
আসলের খোঁজ নেই, তার সুদের খবর আসল ফিরে পাবার সম্ভাবনা নেই, অথচ তার সুদের জন্যে ব্যস্ততা; ক্ষুদ্রস্বার্থের জন্য বৃহৎস্বার্থ ত্যাগ।
আসলের চেয়ে সুদ মিষ্টি১ আসলের চেয়ে সুদের কদর বেশি; মহাজন আসল ফেরত পাওয়া থেকে সুদ পেতে বেশি পছন্দ করে।
আসলের চেয়ে সুদ মিষ্টি২ দাদাঠাম্মার কাছে ছেলে থেকে নাতির আদর বেশি হয়।
আসেন লক্ষ্মী যান বালাই১ সৌভাগ্য এলে দুর্ভাগ্য কাটে।
আসেন লক্ষ্মী যান বালাই২ যার উপস্থিতিতে কিছু আসে যায় না অর্থাৎ এলেও লাভ নেই গেলেও ক্ষতি নেই তার সম্পর্কে প্রযোজ্য।
আস্কে (পিঠে) খায় তার ফোঁড় গোণে না আসকে চালের গুঁড়ো গিয়ে তৈরী একপ্রকার ফোঁড়যুক্ত পিঠে; খাবার সময় কেউ নজর করে না আস্কেতে কয়টা ফোঁড় আছে; যারা খায়দায় স্ফুর্তি করে বেড়ায় কিন্তু খবর রাখেনা কোথা থাকে খাবার দাবার আসছে তাদের লক্ষ্য করে এই প্রবাদ বলা হয়; তুলনীয়- 'কত ধানে কত চাল তার হিসাব রাখে না' 'গকুলের ষাঁড়'; 'গায়ে ফুঁ দিয়ে বেড়ানো লোক'।
আস্কে (পিঠে) খেয়েছো তার ফোঁড় গোন নি? আস্কে খাওয়ার সুখ পেয়েছো কিন্তু উত্তাপে তার গায়ে কত ফোঁড় হয়েছে তা গোণার কষ্ট সহ্য করো নি? (আস্কেপিঠের ফোঁড় গোনা সম্ভব নয়); পরিনামের কথা চিন্তা না করে কোন দুরুহ কাজ সহজ মনে করার প্রতি চেতাবনি; তুলনীয়- 'ঘুঘু দেখেছো ফাঁদ দেখ নি'।
আস্তাকুঁড়ের পাত/পাতা কখনো স্বর্গে যায় না১ নীচ কখনো উঁচুপদ লাভের উপযুক্ত হয় না।
আস্তাকুঁড়ের পাত/পাতা কখনো স্বর্গে যায় না২ নীচ কখনো উঁচুমনের পরিচয় দেয় না; নীচ কখনো মহৎকার্য করে না।
আস্তাকুঁড়ের পাত/পাতা কখনো স্বর্গে যায় না৩ পরমুখাপেক্ষী কখনো সমৃদ্ধিলাভ করে না।
আহাম্মক তিন যায়গায় বিষ্ঠা মাখে ভুলবশতঃ প্রথমে পায়ে; সন্দেহ হওয়াতে পা থেকে আঙুলে; নিঃসন্দেহ হতে আঙুল থেকে নাকে; আহাম্মকির পরাকাষ্ঠা
আহাম্মক যে হয়, পিছনে সে কথা কয় পিছনে কথা বলা যুক্তিযুক্ত নয়।
আহাম্মক এক, যে পরের মালে করে টেঁক; অর্থ স্পষ্ট।
আহাম্মক দুই, যে পরের চালে তোলে পুঁই অর্থ স্পষ্ট।
আহাম্মক তিন, যে ঋণ করে দেয় ঋণ অর্থ স্পষ্ট।
আহাম্মক চার, যে মধ্যস্থ হয়ে খায় মার অর্থ স্পষ্ট।
আহাম্মক পাঁচ, যে পরের পুকুরে ছাড়ে মাছ অর্থ স্পষ্ট।
আহাম্মক ছয়, যে একের কথা আরে কয় অর্থ স্পষ্ট।
আহাম্মক সাত। যে শ্বশুরবাড়ী খায় ভাত অর্থ স্পষ্ট।
আহাম্মক আট, যে মাগকে পাঠায় হাট অর্থ স্পষ্ট।
আহাম্মক নয়। যে ঘর থাকতে পরের ঘরে রয় অর্থ স্পষ্ট।
আহাম্মক দশ, যে মাগের কথায় বশ অর্থ স্পষ্ট।
আহাম্মকের সাথে তর্ক করো না, মানুষ ভুল করে তোমাকে আহাম্মক ভাবতে পারে বুদ্ধিমান আহাম্মকের সাথে তর্ক করে না; আহাম্মকের সাথে তর্ক করার অর্থ পাথরে মাথা ঠোকা।
আহার করবে ধীরে, কোনদিকে না চাবে ফিরে স্বস্থ্যের কারণে বৈদ্যের বিধান।
আহার নিদ্রা ভয় যতই করবে ততই হয় আহার, নিদ্রা ও ভয় যতই বাড়িয়ে যাওয়া যায় ততই বাড়তে থাকে।
আহুঃ সপ্তপদী মৈত্রী যার সাথে সাত পা হাঁটা যায় তার সাথে বন্ধুত্ব হয়।
আহ্লাদে আটখানা, ল্যাজা মুড়ো দশখানা বেজায় খুশি; আনন্দের সীমাপরিসীমা নেই; যে সামান্য বিষয় নিয়ে অযথা আনন্দ প্রকাশ করে তারক্ষেত্রে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়।
আহ্লাদে আটখানা মূল্য পাঁচ-আনা আহাম্মকের অতিরিক্ত আহ্লাদের প্রতি তির্যকোক্তি।
আহ্লাদে পুতুল কেবল আমোদপ্রমোদে রত দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যক্তি।

ই/ঈ

প্রবাদ-প্রবচন অর্থ
ইঁচোড়ে পাকা অকালপক্ক; ইঁচোড় অবস্থায় কাঁঠাল পাকলে স্বাদ-গন্ধ কিছু থাকে না; সেইরকম অকালপক্ক ছেলের মুখে বিজ্ঞের মত কথাবার্তা শুনলে বিস্বাদ বিসদৃশ লাগে।
ইঁদুর চেনে না ভাগবত পুঁথি নির্গুণ গুণীর কদর বোঝে না।
ইঁদুর গর্ত খুঁড়ে মরে সাপ এসে দখল করে১ একদল কষ্ট করে অন্যদলে তার ফল ভোগ করে; তুলনীয়- 'উদবিড়ালে শিকার করে, খটাশ করে তিনভাগ'; 'কেউ মরে বিল ছেঁচে, কেউ খায় কৈ;।
ইঁদুর গর্ত খুঁড়ে মরে সাপ এসে দখল করে২ দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার করে; প্রকৃতির নিয়ম হল- যোগ্যতমের জয়।
ইঁদুর ডুবন্ত জাহাজ ছেড়ে পালায় মানুষ বিপদে পড়লে উপকৃতরা আগে তাকে ছেড়ে পালায়।
ইঁদুর বিড়াল দৌড় খেলা পরস্পরকে টেক্কা দেওয়ার প্রতিযোগিতা; স্বার্থসিদ্ধির বা নিজের উন্নতির জন্য বেপরোয়া প্রতিযোগিতা।
ইকড়ি মিকড়ি চাম-চিকড়ি, চামের কাঁটা মজুমদার আপাতঃ অর্থহীন অথচ অসাধারণ অর্থপূর্ণ শিশুদের একটি ছড়া (ড. মোহাম্মদ আমীন সাহেবের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)
ইক্ষু পিষ্ট হলেও মিষ্টত্ব ত্যাগ করে না কোন অবস্থাতেই গুণী তার গুণ হারায় না।
ইঙ্গিতে বুঝলে মন কাজ হতে কতক্ষণ মন পড়তে পারলে কাজ আদায় করতে বেশি দেরী হয় না।
ইচ্ছা আছে যার উপায়/পথ আছে তার ইচ্ছা থাকলে কাজের উপায় বেরুবেই; যতই দুরুহ হোক-না-কেন উপায়জ্ঞের কাছে সবকাজই সহজসাধ্য মনে হয়; ইচ্ছুকের কাছে কিছুই অসম্ভব নয়; পাঠান্তর- 'ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়'; 'উপায় থাকলেই কার্যসিদ্ধি হয়'।
ইচ্ছা ঘোড়া হলে সব অভাবীরা তার ওপর চাপ'ত ইচ্ছাতে পেট ভরে না; শুধু ইচ্ছা থাকলেই বৈতরণী পার হওয়া যায় না; পরিশ্রম চাই; সৌভাগ্যবানের ইচ্ছার সাথে পরিশ্রমের আগ্রহ থাকে।
ইচ্ছাকৃতভাবে যে তোমার দিকে একটা আঙুল বাড়ায় সে তোমার দিকে তার সমগ্র হাতও বাড়াবে- জিপসি প্রবাদ যে সাহায্য করতে চায় সে মনেপ্রাণেই সাহায্য করতে চায়।
ইচ্ছার ভার বোঝা মনে হয় না যার কাজ করার ইচ্ছা আছে সে আনন্দের সাথে কাজ করে; তার কাছে কাজ করাতে কষ্টবোধ হয় না।
ইজ্জত দৌলতে বজায় থাকে অর্থই ইজ্জত পরিমাপের মাপকাঠি।
ইজ্জত যাওয়ার আগে প্রেস্টিজ যায়- রবীন্দ্রনাথ ইংরাজীয়ানারপ্রতি প্রবলপ্রীতির বিরুদ্ধে কবিগুরুর বিদ্রুপোক্তি।
ইজ্জত যায়না ধুলে স্বভাব যায় না মলে মানীর মান নষ্ট হওয়া যেমন কঠিন, বদলোকের স্বভাব পরিবর্তন হওয়াও তেমন কঠিন। দুটি চিরসত্য এক প্রবাদে বলা হয়েছে।
ইজ্জতের দাম লাখ টাকা ইজ্জত হেলাফেলা করার বিষয় নয়।
ইট পড়লে পাটকেলও পড়ে অন্যের ক্ষতি করলে নিজেরও ক্ষতি হয়; কারো সাথে দুর্ব্যবহার করলে প্রতিদানে দুর্ব্যবহার পেতে হয়; সমতুল্য- 'আঘাত করলে প্রত্যাঘাত খেতে হয়'; 'আয়না যেমুখ দেখে সেইমুখ দেখায়'; 'ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া আছে/থাকে'; 'চড় মারলে চড় খেতে হয়'; 'ধ্বনির প্রতিধ্বনি আছে/থাকে'; 'যেমন কর্ম তেমন ফল' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'ইটটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয়'।
ইটে নাই ভিটে নাই বাইরে মর্দানী ঘরে অন্ন নেই, বাইরে বাবুয়ানা; সমতুল্য- 'ফতো নবাব';
'ফতোবাবুর ফুটানি'; 'ভিতরে ছুঁচোর কীর্তন, বাইরে কোঁচার পত্তন' ইত্যাদি । 
ইতরতাপশতানি যথেচ্ছয়া বিতর তাহে সহে চতুরানন, অরসিকেষু রসস্য নিবেদনম শিরসি মা লিখ মা লিখ মা লিখ কবি দুঃখ করে বলেছেন- হে বিধাতা তুমি আমার অদৃষ্টে অন্য যতপ্রকার দুঃখ আছে লিখে দাও কিন্তু অরসিক লোকের কাছে রসের নিবেদনরূপ দুঃখ আমার অদৃষ্টে লিখিও না, লিখিও না, লিখিও না।
ইতর সন্তোষ প্রকাশ করে ব্যবহার মত নীচমনোভাবাপন্ন লোকের ভালমন্দ বিচারের মাপকাঠি হল তার প্রাপ্তির পরিমাণ।
ইতিহাস হল বিজয়ীর লেখা বিজিতে সম্পর্কে একরাশ মিথ্যা ও কুৎসা বিজয়ীরা ইতিহাস লেখে, পরাজিতরা নয়; পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই ইতিহাস রচিত হয়।
ইতো ভ্রষ্টস্ততো নষ্টঃ এদিকও গেল ওদিকও গেল, কোনদিক আর রইল না; সমতুল্য- 'একুল ওকুল দুকল যাওয়া';পাঠান্তর- ইতো নষ্টঃ ততো ভ্রষ্টঃ।
ইন্দুর উই কুজন ভাল ভাঙ্গে তিনজন; সূঁচ সোহাগা সুজন ভাল করে তিনজন ইঁদুর উই এবং অসাধুলোক সব নষ্ট করে; অপরপক্ষে সূঁচ সোহাগা এবং সাধুলোক সব ভালো করে।
ইন্দ্রোহপি লঘুতাং যাতি স্বয়ং প্রখ্যাপিতৈর্গুণৈঃ স্বয়ং ইন্দ্রও যদি নিজের প্রশংসা করেন তবে তিনি লঘুত্বপ্রাপ্ত হন; নিজেকে যে বড় বলে সে বড় নয়।
ইল্লত যায় ধুলে. স্বভাব যায় মলে জল দিয়ে ধুলে যেমন নোংরাস্থান পরিষ্কার হয়, তেমনি মৃত্যুর পর মানুষ কলঙ্কমুক্ত হয়; বিপরীত উক্তি-'ইল্লত যায় না ধুলে স্বভাব যায় না মলে'।
ইল্লত যায় না ধুলে স্বভাব যায় না মলে জল দিয়ে ধুলে যেমন সব নোংরা যায় না, তেমনি স্বভাবও আমৃত্যু বদলায় না; সমতুল্য- 'অঙ্গারঃ শতধৌতেন মলিনত্বং ন মুঞ্চতি'; 'কয়লা ছাড়ে না ময়লা'; 'দুধ খাওয়ালেও সাপের বিষ কমে না'; 'দুধ ঢাললেও নিম নিষ্টি হয় না'; 'যার যা রীত ছাড়ে কদাচিৎ' ইত্যাদি।
ইসারায় দিশাহারা প্রলোভনে বিভ্রান্তি।
ইস্তক জুতো সেলাই, নাগাদ/লাগাত চণ্ডীপাঠ মুচির জুতাসেলাই থেকে ব্রাহ্মণের চণ্ডীপাঠ পর্যন্ত সব কাজ; সংসারের যাবতীয় ভালমন্দ কাজের কাজি।
ঈদের চাঁদ / ঈদকা যাঁদ যে চাঁদ দেখার জন্য সমগ্র মুসলমানজগৎ উদ্গ্রীব থাকে অথচ সহজে দেখা পায় না; দুর্লভদর্শন; তুলনীয়- 'ডুমুরের ফুল'।
ঈশা বাস্যমিদং সর্বং যৎ কিঞ্চ জগৎ্যাং জগৎ। তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্য স্বিদ্ধনম্‌॥ (উপনিষদ) ব্রহ্মাণ্ডে যা কিছু অনিত্যবস্তু, সবই ঈশ্বরের দান। ত্যাগের মধ্য দিয়ে ভোগ কর। কারও ধনে লোভ করো না।
ঈশানকোণের মেঘ সঙ্কটের পূর্বাভাস
ঈশান কোণের মেঘে ঝড় ওঠে বেগে উত্তর-পূর্ব কোণে মেঘ জমলে ঝড় অবশ্যাম্ভাবী।
ঈশ্বরই একমাত্র সত্য সত্যই চরম, পরম ও শেষ কথা; সত্যকে ধ্যান করা উচিত; তুলনীয়- 'সত্যম্‌ পরম্‌ ধীমহি'।
ঈশ্বর ঈশ্বর করে যেই, তার ঘরে ভাত নেই শুধু ভজনায় কার্যসিদ্ধি হয় না; ঈশ্বর কোথাও বলেন নি যে কাজ না করে ফল পাওয়া যায়।
ঈশ্বর করেন কাম, মানুষের বদনাম আমরা যন্ত্র তিনি যন্ত্রী যেমন চালান তেমনি চলি; সুতরাং কোন দোষ হলে সেটা তাঁরই দোষ।
ঈশ্বর যদি করেন, কর্তা যদি মরেন তবে ঘরে বসে কীর্তন শুনবো পরের বাড়ীতে কীর্তন শুনতে না পেরে এক আহাম্মক স্ত্রীলোকের খেদোক্তি; (এক মুখরানারী পরের বাড়ীতে কীর্তন শুনতে না গিয়ে বসার জায়গা না পেয়ে রেগে গিয়ে সকলকে শুনিয়ে বলে যে ঈশ্বরের ইচ্ছায় কর্তা অর্থাৎ স্বামী যদি মারা যায় তবে সে নিজের বাড়ীতে আসর বসিয়ে কীর্তন শুনবে; ক্ষুদ্র-অভিলাষের পূরণের জন্য কেউ যদি বেশি ক্ষতিস্বীকারের ইচ্ছা প্রকাশ করে তবে তারক্ষেত্রে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়।
ঈশ্বর যখন দেন অল্প অল্প দেন /দু'হাত ভরে দেন ভাদ্য প্রসন্ন হলে কল্যাণকর বিষয়গুলি পরপর আসতে থাকে; তুলনীয়- 'আল্লা যারে দেয় ছাদ ফুইড়া দেয়'; 'বিধি যখন মাপায় উপরি-উপরি মাপায়'; 'সৎকল্যাণপরম্পরা'।
ঈশ্বর যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন ঈশ্বরের ইচ্ছা অনিচ্ছা আমাদের বোধগম্য নয়। তবে এই বিশ্বাস এই ভাবনা মনে রাখলে মন বিক্ষিপ্ত হয় না; মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং হৃদ্দেশেহর্জুন তিষ্ঠতি ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজ করেন।

প্রবাদ-প্রবচন অর্থ
উঁচান বাড়ি বড় ভয়, পড়লে বাড়ি সয়ে যায় উঁচানো লাঠি দেখলে ভয় হয় কতনা লাগবে; লাঠি পড়লে সয়ে যায়; তেমনি কাজ শুরুর আগে ভয় হয়; অথচ কাজ একবার শুরু হলে অতি কঠিন কাজও সহজে সম্পন্ন হয়।
উঁচুগাছেই ঝড় বেশী লাগে বড়কেই সংসারের সব ঝক্কিঝামেলা সামলাতে হয়।
উঁচুগাছেই মই বাঁধো ফললাভের আশায় থাকলে যেখানে সম্ভাবনা বেশি সেখানেই উপস্থিত থাকতে হয়।
উঁচুমনের মানুষ যা খোঁজে নিজের মধ্যে খোঁজে, নীচমনের মানুষ যা খোঁজে পরের মধ্যে খোঁজে- কনফুসিয়াস মহানব্যক্তি নিজের দোষ খোঁজে পরের দোষ দেখে না;াহীনব্যক্তি পরের দোষ খুঁজে বেড়ায়, নিজের দোষ গেখে না।
উঁচী/উচী দুকান্ ফীকি পকান্‌ দোকানের জাঁকজমকপূর্ণ কিন্তু মিষ্টি মিষ্টতাশূন্য; দেখনদারী; বাইরের আড়ম্বরমাত্র; সমতুল্য- 'উপরে চিকণ চাকণ ভিতরে খেড়'।
উক্তস্য পুনঃ কথনং কথিত বিষয়ের পুনরুক্তি।
উঁচু যদি হতে চাও নীচু হও তবে বিনম্রস্বভাবের লোককে সবাই শ্রদ্ধা করে; নম্রতাই মহত্বের লক্ষণ; পাঠান্তর-উঁচু হবে, তবে নীচু হয়
উঁচু হলে ঝড়ে উড়াবে, নীচু হলে ছাগলে মুড়াবে উঁচু-নীচু, উভয় অবস্থাতেই ভয় আছে; মধ্যমপন্থা শ্রেষ্ঠপন্থা।
উঁট কে মুঁহমে জীরা প্রয়োজনকালে ন্যূনতম বিধান; প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম প্রাপ্তি।
উই ইঁদু্র কুজন ভালো ভাঙে তিনজন, সুঁই সোহাগা সুজন- ভালো করে তিনজন উই ইঁদু্র ও কুজন- এই তিনে ভালো জিনিস নষ্ট করে এবং সুঁই সোহাগা ও সুজন- এই তিনে ভালো জিনিস গড়ে তোলে।
উকিল আর গাড়ীর চাকা তেল চর্বি দিয়ে রাখা তেল না দিলে উভয়েই নড়ে না; খাবার পেলে সবাই দাস।
উকিল নিজের ওকালতি করে না তাহলোে তো নিজের পক্ষে মিথ্যাকথা বল'তে হয়।
উকুনের দায়ে মাথা মুড়ানো তুচ্ছ বিপদের মারাত্মক আকার ধারণ করা।
উক্তস্য পুনঃ কথনং উক্তবিষয়ের পুনরুক্তি।
উচিৎকথায় আহাম্মক বেজার/রুষ্ট উচিৎকথা কইতে মানা; উচিতকথা সবসময় তিক্ত হয়; শুনে নির্বোধও রাগ করে।
উচিৎকথায় দেবতা তুষ্ট, উচিৎকথায় মানুষ রুষ্ট দেবতা বা দেবতুল্যলোক উচিৎ কথা শুনে সন্তুষ্ট হন, কিন্তু স্বার্থান্বেষী মানুষ মনঃপুত না হলে উচিৎকথা শুনে ক্ষেপে যায়।
উচিতকথায় বন্ধু/মামা বেজার ন্যায্যকথা কেউ শুনতে নারাজ; ন্যায্য তথা সত্যকথা বললে আপনজনও ক্ষুব্ধ হয়; সুতরাং মা ব্রুয়াৎ সত্যমপ্রিয়ম।
উচিৎকথার ভাত নাই উচিৎকথা দাম পায় না।
উচিৎকথার মার নাই সত্যকথার বিঘ্ন নাই।
উচোট খেয়ে প্রণাম১ ইচ্ছা করে ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম নয়; আকস্মিকভাবে হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়েছে; তাই প্রণামস্বীকার (ঠাকুরমশাই পেন্নাম হই; উঃ পায়ে বড় লাগলো); সমতুল্য-'পড়ে দিয়ে পদ্মনাভ';'হোঁচট খেয়ে প্রণাম/পদ্মনাভ'।
উচোট খেয়ে প্রণাম২ দায়েপড়ে কার্যগতিতে কোন ভালো কাজ করে ফেলা।
উচ্চপ্রাণের লোকেরা তত্ত্ব নিয়ে চর্চা করে; মধ্যমপ্রাণেরা লোকেরা ঘটনা নিয়ে চর্চা করে; ক্ষুদ্রপ্রাণের লোকেরা পরনিন্দা করে জ্ঞানীরা তত্ত্ব নিয়ে ব্যস্ত থাকে; সাধারণলোকেরা সংসারের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকে; হীনলোকেরা শুধু পরচর্চা পরনিন্দা করে বেড়ায়।
উচ্ছে খাবে কচি পটল খাবে বীচি দুইই উপাদেয় এবং স্বাস্থের পক্ষে মঙ্গল।
উচ্ছের কচি, পটলের বীচি, ছাগলের ছা, মাছের মা- এগুলি বেছে খা- খনা কচি-উচ্চে, পালা-পটল, কচিপাঁঠার মাংস ও পাকামাছ- এগুলি হল উপাদেয় খাদ্য।
উছল নদীর কলকলানি বেশি১ উদ্দাম যৌবনে চঞ্চলতা বা ঝলকানি বেশি
উছল নদীর কলকলানি বেশি২ অল্পজ্ঞানীরা বেশী কথা বলে বা বেশি লম্ফঝম্ফ করে।
উজাড় (শূন্য) বনে শিয়ালরাজা যেখানে বাধা দেবার কেউ নেই সেখানে সাধারণলোকও কর্তৃত্ব করে।
উটের কাঁটাভোজ অল্পসুখের জন্য বেশি কষ্টস্বীকার; পাঠান্তর- 'উষ্ট্রের কণ্টকভোজন'।
উঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে বাড়া ভাত খেয়ে কোন কথাবার্তা নেই, কোন সম্ভাবনা নেই, হঠাৎ কাজ এসে উপস্থিত এবং 'এখনই করতে হবে' এমন অবস্থা; বিনাপ্রস্তুতিতে হঠাৎ কোন গুরুতর বা চেষ্টাসাধ্য কাজ করার আহ্বান।; সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত অবস্থায় কাজ করার ডাক।
উঠন্তবৃক্ষ পত্রেই চেনা যায়১ চারাগাছের পাতা দেখেই বোঝা যায় বড় গাছ কেমন হবে; বিরুদ্ধ উক্তি- 'কোথাকার জল কোথায় গড়ায়'; পাঠান্তর- 'উঠন্তিমূলো পত্তনিতেই চেনা যায়'।
উঠন্তবৃক্ষ পত্রেই চেনা যায়২ কাজের আরম্ভ দেখেই বোঝা যায় কাজের শেষটা কিরকম হবে।
উঠন্তবৃক্ষ পত্রেই চেনা যায়৩ মানুষের গুণগুলি তার শৈশবেই ভালভাবে বোঝা যায়; সমতুল্য- 'সকাল দিনের আভাস দেয়'।
উঠল বাই তো কটক যাই চটজলদি সিদ্ধান্ত; বিচার-বিবেচনার অবকাশ নেই;
উঠান ভরা লাউ শশা ঘরে তার লক্ষ্মীর দশা- খনা যে চাষীর উঠান লাউ শশায় ভরে থাকে তার কোন অভাব হয় না।
উঠোন পেরুলেই অর্ধেক সফর কাজ শুরু হলেই অর্ধেক কাজ শেষ হয়ে যায়।
উঠে পড়ে লাগা কোমর বাঁধা; পূর্ণোদ্যমে কাজে লাগা; সব বাধা অতিক্রম করে কোন কাজ করার চেষ্টা করা; সমতুল্য- 'আদাজল খেয়ে লাগা'।
উড়কিধানের মুড়কি দেবো সরুধানের চিঁড়ে অস্তিত্বহীন বস্তু; কল্পিত সুস্বাদু খাদ্যদ্রব্য (ছেলে ভুলানো মূল ছড়া- 'উড়কিধানের মুড়কি দেব পথে জল খেতে; সরুধানের চিঁড়ে দেব শাশুড়ি ভুলাতে'।
উড়তে পারে না পোষ মানে খাঁচার পাখি উড়তে ভুলে গিয়ে বাধ্য হয়ে পোষ মানে;অক্ষমের পরনির্ভরশীলতা; নিরুপায় হয়ে কোন কাজ করতে বাধ্য হওয়া।
উড়তে পারে না ফুরফুর করে অক্ষমের বাড়াবাড়ি; কাজ করার শক্তি নেই, তবুও কাজ করার ইচ্ছা জাগে।
উড়ে এসে জুড়ে বসা অযাচিতভাবে (বিনা অধিকারে) হঠাৎ এসে সর্বেসর্বা হয়ে বসা।
উড়ো খই গোবিন্দায় নমঃ১ অলভ্য, হাত ছাড়া দ্রব্য দানের ভাণ করা; তুলনীয়- 'পরের গোয়ালে গোদান'।
উড়ো খই গোবিন্দায় নমঃ২ প্রতিকূল অবস্থায় পড়ে বাধ্য হয়ে কোন সৎকার্য করা।
উৎপাতের কড়ি চিৎপাতে যায় অসদুপায়ে অর্জিত অর্থ বাজেভাবে খরচ হয়।
উৎপীড়কেরা কাপুরুষ হয় সাহসীরা দুর্বলকে আঘাত করে না।
উৎসবে ব্যসনে চৈব দুর্ভিক্ষে শত্রুনিগ্রহে রাজদ্বারে শ্মশানে চ যঃ তিষ্ঠতি স বান্ধব যে ব্যক্তি উৎসব বিপদকাল দুর্ভিক্ষ যুদ্ধ বিচারালয় এবং শ্মশানে পাশে উপস্থিত থাকে, সেই প্রকৃত বন্ধু- প্রকৃত বন্ধুর পরিচিতি।
উত্তমপুরুষ যা খোঁজে নিজের মধ্যে খোঁজে, অধমপুরুষ যা খোঁজে পরের মধ্যে খোঁজে- কনফুসিয়াস জ্ঞানীলোকেরা আত্মানুসন্ধান করে; সামান্যলোকেরা পরছিদ্রান্বেষণ করে বেড়ায়।
উত্তমমধ্যম দেওয়া আচ্ছা করে ধোলাই/পিটুনি দেওয়া;প্রচুর প্রহার করা
উত্থায় হৃদি লীয়ন্তে দরিদ্রনাং মনোরথাঃ দরিদ্রের বাসনা হৃদয়ে উদয় হয়েই বিলীন হয়; অর্থের টানাটানিতে বাস্তবায়িত হয় না।
উত্তিষ্ঠত জাগ্রত প্রাপ্য বরান নিবোধত (উপনিষদ) ওঠো; জাগো; জ্ঞানীদের কাছে গিয়ে জ্ঞানপ্রাপ্ত হও।
উদ (জল) খেতে ক্ষুদ নেই নেউলে বাজায় শিঙে একমুঠো খুদ মুখে দিয়ে জল খাবে এমন সামর্থ নেই অথচ বাঁশি বাজিয়ে বেড়ায়; ঘরে অন্নের সংস্থান নেই বাইরে আস্ফালন করে; সমতুল্য- 'উদুখলে (শস্য রাখার পাত্র) ক্ষুদ নাই চাঁটগায়ে বরাত'; 'ভিতরে ছুঁচোর কীর্তন, বাইরে কোঁচার পত্তন'।
উদবিড়ালে শিকার করে, খটাশ করে তিনভাগ উদবিড়ালে কষ্ট করে মাছ ধরে; খটাশ এসে তাতে ভাগ বসায়; একের পরিশ্রমের ফল অন্যে এসে ভোগ করে; সমতুল্য- 'ইঁদুর গর্ত খুঁড়ে মরে সাপ এসে দখল করে'; 'কেউ মরে বিল ছেঁচে, কেউ খায় কৈ'।
উদমা/উদোম ঢেঁকির হড়কা পাহার উলঙ্গ/খোলা/নগ্ন- এমন ঢেঁকিতে পা হড়কানোর সম্ভাবনা থাকে; ফালতু কাজে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি থাকে।
উদর চিরলে ক বেরোয় না মহামূর্খ; সমতুল্য- 'ক অক্ষর গো-মাংস'।
উদারচরিতানান্তু বসুধৈব কুটুম্বকম উদারচরিত্রের ব্যক্তির কাছে- জগতবাসী সকলেই আত্মীয়, আপনার জন; সমগ্র মানবজাতি একটি পরিবার।
উদিতে তু সহস্রাংশৌ ন খদ্যোতো ন চন্দ্রমাঃ সূর্য উঠলে চন্দ্র জোনাকি ইত্যাদি ম্লান হয়ে যায় এবং তাদের আর কোন প্রয়োজন থাকে না।।
উদুখলে (শস্য রাখার পাত্র) ক্ষুদ নাই চাঁটগায়ে বরাত ঘরে অন্নের সংস্থান নেই, অথচ অন্যলোককে অন্যস্থানে টাকা নেবার দায়িত্ব দেয়; নিতান্ত বাড়াবাড়ি; সমতুল্য- 'উদ (জল) খেতে ক্ষুদ নেই নেউলে বাজায় শিঙে'; 'ভিতরে ছুঁচোর কীর্তন, বাইরে কোঁচার পত্তন'।
উদে (উদবিড়াল) মাছ ধরে খটাশে তিনভাগ করে কের পরিশ্রমের ফল অন্যে ভোগ করে।
উদো/উধোর (মূর্খ) বোঝা/পিণ্ডি বুধোর (পণ্ডিত) ঘাড়ে১ দোষীব্যক্তির অপরাধ নির্দোষব্যক্তির ওপর পতিত হওয়া; একের কৃতকর্মের ফল অন্য একজন নিরীহব্যক্তির ঘাড়ে চাপানো; চরম বিশৃঙ্খলা; চুড়ান্ত অপশাসন; সমতুল্য- 'কাক খেলো ধান ব্যাঙের পায়ে দড়ি'।
উদো/উধোর (মূর্খ) বোঝা/পিণ্ডি বুধোর (পণ্ডিত) ঘাড়ে২ একজনের কাজের দায় বা দায়িত্ব অন্যের ঘাড়ে চাপানো;
উদ্যমেন হি সিদ্ধান্তি কার্যাণি ন মনোরথৈ। নহি সুপ্তস্য সিংহস্য মুখে প্রবিশন্তি মৃগা॥ (চাণক্য) উদ্যোগেই কার্যসিদ্ধি হয়, শুধু মনের ইচ্ছাতে হয় না; ঘুমন্ত সিংহের মুখে হরিণ স্বেচ্ছায় প্রবেশ করে না।
উদ্যোগিনং পুরুষ্পসিংহমুপতি লক্ষ্মী দৈবেন দেয়মিতি কাপুরুষা বদন্তি উদ্যোগীপুরুষ লক্ষ্মী লাভ করে; লক্ষ্মী উদ্যোগীপুরুষকে আশ্রয় করে; একমাত্র কাপুরুষেরা বলে- 'ভাগ্যে যা আছে তাই পাবো'।
উদ্যোগীর অসাধ্য কিছুই নেই উদ্যোগী কখনো অসফল হয় না।
উদ্যোগীর কাছে কোন পথই দূর নয় উদ্যোগীর কাছে কোন পথই অনতিক্রম্য নয়।
উনপাঁজুরে বরাখুরে লক্ষ্মীছাড়া; হতভাগা- গালিবিশেষ; দুশ্চরিত্র অন্নহীনকে এই বলে গালি দেওয়া হয়।
উনবর্ষায় দু্ন শীত- খনা বৃষ্টি কম হলে শীত বেশি পড়ে।
উনভাতে দুন বল অতি/ভরাভাতে রসাতল কম খেলে শরীর সুস্থ থাকে; বেশি খেলে শরীর ভারী হয়।
উন/উনা কলসির দুন/দুনা শব্দ১ কলসি একটু ভর্তি হলেই জোরে শব্দ করতে শুরু করে
উন/উনা কলসির দুন/দুনা শব্দ১ অল্পশিক্ষিতরা বেশি বিদ্যার জাহির করে; সমতুল্য-'ফাঁকা কলসি বাজে বেশি'।
উনিশ বিশ১ তুচ্ছ প্রভেদ, সামান্যপার্থক্য; সমতুল্য- যাহা বায়ান্ন তাহাই তিপ্পান্ন
উনিশ-বিশ২ বিপুলভারের উপর অতিরিক্ত সামান্যভার কিছুই মনে হয় না;
উপকারগৃহীতেন শত্রুণা শত্রুমুদ্ধরেৎ। পাদলগ্নং করস্থেন কণ্টকেনেব কণ্টকম্॥ (চাণক্য) হাতের কাঁটা দিয়ে যেমন পায়ে কাঁটা তোলা হয়, তেমনি উপকারগ্রহণকারী শত্রু দিয়ে শত্রুনাশ করতে হয়- শত্রু নিধনের উপায়।
উপকার প্রতিদান প্রত্যাশা করে কেউ উপকার করলে প্রতিদানে তার উপকার করা উচিত; সম্পর্কীত প্রবাদ- উপকারীকে বাঘে খায়
উপকারীগাছের ছাল থাকে না উপকারীগাছের সবই উপকারী, কিছুই ফেলা যায় না; ওষধি গুণযুক্ত গাছের বাকল সবাই নিয়ে যায় খাওয়ার জন্য
উপকারী গাছের ছাল থাকে না কোন গাছের ওষধি গুণ থাকলে লোকের তার ছাল কেটে নিয়ে যায়; ফলে গাছ তার সৌন্দর্য হারায়; সেই গাছকে কেউ অসুন্দর বললে ভুল হবে; তাছাড়া সাধারণত অসুন্দর বস্তু বেশী কাজের হয়; কানা বেগুনের গুণ বেশি; সুতরাং কোন কিছুর বাহ্যিক রূপ দেখে তার গুণ বিচার করা হলে ভুল হতে পারে।
উপকারীকে বাঘে খায় উপকৃত উপকারীর বেশি ক্ষতি করে।
উপকারো জগত্তাতো, বিশ্বস্য জননী দয়া পরোপকার জগতের পিতাস্বরূপ; দয়া বিশ্বের জননীস্বরূপা।
উপদেশ অপেক্ষা উদাহরণ/দৃষ্টান্ত ভাল নিজে করে অপরকে অনুপ্রাণিত করতে হয়; সমতুল্য- 'আপনি আচরি ধর্ম অপরে শিখায়'।
উপদেশো হি মূর্খানাং প্রকোপায় না শান্তয়ে উপদেশ মুর্খকে শান্ত করে না পরন্তু ক্রুদ্ধ করে।
উপবাসী প্রাণ করে আনচান খিদের ছটফটানি।
উপবাসে যাবে দিন ধার করলে হবে ঋণ অন্নের সংস্থান না থাকলে একদিন কেটে যাবে তবু ধার করে খাওয়া নাই; একবার ঋণের ফাঁদে জড়ালে তার থেকে মুক্তি নেই।
উপরটায় চিকন চাকন ভিতরটায় খেড় ফোঁপরালোকের দেখনদারি; বাহ্যিক আড়ম্বরপূর্ণ লোকের ভিতরটা শূন্যগর্ভ হয়; পাঠান্তর- উপরে বাবুয়ানা ভিতরে খড়ের বেনা (পোষাক)
উপরতলায় গলাগলি; নীচের তলায় হেলাফেলা স্বার্থের মিলন; সমতুল্য- আমে দুধে মিশে যায় আঁটি খায় গড়াগড়ি'।
উপর থেকে পড়ে গেল জন পাঁচ-সাত; যার যেখানে ব্যথা তার সেখানে হাত যার যেখানে স্বার্থ তার সেখানে নজর; সমতুল্য- যে পরেছে সেই জানে জুতা কোথায় চিমটি কাটে'।
উপরে মধু অন্তরে বিষ ত্যজো তারে অহর্ণিশ মন্দলোকের সঙ্গ সবসময় পরিত্যজ্য।
উপরোধে ঢেঁকি গেলা১ অনুরোধ এড়াতে না পেরে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কোনো কাজ করা।
উপরোধে ঢেঁকি গেলা২ অনুরোধে দুরূহ কাজ করতে সম্মত হওয়া; সমতুল্য- অনুরোধে ঢেঁকি গেলা
উপস্থিত অন্ন ত্যাগ করতে নেই অন্যত্র খাওয়ার আশায় প্রস্তুত খাদ্য ত্যাগ করলে সেদিন অদৃষ্টে খাদ্য নাও জুটতে পারে; সমতুল্য-'হাতের একপাখি বনের দুইপাখির সমান'; 'হাতের পাখি ছাড়তে নেই'; 'ভবিষ্যতের আশায় বর্তমান ত্যাগ করতে নেই।
উপায়ং চিন্তয়েৎ প্রাজ্ঞঃ অপায়মপি চিন্তয়েৎ প্রাজ্ঞব্যক্তি উপায় চিন্তা করেন; বাধাবিঘ্ন নিয়েও চিন্তা করেন।
উপায়জ্ঞের কাছে দুঃসাধ্য কাজও সহজসাধ্য মনে হয়- (চাণক্য) উপায়জ্ঞ সমাধানের সহজ পথ খুঁজে পায়।
উপোস করলেই ধর্ম হয় না আচারসর্বস্বতার অসারতার প্রতি ব্যঙ্গোক্তি।
উপোসে কেউ নয়, পারণের গোঁসাই১ অনাহারের সময় কেউ খোঁজ নেয় না ভোজনে এসে ভাগ বসায়।
উপোসে কেউ নয়, পারণের গোঁসাই২ কষ্টের সময় কেউ আসে না, ফলভোগের সময় সবাই হাজির।
উভয়প্রান্তে মোমবাতি জ্বালানো১ অতিরিক্ত পরিশ্রম বা শক্তিক্ষয় করা
উভয়প্রান্তে মোমবাতি জ্বালানো২ অর্থের অপচয় করা; সমতুল্য- দিনের বেলায় মোমবাতি জ্বালানো
উরুৎ বেয়ে রক্ত ঝরে চোখ গেলোরে বাবা১ সম্পর্কবিহীন দুই কাজ
উরুৎ বেয়ে রক্ত ঝরে চোখ গেলোরে বাবা২ দুটি বাক্যের মধ্যে কোন সম্বন্ধ নেই; পাগলের প্রলাপবাক্য; সমতুল্য- 'এখান থেকে মারলাম তীর; তীর লাগল কলাগাছে; চোখ গেলোরে বাবা'।
উলুখাগড়ার প্রাণ যায় সাধারণমানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত
উলুবনে মুক্তা ছড়ানো১ উলুঘাসে মুক্তা ছড়ালে কেউ তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে না; তেমনি অযোগ্যের হাতে মুল্যবানদ্রব্য দেওয়া বৃথা; সমতুল্য- 'অরসিকেষু রসস্য নিবেদনম'; 'বানরের গলায় মুক্তাহার'; পাঠান্তর- 'বেনাবনে মুক্তা ছড়ান'। ো
উলুবনে মুক্তা ছড়ানো২ যে আদর করতে জানে না বা মূল্য বোঝে না তার কাছে কোন বিষয়ের উপস্থাপন করা।
উলুবনে সাঁতার দেওয়া আহাম্মকের কাজ; কথিত আছে- এক আহাম্মক জ্যোৎস্না রাতে উলুবনকে পুকুর ভেবে সাঁতার দিতে গিয়েছিল।
উলোর মেয়ের কুলুজী, অগ্রদ্বীপের খোঁপা; শান্তিপুরের হাত নাড়া, গুপ্তিপাড়ার চোপা উপরের চারটি বিষয়ের জন্য চার অঞ্চলের স্ত্রীলোকের প্রসিদ্ধি ছিল।
উলটা বুঝলি রাম১ ভালকথার বা সদুপদেশের মন্দ ব্যাখ্যা করা।
উলটা বুঝলি রাম২ ভ্রান্তধারণার বশবর্তী হয় উল্টোপাল্টা কাজ করা।
উল্টা চোরা কোতয়ালকে ডাঁটে দোষ করেও চোর কোতয়ালকে চোখ রাঙায়; সমতুল্য- 'চোরের মায়র বড় গলা'।
উল্টে চোরা মশান গায়১ দোষ করেও চোর নির্দোষ বলে গলা ফাটায়; তুলনীয়- 'উল্টা চোরা কোতয়ালকে ডাঁটে'।
উল্টে চোরা মশান গায়২ অপরাধ স্বীকার করা তো দূরের কথা, চোরে ধর্মকাহিনী শোনাতে ব্যস্ত (মশান= শ্রীমন্তের মশান পালা)।
উষ্ণো দহতি চাঙ্গারঃ শীতঃ কৃষ্ণায়তে কয়লা গরম থাকলে হাত পোড়ায়, ঠাণ্ডা থাকলে হাত ময়লা করে; ভাবার্থ- নীচব্যক্তি শত্রু হলে অনিষ্ট করে, মিত্র হলে লোকনিন্দা হয়।
উষ্ট্রের কণ্টকভোজন অল্পসুখের জন্য বেশি কষ্টস্বীকার।
উসকো মাটিতে বিড়াল হাগে দুর্বলের উপর সবল আধিপত্য ফলায়; সমতুল্য- আলগা মাটিতে বিড়াল আঁচড়ায়'।

প্রবাদ-প্রবচন অর্থ
ঊনো পাঁজুরে বরাখুরে হতভাগ্য, অলুক্ষণে বলে গালি।
ঊনো বর্ষায় দুনো শীত- খনা যে বছর বৃষ্টি কম হয় সে বছর শীত বেশি পড়ে।
ঊনো ভাতে দুনো বল, অতি ভাতে রসাতল পরিমিত আহারে স্বাস্থ্য রক্ষা হয়; অপরিমিত আহারে স্বাস্থ্যহানি হয়; এবং মৃত্যু পর্যন্ত হয়।
ঊরুৎ বেয়ে রক্ত পড়ে, চোখ গেলোরে বাবা একের সাথে অন্যের কোন সম্পর্ক নেই; অর্থহীন প্রলাপ।

প্রবাদ-প্রবচন অর্থ
ঋণকর্তা পিতা শত্রুর্মাতা চ ব্যভিচারিণী। ভার্যা রূপবতী শত্রুঃ পুত্র শত্রুরপণ্ডিতঃ॥ (চাণক্য) ঋণগ্রহীতা পিতা, দুশ্চরিত্রা মাতা, অতিরূপবতী স্ত্রী এবং মূর্খ পুত্র শত্রু রূপে বিবেচিত হয়ে থাকে।
ঋণশেষোহগ্নিশেষশ্চ ব্যাধিশেষস্তথৈব চ। পুনশ্চ বর্দ্ধতে যস্মাৎ তস্মাচ্ছেষং ন কারয়েৎ॥(চাণক্য) ঋণ, অগ্নি ও ব্যাধির শেষ রাখতে নেই; এগুলি শেষ না হলে বৃদ্ধি পায়।
ঋণং কৃত্বা ধৃতং পিবেৎ (চার্বাক) ক্ষণস্থায়ী জীবন দুদিন বইত নয়; সুতরাং যত পারো সুখ ভোগ করে নাও।
ঋণের শেষ রাখতে নেই ঋণ সম্পূর্ণ শোধ না করলে পরে বেড়ে যেতে পারে; সমতুল্য- \আগুনের শেষ রাখতে নেই'; 'রোগের শেষ রাখতে নেই';'শত্রুর শেষ রাখতে নেই'।
ঋদ্ধিশ্চিত্তবিকারিণী সম্পদ চিত্তে বিকার আনয়ন করে।

এই ডুমুরের গরব কর; পাকলে ডুমুর পড়ে মর
প্রবাদ-প্রবচন অর্থ
সুন্দর ডুমুর পাকলে ঝরে পড়ে; সুতরাং সৌন্দর্যের জন্য গর্ব করা বৃথা।
এই দৃঢ় বিশ্বাস মনে রেখো, জীবিত বা মৃত, ভাললোকের কোন ক্ষতি হয় না (উপনিষদ) সৎপথে থাকলে ক্ষতির কোন সম্ভাবনা নেই।
এই বিড়াল বনে গেলে বনবিড়াল হয় পোষা বিড়াল ঘরে বেশ শান্তশিষ্ট; কিন্তু বনে গেলে এই বিড়ালই হিংস্র বনবিড়াল হয়ে উঠে; অবস্থান্তর ঘটলে স্বভাবেও পরিবর্তন আসে; সমতুল্য- 'যে যায় লঙ্কায় ষে হয় রাবণ'।
এই মানুষ বনে গেলে বনমানুষ হয় দুষ্টচক্রে পড়লে বা বদশিক্ষা পেলে সৎমানুষও অসৎমানুষে পরিণত হয়
এই সংসার ধোঁকার টাটি জগৎ মায়াময়, সব ভুলে ভরা।
এঁচোড়ে পাকিলে অচিরেই গোল্লায় যায় ছেলেবেলায় উচ্ছন্নে বা জেঠিয়ে গেলে তার আর উন্নতি হয় না।
এঁটে ধরলে চিঁচিঁ করে ছেড়ে দিলে লম্ফ/লঙ্কা মারে ভীরুলোক কড়া হাতে বা কায়দায় পড়লে জব্দ থাকে, ঢিলে দিলে লম্ফঝম্ফ বা মহা আস্ফালন করে।
এঁটো খায় মিঠার লোভে, যদি এঁটো মিঠা লাগে লাভের গন্ধ থাকলে মানুষ নীচু কাজ করতেও পিছুপা হয় না।
এঁটোপাত কখনো স্বর্গে যায় না১ আস্তাকুঁড়েতে ফেলে দেওয়া শুকনো এঁটো পাতা বাতাসে উড়ে উপর দিকে উঠে কিন্তু বেশী উপরে উঠে না একটু উঠে নীচে পড়ে যায়।
এঁটোপাত কখনো স্বর্গে যায় না২ নীচু কখনো উঁচুপদ লাভের উপযুক্ত হয় না।
এঁটোপাত কখনো স্বর্গে যায় না৩ পরমুখাপেক্ষী কখনো বড় হয় না।
এঁড়ে গরু না টেনে দো যা সম্ভব নয় তাই করতে যাওয়া; সমতুল্য- 'চাল নাই তবে ভাতে ভাত রাঁধো'।
এঁড়ে গরুর দুধ অসম্ভব ব্যাপার, যা হয় না; সমতুল্য- অশ্বডিম্ব; আঁটকুড়ের ব্যাটা; আকাশকুসুম; কাঁঠালের আমসস্ত্ব; ঘোড়ার ডিম; পশ্চিমে সূর্যোদয়; ভস্মকীট; সোনার পাথরবাটি; সোনার হরিণ; সাপের পাঁচ-পা ইত্যাদি।
এঁদো (পঙ্কিল/পরিত্যক্ত/পানাবিশিষ্ট) পুকুরে ডুবে মরা বিরাট কাজ করে সামান্য ভুল করা।
এক অঘ্রাণে ধান তিন শ্রাবণে পান- খনা অঘ্রাণমাসে একবৃষ্টিতে ধান পাওয়া যায়, কিন্তু শ্রাবণমাসে তিনবৃষ্টি না পেলে পান চাষ ঠিক হয় না (ধান ও পান চাষ পদ্ধতি)
এক আঁচড়ে চেনা যায় কৃপণ গায়ে তেল মাখে না; তাই আঁচড় কাটলেই তার গায়ে খড়ি ফোটে; এই ভাবার্থে সামান্যপরীক্ষা করে মানুষ চেনা যায়; সামান্য চিহ্নের ভিত্তিতে ব্যক্তি বা বস্তুর গুণাগুণ বোঝা যায়।
এক আনার সৌ বীমার বস্তু একটি, কিন্তু দাবীদার অনেক; একটা বিষয় নিয়ে সকলের মধ্যে কাড়াকাড়ি; সমতুল্য- 'একরত্তি সোনা স্যাঁকরা হাজার জনা'; আড়াই কড়ার কাসুন্দি, হাজার কাকের গোল'।
এক আকাশে দুই সূর্য দুই প্রবলশক্তির পাশাপাশি থাকা, যা সম্ভব নয়; সমতুল্য- 'এক খাপে দুই তরোয়াল'; 'একবনে দুই বাঘ' ইত্যাদি।
এক আঙটা বিকল তো সমস্ত শিকল বিকল মানুষের দুর্বলতম স্থানের প্রতি ইঙ্গিত।
এক আঙুলে তুড়ি লাগে না দ্বন্দ্বে দু’পক্ষ অবশ্যই থাকা প্রয়োজন
একই ফাঁদে শিয়ালকে দু'বার ধরা যায় না চতুরব্যক্তি ভুল থেকে শিক্ষা নেয়; তুলনীয়- 'ন্যাড়া দুবার বেলতলা যায় না'।
একই শ্রেণির দুই লোক কখনো একমত হয় না' স্বার্থের কারণে নিজের লোক বেশি শত্রুতা করে; তুলণীয়- 'ভেয়ের শত্রু ভেয়ে নেয়ের শত্রু নেয়ে'; যত রক্তের কাছাকাছি তত রক্তারক্তি'।
একই সাথে মনোহর ও হিতকারী বাক্য দুর্লভ সত্যকথা সর্বদা অপ্রিয় হয়; সমতুল্য- হিতং মনোহারি চ দুর্লভং বচঃ।
এক ওয়াকিফহাল সাত নবিসিন্দা একজন পারদর্শী সাতজন শিক্ষানবিশীর সমান; সাতজন শিক্ষানবিশী যা করতে পারে একজন বিশেষজ্ঞ তাই করতে পারে।
এক ঔর এক গ্যারহ হতে হৈঁ সংগঠনে শক্তি বাড়ে; সকলে মিলে কাজ করলে কাজ শতগুণ বৃদ্ধি পায় এবং কাজ সহজ হয়; সমতুল্য- 'একতাই বল'।
এককড়া বুদ্ধি নেই চার কড়ার মেজাজ অবোধের হম্বিতম্বি বেশি।
এক কড়ার মুরোদ নেই কিল/ভাত মারার গোঁসাই দুর্বলতা লুকোতে অক্ষমের দুর্ব্যবহার।
এককড়াই/কলসী/গামলা/বালতি দুধে একফোঁটা চোনা১ দুধে একফোটা চনা পড়লে সব দুধ নষ্ট; এমন উৎকট মন্দ জিনিস যার অত্যল্প পরিমাণ প্রচুর ভালো জিনিস নষ্ট করে
এককড়াই/কলসী/গামলা/বালতি দুধে একফোঁটা চোনা২ সর্বাংশে ভাল কাজ করে ছোট্ট একটা দোষে বদনাম কেনা বা সব সুনাম নষ্ট; শেষরক্ষা না হওয়া।
এক কাটে ভারে, আরেক কাটে ধারে অস্ত্রের ভার বা ধার না থাকলে যেমন কোন কিছু কাটা যায় না; তেমনি পয়সার জোর থাকলে সহজে কার্যসিদ্ধি হয়, অন্যথায় বুদ্ধির জোরে কার্যসিদ্ধি করতে হয়।
এককাঠি বাজে না নিজের সাথে ঝগড়া বা দ্বন্দ্ব হয় না; ঝগড়া বা দ্বন্দ্বে দুইপক্ষ লাগে।
এক কান কাটা বাজার/রাস্তা/সহরের ধার দিয়ে যায়, দুকান কাটা বাজার/রাস্তা/সহরের মাঝদিয়ে যায় অল্প-বেহায়ার কিছু লজ্জাবোধ থাকে; নির্লজ্জ-বেহায়া নিজেকে বেশি জাহির করে আনন্দ পায়; পূর্ণমাত্রার বেহায়ার লজ্জাশরম নেই।
এক কানা আরেক কানাকে পথ দেখালে দুজনেই খানায় পড়ে দুজনেই বিচারে অক্ষম; সবক্ষেত্রে এক এক মিলে দুই হয় না।
এক কানে শোনে অন্য কানে বেড়োয়১ কাজে একান্ত অমনোযোগী।
এক কানে শোনে অন্য কানে বেড়োয়১ কোন সদুপদেশ গ্রহণ করে না, এমন ব্যক্তি।
এককাল ঠেকেছে তিনকাল গিয়ে অতিবৃদ্ধ লোক।
এক কিলো জিনিসে পাঁচ কিলো ঠকায় মাত্রাহীন/লাগামছাড়া চুরি।
এক কূল ভাঙে তো এক কূল গড়ে সংসারে শুধু ভাঙা গড়ার খেলা চলে।
এক কেঁড়ে দুধে এক ছিঁটে চোনা একটু দোষে সব কাজ পণ্ড।
এক্-কে আর দেখবে বেগার বেগার ধরে কাজ করালে কাজ প্রায়ই ঠিক হয় না; এক করতে গিয়ে অন্যরকম হয়ে যায়।
এককোপে বটগাছকে ফেলা যায় না বৃহৎ বা বিশালকে সহজে কাবু করা যায় না।
একক্ষুরে মাথা কামানো১ সকলে একগোত্র বা গোষ্ঠীর লোক; সমতুল্য- একব্রাশে রং করা'।
একক্ষুরে মাথা কামানো২ সকলে একই দোষে দুষ্ট।
একক্ষুরে মাথা কামানো৩ সকলের এক দশা।
একখাপে দুই তরোয়াল দুই প্রবলশক্তি পাশাপাশি থাকে না; সমতুল্য- 'এক আকাশে দুই সূর্য'; 'এক বনে দুই বাঘ' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'একস্থানে দুই তরোয়াল'।
এক খায় এক থিতায়১ একটা খায় সঙ্গে পরেরটা কি খাবে ভাবে।
এক খায় এক থিতায়২ বর্তমানে খায় সঙ্গে ভবিষৎ খাবারের সংস্থান করে।
এক খায় এক থিতায়৩ অভিষ্টবস্তু পাওয়ার সঙ্গে পুনরায় সেটি পাওয়ার জন্য সচেষ্ট হয়।
এক খাল কেটে অন্য খাল ভরায় চূড়ান্ত ধান্ধাবাজী।
একগাঁয়ে ঢেঁকি পড়ে অন্যগাঁয়ে মাথা ধরে১ সম্পর্কবিহীন কাজে মাথাব্যথা হওয়ার কারণ নেই; কেউ অনধিকার চর্চা করলে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়; তুলনীয়- 'কাশীধামে কাক মরেছে কালীঘাটে/কুমিল্লায় হাহাকার'।
এক গাঁয়ে ঢেঁকি পড়ে অন্য গাঁয়ে মাথা ধরে২ বিনাকারণে কষ্ট পাওয়া; গুপ্ত স্বার্থ থাকার ইঙ্গিত।
একগাঁয়ের কুকুর অন্যগাঁয়ে ঠাকুর স্থানান্তরে নিজ পরিচয় লুকিয়ে সাধু সাজা যায়; সমতুল্য- অতিচেনার কদর নেই।
এক গাছের ছাল অন্য গাছে জোড়া লাগে না১ সমধর্মী না হলে মিল হয় না; সমতুল্য- 'তেলে-জলে মিশ খায় না'।
এক গাছের ছাল অন্য গাছে জোড়া লাগে না২ পর কখনো আপন হয় না।
এক গালে চূণ অন্য গালে কালি মাখানো/লাগানো চরম অপমান করা।
এক গুরলে/গুলতিতে/ঢিলে দুই পাখি মারা একচেষ্টায় দুই কাজ সম্পন্ন করা; একসঙ্গে দুই লক্ষ্য অর্জন করা; এক কাজ করার উপলক্ষে অন্য কাজ করা; সমতুল্য- 'রথ দেখা কলা বেচা'; হিন্দি পাঠান্তর- 'এক গোলি দো চিড়িয়া'।
এক গোয়ালে বিয়াইছে গাই সেই রিস্তায় চাচাতো ভাই গোঁজামিল দিয়ে মিলানোর অপচেষ্টা; গুপ্ত স্বার্থ থাকার ইঙ্গিত।
এক গাঙের চিল / এক গোয়ালের গরু একগোষ্ঠীভুক্ত; সমগোত্রীয়; সমতুল্য- 'এক জলাশয়ের/ঝিলের মাছ'; 'একঝাঁকের কই'; 'একবনের শিয়াল; 'একবাগানের ফুল'; 'এক লাউয়ের বিচি' ইত্যাদি
এক চন্দ্রই যে অন্ধকার দূর করে, সকল তারা মিলেও তা পারে না হাজার নির্গুণে সমাবেশে এক গুণীর সৃষ্টি হয় না।
এক চন্দ্রে জগৎ আলো একাই একশ।
এক চাকাতে রথ চলে না নিজের সাথে বিবাদ হয় না; বিবাদে দুপক্ষ থাকে।
এক চির পান দুই চির হল সোনার সিংহাসনে ভাগ বসিল সপত্নী আসাতে স্বামী বিভক্ত হওয়ায় প্রথমা স্ত্রীর প্রভুত্ব ক্ষুণ্ণ হল এবং সেইজন্য তার খেদোক্তি।
একচুল ক্ষতি করতে না পারা বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে না পারা।
এক চেয়ে দুই মাথা ভাল দ্বিতীয়ব্যক্তির মতামত পরামর্শ ইত্যাদি সর্বদা মূল্যবান।
একচোখে কাঁদা অন্যচোখে হাসা১ কপটচারিতা- কপটচারী লোক পরের দুঃখে লোক দেখানোর জন্য কাঁদে কিন্তু মনে মনে হাসে; পাঠান্তর- 'একচোখে কান্না একচোখে হাসি'।
একচোখে কাঁদা অন্যচোখে হাসা২ হরিষে বিষাদ; অবিমিশ্র সুখ হয় না; সুখ-দুঃখ মিলিয়ে সংসার; একইসঙ্গে সুসংবাদ ও দুঃসংবাদ এলে এমন মনের অবস্থা হয়।
একচোখো মাসি কারে ভালোবাসি মা ও মাসি সমান হতে পারে না।
একছাতার তলে বাস এক স্বভাবের লোক; সমদোষে দুষ্ট; সবাই মন্দলোক; সবারই একই দশা।
একছেলে তার ফুলের শয্যে, পাঁচছেলে তার কাঁটার শয্যে একছেলে সবসময় আদরযত্ন পায়; পাঁচছেলে হলে কারো ভাগ্যে আদরযত্ন জোটে না।
একছেলে যার হাজার মানত তার মা-বাবা অজানা আশঙ্কায় সবসময় ভীত থাকে।
এক জঙ্গলে দুই বাঘ থাকে না দুই প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী পাশাপাশি থাকে না; সমতুল্য- এক আকাশে দুই সূর্য থাকে না'; 'এক তালুকে দুই ভাল্লুক থাকে না'।
একজন উৎপীড়ক সবসময় কাপুরুষ যে ব্যক্তি দুর্বলতর ব্যক্তিকে আখাত করে সে আক্ষরিক অর্থে কাপুরুষ।
একজন ঘুমন্ত মানুষ আরেকজন ঘুমন্ত মানুষকে জাগাতে পারে না নির্গুণের ছোঁয়ায় কেউ গুণী হয় না।
একজন বন্ধুর চেয়ে একজন শত্রু থাকা ভালো সেক্ষেত্রে নিজের দোষ জানতে পারা যায়।
একজন বন্ধুলাভ দশজন বন্ধুহারানোর সমানই কোন প্রাপ্তিযোগই হারাতে নেই।
একজন ভিক্ষুক কখনো দেউলিয়া হয় না যার কিছু নাই তার হারাবারও কিছু নাই।
একজন ভিক্ষুক নির্বাচনকারী হতে পারে না ভিক্ষুকের পছন্দ-অপছন্দ নেই; সমতুল্য- 'ভিক্ষার চালা কাঁড়া আর আকাঁড়া'
একজন মা বুঝতে পারে একজন শিশু যে কথা বলে না- ইহুদী প্রবাদ মাতৃহৃদয়ের তুলনা হয় না; একমাত্র মা-ই বোঝে শিশুমনের কথা।
একজন মানুষ যা করতে পারে তার বেশি সে পারে না সাধ্যের বেশি কেউ করতে পারে না, করার চেষ্টা করাও উচিত নয়।
একজন শত্রুর স্মিতহাসি থেকে একজন বন্ধুর ভ্রুকুটি ভাল সেক্ষেত্রে ক্ষতির সম্ভাবনা কম থাকে।
একজনকে বন্ধু করার আগে তার সাথে এক যোজন পথ হাঁটো হাত বাড়ালেই প্রকৃত বন্ধু মেলে না; বন্ধু চিনতে সময় লাগে।
একজনের কাছে অমৃত অন্যজনের কাছে বিষ সব জিনিস সবার কাছে সমান বা উপযোগী নয়; একজনের কাছে যা অতি পছন্দের, অন্যের কাছে তা বর্জনীয়।
এক জলাশয়ের/ঝিলের মাছ একগোষ্ঠীভুক্ত; সমগোত্রীয়; সমতুল্য- 'এক গাঙের চিল'; 'এক গোয়ালের গরু'; 'একঝাঁকের কই'; 'একবনের শিয়াল; 'একবাগানের ফুল' ইত্যাদি।
একজায়গায় থাকলে হাঁড়িতে হাঁড়িতে ঠোকাঠুকি হয় যত কষাকষি তত লাঠালাঠি; অন্তরঙ্গতায় মন কষাকষির সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
এক জুতা সব পায়ে গলে না নানামানুষ নানাজাতের নানামতের হয়; তুলনীয়- হাতের পাঁচটা আঙুল সমান নয়।
একঝাঁকের কই একগোষ্ঠীভুক্ত; সমগোত্রীয়; সমতুল্য- 'এক গাঙের চিল'; 'এক গোয়ালের গরু'; 'একবনের শিয়াল; 'একবাগানের ফুল'; 'এক লাউয়ের বিচি' ইত্যাদি।
এক ঝিকরে/টানেতে মাছ গাঁথে না এ কেমন বঁড়শি, এক ডাকেতে সাড়া দেয় না সে কেমন পড়শি? ভাল বঁড়শি হলে এক টানেতেই মাছ উঠার কথা; উপকারী পড়শি হলে এক ডাকেতেই আসা কথা; গুণের না হলে কাজের হয় না।
এক টাকা সঞ্চয়ের অর্থ এক টাকা আয় অর্থের অপচয় সমর্থনযোগ্য নয়; পাঠান্তর- 'এক পয়সা জমানো মানে এক পয়সা রোজগার'।
একটি অলস ভেড়া তার পশমকে ভারী মনে করে অলস লোকেরা সব থেকে সহজ কাজকেও কঠিন মনে করে।
একটি আজকাল দুটি আগামীকালের সমান আজ নিশ্চিত কাল অনিশ্চিত; অনিশিচতের পিছনে ছুটতে নেই; সমতুল্য- 'হাতের একটা পাখি বনের দুটি পাখির সমান'।
একটি কড়িকাঠ যত বড়ই হোক-না-কেন সমগ্র বাড়ীর ভার বইতে পারে না- চীনা প্রবাদ একার শক্তি কোন শক্তি নয়; এক পায়ে খাড়া থাকা যায় না; তুলনীয়- 'এক আর একে এগারো হয়'; 'একতাই বল।
একটি কালো আঙুর সাদা আঙুরের মতই মিষ্টি বাইরের আবরণের ভিত্তিতে গুণের বিচার করা যায় না।
একটি কালো মুরগী একটি সাদা ডিম পাড়ে১ সাদা চোখে যা দেখি তা সব সময় সত্য হয় না; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'চামড়র রঙ মানুষ চেনায় না'; 'মলাট দেখে বই বিচার হয় না' ইত্যাদি।
একটি কালো মুরগী একটি সাদা ডিম পাড়ে২ প্রবাদটি মানুষকে বোঝায় যে, সবকিছু সম্ভব, তা যতই অসম্ভব বলে মনে হোক-না-কেন। এটি পরামর্শ দেয় যে এমনকি এমন কিছু যা অসম্ভব বলে মনে হয় যথেষ্ট প্রচেষ্টা এবং অধ্যবসায় দিয়ে অর্জন করা যেতে পারে।
একটি খারাপ অজুহাত 'কিছু না'-এর চেয়ে ভাল দেওয়া অজুহাত হাস্যকর বলে মনে হলেও তা গ্রহণ করার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে; পাঠান্তর- 'একটি খারাপ অজুহাত 'কিছু না'-এর চেয়ে খারাপ নয়'।
একটি খারাপ আপোস একটি ভাল মামলা থেকে ভাল কিছু ক্ষতি স্বীকারে আপসের পক্ষে ওকালতির যুক্তি হল- মামলার নিস্পত্তি হলে অর্থ ও সময়ের সাশ্রয় হয়; প্রবাদটি জ্ঞানী এবং সাবধানে সিদ্ধান্ত নেওয়া শেখায়; তুলনীয়-'সর্বোনাশো সমুৎপন্নে অর্ধং ত্যজতি পণ্ডিতঃ'।
একজন খারাপ লোক একটি খারাপ নামের চেয়ে ভাল বদনাম খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং একটি খারাপ লোক সেখানে পৌঁছানোর আগেই সর্বত্র পৌঁছে যায়';
একটি খারাপ শুরু একটি খারাপে শেষ হয় খারাপ শুরু পরবর্তী কাজে প্রভাব ফেলে; ফলে কাজ শেষ হতে অযথা বিলম্ব হয়; তুলনীয়- 'এড়া কাজে বেড়া বেশি'।
একটা/টি ছোট্ট ছিদ্রও বিরাট জাহাজকে ডোবাতে পারে একটি ছোট ভুল বিরাট ক্ষতি করতে পারে; প্রবাদটি মূলতঃ মানুষকে ছোটছোট খরচ থেকে সাবধান থাকতে বলে; তুলনীয়- 'অপচয় করো না বিপদে পড়ো না'।
একটা/টি ছোট্ট তিন-ইঞ্চির জিভ সাত-ফুটের একজন দশাসই লোককেও ধরাশায়ী করতে পারে স্বাস্থ্যের কারণে রসনা সংযত রাখার পক্ষে চেতাবনি।
একটা/টি দিয়াশলাই কাঠি খাণ্ডবানল সৃষ্টি করতে পারে কোন তুচ্চ বিষয় তুচ্চ নাও হতে পারে; পাঠান্তর- 'একটি স্ফুলিঙ্গ দাবানল সৃষ্টি করতে পারে'।
একটা/টি দোষ বহু গুণকে গ্রাস করে দোষের প্রতিক্রিয়াশক্তি বহুগুণ বেশি।
একটা/টি পতন তোমাকে জ্ঞানীমানুষ করে তোলে পতন থেকে মানুষ শিক্ষা নেয়।
একটা/টি পদক্ষেপে হাজার মাইলের যাত্রা শুরু হয় সব বিশালের শুরু সামান্য দিয়েই শুরু হয়।
একটা/টি পয়সা সঞ্চয় হলে একটি পয়সা অর্জিত হয় সঞ্চয় অর্থোপার্জনের মতই সমান গুরুত্বপূর্ণ।
একটি পাখি তার গানদ্বারা পরিচিত হয় একটি মানুষকে তার কথাবার্তা দিয়ে চেনা যায়; সমতুল্য- 'বৃক্ষ তোমার নাম কী? ফলেন পরিচীয়তে'।
একটা/টি বই যেন একটি আস্ত ফুলের বাগান বই পড়ে রূপ রস গন্ধ- সবকিছু আহরণ করা যায়।
একটি ভালো শুরু/সূচনা হল অর্ধেক কাজ/যুদ্ধ জয় পরিকল্পনা সঠিক হলে অর্ধেক কাজ হয়ে যায়।
একটি মন্দ সকাল ভাল দিনে পরিণত হতে পারে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিও সময়ের পরিবর্তনে মন্দ ভালতে পরিণত হতে পারে; অসুবিধার মুখে ইতিবাচক থাকতে উত্সাহিত করতে উক্তিটি করা হয; বিরুদ্ধ উক্তি- 'সকাল দিন দেখায়'।
একটি মিথ্যা আরেকটি মিথ্যার জন্ম দেয় সত্য একটা; মিথ্যা হাজারটা হয়; ফলে মিথ্যা চাপতে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়; সত্য চাপার প্রয়োজন হয় না।
একটি সুতা তার সবচেয়ে পাতলা জায়গাতে ছিঁড়ে অকর্মণ্য কর্মচারীদের জন্য প্রতিষ্টান ধ্বংস হয়; সমতুল্য- 'একটি শিকল তার দুর্বল আংটার মতই সমান শক্তিশালী'।
একটি নরম উত্তর ক্রোধ দূর করে, একটি কঠোর শব্দ রাগ জাগিয়ে তোলে- বাইবেল- হিতোপদেশ মানুষের প্রতি সদয় হলে তারা চিরদিন অনুগত থাকে; সম্পর্কীত প্রবাদ- -মিষ্টি কথায় কষ্ট নেই'।
একটি বদরোগ ভাল করা যায়, একটি বদনাম ঘুচানো যায় না বদরোগের কোন দোষ/কলঙ্ক নেই, বদনামে দোষ/কলঙ্ক মিশে থাকে।
একটি বনাঞ্চল গড়তে দশবছর সময় লাগে, একটি মানুষ গড়তে একশবছর সময় লাগে মানুষের অনুশীলন অনেক সময়সাপেক্ষ।
একটি ভাত টিপলে, হাঁড়িসুদ্ধ ভাতের খবর মেলে সবাই এক গুণসম্পন্ন হয়।
একটি ভাল বই একজন ভাল বন্ধু ভাল বই বন্ধুর মত ভাল পরামর্শদাতা হয়।
একটি মিথ্যা ঢাকতে দশটা মিথ্যা কথা বলতে হয় মিথ্যাকে সত্য প্রতিপন্ন করতে অনেক কথা বলতে হয়।
একটি মূলার জন্য একটা গর্ত (চীনা প্রবাদ) যে যার নিজের কাজ কর; অন্য অর্থে- কেউ অপরিহার্য নয়।
একটি শিকল তার দুর্বলতম আংটার সমান শক্তিশালী অংশ বাদ দিয়ে সমগ্র হয় না; দুর্বল অংশ সমগ্রকে সমানভবে দুর্বল করে তোলে; দলের সাফল্য তার প্রতিটি সদস্যের সাফল্যের উপর নির্ভর করে; সমতুল্য- 'একটি সুতা তার সবচেয়ে পাতলা জায়গাতে ছিঁড়ে'; পাঠান্তর- 'এক আংটা বিকল তো সমস্ত শিকলটাই বিকল'।
একটি সুন্দর শুরু কাজের অর্ধেক সাফল্য আনে পরিকল্পনা সঠিক হলে কাজের অর্ধেক শুরুতেই শেষ।
একটি স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল সৃষ্টি হতে পারে কোন ঘটনাই উপেক্ষা করা উচিত নয়
একটু আগুন দ্রুত নিভে যায় ক্ষুদ্র সমস্যা অচিরেই সমাধান করা যায়; তাকে বাড়তে দিলে সেটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে; তুলনীয় - 'সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়'।
একটু জানা/শেখা বিপজ্জনক ব্যাপার অর্ধ-জ্ঞানী বিশেষজ্ঞ সেজে ভুল তথ্য জানায়।
একটু হাসি দশবছর আয়ু বাড়িয়ে দিতে পারে বাঁচতে হলোে হাসতে শেখো; হাসির মত ওষুধ হয় না; পাঠান্তর-'একটু হাসি দশবছর বয়স কমিয়ে দিতে পারে'।
একটু হাসি লক্ষ দুশ্চিন্তা মুছে দিতে পারে। হাসি নির্মল আনন্দের উৎস।
একডানায় পাখি উড়ে না চলতে গেলে সহায় লাগে, এক ঠ্যাঙে হাঁটা যায় না; আমেরিকাবাসীরা দ্বিতীয় গ্লাস গরম পানীয় নেওয়ার ইচ্ছা প্রকশে কৌতুকচ্ছলে উক্তিটি করে।
একডালে দুইপাখি, গা্য়েগায়ে মাখামাখি মনের মিল থাকলে পাশাপাশি বাস করা যায়।
একঢিলে দুইপাখি মারা এক চেষ্টায় দুই কাজ সম্পন্ন করা; একসঙ্গে দুই লক্ষ্য অর্জন করা; এক কাজ করার উপলক্ষে অন্য কাজ করা; সমতুল্য- 'ঘটি কেনা গঙ্গাস্নান'; 'রথ দেখা কলা বেচা'।
একতাই বল সমষ্টির শক্তিই আসল শক্তি।
এক তালুকে দুই ভালুক থাকে না দুই প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী পাশাপাশি থাকে না; সমতুল্য- এক আকাশে দুই সূর্য থাকে না'; 'এক জঙ্গলে দুই বাঘ থাকে না'।
একতায় উত্থান, বিভেদে পতন সংঘবদ্ধতার শক্তি অসীম।
একদিকে ছুঁচ গলে না, অন্যদিকে হাতি গলে ছোটখাটো বিষয়ের দিকে আমরা বেশি নজর দিই।
একদিন শয়তান তো চিরদিন শয়তান চোর কখনো সাধু হয় না।
একদুয়ার বন্ধ তো হাজারদুয়ার খোলা ভিক্ষুকের প্রতি বক্রোক্তি।
এক দেখে শেখা আরেক ঠেকে শেখা নানাভাবে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়।
এক দোষে সব গুণ ক্ষয় হয় ছোট্ট একটা বদনাম সব সুনাম নষ্ট করে দেয়।
এক পন্থ দো কাজ এক উপায়ে দুই কাজ করা; দ্বিগুণ লাভ; সমতুল্য- 'এক ঢিলে দুই পাখি মারা'; 'রথ দেখা কলা বেচা'।
এক পয়সা জমানো মানে এক পয়সা রোজগার স্বল্পসঞ্চয় থেকে একদিন বিরাট অর্থে পরিণত হয়
তেঁতুলবিচি পেছন করে খিচিখিচ হঠাৎ বড়লোক হলে প্রচণ্ড অহঙ্কারী হয়ে পড়ে; তুলনীয়- 'নির্ধনের ধন হলোে দিনে দেখে তারা'।
এক পাঁঠা তিনবার কাটা ধান্ধাবাজী করে এবং ধান্ধাবাজী ধরা পড়ে; একটা জমি তিনবার তিনজনকে বিক্রি করার ধান্ধা বা একটা বই লিখে একাধিক লোককে উৎসর্গ করা; সমতুল্য- 'এক মুরগী সাত জায়গায় জবাই'।
এক পা জলে এক পা স্থলে১ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে মনস্থির করতে অপারগ; সমতুল্য- 'কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা'; 'সসেমিরা অবস্থা'।
এক পা জলে এক পা স্থলে২ দুকুল রাখার চেষ্টা; দুটি পরস্পরবিরোধী কাজ একইসাথে সম্পন্ন করার প্রয়াস; সমতুল্য- 'দু নৌকায় পা'।
এক পাগলে রক্ষা নেই সাত-পাগলের মেলা চরম বিশৃঙ্খলা; বিরক্তির একশেষ; একটা সমস্যাতেই জর্জরিত, সেখানে একাধিক সমস্যা এসে উপস্থিত।
এক পায়ে খাড়া উদগ্রীব; এখনি রাজী।
এক পালকের পাখি এক যায়গায় ভিড় করে সংঘবদ্ধ হওয়া প্রকৃতির স্বাভাবিক ধর্ম।
এক পুতের আশ/আশা, নদীর তীরে বাস/বাসা সদা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত; একছেলের বাবা ও মা সবসময় অপুত্রক হওয়ার আশঙ্কায় ভোগে; পাঠান্তর-'এক পুতের আশ নদীর তীরে বাস ভাবনা বারোমাস'।
এক পুরুষে রোপে তাল, পর পুরুষে করে পাল; তার পর যে সে খাবে, তিন পুরুষে ফল পাবে- খনা তিন পুরুষে তাল গাছের ফল ভোগ করে; বিরুদ্ধ বচন- বারো বছরে ফলে তাল যদি না লাগে গরুর লাল'।
এক ফুলে মালা হয় না বিরাট কাজে যৌথ উদ্যোগ চাই।
একফোঁটা শিশিরেও বন্যা হতে পারে, যদি গর্তটা পিঁপড়ের হয় (ফারসী প্রবাদ) সব কিছুই আপেক্ষিক।
একবনে দুই বাঘ থাকে না দুই প্রবলশক্তি পাশাপাশি থাকে না; সমতুল্য- 'এক আকাশে দুই সূর্য থাকেনা', 'এক খাপে দুই তরোয়াল থাকে না' ইত্যাদি।
একবরের মাগ চিংড়ীমাছে খোসা দোজবরের মাগ নিত্য করে গোঁসা // একবরের স্ত্রী হেলফেলা দোজবরের স্ত্রী গলায় মালা দ্বিতীয়পক্ষের স্ত্রী তুলনায় স্বামীর বেশি আদরণীয়া হয়।
একবাক্সে সব ডিম রাখা ঠিক নয় গেলে সব একসাথে যাবে।
একবার করার আগে দু'বার ভাবো বুদ্ধিমান এক পা চলার পর একটু থামে; তুলনীয়- 'চলৎ একেন পাদেন তিষ্ঠতি বুদ্ধিমানঃ'
একবার দংশন দুইবার কুণ্ঠা অভিজ্ঞতা সতর্ক হতে শিক্ষা দেয়; সমতুল্য- 'ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়', 'গরম জলে ছ্যাঁকা খাওয়া কুকুর জল দেখলে ভয় পায় ইত্যাদি।
একবার না পারিলে দেখ শতবার কার্যসিদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত থামতে নেই।
একবার রোগী একবার রোজা১ অভিজ্ঞতা থাকলে প্রতিকার করা যায়; ভূক্তভোগী পরের বারের জন্য সতর্ক থাকে; তুলনীয়- 'নেড়া দুইবার বেলতলাতে যায় না'; পাঠান্তর- 'একবারের রোগী আরবারের রোজা'।
একবার রোগী একবার রোজা২ আজ যে সাহায্যপ্রার্থী কাল সে সাহায্যকর্তা হতে পারে।
একবৃক্ষে যদা রাত্রৌ নানা পক্ষীসমাগম। প্রভাবতে তু দিশো যান্তি কা কস্য পরিবেদনা।। (চাণক্য) রাত্রিকালে বাসের জন্য নানা পক্ষী এসে সমবেত হয়; প্রভাতসমাগমে তারা নানাদিকে চলে যায়; সুতরাং কার জন্য কি বেদনা?
এক ব্যঞ্জন ভাত তাও আবার নুনে পোড়া/বিষ১ কষ্টের ওপর কষ্ট;
এক ব্যঞ্জন ভাত, তাও আবার নুনে পোড়া/বিষ২ একমাত্র ছেলে দুশ্চরিত্রের হলে মাবাবার কষ্টের সীমা থাকে না।
একব্রাশে রং করা একগোষ্ঠীর লোক; সমগোত্রীয়; সমতুল্য- 'একক্ষুরে মাথা কামানো'।
এক ভস্ম আরেক ছার (ক্ষার=ছাই), দোষগুণ কব কার কে কারে দোষে, দুইই সমান অপদার্থ, দুই সমান অপরাধী; তুলনীয়- 'একের ছয়টি এবং আরের আধডজন'।
এক মন হলে সমুদ্র শুকায়১ সবাই একসাথে কাজ করলে অসাধ্যসাধন করা যায় সমতুল্য- 'একতাই বল'।
এক মাঘে শীত যায় না১ বিপদাপদ শুধু একবারই আসবে এমন ধারণা ভুল; একটা বিপদ কাটলেই আরেকটা এসে হাজির হয়।
এক মাঘে শীত যায় না২ প্রতিশোধ নেবার সুযোগ কখনো হারায় না।
এক মাণিক (বড় রত্ন) সাত রাজার ধন পরমপ্রিয় পুত্র।
একমাত্র বিজ্ঞতম এবং মহামূর্খরাই পরিবর্তিত হয় না- কনফুসিয়াস উভয়ই নিজের ধারণাসম্পর্কে গোঁড়া হয়।
একমাত্র মৃত্যুই সকলকে সমান করে মড়ার কোন জাতবিচার হয় না।
এক মিথ্যা হাজার মিথ্যার জন্ম দেয় এক মিথ্যা চাপতে হাজার মিথ্যা কথা বলতে হয়।
এক মুখ সোনা দিয়ে ভরা যায়, তিন মুখ ছাই দিয়েও ভরে না একজনকে সন্তুষ্ট করা যার সবাইকে পারা যায় না।
এক মুখে দুই/তিন কথা শুনে মনে/প্রাণে লাগে ব্যথা নীতিহীনতা পীড়াদায়ক; যে কথা দেয় কিন্তু কথা রাখে না বা অস্বীকার করে তাকে কেউ পছন্দ করে না; কথার হেরফের সত্যিই বেদনাদায়ক।
এক মুরগি কয়জায়গায়/বার জবাই চুড়ান্ত ধান্ধাবাজী; একটা জমি বিক্রি করার নামে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে আগাম নেওয়ার মত ধান্ধাবাজী ধরা পড়ে; সমতুল্য- এক পাঁঠা তিনবার কাটা' পাঠান্তর- 'একমুরগি সাতজায়গায়/বার জবাই'।
একমেবাদ্বিতীয়ম ঈশ্বর এক, দ্বিতীয় ঈশ্বর নেই।
একযাত্রায় পৃথক ফল অভিন্ন কাজের একজন পুরস্কৃত তো অন্যজন তিরস্কৃত।
একরত্তি দড়ি সকল ঘর বেড়ি১ সামান্য সলতেতে প্রদীপ জ্বাললে সারা ঘর আলোকিত হয়।
একরত্তি দড়ি সকল ঘর বেড়ি২ অসাধ্যসাধনের চেষ্টা; সামান্য ক্ষমতায় বা সম্পদে সব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা।
একরত্তি সোনা স্যাঁকরা হাজার জনা অল্পবিষয়ের বহু প্রার্থী; যোগান অল্প চাহিদা প্রচুর হলে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়; সমতুল্য- 'এক আনার সৌ বীমার'; 'আড়াই কড়ার কাসুন্দি, হাজার কাকের গোল'।
এক/একা/একে রামে রক্ষা নেই লক্ষ্মণ/সুগ্রীব দোসর যে একাই যথেষ্ট, যার সাহায্যের কোন প্রয়োজন নেই তাকে সাহায্য করতে আসা; কষ্টের ওপর কষ্ট; একের বিক্রমই যার যথেষ্ঠ তার আবার সঙ্গীর কি প্রয়োজন; একের বিক্রমেই প্রাণ ওষ্ঠাগত দুইয়ের বিক্রমে মরলাম।
এক/একা/একে রামে রক্ষা নেই লক্ষ্মণ/সুগ্রীব দোসর কষ্টের ওপর কষ্ট।
এক লাউয়ের বিচি একগোষ্ঠীভুক্ত; সমগোত্রীয়; সমতুল্য- 'এক গাঙের চিল'; 'এক গোয়ালের গরু' ইত্যাদি।
এক লাউয়ের বিচি কেউ করছে কচরকচর, কেউবা আছে কচি এক পিতামাতার পাঁচটা ছেলে পাঁচরকম প্রকৃতির হয়; তুলনীয়- 'হাতের পাঁচটা আঙুল এক রকম হয় না'।
একলা ঘরের গিন্নী চাবীকাটি ঝুলিয়ে নাইতে যাব প্রতিটি নারীর সুপ্তবাসনা থাকে এমন ঘরে বিয়ে যেন হয় যেখানে জটিলাকুটিলাস্বরূপা শাশুড়ী ননদ থাকবে না; ঘরের, বাক্স-সিন্ধুকের চাবি আঁচলে ঘুরিয়ে প্রভুত্ব করতে পারবে।
একলা চলা চলা নয় সবাই মিলে না চললে মানসিক অবসাদ আসতে পারে।
একলাঠিতে সাত সাপ মারি এক কৌশলে বহুকাজ হাসিল করার চেষ্টা।
একলাফেই তালগাছে ওঠা যায় না সবকিছুতেই আয়াস লাগে, সময় লাগে।
একলা মানুষ, মানুষ নয় মানুষ সামাজিক জীব, একলা থাকতে পারে না বা ভালবাসে না।
এক সুপুত্রে বংশ ধন্য সু-এর তুলনা হয় না।
এক হেঁসেলে দুই রাঁধুনি, পুড়ে গেল তার ফেনগালুনি খণ্ড কর্তৃত্ব কাজে আসে না; সমতল্য- 'অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট'; 'অধিক সাঁধুনীতে ব্যঞ্জন নষ্ট';
এক হাজার পদক্ষেপ নিয়ে এক মাইলের যাত্রা শুরু- চীনা প্রবাদ প্রতিটি বিশাল কাজের একটি ছোট্ট শুরু থাকে।
এক হাটে কিনে অন্যহাটে বেচা বুদ্ধিমান, লাভের উদ্যোগ।
এক হাত নড়ে না দুই হাত নড়ে দুপক্ষ না হলে বিবাদ হয় না।
এক হাত গলায় এক হাত পায় ইচ্ছা ক'রে অপমান করে পরে ক্ষমা চায়; তুলনায়- 'লাথি মেরে পায়ে ধরা'।
এক হাত পায় এক হাত মাথায় কখনো সম্মান করে কখনো অপমান করে।
এক হাতে তালি বাজে না এক পক্ষের দোষে বিবাদ হয় না; jঝগড়া করতে দুইজন লাগে
একাই একশ সব গুণের অধিকারী
একা কাঁদি, একা হাসি; গরম রেঁধে খাই বাসি সুখেদুঃখে ভরা জীবন; একাকীত্বের জ্বালা।
একাকী ব্যক্তি সর্বত্র বাড়িতে থাকে আমরা সকলেই আমাদের নিজেদের চামড়ার ভিতরে বদ্ধ অবস্থায় নির্জন কারাবাসে দন্ডিত।
একাকীত্ব ও বদসঙ্গের মধ্যে একাকীত্ব পছন্দ একাকী মানুষ নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে; কেউ একাকীত্ব পছন্দ করে, কেউ বা করে না।
একাকীত্ব চিন্তার বাসা একাকীত্ব চিন্তার অবকাশ দেয়।
একাকীত্বের চেয়ে ঝগড়া ভালো- মানুষ নিঃসঙ্গ থাকতে পারে না; আপনি একা থাকলে আপনি বদসঙ্গে আছেন; বিরুদ্ধ উক্তি - 'দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল';
একাকীত্ব দুঃখের প্রথম উৎস পাঁচজনে মিলেমিশে থাকলে দুঃখ অনুভূত হয় না।
একাগ্রচিত্তে কাজ করলে পাহাড় টলানো/ডিঙানো যায় চেষ্টায় কি না হয়; চেষ্টা করলে পঙ্গুও পাহাড় ডিঙাতে পারে।
একা ঘরের বউ, খেতে বড় সুখ, মারতে এলে ধরতে নাই, তাতে বড় দুখ অনেক মেয়েই যৌথসংসারে থাকতে চায়না; নিজের সংসারে তারা সুখ পায়; কিন্তু স্বামীস্ত্রীতে যখন ঝগড়া বাঁধে তখন মিটমাট করিয়ে দেওয়ার লোক থাকে না। যৌথপরিবারের সুফল এবং এককপরিবারের কুফল বর্ণনা করতে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়।
একাদশে বৃহস্পতি চরম সৌভাগ্য।
একান্নও পাপ, বাহান্নও পাপ পরিমাণ গুণে পরিবর্তন আনে না; গল্পে আছে এক দস্যু নদীর ধারে এক নারীর সতীত্ব রক্ষা করতে গিয়ে অত্যাচারীকে হত্যা করতে গিয়ে এই উক্তি করেছিল।
একা রামে রক্ষা নেই সুগ্রীব/লক্ষণ তার দোসর 'এক রামে রক্ষা নেই লক্ষ্মণ/সুগ্রীব দোসর'-দ্রষ্টব্য
এ কি ছেলের হাতে পিঠে/মোয়া? সবদ্রব্য সহজলভ্য নয়; ভুলিয়েভালিয়ে ছেলের হাত থেকে মোয়াটা নেওয়া যায়, পাকা লোককে বোকা বানানো যায় না।
একি বিধির খেলা কাকের/বকের/বিড়ালের গলায় তুলসীমালা ভেকধারী ধার্মিকের প্রতি বক্রোক্তি।
এ কি মোর জ্বালা মেয়ে চামকাঠ ডালা, কানে দুটো ঘুরুঘুরে গলায় মোতির মালা মেয়ে দেখতে কুৎসিত, তায় আবার কানে ঘুরঘুরে পোকার মত দুল এবং গালায় মোতিরমালা পরে দেহের শোভাবর্ধন করেছে; কোন অসহনীয় বিষয়সম্পর্কে প্রযোজ্য।
একুল ওকুল দুকল গেল অকূল পারে গোকুল এদিকও গেল ওদিকও গেল, কোনদিক আর রইল না; সমতুল্য- 'ইতো নষ্টঃ ততো ভ্রষ্টঃ'।
একুশকোড়া গুণে খান, ফুলের ঘায়ে মূর্ছা যান১ অতি সুখী শরীর বা অভিমানী মন; গল্পে আছে এক রাজকন্যা উপপতির সব অত্যাচার সহ্য করত, কিন্তু ফুল ছূঁড়ে মারলে মূর্ছা যেত
একুশকোড়া গুণে খান ফুলের ঘায়ে মূর্ছা যান২ অত্যন্ত সুখী শরীরের অভিমানী মেয়ের ভানের প্রতি তির্যক উক্তি।
একে গুণগুণ দুইয়ে পাঠ; তিনে গোলমাল চারে হাট অধ্যয়ন বিষয়ক প্রবাদ; অভিজ্ঞতায় বলে একজন শিক্ষার্থী হলে পাঠে মন বসে না; দুইজন শিক্ষার্থী একসাথে পড়শুনা করলে পরস্পরের সাহায্যে লেখাপড়া ভাল হয়; তিনজন শিক্ষার্থী হলে পড়াশুনা বিশৃঙ্খল হয় এবং চারজন শিক্ষার্থী একত্র হলে পাঠের পরিবর্তে হাট বসে যায়; পাঠান্তর- 'একে রুণুঝুণ্‌ দুইয়ে পাঠ; তিনে গোলমাল চারে হাট'।
একে চায় আরে পায় কাঙ্ক্ষিত বস্তু ছাড়াও অন্য মনোমত বস্তু পেলে আনন্দে নেচে ওঠে।
একে ছেঁড়াকাঁথা তায় শততালি কষ্টের ওপর কষ্ট।
একে তো উমা তায় তুষার ধুমা কষ্টের ওপর কষ্ট।
একে তো ছাই- তার উপর বাতাস কষ্টের ওপর কষ্ট।
একে তো মধুপর্কের বাটি তায় আবার কাত নানাদোষে দুষ্ট।
একে তো হনুমান তায় আবার রামের বাণ যন্ত্রণার উপর যন্ত্রণা; সমতুল্য- একে রামে রক্ষা নাই সুগ্রীব দোসর।
একেন পাপ শতেন কিংবা একটা পাপ করলেও যা পাঁচটা করলেও তা; পাপ করতে যাওয়ার আগে পাপীর মনোভাব; শোমোটূলয়- 'যাহা বাহান্ন তাহাই তিপ্পান্ন'।
একে নাচনি বুড়ি তাতে পড়েছে ঢোলের বাড়ি ইন্ধন যোগানো; উস্কে দিলে বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যায়; পাঠান্তর- 'একেই নাচনি বুড়ি তায় নাতনীর বিয়ে'; 'একে তো নাচুনি কালী, তাতে মৃদঙ্গের তাল'; 'একে বউ নাচনি তায় খেমটার বাজনি'।
একেনাপি কুবৃক্ষেণ কোটরস্থেন বহ্নিনা। দহ্যতে তদ্বনং সর্বং কুপুত্রেণ কুলং যথা।। (চাণক্য) যেমন একটিমাত্র কুবৃক্ষের কোটরের আগুনের দ্বারা সেই সমগ্র বন দগ্ধ হয়, তেমনি একটিমাত্র কুপুত্রের দ্বারা সমগ্র কুল কলঙ্কিত হয়।
একেনাপি সুবৃক্ষেণ পুষ্পিতেন সুগন্ধিনা। বাসিতং স্যাদ্ বনং সর্বং সুপুত্রেণ কুলং যথা।। (চাণক্য) যেমন সুগন্ধ ফুলে ভরা একটিমাত্র গাছের দ্বারাই সমগ্র বনভূমি (সুগন্ধে) আমোদিত হয়, তেমনি একটিমাত্র সুপুত্রের দ্বারা সমগ্র বংশ গৌরবান্বিত হয়।
এ কেবল দিনেরাত্রে জল ঢেলে ফুটাপাত্রে বৃথা চেষ্টা তৃষ্ণা মিটাবারে- রবীন্দ্রনাথ১ মানুষের বাসনাকামনার শেষ নেই; একটি বাসনার পরিতৃপ্তি অন্য বাসনা ডেকে আনে।
এ কেবল দিনেরাত্রে জল ঢেলে ফুটাপাত্রে. বৃথাচেষ্টা তৃষ্ণা মিটাবারে- রবীন্দ্রনাথ২ নিস্ফল বা বৃথা প্রচেষ্টা; সমতুল্য-'অন্ধকারে ঢিল/ছোঁড়া/মারা'; 'অন্ধকারে লাউ কোটা'।
একেবারে না হওয়ার চেয়ে দেরিতে হওয়া ভালো১ কিছু না হওয়া অকাজের সামিল; কোনক্ষেত্রেই শূন্যতা সমর্থনযোগ্য নয়য়।
একেবারে না হওয়ার চেয়ে দেরিতে হওয়া ভাল২ তবুতো কিছু পাওয়া যাবে; দেরীতে হলেও কিছু করার জন্য কাউকে ধন্যবাদ জানাতে এই প্রবাদ প্রযুক্ত হয়।
একেবারে কিছু না করলে কুকাজ করা হয় অলস না থেকে কিছু-না-কিছু করা উচিৎ।
একে মা মনসা তায় আবার ধূনার গন্ধ ইন্ধন যোগানো; কোপনস্বভাবের ব্যক্তিকে উস্কে দিলে সে আরও ক্রোধান্বিত হয়।
একে মা রাঁধে না তার ওপর তপ্ত আর পান্তা সামান্য বিষয় জোটে না, অসামান্যের দাবী; অনায্য দাবী।
একের ছয়টি এবং অন্যটির আধডজন যখন আমরা মনে করি দুটি জিনিস সমান পছন্দের বা অপছন্সের তখন এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়; তুলনীয়- 'এক ভস্ম আরেক ছার দোষগুণ কব কার'।
একের বোঝা, দশের আঁটি/লাঠি ভাগাভাগি করলে সমস্যা অর্ধেক হয়ে যায়।
একো হি দোষো গুণসন্নিপাতে নিমোজ্জতীন্দোরিতি বহু গুণের মধ্যে একটি দোষ থাকলে সেটা গুণসাগরে নিমজ্জিত হয়।
একো হি দোষো গুণসন্নিপাতে নিমোজ্জতীন্দোরিতি যো বভাষে। নূনং ন দৃষ্টং কবিনাপি তেন দারিদ্র্যদোষো গুণরাশিনাশী বহু গুণের মধ্যে একটি দোষ থাকলে সেটা গুণসাগরে নিমজ্জিত হয়- এই উক্তি যে কবি করেছেন তিনি জানেন না যে, একমাত্র দারিদ্রদোষে সব গুণ নষ্ট হয়ে যায়।
এখন শুনলে না বঁধু যৌবনভব্রে, পশ্চাতে কাঁদিতে হবে অঝরঝরে যৌবনের অহংকারে সব কিছু ফুৎকারে ওড়ালে বৃদ্ধবয়সে কপালে দুঃখ আছে; কেউ কথা না শুনলে এই প্রবাদ বলা হয়।
এখনই সন্দেশ খেয়েচি, চায়ে চিনি দিওনা, সুগার আছে নিজেকে জাহির করার মানসিকতা; দেখনদারী।
এ গিরগিটি নয় সাক্ষাৎ মা মনসা তীব্রশক্তিরক্ষেত্রে প্রযুক্ত; ভয়ঙ্কর ক্ষতি হতে পারে।
এগুনে দর্শনধারী, পরে গুণবিচারী গুণ অদ্শ্য; রূপ দৃশ্য; তাই রূপই প্রথম আকর্ষণ করে; পরে গুণের বিচার হয়।
এগুলে রাম, পেছুলে রাবণ উভয়সঙ্কট; প্রাণপণ খেটেও কারও সন্তোষবিধান করা যায় না; পাঠান্তর- 'এগুলে সর্বনাশ, পেছুলে নির্বংশ'; 'এগুলে নির্বংশের ব্যাটা, পেছুলে নির্বংশের ব্যাটা'।
এঙ লাফায় বেঙ লাফায় চেঙ বলে আমিও লাফাই অক্ষমের উচ্চাশা; অনুকরণপ্রিয়তা; উৎকৃষ্টকে অনুকরণ করে নিকৃষ্টের হাস্যাস্পদ হওয়া; সমতুল্য- 'খঞ্জনের নাচ দেখে চড়ুইয়ের নাচ'; 'ময়ূরের নৃত্য দেখে ছাতারের নাচ'।
এড়া কাজে বেড়া জটিল বাঁকাধরনের কাজে বিপত্তি বেশি হয়।
এড়ে (ছেড়ে) দিয়ে তেড়ে ধরে পাওয়া সুযোগ হেলায় ছেড়ে দিয়ে ফিরে পাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা।
এত বড় হাবা জন্ম দেয়নি কারো বাবা মহামূর্খ।
এত ভঙ্গ বঙ্গদেশ তবু রঙ্গভরা- ঈশ্বর গুপ্ত নানাসমস্যায় বাংলা বারবার বিদীর্ণ হচ্ছে তবুও তার ভাবজগৎ নানা ঐশ্বর্যে পরিপূর্ণ।
এত সুক্ষ্ম যে না বললেও হয় কারো বুদ্ধি এত সূক্ষ্ম যে উল্লেখ না করলেও চলে; বুদ্ধিহীনের প্রতি বক্রোক্তি।
এত সুখ যদি তোর কপালে তবে কেন কাঁথা বগলে১ বাহ্যলক্ষণ দেখে মনে হয় মেকি সুখী; মেকি সুখের ভান
এত সুখ যদি তোর কপালে তবে কেন কাঁথা বগলে২ কারো আত্মগৌরব প্রচারে অবিশ্বাস; বলছে সুখে আছে, কিন্তু বাহ্যিক আচরণ তা বলে না; নিজের অবস্থা বাড়িয়ে বর্ণনাকারীকে উপহাস করার জন্য ব্যবহৃত প্রবাদবাক্য।
এত সুখ যদি তোর কপালে তবে কেন কাঁথা বগলে৩ গরিবের ভাগ্য সর্বদা সহায় হয় না।
এতে কিছু যায় আসে না কত আস্তে তুমি হাঁটছো, যতক্ষণ না তুমি থামছো- কনফুসিয়াস চলাটাই হল আসল কথা; জীবন কখনো স্থির নয়; বেদের উপদেশ- চরৈবেতি চরৈবেতি।
এ তো মূলোবাড়ী নয় এ তো বেগুনবাড়ী বছরে একবার মূলোরর চাষ হয়; বেগুন বারোমেসে; যেস্থানে একসময়ে সাহায্য পাওয়া যায় সেটি হল মূলোবাড়ী; যেস্থানে অল্প হলেও সবসময় সাহায্য পাওয়া যায় সেটি হল বেগুনবাড়ী।
এ তো সবে কলির সন্ধ্যে অধঃপতনের সবে শুরু; ভয়াবহ সঙ্কটের সূচনামাত্র।
এদিক নেই ওদিক আছে বাড়াবাড়ির প্রতি ব্যঙ্গোক্তি।
এনে দাও কাছে মারি, বাপের পূণ্যে নড়তে নারি অলসের উক্তি।
এবারকার রোগী সেবারকার রোজা১ যন্ত্রণাভোগী ব্যক্তি পরের বারের জন্য সতর্ক থাকে।
এবারকার রোগী সেবারকার রোজা২ আজ যে সাহায্যপ্রার্থী কাল সে সাহায্যকারী হতে পারে।
এমন মানবজীবন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা ঠিক সময়ে ঠিক কাজ করলে জীবনরূপ জমি ফুলে-ফলে ভরে তোলা যায়
এমনকি একজন বোকারও একটি প্রতিভা আছে কেউই একেবারে বোধশূন্য হয় না; কাউকেও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে নেই।
এমনকি একটা/টি খরগোশও কামড়াতে পাড়ে যদি সে কোণঠাসা হয় প্রাণীমাত্রই মরণ পণ করে আত্মরক্ষা করতে চায়।
এমনকি বানরেরাও গাছ থেকে পড়ে দক্ষ মানুষেরও কাজে ভুল হতে পারে।
এমনি কেউ কারও বন্ধু নয় বা শত্রু নয় অকারণে কিছু হয় না।
এমনি যায় না মাস, তায় আবার দুদিন বেশি১ প্রচণ্ড টানাটানি।
এমনি যায় না মাস, তায় আবার দুদিন বেশি২ কষ্টের ওপর কষ্ট; যন্ত্রণার উপর যন্ত্রণা।
এ যদি গোরাচাঁদ হয়, তবে কালাচাঁদ কেমন? বলার সাথে কাজের কোন মিল নেই।
এ যে ঘোর কলি প্রচণ্ড অন্যায়; সহ্যের বাইরে।
এরণ্ডোহপি দ্রুমায়তে (বৃক্ষহীন দেশে) ভেরেণ্ডাগাছও বৃক্ষ বলে গণ্য হয়।
এর মুণডু ওর ঘাড়ে একজনের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানো।
এল ডোরাডো সোনার দেশ; স্বর্ণখনি।
এলো দারুণ বর্ষাকাল হরিণী চাটে বাঘের গাল খুব খারাপ সময়; শত্রুমিত্রের কোন ভেদাভেদ নেই; প্রবল শত্রুরাও এখন পরস্পরের মিত্র।
এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাই এলোমোলো অবস্থায় সুযোগ নেওয়া; সমতুল্য- 'ঘোলা জলে মাছ ধরা'।
এলোশ্রাদ্ধের গুঁতোদক্ষিণা যে কাজে শৃঙ্খলা নেই সেখানে লাভ না হয়ে লোকসানই হয়।
এসেছি একা, যাবোও একা, কার সঙ্গে কার বা দেখা। কেউ কারো নয়; সম্পর্কীত প্রবচন- 'ভেবে দেখ মন কেউ কারো নয় মিছেই ভ্রম ভূমণ্ডলে'।
এ্যাঙ যায়, ব্যাঙ যায়, খলসে বলে আমিও যাই- অমৃতলাল বসু১ অযোগ্যও সমান বা সঙ্গী হতে চায়; যে কাজে সে অসমর্থ সেই কাজ করতে গিয়ে হাস্যাস্পদ হয়; অনুকরণপ্রিয়তার প্রতি ব্যঙ্গোক্তি; সমতুল্য- 'ময়ূরের নৃত্য দেখে ছাতার পাখি নাচে'; পাঠান্তর- 'এ্যাঙ লাফায়, ব্যাঙ লাফায়, খলসে বলে আমিও লাফাই'।-
এ্যাঙ যায়, ব্যাঙ যায়, খলসে বলে আমিও যাই- অমৃতলাল বসু২ 'বামুন কায়েতরা জাত নিয়ে মারামারি করে, তাঁতিরা বলে আমরা চুপ করে থাকি কেন?'-টেকচাঁদ ঠাকুর
এ্যায়সা দিন নেহি যায়েগা, জোয়ারমে ভাটা গিরেগা, খেয়াল ঠিক রাখনা। অবিমিশ্র সুখদুঃখ হয় না; সুখের পরে দুঃখ আসে, দুখের পরে সুখ; সমতুল্য- 'চক্রবৎ পরিবর্তন্তে সুখানি চ দুখানি চ'; 'চিরদিন কারো সমান নাহি যায়'।

প্রবাদ-প্রবচন অর্থ
ঐ দিন আর নাইরে নাথু খাবলা খাবলা খাবা ছাতু সুযোগ নেবার দিন শেষ।
ঐ ধান ঐ চাউল গিন্নিগুণে আউল-ছাউল সব এলোমেলো; পাঠান্তর- 'সেই ধান সেই চাল গিন্নিবিনা আলথাল'।
ঐশ্বর্য অর্জন করা সহজ, রক্ষা করা কঠিন। ধনসম্পদ যত সহজে পাওয়া যায় তত সহজে রাখা যায় না।
ঐশ্বর্য চিত্তের বিকার ঘটায় ঐশ্বর্য ভোগলিপ্সা বাড়ায়, চিত্তের স্থিরতা নষ্ট করে।
ঐশ্বর্যের দেমাক থেকে অন্তরের টান অনেক বেশি আদরণীয়; সমতুল্য- 'আদরের ভোজন কি করে ব্যঞ্জন', 'আদরের ডাল-ভাতও ভাল, বিনা আদরের ঘি-ভাতও ভাল না', 'রাজার ভুরিভোজ থেকে বিদুরের শাকান্ন ভাল' ইত্যাদি।
ঐশ্বর্যের সময় দারিদ্রের কথা ভেবো, দারিদ্রের সময় ঐশ্বর্য্যের কথা ভেবো না তাতে চিত্তের বিকার ঘটবে।

প্রবাদ-প্রবচন অর্থ
ওজন বুঝে চলা১ আত্মসম্মান বজায় রেখে চলা।
ওজন বুঝে চলা১ অপব্যয় না করা, মিতব্যয়ী হওয়া; সমতুল্য- অবস্থা বুঝে ব্যবস্তজা'; 'আয় বুঝে ব্যয় করা'; 'কাপড় বুঝে জামা কাটা' যখন যেমন তখন তেমন' ইত্যাদি।
ওঝার ঘাড়ে বোঝা // ওঝার ঘাড়ে ভূতের বোঝা বিপদ যে থেকে রক্ষা করে সে এখন বিপদে পড়েছে; রক্ষাকর্তার উপর অতিরিক্ত চাপ
ওঝার বেটা বনগরু পণ্ডিতের ছেলে মহামূর্খ; (ওঝা ব্রাহ্মণের পদবী; কৃত্তিবাস ওঝা ব্রাহ্মণ সন্তান ছিলেন।); সমতুল্য- 'প্রদীপের নীচেই অন্ধকার'।
ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে নেকড়ায় আগুন দিয়ে কথা নেই বার্তা নেই সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত অবস্থায় কাউকে কিছু করতে বলা; যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়াই হঠাৎ কিছু করতে আহ্বান করা; পাঠান্তর- 'ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে বাড়া ভাত খেয়ে'।
ওপরে চিকণ চাকণ ভেতরে খ্যাড়(=খড়) বাইরে বাবু ভিতরে ফকির।
ওম জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্‌। ধ্বান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্।। প্রভাতী সূর্যপ্রণামমন্ত্র।
ওরে পাগল খাবিনে, না। হাত ধোব কোথা? সেয়ানা পাগল।
ওল কচু মান তিনই সমান গলা চুলকানোর ক্ষেত্রে সবগুলি তুল্যমূল্য; উনিশ-বিশ।
ওল খেয়ে গোল সমস্যার সম্মুখীন।
ওল বলে, মানকচু তুই নাকি লাগ নিজের ত্রুটির প্রতি নজর নেই পরের দোষ খুঁজে বেড়ায়।
ওলো রঙ্গী তোর ঘর পড়েছে, 'পুড়ুক গিয়ে ঘর; আমার ত রঙ পুড়বে না কো, কিবা তা'তে ডর রূপসী রূপের গর্ব নেচে বেড়ায় অন্য কোনদিকে নঞ্জর করে না; সেদিক থেকে সুপরামর্শের প্রবাদ- 'জাতের নারী কালাও ভালা','বিয়ে কর কালো

তাই গৃহস্থের ভালো'।

ওষুধ ধরেছে কাজের কাজ হয়েছে; প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ওষধার্থে সুরাপান মদ খাওয়ার পক্ষে বাহানা।
ওষুধের চেয়ে পথ্যি ভালো সুসমখাদ্য ডাক্তারের চেয়ে ভাল ডাক্তার।
ওস্তাদের মার শেষ রাতে দক্ষ ব্যক্তি শেষমূহুর্তে তার দক্ষতা দেখায়।

প্রবাদ-প্রবচন অর্থ
ঔষুধ ধরেছে ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে; ফল ফলতে শুরু করেছে।
ঔষুধার্থে সুরাপান, পান না বাড়ালেই থাকে মান পরিমিত সুরাপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল।

প্রবাদ-প্রবচন অর্থ
ক অক্ষর গোমাংস যে কখনো আদ্যাক্ষর ক নিষিদ্ধ গরুর মাংসের মত মুখে আনে নি; অক্ষরজ্ঞানহীন মহামূর্খ ব্যক্তি; পাঠান্তর- 'ক লিখতে কলম ভাঙে'; 'ক লিখতে হ লিখে'।
কঃ পরঃ প্রিয়বাদিনাম্ মিষ্টভাষীদের কেউ পর বা শত্রু হয় না।
কঃ প্রাজ্ঞ বাঞ্ছতি স্নেহং সিকিতাসু কোন জ্ঞানীপুরুষ বালুকায় স্নেহরস পেতে ইচ্ছা করেন? অর্থাৎ বালুকায় স্নেহরস বলতে কিছু নেই।
কইতে কইতে মুখ বাড়ে, খাইতে খাইতে পেট বাড়ে সব কিছুতেই পরিমিতিবোধ থাকার প্রতি ইঙ্গিত।
কইতে জানলে ঠকি না,বসতে জানলে উঠি না জ্ঞানীগুণীরা কখনো অপ্রতিভ বা অপ্রস্তুত হয় না।
কইতে পারি সইতে পারি না কথা শোনাতে পারে কিন্তু কথা শুনতে নারাজ।
কই মাছের প্রাণ অল্পেতেই না যান কাটা কইমাছ কড়াতেও লাফায়; কষ্টসহিষ্ণু লোক অল্পতে কাবু হয় না; পাঠান্তর- 'কইমাছের প্রাণ শক্ত বড়'।
কইয়ের তেলে কই ভাজা যার কাজ তাকে দিয়েই কাজ হাসিল করা; বিনা পরিশ্রমে কার্যোদ্ধার; সমতুল্য- 'গঙ্গাজলে গ্ঙ্গাপূজা'; ।মাছের তেলে মাছ ভাজা'।
কইলাম কথা সবার মাঝে/মধ্যে; যার কথা তার গায়ে বাজে/বিন্দে পরোক্ষে কাউকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলা।
কইলে যায় মনের দুখ খাইলে যায় পেটের ভুখ চুপচাপ বসে থাকা যায় না; না খেলেও বাঁচা যায় না।
কই হইল আগরতলা আর কই চৌকিরতলা দুই অসম বিষয়ের মধ্যে তুলনা হয় না; তুলনীয়- কিসো আর কিসে সোনা আর সিসে'।
কংস রাজার বদ (বধ) ফরমাশ অন্যায় ও অসম্ভব আদেশ।
কখনো অপ্রিয় সত্য কথা বলিও না কেউই অপ্রিয় সত্য কথা শুনতে চায় না।
কখনো খেওনা ওলে/তালে আর ঘোলে; কখনো ভুলো না ঢেমনার (লম্পট) বোলে বিরুদ্ধ বস্তুর মিশ্রণ খেতে নেই; প্রবঞ্চকের কথায় বিশ্বাস করতে নেই; করলে প্রাণ ওষ্টাগত হবে।
কখনো না হওয়া থেকে দেরীতে হওয়া ভালো তবুতো কিছু হবে; দেরীতে হলেও কিছু করার জন্য কাউকে ধন্যবাদ জানাতে এই উক্তি করা হয়।
কখনো প্রমাণ করতে যেওনা যা কেউ সন্দেহ করে না যেখানে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই সেখানে প্রমাণের প্রয়োজন হয় না।
কঙালী মেঁ আটা গীলা কষ্টের ওপর কষ্ট; দুঃখীর আরো দুঃখী হওয়া।
কচলা (বিশেষভাবে রগড়িয়ে ধোয়া) কাপড় ছাড়তে নাই ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে কোন কাজ ছাড়তে নেই।
কচি উচ্চে পাকা পটল, কচি পাঁঠা, পাকা কাতল (কাৎলা মাছ) এইসব খাদ্য বড়ই সুস্বাদু।
কচি পাঁঠা, পাকা মেষ, দইয়ের আগা ঘোলের শেষ, এইগুলি খেতে বেশ এইসব খাবার খেয়ে বড়ই তৃপ্তি পাওয়া যায়।
কচি খুকি কুলোয় শুয়ে তুলোয় দুধ খান নির্বুদ্ধি বয়স্কা মহিলা সম্পর্কে প্রযোজ্য।
কচু কাটতে কাটতেই ডাকাত লেগে থাকলে একদিন সিদ্ধি হবেই।
কচুপোড়া খাও১ 'অণ্ডকোষ পুড়িয়ে খাও' অর্থে কুতসিৎ গালিবিশেষ।
কচুপোড়া খাও২ ব্যর্থ মনোরথ হয়ে পড়ে থাকো
কচুবনে ছড়ালে ছাই খনা বলে তার সংখ্যা নাই কচুবনে ছাই ছড়ালে কচুর সংখ্যা দ্রুত ও তেজে বাড়ে।
কচুবনের কালাচাঁদ লম্পঢ়; দুশ্চরিত্র ব্যক্তি; গল্পে আছে রমণীদের ভোলাবার জন্য রাতের অন্ধকারে লম্পট চরিত্রের লোকেরা কচুবনে লুকিয়ে থাকে।
কচুর বেটা ঘেঁচু, তার আবার মান কচুজাতীয় মূলের মধ্যে মানই সবথেকে বড়; নীচু যত বড়ই হোক-না-কেন নীচু নীচুই থাকে; অপদার্থের কোন মানসম্মান হয় না; পাঠান্তর- 'কচুর বেটা ঘেচু, বড় বাড়েন তো মান'।
কঞ্চি খবরদার মুল্যবান বস্তুর দিকে নজর নেই সামান্য বস্তুর দিকে কড়া নজর; সমতুল্য- 'ঘি আদুড় ঘোল ঢাকা'।
কঞ্চিতে বংশলোচন জন্মানো নীচের উচ্চপদ পাওয়া (উৎসকাহিনী- বংশলোচন হলো বাঁশের অভ্যন্তরে উৎপন্ন শর্করা জাতীয় বস্তু; যা ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়; কঞ্চিতে বংশলোচন জন্মালে কঞ্চি বাঁশের উচ্চপদ লাভ করে।)
কটি ছেলে? না, পুড়িয়ে খাব বদ্ধকালার অসংলগ্ন কথাবার্তা।
কড়াক্কড় চৌকী-আইন খারাপ; সদর বন্ধ খিড়কি ফাঁক একদিকে আঁটোসাঁটো অন্যদিকে শিথিলতা; কাজের আয়োজনের সময় খুব কড়াকড়ি কিন্তু কার্যক্ষেত্রে শিথিলতা; ছোটখাট ব্যাপারে নিয়মের বাড়াবাড়ি কিন্তু বড় বিষয়ে উদাসীন; সমতুল্য- 'বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো'।
কড়িকপালে বিত্তশালী ব্যক্তি।
কড়িকাঠ গুণে যাও ব্যর্থমনোরথ হয়ে পড়ে থাকো; অলসভাবে সময় কাটাও।
কড়িতে কড়া, কাহনে কানা অল্প খরচে কিপ্টেমি, বেশি খরচে দরাজহস্ত; তুলনীয়- 'বুড়িতে চতুর, কাহনে কানা'।
কড়ি থাকলে বাঘের দুধ মেলে অর্থের অসীম শক্তি।
কড়ি থাকলে বেয়াইয়ের বাপের শ্রাদ্ধ হয় টাকা থাকলে অপচয় করা যায়।
কড়ি দিয়ে কানা গরু কেনা অজ্ঞতাবশতঃ টাকা খরচ করে ঠকে গেলে এই প্রবাদ বলা হয়।
কড়ি দিয়ে কিনবো দই গোয়ালিনী মোর কিসের সই১ পয়সা খরচ করে জিনিসপত্র কেনার সময় রিশতার কোন প্রশ্ন নেই; পাঠান্তর- 'কড়ি দিয়ে খাই দই, কি করবে মোর গয়লা সই'।
কড়ি দিয়ে কিনবো দই গোয়ালিনী মোর কিসের সই২ কোন বিষয়ে কারো কাছে বাধ্য নয় এমন মানসিকতার ব্যক্তি করে।
কড়ি দিয়ে হেঁটে নদী পার হওয়া অর্থ গেল পরন্তু পরিশ্রমও করতে হল।
কড়ি দেখছো ঝাল দেখোনি অর্থ-আয়ের সম্ভাবনা দেখছো কিন্তু তারজন্য পরিশ্রম যে কি ভয়ানক গেল তা দেখছো না; (উৎসকাহিনী-কোন এক জমিদার দিঘি কাটার জন্য জল সেঁচ্ছিলেন; কিন্তু যেখানে জল সেঁচে ফেলা হয়, সেই ঝাল এত উঁচু ছিল যে মজুরেরা অতদূরে জল সেঁচতে পারছিল না; তাতে জমিদার দ্বিগুণ অর্থ দিতে রাজী হন; তাই শুনে এক দরিদ্র মজুরের স্ত্রী স্বামীকে যাবার জন্য তাড়না করলে সে বলে, ‘কড়ি দেখছো ঝাল দেখনি'; কষ্ট না দেখে কেবল লাভ দেখ’লে এই প্রবাদ বলা হয়); তুলনায়- 'ঘুঘু দেখেছো ঘুঘুর ফাঁদ দেখোনি'।
কড়ি নেবে গুণে পথ চলবে শুনে টাকাপয়সা নেবার সময় গুণে নিতে হয়; পথ জেনে তবে পথ চলতে হয়; বিচার-বিবেচনার সাথে কাজ সম্পাদন করা উচিৎ।
কড়িপিশাচ অতি কৃপণব্যক্তি।
কড়ি পেলে কাঠের ঘোড়া (ধর্মরাজ) হাঁ করে ঘুষের দাপট।
কড়ি ফটকা চিঁড়ে দই, কড়ির মত বন্ধু কই টাকা খরচ করলে সব পাওয়া যায়; টাকার মত বন্ধু হয় না।
কড়ি বই বন্ধু নেই টাকা থাকলে কোন ভাবনা থাকে না।
কড়ি হলে বাঘের দুধ মেলে- ভারতচন্দ্র পয়সা খরচ করলে যেকোন দুস্প্রাপ্য বস্তু পাওয়া যায়।
কড়ির জিনিস পড়িস না১ দামী জিনিস কম ব্যবহার করবে।
কড়ির জিনিস পড়িস না২ মূল্যবান সামগ্রী সাবধানে ব্যবহার করবে।
কড়ির মাথায় বুড়োর বিয়ে১ কড়ি থাকলে বুড়ো বয়সেও বিয়ে করা যায়।
কড়ির মাথায় বুড়োর বিয়ে২ বুড়োর যে বিয়ে তার মুলে আছে অর্থ।
কড়ির যত্ন নাও কাহন (সঞ্চিত অর্থ) তোমার যত্ন নেবে প্রয়োজনকালে অর্থের অভাব হবে না।
কণশঃ ক্ষণশ্চৈব বিদ্যামর্থং চ সাধয়েৎ একটু একটু করে এবং বহুসময় ধরে বিদ্যা ও অর্থ উপার্জন করবে।
কণ্টকবিনা কমল নাই কলঙ্কশূন্য চন্দ্র নাই জগতে কিছুই নির্দোষ নয়; অবিমিশ্র কিছু হয় না।
কণ্টকেনৈব কণ্টকম কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা; সমতুল্য- 'বিষস্য বিষমৌযধং'; 'শত্রু দিয়ে শত্রু নাশ'।
কত আস্তে তুমি হাঁটছো তাতে কিছু যায় আসে না যতক্ষণ না তুমি থামছো- কনফুসিয়াস কত আস্তে তুমি হাঁটছো সেটা প্রশ্ন নয় প্রশ্ন হল তুমি হাঁটছো কিনা; জীবনে এগিয়ে যেতে হবে এটাই মূলকথা; জীবন চলিষ্ণু; তুলনীয়- 'চরৈবেতি চরৈবেতি'।
কত আর থাকিব আমি লক্ষ্মণের ফল ধরা হয়ে কিছু লোক আছে যাদের যতটুকু কাজ করতে বলা হয় ততটুকু কাজই করে, তার বেশি একটুও করে না; এদের লক্ষ্য করে বিদ্রূপে এই প্রবাদাংশটি ব্যবহৃত হয়; (উৎসকাহিনী- বনবাসকালে রামচন্দ্র প্রতিদিন লক্ষ্মণের হাতে ফল দিয়ে বলতেন, 'ধর'; লক্ষ্মণ ফলটি ধরতেন এবং তুলে রেখে দিতেন; রামচন্দ্র কোনদিন 'খাও' বলেন নি বলে তিনি খেতেন না; দেশে ফির এলে তিনি সব ফল রামাচন্দ্রকে ফিরিয়ে দেন।)
কতই বা দেখবো আর ছুঁচোর/বানরের গলায় চন্দ্রহার১ অযোগ্যের হাতে মহার্ঘবস্তু দেখে আক্ষেপ।
কতই বা দেখবো আর ছুঁচোর গলায় চন্দ্রহার২ যে ব্যক্তি অবস্থার অতিরিক্ত বেশভূষা করে যে ব্যক্তি হাস্যাস্পদ হয় তার প্রতি বক্রোক্তি।
কতই সাধ ছিলরে চিতে মলের আগে চুটকি দিতে অক্ষমের বাসনা; নৈরাশ্যব্যঞ্জক উক্তি; যা হবার নয় তাই হবার ষে সম্পর্কে খেদোক্তি; পাঠান্তর- 'কতই সাধ হয়রে চিতে, ফোকলাদাঁতে মিশি দিত'; 'কত সাধ হয়রে চিতে বেগুন গাছে আঁকশি দিতে'।
কতক্ষণ রহে শিলা শূন্যেতে মারিলে- কাশীরাম দাস মাটির কাছাকাছি থাকাটাই স্বাভাবিক; মাটির টান বড় টান; প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধ কিছু করা যায় না; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'পঙ্কো হি নভসি ক্ষিপ্তঃ ক্ষিপ্তু পততি মূর্ধানি'।
কত জলে কত চাল/চিঁড়ে/মুসুরি ভেজে দেখো যা জানতে না তা এখন জেনে নাও।
কত ঢং দেখালি গুয়ে, তুলসীতলায় শুয়ে শুয়ে কপট আচারের প্রতি বক্রোক্তি।
কত ধানে কত চাল জান না কোন হিসাব রাখ না কোনো বিষয়ের প্রকৃত অবস্থার খবর/হিসাব করে চলার প্রতি ইঙ্গিত।
কত রঙ্গ দেখালে মাসি আদিখ্যেতার প্রতি বক্রোক্তি।
কত রবি জ্বলেরে কেবা আঁখি মেলেরে! অতি-অলস কিছু দেখতে বা শুনতেও তলসতা করে।
কত শত গেল রথি শেওড়াতলার চক্রবর্তী অক্ষমের আস্ফালন; বুদ্ধিহীনের বড়াই; পাঠান্তর-'কত হাতী গেল তল ভেড়া/মশা বলে কত জল'; 'মহাগজা পলায়ন্তে মশকানাং তু কা গতিঃ'।
কথং মারাত্মকে ত্বয়ি বিশ্বাসঃ তোমার মত দুস্কৃতিকে বিশ্বাস কি?
কথা কম কাজ বেশী কথা থেকে কাজের দাম বেশী।
কথা কম বললে ক্ষতি কম হয় খারাপ পরিস্থিতি ভুলে যেতে পারি যদি আমরা সে সম্পর্কে আলোচনা বন্ধ করি।
কথা কয় না ঘাড় নাড়ে সেই বাঘ মানুষ মারে কম কথা বলার লোক খুব খতরনক হয়।
কথা টলার চেয়ে পা টলা (আছাড় খাওয়া) ভালো১ কথা দিলে কথা রাখতে হয়; অঙ্গীকার পালন করা অবশ্য কর্তব্য।
কথা টলার চেয়ে পা টলা ভালো১ যেখানে কথা দিলে কথা নড়চড় হওয়ার সম্ভাবনা আছে সেখানে না থাকাই ভালো।
কথা দিয়ো ধীরে; কাজ করো তীরে (দ্রুত) চিন্তাভাবনা করে কথা বলা উচিৎ; গদাইলস্করি চালে কাজ করা উচিৎ নয়, কাজ দ্রুত শেষ করা উচিত।
কথা বললে বার্তার সৃষ্টি হয় একাকী ঘরের কোণে গোমড়া মুখে বসে থাকা নেই; তুলনীয়- 'বাত কর তো বাত বনে'- হিন্দী প্রবাদ
কথা বলা থেকে কথা শোনার দাম বেশী জ্ঞানীরা শোনে বেশি বলে কম।
কথা বলার আগে যথেষ্ঠ সময় নিতে হয় যাতে কথা ফলের মত পরিপক্ক (সার্থক) হয় চিন্তাভাবনা করে কথা বলতে হয় যাতে কার্যসিদ্ধি হয়।
কথা বেচে খাওয়া১ কথার বিনিময়ে অর্থোপার্জন; উকিলেরা কথা বেছে খায়।
কথা বেচে খাওয়া২ লোক ঠকিয়ে জীবিকানির্বাহ; রাজনীতিকরা কথা বেছে খায়।
কথাবার্তায় ক্রোধের পরিমাণ খাবারের লবণের মত পরিমিত হলোে রুচিকর বেশি হলোে ক্ষতিকর।
কথা শুনে পেটের ভাত চাল হয়ে যায় বিপদের কথা শুনে আশঙ্কায়/ভয়ে প্রাণ শুকিয়ে যায়।
কথা শুনে হরিভক্তি উড়ে গেল নিতান্ত অশ্রদ্ধার কথা, যা শুনে সব শ্রদ্ধা নষ্ট হল।
কথা শোন দ্রুত কথা বল ধীরে কেউ কিছু বললে তৎক্ষণাৎ তার কথা শোন এবং ধীর ও স্পষ্টভাষায় কথার উত্তর দাও।
কথায় কথা বাড়ে ভোজনে পেট বাড়ে বাকবিতণ্ডায় অনাবশ্যক কথার অবতারণা হয়; তর্ক বন্ধ হলেই গোলযোগ মিটে যায়; বেশি আহারে আহারের স্পৃহা বাড়ে।
কথায় কথা বাড়ে, ক্রোধে হয় ঝড়, কথা না বাড়িয়ে সখি যাও তবে ঘর অনাবশ্যক কথা বাড়িয়ে বাগবিতণ্ডায় জড়ানো উচিত নয়।
কথায় কথায় রাজা উজীর মারে লম্বাচওড়া কথা বলে।
কথায় কলসী/পেট ভরে না১ শুধু কথায় কাজ হয় না; ফাঁকা আওয়াজে কাজ হয় না; ফাঁকি দিয়ে কাজ হাসিল হয় না; পাঠান্তর- 'কথায় চিঁড়ে ভেজে না'; 'কথায় ভাত রাঁধে না'।
কথায় কলসী/পেট ভরে না২ চাটুকারি করে কিছু অর্জন করা যায় না।
কথায় টলার চেয়ে পায়ে টলা ভালো কথা টলার চেয়ে পা টলা ভালো- দ্রষ্টব্য
কথায় নয় কাজে পরিচয় কাজ দিয়ে ব্যক্তির গুণাগুণ বিচার হয়।
কথায় বড় হতে হবে না, কাজে বড় হও আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?
কথায় বলে কথায় থাকো প্রবাদে বলে সবার সাথে সম্পর্ক রাখো।
কথায় মন ভিজে চিঁড়ে ভেজে না শুধু কথায় কারো মন জয় করা যায় কিন্তু কোন কার্যসিদ্ধি হয় না।
কথার কথা কাজের নহে বাজে কথার মূল্য নেই।
কথার কোন মাথা নেই ব্যাঙে খায় চিঁড়ে দই নিতান্ত অবিশ্বাস্য আজগুবি কথা যার কোন অর্থ হয় না; পাগলের প্রলাপ।
কথার গুণে বার্তা নষ্ট১ বাকচাতুর্যে আসল কথা হারিয়ে যায়
কথার গুণে বার্তা নষ্ট২ বাক্যদোষে ঈপ্সিত ফললাভ হয় না।
কথার চেয়ে কাজের গলা বেশি দরাজ মানুষ কাজ চায় কথা চায় না; সময়ে কাজ পেলে খুশি হয়।
কথার বেলায় ঢুসঢাস কাজের বেলায় হাওয়া কথাবার্তায় বেশ পটু, কাজে বেলায় অষ্টরম্ভা; পাঠান্তর- 'কথার বেলায় সরগম কাজের বেলায় অষ্টরম্ভা'।
কদম গাছের কানাই লম্পট চরিত্রের লোক।
কন্‌ওয়া বৈল্‌ বয়ারে সন্কৈ কানা গরু বাতাস বইলেই ভয় পায়; সমতুল্য- 'ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পায়'।
কনের ঘরের মাসি বরের ঘরের পিসি১ যে ব্যক্তি বিবদমান দুইপক্ষের সঙ্গেই সদ্ভাব রেখে চলে।
কনের ঘরের মাসি বরের ঘরের পিসি২ যে ব্যক্তি দুইপক্ষের বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে ভালমানুষ সেজে একের বিরুদ্ধে অন্যকে ব্যবহার করে।
কনের বাপ বসে বসে চোখের জলে ভাসে বরের বাপ বসে আছে পাঁচশটাকার আশে বিয়েতে অনায্য উপঢৌকনের প্রতি ইঙ্গিত।
কনের মা কাঁদে আর টাকার পুটুলি বাঁধে কন্যা বিক্রয়ে মায়ের মনোভাব ব্যক্ত; একদিকে কন্যার জন্য শোক; অন্যদিকে টাকার জন্য লালসা।
কন্যা বরয়তে রূপং মাতা বিত্তং পিতা শ্রুতম্। বান্ধবাঃ বরয়তে কুলমিচ্ছন্তি মিষ্টান্নমিতরে জনাঃ। (চাণক্য) কন্যা বরের রূপ; মাতা বরের অর্থ; পিতা বরের গুণ, আত্মীয়রা বরের কুল আর অতিথিরা ভোজন প্রত্যাশা করে।
কপটপ্রেমে লুকোচুরি মুখে মধু হৃদে ছুরি কপট প্রেমে বা বন্ধুত্বে মুখে মিষ্টি কথা বলে আর মনে মনে অনিষ্ট করার চিন্তা করে; কপটতাসম্পর্কে সচেতন থাকতে চেতাবনি; পাঠান্তর- 'কপটবন্ধুর লুকোচুরি মুখে প্রেম অন্তরে ছুরি'।
কপট বন্ধুত্ব প্রকাশ্য শত্রুতা থেকে খারাপ ভণ্ডামী কোন অর্থেই সমর্থনযোগ্য নয়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'অজুহাত মিথ্যার চেয়েও খারাপ'; 'মনের কষ্ট শরীরের যন্ত্রণার চেয়েও খারাপ' ইত্যাদি।
কপালগুণে গোপালঠাকুর ভাগ্য ভালো থাকলে অযোগ্য ব্যক্তিও বড় হয়।
কপালছাড়া পথ নাই ভাগ্যভিন্ন গতি নাই; অদৃষ্টে যা আছে তাই ঘটবে।
কপাল ভাঙ্গলে জোড়া লাগে না মন্দভাগ্য সহজে পালটায় না; একবার ভাগ্য অপ্রসন্ন হলে সহজে উন্নতি হয় না।
কপাল ভালো তো সব ভালো সৌভাগ্য থাকলে যাতে হাত দেবে তাই সফল হবে।
কপালমূলং খলু সর্বদুঃখম কপালই সব দুঃখের মূলকারণ; অদৃষ্টই সকল দুঃখকষ্টের মূল।
কপাল যখন বাঁকে বেনাবনে বাঘ ঝাঁকে কপাল মন্দ হলোে যেখানে বিপদের আশঙ্কা নেই সেখান থেকে বিপদ এসে উপস্থিত হয়; পাঠান্তর- 'কপাল যখন পোড়ে, শুকনো ডাঙায় পিছলে পড়ে'।
কপাল যখন মন্দ হয় বন্ধুলোকে মন্দ কয় কপাল মন্দ হলোে বন্ধুলোকে নিন্দা করে অথবা বন্ধুলোকের ভালকথা কানে মন্দ শোনায়।
কপাল সঙ্গে সঙ্গে যায় যা হবার তা হবে; অভাগার কোথাও সুখ লেখা নেই; সমতুল্য- 'আমি যাই বঙ্গে কপাল যায় সঙ্গে'; পাঠান্তর- 'কপাল সাথে সাথে ফেরে'।
কপালে তোর নেইকো ঘি ঠকঠকালে হবে কি? ভাগ্যে না থাকলে প্রত্যাশা করে কোন লাভ নেই; যার কপালে সুখ লেখা নেই ষে শত চেষ্টাতেও কপাল ফেরাতে পারে না।
কপালের লিখন যায় না খণ্ডন ভাগ্যে যা আছে তা ঘটবেই; ভাগ্যে ভোগান্তি থাকলে ভুগতেই হয়।
কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা/মারা সম্পূর্ণ বিনাশ করা
কবে রাম রাজা হবে, তবে সীতা উদ্ধার পাবে দীর্ঘ প্রতীক্ষার কারণে হতাশা প্রকাশ।
কম জলের/পানির মাছ বেশি জলে/পানিতে উঠলে ও মাছে বেশি লাফালাফি করে প্রাণীমাত্রই নিজের পছন্দের পরিবেশ পছন্দ করে।
কম্বল ও কমণ্ডুল না নিলে সাধু হওয়া যায় না ভেক না ধরলে ভিখ পাওয়া যায় না; ভেকধারীদের প্রতি ব্যাঙ্গোক্তি।
কম্বল(ভল্লুক) আমি ছেড়ে দিয়েছি কম্বল আমায় ছাড়ে না নাচ্ছোড়বান্দার পাল্লায় পড়ে নাজেহাল।
কম্বলের লোম বাছলে থাকে কি? যেখানে সবাই মন্দ সেখানে মন্দলোক বাচতে যাওয়া বৃথা; সমতুল্য- 'ঠগ বাছতে গা উজাড়'।
কয়লা খেয়েছো আঙরা হাগো দোষ করেছো শাস্তি পাও; সমতুল্য- 'যেমন কর্ম তেমন ফল মশা মারতে গালে চড়'।
কয়লা ছাড়ে না ময়লা কয়লা হাজার ধুলেও যেমন রঙ বদলায় না তেমনিই কুলোক কখনো কুপ্রবৃত্তি ছাড়ে না; স্বাভাবিক ধর্ম কখনো লোপ পায় না; সমতুল্য- 'অঙ্গারঃ শতধৌতেন মলিনত্বং ন মুঞ্চতি'; 'আদা শুকালেও ঝাল যায়না'; 'ইল্লৎ যায় না ধুলে'; 'রসুন ধুলেও গন্ধ যায় না' 'স্বভাব যায় না মলে' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'কয়লা ধুলে ময়লা যায়না'; 'কয়লার রং ময়লা;।
কয়লা পুড়লে ময়লা যায় আগুনে শুদ্ধ হলে কয়লার ময়লা যায়; জ্ঞানাগ্নিতে শুদ্ধ হলে মানুষের মনের অজ্ঞতা দূর হয়।
কর গোবিন্দ বাপের শ্রাদ্ধ, আরও বামুন আছে নগণ্য কাজের জন্য লোকের অভাব হয় না।
কর যদি তাড়াতাড়ি ভুলের হবে বাড়াবাড়ি তাড়াতাড়ি করলে নজর এড়িয়ে কাজে অনেক ভুল থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
করছে কীসের জাঁক, ময়না টিয়ে উড়িয়ে দিয়ে খাঁচায় পোষে কাক অবিমৃষ্যকারিতার প্রতি ইঙ্গিত।
করা থেকে বলা সহজ কিছু করতে গেলে পরিশ্রম লাগে।
করার আগে ভাবো, ভাবার আগে কোরো না তাতে হটকারিতা কখনো হবে না।
করুণার পাত্র হওয়া থেকে শত্রু হওয়া ভাল অনুকম্পার পাত্রকে সকলে ঘৃণা করে।
কর্কশ কথা আগুনের জ্বালার চেয়েও ভয়ঙ্কর অনেকের অনুভূতিই সেইরকম। কাউকে কটাক্ষ করা নেই।
কর্জ করে যেই কষ্ট পায়/ভোগে সেই ঋণী বড় দুখী; অঋণী খুবই সুখী; ঋণ করলে দুশ্চিন্তা বাড়ে, ভয়ের সম্ভাবনা থাকে ; বিরুদ্ধ উক্তি- 'ঋণং কৃত্বয়া ধৃতং পিবেৎ, যাবৎ জীবেৎ সুখং জীবেৎ'; পাঠান্তর- 'কর্জ নেই কষ্ট নেই'।
কর্তব্যো নাতি সঞ্চয়ঃ বেশি সঞ্চয় করা উচিৎ নয়; তাতে নানা দোষ আসতে পারে, যেমন- কার্পণ্য, দুশ্চিন্তা, বিলাসিতা, দম্ভ ইত্যাদি।
কর্তা মুগের ডাল খান না; কেন খান না; পান না, তাই খান না অলভ্য জিনিস মন্দ; দুস্প্রাপ্য জিনিসে বৈরাগ্য; সমতুল্য- 'আঙুরফল টক'।
কর্তা যে ঘি খান না, তা এক আচঁড়েই মালুম যার গায়ে আঁচড় টানলে গায়ে খড়ি পড়ে তিনি নিশ্চয়ই ঘি খান না; পরীক্ষাতেই বিদ্যা প্রকাশ পায়।
কর্তার ইচ্ছায় কর্ম উলুবনে কেত্তন সবলের অনুচিত ইচ্ছাপূরণ; সবল যা ইচ্ছা তাই করতে পারে; অন্যের প্রতিবাদ বৃথা যায়; আইন বা যুক্তির ধার ধারে না; কর্তার ইচ্ছাই আইন; স্বেচ্ছাচারিতার মনোভাব।
কর্মণা বাধ্যতে বুদ্ধিঃ ন বুদ্ধ্যা বাধ্যতে কর্ম কর্ম (অদৃষ্ট) বুদ্ধিকে বশীভুতটাকে; বুদ্ধি কর্মকে অনুসরণ করে; বুদ্ধি কর্মের অনুগামী না হয়ে তাকে বশীভুত কর'তে চাইলে বুদ্ধিনাশ হয়, যেমন- সোনার হরিণ ধরতে গিয়ে শ্রীরামচন্দ্রের হয়েছিল।
কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন বিহিতকর্মেই আছে অধিকার, কর্মফলে কখনো নয়; কাজ করে যাও ফলের কথা ভেবো না।
কর্মদোষেণ দরিদ্রতা কর্মদোষেই মানুষ অভাগা।
কলঙ্ক গঙ্গাজলে ধুলেও যায় না বদনাম কখনো ঘুচে না।
কলঙ্ক বিনা চাঁদ নাই অবিমিশ্র সুখ হয় না; দোষেগুণে মানুষ।
কলসির জল গড়তে গড়তেই শেষ সীমিত সম্পদ দ্রুত শেষ হয়; অব্রাযয়ীম আয়ের উৎস না থাকলে সঞ্চিত অর্থে বেশি দিন চলে না; পাঠান্তর- 'কলসির জল গড়তে গড়তে কত থাকে'।
কলাপোড়া খাও ব্যর্থ হয়ে পড়ে থাকো; সমতুল্য- 'কচুপোড়া খাও'।
কলার ভেলায় সাগর পার১ অসম্ভব কাজ
কলার ভেলায় সাগর পার২ সামান্য উপায়ে বিরাট কাজ করার বৃথা চেষ্টা; সমতুল্য- 'ঝিনুক দিয়ে পুকুর সেঁচা'; 'মুড়া কোদালে পুকুর কাটা'; 'সাঁতার দিয়ে সিন্ধু পার' ইত্যাদি।
কলিতে সোনা পিতল হলো এখন সৎ বলে কেউ নেই সবাই অতি বদ; বিরুদ্ধ উক্তি- 'মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো মহাপাপ'।
কলির অবতার চরম বদমায়েশ
কলির অর্জুন অদ্বিতীয় ধানুকী; তৃতীয়পাণ্ডব অর্জুন অদ্বিতীয় ধানুকী ছিলেন; লক্ষ্য ছিল তার অব্যর্থ; তাই কেউ যদি উৎকৃষ্ট ধনুর্ধর হয় তবে তাকে প্রবাদে 'কলির অর্জুন' বলে।
কলির কেষ্ট১ একসঙ্গে বহুনারীর প্রেমিক; বহুবল্লভ (উৎসকাহিনী- মহাভারতের শ্রেষ্ট চরিত্র যুগপুরুষ শ্রীকৃষ্ণ একই সঙ্গে বহুগোপিনীর সাথে প্রেমলীলা করতেন;
কলির কেষ্ট২ বিদ্রূপে- নারীসঙ্গভোগী নব্যপ্রেমিক; কেতাদুরস্ত লম্পট চরিত্রের লোক
কলির প্রহ্লাদ বিদ্রূপে-কুপিতার কুসন্তান; (উৎসকাহিনী- দৈত্যাধিপতি হিরণ্যকশিপুর পুত্র ছিলেন প্রহ্লাদ; দৈত্যরা চিরদিনই দেববিরোধী; প্রহ্লাদ কিন্তু ছিলেন পরম বিষ্ণুভক্ত; কুপিতার সুসন্তান; বর্তমানে লম্পট পিতার লম্পট সন্তানকে প্রবাদে 'কলির প্রহ্লাদ' বলা হয়।
কলির ভীম/ভীমসেন বিদ্রূপে- মহাপেটুক; দ্বিতীয়পাণ্ডব ভীমসেন দেহের গঠনে, বাহুবলে ভোজনের পটুতায় তুলনাহীন ছিলেন; তাই থেকে মহাপেটুককে প্রবাদে কলির ভীম বা 'যেন কলির ভীমসেন' বল হয়;
কলির যুধিষ্ঠির বিদ্রূপে- ধার্মিকতার ভাণকারী কপটব্যক্তি; জেষ্ঠপাণ্ডব যুধিষ্ঠির ধর্মপুত্র বলে প্রসিদ্ধ; অদ্বিতীয় ধর্মনিষ্ঠা ও সত্যবাদিতার জন্য প্রবাদে বলা হয়- 'যেন ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির'; বর্তমানে এই রকম চরিত্র দুর্লভ।
কলির লক্ষ্মী বিদ্রূপে- লক্ষ্মীছাড়া গৃহবধু, যে লক্ষ্মীভাণ্ডের জমানো অর্থে সংসারের প্রয়জোনীয় দ্রব্য না কিনে নিজের অঙ্গসাজ কেনে।
কলির সন্ধ্যা ভয়াবহ দুর্দিনের/দুর্ভাগ্যের সূত্রপাত।
কলুর বলদ নিজের ভালমন্দ না বুঝে পরের নির্দেশমত শুধু মুখবুজে খেটে মরা লোক।
কল্পনার ডানা পাখা মেলে কল্পনার রঙে না রাঙালে সবকিছু শুস্কং কাষ্ঠং থেকে যায়, নিরস তরুবর হয় না; সমতুল্য- 'গল্পের গরু গাছে চড়ে'।
কল্পান্তস্থায়িনো গুণাঃ সৎকর্ম, কীর্তি ইত্যাদি অবিনাশী।
কল্লার (দুষ্ট) ঘাড় বোল্লায় (বোলতা) ভাঙে দুষ্টের শাস্তি হবেই।
কল্লে যত্ন মেলে রত্ন সাধনায় সিদ্ধি হবেই।
কষতে কষতে বাঁধন ছেঁড়ে বেশি টানাটানি করলে সূতা ছিঁড়ে যায়; বাড়াবাড়ি ভাল নয়; সমতুল্য- 'আধিক্যে কুফল আছে'; 'ভাল নয় অতিশয়'; 'সর্বম অত্যন্তম গর্হিতম'।
কষ্ট দিয়ে দান আর পিত্তি মেরে ভোজন কথা শুনিয়ে দান করলে গ্রহীতার মনে সুখ হয় না; পিত্তি পড়ার পর খাওয়ায় সুখ হয় না।
কষ্ট না করলে কেষ্ট মিলে না পরিশ্রম না-করলে সফলতা পাওয়া যায় না; বিনা পরিশ্রমে কিছুই মেলে না; কিছু পেতে গেলে কিছু ঝামেলা সইতে হয়; সমতুল্য- 'আগুন পোহাতে গেলে ধোঁয়া সইতে হয়';'গোলাপ তুলতে গেলে কাঁটা সইতে হয়'; 'নহি সুখং দুঃখৈর্বিনা লভ্যতে'; 'পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই'; 'লেগে থাকলে মেগে খায় না'; 'সাধনা না করলে সিদ্ধি নাই'; 'সাধিলেই সিদ্ধি' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'কষ্ট বই ইষ্ট নাই'; 'কষ্টবিনা কৃষ্ণ মেলে না'; 'কষ্টবিনা কেষ্ট নাই'।
কষ্টবিনা মানুষ সম্পূর্ণ হয় না, ঘর্ষণবিনা রত্ন উজ্বল হয় হয় না- কনফুসিয়াস অনায়াসে কিছু লব্ধ হয় না।
কসুরও নাই কামাইও নাই কোন ছাড়ছোড় নেই অবিচ্ছিন্নভাবে চলছে।
কস্য নাভ্যুদয়ে হেতুর্ভবেৎ সাধুসমাগমঃ সাধুসঙ্গ কার না উন্নতির কারণ হয়?
কস্য মাতা, কস্য পিতা, কস্য ভ্রাতা সহোদরঃ কা কস্য পরিবেদনা কার মা, কার বাবা, কার ভাই- এসব ভেবে কাজ নেই।
কহাঁ রাজা ভোজ ঔর কহাঁ গঙ্গু তেলী দুজন মানুষ মধ্যে বিস্তর ব্যবধান থাকে; সমতুল্য- কিসে আরে কিসে সোনা আর সীসে', 'কোথায় রাণী ভবানী, কোথায় ফুলি জেলেনি' ইত্যাদি।
কাঁচপোকায় আরশোলা খায়/ধরে এমন অবস্থা যার থেকে নিস্কৃতি নেই।
কাঁচা কাজ করা নেই অবিবেচনাপ্রসূত কাজ কয়ড়া নেই; বোকামি করা নেই।
কাঁচা খাই ডাসা খাই আর খাই পাকা সর্বভুক।
কাঁচা গাঁথুনির দুনো খাটুনি একবার পরিশ্রম করে গড়ে; ভেঙে গেলে দ্বিতীয়বার পরিশ্রম করে সেগুলি সারায়; কাঁচা গাঁথুনি কম মজবুত হওঁয়; কাঁচা কাজ করা নেই; পাঠান্তর- 'কাঁচা গাঁথুনির নেই আঁটুনি'।
কাঁচা গুয়ে ঢিল মারা অপ্রীতিকর কাজ করে নিজের অনিষ্ট করা।
কাঁচা বাঁশে ঘুণ ধরা১ অল্পবয়সেই শরীর জীর্ণ হওয়া
কাঁচা বাঁশে ঘুণ ধরা২ অল্পবয়সেই দুশ্চরিত্র হওয়া।
কাঁচা বাঁশে ঘুণ ধরে না সতেজ তরুণমনে পাপবোধ জন্মে না।
কাঁচা মাটিতে পা দেওয়া১ ভুল জায়গায় আগ বাড়া।
কাঁচা মাটিতে পা দেওয়া২ ভিত্তি সুদৃঢ় না হলে কাজে সাফল্য আসে না।
কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ পাকলে করে ট্যাঁশট্যাঁশ পাকা বাঁশ নোয়ালে কটকট শব্দ হয়; শিশুকালে নীতিশিক্ষা না দিলে বড়বয়সে হাজার উপদেশ দিলেও তা কোন কাজে লাগে না; সন্তান মানুষ হয় না; সমইয়ের কাজ অসময়ে করলে কোন কাজ হয় না বোঝাতে এই প্রবাদ বলা হয়; তুলনীয়- 'ডাল যেমন বাঁকাবে গাছও তেমনি বাড়বে'।
কাঁচে কাঞ্চনে সমান১ কোনটা অল্পমূল্যের, কোনটা বেশি মূল্যের তা বোঝার সামর্থ নেই।
কাঁচে কাঞ্চনে সমান২ সংসারবৈরাগি কাছে দুইই সমভাবে উপেক্ষণীয়।
কাঁচের ঘরে বসে পরের জানালায় ঢিল ছোড়া নিজের খুঁত থাকতে অন্যের খুঁত ধরা উচিত নয়।
কাঁটাগাছের তলায় থাকা সবসময় চিন্তার থাকা, শঙ্কিত থাকা; সমতুল্য- 'নদীর তীরে বাস, ভাবনা বারোমাস'।
কাঁটাচামচের আগে আঙ্গুলের জন্ম হাতে খাওয়ার পক্ষে ওকালতি।
কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা১ একদুষ্টের বিরুদ্ধে অন্যদুষ্ট লেলিয়ে দিয়ে উভয়ের বিনাশ সাধন করা।
কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা১ শত্রু দিয়ে শত্রুনাশ করা; সমতুল্য- 'জল দিয়ে জল বার করা'; 'ঢিল দিয়ে ঢিল ভাঙা'।
কাঁটা বিনা কমল/গোলাপ নাই অবিমিশ্র সুখ হয় না; সুখদুঃখ জড়িয়ে জীবন।
কাঁঠালের আমসস্ত্ব অবাস্তব বস্তু; অসম্ভব ব্যাপার, যা হয় না; সমতুল্য- অশ্বডিম্ব, আঁটকুড়ের ব্যাটা, আকাশকুসুম, এঁড়ে গরুর দুধ, ঘোড়ার ডিম, পশ্চিমে সূর্যোদয়, ভস্মকীট, সোনার পাথরবাটি, সোনার হরিণ; সাপের পাঁচ-পা ইত্যাদি
কাঁড়ানো চালে তিন ঘা পাড় (ঢেঁকির আঘাত) সম্পন্ন কাজে পুনরায় পরিশ্রম করা নিস্প্রয়োজন।
কাঁধে কুড়ুল রেখে বনময় খোঁজে কাছে থাকা জিনিস নানাস্থানে খুঁজে বেড়ানো; ভোলেভালা লোক; সমতুল্য- 'কাঁধে গামছা ঘরময় খোঁজে' 'চোখে চশমা ঘরময় খোঁজে'; 'বগলে ছাতা/পুঁথি ঘরময় খোঁজে'।
কাউকে বুকে করা কাউকে পিঠে করা কাউকে আদর করা, কাউকে অনাদর করা।
কাক কখনো রাজহাঁস হয় না মণিমাণিক্য ইত্যাদি নান ভূষণে সাজালেও কাক কখনো রাজহাঁস হ না; তুলনীয় সংস্কৃত উক্তি-'তথাপি কাকো চ ন রাজহংসঃ'; পাঠান্তর- কাক কখনো বক হোয় না।
কাক কাঁকুড়ের জ্ঞান নেই দুইবস্তুর তত্ত্বগত পার্থক্য বুঝতে না পারা।
কাক-কোকিলে ভেদজ্ঞান নেই ভাল-মন্দের তফাৎ বুঝতে না পারা।
কাক ও কোকিল একই বর্ণ কিন্তু স্বরে ভিন্ন ভিন্ন আকৃতিতে সাধু-অসাধু চেনা যায় না; কাজে বা প্রকৃতিতে তাদের চেনা যায়।
কাক কোকিলের সমান দাম ভালমন্দ বিচার নেই; ভালমন্দের তফাৎ করতে অক্ষম; সমতুল্য- 'মুড়িমিছির/মুড়িমুড়কির সমান দর'।
কাক কাকের মাংস খায় না স্বজাতির ক্ষতি কেউ করে না বা চায় না।
কাক খায় কাঁঠাল বকের মুখে আঠা১ কাক চুরি করে কাঁঠাল খেয়ে ধরা পড়ার ভয়ে বকের মুখে আঠা লাগিয়ে দিল; ফলে বক উত্তমমধ্যম খেল; একজনের অপরাধে অন্যজনের শাস্তি; সমতুল্য-'উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে'; 'কাক খেলো ধান, ব্যাঙের পায়ে দড়ি'।
কাক খায় কাঁঠাল বকের মুখে আঠা২ একের সৌভাগ্য দেখে অপরের ঈর্ষা হওয়া।
কাক খেলো ধান ব্যাঙের পায়ে দড়ি১ চরম বিশৃঙ্খলা।
কাক খেলো ধান ব্যাঙের পায়ে দড়ি২ একজনের অপরাধে অন্যজনের শাস্তি; চুড়ান্ত অপশাসন; সমতুল্য- 'উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে'; 'কাক খায় কাঁঠাল, বকের মুখে আঠা'।
কাক গু খেয়ে মুখ ধুলে গঙ্গা অপবিত্র হয় না নীচের নোংরামিতে মহতের মাহাত্য হ্রাস পায় না।
কাক চুরির দ্রব্য লুকিয়ে মনে করে কেউ সেটা দেখে নি বোকা অনেক সময় অভিজ্ঞকে ফা^কি দিতে পেরেছে ভেবে মিথ্যা আত্মতৃপ্তি লাভ করে।
কাকতালীয়বৎ প্রাপ্তং দৃষ্টাপি নিধিমগ্রতঃ কুড়িয়ে নিতে গেলেও চেষ্টা করা চাই।
কাক ধুলে বক হয় না কালো ধুলে সাদা হয় না; কু কখনো সু হয় না; সমতুল্য- 'কয়লা ধুলে ময়লা যায় না'; 'কালা ধুলে ধলা হয় না'।
কাকপক্ষীও টের পাবে না কেউ টের পাবে না; অতিসতর্ক কাকের কিছুই নজর এড়ায় না।
কাক ভেজে জলে ব্যাঙের লাগে সর্দি আজগুবি কথা, যা কখনো হয় না; কার্য-কারণসম্পর্কবিহীন।
কাক ভাবে আমি বড় সেয়ানা আহাম্মকের আত্মগরিমা।
কাক মরল ঝড়ে, প্যাঁচা ভাবে আমার শাপ লাগল হাড়েহাড়ে অক্ষমের সান্ত্বনা; শত্রুনিপাত হলে বিপক্ষ ভাবে তার অভিশাপেই এমন ঘটনা ঘটেছে; সম্পর্কীত প্রবাদ- ঝড়ে কাক মরে, ফকিরের কেরমতি বাড়ে'।
কাক সকলের মাংস খায়, কাকের মাংস কেই খায় না ঠগ সবাইকে ঠকায়, কিন্তু কেউ ঠগকে ঠকাতে পারে না।
কা কস্য পরিবেদনা কে কার কথা বিবেচনা কর? কে কার জন্য বেদনা অনুভব করে? কে কার ধার ধারে? বৃথা সব হাহুতাশ।; সব মায়া।
কাকিলা বধু ছেলে ধরতে জানে না কোকিল সন্তান প্রতিপালন করতে পারে না; ন্যাকামি করা বউয়ের ক্ষেত্রে প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়।
কাকে নিয়ে গেল কান, কাকের পিছনে ছোট নিজে বিবেচনা করে না, পরের কথায় উত্তেজিত হয়।
কাকের উপর কামান দাগা অল্পদোষে বেশি শাস্তি; সমতুল্য- 'মশা মারতে কালাম দাগা'; 'লঘুপাপে গুরু দণ্ড'; পাঠান্তর- 'কাউয়ার ওপর কামানের গুলি'।
কাকের ডানায় মুক্তা বসালেও কাক রাজহাঁস হয় না সোনাদানার গহণা পড়লেও কাক কখনো রাজহাঁস হয় না; অসারবস্তু কখনো সারবস্তু হয় না; নকল কখনো আসল হয় না; পাঠান্তর- 'কাকের লেজে ময়ূরপালক লাগালেও কাক ময়ূর হয় না'।
কাকের ডিম সাদা হয়, বিদ্বানের ছেলে গাধা হয়। কাকের ডিম সাদা হলেও ছানা কালোই হয়; বিদ্বানের ছেলে বিদ্বান না হয়ে মূর্খ হতে পারে; অস্বাবাভাবিক কিছু নয়।
কাকের পিছনে ফিঙে লাগা কাউকে অনবরত উত্যক্ত করা।
কাকের বাসায় কোকিলের ছা, জাতস্বভাবে করে রা জাতস্বভাব কখনো বদলায় না; সমতুল্য- স্বভাব যায় না মলে।
কাকের মাংস কাকে খায় না সমধর্মী লোকেরা পরস্পরের ক্ষতি করে না।
কাকের লুকানো (খাদ্য) বোকার মরণ; সে জিনিস এমনভবে লুকায় যে পরে কাকের মত আর খুঁজে পায় না।
কাকো ন চ রাজহংসঃ কাক কখনো রা জহাঁস হয় না।
কাঙলা আপনা সমালা আগে সবাই নিজেকে সামলাক; পরের উপকার পরে করা যাবে; সমতুল্য- 'আপনি বাঁচলে বাপের নাম'।
কাঙালকে শাকের ক্ষেত দেখাতে নেই অভাবীলোককে লোভ দেখাতে নেই; যাতে লোকের লোভ বাড়ে এমন কাজ করতে নেই; সমতুল্য- 'ছাগলকে ভাঙা বেড়া দেখাতে নেই'।
কাঙালী মেরে কাছারি গরম গরিব মেরে আসর গরম করা।
কাঙালের অশ্রুতে যে রক্ত ঝরে ভগবান দেখেও কিন্তু দেখে না ভগবান বড়লোকের ঘরে বাঁধা।
কাঙালের কথা বাসি হলে খাটে/ফলে নগণ্যের সঠিক কথা প্রথমে উপেক্ষিত হলেও পরবর্তীকালে সঠিক প্রতিপন্ন হয়।
কাঙালের কাছে মুড়কিই সন্দেশ অভাবীর কাছে এককড়ারও দাম আছে; তার পক্ষে যা পাওয়া সম্ভব তাতেই সে সন্তুষ্ট থাকে, সেটাই তার কাছে মূল্যবান; পাঠান্তর- 'কাঙালের কাছে রাংতাই সোনা'।
কাঙালের ক্ষিদে বেশি কাঙাল শুধু খাই খাই করে।
কাঙালের/ কাঙালের পুতের ঘোড়ারোগ যা পাওয়ার অধিকারী নয় তাই পাওয়ার অনুচিত ইচ্ছা।
কাঙালের ঠাকুরব্যাধি যে খেতে পায় না সেও পূজা করতে চায়; অবস্থার অরিতিক্ত ব্যয়ের বাসনা।
কাঙালের মরণ বিটকেল কাঙাল সুখে মরতেও পারে না, অনেক কষ্ট পেয়ে মরে।
কাচঃ কাচঃ মণির্ম্মণি যে যা তাই থাকে; কাঁচ কাঁচই থাকে; মণি মণিই থাকে; কাচ মণি হয় না; মনি কাচ হয় না।
কাচে কাঞ্চনে সমান১ মুড়ি-মিছরির এক দর; কোনটার দাম কম, কোনটার দাম বেশি বোঝার ক্ষমতা নেই।
কাচে কাঞ্চনে সমান২ সংসারবিরাগীর কাছে কাঁচ ও কাঞ্চন সমানভাবে উপেক্ষণীয়।
কাছা খুলতে দেরী হয়১ কাজে সবসময় ঢিলে ঢালা
কাছা খুলতে দেরী হয়২ কপাল চাপা; অদৃষ্ট সহজে সুপ্রসন্ন হয় না।
কাছা দিতে কোঁচা আঁটে না, কোঁচা দিতে কাছা আঁটে না১ দুইদিক সামলাতে পারে না; সমতুল্য-'পা ঢাকে তো মাথা ঢাকে না, মাথা ঢাকে তো পা ঢাকে না'
কাছা দিতে কোঁচা আঁটে না, কোঁচা দিতে কাছা আঁটে না১ অভাবের সংসার; সবসময় অর্থের টানাটানি।
কাছা দিতে/খুলতে দেরী হয় কাজে ঢিলেঢালা
কাছের লোক কাছের নয় বিপদের সময় কাছের লোক দূরে সরে থাকে; ঘরের লোক বেশি শত্রুতা করে; সমতুল্য- 'আপন থেকে পর ভাল', 'ভাইভাই ঠাঁই ঠাঁই', 'যত রক্তের কাছাকাছি তত রক্তারক্তি' ইত্যাদি; বিরুদ্ধ উক্তি- 'আপন কখনো পর হয় না'; 'বসুধৈব কুটুম্বম' ইত্যাদি।
কাছের লোক গাড়ী ফসকায় লোকের গয়ংগচ্ছভাবের প্রতি তির্যোক্তি।
কাজ আটকালে বুদ্ধি যোগায় সমস্যায় পড়লে বুদ্ধি খোলে; সমস্যা সমাধানের উপায় আপনা হতেই মাথায় আসে;সমতুল্য- প্রয়োজনীয়তা আবিস্কারের জননী
কাজ নেই কাজ করে ধানে চালে এক করে কাজ নেই তো অকাজ, কুকাজ করে।
কাজও নেই কামাইও নেই অনির্দিষ্ট কাজের কোন নিয়ম থাকে না; যখন-তখন উপস্থিত হতে হয় বলে অনির্দিষ্ট কাজে বিরাম পাওয়া যায় না।
কাজ নেই তো ভাজো খই অকাজে সময় নষ্ট করা।
কাজ বুঝে সাজ কাজের পরিমাণ বুঝে প্রস্তুতি; সমতুল্য- 'বিষয় বুঝে ব্যবস্থা'।
কাজ শুরু হলেই অর্ধেক কাজ শেষ কাজের প্রস্তুতিতেই অর্ধেক সময় ব্যয় হয়।
কাজ সরিয়ে রাখলে কাজ বরবাদ কালে পেলে কজ কোনদিন শেষ হয় না।
কাজীর কাছে হিঁদুর পরব ভিন্নমতাবলম্বীর কাছে স্বীয়মতের পোষকতা পাওয়া যায় না।
কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই সরকারি কাজে হিসাবের গোলমাল।
কাজীর বিচার১ তোমার অর্ধেক আমার অর্ধেক; মাঝামাঝি রফা
কাজীর বিচার২ অন্যায় বিধিবিরুদ্ধ পক্ষপাতদুষ্ট বিচার; একপেশে বিচার
কাজে এড়া অকাজে দেড়া কাজ করে না অকর্ম করে।
কাজে এড়া আচারে দেড়া আচারসর্বস্ব।
কাজে এড়া ভোজনে দেড়া যে চাকর খাটে কম খায় বেশি তার সম্পর্কে প্রযোজ্য; পাঠান্তর- 'কাজে কম খেতে যম'; 'কাজের বেলায় অষ্টরম্ভা খাবার বেলায় বেশিবেশি'।
কাজে কুঁড়ে ভোজনে দেড়ে বচনে মারে তেড়েফুঁড়ে অলস ভোজনপটু ও কর্কশভাষী বচনসর্বস্ব নির্গুণ ব্যক্তিসম্পর্কে প্রবচন।
কাজে খল দুধে জল তার দুঃখ চিরকাল অসৎলোকের দুঃখ কোনদিন যায় না, তার চিরদিনের সঙ্গী হয়ে থাকে।
কাজের কথা মনেই থাকুক মুখে প্রকাশ করো না গোপন কথা বা মূল্যবান কথা পাঁচকান কর'তে নেই।
কাজের কাজি কর্মঠ দক্ষ কাজের লোক, যে কার্যত করে, শুধু মুখে বলে না।
কাজের বেলায় পায় না খুঁজে, খাবার বেলা সবার আগে পরিশ্রমে বিমুখ কিন্তু খাবার বেলায় প্রথমপাত; পাঠান্তর- 'কাজের বেলায় ভাগে খাবার বেলায় আগে'।
কাজের বেলায় কাজি কাজ ফুরালে পাজি কাজ করে দেওয়ার জন্য সম্পর্কস্থাপন, কাজ হয়ে গেলেই সম্পর্কছেদ; কার্যোদ্ধার হতেই উপকারীকে অগ্রাহ্য; প্রয়োজনের সময় তোষামোদ করা আর প্রয়োজন শেষ হলে ভুলে যাওয়া।
কাজের বেলায় ভাগে খাবার বেলায় আগে সুবিধাবাদী আচরণ।
কাজের মধ্যে চাষ রোগের মধ্যে কাশ দুইই সমানভাবে কষ্টদায়ক।
কাজের মধ্যে দুই খাই আর শুই চুড়ান্ত অলসের প্রতি শ্লেষোক্তি; সমতুল্য-'অলসের চূড়ামণি'; 'নিকম্মার ঢেঁকি'।
কাজের হাত পা মাথা ও মুণ্ডু- কিছুই নেই বিশৃঙ্খল কাজ।
কাটতে কাটতে নির্মূল বড় জিনিস কাটতে কাটতে এমন ছোট হল যে আর কাজে আসে না; মূল প্রবাদ- 'ছিল ঢেঁকি হল শুল কাটতে কাটতে নির্মূল'।
কাটলে রক্ত নেই কুটলে মাংস নেই অসার শুকনা কাঠের মত শরীর।
কাটা কইয়ের/পাঁঠার মত ছটফট করা নিদারুণ যন্ত্রণায় ছটফট করা (ভাবার্থে)
কাটা কাটা কথা আগুনের জ্বালার চেয়েও জ্বালাময় অন্তরে তীব্র জ্বালা ধরায়।
কাটা কান চুলদে ঢাকি কানকাটা লোক ঘরের কলঙ্ক পাঁচকান করে না, লুকিয়ে রাখে; মূল প্রবাদ- আপনার মান আপনি রাখি কাটা কান চুলদে ঢাকি'।
কাটা ঘায়ে নূনের ছিটে১ অপমানের উপর অপমান।
কাটা ঘায়ে নূনের ছিটে২ ব্যথার উপরে আরও ব্যথা দেওয়া; যন্ত্রণার ওপর যন্ত্রণা।
কাটো তো খুন নহীঁ কাটো ক্ষতি নাই তবে রক্ত যেন না পড়ে; প্রচণ্ড ভয়ে ভীত; ভয়ে আধমরা অবস্থা।
কাঠ খায় আঙরা হাগে১ উনুন কাঠ খায়, কয়লা নিঃসারণ করে।
কাঠ খায় আঙরা হাগে২ দোষ করলে শাস্তি আছে; মন্দকাজ করলে মন্দ ফলভোগ করতে হবে; সমতুল্য- 'যেমন কর্ম তেমন ফল'।
কাঠবিড়ালীর সাগর বাঁধা১ অসাধ্যকাজ সম্পাদনের প্রচেষ্টা।
কাঠবিড়ালীর সাগর বাঁধা১ মহৎকাজে নগণ্যের সাহায্য উপেক্ষণীয় নয়।
কাঠে কাঠে কাঠাকাঠি সমানে সমানে লড়াই; সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি; যেমন কুকুর তেমন মুগুর।
কাঠের বিড়াল হোক না ইঁদুর ধরতে পারলেই হলো উপায়, যন্ত্র যাই হোক কাজ হলেই হলো।
কাঠের ভিতর পিঁপড়ে বলে চিনি ছাড়া খাবনি; চিন্তামণি চিন্তা করে যোগায় তারে অমনি জীবের রক্ষাকর্তা ভগবান; অপ্রত্যাশিত স্থলেও ভগবান লোকের অভিলাষ পূরণ করেন; সমতুল্য- 'যে খায় চিনি তারে যোগান চিন্তামণি'।
কাণ্ডজ্ঞানবিশিষ্ট লোক থেকে সতর্ক থেকো যদি সে ক্রুদ্ধ হয় ধীরস্থির লোকেরা কুপিত হলে অনর্থ ঘটে যায়।
কা তব কান্তা কস্তে পুত্রঃ সংসারোহমতীব বিচিত্র কে তোমার স্ত্রী, কে তোমার পুত্র; সংসারের এইসব ব্যাপার অতি বিচিত্র; কেউ কারো নয়; সব মিথা মায়া।
কাদায়/খানায়/গর্তে পড়লে হাতি চামচিকেতে মারে লাথি অসহায় অবস্থায় পেলে সকলেই দুর্ব্যবহার করে।
কাদায় গুণ ফেলা ধৈর্য ধরে থাকা; সমতুল্য়-'সবুরে মেওয়া ফলে'।
কান চায় সোনারে সোনা চায় কানেরে পরস্পর অনুরক্ত লোকে পরস্পরের সান্নিধ্য খোঁজে।
কান টানলে মাথা আসে উপলক্ষ্য ধরে লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়; একটা বিষয়ের খোঁজ নিতে চাপ দিলে সম্পর্কিত অন্য বিষয়ের খোঁজও পাওয়া যায়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'টানবার যে সে না টানলে কোন লাভ নাই অঝোরে কাঁদলে'।
কান নিয়ে গেল কাকে কাকের পিছনে পিছনে ছোটা বিচার বিবেচনা না করে উদ্ভ্রান্তের মত কাজ করা।
কানপুর হয়ে নাগপুর যাওয়া ঘুরিয়ে/বাঁকাপথে কাজ করা; অযথা সময় নষ্ট করা; সমতুল্য-
'অমরকণ্টক হয়ে অমরনাথ যাত্রা'; কামাখ্যা হয়ে কাশীধামযাত্রা'; লণ্ডন ঘুরে মক্ যাত্রা' ইত্যাদি। 
কানমন্ত্রে মন নাশ কান ভাঙানিতে মনে মালিন্য জন্মে।
কানাইয়ের মা পরের ছেলের মা; তুলনীয়- 'না বিইয়ে কানাইয়ের মা'
কানাকড়ির মা-বাপ অত্যন্ত কৃপণ, যে একট ফুটোপয়সাও খরচ করতে কাতর হয়।
কানাকড়ির মুরোদ/মূল্য নাই, কিল মারার গোঁসাই১ ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয় না শুধু কর্তৃত্ব ফলায়- অসহায় স্ত্রীর খেদোক্তি; সমতুল্য-
কানাকড়ির মুরোদ/মূল্য নাই, কিল মারার গোঁসাই২ তুচ্ছলোকের হাঁকডাক।
কানা কয়বার নড়ি (লাঠি) হারায় একবারও না; যার যেটা একমাত্র অবলম্বন সেই বিষয়ে সে খুব সতর্ক থাকে।
কানা কাঁদেন সোনারে, সোনা কাঁদেন কানারে১ সোনা পরলে কানের শোভা বাড়ে, আবার কানে গেলে সোনার সৌন্দর্য বাড়ে; পাঠান্তর- 'কানা চায় সোনারে, সোনা চায় কানারে'।
কানা কাঁদেন সোনারে, সোনা কাঁদেন কানারে২ পরস্পর অনুরক্ত লোকে পরস্পরের সান্নিধ্য খোঁজে।
কানা কুঁজো খোঁড়া, তিন অসতের গোড়া লোকের বিশ্বাস এই তিনধরণের লোক দুষ্টপ্রকৃতির হয় (সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা); পাঠান্তর- 'কানা খোঁড়া কুঁজা তিন নয় সুজা (সহজসরল)'।
কানাখোঁড়ার এক গুণ বাড়া১ শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তি বেশি অনুভবী হয়; অক্ষমব্যক্তির এক অঙ্গ কমজোরী হলে অন্য অঙ্গ বেশি কার্যকরী হয়।
কানাখোঁড়ার এক গুণ বাড়া২ নির্গুণের অহংকার/বড়াই বেশি হয়; লোকের ধারণা এরা একটু স্বতন্ত্রপ্রকৃতির হয়; তুলনীয়- 'ফাঁপা ঢেকির শব্দ বেশি'।
কানাগরু বাতাস বইলেই ভয় পায় দুর্বলের একটুতেই ভয় হয়।
কানাগরু বামুনকে দান অবজ্ঞা/অশ্রদ্ধার দান;অকেজো বা অপ্রয়োজনীয় বস্তু দান করে পূণ্যলাভের আকাঙ্ক্ষা।
কানাগরুর ভিন্ন গোঠ/পথ/মাঠ অজ্ঞান/কাণ্ডজ্ঞানহীন লোক কানাগরুর মত গোয়ালের দিকে না গিয়ে উল্টো পথে যায় অর্থাৎ নিরাপদ পথ ত্যাগ করে বিপধে যায়; বুদ্ধিহীন লোক যুক্তির পথে হাঁটে না।
কানাগলিতে ঘুরে মরা দিশাহীনভাবে ঘুরে বেড়ানো; নিস্কৃতির পথ হন্নে হয়ে খুঁজে মরা।
কানাঘোড়ার সিধা দৌড় আহাম্মকের বিপথে চলা।
কানাচোখে দিয়ে কাজল আপনরূপে আপনি পাগল আপনার চেয়ে কেউ বেশি সুন্দর নয়।
কানাছেলের নানারোগ১ অক্ষমের নানাদিক থেকে ঘাটতি থাকে।
কানাছেলের নানারোগ২ ক্লিষ্টলোকের নানা কষ্ট থাকে।
কানাছেলের নাম পদ্মলোচন কুৎসিতকে সুন্দর করার হাস্যকর প্রয়াস; গুণহীনে গুণের আরোপ; অযোগ্যকে অতিরিক্ত সম্মানদান; সমতুল্য- 'আঁখোকে অন্ধ নাম নয়নসুখ'; 'কালোছেলের নাম গৌরাঙ্গসুন্দর'; 'ঘুঁটেকুড়ানীর ছেলের নাম চন্দনবিলাস' ইত্যাদি।
কানামেঘের বৃষ্টি সর্বত্র নয় দৃষ্টি১ অবিবেচকের একদেশদর্শী বিচার।
কানামেঘের বৃষ্টি সর্বত্র নয় দৃষ্টি২ খামখেয়ালী বড়লোকের দান সাধারণের মধ্যে সমানভাবে বণ্টিত হয় না।
কানায়ে ভাগনে/ভাগিনা লম্পটচরিত্রের লোক।
কানার মাঝে ঝাপসা ভালো মন্দের ভালো।
কানুছাড়া গীত নাই রাধাছাড়া প্রীত নাই১ একই অনীপ্সিত কথার পুনরুক্তি।
কানুছাড়া গীত নাই রাধাছাড়া প্রীত নাই২ একমাত্র গতি; অনন্যোপায়; সমতুল্য- 'নান্য পন্থা বিদ্যতে অয়নায়'।
কানুছাড়া গীত নাই রাধাছাড়া প্রীত নাই৩ সকল প্রসঙ্গে একই বিষয়ের উথাপনা।
কানে কলম গুঁজে দুনিয়াভর খোঁজে কাছে থাকা জিনিস নানাস্থানে খুঁজে বেড়ানো; সমতুল্য- কাঁধে কুড়ুল রেখে বনময় খোঁজে'; 'কাঁধে গামছা রেখে ঘরময় খোঁজে'; 'চোখে চশমা রেখে ঘরময় খোঁজে'; 'বগলে ছাতা/পুঁথি ঘরময় খোঁজে' ইত্যাদি।
কানে কানে কথা থাকে না গোপনে কথা পাঁচকান হলে সে কথা গোপন থাকে না।
কানে দিয়েছি তুলো, পিঠে বেঁধেছি কুলো কিছুতেই কিছু না করা; সবকিছু অগ্রাহ্য করা।
কানে হাত না দিয়েই বলে কান নিয়ে দেল চিলে অবিবেচকের মত কাজ; অবোধা পরের কথায় নেচে মরে।
কানের জল, জল দিলেই বেরোয় বিষে বিষে বিষক্ষয় হয়।
কানের পিছনে উকুনের বাসা ব্যক্তির পিছনে শত্রু দাঁড়িয়ে আছে; সতর্ক করার জন্য় সতর্কবাণী
কান্তা রূপবতী শত্রু রূপবতী ভার্যা শত্রুতুল্য
কাপ ও ঠোঁটের মধ্যে বিস্তর ফাঁক আছে১ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত কোন কাজ শেষ হয় না; শেষেরও শেষ থাকে; এমনকি সমাপ্তির মুখে এসেও কোন কাজ নানা বাধাবিঘ্নের কারণে বিফল হতে পারে; সমতুল্য- 'না আঁচালে বিশ্বাস নাই'; 'তীরে এসে তরী ডোবা' ইত্যাদি
কাপ ও ঠোঁটের মধ্যে বিস্তর ফাঁক আছে২ আগাম সুখকল্পনা; সাফল্যের সম্ভাবনা নিয়ে অতিরিক্ত আশাবাদী হওয়া; সমতুল্য-'কালনেমির লঙ্গাভাগ';'গাছে না উঠতেই এককাঁদি'; 'ডিম ফোটার আগেই মুরগীর ছানা গোনা'; 'রাবণের ছাদনাতলা' ইত্যাদি।
কাপড় বুঝে জামা কাটো ক্ষমতা বুঝে কাজ কর; সমতুল্য- 'অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা'; 'আয় বুঝে ব্যয় কর'; 'যতদূর মাদুর ততদূর পা ছড়াও', 'যতদূর চাদর দিয়ে পা ঢাকতে পারো ততদূর পা ছড়াও' ইত্যাদি।
কাপড় হলে পচা, আঙ্গুল হয় খোঁচা১ অপকর্মের সমর্থনে একটা কোন অজুহাত দেখানো।
কাপড় হলে পচা, আঙ্গুল হয় খোঁচা২ অদৃষ্টে ক্ষতি লেখা থাকলে সামান্য বিষয় থেকেও ক্ষতি হতে পারে।
কাপড়ে আগুন ঢাকা যায় না১ সত্যকে মিথ্যার আবরণে ঢাকা যায় না।
কাপড়ে আগুন ঢাকা যায় না২ কলঙ্ক বা পাপকে কোন অজুহাতে চাপা যায় না।
কাপড়ের দাগ যায় ধুলে, মনের দাগ যায় মলে। মনের দাগ জীবনে যায় না।
কাপুরুষ মৃত্যুর আগে বহুবার মরে- সেক্সপিয়ার ভীরুরা অর্ধেকসময় ভয়েই মরে থাকে; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'সাহসী একবার বই দুবার মরে না'।
কাম নাই কুত্তার আইলে আইলে দৌড় যার কাজ নেই সে ফালতু কাজ বেশী করে।
কামড়াতে না পারো তো দাঁত দেখিয়েও না মিছিমিছি ভয় দেখিয়ো না।
কামড়িয়ো না দাঁত দেখাও কোন ক্ষতি করো না, ভয় দেখাও; পাঠান্তর- 'কামড়িয়ো না ফোঁস কর'।
কাম নাই কামাইও নাই নির্দিষ্ট কোন কাজ থাকাতে অনির্দিষ্ট কাজে যখন-তখন উপস্থিত হতে হয়; ফলে কাজে বিরাম পাওয়া যায় না।
কাম নাই কুত্তার আইলে আইলে দৌড় যার কাম থাকে না সে আকাম বেশি করে।
কামলা (ন্যাবা রোগী) আপনি সামলা বৈদ্য নিজেই নিজের রোগ সারাও; যে যার নিজেরটা দেখুক।
কামলা সব শ্যামলা দেখে মন্দচোখে সবই মন্দ দেখে; সমতুল্য- 'আবিল দৃষ্টি সব হলদে দেখে'।
কামাতুরানাং ন ভয়ং ন লজ্জা কামার্তব্যক্তিদের ভয় বায়া লজ্জা থাকে না।
কামাতে না পারা নাপিতের ধামাভরা ক্ষুর অক্ষমের ভড়ং বেশি; কিছু কাজ জানে না, শুধু কিছু কথা শিখে রেখেছে; পাঠান্তর- 'কামাতে পারে না নাপিত ধামাভরা ক্ষুর, কামাতে কামাতে যায় রঘুনাথপুর'।
কামানো মাথায় ক্ষুর বোলায় অপ্রয়োজনীয়/বাহুল্য কাজ।
কামার বুড়ুলে লোহা শক্ত হয় বৃড়োকামার লোহা পিটতে না পেরে বলে লোহা শক্ত হয়েছে; অক্ষমের অজুহাত; সমতুল্য- 'নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা'।
কামারের কাছে ছূঁচ বেচতে আসা উপরচালাকি; চতুরের সাথে চাতুরী; অভিজ্ঞ চোখকে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা; তুলনীয়- 'সেকরা কাছে সোনা চুরি'; পাঠান্তর- 'কামারের কাছে লোহা চুরি'।
কামারের কাছে লোহা জব্দ বলবানকে বলবানই দমন করতে পারে; শক্তপাল্লায় পড়লে সবাই বাগে থাকে।
কামারের কাজ কুমোরের সাজে না অনধিকারে হাত বাড়ানো ঠিক নয়; যে কাজে পটু নয় সেই কাজ করতে গেলে বিপত্তি হয়; পাঠান্তর- 'কামারের কুমোরবৃত্তি'।
কামারের নেহাই হাতুড়িকে ভয় পায় না শক্তসমর্থ ও পরিশ্রমী ব্যক্তি কষ্টকর পরিস্থিতি ও সমস্যাকে ভয় পায় না।
কামালে কুমালে বর লেপুলি পুছুলি ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় জিনিস সুন্দর দেখায়।
কার কপালে/ভাগ্যে কেবা খায় কেউ কারো সুখ-দুঃখের ভাগীদার নয়; সকলেই নিজনিজ অদৃষ্ট অনুসারে সুখ-দুঃখ ভোগ করে।
কার শ্রাদ্ধ কে বা করে, খোলা কেটে বামুন মরে যার কাজ তার মনযোগ নেই অন্যে তারজন্য খেটে মরে; একজনের সমস্যার জন্য অন্যের চিন্তা করা বৃথা; (উৎসকাহিনী- একরাজার পিতৃশ্রাদ্ধে রাজপুরোহিত কলার খোলা কাটছিলেন; এমনসময় এক অন্ধ সভাসদ সেইদিক দিয়ে যাচ্ছিলেন; তিনি দেখতে না পেয়ে কলার খোলাগুলি মাড়িয়ে ফেললে রাজপুরোহিত ক্রুদ্ধ হয়ে তাঁকে শাসুন করেন; অন্ধ সভাসদ বিরক্ত হয়ে তখন এই উক্ত করেন; কথাটা রাজার কানে যায়; রাজা সভাসদকে ডেকে তাঁর উক্তির ব্যাখ্যা জানতে চান; সভাসদ বলেন তিনি রাজপুত্র নন; রাজা মায়ের কাছে জন্মবৃত্তান্ত জেনে সঙ্গে সঙ্গে শ্রাদ্ধ বন্ধ করে দেন; এই গল্প থেকে প্রবাদের উৎপত্তি; প্রবাদের নির্যাস হল- কোন কাজের গোড়ায় গলদ থাকলে বিশৃঙ্খলায় কাজ সফল হয় না।); পাঠান্তর- 'কার শ্রাদ্ধ, বামুন হদ্দ'।
কার সাধ্য মারে তারে, খোদা হেসে রাখে যারে ঈশ্বর যাকে রাখে তার ক্ষতি হয় না।
কারণ বই কার্য নাই অকারণে কিছু হয় না; সমতুল্য- ধোঁয়া থাকলে আগুন আছে; বিনা কারণে গাছের পাতা নড়ে না; বিরুদ্ধ উক্তি- 'অকারণে হৈ চৈ'; 'নেই মাথা তার মাথা ব্যাথা' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'কারণবিনা কেউ বন্ধু নয়, কেউ শত্রু নয়'।
কারে পড়ে আল্লার নাম বিপদে না পড়লে কেউ ঈশ্বরকে ডাকে না; সমতুল্য- 'চাপ পড়লে বাপ'; 'ঠেলায় পড়ে ঢেলায় প্রণাম', 'বিপদে পড়লে শ্রীমধুসূদন'; 'সাধে কি আর বাবা বলি গুঁতোর ঠেলায় বাবা বলায়' ইত্যাদি। তূলনীয়- 'বিনা বজ্রপাতে কেউ রামনাম লয় না'।
কারে পড়ে গঙ্গাস্নান ধর্মাচারের ধমক না থাকলে লোকে গঙ্গাস্নান করে না; প্রয়োজনে ধার্মিক সাজা।
কারে ভজে কার দাস খণ্ড ঈশ্বরধারণার জন্য খেদোক্তি; 'জাতের ধর্ম বজ্জাতেরা করে'।
কারো আগেও নয় কারো পাছেও নয় কোনপ্রকার তোষামোদি নয়; কোনপ্রকার উঁচুনীচু নয়;
কারো উপকার করলে কখনো বলো না কেউ উপকার করলে কখনো ভুলো না আত্মপ্রচার করো না এবং অকৃতজ্ঞ হয়ো না; তুলনীয়- 'অকৃতজ্ঞের নরকবাস'।
কারো কড়ি/ধার ধারি না১ কারো কাছে ঋণী নই; সুতরাং কাউকেই গ্রাহ্য করি না।
কারো কড়ি/ধার ধারি না২ চাটুকারিতা করতে অনিচ্ছুক, মোটেই পছন্দ নয়।
কারো ঘর পোড়ে কেউ আগুন পোহায় কারো ঘরে ঝাড়বাতি জ্বলে; কারো ঘরে প্রদীপ জ্বলে না; কারো প্রয়োজনীয় বিষয়ে অতিরিক্ত বিদ্যমান; কারো প্রয়োজনীয় বিষয়ে বিঘ্ন; একের বিপদে অন্যের সুখভোগ; কারো দুঃখ কারো বা সুখ; সমতুল্য- 'কারো পৌষমাস, কারো সর্বনাশ'; 'কারো শাকে বালি, কারো দুধে চিনি'; পাঠান্তর- 'কারো ঘর পোড়ে কেউ ধোঁয়া খায়'; 'কারো ঘরে ঝাড়বাতি কারো ঘর নিস্প্রদীপ'।
কারো চাকর নই, কারো প্রভুও নই- এব্রাহাম লিঙ্কন সমানে সমানে ব্যবহার চাই; সাম্যের অধিকার; সাম্যের গান গাই।
কারো দুধে চিনি কারো শাকে বালি কারো সুখের ওপর সুখ, কারো দুখের ওপর দুখ; সমতুল্য- 'কারো ঘরে ঝাড়বাতি কারো ঘর নিস্প্রদীপ'।
কারো পৌষমাস কারো সর্বনাশ একই কাজে কারো বিরাট লাভ, কারো বিরাট ক্ষতি; কেউ সৌভাগ্যবান কেউ হতভাগ্য; সমতুল্য- 'কারো ঘর পোড়ে, কেউ ধোঁয়া খায়'; 'গোমড়কে মুচির পার্বণ'।
কারো প্রতি অটুট শ্রদ্ধা রাখার একমাত্র উপায় হল তার সাথে কখনো দেখা না করা বেশি ঘনিষ্টতায় দোষগুণ ধরা পড়ে।
কারো সাথে ভাগাভাগি করলে সমস্যা অর্ধেক হয়ে যায় কাজ ভাগ করে নিলে কাজ হালকা হয়; দশের লাঠি, একের বোঝা।
কারোকে বুকে করা কারোকে পিঠে করা একজনকে আদর করা অন্যজনকে অনাদর করা।
কার্তিকের জল উনো, ধান জন্মে দুনো- খনা কার্তিকমাসে যত জল কম হবে গাছে তত বেশী ধান ফলবে।
কার্যকালে সমুৎপন্নে ন সা বিদ্যা ন তদ্ধনম্ প্রয়োজনের সময় কাজে লাগে না, এমন বিদ্যা নয়, এমন ধন ধন নয়; (মূলশ্লোক- 'পুস্তকস্থা তু যা বিদ্যা পরহস্তগতং ধনম্...')
কার্য থাকলে কারণ আছে কারণ বিনা কোন কাজ হয় না; সমতুল্য- 'অকারণে কিছু হয় না', 'ধোঁয়া থাকলে আগুন আছে', 'পর্বতো বহ্নিমান ধুমাৎ' ইত্যাদি; বিরুদ্ধউক্তি- 'অকারণে হৈচৈ', 'মাথা নেই তার মাথাব্যথা' ইত্যাদি।
কাল ছিলাম বসে স্বর্ণপিঁড়ে আজ বসেছি আস্তাকুঁড়ে অবস্থা বিপর্যয়ের জন্য খেদোক্তি; সুখের পরে দুঃখ।
কালনেমির লঙ্কাভাগ আগাম সুখকল্পনা করা; ঘটনা ঘটার আগেই লাভের হিসাব; (উৎসকাহিনী- ইন্দ্রজিতের শক্তিশেলে লক্ষণ মুর্ছিত হয়ে পড়লে হুনুমান ওষুধ আনার জন্য হিমালয়ে উদ্দেশ্যে যাত্রা করে; পথে লক্ষ্মণকে কৌশলে বধ করার জন্য রাবণ মামা কালনেমিকে পাঠান; সর্ত ছিল হনুমান নিহত হলে কালনেমি লঙ্কার অর্ধেক অংশ পাবেন; কালনেমি সাধুর ছদ্মবেশ হুনুমানের কাছে গিয়ে তার বাসায় অতিথি হতে আমন্ত্রণ জানায়; হনুমান উপস্থিত হলে কালমেনি তাকে স্নান করার জন্য কুমিরে পরিপূর্ণ কালীদহে পাঠায়; হনুমান ফিরতে দেরী করায় কালনেমি ভাবে যে হনুমান নিহত হয়েছে; তখন সে লঙ্কার কোন অংশ নেবেন তার হিসাবনিকাশে বসে; এমন সময় হনুমান এসে তাকে হত্যা করেন; এই হাস্যাস্পদ 'কার্যের আগেই ফলাকাঙ্খা' থেকে প্রবাদটির সৃষ্টি হয়; সম্পর্কীত প্রবাদসমূহ- 'আম না হতে আমসি/আমস্বত্ব'; 'গাছে না উঠতে এককাঁদি'; 'গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল'; 'না ডোলী না কাহার বিবি হ্যায় তৈয়ার'; 'পাত্রপাত্রীর দেখা নাই, শুক্রবারে বিয়ে'; 'রাবণের ছাদনাতলা';'রাম না হতে রামায়ণ' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'মনে মনে লঙ্কাভাগ'; 'লঙ্কাভাগ'।
কাল যায় না জল যায় জলেস্রোতের মত সময় বয়ে যায়।
কাল রাম রাজা হবে আজ তার বনবাস আকস্মিক বিপদ এসে উপস্থিত; সুখভোগের মুহূর্তে দুঃখভোগ; আনন্দের মাঝে দুঃসংবাদ; আশায় নৈরাশ্য ইত্যাদি এমন অবস্থার উদ্ভব হলে প্রবাদটি বলা হয়।
কালস্য কুটিলা গতিঃ কালচক্রের গতি বোঝা ভার; কখন যে কি হবে কেউ তা জানে না।
কালা অক্ষর ভৈঁসা বরাবর অশিক্ষিত, একদম লিখতে পড়তে জানে না।
কালা জগতের আলা শ্রীকৃষ্ণ বিনা সব অন্ধকার।
কালা কাজলের মাটি, তা'র লাগি ছ'মাস হাঁটি; সুন্দর ধুতুরার ফুল, তা'র নাই কড়ার মূল গুণবতী কালো হলেও ভালো; গুণহীনা রূপবতী হলেও গন্ধহীন ধুতুরা ফুলের মতই মূল্যহীন; সমতুল্য- 'জাতের নারী কালাও ভালা, নদীর পানি ঘোলাও ভালা','রূপে মারি লাথি, গুণে ধরি ছাতি'।
কালা ধুলে ধলা হয় না কালো রকগ কখনো সাদা হোয় না; মন্দ কখনো ভালো হয় না; সমতুল্য-'কাক ধুলে বক হয় না'।
কালা (কানে খাটো) পুরুত তোতলা যজমান এমন মনিকাঞ্চনযোগে মন্ত্রপড়ার কাজ এগোয় না; শ্রাদ্ধের কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটে; পাঠান্তর- 'কালা যজমান তোতলা পুরুত'।
কালা বলে গায় ভালো, কানা বলে নাচে ভালো অবোধের অবুঝ দাবী; অজ্ঞরা জ্ঞানীর ভান করলে এই প্রবাদ প্রযোজ্য হয়।
কালা শোনে ঢাকের বাদ্যি কালা বলে আমার বিয়েরর বাদ্যি একের কাজে অন্যের কাজ আরোপ।
কালি কলম পাত, তবে লেখার হাত১ কালি কলম ও কাগজ ভাল হলে কাঁচা হাতেও সুন্দর লেখা বেরোয়; পাঠান্তর- 'কালি কলম পাত, যেমন তেমন হাত'।
কালি কলম পাত, তবে লেখার হাত২ উত্তম উপায় ও উত্তম উপকরণ হলে কাজও উত্তম হয়।
কালি কলম মন, লেখে তিন জন লেখার উপকরণ ভাল হলে এবং মনোসংযোগ থাকলে লেখাও সুন্দর হয়।
কালিদাস আর কি, যে ডালে বসে সেই ডাল কাটে মহাকবি কালিদাস বাগদেবীর বরে কবিত্বশক্তি পাওয়ার আগে মহামূর্খ ছিলেন; কথিত যে তিনি একদিন গাছের যে ডালে বসেছিলেন সেই ডালই কাটছিলেন; তার থেকেই এই প্রবাদের সৃষ্টি হয়।
কালির অক্ষর/আঁচর নাইকো পেটে, চণ্ডী পড়ে কালীঘাটে মুর্খ বামুনে চণ্ডীপাঠ করে; আগে কালিঘাটের এই দুর্নাম ছিল।
কালীঘাটের লোকের কালীদর্শন হয় না গয়ংগচ্ছভাবের জন্য কাছের লোকের দেরী হয়; সমতুল্য-'আগ্রার মানুষ তাজমহল দেখে না'; 'গির্জার পাশের মানুষ গির্জায় যায় না';'মক্কার মানুষ হজ্জ পায় না ইত্যাদি।
কালে কালে কতই হল পুলিচিঠের লেজ গজালো কোন অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলে এই প্রবাদ বলা হয়; পাঠান্তর- 'কালে কালে কতই হলো বেগুনের হাড় হলো'।
কালে দত্তং বরং হ্যল্পমকালে বহুনাপি কিম্‌ সময়ে অল্প দেওয়াও ভাল; অসময় বহু দিলেও কোন ফল হোয় না; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়'।
কালেন ফলতে তীর্থং সদ্য বহুসাধুসমাগমঃ তীর্থভ্রমণের ফল কালক্রমে ফলে, কিন্তু সাধুসঙ্গের ফল সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যায়।
কালের আবার কালাকাল মৃত্যু কখন এসে উপস্থিত হবে কেউ বলতে পারে না, তার আসার সময় অসময় নেই; তুলনীয়- 'নিশ্বাসে বিশ্বাস নেই।'
কালো আঙুর সাদা আঙুরের মত সমান মিষ্টি উপস্থিতি ও রঙ দেখে মানুষ বিচার হয় না; বাইরেরটা দেখে বিচার করা উচিত নয়।
কালো আর কালোয় মিলে ধলো হয় না১ সমজাতীয়/ধর্মীয় মিলনে ভিন্ন জাত/ধর্ম উৎপন্ন হয় না।
কালো আর কালোয় মিলে ধলো হয় না২ সবসময় বিষে বিষে বিষক্ষয় হয় না।
কালো আর ধলো বাইরে কেবল, ভিতরে সবাই সমান রাঙা রক্তের রঙ লাল।
কালোকাপড় রুক্ মাথা লক্ষ্মী বলেন যাবো কোথা পরিচ্ছন্নতাই পবিত্রতা; অপরিচ্ছন্নতায় লক্ষ্মী ছাড়ে; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'ছেঁড়া কাপড় রুখু মাথা দুঃখ বলে যাবো কোথা?'
কালোছেলের নাম গৌরাঙ্গসুন্দর কুৎসিতকে সুন্দর করার ব্যাপার; যা নয় তাই হওয়ার চেষ্টা; সমতুল্য-'আঁখোকে অন্ধ নাম নয়নসুখ'; কানাছেলের নাম পদ্মলোচন; 'ঘুঁটে কুড়ানীর ছেলের নাম চন্দনবিলাস' ইত্যাদি।
কালোবামুন, কটাশুদ্র, বেঁটেমুসলমান, ঘরজামাই, পোষ্যপুত্র- পাঁচজনাই সমান বলা হয় যে এই পাঁচজনের স্বভাব ভালো হয় না।
কালো মুরগী সাদা ডিম পাড়ে ফলাফলই একমাত্র বিচার্য
কালো হাঁড়ি কেয়া পাত তবে দেখবি জগন্নাথ অতীতে সবাই পায়ে হেঁটে জগন্নাথদেব দর্শন করতে যেতো; পথে চটিতে বসে কেয়াপাতায় ডালভাত খেতো; কষ্ট না করলে দেবদর্শন হয় না।
কাশীধাম ঘুরে কাঞ্চীপুরপম/কামাখ্যা যাত্রা ঘুরপথে/বাঁকাপথে কাজ করা।
কাশীধামে কাক মরেছে কালীঘাটে/কুমিল্লাতে হাহাকার অকারণ হৈচৈ; অনধিকার চর্চা; মাথা নেই মাথাব্যথা; সমতুল্য-'একগাঁয়ে ঢেঁকি পড়ে অন্যগাঁয়ে মাথা ধরে'।
কাশীধামে ভূমিকম্প কোন অসম্ভব ঘটনার সংগঠন; মানুষের বিশ্বাস শিবের ত্রিশুল কাশীতে ভূমিকম্প হতে দেয় না।
কাশ্মীরজস্য কটুতাপি নিতান্তরম্যা কুঙ্কুমের কটুত্বগুণ থাকলেও সেটা অতি রমনীয়।
কাস্তে ভেঙে গড়ে করতাল চাষী কীর্তনীয়া হতে চায়; একটা হুজুগ পেলেই হলো; যোগ্য অযোগ্য সবাই সেই ব্যাপারে ঝাঁপিয়ে পড়ে; তুলনীয় 'ছিল যত নাড়াবুনে সব হলো কীর্তুনে'।
কি অপূর্ব সৃষ্টি মা তিতা ছা মিঠা পলতা তিতা পটল মিষ্টি; কু থেকে সু সৃষ্টি হতে পারে।
কি দিব কি দিব খোঁটা গয়ায় মরেছে বাপবেটা নিন্দা করার কিছু না পেলে যা খুশি বলে নিন্দা কর।
কিং করিষ্যন্তি বক্তারঃ শ্রোতা যত্র ন বিদ্যতে যে সভায় যোগ্য শ্রোতা নেই সেখানে বক্তা কী করবেন?
কিংকর্তব্যবিমূঢ় দ্বিধা-দ্বন্দ্বে মনস্থির করতে অপারগ; সমতুল্য- ত্রিশঙ্কু অবস্থা'; 'বেড়ার ওপর বসে'।
কিং কুর্বন্তি গ্রহা সর্ব্বৈ যস্য কেন্দ্রী বৃহস্পতিঃ তুঙ্গে যার বৃহস্পতি অন্যান্য গ্রহেরা তার কিছু করতে পারবে না।
কিং কুলেন বিশালেন গুণহীনস্তু যো নরঃ কুলীনবংশে জন্মগ্রহণ করলেও গুণহীন ব্যক্তি সার্থকতা কোথায়? সম্পর্কীত প্রবাদ- 'অকুলীনোহপি শাস্ত্রজ্ঞো দৈবতৈরপি পূজ্যতে'।
কিং জীবিতেন পুরুষস্য নিরিক্ষরেণ মূর্খ পুরুষের বেঁচে থাকা নিস্ফল।
কিং দূরং ব্যবসায়িনাম্ ব্যবসায়ীর কাছে কোনপথই দূর নয়।
কিংবা স্বয়ম্ভূ শিবশক্তিবিষ্ণুঃ কপালদুঃখং ন করোতি দূরম্ ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর কেউই কপালের দুঃখ দূর করতে সমর্থ নহেন; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'স্বকর্ম ভোগং কুরুতে জীবং কপালমূলং খলু সর্বদুঃখম'।
কিছু এসে যায় না কত আস্তে তুমি হাঁটছো যদি না তুমি থেমে যাও চলার নাম জীবন; থামার নাম মৃত্যু।
কিছু করার আগে তিনবার ভাববে ভালভাবে ভেবেচিন্তে কাজ করা উচিৎ; তুলনীয়- 'ভাবিয়া করিয়ো কাজ করিয়া ভাবিয়ো না'।
কিছু করারক্ষেত্রে যারা আগে উপস্থিত হয় তাদের শাস্তি দাও এবং যারা পরে উপস্থিত হয় তাদের বাধা দাও কোন কিছুতেই ব্যগ্রতা সমর্থনযোগ নয় আবার দীর্ঘসূত্রিতাও সমর্থনযোগ্য নয়; সময়ানুবর্তিতাই আদর্শ হওয়া উচিত; প্রাণের বিকাশে প্রকৃতি বিপ্লবী মতবাদ নয় বিবর্তন মতবাদ সমর্থন করে।
‘কিছু না’ করলে কিছু হয় না কাজ না করলে কার্যসিদ্ধি প্রশ্ন নেই।
‘কিছু না’ করা কুকাজ করার সামিল না এগুনোর অর্থ পিছিয়ে যাওয়া।
'কিছু না' থাকার চেয়ে কিছু থাকা ভাল কোনক্ষেত্রেই শূন্যতা কাম্য নয়; তুলনীয়- 'নেই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল'; 'নেই রুটির চেয়ে অর্ধেক রুটি ভাল'; বিরুদ্ধ উক্তি- 'দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল';
কিছু না' থাকার চেয়ে বাজে অজুহাত ভালো তবুতো শেষ পর্যন্ত কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
'কিছু না’ শিখলে অকাজ করা শেখা হয়। অলসভাবে সময় কাটানো নেই।
কিছু পেতে গেলে কিছু দিতে হয় দক্ষিণাবিনা কার্যসিদ্ধি হয় না।
‘কিছুই শিখি নি’ বলতে পারাটাই সব থেকে বড় শিক্ষা অসীম জ্ঞানভান্ডার থেকে ক্ষুদ্রজীবনে অনুপরিমাণ জ্ঞান আহরণ করা যায়।
কিনতে ছাগল, বেচতে পাগল কেনার সময় ছাগলের মত তাড়াতাড়ি করে এবং বেচার সময় পাগলের মত হন্যে হয়ে মরে; অবিবেচক; বেহিসাবী; কোন কিছুতে তর সয় না।
কিবা জ্যেষ্ঠ কি কনিষ্ঠ, যেই বুঝে সেই শ্রেষ্ঠ বয়স যাই-হোক-না-কেন জ্ঞানীর স্থান সর্বাগ্রে; সমতুল্য- 'বয়সে না বড় হয়, বড় হয় জ্ঞানে'।
কি, বাজার যাচ্ছেন? না, বাজার যাচ্ছি; ও আমি ভাবলাম বাজার যাচ্ছেন ্দুই বদ্ধকালার কথোপকথন; বদ্ধকালার প্রতি বিদ্রুপোক্তি।
কি ভাবে কথা বলতে হয় না জানলে অন্তত কিভাবে চুপ থাকতে হয় তা শিখে নাও অক্ষমতা লুকাতে চেষ্টা করো; এটাও একধরণের শিক্ষা।
কিমাশ্চর্য্যমতঃপরম্ কি অদ্ভুত ব্যাপার; এর পর/বেশি আশ্চর্য হওয়ার কি আছে? (উৎসকাহিনী- বকরূপী ধর্ম যুধিষ্টিরকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন- পৃথিবীতে আশ্চর্য কি; প্রত্যুত্তরে যুধিষ্টির বলেছিলেন- জগতে প্রতিদিন শতশত লোক মারা যায়; তা দেখেও যারা ভাবছে-তারা মরবে না, তারা অমর- এরথেকে বেশি আশ্চর্যের ব্যাপার আর কি হতে পারে? বর্তমানে বাজারে পাঁঠার মাংসের দর কেজপ্রতিি হাজার টাকা এবং মানুষের মাংসের দর কেজপ্রতিি দশ টাকাও নয়; এরথেকে বেশি আশ্চর্যের ব্যাপার আর কি হতে পারে?)
কিমাদ্রবণিজো বহিত্রচিন্তয়া আদারব্যাপারীর জাহাজের খবরের কাজ কী?
কি যাতনা বিষে বুঝিবে সে কিসে, কভু আশীবিষে (বিষধর সাপ) দংশেনি যারে- কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার সুখী মানুষ জীবনযন্ত্রণা কাকে বলে জানে না; ভুক্তভোগীই একমাত্র বোঝে যন্ত্রণার জ্বালা কি; ব্যথিতহৃদয়ের বেদনা একমাত্র সমব্যথীই বুঝতে পারে; প্রকৃত মৰ্ম্মজ্ঞই মৰ্ম্মীর মৰ্ম্মকথা বুঝিতে পারেন; সমতুল্য- 'অকণ্টকবিদ্ধ কি জানে কাঁটাফুটা কি?'
‘কি হতে পারি’ কথা নয়, কথা হল ‘কি করতে পারি' নিজের চেষ্টায় করার আনন্দই আলাদা।
কিল খেয়ে কিল চুরি/হজম১ অপমানিত হয়েও ঘটনা গোপন করা।
কিল খেয়ে কিল চুরি/হজম২ মার খেয়েও পালটা মার না দেওয়া।
কিল মারার গোঁসাই সুখ দিতে পারে না দুঃখ দিতে সবসময় মুখিয়ে আছে।
কিলিয়ে কাঁঠাল পাকানো সময়ের আগেই কার্যসিদ্ধির চেষ্টা।
কিল্লা/কেল্লা ফতে সফল কার্যোদ্ধার; সিদ্ধিলাভ
কিসে আর কিসে সোনা আর সীসে দুটো অসম বিষয়ের তুলনা হয় না।
কিসের মধ্যে কি পান্তা ভাতে ঘি অবিবেচনাপ্রসূত কাজ; পান্তাভাতে ঘি দিয়ে খাওয়া রীতিবিরুদ্ধ এবং হাস্যকর; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'পান্তা ভাতে ঘি নষ্ট, বাপের বাড়ী ঝি নষ্ট'; পাঠান্তর- 'কিসের নাই কি পান্তা ভাতে ঘি'।
কিসের মধ্যে কি, বেগুন পোড়ায় ঘি বেগুনপোড়ায় তেল দেয় ঘি দেয় না; অযথা অর্থের অপচয় করে বড়লোকিপনা দেখাতে গিয়ে হাস্যাস্পদ হওয়া; পাঠান্তর- 'কিসের নাই কি বেগুনপোড়ায় ঘ'। ি
কিসের মাসী কিসের পিসী, কিসের বৃন্দাবন; মরাগাছে ফুল ফুটেছে মা বড় ধন মায়ের সাথে কারো তুলনা হয় না; মায়ের জন্য সমগ্র পৃথিবী ত্যাগ করা যায়; সমতুল্য- 'জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী'।
কীচকবধ কাউকে ভীষণভবে প্রহার করে হলে কীচক বধের তুলনা দেওয়া হয়; মভাভারতের বিরাটরাজের শ্যালক কীচক দ্রৌপদীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করলে ভীম মেরে তার হাড়গোড় ভেঙে দিয়েছিলেন।
কীর্তির্যযস্য স জীবতি যার কীর্তি আছে তিনিই অমর; কীর্তিমান ব্যক্তিরা মানুষের মনে চিরজীবী হয়ে থাকেন; মূলপ্রবাদ- 'চলচ্চিত্তং চলদ্বিত্তং...' দ্রষ্টব্য।
কীর্তিমান জনকের পুত্র হওয়া বৃথা সূর্যের আলোয় তারা ঢাকা পড়ে।
কুঁজী না ও খুঁজি যে যা ভালোবাসে সে তাই খুঁজে বেড়ায়।
কুঁজী না ঐ পুঁজি তবুতো কিছু আছে; কুঁজ ভাঁঙিয়ে অন্ন জোগাড় হয়।
কুঁজীর মন্ত্রণা দুষ্টলোকের কুমন্ত্রণা।
কুঁজোর ইচ্ছা চিৎ হয়ে শোয় অক্ষমের দুরাশা; সামর্থহীনতায় ইচ্ছা পূর্ণ না হওয়ায় নৈরাশ্য।
কুঁড়ে কৃষাণ অমাবস্যা খোঁজে- খনা কাজ না করার অজুহাত খোঁজে (অমাবস্যায় কিষাণ লাঙল ছোঁয় না)।
কুঁড়ে গরুর এঁটুলি সার১ অলসের ভাগ্যে অসার বস্তু বই কিছু জোটে না।
কুঁড়ে গরুর এঁটুলি সার২ অলসের মুখেই শুধু আস্ফালন; কাজে কিছু করারা সামর্থ নেই।
কুঁড়েঘরে বসে লাখটাকার স্বপ্ন দেখা অক্ষমের বড়লোক হওয়ার বাসনা; স্বপ্ন দেখতে পরিশ্রম করতে হয় না; স্বপ্ন দেখতে পয়সা লাগে না; যে অবস্থার যা উপযুক্ত তাই নিয়ে সকলের সন্তুষ্ট থাকা উচিত; পাঠান্তর- 'কুঁড়েঘরে বাস খাট-পালঙ্কের আশ'।
কুঁড়ের অন্ন জোটে না পরিশ্রম না করলে সিদ্ধিলাভ হয় না।
কুঁড়ের বাক্যে পুড়ে মরি কুঁড়ের বাগাড়ম্বর খুবই বিরক্তিকর; কোন কাজ করে না শুধু কথায় কথায় রাজা উজীর মারে।
কুঁড়ের বাথান বৈদ্যনাথ অলসব্যক্তি তীর্থ করতে গিয়েও ভিক্ষাবৃত্তি করে অন্ন জোগাড় করে।
কুঁড়ের মুখে আঁটুনি অকর্মণ্য মুখ সর্বস্ব হয়; বচনবাগীশ।
কুঁড়েরে কুঁড়ে কয়- আমি ঘুমাই, তুই দোর দে; কুঁড়েরে কুঁড়ে কয়- বাতাস বয়; দোরটা দিলে ভালো হয় দু'জনই দমান মাত্রারিক্ত কুঁড়ে; সমতুল্য- গোঁফখেজুরে'; 'পিপুফিশু'।
কুঁদের মুখে বাঁক থাকে না১ যোগ্যশাসনে দুষ্টলোক শিষ্ট হয় (কুঁদযন্ত্র বাঁকাকাঠকে সোজা কাটে); পাঠান্তর-'কুঁদিলে বাঁকা কাঠও সোজা হয়'।
কুঁদের মুখে বাঁক থাকে না শক্তলোকের পাল্লায় পড়লে বাঁকালোকও সোজা হয়।
কুকুর বিড়াল সম্পর্ক শত্রুতার সম্পর্ক; তুলনীয়- সাপে-নেউলে সম্পর্ক
কুকুর রাজা হলেও জুতা খায় জাতস্বভাব কেউ ছাড়তে পারে না।
কুকুরকে লাই দিলে কাঁধে চড়ে নীচকে প্রশ্রয় দিতে নেই; নীচকে প্রশ্রয় দিলে প্রশ্রয়দাতার ক্ষতি হয়; পাঠান্তর- 'কুকুরকে লাই দিলে মাথা ওঠে'।
কুকুরের আড়াই পাক কুকুরে স্বভাব; অভ্যাস দ্বিতীয়প্রকৃতি।
কুকুরের কাজ কুকুরে করেছে কামড় দিয়েছে পায়, তা বলে কি কুকুরের কামড় মানুষের শোভা পায় অবোধার কাজ বোধার সাজে না।
কুকুরের কামড় হাঁটুর নীচে১ নগণ্য বিরাট ক্ষতি করতে অক্ষম।
কুকুরের কামড় হাঁটুর নীচে২ শত্রু বিশেষ ক্ষমতা ধরে না; শত্রুকে তাচ্ছিল্য করতে প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়;
কুকুরের দৌড় ছাড়া হাঁটা নেই অস্থিরচিত্ত সবসময় ছটফট করে।
কুকুরের লেজ কাজে লাগে না বাহুল্যের কোন মূল্য নেই।
কুকুরের পেটে ঘি সয় হয় না১ অনভ্যস্ত লোককে ভালো জিনিস দিলেও সেটা তারপক্ষে প্রীতিকর হয় না।
কুকুরের পেটে ঘি সয় হয় না২ মন্দলোকে ভাল উপদেশ নেয় না;
কুকুরের লেজে ঘি মাখলেও সোজা হয় না বেয়াড়া লোককে সংশোধন করা যায় না; বহু চেষ্টাতেও স্বভাব অতিক্রম করা যায় না; সমতুল্য- 'বারোবছর চোঙার মধ্যে থাকলেও কুত্তার লেজ সোজা হয় না'; 'স্বভাব যায় না মলে'।
কুকুরের স্থান পায়ের নীচে নীচের জিনিস নীচেই থাক, উপরে ওঠে না; হীন কখনো উচ্চ আসন পায় না।
কুজন-পিরিত কাঁচ ভাঙিলে ফুরায়, সুজন-পিরিত সোনা ভেঙে গড়া যায় মন্দজিনিস বাতিল করতে হয়; ভালজিনিস ব্যবহার করতে হয়।
কুজনের নেই লাজ নেই অপমান, সুজনের এককথা মরণ সমান মন্দলোকের লাজঘেন্না বলে কিছু নেই কিন্তু একটু কটু কথা শুনে ভদ্রলোক মৃতপ্রায় হয়।
কুটুম্বের মধ্যে শালা, গয়নার মধ্যে বালা দুইই সমান আদরণীয়।
কুঠে মুরগির ঠোঁটে বল দুর্বলেরা বাকসর্বস্ব হয়।
কুড়ি হলেই বুড়ি অর্থ স্পষ্ট; স্ত্রীলোকের মধ্যে প্রচলিত; বর্তমানে অপ্রাসঙ্গিক।
কুৎসিত ছেলের নাম দিব্যসুন্দর বিসদৃশ নামকরণ; যা নয় তাই হওয়ার হাস্যকর চেষ্টা।
কুতো বিদ্যার্থিন সুখম বিদ্যা শিক্ষার্থীদের সুখ কোথ্যয়? কঠোর পরিশ্রম নয়া কর'লে বিদ্যাশিক্ষা হয় না।
কুপুত্রমাসাদ্য কুতো জলাঞ্জলি কুপুত্রের কাছে জলপিণ্ডের প্রত্যাশা করা নিরর্থক।
কুপুত্র যদ্যপি হয়, কুমাতা কখনো নয় পুত্ররা যতই অত্যাচার করুক, মায়েরা কখনো বিরূপ বা স্নেহশূন্যা হয় না; পাঠান্তর- 'কুপুত্র হয় যথাতথা কুমাতা নয় কখন তো'।
কুপুত্রেণ কুলং যথা বনের মধ্যে একটা কু-গাছ থাকলে তার আগিনে যেমন সারা বন দগ্ধ হয় তেমনই এক কুপুত্রের জন্য বংশ বিনষ্ট হয়।
কুবাক্যান্তং চ সৌহৃদম বন্ধুত্বের সীমা কুবাক্য পর্যন্ত, অর্থাৎ কুবাক্য প্রয়োগ করলে বন্ধুত্ববিচ্ছেদ।
কুবার্তা/সংবাদ বাতাসের আগে ছোটে/ধায় দুঃসংবাদ তড়িৎ গতিতে ছড়ায়;পরের কুৎসা গাইতে মানুষ মুখিয়ে থাকে;পরের কুৎসা মুখরোচক খাদ্য।
কুবেরের ঐশ্বর্য্য/ভাণ্ডার ধনাধিপতি যক্ষরাজা ধনদৌলত; অপরিমিত ধনসম্পদ।
কুব্জার মন্ত্রণা কুমন্ত্রণা; কৈকেয়ীর দাসী কুব্জার মন্ত্রণায় রাম বনবাসী হয়েছিলেন।
কুভোজ্যেন দিনং নষ্টম অখাদ্য খাবার খেলে সারাদিনটাই নানারোগে নষ্ট হয়ে যায়।
কুমির যখন জলে থাকে ডাঙায় ডিমে নজর রাখে মাতৃহৃদয়ের তুলনা নেই; মা জগতের শ্রেষ্ঠরূপা নারী।
কুমিরের সঙ্গে বিবাদ করে জলে/পানিতে বাস যার যেখানে প্রভুত্ব, সেখানে তার সাথে বিবাদ করে বাস করা যায় না।
কুম্ভকর্ণ নিদ্রাগত ভীষণ অলস যে বেশিরভাগ সময় ঘুমিয়ে কাটায়।
কুম্ভকর্ণের নিদ্রা মড়ার মত ঘুম যে ঘুম সহজে ভাঙানো যায় না; (উৎস্কাহিনী- ব্রহ্মার বরে কুম্ভকর্ণ ছয়মাস ঘুমাতো এবং একদিন জাগতো; যুদ্ধের কারণে অসময়ে সেই ঘুম ভাঙ্গাতে শেষপর্যন্ত মত্তহাতীর সাহায্য নিয়ে হয়েছিল; তার থেকে 'কুম্ভকর্ণের নিদ্রা' প্রবাদটির উতপত্তি হয়েছে)।
কুম্ভকর্ণের নিদ্রাভঙ্গ দীর্ঘকাল ধরে অবহেলিত কোন সরকারি কাজে সহসা হাত পড়েছে।
কুয়ো হয় আমের ভয়, তাল তেঁতুলের কিছুই নয়– খনা কুয়াশা আমের বৌল নষ্ট করে; তাল তেঁতুলের করে না।
কুরূপা নারী পতিব্রতা কারে পড়ে মানুষ সৎ সাজে; সমতুল্য- 'বৃদ্ধা বেশ্যা তপস্বিনী'।
কুর্যাৎ ক্ষীরান্তরাহারম দধ্যন্তং ন কদাচন (স্বাস্থ্যের কারণে) দুধ খেয়ে খাওয়া শেষ করতে হয়; দই খেয়ে খাওয়া শেষ করা কখনো নয়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'লবণান্নকটুঞ্চানি বিদাহীনি যাতি চ তু, তদ্দোষং হর্তুমাহারং মধুরেণ সমাপয়েৎ'।
কুল রাখি না শ্যাম রাখি উভয়সঙ্কটে পড়া; ভালমন্দ বিচারে দ্বিধা।
কুলায়/কুলোয় শুয়ে তুলায়/তুলোয় করে দুধ খায় শিশুর মত অতি সরল, যেন কিছু জানে না- এমন কপটব্যক্তির প্রতি বিদ্রুপোক্তি; (গ্রামে নবজাত শিশুকে কুলায় শুইয়ে রোদে রাখা হতো এবং তুলার পলতের একপ্রান্ত দুধের বাটিতে ও অপরপ্রান্ত শিশুর মুখে দিয়ে দুধ খাওয়ানোর প্রথা এই ব্যঞ্জনা।)
কুশিক্ষিত হওয়া থেকে অশিক্ষিত থাকা ভাল বদনাম দোষণীয়, অজ্ঞানতা কোন দোষের নয়।
কুসংবাদ বাতাসের আগে ছোটে/ধায় বাজে খবর লোকের কানে আগে ছড়ায়।
কুসঙ্গে থাকার চেয়ে একা/সঙ্গীহীন থাকা ভাল তাতে বদনাম কুড়াবার ভয় থাকে না; সমতুল্য- 'দুষ্ট গরু থেকে শূন্য গোয়াল ভাল'; বিরুদ্ধ উক্তি- 'নেই-মামার চেয়ে কানামামা ভাল'।
কূপোদকং বটচ্ছায়া শ্যামা স্ত্রী ইষ্টকালয়ম্। শীতকালে ভবেদুফ গ্রীষ্মকালে চ শীতলম্।। (চাণক্য) কূপের জল, বটগাছের ছায়া, মধ্যযৌবনে উপনীত স্ত্রী এবং ইটের তৈরি বাড়ি- এগুলি শীতকালে উষ্ণ থাকে আর গ্রীষ্মে থাকে শীতল।
কৃতং কর্ম শুভাশুভম (শুভ ও অশুভ যাই হোক) সব কৃতকর্মের ফলভোগ করে যেতে হবে।
কৃতঘ্ন বিশ্বাসঘাতকের ইহকালও নেই পরকালও নেই বিশ্বাসঘাতকের কোনদিন ভাল হয় না; সমতুল্য- 'অকৃতজ্ঞের নরকবাস'।
কৃতজ্ঞ কুকুর অকৃতজ্ঞ মানুষ অপেক্ষা শ্রেয় কুকুরের কৃতজ্ঞতাবোধ মানুষ থেকে অনেক বেশি; সমতুল্য- যতই মানুষকে দেখছি ততই কুকুরকে ভালো লাগছে।
কৃতস্য করণং নাস্তি, মৃতস্য মরণং যথা। গতস্য শোচনা নাস্তি ইতি বেদবিদ্যাং মতম॥ (চাণক্য) পণ্ডিতগণ বলে থাকে- মৃতব্যক্তির যেমন পুনরায় মরণ নেই, তেমনিই কৃতকর্মের আর করণ নেই; অর্থাৎ যা গত হয়েছে তার জন্য শোক করে লাভ নেই।
কৃপণের মত দাতা নেই নিজে ভোগ না করে পরের ভোগের জন্য সন অর্থ রেখে যায়।
কৃপণের ধন চোরে/বর্বরে/বাটপাড়ে খায় কৃপণ সৎকাজে অর্থ ব্যয় করে না; অথচ প্রবঞ্চকের পাল্লায় পড়ে সব অর্থ হারায়।
কৃপণের সন্তান অমিতব্যয়ী হয ভোগের অর্থ হাতে থাকলে অপব্যয়ে খামতি হয় না; সম্পর্কীত প্রবাদ- কেনারামের ছেলে ভোগীরাম'।
কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরুল তুচ্ছ বিষয় থেকে বিপজ্জনক পরিস্থিতির উদ্ভব হল; সামান্য বিষয়ের অনুসন্ধান থেকে গুরুতর বিষয় প্রকাশিত
কেঁচো দিয়ে কাতলা ধরা১ সামান্য উপকরণ দিয়ে বিরাট কাজ সম্পন্ন করা।
কেঁচো দিয়ে কাতলা ধরা২ একজনের সাহায্যে অন্যের অনিষ্ট করা।
কে একবার আমার হাত মুচড়েছিল মনে রাখি; কে দশবার আমার হাত ধরেছিল ভুল যাই চরম অকৃতজ্ঞতার প্রতি ইঙ্গিত।
কে কার ঝাড়ে বাঁশ কাটে কে কার কথা বিবেচনা করে; তুলনীয়- 'কা কস্য পরিবেদনা'।
কে তুমি হরিদাস পাল? কোন বিষয়ে কেউ কর্তৃত্ব ফলাতে গেলে ব্যঙ্গ করে তার প্রতি এই বাক্য উক্ত হয়; (উৎসকাহিনী- বিংশশতাব্দীর কল্পকাতার এক ধনাঢ্য প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন হরিদাস পাল)
কেউ কারো মিত্র নয় কেউ কারো শত্রু নয়, ব্যবহারে শত্রুমিত্র হয় হাত বাড়ালেই বন্ধু, হাত ছাড়ালেই শত্রু।
কেউ মরে, কেউ হরি হরি বলে একের দুঃখে অন্য আনন্দ করে' সমতুল্য- 'কারো পৌষমাস কারো সর্বনাশ'।
কেউ মরে বিল ছেঁচে, কেউ খায় কৈ একের পরিশ্রমের ফল অন্যের ভোগ করে; সমতুল্য- 'ইঁদুর গর্ত খুঁড়ে মরে সাপ এসে দখল করে'; 'উদবিড়ালে শিকার করে, খটাশ করে তিনভাগ'।
কেউই জ্ঞানী হয়ে জন্মায় না। শিক্ষায় জ্ঞান অর্জিত হয়।
কেনা চালে গোণা ভাত কম পড়লে যাবে জাত বাইরে কেনা খাওয়াতে অতিরিক্ত সতর্কতা প্রয়োজন।
কেন্দু (হলুদ রঙের ফল) গাছে কেন্নোটা (পোকা) উজ্জ্বলবর্ণের পোষাক পরে থাকা কালো কুৎসিত ব্যক্তির প্রতি কটাক্ষ।
কেবল মন দিয়েই মন জয় করা যায় গায়ের জোরে মন জয় করা যায় না।
কেবলং শাস্ত্রমাশ্রিত্য ন কর্তব্যো বিবির্ণয়ঃ কেবল শাস্ত্রের দোহাই দিয়ে কোন কাজ করা অনুচিত; কারণ যুক্তিহীন বিচারে ধর্মহানি হয়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'যুক্তিহীন বিচারে তু ধর্মহানি প্রজায়তেঃ'।
কেলেমাণিকের নাম গৌরাঙ্গসুন্দর বিসদৃশ নামকরণ; যা নয় তাই হবার ইচ্ছা।
কেল্লা/কিল্লা ফতে- আরবী প্রবাদ সফল কার্যোদ্ধার, সিদ্ধিলাভ
কেশব, গোপাল, হরিহরি, হরহর দেবতাদের নাম নিয়ে সোনারির সোনাচুরির ধান্ধাবাজি; (উৎসকাহিনী- তিলকধারী এক সোনারি ও তার কর্মচারী দোকান চালাতেন; একবার কিছুলোক গয়না কিনতে দোকানে আসে; তাদের প্রতি নমস্কার করে কর্মচারী বলে উঠলেন- কেশব, কেশব; কর্মচারী প্রশ্নচ্ছলে জানতে চায় কে সব? অর্থাৎ এরা কারা? মালিকও কপালে হাত ঠেকিয়ে বলে-গোপাল, গোপাল; মালিক প্রত্যুত্তরে জানায় এরা গরুর পাল অর্থাৎ বোকাসোকা লোক; কিছুক্ষণ পরে ওজন করার সময় গয়না মাথায় ঠেকিয়ে কর্মচারী আবার 'হরি হরি' বলে; আসলে সে জানতে চায় ওজনে চুরি করবে কিনা; মালিকও কপালে হাত ঠেকিয়ে বলে- হর হর; অর্থাৎ নিশিন্তে চুরি কর; খদ্দেররা ভাবল- এত ধার্মিক এরা, এদের উপর ভরসা করা যায়; বাস্তবে তারা ভুল ওজনে বেশী দাম দিয়ে ঠকে চলে গেল!)
কোঁদলে জাত নষ্ট বিবাদই সকল অনিষ্টের মূল।
কোকিলানাং স্বরো রূপম্ নারীরূপং পতিব্রতম্। বিদ্যা রূপং কুরূপাণাং ক্ষমা রূপং তপস্বিনাম্॥ (চাণক্য) কোকিলের কণ্ঠস্বরই তার রূপ, পাতিব্রত্যই স্ত্রীর রূপ, কুৎসিত পুরুষের বিদ্যাই রূপ এবং তপস্বীদের ক্ষমাই রূপ।
কোকিলা বধু ছেলে ধরতে জানে না কোকিলা সন্তান প্রতিপালন করতে জানে না; ন্যাকামী করা বউয়ের প্রতি বক্রোক্তি।
কোণঠাসা ইঁদুর বিড়ালকে কামড়ায় বিপদে পড়লে দুর্বলও দুঃসাহসী হয়ে ওঠে।
কোথাও কিছু নাই খালি ফপরদালালি সেই সব মানুষ যারা কাজে কম কথায় বেশি তাদের প্রতি ব্যঙ্গোক্তি
কোথাকার জল কোথায় গড়ায়/মরে অনিশ্চিত পরিণতি; শুরু দেখে কাজের পরিণতি বোঝা যায় না; বিরুদ্ধ উক্তি- উঠন্তবৃক্ষ পত্রেই চেনা যায়'; 'উঠন্তিমূলো পত্তনিতেই চেনা যায়'; 'সকাল দেখে দিন কেমন যাবে জানা যায়'।
কোথায় আগরতলা আর কোথায় চৌকিরতলা দুই অসমবস্তুর মধ্যে তুলনা হয় না; পাঠান্তর- 'কোথায় অযোধ্যার রঘু আর কোথায় বাঁশবনের ঘুঘু'; 'কোথায় রাজাভোজ, আর কোথায় গঙ্গুতেল'; 'কোথায় রাণী ভবানী আর কোথায় ফুলী জেলেন'। ী
কোথায় রাম রাজা হবেন, না তার বনবাস সুদিনের পরিবর্তে দু্র্দিন; সুখের কল্পনা ভেঙে চুরমার; পাঠান্তর- 'কোথা রাম রাজা হবে, না কোথা রাম বনে যাব'।
কোথায় স্বর্গ, কোথা‌য নরক কে বলে তাহা বহুদূর;মানুষেরই মাঝে স্বর্গ-নরক মানুষেতে সুরাসুর (রেজাউল করিম) স্বরটা-নরক মানুষের কল্পনামাত্র; আচার আচরণের মাধ্যমে মানুষ তা ইহজগতে রচনা করে।
কোদাল পাড়লেই/মারলেই চাষ হয় না দক্ষতাবিনা কার্যসিদ্ধি/ফললাভ হয় না।
কোদালকে কোদাল বল১ নিজের সম্পর্কে লুকোচুরি করা নেই।
কোদালকে কোদাল বল২ সোজা কথা সরল ভাষায় বল, রঙ চড়িও না; স্পষ্ট কথা স্পষ্টাপষ্টি বল।
কোদালে কুড়ুলে মেঘ দেখিলে চাষিকে বলে বাগাগে হাল- খনা পূর্বপ্রস্তুতি থাকলে কাজকর্মে সহায়তা আসে।
কোদালের শিয়র কুড়ুলের পাশ, যে যাবে তার সর্বনাশ দুর্জনের সঙ্গ পরিত্যজ্য।
কোন কাজ অর্ধসমাপ্ত রাখা নেই অর্ধসমাপ্ত কাজ না-কাজের সামিল।
কোন কাজেই তাড়াহুড়ো করা নেই তাড়াতাড়িতে কাজে ভুলভ্রান্তি হয় এবং তাতে কাজ সম্পন্ন করতে দেরী হয়।
কোন কাজের শুরুটা বাজে হলে শেষটাও বাজে হয় সুন্দরভাবে শুরু করলে সুষ্টভাবে সম্পন্ন হয়।
কোন কাজের শেষ ফেলে রাখতে নেই কালে পেলে কোনকালে কাজ শেষ হবে না।
কোনকালে নাইকো গাই চালুনি নিয়ে দুইতে যাই না জানা কাজ করতে গিয়ে হাস্যস্পদ হলে এই প্রবাদ উক্ত হয়; সমতুল্য- কোন জন্মে ছিল না ডুলি আগে দুই পা তুলি।
কোনকালে নেই ষষ্ঠীপূজা একেবারে দশভুজা১ যে সাধারণ কাজ করে নি তার পক্ষে বিরাট কাজ করতে যাওয়ার মত অসম্ভব বা বিসদৃশ ব্যাপার।
কোনকালে নেই ষষ্ঠীপূজা একেবারে দশভুজা২ কৃপণের বৃহৎ ক্রিয়াকর্ম।
কোন খবর না-থাকাটাই সুখবর দুঃসংবাদ অজ্ঞাত থাকে না।
কোন জন্মে ছিল না ডুলি আগে দুই পা তুলি কোনকালে নাইকো গাইল চালুনি নিয়ে দুইতে যাই-এর অনিরূপ।
কোন্কালে/জন্মে হবে পো ন্যাকড়া-কানি তুলে থো দূর ভবিষ্যতে কোন কাজ হবে তার জন্য এখনি উদ্যোগ করা; আগাম পরিকল্পনা।
কোন মানুষই পুর্ণাঙ্গ নয় কোন মানুষই সর্বাঙ্গসুন্দর হতে পারে না।
কোন সংবাদ সুসংবাদ নয় কোন খবর না-থাকাটাই সুখবর; আসলে দুঃসংবাদ অজ্ঞাত থাকে না বা 'দুঃসংবাদ বাতাসে ছড়ায়।
কোন্ বা বিয়ে তার দুপায়ে আলতা নগণ্য কাজের জন্য় আড়ম্বরের আবশ্যকতা নেই।
কোন্ বে-আক্কেলে কয় সংসার আমার নয়? সংসার গড়তেই তো জগতে আসা।
কোমল ব্যবহার সংঘর্ষ এড়ায় মিষ্টি ব্যবহারে মানুষের মন জয় করা যায়।
কোম্পানীকা মাল দরিয়ামে ডাল১ সরকারি জিনিসের প্রতি দরদ নেই; (১৮৬১ সালের আগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী দেশ শাসন কর'ত।)
কোম্পানীকা মাল দরিয়ামে ডাল২ পরের জিনিসের অপচয়, হেলেফেলায় ব্যবহার; সমতুল্য- 'পরের ঘি পেলে প্রদীপে দেয় ঢেলে'; 'পরের জিনিস পায় হেগ পোঁদে খায়'।
কোয়লাকা ময়লা ছুটে যব্ আগ্ করে পর্‌বেশ আগুনে শুদ্ধ হলে কয়লার ময়লা যায়; জ্ঞানাগ্নিতে শুদ্ধ হলে মানুষের মনের অজ্ঞতা দূর হয়; সমতূল্য- 'কয়লা পুড়লে ময়লা যায়'।
কোয়লা ধোয়ে না উজ্‌রৈ লাশুন তজৈ না বোয় কয়লা ধুলে ময়লা যায় না; রসুন ধুলে গন্ধ যায় না; যার যা স্বভাব তা ছাড়ে না; বাংলা পাঠান্তর- 'কয়লা ছাড়ে না ময়লা'।
কোলটানা ছ নিজের দিকে টানা; 'ছ' অক্ষর লিখতে কোলের দিকে রেখাটা টানতে হয়।
কোহতিভারঃ সমর্থানাং সক্ষমব্যক্তির কাছে কোন কাজই কঠিন নয়।
অসুস্থ লোকেরা, যারা ভোগে বেশি তারা সুস্থ লোকেদের তুলনায় বাঁচে বেশি।
ক্রশ/ক্রুশের পিছনেই শয়তানের আস্তানা প্রদীপের নীচেই অন্ধকার; ভালো ও মন্দের সহাবস্থান; অবিমিশ্র কিছু হয় না।
ক্রিয়া শব্দের চেয়ে বেশি জোরে কথা বলে কিছু বললে এবং কিছু করলে লোকেরা করাকাজকে মনে রাখবে, বলা-কথাকে মনে রাখবে না।
ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া আছে/থাকে অন্যের ক্ষতি করলে নিজেরও ক্ষতি হয়; সমতুল্য-'আঘাত করলে প্রত্যাঘাত খেতে হয়'; 'আয়না যেমুখ দেখে সেইমুখ দেখায়'; 'ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়';'চড় মারলে চড় খেতে হয়'; 'ধ্বনির প্রতিধ্বনি আছে/থাকে' ইত্যাদি।
ক্রোধ এবং ঘৃণা সুপরামর্শের পক্ষে বাধাস্বরূপ রিপু মানুষকে অন্ধ করে; জ্ঞানর্জনে বাধা সৃষ্টি করে।
ক্রোধের প্রকাশ দৃষ্টিতে; গুণের প্রকাশ শিষ্ট আচরণে আচরণে মানুষ চেনা যায়।
ক্রোধো বৈবস্বতো রাজা মানুষের ক্রোধ কৃতান্তস্বরূপ।
ক্ষতে প্রহারা নিপতন্তি আঘাতপ্রাপ্ত জায়গায় বারবার আঘাত লাগে; তুলনীয়- 'আপৎসু বৈরাণি সমুদ্ভবন্তি'; 'ছিদ্রেস্বনর্থা বহুলী ভবন্তি'; 'ধনক্ষয়ে মুর্ছতি জাঠরাগ্নি'।
ক্ষমা পরমোধর্মঃ ক্ষমার মত ধর্ম নেই।
ক্ষমাই যদি করতে না পার, তবে তাকে ভালোবাস কেন? (রবীন্দ্রনাথ) ভালবাসার লোককে সহজে ক্ষমা কয়ড়া যায়
ক্ষমার বড় গুণ নাই, দানের বড় পূণ্য নাই ক্ষমাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম এবং দানই শ্রেষ্ট কর্ম।
ক্ষিপ্রতা শয়তানের পছন্দ , করুণাময় ঈশ্বরের পছন্দ ধৈর্য শয়তান সবসময় আগ বাড়িয়ে থাকে, করুণাময় ঈশ্বর সবসময় সহিষ্ণু।
ক্ষীণে কস্যাস্তি গৌরবম্‌ দুর্বল কোথায় গৌরব অর্জন করে থাকে? সকলেই সবলের সহায়ক; সমতুল্য- 'বীরভোগ্যা বসুন্ধরা'।
ক্ষুদ খেয়ে পুঁজি করে দুপুরুষে খরচ করে কার্পণ্যের প্রতি ব্যঙ্গোক্তি।
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালিকণা বিন্দু বিন্দু জল গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল সব বিশাল সৃষ্টি অসংখ্য ক্ষুদ্রের সমষ্টিতে গড়ে উঠে।
ক্ষুদ্র শরীরে একটি বিরাট আত্মা বাস করে আত্মার সীমা পরিমাপ করা যায় না।
ক্ষুধা/ক্ষিদে থাকলে নূন দিয়েও ভাত খাওয়া যায় আগে পেট পরে রসনা; ক্ষিদের কোন পছন্দ-অপছন্দ নেই।
ক্ষুধা/ক্ষিদে পেলে দুহাতে খেতে চায় জঠরজ্বালা মানুষকে জ্ঞানশূন্য করে।
ক্ষুধার/ক্ষিদের কোন জাত নেই ক্ষিদের বাছবিচার নেই।
ক্ষুধার/ক্ষিদের চোটে পাটকেল কামড়ায়১ ক্ষিদের জ্বালায় অভক্ষ্যও খাদ্য হয়।
ক্ষুধার/ক্ষিদের চোটে পাটকেল কামড়ায়২ প্রয়োজনর সময় যা পাওয়া যায় তাই নিতে হয় ভালোমন্দ বাছবিচার চলে না।
ক্ষুধার্ত পাকস্থলীর জিভ থাকে না ক্ষিদের পছন্দ-অপছন্দ নেই; ক্ষিদের পেট বাছবিচার করে না।
ক্ষুধার্ত পেটের কান নেই ক্ষুধার্ত পেট কোন বাধা নিষেধ শোনে না, মানে না।
ক্ষুরে ক্ষুরে দণ্ডবৎ ব্যঙ্গার্থে- পরোক্ষভাবে অপরকে পশু বলে তার নিকট নিষ্কৃতি প্রার্থনা
ক্ষুরের ধার ছুঁতে কাটে তীক্ষ্ণাধার বস্তু নিয়ে নাড়াচাড়া করা নেই।
ক্ষেত্রে কর্ম বিধিয়তে ক্ষেত্র বিচার করে কাজের বিধান হয়।
ক্ষেপই হারে, জনম হারে না মানুষ একবারই ঠকে; সারাজীবন ধরে ঠকে না।

প্রবাদ-প্রবচন অর্থ
খইয়ের বন্ধনে পড়া এমন বাধাবিঘ্নের মধ্যে পড়া যে সহসা তার থেকে নিস্কৃতি পাওয়া কঠিন; কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা; (উৎসকাহিনী- এক তাঁতী ঘরের খুঁটি ধরে দাঁড়িয়ে ছিল; সেই সময় তাকে খই খেতে দিলে সে খুঁটিটাকে মধ্যে রেখে দুহাত পেতে খই গ্রহণ করে; তার ভাবনা হয় হাত সরালে খই পড়ে যাবে; আবার খুঁটি কাটলে ঘরের চাল পড়ে যাবে; এই কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থাকে প্রবাদে খইয়ের বন্ধনে পড়া বলে।
খঞ্জনের নাচ দেখে চড়ুইয়ের নাচ অক্ষমের উচ্চাশা; অনুকরণপ্রিয়তা; উৎকৃষ্টকে অনুকরণ করে নিকৃষ্টের হাস্যাস্পদ হওয়া; সমতুল্য- 'এঙ লাফায় বেঙ লাফায় চেঙ বলে আমিও লাফাই'; ময়ূরের নৃত্য দেখে ছাতারের নাচ'।
খড় কেটে বন উজাড় বসতি স্থাপন করতে গিয়ে প্রাকৃতিক সঙ্কট সৃষ্ট।
খড়ম পায়ে দিয়ে গঙ্গা পার অসাধ্যসাধন করার ব্যর্থপ্রয়াস।
খড়ের আগুন যেমনি জ্বলে তেমনি নেভে বদরাগীর রাগ চড়তে দেরী হয় না, আবার পড়তেও দেরী হয় না; কাজে উৎসাহ তাড়াতাড়ি আসে, আবার তাড়াতাড়ি উবেও যায়।
খড়ের গাদায় সূচ খোঁজা অসাধ্যকাজে নিয়োজিত হওয়া; অসম্ভব কাজ যা হবার নয়; সমতুল্য- 'অন্ধকারে উকুন বাছা'; 'অন্ধকারে কালো বিড়াল খোঁজা' ইত্যাদি
খনা ডেকে বলে যান, রোদে ধান ছায়ায় পান আলোতে ধান এবং ছায়াতে পানের চাষ করতে হয়।
খয়রাত ঘর থেকে শুরু হয় আগে ঘর সামলাতে হয়, পরে অপরকে দেখার প্রশ্ন আসে; সমতুল্য- 'আগে ঘর পরে পর ঘর সামালে পরকে ধর'।
খয়ের খাঁ প্রভুর হিতৈষী; প্রভুর তুষ্টির জন্য অন্যের সর্বাধিক অনিষ্ট করতে পারে।
খরনদীতে চর পড়ে না সতেজ মনে কলুশ জমে না; সমতুল্য- 'গড়ানো পাথরে শ্যাওলা ধরে না'।
খরচের আঁকে আনতে জমার আঁকে কুলায় না অর্থের টানাটানি; সমতুল্য- 'ডাইনে আনতে বাঁয়ে কুলায় না, 'নুন আনতে পান্তা ফুরায়' ইত্যাদি।
খল যায় রসাতল দুষ্টের পরিণতি ভাল হয় না।
খলঃ করোতি দুর্বৃত্তং, নূনং ফলতি সাধুষু দুষ্টের দুস্কৃতির ফল সঙ্গদোষে সাধুকে ভোগ করতে হয়।
খলঃ কেন নিবার্যতে দুর্জনকে কে নিবৃত্ত করবে; দুর্জনের সাথে পারা যায় না।
খলের ছলের অভাব হয় না ছলচাতুরীতে খল ভারী ওস্তাদ; কার্যসিদ্ধির জন্য দুষ্টের উপায়ের অভাব হয় না; সমতুল্য- 'দুষ্টের আটারোগাছি পথ'।
খাঁচায় পুরে খোঁচা মারে আয়ত্তে এনে অত্যাচার করে; দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার।
খাঁচার পাখি গান গায় না অধীনের মনে আনন্দ থাকে না।
খাঁদা নাকে নথ গোদা পায়ে মল বিশ্রী বেমানান সাজ; যে সাজে মানায় না সেইরকম সজ্জা করলে এই প্রবাদ বলা হয়; পাঠান্তর- 'খাঁদা নাকে তিলক কাটা'; 'খাঁদা নাকে গোঁফের বাহার'।
খাই দাই কাঁসি/বাঁশি বাজাই কারো খবর রাখি না খেদেদেয়ে সুখেই আছি, দুশ্চিন্তায় মাথা খারাপ করি না; সাদাসিদেলোক কোন ঝুটঝামেলার মধ্যে নেই; (উৎসকাহিনী- একব্যক্তি কবির লড়াইয়ে ঢুলির সাথে কাঁসি বাজাতো; একদিন কোনস্থানে কবি গাওনের পর এক শ্রোতা তাকে জিজ্ঞাসা করে, হ্যাঁ হে কাল নাকি কবির সাথে ঢুলির খুব কচালি হয়েছিল?' সে উত্তরে বলে, 'আমি খাইদাই কাঁসি বাজাই কচালির ধার ধারি না'; যে লোক নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে পরের বিষয়ে নাক গলায় না তারক্ষেত্রে এই প্রবাদ প্রযোজ্য হয়; পাঠান্তর-'খাই দাই কাঁসি বাজাই, কারো ধার ধারি না'।
খাই দাই তবলা বাজাই দুদিন বইতো নয় ক্ষণস্থায়ী জীবনে সুখ করে নাও; সমতুল্য- 'হেসে খেলে নাও দুদিন বইতো নয়, কে জানে কখন কার সন্ধ্যে হয়'।
খাই দাই ভুলি না তত্বকথা ছাড়ি না১ সংসারে থেকেও ধর্মচর্চা করা যায়।
খাই দাই ভুলি না তত্বকথা ছাড়ি না২ আমাকে খাইয়ে পড়িয়ে যতই ভোলাও না কেন ঈপ্সিত লক্ষ্য থেকে

আমি সরছি না।

খাই না-খাই আছি ভালো ভাঙাঘরে চাঁদের আলো নিজেকে নিয়ে নিরন্নের রসিকতা; পেটে ভাত নেই, তবু ভাঙা ঘরে চাঁদের আলোয় তার দিলখুশ।
খাওয়ার বেলায় আগে কাজের বেলায় ভাগে সুবিধাবাদী আচরণ; 'খাবার বেলায় আগে'- দ্রষ্টব্য
খাওয়ার সাথে খিদে আসে খিদে না হলে খাওয়া নেই- বৈদ্যের বিধান; খিদে না থাকলে সন্দেশও বিস্বাদ।
খাওয়াবে হাতির ভোগে দেখবে বাঘের চোখে ছেলে মানুষ করার স্বীকৃত পদ্ধতি; সন্তানকে ভাল খাওয়াবে কিন্তু কঠোর শাসন করবে; শ্রেষ্ঠ শিক্ষা গৃহে শুরু হয়।
খাচ্ছিল জেলে জাল বুনে কাল হল তার হালের গরু কিনে১ অভ্যস্ত কাজ ছেড়ে অনভ্যস্ত কাজে হাত দিলে ফল ভালো হয় না; পাঠান্তর- 'খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে কাল হল তার এঁড়ে গরু কিন'; 'খাচ্ছিল আবদুল চাষ করে ছিল ভাল চৌকিদারির কাজ নিয়ে আবদুল মল'।
খাচ্ছিল জেলে জাল বুনে, কাল হল তার হালের গরু কিনে২ বেশি আশা করলে বেশি নিরাশা হতে হয়; অন্যের কথায় বেশি লাভের আশায় পেশা বদল করলে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়; সমতুল্য- 'অতি আশ সর্বনাশ'; 'অতিলোভে তাঁতী নষ্ট'; অতি আশায় মরে চাষা' ইত্যাদি।
খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি মূলকাজের চেয়ে অনাবশ্যক কাজে আড়ম্বর বেশি।
খাট ভাঙ্গলে ভূমিশয্যা শেষসম্বল নষ্ট হওয়ার আগে সতর্কবার্তা; যখন যেরকম অবস্থা সেইভাবেই মানিয়ে চলা; সমতুল্য- 'অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা'।
খাটে খাটায় লাভের গাঁতি, তার অর্ধেক মাথার ছাতি; ঘরে বসে পুছে বাত তার ঘরে হা-ভাত (খনা) যে ব্যক্তি কাজের লোকের সাথে খাটে সে পূর্ণফল পায়; যে ব্যক্তি কাজের লোকের ওপর নজর রাখে সে অর্ধেক ফল পায়; যে কাজ করে না, কাজে নজরও দেয় না তার ফললাভ শূন্য।
খাড়া-বড়ি-থোর থোর-বড়ি-খাড়া আগে-পরে একই রকম এবং বৈচিত্র্যহীন অবস্থা
খাণ্ডারের যোগ্য খাণ্ডারনী ভীষণ কুঁদুলেপ্রকৃতির লোকের ভীষণ কুঁদুলেপ্রকৃতির স্ত্রী; তুলনীয়- 'বাঘের যোগ্য বাঘিনী'
খানায় পড়লে হাতি চামচিকেতে মারে লাথি অসহায় অবস্থায় পেলে সকলেই তার সুযোগ নেয়।
খানে কে দাঁত অঔর, দিখানে কা দাঁত অঔর- হিন্দি প্রবাদ কিছু আছে যা করার জন্য দেখানোর জন্য নয়; আবার কিছু আছে

যা দেখানোর জন্য করার জন্য নয়, যেমন হাতীর দাঁত; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'মরদ কি বাত হাতী কা দাঁত'।

খাব না খাব না অনিচ্ছে, তিন রেক চাল একটা উচ্চে প্রথমে খাবো না, খাবো না বলে অনিচ্ছা প্রকাশ; শেষে একটা উচ্চে সিদ্ধ দিয়ে তিনরেক চালের ভাত খেয়ে ফেলা।
খাবার আগে/সময় শোবার চিন্তা আগাম ভাবনায় সতর্কতা; দুশ্চিন্তায় কাতর ব্যক্তির প্রতি বক্রোক্তি।
খাবার আছে চা'বার নেই, দেবার আছে নেবার নেই চুড়ান্ত ভারসাম্যহীনতা; চারিদিকে বিশৃঙ্খলা।
খাবার বেলায় আগে কাজের বেলায় ভাগে খাবার পেতে যত ঔৎসুক্য, কাজের বেলায় তত অনীহা; খেতে প্রস্তুত, সাহায্যে অপ্রস্তুত; পাঠান্তর- 'খাবার বেলায় নেবার মা উলুর বেলায় মুখে ঘা'; 'খাবার বেলায় বেশি বেশি কাজের বেলায় অষ্টরম্'। ভা
খায় না খায় সকালে নায়; হয় না হয় দুবার যায় তার কড়ি বদ্যি না খায় সকালে স্নান, দিনে দুবার মলত্যাগ করলে স্বাস্থ্য ভাল থাকে ফলে বদ্যি ডাকার প্রয়োজন হয় না।
খায় মালকোঁচা মেরে, ওঠে হাঁটু ধরে অপরিমিত আহার; মহাপেটুক।
খারাপ অজুহাত 'কিছু না'-এর চেয়ে ভাল   হাস্যকর অজুহাত হলেও কিছু তো একটা আছে।
খারাপ আপোস ভালো মামলা থেকে ভালো আপসে মামলার নিস্পত্তি হলে অর্থ ও সময়ের সাশ্রয় হয়।
খারাপ লোক খারাপ নামের চেয়ে ভাল বদনাম খুব দ্রুত ছড়ায় অপরদিকে খারাপলোক দ্রুত সর্বত্র পৌঁছাতে পারে না।
খারাপ শুরু খারাপভাবে শেষ হয় সতর্কভাবে কাজ শুরু করার পক্ষে চেতাবনী; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'এড়া কাজে বেড়া'; 'শুরু ভাল হলে অর্ধেক কাজ সম্পন্ন'; 'সব ভাল যার শেষ ভাল'।
খাল কেটে কুমির আনা // খাল কেটে বেনো জল ঢোকানো বাইরের বিপদ ঘরে ডেকে আনা; সমতুল্য- 'বাঁশ কেন ঝাড়ে আয় আমার ঘাড়ে'; 'সাধ করে শাল নেওয়া'।
খাল পার হলে কুমিরকে কলা বিপদ কেটে গেলে সবাই বীরপুরুষ; কার্যসিদ্ধি হয়ে গেলে লোকে উপকারীকে ভুলে যায়; পাঠান্তর- 'খাল পার হলে পাটনী শালা'; 'ঘাট পার হলে খেয়ানি শালা'।
খালি কলসি বাজে বেশি হালকাচরিত্রের লোক বেশি বকে; অন্তঃসারশূন্য ব্যক্তি বাহ্যিকভাবে তর্জন-গর্জন করে; সমতুল্য- ফোঁপরা ঢেঁকির শব্দ বড়'।
খালি কলসি বাজে বেশি ভরা কলসি বাজে না, রূপ নাই কইন্যার সাজন বেশি রূপের কইন্যা সাজে না সৌন্দর্যবৃদ্ধির জন্য- যার রূপ নেই তার অলঙ্কারের প্রয়োজন হয়; যার রূপ আছে তার অলঙ্কারের প্রয়োজন হয় না।
খালি দুয়া (দোয়া) করলে পুয়া (ছেলে) অয় (হয়) না বিনাপরিশ্রমে শুধু প্রার্থনাতে কার্যোদ্ধার হয় না; অনায়াসে কিছু পাওয়া যায় না; কিছু পেতে গেলে পরিশ্রম করতে হয়; সমতুল্য-'আগুন পোহাতে গেলে ধোঁয়া সইতে হয়'; 'কণ্টকবিনা কমল হয় না'; 'কষ্টবিনা কেষ্ট নাই'; 'গোলাপ তুলতে গেলে কাঁটা সইতে হয়'; 'নহি সুখং দুঃখৈর্বিনা লভ্যতে' ইত্যাদি।
খালি পেটে জল, ভরা পেটে ফল খালি পেটে জল খাওয়া নেই এবং ভরা পেটে ফল খাওয়া নেই- বৈদ্যের বিধান।
খালি বস্তা খাড়া থাকে না গুণহীন লোকের প্রতিষ্ঠা নেই।
খালি হাত চিলকে প্রলুব্ধ করে না১ আকর্ষণীয় বস্তু না থাকলে কেউ আকৃষ্ট হয় না।
খালি হাত চিলকে প্রলুব্ধ করে না২ কিছু পেতে গেলে কিছু দিতে হয়।
খালি হাত চিলকে প্রলুব্ধ করে না৩ যার কিছু নেই তার হারাবার কিছু নেই।
খিচুড়ি পাকানো কোন কাজ বিশৃঙ্খলভাবে উপস্থাপন করা।
খিড়কি দিয়ে হাতি গলে, সদরে দিয়ে ছুঁচ গলে না১ পিছনের খবর কেউ রাখে না; সামনের দিকেই যত কড়াকড়ি যত নজরদারি; পাঠান্তর- 'খিড়কি দিয়ে হাতি গলে, সদরে বাধে ছুঁচ'।
খিড়কি দিয়ে হাতি গলে, দরে দিয়ে ছুঁচ গলে না২ অজান্তে অনেক খরচ হয় জানতে খরচ করা কষ্টকর।
খিদে থাকলে নূন দিয়েও ভাত খাওয়া যায় আগে পেট পরে রসনা; সমতুল্য- 'খিদের কোন পছন্দ-অপছন্দ, বাচ-বিচার নেই'।
খিদে পেলে বাঘ ধানও খায খিদের জাতবিচার নেই; প্রয়োজন নিয়ম মানে না।
খিদে পেলে দুহাতে খায় জঠরজ্বালা মানুষকে পাগল করে; জ্ঞানশূন্য করে।
খিদেয় বাঘ লোকালয়ে খিদেয় মানুষ পাগল হয়।
খিদের কোন বাচ-বিচার নেই খিদের সময় কি ভক্ষ্য, কি অভক্ষ্য কেউ দেখে না।
খিদের চোটে পাটকেলে কামড় খিদের সময় কেউ ভক্ষ্য় বা অভক্ষ্যবিচার করে না।
খুঁট-আঁখুরে দেশের বালাই অল্পশিক্ষিতরা সমাজের বোঝাস্বরূপ; অল্পশিক্ষিতরা অনেক অশান্তির সৃষ্টি করে।
খুঁট আখুরে বরাখুরে অপদার্থ কোন কাজের নয় বলে গালি/তিরস্কার
খুঁটি না থাকলে ঘর আপনি পড়ে১ পরের শক্তিতে লড়া যায় না।
খুঁটি না থাকলে ঘর আপনি পড়ে২ সাহায্যকারী না থাকলে সংসারে দাঁড়ানো কষ্টকর।
খুঁটির গোড়ায় নেইকো মাটি, কিসে ঘর রবে খাঁটি- লালন ভাল মুরুব্বির থাকলে উন্নতি সহজ হয়।
খুঁটির জোরে ভেড়া নাচে/লড়ে১ 'খোঁটার জোরে মেড়া লড়ে'; 'খোঁটার বলে গাড়ল যুঝে'।
খুঁটির জোরে ভেড়া নাচে/লড়ে২ সহায়তা পেলে গুরুতর কাজে এগুনো যায়'
খুঁড়িয়ে বড় হওয়া নিম্নবিত্তলোকের উচ্চবিত্তের সমকক্ষ হওয়ার ব্যর্থ প্রয়াস।
খুচরো কাজের মুজরো নেই ছোট ছোট কাজের হিসাব দেওয়া যায় না।
খুদের জাউ পায় না ক্ষীরের জন্য কাঁদে১ যোগ্যতার বাইরে প্রত্যাশা করা।
খুদের জাউ পায় না ক্ষীরের জন্য কাঁদে২ দরিদ্রের উচ্চাভিলাষ।
খুব কাছে ভালো নয়; খুব দূরে নিস্ফলা মধ্যপন্থা শ্রেষ্টপন্থা; ভাল নয় অতিশয়।
খুরে খুরে দণ্ডবৎ ব্যঙ্গার্থে- পরোক্ষভাবে উদ্দিষ্টকে পশু বলে তার নিকট নিষ্কৃতি প্রার্থনা
খুশখবরের ঝুটাও ভাল তাতে মন খুশি থাকে।
খেঁকিকুকুরের ঘেউ ঘেউ সার নগণ্যের কোন গুরুত্ব নেই।
খেতে দিলে/পেলে শুতে চায় সুযোগ পেলে আরও সুযোগ খোঁজে; আকাঙ্ক্ষার শেষ নেই।
খেতে দেবার মুরোদ নেই, কিল মারার গোঁসাই ভালো করতে পারে না মন্দ করতে মুখিয়ে আছে।
খেতে পায় না পুঁটি হাতে পরে আংটি দরিদ্রের বাহ্যাড়ম্বর; সমতুল্য- ভিতরে ছুঁচোর কীর্তন, বাইরে কোঁচার পত্তন'।
খেতে পারি দিতে পারিনা আত্মসর্বস্ব/সঙ্কীর্ণমনা ব্যক্তি; যে নিতে পারে দিতে পারে না।
খেতে ভাল ভাজা-চাল, দেখতে ভাল মুড়ি; রসে ভাল একছেলের মা, দেখতে ভাল ছুঁড়ি ভাজা-চাল দেখতে ভাল নয়, কিন্তু খেতে ভাল; মুড়ি দেখতে ভাল কিন্তু খেতে তেমন নয়; একইভাবে এক সন্তানের মা রসিকতায় ভাল, কিন্তু দেখতে অল্পবয়স্কা নারীই ভাল।
খেদাই না তোর উঠান চষি১ কড়াকথা ঘুরিয়ে বলা।
খেদাই না তোর উঠান চষি২ মুখে কিছু না বলে কার্যতঃ ক্ষতি করা।
খেয়ার কড়ি গুণে দিয়ে সাঁতরে নদী পার সুযোগ নষ্ট করা হল; অর্থও ব্যয় করা হল, আবার পরিশ্রম করাও হল।
খেয়ে দেয়ে একাদশী আচারবিচারে আস্থা নেই।
খেয়ে যার হজম হয়, ব্যাধি তার দূরে রয় হজম হওয়া সুস্থতার লক্ষণ।
খেলতে জানলে কানা কড়ি দিয়েও খেলা যায় উপায়জ্ঞের কাছে উপায় কোন সমস্যা নয়; যে উপাদান পায় তাই দিয়েই সে সমস্যার সমাধান করে।
খেলে ধন পাতাল যায়, না-খেলে ধন আকাশ ধায় খেলে সম্পদ কাজে আসে; না-খেলে সম্পদ নষ্ট হয়।
খেল খতম পয়সা হজম যা বলার সব বলা হয়ে গেছে; বলার আর কিছু নেই; গল্প শেষ।
খেলে ধন পাতাল যায়, না-খেলে ধন আকাশ ধায় ভোগ করলে সম্পদ কাজে লাগে; না-খেলে সম্পদ নষ্ট হয়।
খেলোয়াড়দের চেয়ে দর্শকেরা বেশি খেলা দেখে- চীনা প্রবাদ বাইরে থেকে সমস্যা বেশি অনুধাবন করা যায়।
খৈয়ের বন্ধনে পড়া১ উভয়সঙ্কটে পড়া; (খইয়ের বন্ধন দ্রষ্টব্য)
খৈয়ের বন্ধনে পড়া২ নির্বুদ্ধিতার জন্য কষ্টে পড়া।
খোঁড়ার পা গর্তে পড়ে অসহায়ের পদেপদে বাধা; যার যে বিষয়ে বিপদের আশঙ্কা, সে সেই বিপদেই পড়ে; পাঠান্তর- 'ভাঙা পা খানায় পড়ে'।
খোদা পহাড় নিকলী চুহিয়া কঠিন পরিশ্রমে অল্পপ্রাপ্তি; বাংলা পাঠান্তর- 'পর্বতের মুষিক প্রসব'।
খোদা যারে দেয় ছাদ ফুঁইড়াই দেয় কারো কারো ক্ষেত্রে ভগবানের অসীম করুণা অঝোরে ঝরে।
খোদায় মারে দোহাই দেবো কার প্রতিকারের কোন উপায় নেই; সমতুল্য- 'মারে কৃষ্ণ/হরি রাখে কে'।
খোদার উপর খোদকারী যোগ্য লোকের কাজে অযোগ্য লোকের অসঙ্গত হস্তক্ষেপ।
খোদার খাসি হৃষ্টপুষ্ট চেহারাযুক্ত লোক।
খোদার মার দুনিয়ার বার আল্লাহর বিধান অপ্রতিরোধ্য; সমতুল্য- 'মারে হরি রাখে কে
খোদার কর্ম খোদাই জানে কর্ম কি হবে তা কর্তাই জানে।
খোদার নাও দোয়ায় চলে সংসারের সবকিছুই তাঁর ইচ্ছার অধীন।
খোলা দরজা সাধুকেও প্রলুব্ধ করে আলগা পেলে সবাই সুযোগ নিতে চায়।
খোলা মুখে মাছি ঢোকে সতর্ক না থাকলে ক্ষতি হতে পারে।
খোলা শত্রুতার চেয়ে কপট বন্ধুত্ব বেশি খারাপ কপটতা খুবই নিন্দনীয়; কপট বন্ধুর থেকে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি থাকে।
খোশখবরের ঝুটাও ভাল মিথ্যা সুসংবাদ শুনলে আনন্দ হয়।
খোষে তৈল নাই কলাবড়ার সাধ যা পাওয়া সম্ভব নয় তা পাওয়ার আশা করা অন্যায়।
খ্যাপা শেয়াল, ভাঙা দেয়াল আর বড়লোকের খেয়াল- তিনই সমান তিনটিই সমান বিপজ্জনক- প্রথমটি কামড়াতে পারে; দ্বিতীয়টা আচমকা ভেঙে পড়তে পারে; এবং তৃতীয়জন জীবন ওষ্ঠাগত করে তুলতে পারে।

প্রবাদ-প্রবচন অর্থ
গঙ্গা গঙ্গা না জানি কত রঙ্গা চঙ্গা যা আমরা দেখি না তা বড়ই দুন্দর মনে হয়; সম্পর্কীত প্রবাদ- -অমৃত না জানি কি পদার্থ খেয়ে দেখি না জল'।
গঙ্গাজলে গঙ্গাপূজা১ গঙ্গাদশমীতে গঙ্গাস্নান করে গঙ্গাজলে গঙ্গাপূজা করা হয়।
গঙ্গাজলে গঙ্গাপূজা২ যার জিনিস তাকেই দান; তাকে দিয়েই তার তুষ্টিবিধান; পরের অর্থে পরোপকার; পরের ওপর দিয়ে চলা।
গঙ্গাজলে গঙ্গাপূজা৩ কোন কাজের লাভ থেকে সে কাজ চালানো; বিনাব্যয়ে কার্যসিদ্ধি; সমতুল্য- 'মাছের তেলে মাছ ভাজা'।
গঙ্গাজলে ধুলেও কলঙ্ক যায় না কলঙ্ক যাবার নয়; মরার আগে কলঙ্ক মোছে না' সম্পর্কীত প্রবাদ- 'ইল্লত যায় না ধুলে স্বভাব যায় না মলে'।
গঙ্গা মড়া আলেন না১ যতই মড়া ফেলা হোক-না-কেন গঙ্গা বলেন না যে আমি আর বইতে পারছি না, আমি আর সইতে পারছি না; নীরবে সে বয়ে নিয়ে যায়।
গঙ্গা মড়া আলেন না২ নির্বিরোধী লোককে যে কাজই দাও-না-কেন সে অনিচ্ছা জানায় না।
গঙ্গায় ময়লা ফেললে গঙ্গার মাহাত্য যায় না নিন্দাবাদে মহতের মহত্ব নষ্ট হয় না; তুলনীয়- 'কাকে গু খেয়ে মুখ ধুলে গঙ্গা অপবিত্র হয় না',
গঙ্গার জল গঙ্গায় রইল, পিতৃপুরুষ উদ্ধার হল বিনাপ্রয়াসে বিনাব্যয়ে কার্যসিদ্ধি; তর্পণের সময় গঙ্গার জল তুলে গঙ্গাতেই ফেলা হয়; এতে গঙ্গার জল গঙ্গায় থাকে, আবার পিতৃপুতুষও উদ্ধার পায়।
গঙ্গার দুকূল ভাঙে না এক কাজের দুই ফল একই হয় না; কিছু গেলে কিছু আসে; কিছু হারালে কিছু পাওয়া যায়।
গচ্ছন্‌ পিপীলকো যাতি যোজনানাং শতান্যপি। অগচ্ছন্ পিঁপড়ে চলতে থাকলে শত যোজন এগুতে পারে।
গজকচ্ছপী/ গজকচ্ছপের লড়াই অনর্থক ও অবিরাম ভাইয়ে ভাইয়ে কিংবা জ্ঞাতিদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বিবাদ। (উৎসকাহিনী- মহাভারতে উল্লিখিত এক ঋষি বড় বদরাগী ও সঙ্কীর্ণমনা ছিলেন; ধনসম্পদের উপর তাঁর খুব লোভও ছিল; সম্পত্তি ভাগ করতে তিনি ব্দেন ছোটভাইয়ের সাথে। কিন্তু ভাগ মনঃপুত না হওয়ায় ক্ষেপে গিয়ে ছোটভাইকে হাতি হবার অভিশাপ দিয়ে বসেন। ভাইও কন যান না; তিনি বড়ভাইকে কচ্ছপ হবার অভিশাপ দিয়ে দিলেন; পরস্পরের অভিশাপে পশুতে পরিণত হয়েও চেতনাশূন্য হয়ে তারা অবিরাম অমিমাংসিত লড়াই চালিয়ে গেলেন; এই কাহিনী থেকে এই প্রবাদের সৃষ্টি হয়।
গজভুক্তকপিত্থবৎ১ সবার অলক্ষ্যে গজনামক পোকা খেয়ে যেভাবে কয়েৎবেলকয়ে সারশূন্য করে সেইভাবে লক্ষ্মী সবার অলক্ষ্যে ঘর ছেড়ে চলে যান; তুলনীয়- 'ভস্মাচ্ছাদিতবহ্নিবৎ'; ‘ মেঘান্তরিতরৌদ্রবৎ’; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'নির্গচ্ছতি যদা লক্ষ্মীর্গজভুক্তকপিত্থবৎ'।
গজভুক্তকপিত্থবৎ২ গজনামক পোকায় খাওয়া সারশূন্য শূন্যগর্ভ কয়েৎবেলের মত অন্তঃসারশূন্য অবস্থা/ব্যক্তি।
গজমাত্রেই মোতি থাকে না সব মানুষ মহৎ হয় না।
গড্ডলিকা প্রবাহ১ ভেড়ার পালের মত একের অন্যকে অনুসরণ; ভালোমন্দ না বুঝে অন্ধভাবে অনুসরণ।
গড্ডলিকা প্রবাহ২ গতানুগতিকতা; প্রচলিত ধারার অনুগামিতা।
গড়তে চায় ঠাকুর হয়ে যায় কুকুর ভালো করতে চায় কিন্তু মন্দ হয়ে যায়।
গড়তে যত সময় লাগে ভাঙ্গতে তত সময় লাগে না সৃষ্টির ছন্দ অতি ধীর; ধ্বংস চোক্ষের পলকে শেষ।
গড়ানো পাথরে শ্যাওলা ধরে না১ অস্থিরমতির সঞ্চয় হয় না।
গড়ানো পাথরে শ্যাওলা ধরে না২ এক জায়গায় থিতু না হয়ে যে ব্যক্তি ঘন ঘন পেশা পরিবর্তন করে সে কখনো জীবনে সাফল্য লাভ করে না।
গড়ানো পাথরে শ্যাওলা ধরে না৩ গতিশীল মনে ময়লা জমে না; সমতুল্য-'খরনদীতে চর পড়ে না'।
গড়িমসিতে সময় চুরি যায় আজ নয় কাল করে সময় নষ্ট হয়; গয়ংগচ্ছভাবে অযথা সময় বয়ে যায়।
গণ্ডূষজলমাত্রেণ সফরী ফর্ফরায়তে১ অল্পজলে সফরী লাফিয়ে বেড়ায়; মূলপ্রবাদ- 'অগাধজলসঞ্চারী বিকারী ন চ রোহিতঃ, গণ্ডূষজলমাত্রেণ সফরী ফর্ফরায়তে'।
গণ্ডূষজলমাত্রেণ সফরী ফর্ফরায়তে২ অল্পশিক্ষিতরা বেশি বিদ্যার জাহির করে।
গতর নেই চোপায় দড়, মেঙ্গে খায় তার পালি (পঙ্‌ক্তি) বড় অক্ষমের গলার জোর বেশি; কাঙালীভোজনে লম্বা লাইন পড়ে।
গত্র পোষা পরিশ্রম না করা; অলসভাবে জীবন কাটানো।
গতস্য শোচনা নাস্তি যা গেছে তা গেছে; তারজন্য অনুশোচনা করে লাভ নেই।
গদাইলস্করী চাল এক গদাই লস্কর নামক বিপুল আকৃতির এক ধনীব্যক্তির মন্থরগতি ও কাজকর্মে ক্ষিপ্রতার অভাব থেকে 'গদাইলস্করী চাল' প্রবাদটির উতপত্তি হয়েছে।
গন্ধবিহীন শিমুলফুল সুন্দর হ’লেও আদরণীয় নয় গুণহীন বাহারিবস্তুর কোন আকর্ষণ নেই।
গন্ধমাদন বয়ে আনা কাউকে একটা জিনিস আনতে বললে সে দশটা জিনিস নিয়ে আসে।
গব্য থাকলে আগে পাছে কী করবে তার শাকে-মাছে? আগে ঘি পরে দুধ থাকলে শাক মাছের প্রয়োজন হয় না।
গভীর জলে কাৎলা নিঃসাড়ে চলে; অল্প জলে সফরী ফরফরায় জ্ঞানীরা বিদ্যা জাহির করে না; অল্পজ্ঞানীরা বিদ্যা জাহির করে বেড়ায়; সংস্কৃত পাঠান্তর- 'অগাধজলসঞ্চারী বিকারী ন চ রোহিতঃ, গণ্ডূষজলমাত্রেণ সফরী ফর্ফরায়তে'।
গভীর জলের মাছ অচঞ্চল স্থিরবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি; অনেক বুদ্ধি ধরে; অত্যন্ত ধূর্ত ও চাপাস্বভাবের লোক; যার ক্রিয়াকলাপের উদ্দেশ্য বোঝা দুষ্কর।
গভীর নদী ধীরে/নিঃসারে বয় জ্ঞানীমানুষেরা চিন্তাভাবনা করে ধীরসুস্থে কাজ করে।
গয়ার পাপ/ভূত বিদায় করা গয়ায় পাপ করলে সহজে সেই পাপ খণ্ডন করা যায় না; যাকে সহজ বিদায় করা যায় না, তাকে বিদায় করা।
গরজ বড় বালাই১ প্রয়োজনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য; প্রয়োজনের দাবি না মিটিয়ে উপায় নেই।
গরজ বড় বালাই২ প্রয়োজন হলে মানুষ দুস্কর্ম করতেও পিছুপা হয় না।
গরজে গঙ্গাস্নান দায়ে পড়ে পূণ্যকর্ম করা; স্বার্থের জ্বালা বড় জ্বালা; সমতুল্য- 'গরজ বড় বালাই'।
গরজে গয়লা ঢেলা বয় প্রয়োজনের জ্বালা বড় জ্বালা; গয়লার বাঁকে যদি একদিকে হাঁড়ি থাকে তবে ভারসাম্য রাখার জন্য অন্যদিকে ইঁটপাথর রাখে; অর্থাৎ আবশ্যক হলে পরিশ্রমসাধ্য অনাবশ্যক কাজও করতে হয়; সমতুল্য- 'দোয়া গাইয়ের চাঁট সই'।
গরব কর যৌবনভরে, কাঁদিতে হবে অঝোর ঝরে যৌবন ফুরিয়ে গেলে নানা দুস্কর্মের কথা মনে পড়বে; তখন এবং তারজন্য অনুশোচনা করতে হবে।
গরম অম্বল ঠাণ্ডা দুধ যে খায় সে নির্বোধ দুইই স্বাস্থ্যের পক্ষে সমান হানিকর।
গরমজলে ছ্যাঁকা খাওয়া কুকুর জল দেখলে ভয় পায় বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা সতর্ক হতে শেখায়; পূর্বে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি সবসময় আতঙ্কগ্রস্ত থাকে; যে একবার ঠেকেছে সে দ্বিতীয়বার সেই কাজে এগোয় না; সমতুল্য- 'গরম দুধে যার মুখ পুড়েছে সে ফুঁ দিয়ে ঘোল খায়'; 'ঘরপোড়া গরু সিঁদুরেমেঘ দেখলে ভয় পায়'; 'চূন খেয়ে গাল পোড়ে, দই দেখলে ভয় করে'; দগ্ধ শিশু আগুন দেখলে ভয় পায়'; 'নেড়া বেলতলায় একবার যায়' ইত্যাদি।
গরম দুধ অমেয় মিঠা গরম দুধ অমৃতসমান; প্রাণবর্ধক।
গরমদুধে যার মুখ পুড়েছে সে ফুঁ দিয়ে ঘোল খায় 'গরমজলে ছ্যাঁকা খাওয়া কুকুর জল দেখলে ভয় পায়'-দ্রষ্টব্য
গরমভাতে ঘি ঢালা অপকার করার ছলে উপকার করা; শাস্তি দেবার ভান করে উপকার করা।
গরমভাতে বিড়াল বেজার, উচিৎকথায় বন্ধু বেজার কাউকে অপছন্দের জিনিস দিলে তার মন খারাপ; উচিৎকথা বললে বন্ধুর মন খারাপ।
গরানো পাথরে শ্যাওলা জমে/ধরে না সচল মনে জং ধরে না; সচল মনে ময়লা জমে না।
গরিব খোঁজে খাদ্য, ধনী খোঁজে খিদে গরিব খিদের জ্বালায় পাগল হয় আর ধনী খিদে না হওয়ার জ্বালায় পাগল হয়।
গরিবের কথা বাসি হলে ফলে/ সত্য হয় নগণ্যের কথায় কেউ গুরুত্ব দেয় না, কিন্তু পরে ঠেকে বুঝতে পারে আগে তার কথা শুনলে ভাল হতো।
গরিব মানুষ ফড়িং খায় ঘোড়ায় চেপে বাহ্যি যায় দুর্গতিতেও আড়ম্বর বজায় রাখার চেষ্টা।
গরিবের ঘোড়ারোগ পাওয়ার যোগ্য নয় তবু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা; সামর্থ নেই তবু ধার করে খরচ করে লোক দেখানো বড়লোকি করা; তুলনায়- 'গরিবের ঠাকুরব্যাধি'।
গরিবের ঠাকুরব্যাধি যে খেতে পায় না তার বাড়ীরে ঠাকুরসেবা করার মত অবস্থার অতিরিক্ত ব্যয়ের সাধ; তুলনায়- 'গরিবের ঘোড়ারোগ'।
গরিবের বৌ সবার ভাবি১ গরিবের মধ্যে অন্তরঙ্গতা/আন্তরিকতা বেশী থাকে।
গরিবের বৌ সবার ভাবি২ গরিবের কাছে সবাই একটু বেশি সুবিধা নেবার চেষ্টা করে।
গরিবের মরণ বিটকেল গরিব অনেক কষ্ট পেয়ে মারা যায়।
গরিবের মুড়কিই সন্দেশ নিজের অবস্থায় যা পাওয়া সম্ভব তাই পেয়ে সন্তুষ্ট থাকা; তুলনীয়- 'গরিবের রাঙ/রাঙ্‌তাই সোনা'।
গরিবের রাঙ/রাঙ্‌তাই সোনা১ খুব অল্পদামের জিনিসও গরিবের কাছে বহু মুল্যবান; যার যা আছে তাই তার কাছে অমূল্য়।
গরিবের রাঙ/রাঙ্‌তাই সোনা২ গরিব অল্পেতেই সন্তুষ্ট; তুলনীয়- 'গরিবের মুড়কিই সন্দেশ'।
গরু গামলার ঘাস খায় না সহজলভ্য জিনিসের আদর/কদর নেই; সমতুল্য- 'গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না'; পাঠান্তর- 'গরু গোয়ালের পাশের ঘাস খায় না'।
গরু ছাগলের মুখে বিষ১ মুড়ালে গাছের বৃদ্ধি হয় না।
গরু ছাগলের মুখে বিষ২ মুর্খের কথাবার্তা অশালীন।
গরু বাছুরে মিল থাকলে মাঠে গিয়ে দুধ দেয়১ দোহনকালে অনেক গরুর সব দুধ দেয় না কিছু লুকিয়ে রাখে; পরে মাঠে চরার সময় বাছুরকে দুধ খাওয়ায়; পারস্পরিক বোঝাপড়া থাকলে ফাঁকিতে কাজ করা যায়।
গরু-বাছুরে মিল থাকলে মাঠে গিয়ে দুধ দেয়২ মনের মিল বড় মিল।
গরু জরু ধান রাখো বিদ্যমান এই তিন সম্পদ নিজের আয়ত্বে রাখতে হয়; অপর হাতে পড়লে তা নষ্ট হয়।
গরু মেরে জুতো দান১ গরু মেরে তার চামড়ায় জুতা বানিয়ে ব্রাহ্মণকে দান; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'জুতো মেরে গরু দান'।
গরু মেরে জুতো দান২ জঘন্য অন্যায় কাজ করে প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে সামান্য প্রতিদান দেওয়া।
গরু মেরে জুতো দান৩ পাপকার্যের সাহায্যে পূণ্য অর্জনের চেষ্টা।
গরু যার গোবর তার অর্থ স্পষ্ট; তুলনীয়- 'লাঙল যার মাটি তার'।
গরুড়শয়ন দীর্ঘনিদ্রা; (উৎসকাহিনী- কশ্যপের তৃতীয় পত্নী বিনতা দুটি অণ্ড প্রসব করেছিলেন; একটি অণ্ড অকালে ভাঙা হয়; তাতে নিম্নাঙ্গ হীন অরূণের জন্ম হয়; দ্বিতীয় অণ্ড না ভেঙে শত বৎসর অপেক্ষা করা পর গরুড়ের জন্ম হয়); সমতুল্য- 'কুম্ভকর্ণের ঘুম'।
গর্জনওয়ালে বরষাতে নহীঁ যে বেশি কথা বলে সে বেশি কিছু করে না; সমতুল্য- 'যে মেঘ গর্জায় সে বর্ষায় না'।
গর্জায় কিন্তু বর্ষায় না ভয় দেখায় তবে ভয়ঙ্কর নয়।
গর্তে পড়লে বুদ্ধি গজায় বিপদ থেকে মানুষ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে; তুলনীোয়'; 'ধাক্কা খেলে সোজা হয়'।
গর্তের সাপ খুঁচিয়ে বার করা অনুপস্থিত বিপদকে কাছে ডেকে আনা।
গলা টিপলে দুধ বেরোয় শিশু পাকা পাকা কথা বললে এই প্রবাদ প্রযুক্ত হয়।
গলা ধরে কাঁদবে তবু মালা ছুঁতে দেবে না ক্ষেত্রবিশেষে একসাথে থাকলেও স্বার্থত্যাগ করে না।
গলায় কাঁটা ফুটলে বেড়ালের পায়ে ধরে/পড়ে বিপদে পড়লে নগণ্যের কাছেও সাহায্য চায়।
গলায় গলায় পীড়িত অতিমাত্রায় প্রীতি-ভালবাসা- বিদ্রুপচ্ছলে ব্যবহৃত।
গলার নীচে গেলে আর কিছু মনে থাকে না গলায় কাঁটা ফুটলে যন্ত্রণায় দেবতার কছে মানত করে; কাঁটা নেমে গেলেই মানতের কথা ভুলে যায়; কার্যোদ্ধার হয়ে গেলে মানুষ কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলে যায়; সমতুল্য- 'খাল পেরুলে পাটনী শালা'; 'গাঙ পেরুলে কুমিরকে কলা'; 'বিয়ে হয়ে গেলে ছাদনাতলায় লাথি' ইত্যাদি।
গল্প থেকে বাস্তবঘটনা বেশি বিস্ময়কর বাস্তব অনেকসময় কল্পনাকেও হার মানায়।
গল্প শেষ যা বলার বলা হয়ে গেছে, আর কিছু বলার নেই; সমতুল্য- 'অলমিতি বিস্তরেণ'; 'খেল খতম পয়সা হজম'।
গল্পের গরু গাছে চড়ে১ মুখেমুখে একটা কথা ঘুরলে ফুলেফেঁপে সেটা বিরাট আকার ধারণ করে; যতটা বলা হয় কার্যতঃ বিষয়টা অত গভীর নয়; তুলনীয়- 'যত কয় তত নয়'।
গল্পের গরু গাছে চড়ে২ বর্ণনায় রঙ চড়ানো না হলে ঘটনা সুন্দর হয় না; তুলনীয়- 'কল্পনার ডানা পাখা মেলে'।
গাই ছিল না হলো গাই চালুনি নিয়ে দুইতে যাই কোন বিষয়ে কারো অজ্ঞতা প্রকাশ পেলে তাকে ব্যঙ্গ করতে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়।
গাই নাই তো বলদ দুয়ে দে যেভাবেই হোক কোন কাজ করিয়ে নিয়ে পারিশ্রমিক দেওয়া; পাঠান্তর- 'গাই নাই তো বলদ দো'।
গাই নেবে দুইয়ে বলদ নেবে বেয়ে গুণ বিচার করে বস্তু নির্বাচন করা উচিত।
গাই বাছুরে পীরিত থাকলে মাঠে গিয়ে দুধ দেয 'গরু বাছুরে মিল থাকলে মাঠে গিয়ে দুধ দেয়'- দ্রষ্টব্য
গাইতে গাইতে গায়েন, বাজাতে বাজাতে বায়েন অধ্যবসায়ের ফলে দক্ষতা আসে; অভ্যাস দ্বিতীয় প্রকৃতি; মানুষ ক্রমে ক্রমে বিজ্ঞ হয়; সমতুল্য- 'ভবতি বিজ্ঞতম: ক্রমশো জন'।
গাইতে চাইলে বলতে শেখো সববিষয়েই আগাম প্রস্তুতি লাগে।
গাঁ নাই তার সীমানা অন্যায়/অবাস্তব দাবী; আদিখ্যেতা; বাড়াবাড়ি পর্যায়ের আকাঙ্খা; তুলনীয়- 'গাঁয়ের নাম তেঘরা, তার আবার উত্তরপাড়া, দক্ষিণপাড়া'; সংস্কৃত পাঠান্তর- 'নাস্তি গ্রাম্যঃ কুত সীমাঃ?'
গাঁ বড় তার মাঝের পাড়া; নাক নেই তার নাক নাড়া১ ছোটগাঁয়ে কয়েক ঘরের বাস; সেখানে একাধিক পাড়া থাকে না; অস্তিত্বহীন বস্তুর কল্পনা।
গাঁ বড় তার মাঝের পাড়া; নাক নেই তার নাক নাড়া২ নির্গুণব্যক্তির গুণের উল্লেখ।
গাঁ বড় তার মাঝের পাড়া; নাক নেই তার নাক নাড়া৩ বৃহতের ন্যায় ক্ষুদ্রের আস্ফালন।
গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল অন্যে স্বীকার করে োঁড়ে, তবুও নি প্রধান বলে মনে করে কর্তৃক ফলানোর হাস্যকর প্রয়াস; অযোগ্যব্যক্তির অপরের উপর অযাচিতভাবে কর্তৃত্ব করার চেষ্টা; আত্মম্ভরী ব্যক্তি।
গাঁয়ের গুণে গড়ে (অলস) গরু বিকোয় সবাই একযোগে বললে মিথ্যাও সত্য হয়।
গাঁয়ের নাম তেঘরা, তার আবার উত্তরপাড়া, দক্ষিণপাড়া নগণ্যের বাড়াবাড়ি, আদিখ্যেতা; অতি ক্ষুদ্রবস্তুর ভাগ হয় না; তুলনীয়- 'গাঁ নাই তার সীমানা'।
গাঙ পেরুলেই কুমীরকে কলা১ ভয় কাটলেই বীরপুরুষ।
গাঙ পেরুলেই কুমীরকে কলা২ কার্যোদ্ধার হয়ে গেলে মানুষ কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলে যায়; তুলনীয়-

'গলার নীচে গেলে আর কিছু মনে থাকে না'।

গাঙে গাঙে দেখা হয়, বোনে বোনে দেখা নেই বহুদূর বয়ে গিয়ে দুটি নদীর মিলন সম্ভব, কিন্তু কখনো দুইবোনের মিলন সম্ভব নয়।
গাছ গুণে গোটা, গাই গুণে ঘি, বাপ গুণে বেটা মা গুণে ঝি গাছ ভালজাতের হলোে ফল ভাল হয়; গরু ভালজাতের হলোে ঘি ভালো হয়; বাবা-মা ভাল হলোে ছেলেরা বাবার এবং মেয়েরা মায়ের প্রকৃতি পায়।
গাছ থেকে পড়ে গেল জন পাঁচ সাত, যার যেখানে ব্যথা তার সেখানে হাত যার যেখান স্বার্থ তার সেখানে নজর; সমতুল্য- 'জুতা যে পরেছে সেই জানে কাঁটা কোথায় বিঁধছে'।
গাছ থেকে ফল ভারি নয় অখণ্ড থেকে খণ্ড বড় হয় না; যে যার থেকে উৎপন্ন সে তার থেকে বড় নয়।
গাছগাছালি ঘন রোবে না; গাছ হবে তার ফল হবে না- খনা আলো না পেলে গাছ ফলবতী হয় না।
গাছে উঠতে পারে না বড় আমটি আমার অক্ষমের অতিরিক্ত/অন্যায় আবদার।
গাছে উঠে পড়তে, জামিন হয় মরতে গাছে উঠলে পড়ার ভয় থাকে; জামিন হলেই অর্থদণ্ড দেওয়ার ভয় থাকে।
গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল১ গাছের কাঁঠাল গাছেই আছে, সেটা খেতে গেলে পাছে আঠা লাগে তাই আগের থেকেই গোঁফে তেল মাখানো হচ্ছে।
গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল২ পাওয়ার আগেই ভোগের আয়োজন; আগাম সুখকল্পনা; সমতুল্য- 'কালনেমির লঙ্কাভাগ'; 'রাম না হ্তে রামায়ণ'।
গাছে গাছে আগুন জ্বলে, বৃষ্টি হবে খনায় বলে- খনা বনাঞ্চলে আগুন লাগলে দ্বিগুণ বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে; পাঠান্তর- 'গাছে গাছে লাগলে আগুন বৃষ্টি হবে দ্বিগুণ দ্বিগুণ'।
গাছে চড়ানো অযথা প্রশংসা করা; চাটুবাক্যে গর্বিত করা; সমতুল্য- 'তোল্লাই দেওয়া'।
গাছে তুলতে সবাই আছে, নামাতে কেউ নেই বিপজ্জনক কাজে নামিয়ে দিতে সবাই তৎপর, কিন্তু বিপদে পড়লে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসে না।
গাছে তুলে মই কেড়ে নেওয়া বিপজ্জনক কাজে নামিয়ে উদ্ধারের উপায় বন্ধ করে কেটে/সরে পড়া; উৎসাহ দিয়ে কাজে প্রবৃত্ত করে অসহায় অবস্থায় ফেলে সরে দাঁড়ানো।
গাছে না উঠতেই এক কাঁদি১ কাজ নামার সঙ্গে সঙ্গেই অপ্রত্যাশিত কিছু ফলপ্রাপ্তি।
গাছে না উঠতেই এক কাঁদি২ কাজ নামার আগেই ফললাভের প্রত্যাশা; আগামা সুখকল্পনা।
গাছের পরিচয় ফলে আচরণই মানুষকে চেনায়; পাঠান্তর- গাছ তোমার নাম কি, ফলেন পরিচয়তে'।
গাছের ভয় বাতাসে, পদ্মের ভয় শিশিরে, সজ্জনের ভয় দুর্জনে প্রত্যেকেরই একটি করে ভয়ের যায়গা থাকে; ভয়মুক্ত কেউ নয়।
গাছেরও খায় তলারও কুড়ায়১ নিতান্ত স্বার্থপরের মত ব্যবহার।
গাছেরও খায় তলারও কুড়ায়২ সম্পদের সবটুকুই ভোগ করে; সব সুবিধাগুলি পেতে চায়।
গাছের দশটা থেকে পাতের একটাই ভাল সম্ভাব্য কোন বড়প্রাপ্তি থেকে নিশ্চিত এক ছোটপ্রাপ্তি অনেক ভাল; সমতুল্য- 'হাতের একটা পাখি বনের দুটি পাখির সমান'; 'হাতের জিনিস ফেলে দূরের জিনিস নিতে নেই'।
গাজনের নেই ঠিকানা, ডেকে/শুধু বলে ঢাক/বাজনা বাজা না কাজের কোন ঠিক নাই, শুধু আসর গরম করে; তুলনীয়- বর-কনের দেখা নেই শুক্কুরবারে বিয়ে'।
গাজীসাহেবের মোরগ, পেটে গেলেও ডাক দেয় যে জিনিস আত্মসাৎ করা অসম্ভব সেইক্ষেত্রে এই প্রবাদ প্রযোজ্য।
গাড়িপর লা (নৌকা) লাপর গাড়ি কখনো গাড়ির উপর নৌকা কখনো বা নৌকার উপর গাড়ি; অবস্থা সবসময় সমান থাকে না; সমতুল্য- 'চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়'
গাড়ী কিনতে গিয়ে বাড়ী বিক্রি সামান্য বিষয়ে অসামান্য ব্যয়; তুলনীয়- 'ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রি'।
গাড়োয়ানের চুমকুড়ি গরুতে চেনে চেনাজানা লোক একে অপরকে বুঝতে পারে; সমতুল্য- 'সাপের হাঁচি বেদেয় চেনে'।
গাধা কি জানে কুসুমের গন্ধ/মধুর স্বাদ নির্গুণকে গুণের কথা বলা বৃথা।
গাধা জল ঘোলা করে খায় বোকা সুষ্ঠভাবে কাজ করতে অপারগ।
গাধা ডাকলে তুমিও তার সাথে ডেকো না বোকামিকে সমর্থন করা উচিৎ নয়, লোকে বোকা ভাবতে পারে।
গাধা পিটিয়ে ঘোড়া করা স্থূলবুদ্ধিসম্পন্নকে শিখিয়ে পড়িয়ে তীক্ষ্ণবুদ্ধিসম্পন্ন করার মত কঠিন কাজ করা।
গাধা পেটালে ঘোড়া হয় না শত ছেষ্টাতেও নির্বুদ্ধিকে বুদ্ধিমান করা যায় না; নির্গুণ গুণী হয় না; হেয় জিনিস হেয়ই থাকে মূল্যবান হয় না।
গাধা সকল বইতে পারে ভাতের কাঠি বইতে নারে যে খুব শ্রমসাধ্য কাজ করতে পারে সে সামান্য কাজে অক্ষমতা জানালে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়।
গাধা সিংহের ছাল পড়লে সিংহ হয় না নকল কখনো আসল হয় না; তুলনীয় ময়ূরপুচ্ছ পর'লে কাক ময়ূর হয় নাল তুলনীয়- 'গাধার পিঠে সোনার বোঝা চাপালেও সে গাধাই থাকে'।
গাধাকে প্রশ্ন করো না সে মোট বইবে কিনা নিত্য কাজের খবর করা অর্থহীন।
গাধার পিঠে ওজন চাপে বোকাকে বেশি খাটানো যায়; তুলনীয়- 'অবোধের খাটনি ভারি'; পাঠান্তর- 'গাধার পিঠে ভারী বোঝা'।
গাধার পিঠে সোনার বোঝা চাপালেও সে গাধাই থাকে অবোধ কখনো বোদ্ধা হয় না; কাক কখনো বক হয় না; কালো কখনো সাদা হয় না।
গাবতলা দিয়ে যাবনা, আর গাব খাবনা, গাব খাব না তো খাবো কি, গাবের মত আছে কি গাব খেতে গিয়ে এক কাকের ঠোঁট আঠায় জড়িয়ে যায়; বিপদে পড়ে সে প্রতিজ্ঞা করে আর গাব খাবে না; আঠা ছেড়ে যেতেই সে দ্বিতীয় বচনটি আওড়ায়; কারে পরে প্রতিজ্ঞা; বিপদ কেটে যেতেই স্বমূর্তি; প্রতিজ্ঞা ভাঙ্গতে কতক্ষণ!
গায়ে ওড়ে খড়ি, কলপ দেওয়া দাড়ি ঘরের অবস্থা মন্দ, বাইরে আড়ম্বর প্রদর্শন; সমতুল্য- 'ভিতরে ছুঁচোর কীর্তন, বাইরে কোঁচার পত্তন'।
গায়ে গণ্ডারের চামড়া অপমানসূচক কথা যার গায়ে লাগে না; নির্লজ্জ-বেহায়া।
গায়ে গু মাখলে যমেও ছাড়ে না অপরাধ করলে কোনো অছিলাতেই শাস্তি থেকে অব্যাহতি পাওয়া যায় না; সমতুল্য- 'পাপ বাপকে ছাড়ে না'; 'যেমন কর্ম তেমন ফল'।
গায়ে ফুঁ দিয়ে বেড়ানো নির্ভাবনায় বাবুয়ানা ও ফুর্তি করে বেড়ানো।
গায়ে ফোসকা পড়া তীব্র অসহিষ্ণু হওয়া।
গায়ের কালি ধুলে যায়, মনের কালি ম’লে যায় ভুলত্রুটি সংশোধন করা যায়, কিন্তু মনের গ্লানি মরার আগে মুছে না।
গায়ের গন্ধে ভূত পালায়, মাথায় মাখে খুসবু/ফুলেল তেল অবস্থার বিপরীত আচরণ; আদিখ্যেতা; বাড়াবাড়ির প্রতি তিরস্কার।
গাল টিপলে দুধ বেরোয় একেবারে অবোধ; নিতান্ত শিশু ব'লে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা।
গাল বাড়িয়ে চড় খাওয়া১ শখ করে বিপদ ডেকে আনা।
গাল বাড়িয়ে চড় খাওয়া২ নির্বুদ্ধিতার কারণে অপমানিত হওয়া।
গালে চুনকালি দেওয়া১ অপরাধের শাস্তিস্বরূপ লাঞ্ছনা করা।
গালে চুনকালি দেওয়া২ বংশের বা আত্মীয়স্বজনের কলঙ্কের কারণ হওয়া।
গিন্নি ভাঙলে হাঁড়ি হয় খলা (পোড়া) বউ ভাঙলে হাঁড়ি হয় খোলামকুচি (ভাঙা হাঁড়ির টুকরা) একই কাজে শাশুড়ির বেলায় ভাল, বউয়ের বেলায় খারাপ; আমাদের স্বভাব পরের মেয়ের নিন্দা করা।
গিন্নির উপর গিন্নিপনা ভাঙা পিঁড়েয় আলপনা১ আগ বাড়িয়ে কাজ নষ্ট।
গিন্নির উপর গিন্নিপনা ভাঙা পিঁড়েয় আলপনা২ অনধিকারে কর্তার উপর কর্তৃত্বপনা।
গিন্নির দোষে/পাপে গৃহস্থ নষ্ট গিন্নি অকর্তব্য কাজ করলে সংসার সুখের হয় না; সমতুল্য- 'রাজার দোষে রাজ্য নষ্ট'; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'সংসার সুন্দর হয় রমণীীর গুণে'।
গিন্নির হাতে রাঙা পলা বউয়ের হাতে সোনার বালা মর্যাদার উল্লঙ্ঘন।
গিন্নি হলোে চুন্নি হতে হয় সংসারের শান্তি বজায় রাখার কারণে গিন্নিকে মাঝে মাঝে মিথ্যা কথা বলতে হয়।
গির্জার পাশের লোক গির্জায় যায় না১ যখন খুশি যাওয়া যাবে এই ভাবনায় আলসেমি করে যাওয়া হয় না।
গির্জার পাশের লোক গির্জায় যায় না২ সহজলভ্য দ্রব্যের আকর্ষণ/আদর কম; সমতুল্য়-'আগ্রার মানুষ তাজমহল দেখে না'; 'কালীঘাটের লোকের কালীদর্শন হয় না'; 'মক্কার মানুষ হজ্জ পায় না' ইত্যাদি।
গুজব বাতাসে ওড়ে গুজব খুব দ্রুত ছড়ায়; গুজব মানুষের প্রিয় খাদ্য।
গুটিপোকা গুটি করে নিজের ফাঁদ নিজে গড়ে নিজের কাটা গর্তে নিজেই পড়া; নিজের পাতা ফাঁদে নিজেই জড়িয়ে পরা।
গুড় অন্ধকারেও মিষ্টি লাগে ভাল জিনিস সকল অবস্থাতেই ভাল।
গুড় দিয়ে খেলে গুণচটও (থলি) মিষ্টি লাগে ভালোর সংস্পর্শে এলে মন্দও ভাল হয়।
গুড় না দিলে মালপো তৈরী হয় না১ অর্থ না থাকলে কোন কাজ হয় না; হিন্দি পাটান্তর- 'গৈর্‌ গুড় পুয়া নহী বনতে হৈ'।
গুড় না দিলে মালপো তৈরী হয় না২ ভালো কিছু পেতে হলে ভালোর সম্মেলন চাই;
(রেকো) গুণঃ খলু নিহন্তি সমস্ত দোষান একটিমাত্র গুণ সমস্ত দোষকে বিনষ্ট করে।
গুণ থাকলে দোষের ভয় দোষে-গুণে মানুষ; কোন অবস্থাতেই মানুষ সমালোচনা এড়াতে পারে না।
গুণবানের আশ্রয়ে নির্গুণও গুণী হয় আলোর স্পর্শে এলে অন্ধকার কাটে; সমতুল্য- 'চন্দন বনে অচন্দনও চন্দন হয়'।
গুণলুব্ধা স্বয়মেব সম্পদ সম্পদ গুণানুরাগী; গুণ থাকলে সম্পদ আপনা থেকেই আসে।
গুণী গুণং বেত্তি, ন বেত্তি নির্গুণঃ গুণী গুণের কদর বোঝে, নির্গুণে বোঝে না; অর্থাৎ অসারের সার বোঝার ক্ষমতা নেই।
গুণী গুণং বেত্তি, ন বেত্তি নির্গুণো বলী বলং বেত্তি ন বেত্তি নির্বলঃ গুণী গুণবানের গুণ বোঝে, নির্গুণে তা বোঝে না; বলীই বলবানের শক্তি অনুধাবন করতে পারে দুর্বলে পারে না।
গুণে কড়ি জলে ফেলি সেও ভাল কাজ বুঝে নেওয়াই উচিত।
গুণে নুন দিতে নেই নূন দিলে ব্যঞ্জন সুস্বাদু হয়, কিন্তু নূন দিলেও নির্গুণ কখনো গুণী হবে না; নির্গুণের প্রতি ব্যঙ্গোক্তি।
গুণেতে হইলে বড়, বড় বলে সবে, বড় যদি হতে চাও, ছোট হও তবে- হরিশ্চন্দ্র মিত্র মানুষ হল ভগ্নাংশের মত; আসল 'সে' হলো হর এবং ভাবনার 'সে' হল লব; নিজেকে ছোট ভাব তাহলেই বড় হবে।
গুণের ঘাট (ঘাটতি) নেই১ যে কোন অপকর্ম করেছে, তার প্রতি বিদ্রুপোক্তি।
গুণের ঘাট (সীমা) নেই২ বদগুণের সীমা-পরিসীমা নেই; নির্গুণের প্রতি বিদ্রুপোক্তি; পাঠান্তর- 'গুণের বালাই নেই'।
গুণের বালাই দেখে মরি সদগুণের অভাব দেখে খেদোক্তি।
গুণের বালাই নেই বদগুণের আধিক্য দেখে খেদোক্তি; পাঠান্তর- 'গুণের ঘাট নেই'।
গুণে সরস্বতী রূপে লক্ষ্মী সর্বগুণসম্পন্না ও অনুপম সৌন্দর্যের অধিকারিণী বরাঙ্গনা নারী।
গুবরেপোকার পদ্মমধু খাবার সাধ অক্ষমের উচ্চাশা; নীচের উচ্চাকাঙ্ক্ষা; তুলনীয়- কুঁজোর চিৎ হয়ে শোয়ার সাধ'।
গুমরে মাটিতে পা পড়ে না অহংকারী মেজাজে সবাইকে তুচ্ছজ্ঞান করা; তুলনীয়- 'ধরাকে সরাজ্ঞান করা'।
গুয়ের এপিঠ আর ওপিঠ, দু’পিঠই সমান অপকৃষ্টতায় উভয়ে তুল্যমূল্য; মন্দের সবই মন্দ।
গুয়ে বলে গোবরদাদা তোর গায়ে গন্ধ নিজের দোষ জানে না পরের দোষ খোঁজে; সমতুল্য- 'চালুনি বলে ছুঁচ তোর মার্গে ছ্যাঁদা'; 'চালুনি বলে ধুচুনিভাই তুমি বড় ফুটো'।
গুরু ছেড়ে গোবিন্দ ভজে, সে জন নরকে মজে ইষ্টগুরু সর্বাগ্রে পূজ্য।
গুরু বোবা শিষ্য কালা, যেমন গুরু তেমন চেলা উভয়ই সমান মন্দ/মূর্খ; মনিকাঞ্চনযোগ।
গুরুমারা বিদ্যা১ অনিষ্ট করার জন্য গুরুর কাছে প্রাপ্তশিক্ষা তারই উপর প্রয়োগ; উপমায়- 'অর্জুন-দ্রোণাচার্য'
গুরুমারা বিদ্যা২ বিদ্যায় গুরুকে অতিক্রম।
গুরু মোতে দাঁড়িয়ে তো শিষ্য মোতে পাক দিয়ে গুরু থেকে শিষ্য তীক্ষ্ণ; মূল অপেক্ষা শাখা প্রবল; সমতুল্য- 'তালৈয়ের চেয়ে পুতরা ভারি'; 'বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়'; 'বাপের চেয়ে ছেলে কড়া'; 'সূর্যের চেয়ে বালির তাপ বেশি' ইত্যাদি।
গুরুর কথা শোনে না কানে প্রাণ যায় তার হেঁচকা টানে গুরুজনদের কথা অগ্রাহ্য করলে বিপদে পড়তে হয়।
গুরুর দোষগুলি ব্যক্ত করবে দোষ সবসময় অমঙ্গলময়, নিন্দনীয়; সম্পর্কীত উক্তি- 'শত্রুর গুণগুলি ব্যক্ত করবে'।
গৃহ স্থির আগে কর্‌ গৃহিণী স্থির তারপর আগে ব্যবস্থা না করে কোন কাজে হাত দেওয়া উচিত নয়; সম্পর্কীত প্রবাদ-'পরিকল্পনাবিহীন কাজ লাগামাছাড়া ঘোড়াতুল্য'।
গৃহিণী গৃহমুচ্যতে গৃহিণী থাকলে গৃহ প্রকৃত গৃহে পরিণত হয়; গৃহিণী থাকলে তবেই গৃহ বাসযোগ্য হয়।
গৃহীত ইব কেশেষু মৃত্যুনা ধর্মমাচরেৎ যম চুলের মুঠি ধরে আছে এই ভেবে ধর্মাচরণ করবে।
গেঁয়ো যোগী কল্কে/ভিখ পায় না নিজের দেশে বা স্বজনর কাছেে গুণীলোকের কদর নেই; অতিপরিচিত হলে গুণীলোক সঠিক মর্যাদা পায় না; সমতুল্য- 'অতি চেনার কদর নেই'; তুলনীয়- 'গরু গামলার ঘাস খায় না'।
গেরস্ত কাওরা (অনুন্নত হিন্দু সম্প্রদায়) শোরে কড়ি কাওরা জাতীয় গৃহস্থীরা শুয়োর বিক্রি করেও লাভবান হয়।
গেরস্তেরে ভূতে পায়, চাল কুটে পিঠে খায় বহু কষ্ট স্বীকার করে সেই ভাতই খায়।
গৈর্‌ গুড় পুয়া নহী বনতে হৈ গুড় না দিলে মালপো তৈরী হয় না; অর্থ না থাকলে কোন কাজ হয় না।
গোঁফ খেজুরে নিতান্ত অলস; অলসচূড়ামণি; (উৎস-কাহিনী- একদিন এক অলস-চূড়ামণি এক খেজুরগাছের তলায় শুয়ে ছিল; একসময় একটা খেজুর তার গোঁফ-জোড়ার মাঝখানে পড়ে; জিভ দিয়ে একটু কসরত করে খেজুরটাকে সে মুখের ভিতর ঠেলে পেটে চালান করতে পারত; কিন্তু এই কষ্টটুকু স্বীকার করতেও সে নারাজ; পাশে তার দোসর শুয়েছিল; তাকে সে খেজুরটাকে মুখে ঠেলে দিতে বলে; এই পরিশ্রম করতে তারও ভীষণ আপত্তি ছিল; ফলে অলসচূড়ামণি ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁ করে এই আশায় শুয়েই থাকে কখন খেজুরটা এমনি এমনি গড়িয়ে তার মুখে এসে পড়বে, আর সে খেজুর খাবে; এই গল্প থেকেই অলস লোকটাকে সকলে বলতে শুরু করল- গোঁফখেজুরে।); সমতুল্য- পি পু ফি শু।
গোঁফ দেখলে শিকারী বেড়াল চেনা যায় চোখের দিকে তাকিয়ে মনের অবস্থা বোঝা যায়।
গোঁফ নাইকো কোনকালে দাড়ি রেখেছেন তোবড়াগালে নিতান্ত বাড়াবাড়ি; বিসদৃশ সাজ।
গোঁয়ারের মরণ খোঁয়ারে গোঁয়ারের পতন বিশ্রীভাবেই হয়; হটকারী গোঁয়ার্তুমি করে মরে; সমতুল্য- 'বেদের মরণ সাপের হাতে'; পাঠান্তর- গোঁয়ারের মরণ গাছের আগায়
গোকুলের ষাঁড় স্বেচ্ছাচারী ব্যক্তি, যে পরের অনিষ্ট করে বেড়ায়; দোষ করলেও শাস্তি পায় না।
গোঙ্গা ছেলের নাম তর্কবাগীশ গুণহীনে গুণের আরোপ; অযোগ্যকে অতিরিক্ত সম্মানদান; কুৎসিতকে সুন্দর করার হাস্যকর প্রয়াস; যা নয় তা হওয়ার ইচ্ছা; সমতুল্য-'আঁখোকে অন্ধ নাম নয়নসুখ' 'কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন'; 'ঘুঁটে কুড়ানীর ছেলের নাম চন্দনবিলাস' ইত্যাদি।
গোজন্ম ঘুচে গন্ধর্বজন্ম হল অপ্রত্যাশিতভাবে দুর্ভাগ্য কেটে গিয়ে সৌভাগ্যলাভ।
গোড়া কেটে আগায় জল/পানি দেওয়া১ দোষ শুধরানোর চেষ্টা।
গোড়া কেটে আগায় জল/পানি দেওয়া২ কারো সর্বনাশ করে সামান্য উপকার করতে যাওয়া।
গোড়ায় গলদ শুরুতেই ভুল; বিসমিল্লায় গলদ।
গোদা পায়ে আলতা বিসদৃশ সাজ।
গোদা পায়ে লাথি১ অমূলক ভয়।
গোদা পায়ে লাথি২ খেলে বরঞ্চ আরাম লাগে।
গোদা বাড়ি, ছাদন দড়ি এখন তুমি কার, যখন যার কাছে থাকি তখন আমি তার পরের চাটুকারি করে যে জীবিকা নির্বাহ করে তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য; তুলনীয়- ইন্দ্রের শচী।
গোদের ওপর বিষফোঁড়া বিপদের ওপর বিপদ।
গোনা গরু বাঘে নেয় না সুরক্ষিত বিষয় নষ্ট হয় না; সমতুল্য- 'সাবধানের মার নেই'।
গোপন কথা গোপন থাকে না গোপন কথা পাঁচকান হয়ে গোপন থাকে না; সাবধানে কথা বলার জন্য চেতাবনি; তুলনীয়- 'ষটকর্ণে মন্ত্রভেদ'।
গোপনকথা তোমার গোলাম; ফাঁস করলে তুমি গোলাম গোপন কথা ফাঁস করলেই সমূহ বিপদ।
গোবর গ্ণেশ স্থূলবুদ্ধিসম্পন্ন লোক
গোবরে পদ্মফুল নির্গুণের ঘরে গুণী সন্তান; তুলনীয়- 'দৈত্যকুলে প্রহ্লাদ'।
গোবর দিয়ে ঘাস এলানো কথায় না বলে কাজে অনিষ্ট করা (গোবর ছিটানো ঘাস খায় না)
গোবরে পোকার পদ্মমধু খেতে সাধ নীচের উচ্চাভিলাষ।
গোভাগ্য নেই এঁটুলি ভাগ্য আছে গোয়ালে গরু বাঁচে না; শুধু এঁটুলি পোকায় ভর্তি; সৌভাগ্য নেই শুধু দুর্ভাগ্য আছে।
গো-মড়কে মুচির পার্বণ একের ক্ষতিতে অন্যের লাভ; সমতুল্য- 'কারো সর্বনাশ, কারো পৌষমাস'; পাঠান্তর- গো-মড়কে শকুনের ভোজ।
গোয়ায় নাই ছাল চামড়া খোদার নামে দেয় সাত দামড়া সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে লোক দেখানো পর্যায়ের কোরবানি দেওয়া; সমতুল্য- 'গরিবের ঠাকুরব্যাধি'।
গোল গর্তে চৌকো পেরেক এমন অবস্থায় পতন যা ব্যক্তির প্রকৃতি বা যোগ্যতানুসারী নয়।
গোলাপ/পদ্ম তুলতে গেলে কাঁটা সইতে হয় অনায়াসে কিছু পাওয়া যায় না; অবিমিশ্র সুখ হয় না; কিছু পেতে গেলে কিছু ঝামেলা সইতে হয়; সমতুল্য-'আগুন পোহাতে গেলে ধোঁয়া সইতে হয়; তুলনীয়-'ন সুখং দুঃখৈর্বিনা লভ্যতে'; 'সাধনা না করলে সিদ্ধি নাই' ইত্যাদি।
গোলাপে আছে কণ্টক, চাঁদে আছে কলঙ্ক দোষগুণ মিলিয়ে মানুষ; কোন কিছুই অবিমিশ্র হয় না।
গোলাপের জাহির নেই গুণের প্রচার লাগে না।
গোলেমালে চণ্ডীপাঠ১ অব্যবস্থার সুযোগে কাজে ফাঁকি দেওয়া; পাঠান্তর- 'গোলে হরিবোল দেওয়া'।
গোলেমালে চণ্ডীপাঠ১ অপরের যোগসাজশে গোলমাল পাকিয়ে কোনপ্রকারে কাজ সারা;
গৌর হতে বাকি অনেকদিন পূণ্যাত্মা হওয়া সহজ নয়।
গ্রহণ হলে সবাই দেখে পরের বিপদ সবাই উপভোগ করে।
গ্রহণের চাঁদ সকলের লক্ষ্যের বিষয়।
গ্রাম নেই তার আবার সীমানা নেই-বস্তুর খোঁজের অর্থ হয় না; সংস্কৃত পাঠান্তর- 'নাস্তি গ্রাম্যঃ কুত সীমাঃ?'
গ্রাম বড় তার মাঝের পাড়া অন্যায্য দাবী; ছোটগ্রামে মাত্র কয়েকঘর পরিবারের বাস; সেখানে একাধিক পল্লী হতে পারে না।
গ্রামের নাম তেঘরা, তার আবার উত্তরপাড়া, দক্ষিণপাড়া নগণ্যের বাড়াবাড়ি, আদিখ্যেতা; অতি ক্ষুদ্রবস্তুর ভাগ হয় না।

প্রবাদ-প্রবচন অর্থ
ঘটকালি করতে গিয়ে বিয়ে করে আসা১ পরের কাজ করতে গিয়ে নিজের কাজ করা।
ঘটকালি করতে গিয়ে বিয়ে করে আসা২ সুকাজ করতে গিয়ে কুকাজ করা।
ঘট গড়তে পারে না, মেটের/জালার বায়না নেয়১ ক্ষমতার বাইরে প্রত্যাশা করা।
ঘট গড়তে পারে না, মেটের/জালার বায়না নেয়২ ক্ষুদ্রের বৃহৎ কাজ করতে যাওয়া বিড়ম্বনামাত্র।
ঘটি কেনা গঙ্গাস্নান দুই কাজ একসঙ্গে সারা; সমতুল্য- 'একঢিলে দুইপাখি মারা'; 'রথ দেখা কলা বেচা'।
ঘটি ডোবে না, নামে তালপুকুর ক্ষুদ্রব্যক্তির বড় নামগ্রহণ; একসময়ের বড়লোকের এখন চরম আর্থিক অনটন; তুলনীয়- 'নামের চোটে গগন ফাটে'।
ঘটির তলায় দিয়ে আঠা যোগেযাগে কাল কাটা অভাবের সংসারে কষ্টেসৃষ্টে দিন কাটানো।
ঘটিরাম ডেপুটি অযোগ্য রাজকর্মচারী; (উৎসকাহিনী- দীনবন্ধু মিত্র রচিত 'সধবার একদশী' নামক প্রহসনমূলক নাটকের মুখ্যচরিত্র কেনারাম ঘোষ মফস্বলের ডেপুটি মেজিস্ট্রেট; একদিন তাঁর আদালতে ঘটিরাম নামে এক ফরিয়াদির ডাক পড়ে; কেউ সাড়া না দিকে তিনি মামলা খারিজ করে দেন; পরে মুচিরাম নামক একব্যক্তি হাজির হয়ে নানা কায়দায় প্রমাণ করে ঘটিরাম ও মুচিরম একই ব্যক্তি; তার বক্তব্যে খুশি হয়ে বুদ্ধিতে খাটো কেনেরাম মামলাটি গ্রহণ করেন; তখন থেকে তার নাম হয় 'ঘটিরাম ডেপুটি' যার মর্মার্থ- অযোগ্য হাকিম।)
ঘটে বুদ্ধি নাই আহাম্মক; বুদ্ধিহীন।
ঘড়িক্‌কে ঘোড়া ছোটা১ মুহূর্তের মধ্যে বিপুল পরিবর্তন হতে পারে।
ঘড়িক্‌কে ঘোড়া ছোটা২ মুহূর্তের মধ্যে মত পরিবর্তন হতে পারে।
ঘনাম্বুনা রাজপথে হি পিচ্ছিলে ক্বচিদ্‌ বুধৈরপ্যপথেন গম্যতে১ বৃষ্টির জলে রাজপথ পিচ্ছিল হলে বিজ্ঞলোকও কখনো কখনো অপথে গমন করেন।
ঘনাম্বুনা রাজপথে হি পিচ্ছিলে ক্বচিদ্‌ বুধৈরপ্যপথেন গম্যতে২ পথ সহজসরল না হলোে বুদ্ধিমানও বাঁকাপথ ধরেন।
ঘন্টা বাজিয়ে দুর্গোৎসব, ইতু পূজায় ঢাক কাজের অনুরূপ ব্যবস্থা না করে বিপরীত ব্যবস্থাগ্রহণ।
ঘনদুধের ফোঁটা, বড়মাছের কাঁটা ভাল জিনিসের অল্পও ভালো।
ঘরও ঢোকে, পাও কাঁপে লোভও সম্বরণ করতে পারে না আবার ভয়ও পায়।
ঘরকন্না করতে গেলে ঘটিবাটিতে ঝগড়া/ঠোকাঠুকি হয় নানাবিধ চরিত্রের জন্য সংসারে মনোমালিন্য অতি স্বাভাবিক ব্যাপার।
ঘরকুনোর বিদ্যা হয় না কিছু জানতে গেলে বাইরে বেরুতে হয়।
ঘরকা ভেদী লংকা ঢায়ে ঘরের শত্রু অনেক দুর পর্যন্ত ক্ষতি করতে পারে; বাংলা পাঠান্তর- 'ঘরভেদী/ ঘরের শত্রু বিভীষণ'।
ঘরকা/কী মুরগী দাল বরাবর ধরের মুরগী ডালের সমান; মুল্যবান বস্তু সহজলভ্য হলোে তেমন আদর হয় না বা গুরুত্ব পায় না; তুলনীয়- 'গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না'।
ঘরচোরকে পেরে ওঠা দায় নিজের লোক অনিষ্টকারী হলে সেই অনিষ্ট রোখা কঠিন।
ঘরচোরের পার নেই ঘরের শত্রুর বেশি শাস্তি পাওয়া উচিত।
ঘর জামাইয়ের পোড়া মুখ, মরা-বাঁচা সমান সুখ ঘর জামাই হয়ে থাকা কাঙ্খিত নয়; ঘর জামাইকে সকলে হীনচোখে দেখে।
ঘর জ্বালানে/নো পর ভুলানে/ভুলানো আত্মীয়ের কাছে পীড়াদায়ক, কিন্তু পরের কাছে প্রিয় এমন স্ত্রীলোকের প্রতি ইঙ্গিত।
ঘরণীীর কাজ কখনও শেষ হয় না সংসারের টুকিটাকি কাজ লেগেই থাকে; কাজের অন্ত নেই।
ঘর থাকতে বাবুই ভেজা মুর্খামি; সুযোগ থাকতে সুযোগ না নেওয়া; বাবুইপাখি এমন সুন্দর বাড়ী বানায যাতে ভিতরে বৃষ্টির জল না ঢোকে; তবুও বাবুই পাখি বৃষ্টির সময় ঘরের বাইরে এসে বৃষ্টিতে ভেজে; তার থেকে মুর্খামি; স্বচ্ছদৃষ্টিভঙ্গির অভাবে অপব্যাখ্যা; আসলে বাবুই কেন, সব পাখিরাই বৃষ্টির সময় ঘরের বাইরে আসে পরিষ্কার জলে স্নান করার জন্য; তাতে মূর্খতা নেই, বিজ্ঞতা আছেে।
ঘরদোর নেইকো যার, আগুনে ভয় কি তার অভাগার কিছুতে ভয় পাওয়ার নেই; আসলে অভাগার হারাবার কিছু নেই।
ঘর নেই দোর বাঁধে, বৌ নেই ছেলের জন্য কাঁদে নিস্ফল কার্যকলাপ।
ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায় কোন পূর্বঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তব্যক্তি অনুরূপ ঘটনার সূচনা দেখলে বিপদের সম্ভাবনায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়; কোন কাজে একবার যে ঠকেছে সে ঐ কাজ দ্বিতীয়বার করে না; সমতুল্য- 'চূন খেয়ে গাল পোড়ে, দই দেখলে ভয় করে'; দগ্ধশিশু আগুন দেখলে ভয় পায়'; 'নেড়া বেলতলায় দুবার যায় না'; 'যার ছেলে কুমীরে খায় সে ঢেঁকি দেখলে ডরায়' ইত্যাদি।
ঘর পোড়ার কাঠ যেখানে সবই যাচ্ছে সেখানে যা আসে তাই লাভজনক।
ঘর ফাঁদতে দড়ি ঘর বাঁধতে কড়ি কাজে নামার আগে প্রয়োজনীয় সামগ্রীর জোগাড় থাকা প্রয়োজন।
ঘর বাঁধে ছায় না, ধার দেয় চায় না দুইই চুড়ান্ত মুর্খামি; নির্বোধেরক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
ঘরভেদী/শত্রু/সন্ধানী বিভীষণ গৃহশত্রুতার কারণে সংসার ভাঙে; ঘরে শত্রু থাকলে বিনাশ অনিবার্য; পাঠান্তর- 'ঘরভেদে/সন্ধানে রাবণ নষ্ট'; (বিভীষণ দ্রষ্টব্য)
ঘরমুখো বাঙালি, রণমুখো সেপাই যার যা স্বভাব; প্রবাসী বাঙালী সবসময় ঘরে ফিরতে চায়; যুদ্ধের সময় সেপাইকে ঘরে আটকে রাখা যায় না (বর্তমানে অপ্রাসঙ্গিক)
ঘরামির ঘর ছেঁদা পরের কাজ করে বেড়ায়, নিজের কাজে নজর নেই; নিজের কাজে অমনযোগিতা; পাঠান্তর- 'ঘরামির ঘরে জল পড়'; 'ঘরামির মটকা আদুল'।
ঘরে আওয়ে অন্‌ঘেরী বাত কহে বনায়, জানিও পুরৌ বৈরী অচেনালোক ঘরে এসে চাটুকারী করলে জানবে সে পুরোমাত্রায় শত্রু।
ঘরে চাল নেই ভাতে ভাত রাঁধো অসম্ভববস্তুর প্রত্যাশা; বিপরীত বুদ্ধি; সমতুল্য- 'এঁড়ে গরু টেনে দো'; 'নাই ভাত নুন দিয়ে খাবো'।
ঘরে ছুঁচোর কেত্তন, বাইরে কোঁচার পত্তন ঘরে অন্নের সংস্থান নেই, অভাবের জ্বালায় কষ্ট পাচ্ছে অথচ বাইতে লোক দেখানো বড়লোকি ভাব দেখাচ্ছে এমন অবস্থা; বাইরে বাবুগিরি; বাড়িতে চরম দারিদ্র্য; প্রকৃত অবস্থা গোপন করে আড়ম্বর প্রদর্শন; পাঠান্তর- 'ঘরেতে অষ্টরম্ভা, বাইরে কোঁচা লম্বা'; 'ঘরে নেই দশটি পথেপথে কষ্টি'; 'ঘরে নেই ভাত কোঁচা তিনহাত';'ঘরে নেই ঘটিবাটি কোমরে মেলা চাবিকাঠ'।
ঘরে নেই দশটি পথেপথে কষ্টি১ ঘরে দেখার কেউ নেই তাই নির্ভাবনায় বাইরে আনন্দ করে বেড়ায়।
ঘরে নেই দশটি পথেপথে কষ্টি২ 'ঘরে ছুঁচোর কেত্তন, বাইরে কোঁচার পত্তন' এর অনুরূপ।
ঘরে নেই ভাজাভুজা, নিত্য করেন গোঁসাই পূজা ঘরে অন্ন নেই, তবু নিত্যপূজার বিরাম নেই; ভগবানে ভয়ে ভীত দুর্বলচিত্তের লোক।
ঘরে নেই যা, বাছা মাগে তা। অভাগী মায়ের মনঃকষ্ট।
ঘরে বসে কেল্লামারা ঘরে বসে সারা পাড়ার খবর রাখা; সমতুল্য- 'পিঁড়েয় বসে পেঁড়োর খবর নেয়'।
ঘরে বসে পুছে বাত তার ঘরে হা ভাত- খনা অলসের অন্নের সংস্থান হয় না।
ঘরে বসে কেল্লা মারা ঘরে বসে সারা পাড়ার খবর রাখা; তুলনীয়- 'পিঁড়েয় বসে পেঁড়োর খবর'।
ঘরে বসে রাজা উজির মারা লম্বাচওড়া কথা বলে অকর্মার নিজেকে জাহির করা।
ঘরে ভাত নেই, দ্বারে বাহারী পর্দা দৈন্যাবস্থা লুকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা; সমতুল্য- 'ঘরে ছুঁচোর কেত্তন, বাইরে কোঁচার পত্তন';'ঘরে শাক সিজানা বাইরে বাবুয়ানা'।
ঘরে ভাত না থাকলে শালগ্রামের সোনা বেচে খায় বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা করতে গিয়ে লেজেগোবরে; সমতুল্য- 'অভাবে স্বভাব নষ্ট'।
ঘরের ইঁদুর বাঁশ কাটলে ধরে রাখে কে? নিজের লোক ক্ষতি করলে তা নিবারণ করা কঠিন; পাঠান্তর- 'ঘরের ইঁদুর বাস (কাপড়) কাটলে ধরে রাখে কে?'
ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ায় নিজের টাকায় পরের উপকার করে; বিনাপারিশ্রমিকে পরের জন্য খেটে মরে; তুলনীয়- 'ঘরের মা ভাত পায় না, পরের জন্য মাথাব্যথা'।
ঘরের দরজা খোলা পেলে সাধুও চোর হয় খোলা দরজা সজ্জনকেও প্রলুব্ধ করে; তুলনীয়- 'আলগা পেলে সন্ন্যাসীও মাতে'।
ঘরের ঢেঁকির কুমির হওয়া লুকিয়ে শত্রুতা করা
ঘরের মধ্যে ঘর, সবাই মাতব্বর/হাওলাদার সংসারের সবাই নিজেকে মাতব্বর মনে করে।
ঘরের মা ভাত পায় না, পরের জন্য মাথাব্যথা ঘর ছেড়ে পরকে নিয়ে পড়া; তুলনীয়- 'ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ায়'।
ঘরের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলা ইচ্ছা করে নিজের অমঙ্গল ডেকে আনা।
ঘরের শত্রু বরযাত্র মেয়ের বিয়েতে আমন্ত্রিত বরযাত্রদের অত্যাচার দেখে প্রবাদটির সৃষ্টি হয় (বর্তমানের প্রেক্ষিতে অপ্রাসঙ্গিক)
ঘরের ষাঁড়ে পেট ফাঁড়ে নিজের লোক অনিষ্ট করে; সমতুল্য- 'ঘরের শত্রু বিভীষণ'।
ঘর্ষণবিনা রত্ন উজ্বল হয় হয় না, কষ্টবিনা মানুষ সম্পূর্ণ হয় না। কনফুসিয়াস অনায়াসে কিছু লব্ধ হয় না।
ঘষতে ঘষতে পাথরও ক্ষয় হয় পরিশ্রম করলে সিদ্ধি আসে; নিয়ত অভ্যাসে স্থূলবুদ্ধিও সূক্ষ্মবুদ্ধিতে পরিণত হয়।
ঘষে মেজে রূপ ধরে বেঁধে সোহাগ স্বাভাবিক সৌন্দর্য না থাকলে যতই সাজো-না-কেন রূপ খুলবে না; আন্তরিক অনুরাগ না থাকলে জোর করে প্রণয় হয় না।
ঘাট পার হলে খেওয়ানি শালা অকৃতজ্ঞ; উপকার নিয়ে উপকারীর কথা ভুলে যায়; সমতুল্য- 'কাজের সময় কাজি কজ ফুরালেই পাজি'; খাল পেরুলে কুমিরকে কলা'।
ঘাড়ে ভূত চেপেছে দুষ্টবুদ্ধি মাথায় চাড়া দিয়েছে।
ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়া বড় কোনো বিপদ থেকে নিস্কৃতিলাভ।
ঘা শুকালেও চিহ্ন থাকে মর্মান্তিক বেদনার স্মৃতি চিরদিন মনে জাগরুক থাকে।
ঘায়েই মাছি বসে দুস্কর্ম লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
ঘি আদুড়/আদুল ঘোল ঢাকা মুল্যবানবস্তুর দিকে নজর নেই; সামান্যবস্তুর দিকে কড়া নজর; সমতুল্য- 'কঞ্চি খবরদার'।
ঘি ঢাললেও/মালিশ করলেও কুকুরের লেজ সোজা হয় না স্বাভাবিক চরিত্রবৈশিষ্ট্য বদলায় না; তুলনীয়- 'স্বভাব যায় না মলে'।
ঘি দিয়ে ভাজো নিমের পাতা, তবু যায় না জাতের জাতা জাতবৈশিষ্ট্য কখনো যায় না; মন্দ কখনো ভাল হয় না; তুলনীয়-'স্বভাব যায় না মলে';'ঘি মালিশ করলেও কুকুরের লেজ সোজা হয় না'।
ঘি-ঘাত খেয়ে মুখ পুড়লো মুখে ছ্যাঁকা লাগায় গরম ঘিমাখা ভাত খাওয়া ছেড়ে দিলো; কেউ সুখের আশ্রয় ছেড়ে দিলে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়।
ঘুঁটেকুড়ুনির ছেলের নাম চন্দনবিলাস/পদ্মপলাশ আত্মপ্রচারের হাস্যকর প্রয়াস; যা নয় তাই ভেবে মনের সান্ত্বনা; যা নয় তাই হওয়ার চেষ্টা; তুলনীয়- 'অন্ধের নাম নয়নসুখ'; 'কানাছেলের নাম পদ্মলোচন; কালোছেলের নাম গৌরাঙ্গসুন্দর'; 'গোঙ্গাছেলের নাম তর্কবাগিশ' ইত্যাদি।
ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে; তোমার একদিন আছে শেষে পরের দুঃখে আনন্দ করে কিন্তু ভুলে যায় সে বিপদ নিজেরও হতে পারে।
ঘুঘু দেখেছ ফাঁদ দেখনি১ ঘুঘুর আনন্দ-বিচরণই দেখছ, তার ফাঁদে পড়ার যন্ত্রণা দেখনি।
ঘুঘু দেখেছ ফাঁদ দেখনি২ আরম্ভের সুখটাই দেখেছো, শেষের দুঃখটা দেখনি; সুখের মুখটা দেখেছো, দুঃখের পরিচয় পাও নি।
ঘুঘু দেখেছ ফাঁদ দেখনি৩ লোভে পড়ে এগিয়েছো, ফাঁদে যে পড়তে পারো ভাবো নি।
ঘুঘু দেখেছ ফাঁদ দেখনি৪ কাউকে বিপন্ন করার ভয় দেখান।
ঘুঘু দেখেছ ফাঁদ দেখনি৫ চতুরব্যক্তির প্রতি শাস্তিপ্রাপ্তির ইঙ্গিত।
ঘুম নাই যোগীর আর রোগীর যোগী যোগসাধনা করে আর রোগী যন্ত্রণায় ছটফট করে তাই উভয়ে নিদ্রাশূন্য।
ঘুমন্ত কুকুরকে জাগিয়ো না উটকো ঝামেলায় জড়িয়ো না; স্বেচ্ছায় বিপদকে ডেকো না; পাঠান্তর- 'ঘুমন্ত কুকুরকে ঘুমাতে দাও'; 'ঘুমন্ত বাঘকে খুঁচিও না'।
ঘুমন্ত বাঘ শিকার ধরে না শুয়ে থাকলে ভাগ্যও শুয়ে থাকে; অলসের সৌভাগ্য হয় না; পাঠান্তর- 'ঘুমন্ত বিড়াল ইঁদুর ধরে না'; 'ঘুমন্ত শিয়ালের হাঁস বা মুরগি জোটে না'; 'ঘুমন্ত সিংহের মুখে হরিণ ঢোকে না'।
ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুদের অন্তরে -সেক্সপিয়ার শিশুবয়সে যে চরিত্র আমরা গঠন করি প্রাপ্তবয়সে সেই অনুসারে আমরা পরিচালিত হই।
ঘুষ পেলে আমলা/পুলিশ তুষ্ট সরকারি কর্মচারীর সহজাত প্রবৃত্তি।
ঘৃণায় ঘৃণা বাড়ে ঘৃণা তিক্ততা বাড়ায়, মনে মালিন্য সৃষ্টি করে।
ঘৃতকুম্ভ সমা নারী তপ্তাঙ্গারসমঃ পুমান্ নারী ঘিপূর্ণঘটের সমান; পুরুষ জ্বলন্ত আগুনের সমান।
ঘেউ-ঘেউ করা কুকুর কামড়ায় না বা কদাচিৎ কামড়ায় যে মারব বলে লাফায় সে কদাচিৎ মারে; পাঠান্তর- 'ঘেউ-ঘেউ করা কুকুর কদাচিৎ কামড়ায়'।
ঘেয়ো কাঁঠালের মুচি খদ্দের উভয়ে সমান মন্দ।
ঘোড়া চিনি কানে, ছাগল চিনি বিয়ানে; যোগী চিনি ধ্যানে আর নাপতের পুত রাজা হইছেন হলে তার চিনি দানে কান দেখে ঘোড়া চেনা যায়; দুধ দেওয়া দেখে ছাগল চেনা যায়;

যোগী চেনা যায় ধ্যানে আর নাপিতে ছেলে রাজা হলে তাকে চেনা যায় তার দানের বহর দেখে।

ঘোড়া চিনি কানে, দাতা চিনি দানে; মানুষ চিনি হালে, মণি চিনি জলে কান দেখে ঘোড়া গুণাগুণ জানা যায়; দানের পরিমাণ দেখে দাতার মনের প্রসারতা জানা যায়; অবস্থা দেখে মানুষ বিচার করা যায় এবং জলের স্বচ্ছতা সাথে তুলনা করে হীরা ইত্যাদির গুণাগুণ জানা যায়।
ঘোড়া চিনি কানে, রাজা চিনি দানে; নারী চিনি হাসে, পুরুষ চিনি কাশে কান দেখে যুদ্ধের ঘোড়া চেনা যায়; দানের পরিমাণ দেখে রাজার উদারতা জানা যায়; হাসি শুনে নারীর প্রকৃতি জানা যায় এবং বাচন ভঙ্গীতে পুরুষ চেনা যায়; সম্পর্কীত প্রবাদসমূহ- 'কথাবার্তায় মানুষ চেনা যায়'; 'গান শুনে পাখি চেনা যায়'; 'ফল দেখে বৃক্ষ চেনা যায়'।
ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়া উদ্যোক্তাকে এড়িয়ে গিয়ে স্বার্থসিদ্ধি করা; উপরওয়ালাকে ডিঙিয়ে নিজের কাজ হাসিল করা।
ঘোড়া থাকলে চাবুকের ভাবনা বেশীটা হয়ে গেলে নিশিন্তি, অল্পের জন্য ভাবনা নেই; বড় কাজটা হয়ে গেলে ছোট কাজটার জন্য চিন্তা হয় না; পাঠান্তর- 'ঘোড়া হলে চাবুক আটকায় না'।
ঘোড়া দেখে খোঁড়া বিলাসপ্রিয় অলসব্যক্তি; আরাম পাওয়ার সুযোগ পেলেই নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকা।
ঘোড়া ভেড়ার একদর ভালোমন্দের বিচার নেই; মুড়ি মিছরির পার্থক্য নেই; শ্রেষ্ঠত্বের দাম নেই; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'অন্ধেরা নগরী চৌপাট রাজা, টাকা সের ভাজি টাকা সের খাজা'।
ঘোড়ার আগে গাড়ী জুতা বিপরীতবুদ্ধির কাজ; সমতুল্য- 'জল খেয়ে জলের/জাতের বিচার'।
ঘোড়ার আস্তাবলে ভেড়া ঢোকা বিপদাপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা।
ঘোড়ার ঘাস কাটা অকাজ করা; বৃথা কাজে সময় নষ্ট করা; তুলনীয়-ঢ়'মরাগরুর ঘাস কাটা'।
ঘোড়ার ডিম অসম্ভব ব্যাপার; ধোঁকাবাজি; যা হয় না; সমতুল্য- অশ্বডিম্ব; আঁটকুড়ের ব্যাটা; আকাশকুসুম; এঁড়ে গরুর দুধ; কাঁঠালের আমসস্ত্ব; পশ্চিমে সূর্যোদয়; ভস্মকীট; সোনার পাথরবাটি; সোনার হরিণ; সাপের পাঁচ-পা ইত্যাদি।
ঘোড়ার পেট, গাধার পিঠ, খালি থাকে কদাচিৎ যার যা কাজ সে তাই করে- ঘোড়া সবসময় খায় আর গাধা সবসময় খাটে।
ঘোড়ার মত ক্ষুধার্ত ঘোড়ার পেট কখনো খালি থাকে না।
ঘোমটার নীচে খেমটা নাচ১ আড়ালে কুৎসিত আচরণ।
ঘোমটার নীচে খেমটা নাচ২ সাধুত্বের আড়ালে ভণ্ডামি; বাইরে সাধু, ভিতরে ভণ্ড।
ঘোর কলিকাল পাপাচারের বাড়াবাড়ি হলে প্রবাদটি বলা হয়।
ঘোল, কুল, কলা- তিনে নাশে গলা গলার পক্ষে তিনটি খাদ্য অনিষ্টকর।
ঘোল খাবে রামা কড়ি দেবে শ্যামা একজনের সুখের জন্য অন্যজনের অর্থব্যয়।
ঘোল চাইতে গিয়ে পিছনে ভাঁড় কোন বিষয়ে লুকোচাপা করা হলে প্রবাদটি বলা হয়; যা করার তা সামনে করাই ভালো।
ঘোলা জলে মাছ ধরা বিশৃঙ্খলার সুযোগে কাজ হাসিল করা; সমতুল্য- 'এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাই'।
ঘোলা জলে মাছ ধরাটা মুখ্য যাদের ধর্ম, তারা পারে না করতে, নেইকো এমন কর্ম। দুস্কৃতি সব কিছুই করতে পারে।

প্রবাদ-প্রবচন অর্থ
চকচক করলেই সোনা হয় না নকল না খাঁটি চেহারা দেখে বোঝা যায় না; বাহ্যিকরূপ বিষয়বস্তুর গুণ প্রকাশ করে না; বাইরের চাকচিক্য দেখেই সব কিছু বিচার করা চলে না; সমতুল্য- 'আলখাল্লা পরলেই মোল্লা হয় না'; 'তিলক কাটলেই বৈষ্ণব হয় না'; 'পৈতা থাকলেই বামুন হয় না'; 'মন্দির/মসজিদে গেলেই সাধু হয় না' ইত্যাদি; হিন্দি পাঠান্তর- 'হর চমকনেওয়ালী চিজ সোনা নহি হোতী'; পাঠান্তর- 'যা চকচক করে তাই সোনা নয়'।
চক্রবৎ পরিবর্তন্তে সুখানি চ দুঃখানি চ সুখদুঃখ চক্রাকাঁড়ে পরিবর্তিত হয়; সমতুল্য- 'আজ আমীর/রাজা কাল ফকির'; 'আলোর পর আধার আসে'; 'চিরদিন কারো সমান নাহি যায়'; 'মেঘ দেখে তুই করিসনে ভয় আড়ালে তার সূর্য হাসে' ইত্যাদি।
চক্ষুকর্ণের বিবাদভঞ্জন স্বচক্ষে দর্শন করে শ্রুতবিষয়সম্পর্কে সকল সন্দেহ নিরসন করা।
চক্ষু থাকতে কানা দেখেও দেখে না; চক্ষু আছে তবে জ্ঞানচক্ষু নেই- অবোধের প্রতি তির্যোক্তি।
চক্ষুদোষে সব হলদে বাঁকাচোখ সব মন্দ দেখে।
চক্ষু বুজলেই অন্ধকার মরলেই সব ফুরায়; পাঠান্তর- 'চোখ বুজলেই সব অন্ধকার'; সমতুল্য- 'আমি নেই তো জগৎ নেই'; 'আমার পরে মহাপ্লাবন'।
চক্ষু বুজলেই/মুদলেই প্রলয় বন্ধ হয় না১ জগৎ চলে তার নিজের নিয়ম, ব্যক্তি জগতের অংশমাত্র; পাঠান্তর- 'অন্ধ হলে প্রলয় বন্ধ হয় না'।
চক্ষু বুজলেই/মুদলেই প্রলয় বন্ধ হয় না২ ব্যক্তি দেখছে না বলে জগৎ মিথ্যা হয় না।
চক্ষুলজ্জার মাথা খাওয়া নির্লজ্জ বেহায়ার মত আচরণ করা
চক্ষু সবকিছু দেখে শুধু নিজেকে দেখতে পায় না১ নিজেকে চক্ষু দেখে না মন দেখে।
চক্ষু সবকিছু দেখে শুধু নিজেকে দেখতে পায় না২ কেউ নিজের দোষ দেখে না।
চক্ষে চক্ষে যতক্ষণ প্রাণ পোড়ে ততক্ষণ না দেখলে নাই; চোখের নেশা; অস্থায়ী মেকি প্রণয়।
চক্ষে দেখলে শুনতে চায় এমন নির্বোধ আছে কোথায়? মহাহাম্মকই শুধু প্রত্যক্ষ প্রমাণ ছেড়ে দিয়ে শোনা কথায় আস্থা রাখে।
চক্ষে সরষে ফুল দেখা ভীষণ বিপদে পড়ে দিশেহারা/হতবুদ্ধি হওয়া।
চটকস্য মাংসং ভাগ শতকং অত্যল্প সম্পত্তির বেশিসংখ্যক ভাগ হলোে কারো ভাগে কিছু পড়ে না; সমতুল্য- 'আড়াই কড়ার কাসুন্দি হাজার কাকের গোল'; 'একরত্তি সোনা স্যাঁকরা হাজার জনা'।
চড় মারলে চড় খেতে হয় অন্যের ক্ষতি করলে নিজেরও ক্ষতি হয়; সমতুল্য- 'আঘাত করলে প্রত্যাঘাত খেতে হয়'; 'আয়না যেমুখ দেখে সেইমুখ দেখায়'; 'ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়'; 'ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া থাকে'; 'ধ্বনির প্রতিধ্বনি আছে/থাকে' ইত্যাদি।
চড় মেরে চড় খাওয়া ইচ্ছা করে বিপদ ডেকে আনা; সমতুল্য- 'ঢিল মেরে ঢিল খাওয়া'।
চড় মেরে গড় করা ইচ্ছা করে অপমান করে ক্ষমা প্রার্থনা করা; ইচ্ছা করে লাথি মেরে ক্ষমা চাওয়া।
চড়াই পাখির প্রাণ অল্পেতেই যান ক্ষীণজীবী।
চড়ুকে বাতিক গাজনের সময় চড়কগাছে পাক খাওয়ার লোভে সন্ন্যাসী হওয়ার ইচ্ছা।
চড়ুকে হাসি কাষ্ঠহাসি; পিঠফুঁড়ে চড়কগাছে চড়ে যে সন্ন্যাসী পাক খায়, সে যন্ত্রণাবিদ্ধ হয়েও লোকদেখানো হাসি হাসে।
চণ্ডালোহপি নরঃ পূজ্য যস্যাস্তি বিপুলং ধনম প্রভুত ধনশালী হলোে হীনব্যক্তিও সমাজে সম্মানিত হয়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'অর্থেন সর্বে বশাঃ।
চণ্ডীচরণ ঘুঁটে কুড়োয় রামা চড়ে ঘোড়া লেখাপড়া যেমনই হোক-না-কেন কপাল না থাকলে সুখভোগ হয় না; ভাগ্যের কারণেই কেউ বা রাজা কেউ বা ফকির; (উৎসকাহিনী- এক গল্পের চণ্ডীচরণ ও রামচরণ দুই ভাই; বড় চণ্ডীচরণ লেখাপড়ায় কৃতবিদ্য ছিল; ভাগ্য সহায়তা না করায় সে আর্থিক সঙ্কটে ছিল; ছোটভাই রামচরণ লেখাপড়ায় অষ্টরম্ভা; করে খাওয়ার কিছু বিদ্যাই সে জানত না; ভাগ্যক্রমে সে এক বিত্তশালীর একমাত্র মেয়েকে বিয়ে করে শ্বশুরের দৌলতে গাড়ীঘোড়া চড়ে বাবুগিরি করার সুযোগ পায়; এই গল্প থেকেই প্রবাদটির উৎপত্তি হয়েছে।)
চণ্ডীপাঠ ইস্তক/থেকে জুতো সেলাই সবরকমের কাজ; সকল কাজের কাজী।
চঞ্চলা নদীর গভীরতা কম অল্পজ্ঞানী লোকেরা লঘুচরিত্রের হয়।
চতুরের ফতুর হওয়া অতিচালাক সর্বশান্ত হয়; সমতুল্য- 'অতিচালাকের গলায় দড়ি'।
চতুরের সাথে চতুরালি অসতের সাথে অসততাই হলো সঠিক আচরণ; তুলনীয়- সারল্যং সরলে কুর্যাৎ; সমতুল্য- 'সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি'; 'শঠে শাঠ্যং সমাচরেৎ'; বিরুদ্ধ উক্তি- 'তুমি অধম বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন'।
'চ'তে গুরু 'ম'তে শিষ্য গুরু ও শিষ্য, দুজনেই সমান নেশাসক্ত; গুরু চণ্ডুখোর, শিষ্য মদখোর; সমতুল্য- 'যেমন গুরু তেমনি চেলা'।
চন্দনগাছ ছেদন করলেও সুগন্ধ ত্যাগ করে না গুণী অবস্থা বিপর্যয়েও চরিত্রগুণ হারায় না।
চন্দনগাছের সংসর্গে এসে বাঁশগাছ চন্দন হয় না১ নির্গুণ কখনো গুণী হয় না; বিরুদ্ধ উক্তি- 'চন্দনগাছের সংস্পর্শে এসে শেওড়াগাছও সুগন্ধ পায়'।
চন্দনগাছের সংসর্গে এসে বাঁশগাছ চন্দন হয় না২ চরিত্র বা প্রকৃতি কখনো পালটায় না; তুলনীয়- 'কাক কখনো কোকিল/বক হয় না'; 'স্বভাব যায় না মলে'।
চন্দনগাছের সংস্পর্শে এসে শেওড়াগাছও সুগন্ধ পায় গুণবানকে আশ্রয় দিলে নির্গুণও গুণী হয়; বিরুদ্ধ উক্তি-'চন্দনগাছের সংসর্গে এসে বাঁশগাছ চন্দন হয় না'।
চন্দনং ন বনে বনে ভালোর অল্পি হয়।
চন্দ্র সূর্য অস্ত গেল জোনাকি ধরে বাতি; বাঘ পালালো বিড়াল এলো শিকার করতে হাতি; অক্ষমের আস্ফালন; যে কাজ ক্ষমতাশালী করতে পারে না সেই কাজ করতে অক্ষম এগিয়ে যায়; মহতের অভাব কোন নগণ্য মেটাতে পারে না; তুলনীয়- হাতীঘোড়া গেল তল মশা/মাছি বলে কত জল'; পাঠান্তর- 'চন্দ্র সূর্য অস্ত গেল জোনাকি ধরে বাতি; মোগল পাঠান হদ্দ হল ফারসি পড়ে তাঁতি'।
চমড়ী যায়ে পর দমড়ী না যায় মহা কৃপণব্যক্তি
চরণামৃত চরণামৃত না জানি কি অমৃত, খেয়ে দেখি জল১ অপরিচিত বস্তু বা ব্যক্তিকে দূর থেকে বিরাট বলে মনে হয়; আসলে সবই অতি সাধারণ।
চরণামৃত চরণামৃত না জানি কি অমৃত, খেয়ে দেখি জল১ ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বিরাট করে দেখানো লোকগুলি দোষেগুণে ভরা সাধারণলোকের এক অংশমাত্র।
চরিত্রের গুণে মানুষ সবার চোখে বাসে আপনগুণে অচেনা মানুষ পরম আত্মীয় হয়।
চরিত্র সৎলোকের অনেক দোষ ঢেকে দেয়, চরিত্র অসৎলোকের গুণ ঢেকে দেয় আচরণেই মানুষ চেনা যায়; চরিত্রের কারণেই সম্মানীয়ব্যক্তি সম্মান হারায়, আবার নগণ্যব্যক্তি সম্মানিত হয়।
চরৈবেতি চরৈবেতি এগিয়ে চলো, এগিয়ে চলো; এগিয়ে চলাই ধর্ম; এগিয়ে চলাই জীবনের লক্ষণ।
চর্চায় সিদ্ধিলাভ হয় অনুশীলনে ফললাভ হয়।
চলচ্চিত্তং; চলদ্বিত্তং চলজ্জীবনযৌবনম্ মন, ধন, জীবন যৌবন- সবই এ জগতে অস্থায়ী ও চঞ্চল;
চলছো যদি বঙ্গে, কপাল যাবে সঙ্গে যেখানেই যাও না কেন অদৃষ্টও তোমার সঙ্গে সঙ্গে যাবে।
চলতে চাইলে দাঁড়াতে শেখো সবকিছুতেই প্রাক-প্রস্তুতি লাগে।
চলতে না পারলে উঠোন বাঁকা কাজ করতে না পারলে অপরের দোষ খোঁজে; অক্ষমের অজুহাত খাড়া; পাঠান্তর- 'নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা'; হিন্দি পাঠান্তর- 'নাচতে নয়া জানে, অঙ্গন টেড়া/টেরা'।
চলতে পারে না বন্দুক ঘাড়ে ছোট কাজ কর'তে পারে না বড় কাজের বরাত নেয়।
চলতে শিখলে পড়তে হয় না সক্ষমব্যক্তি কখনো ব্যর্থ হয় না।
চলত্যেকেন পাদেন তিষ্ঠত্যেকেন বুদ্ধিমান্ বুদ্ধিমান ব্যক্তি একপা চলেন, একপা স্থির থাকেন; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'নাহসমীক্ষ্য পরং স্থানং পূর্বমায়তনং ত্যজেৎ'
চললে পোয়া, বসলে ক্রোশ, পথ বলে মোর কিসের দোষ? পারা বা না-পারা- সবই আপেক্ষিক ব্যাপার; অলস না হলে কোন কাজই অসাধ্য নয়; অযথা কালক্ষেপ না করলে সব কাজই সময়ে সম্পন্ন হয়।
চললেই চল্লিশ বুদ্ধি, না চললে হতবুদ্ধি শিখতে শিখতেই পরিণত হয়; ভাগ্য ভাল হলে যেকোন কাজ নানা উপায়ে সিদ্ধ হয়; ভাগ্য বিরূপ হলে কোন কাজ সুষ্টভাবে সম্পন্ন হয় না।
চলার পথ আর বলার মুখ কেউ আটকাতে পারে না কারো বশ্যতা মানুষ স্বীকার করতে চায় না; তুলনীয়- 'স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায়রে কে বাঁচিতে চায়'।
চশমে বদ তু তোর মুখ কালা/পোড়া (কুদৃষ্টি এড়ানোর জন্য তুক)।
চাঁদে আছে কলঙ্ক, গোলাপে কণ্টক কোন কিছুই বিশুদ্ধ নয; কোন কিছুই অবিমিশ্র সুখের হয় না; জগতে নির্দোষ বলে কিছু হয় না; সমতুল্য- 'মদেরও তলানি আছে'; পাঠান্তর- 'চাঁদেরও কলঙ্ক আছে'।
চাঁদের কাছে জোনাকি, ঢাকের কাছে টেমটেমি দুই অসমানে তুলনা হয় না; তুলনীয়- 'কোথায় আগরতলা আর কোথায় চৌকিরতলা'; 'কোথায় ভোজরাজা আর কোথায় গঙ্গুতেলী'; 'জাহাজের কাছে জেলে-ডিঙি' ইত্যাদি।
চাঁদের সভার মাঝে তারা বর্ষে বারি মুষলধারা- খনা চাঁদের সভার মধ্যে তারা দেখা গেলে মুষলধারায় বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে।
চাইলেন জিরা পাইলেন হীরা অপ্রত্যাশিতভাবে মূল্যবান বস্তুপ্রাপ্তি।
চাকরি মেঘের ছায়া মিথ্যা কর মায়া এই আছে এই নাই এমন বিষয়ের উপর নির্ভর করতে নেই; তুলনীয়- 'তালপাতার ছায়া মিথ্যা কর মায়া'; 'শঠের মায়া তালের ছায়া'।
চাচা আপন চাচী পর, চাচীর মেয়ে বিয়ে কর মুসলমান সমাজে প্রচলিত প্রবাদ; অর্থ স্পষ্ট।
চাচা আপন প্রাণ বাঁচা আগে নিজের প্রাণ বাঁচাও, পরে অন্যের জন্য ভাবনা; সমতুল্য-'আগে ঘর পরে পর, ঘর সামলে পরকে ধর'; 'আপনি বাঁচলে বাপের নাম';'আত্ম রেখে ধর্ম তবে পিতৃকর্ম'; 'কামলা আপনা সামালা' ইত্যাদি।
চাচা বল কাকা বল কলার জোড়া দশটাকা যতই আত্মীয়তা করা হোক-না-কেন স্বার্থ কেউ ছাড়ে না; ব্যবসায়িক স্বার্থের সাথে আত্মীয়তার সাযুজ্য নেই।
চাটাইয়ে/ ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখা অক্ষমের বা গরিবের উচ্চাভিলাষ।
চাটুকারিতা ততক্ষণ পর্যন্ত ঠিক যতক্ষণ না তুমি তা গিলছো চাটুকারিতায় তৃপ্ত বা বশীভূত হলোে চরিত্রগুণ নষ্ট করে।
চাদরে যতটা পা ঢাকে ততটা পা মেলো সীমার মধ্যে থাকো; মাত্রাজ্ঞান হারিয়ো না;তুলনীয়- 'ওজন বুঝে চলন'।
চাপ পড়লেই বাপ বেকায়দায় পরলে লোকে বশ্যতা স্বীকার করে; সঙ্কটে পড়ল সবাই বাপ বাপ করে; সমতুল্য- 'কারে পড়ে আল্লার নাম'; 'গরজ বড় বালাই'; 'ঠেলায় পড়ে ঢেলায় প্রণাম', 'ঠেলার নাম বাবাজী'; 'বিপদে পড়ে শ্রীমধুসূদন'; 'সাধে কি আর বাবা বলি গুঁতোর ঠেলায় বাবা বলায়' ইত্যাদি; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'বিনা বজ্রপাতে কেউ রামনাম নেয় না'; পাঠান্তর- 'চাপের নাম বাপ'।
চাপানো বোঝার ভার বেশি মনে হয় উপর চাপানো কাজ স্বভাবতঃই অপছন্দের হয় এবং তার প্রভাব মনে উপর পড়ে।
চামচিকে আবার পাখি বাহ্য আকার বড়র মত হলোেই বড় হওয়া যায় না; বড়র মত হতে হলোে বড়র গুণ থাকা চাই; তুলনীয়-'শুয়োর বড় হলেই হাতী হয় না'।
চামচিকেতে লাথি মারে নগণ্যব্যক্তির কটুক্তি।
চায়ের পেয়ালা ও ঠোঁটের মধ্যে বিস্তর ফাঁক সামান্যের মধ্যেও বিস্তর ফাঁক থাকে; এক ও দুইয়ের মধ্যে অসীম সংখ্যক সংখ্যা আছে; সীমার মধ্যে অসীম লুকিয়ে আছে।
চায়ের পেয়ালায় তুফান১ তুচ্ছবিষয় নিয়ে তুলকালামকাণ্ড; সাধারণ বিষয় নিয়ে উত্তেজনাপূর্ণ আলোচনা;
চায়ের পেয়ালায় তুফান১ কাজের ক্ষেত্রে কাজ না করে কেবল ঘরের আড্ডায় জোর আলোচনা
চার দিনকা চাঁদনী ফির আঁধেরি রাত সুখের দিনগুলি স্বল্পই হয়; চলে গেলেই অন্ধকারের মত কষ্টের দিন শুরু হয়; অনুভূতির ব্যাপার মনে হয় সুখের দিনগুলি যেন তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে গেল; কষ্টের দিনগুলি যেন আর কাটতে চাইছে না।
চাল না চুলো, ঢেঁকি না কুলো বিধাতা করেছে দোর বুলো বুলো অন্নের সংস্থান নেই, বাসস্থান নেই, একেবারে নিঃসম্বল; শুধু পরের দরজায় দরজায় ঘুরে পেট ভরানো; পাঠান্তর- 'চাল নেই চুলো নেই, নিত্যানন্দ গোঁসাই'।
চাল নেই ধান নেই গোলাভরা ইঁদুর অন্তঃসারশূন্য।
চাল নাই তবে ভাতে ভাত রাঁধো যা সম্ভব নয় তাই করতে যাওয়া; সমতুল্য- 'এঁড়ে গরু না টেনে দো'।
চাল নেই তার ধুচুনি নাড়া দৈন্যাবস্থা চাপা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা।
চালাকি করো না ফাঁদে পড়ো না বেশি চালাক নিজের পাতা ফাঁদে আটকা পড়ে।
চালাকিদ্বারা মহৎকার্য হয় না ফন্দিবাজী সৎপথ নয়।
চালাকের ঠোঁটে তৎক্ষণাৎ উত্তর সাজানো থাকে চালাকের মস্তিষ্ক খুব পরিষ্কার হয়; ফলে বুদ্ধি তীক্ষ্ণ হয়।
চালুনি করে ঘোল বিলানো যা করা সম্ভব নয় তাই করার কথা বলা; প্রচ্ছন্ন ভাষায় চাতুর্যে মিথ্যা কথা বলা; তুলনীয়- 'কাপড়ে তেল ভরে রাখা'; 'জালে সরষে বেঁধে রাখা'।
চালুনি করে ছুঁচের বিচার নিজের বড় দোষ নজরে পড়ে না; পরের ছোট দোষে তীক্ষ্ণদৃষ্টি; সমতুল্য- 'আনারস বলে কাঁঠাল ভাই তুমি বড় খসখসে'; 'ঝাঁজরি বলে খৈ-চালা, তুই বেজায় ফোঁড়ওয়ালা'; 'নিজের পাছায় ন মন গু, আমারে বলে তোর খান ধু' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'চালুনি বলে ছুঁচ তোর মার্গে কেন ছেঁদা'; 'চালুনি বলে ধুচুনিভাই তুমি বড় ফুটো'।
চালে খড় নেই ঘরে বাতি মুখ্যকাজ ছেড়ে দিতে গৌণকাজ করে; সমতুল্য- 'এদিক নেই ওদিক আছে'।
চালের কি দর? না মামার ভাতে আছি খায় দায় ফূর্তি করে বেড়ায় সংসারে কোথায় কী হচ্ছে তার খবর রাখে না এমন দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যক্তির প্রতি ব্যঙ্গোক্তি।
চালের বাতায় মাণিক থুয়ে উলুবনে হাতড়ানো হাতের কাছে জিনিস রেখে চারিদিকে খুঁজে মরা; ০সমতুল্য- 'কাঁধে কুড়াল রেখে বনময় খোঁজা'; 'কপালে চশমা রেখে ঘরময় খোঁজা'।
চাষা কি জানে মদের স্বাদ সাধারণলোকে গভীর বিষ্যের মর্ম বুঝতে পারে না।
চাষার গদ্দী কাস্তের ঠোকর চাষী কাস্তের খোঁচা মেরে আদর করে; যার যেমন শিক্ষা তার তেমন ব্যবহার।
চাষী আর চষা মাটি, এই দুইয়ে দেশ খাঁটি (খনা) চাষী চষা মাটিতে সোনা ফলায়।
চাষী করে চাষ, ফড়ে খায় ফসল একের পরিশ্রমের ফদল অন্যে ভগ করে; তুলনীয়- 'জেলের পাছায় টেনা নিকারীর কানে সোনা'; 'যার ধন তার ধন নয়, নেপোয় মারে দই'।
চাষীর গরু অমাবস্যা খোঁজে অমাবস্যায় হাল চালানো নিষিদ্ধ; অলসের কাজে অনীহা।
চাষীর চাষ দেখে চাষ করলো গোয়াল; ধানের সঙ্গে খোঁজ নেই রাশিরাশি পোয়াল (খড়) অব্যবসায়ী ব্যবসায়ের সুফল পায় না; তুলনীয়- 'যার কাজ তার সাজে অন্যের তাতে লাঠি বাজে'।
চাহিলেন জিরা পাইলেন হীরা আকাঙ্ক্ষা ছিল সামান্য বস্তুর; পেয়ে গেল মহার্ঘ বস্তু।
চিঁড়া কাঁচকলার যোগ এই দুটি দ্রব্য একসাথে ব্যবহার করা হয় না; উভয়ের মধ্যে কোন সদভাব নেই।
চিঁড়ার বাইশ ফের একটি সাধারণ বিষয়কে ক্রমশঃ জটিল করে তোলা; প্রথমে দাড়ি পাল্লার দুইদিকে একটি করে চিঁড়া রেখে ওজন করা হল; দ্বিতীয়ধাপে ডানপাল্লার চিঁড়া বাঁপাল্লায় রেখে ডানপাল্লায় দুটি চিঁড়া রেখে ওজন করা হল; তৃতীয়ধাপে ডানপাল্লার চিঁড়াদুটি বাঁপাল্লায় রেখে ডানপাল্লায় চারটি চিঁড়া রেখে ওজন করা হল; চতুর্থধাপে ডানপাল্লার চারটে চিঁড়া বাঁপাল্লায় রেখে ডানপাল্লায় আটটি চিঁড়া রেখে ওজন সমান করা হল; এইভাবে বাইশবার ওজন করলে মোট চিঁড়ার সংখ্যা হবে ৪,১৪,৭০৩টি; এর ওজন হবে ৫০ থেকে ৬০ কেজির মত; এরই নাম চিঁড়ার বাইশ ফের। উল্লেখ্য যে দাবাখেলার চৌষট্টি ঘরের ফেরের সংখ্যা মানুষের কল্পনাকে হার মানায়।
চিকিৎসা অপেক্ষা প্রতিষেধ ভাল রোগে ওষুধ না খেয়ে নিরোগ থাকা শ্রেয়; পাঠান্তর- 'প্রতিকার থেকে প্রতিষেধ ভাল'।
চিৎকারে চাকা তেল পায় প্রাপ্য আদায়ে সরব হতে হয়; প্রতিবাদ না করলে অন্যায়ের সুরাহা হয় না।
চিৎপাতের কড়ি উৎপাতে যায় অসতী নারীর অর্জিত অর্থ অপব্যয়ে নষ্ট হয়।
চিত্তে বাচি ক্রিয়ায়াং চ সাধুনামেকরূপতা সাধুরা মনে বাক্যে ও কাজে এক।
চিনি খেয়ে জলকে টান তেমনি বোনের ভাইকে টান চিনি খেয়ে যেমন জল খেতে ইচ্ছা করে; তেমনি বোন ভাইকে পছন্দ করে; বিপরীত- 'শসা খেয়ে জলকে টান তেমনি ভাইয়ের বোনকে টান'।
চিনির পুতুল চিনির পুতুল যেমন জলে পড়লেই গলে যায় তার লক্ষণায় অল্প পরিশ্রমে কাতর; সমতুল্য- ননীর পুতুল।
চিনির বলদ ভারবাহী কিন্তু ফলভোগী নয়।
চিন্তা করো না যে কেউ তোমায় জানে না, শুধু চেষ্টা কর জানার যোগ্য হতে- কনফুসিয়াস কর্মে মানুষ বড় হয়, যোগ্য হয়।
চিন্তা জ্বরো মনুষ্যাণাং মানুষমাত্রই চিন্তায় আক্রান্ত হয়; দুশ্চিন্তা মানুষের জ্বরস্বরূপ; দুশ্চিন্তায় মানুষকে কুরে কুরে খায়; দুশ্চিন্তায় মানুষ জর্জরিত হয়।
চিন্তাবিদেরা নাস্তিক হয় চিন্তাবিদেরা যুক্তিবাদী হয়; যুক্তিবাদীরা অন্ধবিশ্বাস করে না।
চিন্তায় চিন্তা বাড়ে চিন্তা করলে দুশ্চিন্তা বাড়ে।
চিন্তায় পোড়ে মন চিতায় পোড়ে দেহ দুশ্চিন্তা মনের ওপর প্রভাব ফেলে।
চিন্তার মায়ের বড় চিন্তা, হাটের লোক শোয় কোথা? অকারণে দুশ্চিন্তা; চিন্তার মাথামুণ্ড নেই; (উৎসকাহিনী- হাটে প্রচুর লোক দেখে চিন্তার মা চিন্তিত হয়ে পড়ে এরা কোথায় শোয়)
চিন্তাহীন শিক্ষা পণ্ডশ্রম, শিক্ষাহীন চিন্তা বিপজ্জনক চিন্তাহীন শিক্ষা ফলপ্রসূ হয় না; অপরপক্ষে অপরিশীলিত চিন্তা ধ্বংসাত্মক হয়।
চিরদিন কারো সমান নাহি যায়- নজরুল চিরকাল সমান যায় না; ভাগ্য ওঠানামা করে; সুখ-দুঃখে মিশ্রিত জীবন; সমতুল্য- 'আজ আমীর কাল ফকির'; গাড়িকাপর লা, লাকাপর গাড়ি'; 'চক্রবৎ পরিবর্তন্তে সুখানি চ দুখানি চ'; 'মেঘ দেখে তুই করিস নে ভয় আড়ালে তার সূর্য হাসে' ইত্যাদি।
চিরসুখীজন ভ্রমে কি কখন ব্যথিতবেদন বুঝিতে কি পারে, কী যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে কভু আশীবিষে দংশেনি যারে'- কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার সুখী মানুষ জীবনযন্ত্রণা কাকে বলে জানে না; একমাত্র সমব্যথী ব্যক্তিই দুঃখীর ব্যথা অনুধাবন করতে পারে; সমতুল্য- 'অকণ্টকবিদ্ধ কি জানে কাঁটাফুটা কী?'
চিরাগের/চেরাগের নীচেই অন্ধকার১ ভালো ও মন্দের সহাবস্থান; তুলনীয়- 'দেবালয়ে শয়তানের বাস'; পাঠান্তর- 'প্রদীপের নীচেই অন্ধকার'।
চিরাগের/চেরাগের নীচেই অন্ধকার২ যে লোকটা পরকে উপদেশ দেয় তার নিজের সবটাই ভুলে ভরা।
চিল চিনে উচু ডাল; মাছ চিনে গভীর জল নিজের পছন্দ অনুসারে ব্যক্তি তার স্থান নির্বাচন করে।
চিল পড়লে কুটোটাও নিয়ে ওঠে১ কর্মঠ লোক বৃথা শ্রম নষ্ট করে না।
চিল পড়লে কুটোটাও নিয়ে ওঠে২ শত্রু/লোভী কিছু-না-কিছু ক্ষতি না করে নিবৃত্ত হয় না।
চিলকে বিল দেখানো ঘরে বিপদ ডেকে আনা; নিজের ক্ষতি করা; সমতুল্য- 'খাল কেটে কুমীর আনা'; 'চুলকে ঘা করা'।
চিলে কান নিয়ে গেল পরের কথায় বিশ্বাস করা; পাঠান্তর- 'কান নিয়ে গেল চিলে'।
চিল্লানে কুকুর কদাচিৎ কামড়ায় ধীর স্থির না হলে কাজে সাফল্য আসে না; যে বকে সে কাজ করে না; সমতুল্য- 'আওয়াজওয়ালা বিড়াল ইঁদুর ধরে না'; পাঠান্তর- 'চিল্লানে কুকুর কামড়ায় না'।
চুরিবিদ্যা বড়/মহাবিদ্যা যদি না পড়ে/পড়ো ধরা ফাঁকিতে প্রচুর লাভ হয়; তবে ধরা পড়লে পরিণাম দুঃখজনক হতে পারে স্মরণ করিয়ে দিয়ে চুরি না করার উপদেশবাক্য।
চুল থাকে তো বাঁধি, গুণ থাকে তো কাঁদি চুল থাকলে বাঁধার প্রশ্ন আসে; গুণীলোকের প্রয়াণে আমরা চোখের জল ফেলি।
চুলকে ঘা করা ইচ্ছা করে নিজের বিপদ ডেকে আনা; সমতুল্য- 'খাল কেটে কুমীর আনা'; 'চিলকে বিল দেখানো'।
চুলোমুখো দেবতার ঘুঁটের ছাই নৈবদ্য ভালোর জন্য ভালো মন্দের জন্য মন্দ বরাদ্দ হয়।
চুলোর উপর ক্ষীর, মনে নহে স্থির সামনে লোভের বস্তু থাকলে মন স্থির থাকে না।
চূড়ার উপর ময়ূরপাখা সৌন্দর্যের উপর সৌন্দর্য; অতিবাহার; মণিকাঞ্চন যোগ।
চূন খেয়ে গাল পুড়েছে, দই দেখলে ভয় করে পূর্ব-বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতার আশঙ্কা থেকে ভীতি; ভয় থেকে ভ্রান্তি; অভিজ্ঞতা সতর্ক হতে শিক্ষা দেয়; সমতুল্য- 'ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়'; 'নেড়া বেলতলা একবার' ইত্যাদি।
চেতনে অবচেতন১ জেনেও না জানার ভান।
চেতনে অবচেতন২ আবেগে অন্ধ।
চেনা বামুনের পৈতে লাগে না অতিপরিচিত ব্যক্তির অন্য পরিচয় লাগে না; বাহ্যপ্রমাণ দেখিয়ে পরিচিতকে নিজের পরিচয় দিতে হয় না; (উৎস- বাংলায় ব্রাহ্মণজাতি ছাড়াও বৈদ্য ও শুদ্রজাতিও গলায় পৈতা ধারণ করে; সেইকারণে অপরিচিত ব্রাহ্মণকে প্রমাণস্বরূপ পৈতা বার করে দেখাতে হয়।)
চেরাগের নীচেই অন্ধকার যে উপদেশ দেয় সে নিজেই নিয়ম মানে না।
চেলা-চামুণ্ডা১ দুষ্টস্বভাবযুক্ত শিষ্য ও অনুগামীরা
চেলা-চামুণ্ডা২ দেবী চামুণ্ডা ও তাঁর সঙ্গিনীরা; (উৎসকাহিনী- চণ্ড ও মুণ্ড নামে দুই অসুরকে বধ করার জন্য দেবী দুর্গা এক ভয়ানক মুর্তি ধারণ করেন; চণ্ড ও মুণ্ডের মুণ্ডচ্ছে করে তিনি চামুণ্ডা নামে পরিচিত হন; তাঁর সঙিনীরা ছিল- ডাকিনী, প্রেতিনী, যোগিনী, শাঁখিনী ইত্যাদি।)
চেষ্টাবিনা কেষ্টা নেই বিনাপরিশ্রমে কিছুই পাওয়া যায় না।
চেষ্টার অসাধ্য কোন কাজ নেই। চেষ্টা বৃথা যায় না।
চেষ্টার শেষ নেই একবার চেষ্টাতে সাফল্য নাও আসতে পারে; কথায় বলে- একবারে না পারিলে দেেখ শতবার'; সুতরাং মাঝপথে চেষ্টা ছাড়া নেই।
চেহারা দেখে মানুষ চেনা যায় না কোনো জিনিসকে তার চেহারা দিয়ে বিচার করো না; তূলনীয়- 'যা চকচক করে তা সোনা নয়'; 'মানুষের মুখে মুখোশ আঁটা'; বিরুদ্ধ উক্তি- মুখ দেখলে সব জানা যায়; পাঠান্তর-'চেহারা প্রতারণামূলক'।
চৈতের কুয়ায় (কুয়াশা) আমের ক্ষয়- খনা চৈত্রমাসে কুয়াশ পড়লে আমের ফলন ভাল হয় না।
চৈতের কুয়ো (কুয়াশা) ভাদ্রে বান, নরের মুণ্ড গড়াগড়ি যান- খনা চৈত্রমাসে কুয়াশ পড়লে এবং ভাদ্রমাসে বন্যা হলে দেশে মড়ক লাগে।
চৈতের গীত বৈশাখে গায় তারে পুছে কোন শালায়/হালায় সময়ের কাজ সময়ে না করলে কোন ফললাভ হয় না।
চৈত্রে কাঁপে থর থর, বৈশাখে ঝড়পাথর, জৈষ্ঠ্যেতে তারা ফোটে তবেই জানবে বর্ষা বটে- খনা যে বছর চৈত্রমাসে শীত থাকে, বৈশাখ মাসে শিলাবৃষ্টি হয় এবং জৈষ্ঠ্যমাসে আকাশ পরিষ্কার থাকে সে বছর প্রবল বর্ষণ হয়।
চোখ বুজলেই সব অন্ধকার আমি মরলেই সব শেষ; আমি নেই তো জগৎ নেই; স্বার্থপরের মত চিন্তাধারা; তুলনীয়- 'আমার পরে মহাপ্লাবন'।
চোখ থাকতে কানা দেখেও দেখে না।
চোখ বন্ধ করলে প্রলয় বন্ধ হয় না১ জগৎ তার নিজের নিয়মে চলে; এককব্যক্তি তার এক অত্যল্প অংশমাত্র।
চোখ বন্ধ করলে প্রলয় বন্ধ হয় না২ সব ছেড়েছুড়ে বসে থাকলে বিপদ এড়ানো যায় না।
চোখ মনের আয়না চোখের দিকে তাকিয়ে মনের অবস্থা বোঝা যায়; মনের ভাবনা চোখের মণিতে লেখা থাকে।
চোখ সব দেখে কেবল নিজেকে দেখে না১ চোখ সবার দোষ নজর করে শুধু নিজের দোষ নজরে পড়ে না।
চোখে চোখে যতক্ষণ প্রাণ পোড়ে ততক্ষণ শুধু চোখের নেশার মেকি প্রণয়; প্রাণের টান নেই; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'চোখের আড়াল হলে মনের আড়াল হয়'।
চোখে ঠুলি পরা অগ্রাহ্য করা; ইচ্ছা করে না দেখা; উদাসীন থাকা।
চোখে দেখে শুনতে চায়, এমন বোকা আছে কোথায়? নিজের চোখকেও যে বিশ্বাস করে না পরের কথায় আস্থা রাখে, এমন আহাম্মক
চোখে ধূলা দেওয়া এমন কৌশলে ঠাকানো যে ক্ষমতা থাকা সত্বেও ক্ষমতা ব্যবহার করতে অপারগ হয়; অনেকসময় ঠগেরা লোকের চোখে ধূলাবালি ছুঁড়ে সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে পালাতো; চোখ পরিষ্কার করার আগেই ঠগ পগার পার। বর্তমানে ফাঁকি দেওয়া অর্থে প্রবাদটি ব্যবহৃত হয়।
চোখে ভেলকি লাগা মতিভ্রম হওয়া; মোহাচ্ছন্ন হওয়া।
চোখে সর্ষে ফুল দেখা বিপদে পড়ে দিশেহারা হওয়া; সমতুল্য- 'চোখে ধোঁয়া দেখা'।
চোখের আড়াল হলে মনের/স্মৃতির আড়াল হয় দেখাসাক্ষাৎ না হলে মনে থাকে না; মৌখিক ভালবাসা; মেকি প্রেম; সমতুল্য- 'মানুষের কুটুম এলে গেলে'; 'নজরোসে দূরে বাহর মন কি'; বিপরীত উক্তি- 'অনুপস্থিতি হৃদয়কে অনুরাগী করে তোলে'।
চোখের আড়াল তো মনের আড়াল নয় অন্তরের দেখা চোখের দেখার উপর নির্ভরশীল নয়।
চোখের জল নারীর বল নারী চোখের জলে সবকিছু জয় করতে চায়।
চোখের জলের মত কিছুই দ্রুত শুকায় না মানুষ দ্রুত শোক ভুলে যায় বা ভু'লতে চায়।
চোখের দোষে সব হলদে মন্দলোক সব মন্দ দেখে, ভালো জিনিস খুঁজে পায় না; দুর্যোধনের চোখে সবাই মন্দ ছিী।
চোখের বদলে চোখ, দাঁতের বদলে দাঁত১ কাউকে আঘাত করলে প্রত্যাঘাতও সমান হয়।
চোখের বদলে চোখ, দাঁতের বদলে দাঁত২ প্রতিশোধ নেবার প্রবল ইচ্ছা।
চোদ্দশাকের মধ্যে ওল পরামাণিক ভূতচতুর্দশীর দিনে চোদ্দশাক খাওয়ার রীতি আছে; কোথাও কোথাও চোদ্দশাকের মধ্যে ওলপাতা মিশিয়ে দেওয়া হয়; কিছু একজাতীয় বিষয়বস্তুর সঙ্গে ভিন্ন কোন বিষয়বস্তু মিশিয়ে দিলে এই প্রবাদ বলা হয়।
চোর খোঁজে অন্ধকার সকলেই সুবিধাজনক অবস্থা খোঁজে।
চোর চায় ছেঁচা বেড়া নজরদারি না থাকার সুবিধা; অন্যায় কাজের সুযোগ অন্বেষণ; পাঠান্তর- ' চোর চায় ভাঙা তালা'।
চোর চুরি না করতে পারলে সাধু হয়১ চোরে সাধুতে তফাৎ নেই; চুরি কর'তে অক্ষম সাধু হয়; বিপরীতে সুযোগ পেলে সাধু চুরি করে; সমতুল্য- আলগা পেলে সবাই চোর'।
চোর চুরি না করতে পারলে সাধু হয়২ নাচারে পরে সাধুসাজা; তুলনীয়- 'নারী কুরূপা হলোে পতিব্রতা হয়'; রোগে পড়লে মানুষের ভক্তিবৃদ্ধি হয়; 'বৃদ্ধা হলোে বেশ্যা তপস্বিনী হয়' ইত্যাদি।
চোর ছেঁচড় চোপায় দড়, আগে দৌড়ায় ঠাকুর ঘর ভণ্ডরা মন্দকাজের সাফাই দিতে বড়বড় কথা বলে এবং কথায়কথায় ঈশ্বরের শপথ নেয়।
চোর ধনী হলে সজ্জন হয় অর্থকরী সমাজব্যবস্থায় অর্থবল থাকলে সবই হয়;
চোর চলে গেলে চৌকিদার আসে বিপদে পড়লে হতবুদ্ধি; বিপদ কাটকেই বুদ্ধি খোলে; সুযোগ হাতছাড়া হলোে মাথায় নানা ফন্দি-ফিকির আসে; সময়ে বুদ্ধির অভাব ঘটলে এই প্রবাদ উক্ত হয়; তুলনীয় 'চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে'; 'রোগী মরলে বৈদ্য আসে'; 'যুদ্ধের পর সিপাই হাজির'।
চোর ধরতে চোর লাগে অবৈধ কার্যকলাপ উদঘাটনের জন্য অবৈধ পদ্ধতি অবলম্বন করা; কৌশলে কার্যসিদ্ধি; সমতুল্য- 'কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা'; পাঠান্তর- 'চোর ধরতে চোরকে নিয়োগ'।
চোর পর মোর১ চোরের কাছ থেকে চোরাই মাল চুরি; ঠগকে ঠকানো; বাংলা পাঠান্তর- 'চোরের উপর বাটপাড়ি'।
চোর পর মোর২ বেইমানের সাথে বেইমানি করা উচিৎ; সমতুল্য- 'শঠে শাঠ্যাং সমাচরেৎ'।
চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে চোর চলে গেলে চৌকিদার আসে'-এর অনুরূপ
চোর ভাল তো বেকুব ভালো না বুদ্ধিহীন সহ্যের বাইরে; একটু সতর্ক থাকলে চুরি আটকানো যায়, কিন্তু বেকুব কোনদিক থেকে ক্ষতি করবে বোঝা ভার।
চোর মচায়ে শোর চোর ধরা পড়লে 'চোর চোর' বলে চিৎকার করে ছুটে পালায়।
চোর মজে সাতঘর মজায়ে১ চোর ধরা পড়লে অনেককে মকদ্দমায় ফাঁসায়।
চোর মজে সাতঘর মজায়ে২ চোর ধরতে পুলিশ চোরের চেনাজানা একাধিক নির্দোষ লোককে হয়রান করে।
চোর সাধুতে তফাৎ নেই জন্মজ কারণে উভয়ে সমান; কেউ চোর বা সাধু হয়ে জন্মায় না; আবার প্রবাদে বলে দরজা খোলা পেলে সাধুও চোর হয়; তুলনীয়- 'চোর চুরি না করতে পারলে সাধু হয়'।
চোরকে বলে চুরি কর, গেরস্তকে বলে সজাগ থাকো যে দুইপক্ষকেই হাতে রাখতে চায়; স্বভাব-কপটচারী; সমতুল্য- 'দুমুখো সাপ'।
চোরকে ধর্মের কাহিনী শুনানো আর উলুবনে মুক্তা ছড়ানো একই কথা অসৎব্যক্তিকে উপদেশ দিলেও সে সৎ হয় না; মন্দকে সদুপদেশ দেওয়া বৃথা; পাঠান্তর- 'চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী'।
চোরা গরুর সাথে কপিলার বন্ধন দোষীর সঙ্গে থাকলে নির্দোষও শাস্তি পায়; (উৎসকাহিনী- ইন্দ্র সগররাজার অশ্ব চুরি করে কপিলমুনির আশ্রমে লুকিয়ে রাখেন; অশ্বরক্ষগণ আশ্রমে সেই অশ্ব খুঁজে পেয়ে কপিলমুনিকে চোর সাব্যস্ত করে তাঁকে যথেষ্ট লাঞ্ছনা করে।)
চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী- কাশীরাম দাস অসৎ/দুষ্টকে সদুপদেশ দেওয়া বৃথা।
চোরে কামারে দেখা নেই সিঁধকাঠি গড়া পরস্পরের অগোচরে কোন মন্দকাজ সম্পন্ন হলে এই প্রবাদ বলা হয়; লোকের বিশ্বাস রাতে চোর একটা লোহার টুকরা কামারশালার সামনে রেখে যায়; সকালবেলা কামার সেটা দেখে বুঝতে পারে সিঁধকাঠি গড়ার জন্য চোর রেখে গেছে; কামার সেইমত একটা সিঁধকাঠি গড়ে দরজার সামনে রেখে দেয়; রাত্রিবেলায় চোর এসে সেখানে মজুরিমূল্য রেখে সিঁধকাঠিটি নিয়ে যায়; এই কাহিনী থেকে প্রবাদটির সৃষ্টি হয়।
চোরে চায় ভাঙা বেড়া মন্দলোকে স্বার্থসিদ্ধির উপায় খোঁজে।
চোরে চোরে আলি (আত্মীয়তা) এক চোরে বিয়ে করে আরেক চোরের শালী দোসরহিসাবে এক অসৎ আরেক অসৎকেই পছন্দ করে; (উৎসকাহিনী- এক গল্পে আছে চারচোর একগৃহস্থের বাড়িতে চুরি করে চোরাই মালপত্র পাশের এক আস্তাবলে থেকে একটা খাটিয়া এনে তাতে চাপাচুপি দিয়ে ভোরেরদিকে 'বল হরি হরিবোল' ধ্বনি দিয়ে পালাতে থাকে; পথে আরেক পাকাচোরের সঙ্গে তাদের দেখা; সে হেসে বলে- 'গাড়ুর নল দেখা যাচ্ছে যে'; চোরের দল বুঝতে পারে তারা ধরা পড়ে গেছে; তাড়াতাড়ি গাড়ুর নল ঢাকা দিয়ে তারা বাটপাড়কে বলে, 'ভাগ নেবে তো চলে এসো'; মুচকিহেসে 'মেসো কবে মারা গেছে' বলে বাটপাড় খাটিয়ায় কাঁধ লাগায়; এই গল্প থেকে প্রবাদটির সৃষ্টি হয়েছে;) পাঠান্তর- 'চোরে চোরে কুটুম্বিতা'; 'চোরে চোরে মাসতুতো ভাই'।
চোরের উপর বাটপাড়ি চোরের কাছ থেকে চোরাই মাল চুরি; উপরচালাকি করে ঠগকে ঠকানো; হিন্দি পাঠান্তর- 'চোর পর মোর'।
চোরের উপর রাগ করে মাটিতে ভাত খাওয়া বিপরীত বুদ্ধি; চোরের কিছুই হল না,পরন্তু নিজের ক্ষতি হল; রাগে অন্ধ হলে নিজের ক্ষতি হয়; তুলনীয়- 'মটকা/রক্ত গরম হলে বুদ্ধি গলে যায়'।
চোরের দশদিন, গৃহস্থের একদিন১ কুকর্মের ফল একদিন ভুগতেই হয়; পাঠান্তর- 'চোরের শতেক রাত গৃহস্থের একরাত'।
চোরের দশদিন, গৃহস্থের একদিন২ পাপ কাজ কখনো চাপা থাকে না।
চোরের ধন বাটপাড়ে খায়/লয় অসৎ উপায়ে অর্জিত ধন কেউ নিজে ভোগ করতে পারে না।
চোরের বল মিথ্যায় আশ্রয় বাঁচতে গিয়ে নানান কথা।
চোরের মন চৌকিদারে ধরা পড়ার ভয়ে পাপীরা সবসময় শঙ্কিত থাকে; সমতুল্য- 'মাটিতে থাপ্পড় পরলে গুনাহগার চমকে ওঠে'।
চোরের মন পুঁই আদাড়ে/বোঁচকার দিকে সকলেই আপনার স্বার্থচিন্তায় মগ্ন থাকে।
চোরের মায়ের কান্না অসৎ কাজের জন্য গোপনে অশ্রুপাত।
চোরের মায়ের বড় গলা অপরাধ করে নিরপরাধ সাজার চেষ্টা; অসৎকাজ চাপা দেওয়ার জন্য আস্ফালন; যে যতবেশি অসৎ সে ততবেশি সাধুতার ভান করে।
চোরের সাক্ষী গাঁটকাটা স্বার্থের কারণে এক অসৎ অন্য অসৎকে সমর্থন করে; সমতুল্য- 'শুঁড়ির সাক্ষী মাতাল'।
চৌকিদারি কি ঝকমারি সবসময় স্বার্থহানির চিন্তায় পাগল; লাভ অল্প, কষ্ট বেশি।
চৌকো পেরেক গোল গর্তে ব্যক্তিবিশেষের পক্ষে অসচ্ছান্দ কাজের পরিবেশ; পাঠান্তর- 'গোল গর্তে চৌকো পেরেক'।
চৌঘরি মাত দেখানো দাবাখেলায় ব্যবহৃত; ভীষণ সঙ্কটে ফেলা।
চৌরে গতে বা কিমু সাবাধানম চোর পালালে আর সাবধান হয়ে কি ফল হবে? পণ্ডশ্রম; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে'; 'নির্বাণদীপে কিমু তৈলদানম'।

প্রবাদ-প্রবচন অর্থ
ছ-আনার কাপড়ে ন-আনার পাড় অল্পদামের জিনিস বেশিদামের উপকরণে সাজানো; মূলবিষয় থেকে আনুসঙ্গিক বিষয় অনেক বেশি; কাজ থেকে আড়ম্বর বেশি; আচরণে বাড়াবাড়ি; তুলনীয়- বারো হাত কাঁকুড়ের তেরো হাত বীচি'; 'বারো হাত কাপড়ের তেরো হাত দশী' ইত্যাদি।
ছকড়া নকড়া করা অতি সামান্যকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বা হেলেফেলা করা।
ছড়ায় যে জন পথের কাঁটা তার যেন থাকে জুতা আঁটা পরের অনিষ্ট করতে গেলে নিজেরও অনিষ্ট হতে পারে।
ছল করে জল আনা এক কাজের ছুতায় অন্য কার্যসিদ্ধি।
ছাঁচের জলে খাবি খায়, সমুদ্রপার হতে চায়/যায়। যে সামান্য কাজ করতে ভয় পায় সে বড় কাজে হাত বাড়ায়; অক্ষমের উচ্চাশা; সমতুল্য- 'আদার ব্যাপারী হয়ে জাহাজের খবর নেয়'; 'বামন হয়ে চাঁদ ধরতে যায়'।
ছাঁদনদড়ি গোদাবাড়ী যে আমার আমি তারি যখন যে আদর যত্ন করে তখন তার অধীন; প্রশংসার্থে- কৃতজ্ঞতাবোধ আছে; নিন্দার্থে- দৃঢ় নীতিবোধের অভাব; তুলনীয়- ইন্দ্রের শচী'।
ছাইচাপা আগুন১ অব্যক্ত ক্রোধ/মর্মবেদনা।
ছাইচাপা আগুন২ ভিতরে তেজ আছে কিন্তু বাইরে তার প্রকাশ নেই।
ছাইচাপা আগুন৩ সুপ্তপ্রতিভা।
ছাইতে জানিনে গোড় চিনি কাজ করতে পারে না, অথচ দাবী করে পরের কাজের দোষত্রুটি ভালই বোঝে; হাস্যকর দাবী।
ছাই পায় না মুড়কি জলপান যোগ্যতার অতিরিক্ত আশা করা; অল্প পাওয়ার আশা নেই বেশি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা; হাস্যজনক অভিলাষ।
ছাই পেতে কাটা নির্মমভাবে শত্রু নির্যাতন করা; সমতুল্য- পাঁশ পেড়ে কাটা।
ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো১ তুচ্ছ কাজ করার জন্য অবহেলার পাত্রের খোঁজ;অবহেলার পাত্র, কিন্তু কাজের সময় ডাক পড়ে।
ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো২ সংসারে যে ব্যক্তি অকিঞ্চিতকর এবং অপ্রীতিকর কাজ করে।
ছাই মাখলেই সন্ন্যাসী হয় না১ রঙীন হলেই দামী নয়;
ছাই মাখলেই সন্ন্যাসী হয় না২ সাধু সাজলেই সাধু নয়; ভণ্ডামী ধরা পড়ে।
ছাইমুঠো ধরলে সোনামুঠো হয় ভগ্যোদয়ে যৎসামান্য কাজেও দুটো পয়সা আসে।
ছাগল দিয়ে ধান চাষ অকেজোকে দিয়ে কোন বড় কাজ করার চেষ্টা, যা হওয়ার নয়; কোন কাজে ব্যর্থ হলে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়; পাঠান্তর- 'ছাগল দিয়ে যব মাড়ানো'।
ছাগল বলে আলুনি খেলাম; গেরস্ত বলে প্রাণে ম‘লাম অসন্তুষ্টকে কখনো তুষ্ট করা যায় না; কোন কাজে অপযশ হলে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়; হিন্দি পাঠান্তর- 'বক্‌রা অপনে জান্‌সে গয়া, খানেওয়ালা স্বাদ নহি পায়া'।
ছাগলকে ভাঙা বেড়া দেখাতে নেই লোভীকে লোভের সামগ্রী দেখাতে নেই; যাতে লোভ বাড়ে এমন কিছু করা নেই; সমতুল্য- 'কাঙালকে শাকের খেত দেখাতে নেই'।
ছাগলে কিনা খায়, পাগলে কিনা বলে অবোধ ছাগলে খাদ্য-অখাদ্যে বাছবিচার করে না-সব খায়; অবোধ পাগলে বাচ্য-অবাচ্য বোঝে না- সব বলে; অবোধদের গুরুত্ব দিতে নেই।
ছাগলের লোমে পশম হয় না মন্দলোকের কাছে ভালো ব্যবহার প্রত্যাশা করা যায় না; তুলনীয়-'আমড়াগাছে আম ফলে না'।
ছাড়া পাখী ফিরে আসে বলা কথা ফেরে না যে পাখিটা তুমি ছেড়ে দিয়েছো সে আবার ফিরে আসতে পারে, যে কথাটা মুখ থেকে বেড়িয়ে গেছে সেটা আর ফিরিবে না।
ছাতা দিয়ে মাথা রাখা উপকার করা; সামান্য় উপকার হলে কৌতুকে এই উক্তি করা হয়; সমতুল্য- 'ভাঙ্গাঘর ছেয়ে দেওয়া'; পাঠান্তর- 'ছাতা দিতে মাথা বাঁচানো'।
ছাতার (পাখি) বলে গাঁ আমার নিকৃষ্টের অন্যায্য দাবী; (উৎস- পাখিদের মধ্যে ছাতার নিকৃষ্ট বলে বিবেচিত)।
ছাতারে কীর্তন চলছে অনর্থক গোলমাল হচ্ছে (উৎস- ছাতার পাখির দল এক জায়গায় জড়ো হলে কিচিরমিচির শব্দে উতক্ত করে তোলে।)
ছাতুর হাঁড়িতে বাড়ি পড়া১ অকস্মাৎ বিপদে পড়ে দিশেহারা।
ছাতুর হাঁড়িতে বাড়ি পড়া২ সব লণ্ডভণ্ড হওয়া।
ছাত্রানাং অধ্যয়নং তপঃ অধ্যয়নই ছাত্রদের তপস্যা বা ধর্ম।
ছায়া আর কায়া কায়া থাকলে কায়া থাকবেই; অঙ্গাঙ্গী-সম্পর্ক; আলো আর কালো; দেহ আর মন; দিন আর রাত; ভালো আর মন্দ ইত্যাদি।
ছায়া চাইলে বড়গাছের তলায় নিও ক্ষমতাসম্পন্ন লোকের কাছে আশ্রয় নিতে হয়; পাঠান্তর- 'আশ্রয়, ফল ও ছায়া বড়গাছের তলায় নিতে হয়'।
ছায়া ভালো ছাতার তল; বল ভালো নিজের বল- খনা ছাতার তলার ছায়া বড় মিষ্টি; নিজের শক্তিই আসল শক্তি।
ছায়াতে ভূত দেখা অমূলক আশঙ্কা করা।
ছায়ার পিছনে ছুটে ছায়া ধরা যায় না অতি আশা সর্বনাশা; অনিশ্চিতের প্রত্যাশায় থেকো না; পাঠান্তর- 'ছায়ার পিছনে ছোট এবং আসল হারাও'।
ছাল নেই কুত্তা, নাম তার বাঘা অযোগ্যকে অতিরিক্ত সম্মান জানানো; যে গুণ নেই সেই গুণ আরোপ; আদিখ্যেতা, বাড়াবাড়ি।
ছিঁড়লো দড়া তো ছুটলো ঘোড়া১ নিয়মের কড়াকড়ি উঠতেই সবাই উদ্দাম; শৃঙ্খলা না থাকলে সবাই বিশৃঙ্খল হয়।
ছিঁড়েছিঁড়ে কাটুনী, পুড়েপুড়ে রাঁধুনী অভ্যাসে অভিজ্ঞ হয়; অভ্যাস দ্বিতীয় প্রকৃতি।
ছিকলি কাটা টিয়ে একবার যে স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে, তাকে ফের অধীন করা সুকঠিন ব্যাপার।
ছিদ্রেস্বনর্থা বহুলী ভবন্তী ছিদ্র পেলেই অনর্থগুলি বহুগুণ বৃদ্ধি পায়; ছেঁড়াকাপড় সেলাই না করলে ছিদ্র ক্রমশঃ বাড়তে থাকে; দোষ সংশোধন না করলে এক দোষ থেকে বহুদোষের জন্ম হয়; তুলনীয়- 'আপৎসু বৈরাণি সমুদ্ভবন্তি'; 'ক্ষতে প্রহারা নিপতন্তি'; 'ধনক্ষয়ে মুর্ছতি জাঠরাগ্নি'।
ছিল ঢেঁকি হল শূল কাটতে কাটতে নির্মূল কাটতে কাটতে ছোট হয়ে গেছে; খুঁতখুঁতানিতে কাজ পণ্ড।
ছিল না কথা দিল গাল আজ না হয় হবে কাল নারীসঙ্গলোলুপ লম্পটের দুরাশা।
ছিল যত নাড়াবুনে সব হলো কীর্তুনে চাষাত বেটা কীর্তনীয়া হতে চায়; একটা হুজুগ পেলেই হলো; যোগ্য অযোগ্য সবাই সেই ব্যাপারে ঝাঁপিয়ে পড়ে; তুলনীয় 'কাস্তে ভেঙে গড়ে করতাল'।
ছিলাম রোগী হয়েছে রোজা ঠেকায় পড়ে লোকে অনেক অভিজ্ঞতা লাভ করে।
ছুঁচ, সোহাগ, সুজন- ভালো করে তিনজন; উই, ইঁদু্র, কুজন- মন্দ করে তিনজন। তিন ভাল সুসঙ্গী ও তিন কুসঙ্গীর প্রতি ইঙ্গিত।
ছুঁচ হয়ে ঢোকে ফাল (লাঙ্গলের ফলা) হয়ে বেরোয়১ উপকার করার নামে ঢোকে, অনিষ্ট করে বেরোয়; বন্ধু হয়ে ঢোকে শত্রু হয়ে বেরোয়।
ছুঁচ হয়ে ঢোকে ফাল (লাঙ্গলের ফলা) হয়ে বেরোয়২ সুযোগ নিয়ে সবাই দাঁও মারার মওকা খোঁজে।
ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ১ নেই-লাভের কারবার করে অখ্যাতি অর্জন।
ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ২ হীনব্যক্তিকে শাস্তি দিয়ে সুনামের বদলে দুর্নাম কুড়ানো।
ছুঁচোয় যদি আতর মাখে, তবু কি তার গন্ধ ঢাকে?১ নীচ কোনভাবেই উঁচুতে ওঠে না।
ছুঁচোয় যদি আতর মাখে, তবু কি তার গন্ধ ঢাকে?১ মন্দ সাধু সাজার চেষ্টা করলেও তার মন্দস্বভাব বেরিয়ে পড়ে।
ছুঁচোর গু ওষুধে লাগে ছুঁচো গিয়ে পর্বতে হাগে নীচলোকের কাছে উপকার চাইলে সে গর্বে স্ফীত হয়ে উপকার করতে অস্বীকার করে।
ছুঁচোর গোলাম চামচিকে মাইনে তার চোদ্দ সিকে তুচ্ছলোকের প্রতি অবজ্ঞাসূচক উক্তি।
ছেঁড়াকলার পাত একবউকে ভাত দেয় না আরো বউয়ের সাধ হাতের কাজই শেষ করতে পারে না আরো কাজের খোঁজ করে।
ছেঁড়াকাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখা সামর্থ্য নেই অথচ প্রাচুর্যের প্রত্যাশা; দরিদ্রের উচ্চাভিলাষ।
ছেঁড়াকাপড় রুখু মাথা দুঃখ বলে যাবো কোথা? দুঃখ অপরিচ্ছন্নতাকে জড়িয়ে ধরতে ভালবাসে।
ছেঁড়াচুলে খোঁপা বাঁধা১ পরচুলায় সৌন্দর্য খোলে না; ধার করা জিনিসে ভাল কাজ হয় না।
ছেঁড়াচুলে খোঁপা বাঁধা২ পরের স্বার্থে জড়িয়ে পড়া।
ছেঁড়াবস্তায় খাসাচাল১ অগুণীর ঘরে গুণবান সন্তান; পাঠান্তর- 'ধুকড়ির মধ্যে খাসা চাল'
ছেঁড়াবস্তায় খাসাচাল২ কুদর্শন হলেও গুণের ছেলে।
ছেঁড়াসম্পর্ক জোড়া লাগে না সম্পর্ক একবার ভাঙলে পুরানো সম্পর্ক ফিরে পাওয়া কঠিন।
ছেঁদাপয়সার মা-বাপ অত্যন্ত কৃপণ, যে একট ছেঁদাপয়সা (বৃটিশ আমলের এক পয়সা) খরচ করতেও কাতর হয়; পাঠান্তর- 'ফুটোপয়সার মা-বাপ'।
ছেঁদোকথা মাথার জটা, খুলতে গেলে বিষম ল্যাঠা চুলের জটা মত অসংলগ্ন কথাবার্তা সহজে বোধগম্য হয় না।
ছেড়ে দিয়ে তেড়ে ধরা সুযোগ হারিয়ে আবার ফিরে পাওয়ার প্রয়াস।
ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি কোনরকমে সঙ্কট থেকে মুক্তি পাওয়ার কাতর ইচ্ছা; আমি আর উপকার চাই না, এবার নিস্কৃতি দাও; তোমার হাত থেকে মুক্তি চাই; সমতুল্য- 'ভিক্ষা চাই না কুত্তা সামলাও'।
ছেলে থেকে ছেলের মাথা ভারী অতি বুদ্ধিমান ছেলে।
ছেলে নষ্ট হাটে বউ নষ্ট ঘাটে বদসঙ্গে মিশে ছেলেমেয়েরা নষ্ট হয়।
ছেলের চেয়ে ছেলের গু ভারী মূল থেকে আনুসঙ্গিক ব্যাপার অনেক বেশি; সমতুল্য- বারোহাত কাঁকুড়ের তেরোহাত বীচি'; 'বারোহাত কাপড়ের তেরোহাত দশী'; 'বারোহাত পুকুরে তেরোহাত মাছ'; 'মিঞা থেকে মিঞার ডিঙি ভারি' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'ছেলের থেকে ছেলের ঘুনসি বড়'।
ছেলের হাতের মোয়া নয় যে ভোগা দেবে বয়স্কলোককে কেউ বোকা বানাতে চাইলে এই প্রবাদ উক্ত হয়। ।
ছেলেদের প্রতিভা এবং মেয়েদের রূপ দুইই জন্মগত ও প্রলয়ঙ্কর। এই দুটি বিষয় দুনিয়াকে উলটপালট ক'রে দিতে পারে।
ছোঁড়া ঢিল/তীর ফেরে না ছেড়ে দেওয়া সুযোগ ফিরে আসে না; সমতুল্য- 'বলা কথা ফেরে না'; 'ভাত সিদ্ধ হয়ে গেছে'; 'মুখের কথা ফেরে না; বিরুদ্ধ উক্তি- 'মরার আগে পর্যন্ত ফিরে আসার সুযোগ থাকে'।
ছোট কাঁটাটি ফোটে পায়, তুলে ফেলো নইলে দায় ছোটদোষ থেকেও বড়ক্ষতি হতে পারে।
ছোটখাটো বিষয় নিয়ে তর্ক করলে বেশি সময় নষ্ট হয় ছোটখাটো বিষয়ে সকলেরই কিছু-না-কিছু জ্ঞান থাকে।
ছোটছোট চোখে বড়বড় স্বপ্ন দেখা অসম্ভবের পিছনে ছোটা; যোগ্যতার বাইরে গিয়ে কিছু প্রত্যাশ করা; হিন্দি পাঠান্তর- 'ছোটেছোটে আঁখে আউর বড়াবড়া স্বপ্না'।
ছোটমুখে বড়কথা১ ছোটদের মুখে বড়দের মত কথাবার্তা; লোকের মর্যাদা না রেখে কথা বলা; পাঠান্তর- 'যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা'; হিন্দি পাঠান্তর- 'ছোটে মুঁহ বড়ী বাত'।
ছোটমুখে বড়কথা২ অনুচিত কতাবার্তা বলা; ওজন না বুঝে নিজের অবস্থানের উপরে উঠে কথা বলা।
ছোট্টশরীরে একটি বিরাট আত্মা বাস করে আত্মা শাশ্বত; আত্মাকে অক্ষয় এবং সময়ের ঊর্ধ্বে বলে বিবেচনা করা হয়।
ছ্যাঁকা (গরম জলে) খাওয়া কুকুর জল দেখলে ভয় পায় অভিজ্ঞতা সতর্ক হতে শেখায়; আগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এমন ব্যক্তি সবসময় আতঙ্কগ্রস্ত থাকে; যে একবার ঠেকেছে সে দ্বিতীয়বার সেই কাজে এগোয় না; সমতুল্য- 'চূন খেয়ে গাল পোড়ে, দই দেখলে ভয় করে'; 'দগ্ধ শিশু আগুন দেখলে ভয় পায়';'নেড়া বেলতলায় একবার যায়' ইত্যাদি।
ছ্যাঁদাকলসি, চোরাগাই, চোরপড়শী ধূর্তভাই; মূর্খছেলে স্ত্রী নষ্ট, এই কয়টি বড়ই কষ্ট ফুটোকলসি কাজের নয়; দোহনের সময় যে গাই দুধ চুরি করে তার প্রতিপালন করা বৃথা; নিজের- ভাই ধূর্ত, ছেলে মূর্খ এবং স্ত্রী দুশ্চরিত্রা হলে খুব কষ্টের বিষয় হয়; পাঠান্তর- 'ছ্যাঁদাপয়সা, চোরাগাই, চোরপড়শী ধূর্তভাই; মূর্খছেলে স্ত্রী নষ্ট, এই কয়টি বড়ই কষ্ট

প্রবাদ-প্রবচন অর্থ
জগৎ আনন্দময় যার মনে যা লয় সংসার আনন্দময়; এখানে সবসময সুখীমন আনন্দভোগ করে আর দুখীমন দুঃখভোগ করে; পাঠান্তর- 'সংসার আনন্দময় যার মনে যা লয়'।
জগৎজুড়ে জাল ফেলেছে পালিয়ে বাঁচবি কোথা?১ সংসারজালরূপ বন্ধন থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন।
জগৎজুড়ে জাল ফেলেছে পালিয়ে বাঁচবি কোথা?২ যমের হাত থেকে নিস্কৃতি নাই।
জগৎ মায়াময়, শুধু ছায়ার খেলা তুমি কার, কে তোমার, কেউ কারো নয়; সবই অনিত্য।
জগতে ত্রুটিহীন কাজ দুর্লভ কাজ করলে ভুলত্রুটি হবেই; নির্দোষ কিছু হয় না।
জগতে ভালো কে, যার মনে লাগে যে যার যাকে পছন্দ সেই তার কাছে ভাল; তুলনীয়- 'ভিন্নরুচির্হি লোকঃ'।
জগন্নাথ পেতে গেলে হাড়ীর ঝাঁটা খেতে হয় কষ্ট না করলে ইষ্ট পাওয়া যায় না; (জগন্নাথদর্শনে গিয়ে পাণ্ডার ছড়ির বাড়ি না খেয়ে জগন্নাথ দর্শন করা যায় না)।
জগাখিচুড়ি১ পুরীর জগন্নাথদেবের ভোগ; বহু আবশ্যক ও অনাবশ্যক শাকসব্জির পাকে প্রস্তুত খাদ্য যা সুস্বাদু হয় না।
জগাখিচুড়ি২ বিভিন্ন অবাঞ্ছিত বস্তুর সংমিশ্রণ।
জগাখিচুড়ি পাকানো কোন বিষয়কে নানাভাবে জটিল করে তোলা; গোলমাল বাঁধানো।
জঙ্গল মে মঙ্গল হোনা- হিন্দি প্রবাদ শান্ত নির্জনস্থানে নিরুপদ্রবে মনের আনন্দে বাস করাঈ মঙ্গলজনক।
জঙ্গলা কখনো পোষ না মানে, মন সদা তার কেওড়া/সোঁদর বনে১ বাঘের মন থেকে বন মোছে না; বন্ধনে কেউ জড়াতে চায় না; বিরুদ্ধ উক্তি- 'বনের পাখী পোষ মানে'।
জঙ্গলা কখনো পোষ না মানে, মন সদা তার কেওড়া/সোঁদর বনে২ যার যা অভিলাষ সেইদিকে তার টান।
জড়ভরত অকর্মণ্য নিস্ক্রিয় নিরুদ্দম জড়বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি; (উৎসকাহিনী- মহারাজ ভরত পরজন্মে এক ব্রাহ্মণপরিবার জাতিস্মর হয়ে জন্মগ্রহণ করেন; সর্বক্ষণ তিনি ভগবানের আরাধনায় ব্যাপৃত থাকতেন; কোন কাজ করতেন না; কারো সাথে কথাবার্তা বলতেন না; এই জন্য তিনি জড় ভরত নামে আখ্যাত হন।)
জন জামাই ভাগনা, এ তিন নয় আপনা মজুর, জামাই আর ভাগনে- এই তিনজন যতই উপকার করুক-না-কেন কোনদিন আপনার হয় না; তুলনীয়- 'যম জামাই ভাগনা কেউ নয় আপনা'।
জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী জননী ও জন্মভূমি স্বর্গ থেকেও মহীয়সী, সর্বাপেক্ষা পূজনীয়; তুল্নীয়- 'কিসের মাসী কিসের পিসী কিসের বৃন্দাবন; মরাগাছে ফুল ফুটেছে মা বড় ধন'।
জন্তু দাঁত বার করলে ভেবো না সে হাসছে, সে কামড়াতে চায় পশুপ্রকৃতির লোকেদের আচরণ হিংস্র হয়।
জন্ম, মৃ্ত্যু, বিয়ে তিন বিধাতা দিয়ে // জন্ম-মৃত্যু-বিবাহ, তিন না জানেন বরাহ (বরাহমিহির) নিয়তি বা বিধাতা সব নিয়ন্ত্রণ করে; মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোন প্রশ্ন নেই।
জন্মদিনের উৎসাহে মনে রেখো মৃত্যুর দিকে একধাপ এগুলে আনন্দের দিনে দুঃখকেও মনে রেখো, ভুলে যেও না; দুঃখকে মনে রাখলে আনন্দ বেশি মধুর হয়।
জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে? জীবমাত্রই মরণশীল; সংস্কৃত পাঠান্তর- 'জাতস্য হি ধ্রুবো মৃত্যু'।
জন্মে দেখেনি লোহার মুখ, কোদালকে বলে গুণছুঁচ অবোধের আগ বাড়িয়ে বাজে বকা; অবোধে না জানা বিষয়ে মন্তব্য করে হাসির খোরাক হয়।
জন্মের মধ্যে কর্ম নিমুর চৈত্রমাসে রাস সামান্য একটি কাজ করে অহঙ্কার; (নবাব সিরাজদ্দৌল্লার আমলের পুরোহিতব্রাহ্মণ নিমু গোঁসাই বাৎসরিক পর্বের মধ্যে চৈত্রমাসে এক রাসযাত্রার আয়োজন করতেন; এই একটি কাজ করে তিনি খুব গর্ব প্রকাশ করতেন; এই ঘটনাকে বিদ্রূপ করতে প্রবাদটির সৃষ্টি হয়।)
জপতপ কর কি? মরতে জানলে ডর কি? মরার ভয়ে মানুষ ঈশ্বরকে ডাকে; কিন্তু জপতপে যমকে এড়ানো যায় না।
জপতপ কর কি মরতে জানলে হয় জপতপের কোন মূল্য নেই; একজন সারাজীবন জপতপ করে গেল, প্রতিদিন গঙ্গাস্নান করলো অথচ মরার সময় গঙ্গা পেল না; অন্যজন সারাজীবন গঙ্গা কি জানলো না অথচ মরার সময় গঙ্গা পেলো; আচারসর্বস্বতার প্রতি ব্রিদ্রুপ।
জপ নেই তপ নেই ভস্মমাখা গায় ভেকধারী সন্ন্যাসী; ধর্মের ভান; বাহ্যিক আড়ম্বর; আচারসর্বস্বতা।
জপের কোন খোঁজ নেই ফটিকে রাঙা থোপ পূর্বের অনুরূপ; (ফটিক- কটিকের জপের মালা)
জব বরসতা তব গরজতা নহী, জব গরজতা তব বরসতা নহী- হিন্দি প্রবাদ সারবান ব্যক্তির আড়ম্বর নেই; সারশূন্য হলেই আড়ম্বর দেখায়।
জমি না দেখে জমি ছেড়ো না পা রাখার যায়গা পেলে পা তোল।
জমির অভাবে উঠান চষা কাজ না পেলে অকাজ করা; সমতুল্য- 'নেই কাজ তো খই ভাজ'।
জয়কেতে জয়ীরদিকে কাত; সবসময় বিজয়ীর পক্ষে থাকা; যে ব্যক্তির পক্ষে থাকলে স্বার্থসিদ্ধির সম্ভাবনা তখন অপরপক্ষ ছেড়ে দিয়ে তার দিকে ঢলে পড়া এবং তার গুণগান করা।
জল উঁচু তো উঁচু, জল নিচু তো নীচু তোষামোদকারী; নিজস্ব কোন চিন্তাধারা নেই এমন ব্যক্তিত্বহীন পুরুষ; সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা ব্যক্তি।
জল এগোয় না তৃষ্ণা এগোয়১ যার প্রয়োজন সেই এগুবে; যে অভিলাষী শে এগুবে, অভিলাষিত বস্তু নয়।
জল খেয়ে জলের বিচার // জল খেয়ে জাতের বিচার উল্টাপুরাণ; বিপরীতবুদ্ধি; আগের কাজ পরে করা; কাজে নামার আগে দোষগুণ বিচার করা উচিৎ; সমতুল্য- 'ঘোড়ার আগে গাড়ী জুতা'; 'ভাবিয়া করিয়ো কাজ করিয়া ভাবিও না'।
জলছাড়া কুমির/মৎস কুমির যতক্ষণ জলে থাকে ততক্ষণ তার বিক্রম; ডাঙায় উঠলেই বিক্রম শেষ- ডালছাড়া বানর
জল জল বৃষ্টির জল, বল বল বাহুর বল বৃষ্টির জলের তুলনা হয় না, ছেঁচাজলে বেশিক্ষণ চলে না; নিজের বলই শ্রেষ্ঠ বল; পরের বলে নির্ভর করা যায় না।
জল, জোলাপ, জুয়াচুরি, এই তিন নিয়ে ডাক্তারি বলা হয় যে ডাক্তারেরা এই তিনটি বিষয় বেশি পছন্দ করেন।
জল থেকে রক্ত গাঢ় পারিবারিক সম্পর্ক এবং আনুগত্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ; সমতুল্য- রক্তের টান বড় টান'; বিরুদ্ধ উক্তি- রক্তের টানে রক্তারক্তি; রক্তের টানের থেকে মনের টান বড়।
জল দিয়ে জল বার করা কানে জল ঢুকলে জল দিয়ে সে জল বার করা হয়; শত্রুকে দিয়ে গোপন মন্ত্রণা জানতে হয়; শত্রু দিয়ে শত্রুনিধন; সমতুল্য- 'কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা'।
জল দিলে হয় কালা, কালা ছুঁড়িরে কয় ভালা কালো রূপের নারী সর্বদা সমাজে অবহেলিত।
জল নদীতে সুস্বাদু, সমুদ্রে বিস্বাদ আধারগুণে চরিত্র বদলায়।
জল নেড়ে জোঁকের বল বোঝা১ জল নাড়লে বোঝা যায় জলে জোঁক আছে কিনা
জল নেড়ে জোঁকের বল বোঝা২ কথার আভাসে অন্যের মনোভাব বোঝা; সমতুল্য- 'বেড়া নেড়ে গৃহস্থের মন বুঝা'।
জলন্ত আগুনে ঘি দেওয়া/পড়া বেশিমাত্রায় উত্তেজিত করা; তুলনীয়- 'অগ্নিতে ঘৃতাহুতি'।
জলবিন্দুপাতেন ক্রমশঃ পূর্যতে ঘটঃ ফোঁটাফোঁটা জল পড়ে ঘট ভর্তি হয়; সৃষ্টি তিলেতিলে গড়ে ওঠে; সমতুল্য- 'ক্ষুদ্রক্ষুদ্র বালুকণা বিন্দুবিন্দু জল গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল'; বিন্দু বলে আয়রে বিন্দু গড়ে তুলি মহাসিন্ধু'।
জল মে রহ কর মগর সে বৈরী অধীনতায় থেকে শত্রুতা করা যায় না; সমতুল্য- 'জলে থেকে কুমীরের সাথে বিবাদ'।
জলে কুমির ডাঙায় বাঘ, যে পারে সে ভাঙে ঘাড় উভয়সঙ্কট, দুদিকেই বিপদে পড়া; সমতুল্য- 'এগুলে রাম পিছুলে রাবণ';'শাঁখের করাত'; 'যেতেও কাটে আসতেও কাটে'; 'সাপের ছুঁচো গেলা' ইত্যাদি।
জলে জল বাঁধে জমিতে একটু জল থাকলে, সামান্য বৃষ্টিতেও জল দাঁড়ায়; শুকনো জমি জল শুষে নেয়; সমতুল্য- 'পয়সায় পয়সা আসে'।
জলে জল খাপ/মিশ খায় সমপ্রকৃতির বস্তুর মিলন হয়।
জলে তেল সহজে বিতায় সমমর্মী হলে সৌভ্রাতৃত্ব সহজে গড়ে ওঠে।
জলে তেলে খাপ/মিশ খায় না১ বিষমপ্রকৃতির দুই বস্তুর মিলন হয় না।
জলে তেলে খাপ/মিশ খায় না১ মতের মিল না হলে মনের মিল হয় না।
জলে না নামিলে শেখে না সাঁতার, হাঁটিতে শেখে না, না খেলে আছাড় অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হলোে কার্যক্ষেত্রে নামতে হয়; কিছু পেতে গেলে কিছু করতে হয়; সমতুল্য জাপানী প্রবাদ- বাঘের খাঁচায় না ঢুকলে বাঘের বাচ্চা পাওয়া যায় না'।
জলে পাথর গলে/পচে না১ আকাট মূর্খ জ্ঞানী হয় না।
জলে পাথর গলে/পচে না২ দুর্বল শক্তিশালীকে কাবু করতে পারে না; শক্তিশালী সহজে বিনষ্ট হয় না।
জলে বাস করে কুমীরের সাথে বিবাদ প্রভাবপ্রতিপত্তিশালীর এলাকায় বাস করে তারই সাথে বিবাদ; যার অধীনে বাস তার সাথে বিবাদ করা চলে না; যাকে অস্বীকার করার উপায় নেই তার সাথে টক্কর দেওয়া চলে না; সমতুল্য- 'রোমে বাস করে পোপের সাথে বিবাদ'; তুলনীয়- 'সসর্পে চ গৃহবাসঃ মৃত্যুরেব ন সংশয়'।
জলে ভাসে শিলা অসম্ভব ঘটনা।
জলের কুমির ডাঙ্গায় এলো বিপদ সামনে উপস্থিত।
জলের গতি নীচের দিকে স্নেহ নিম্নগামী।
জলের চেয়ে পাঁক ঠান্ডা; সূর্যের চেয়ে বালি গরম নগণ্য ব্যক্তিরা নম্র হয়; নকল ব্যক্তিরা উদ্ধত হয়।
জলের চেয়ে রক্ত গাঢ় রক্তসম্পর্ক বা জ্ঞাতিত্বের বন্ধনই প্রকৃত বন্ধন; তুলনীয়- 'রক্তের টান বড় টান'।
জলের ছিঁটে দিয়ে লগির গুঁতো খাওয়া লগি দিয়ে শালতি বাওয়ার সময় একজন যদি অসাবধানতায় অন্যজনের গায়ে জলের ছিটা দেয় তবে অন্যজন প্রথমকে লগিপেটা করে; সামান্য অনিষ্ট করতে গিয়ে বিষম শাস্তি পাওয়া।
জলের তিলক অচিরে মুছে যায়; সল্পস্থায়ী বিষয়।
জলের ফোঁটা পাথর ক্ষয় করে, সূতার করাত গাছ কাট নিষ্ঠা ও একাগ্রতা থাকলে কঠিন কাজও সহজে করা যায়; সমতুল্য- 'পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই'।
জলের রেখা খলের পীরিত জলের রেখা যেমন ক্ষণস্থায়ী দুষ্টের প্রীতিও তেমন অতি ক্ষণস্থায়ী।
জলের শত্রু পানা মানুষের শত্রু কানা প্রকৃত গুণগ্রাহীরাই গুণীর গুণ বুঝতে সমর্থ।
জহুরী জহর চেনে অভিজ্ঞচোখকে ফাঁকি দেওয়া অসম্ভব।
জাঁকজমকে বিকোয় ঘোড়া জিনিসপত্র বেচাকেনায় অঙ্গসজ্জা অপরিহার্য; তুলনীয়- 'আগে দর্শনধারী পাছে গুণবিচারী'
জাগন্ত ঘরে চুরি নাই সতর্কচক্ষুকে ফাঁকি দেওয়া অসম্ভব; সমতুল্য- 'গোনাগরু বাঘে ধরে না'; 'সাবধানের মার নাই'।
জাড্যং ধিয়ো হরতি সিঞ্চতি বাচি সত্যং মানোন্নতিং দিশতি পাপমকরোতি। চেতঃ প্রসাদয়তি দিক্ষু তন্যেতি কীর্তিং সৎসঙ্গতিঃ কথয় কিং ন করোতি পুংসাম্‌॥ (চাণক্য) সৎসংসর্গ মানুষের বাহ্যিক জড়তা দূর করে; বাক্যে সত্যতা স্থাপন করে; সম্মান বৃদ্ধি করে; পাপ দূর করে; চিত্ত প্রসন্ন করে; দিকে দিকে যশ বিস্তার করে- কী না করে থাকে?
জাতস্য হি ধ্রুবো মৃত্যু জন্মিলে মরিতে হবে, এটা ধ্রুব সত্য; বাংলা পাঠান্তর- 'জন্মিলে মরিতে হবে?'
জাত খুইয়ে বৈষ্ণব বৈষ্ণবের কোন জাত নেই; যে কেউ বৈষ্ণব হতে পারে।
জাত গেল পেটও ভরল না ক্ষতি স্বীকার করেও ইষ্ট মিলল না; সমতুল্য- 'একূল, ওকূল- দুকূল গেলো অকূল পারে গোকুল'।
জাত গোয়ালার কাঁজি ভক্ষণ গোয়ালা দুধ খায় না, আমানি খায়; ব্যবসায়ী তার নিজের জিনিস ভোগ করতে পারে না; তুলনীয়- 'ময়রা সন্দেশ খায় না'; 'সন্দেশওয়ালা মুড়ি খায়'।
জাত তো বাক্সের ভিতর অর্থে সবাই বশীভূত; সমতুল্য- 'অর্থেন পুরুষঃ দাসঃ'।
জাতে মাতাল তালে ঠিক কিছু মানুষকে দেখে বেহিসাবি মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে নিজের কাজে তারা খুব হিসাবি, যেমন- 'তোমার মা আমার মা, আমার মা তোমার মা; তোমার বউ আমার বউ, আমার বউ আমার বউ।'
জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত-জালিয়াৎ খেলছ জুয়া- নজরুল খণ্ড ঈশ্বরধারণার জন্য ক্ষোভ; জাতের ধর্ম ধর্ম নয়, ধর্মের ব্যবসা; তুলনীয়- 'কারে ভজে কার দাস'।
জাতের নারী কালাও ভালা/ভালো, নদীর পানি ঘোলাও ভালা/ভালো১ল নারী নির্বাচনে গুণবতী কালো হলেও ভালো; গুণহীনা রূপবতী হলেও ভাল নয়; সমতুল্য- 'কালা কাজলের মাটি, তা'র লাগি ছ'মাস হাঁটি; সুন্দর ধুতুরার ফুল, তা'র নাই কড়ার মূল'; 'রূপে মারি লাথি, গুণে ধরি ছাতি'।
জাতের নারী কালাও ভালা/ভালো, নদীর পানি ঘোলাও ভালা/ভালো২ বিয়ের ক্ষেত্রে নারী নির্বাচনে আগে গুণ বিচার না করে তার জাত বিচার করা হত, যাকে পালটি ঘর বলা হয়; বর্তমানে জাতবিচার হয় না, গুণ বিচার হয়।
জান যায় তো জবান/বাত না যায় প্রাণ যায়, কথা থাকে।
জান যায়, মান না যায় প্রাণ যায় যাক ইজ্জৎ যেন থাকে।
জানামি ধর্মং ন চ মে প্রবৃত্তির্জানাম্যধর্মং ন চ মে নিবৃত্তিঃ, ত্বয়া হৃষীকেশ হৃদিস্থিতেন যথা নিযুক্তোহস্মি তথ করোমি দুর্যোধন শ্রীকৃষ্ণকে উদ্দেশ করে বলছেন, 'ধর্ম কি তা আমি জানি কিন্তু তাতে আমার আসক্তি নেই; অধর্ম কি তাও আমি জানি কিন্তু তাতে আমি অনাসক্ত নয়; হে হৃষীকেশ তুমি হৃদয়ে থেকে আমাকে যেভাবে চালাচ্ছ আমি সেইভাবে চলছি; আত্মসংশোধনের প্রার্থনা হিসাবে প্রকৃত অর্থ- 'হে হৃষীকেশ তুমি যেভাবে আমাকে ধর্মপথে চালাচ্ছো আমি যেন সেইভাবে চলতে পারি'; আত্মদোষ ক্ষালনের উপায় হিসাবে ব্যঙ্গার্থ- 'হে হৃষীকেশ ধর্ম অধর্ম আমি কিছু বুঝি না তুমি যেভাবে আমাকে চালাচ্ছো আমি সেইভাবে চলছি।
জানার কোন বয়স/শেষ নেই আমৃত্যু শেখা যায়।
জানিনি, পারিনি, নেইকো ঘরে, এই তিনকে দেবতা ডরে কারো কাছে এই তিন উত্তর শোনার পর তার সাথে আর কোন কথা চলে না।
জামা-জোব্বা বেশুমার আক্কল বিনা ছারখার পোশাকের আড়ম্বরে বুদ্ধির দৈন্যতা দূর হয় না; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'দূরতঃ শোভতে মূর্খো লম্বশাটপটাবৃতঃ। তাবৎ শোভতে মূর্খো যাবৎ কিঞ্চিন্ন ভাষতে'।
জামাইয়ের জন্য মারে হাঁস, গুষ্টি সুদ্ধ খায় মাস একজনের দোহাই দিয়ে সকলের সুবিধা ভোগ।
জামিন হয় দিতে, গাছে ওঠে মরতে উভয়কাজেই অনিষ্ট হওয়ার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা।
জালছেঁড়া, পলোভাঙা মাছ দুর্দান্ত ধড়িবাজ লোক।
জালে পড়লে মাছ বেশি লাফায় আবদ্ধ অবস্থায় প্রাণ ছটফট করে; তুলনীয়- 'স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায়রে, কে বাঁচিতে চায়'।
জালে সরষে বেঁধে রাখা বাস্তবে যা সম্ভব নয় তাই করার কথা বলা; আসলে 'ইঁদুরের তুলাদণ্ড খাওয়ার' মত প্রচ্ছন্নভাবে মিথ্যাকথা বলে অনিচ্ছা প্রকাশ করা, যেমন- 'তোর জালটা দিবি মাছ ধরবো? প্রত্যুত্তর- 'পারবো না জালে সরষে বেঁধে রেখেছি'; তুলনীয়- 'চালুনি করে ঘোল বিলানো'; 'কাপড়ে তেল ভরে রাখা'।
জাহাজের কাছে জেলে ডিঙি বড়র সঙ্গে ছোটর তুলনা; সমতুল্য- 'চাঁদের কাছে জোনাকি'; 'ঢাকের কাছে টেমটেমি'।
জাহাজের পাছে নোঙ্গর অপরিহার্য সঙ্গী; পাঠান্তর- 'জাহাজের পাশে জালিবোট'।
জিঘাংসন্তং জিঘাংসিয়াৎ হননকারীকে হনন করা দোষনীয় নয়; সমতুল্য- 'শঠে শাঠ্যং সমাচরেৎ'।
জিতক্রোধেন সর্বং হি জগদেতদ বিজীয়তে যে ক্রোধকে জয় করেছে সে জগতকে জয় করেছে।
জিত্‌নি চদ্দর দেখো, উৎনি পৈর ফৈলাও যতদূর চাদর দিয়ে পা ঢাকতে পারো ততদূর পা ছড়াও; সমতুল্য- 'আয় বুঝে ব্য়য় কর'; কাপড় বুঝে জামা কাটো'।
জিত্‌নি মুঁহ উতনি বাতো নানালোকের নানাবক্তব্য; সমতুল্য- 'নানা মুনির নানামত'।
জিদের ভাত কুকুরে খায় জেদ ধরলে নিজের ক্ষতি হয়।
জিভ টলে আছাড় খাওয়া থেকে পা-টলে আছাড় খাওয়া ভাল বেঁফাস কথা না বলা ভাল।
জিভ দিয়েছেন যিনি আহার যোগান তিনি ঈশ্বরই সকলের অন্নদাতা; কালকের জন্য ভাবতে হবে না; অদ্ষ্টবাদে বিশ্বাসী অভাগা; অক্ষমের যুক্তি।
জিভ পুড়লো নিজের দোষে, কি করবে হরিহর দাসে নিজের দোষে কষ্ট পেলে অপরের করার কিছু নেই; সমতুল্য- 'স্বখাত সলিলে ডুবে মরি শ্যামা দোষ কারো নয়গো মা'।
জিভে দাঁতেসম্বন্ধ অসূয়াসম্পর্ক; ভালমন্দের সম্পর্ক; দাঁতের কোন অসুখে জিভ তার কাছে যায়, পাশে দাঁড়ায়, অথচ সুযোগ পেলেই সেই দাঁতই জিভকে কামড়ায়।
জিয়ন্ত মাছে পোকা পড়ানো১ অনর্গল মিথ্যাকথা বলে; দিনকে রাত করে; সত্যকে মিথ্যা করে, হয়কে নয় করে
জিয়ন্ত মাছে পোকা পড়ানো২ মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সুচরিত্রকে কালিমালিপ্ত করা।
জিয়ন্তে মরা দুঃখকষ্টে জীবন্মৃত; জীবিতাবস্থায় মৃতবৎ।
জিলিপির পাক/প্যাঁচ অসরলভাব; কুটিলতা; দুষ্টুবুদ্ধি; পেঁচোয়া মন
জিস্‌কী লাঠি উস্‌কী ভৈঁস যার লাঠি তার মোষ অর্থাৎ যার শক্তি আছে সেই সকল বিষয়ের অধিকারী হয়; সমতুল্য- 'জোর যার মুল্লুক তার'; 'লাঠি যার মাটি তার'; পাঞ্জাবী পাঠান্তর- 'জিস্‌দা তেগ উস্‌দা দেগ'।
জিসকো না দে খোদাতাল্লা উস্‌কো না দে শকে কই উদ্দৌলা ঈশ্বর যাকে দেন না কোন রাজা-বাদশা তাকে দিতে পারে না; (উৎসকাহিনী- অযোধ্যার নবাব আশাউদ্দৌলা খুব বড় দাতা হিসাবে ছিলেন; নগর পরিভ্রমণকালে একদিন তিনি দেখেন এক ফকির বলছে, ‘জিসকো না দে খোদাতালা উসকো দে আশাউদ্দৌলা’; নবাব ফকিরকে দরবারে দেখা করতে বলেন; ফকির দরবারে এলে নবাব তাকে একটা তরমুজ দেন; ফকির ভাবে, ‘হায় কপাল এমন দরাজদিল নবাব আমাকে একটা তরমুজ দিলেন!’ ফকির তরমুজটা বাজারেে বিক্রি করে সেই পয়সায় চানাভাজা কিনে খায়; পরের দিন নবাব ফকিরকে দরবারে ডেকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘তরমুজটা তুমি কি করেছো?’ সে উত্তর দেয়, ‘চারআনায় বিক্রি করে সেই পয়সায় চানাভাজা কিনে খেয়েছি’; নবাব ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘বেকুব ফকির তোমাকে যে তরমুজটা দিয়েছিলাম তার ভিতরে মোহর ছিল’; এই কথা শুনে ফকির মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে; তখন নবাব তাকে বলেন, ‘এখন থেকে বলবে, জিসকো না দে খোদাতালা উসকো না দে আশাউদ্দৌলা’।)
জিস্‌দা তেগ উস্‌দা দেগ যার তলোয়ার তার দেশ অর্থাৎ যার শক্তি আছে সেই সকল বিষয়ের অধিকারী হয়; হিন্দি পাঠান্তর- 'জিস্‌কী লাঠি উস্‌কী ভৈঁস'।
জিহ্বা টলতি ধীরস্য ধীর সংযতব্যক্তির জিভও কখনো কখনো বিচলিত হয়, অসংযত কথাবার্তা বলে; তুলনীয়- মুনিনাঞ্চ মতিভ্রমঃ।
জীবন একপেয়ালা চায়ের মত, যতই তৃপ্তির সাথে পান করি ততই তলার দিকে যেতে থাকি একদিন বাঁচার অর্থ মৃত্যুর দিকে এক পা এগিয়ে যাওয়া।
জীবন চলমান ছায়া ছাড়া আর কিছুই নয় জীবন মায়াময় আলোছায়ার খেলা; সবই অনিত্য।
জীবনপাত্রের তলানি পর্যন্ত নিঃশেষে করিব পান- কবি মিল্টন জীবনকে পরিপূর্ণভাবে ভোগ করার বাসনা।
জীবন সত্যই সরল, কিন্তু আমরা তাকে জটিল করার উপর জোর দিই- কনফুসিয়াস মানুষের দুর্ভাগ্য যে সে সহজ সরল হতে পারে না।
জীবনে মরণে সৎলোকের কোন ক্ষতি হয় না- উপনিষদ সততা জীবনের শ্রেষ্ঠমন্ত্র।
জীবনে শেষ বলে কিছু হয় না চলমান জীবনে সবসময়ই কিছু-না-কিছু নতুন অপেক্ষা করে থাকে।
জীবনের পাতা বইয়ের পাতা থেকে অনেক বেশি কিছু শিখিয়ে দিয়ে যায় অভিজ্ঞতার মাধ্যমে মানুষ শ্রেষ্ট শিক্ষালাভ করে।
জীবনের প্রতিটি সিঁড়িতে পা রেখেই ওপরে ওঠা উচিৎ, ডিঙ্গিয়ে নয় সতর্ক পদক্ষেপে চলা উচিৎ; ধীর ও স্থির পদক্ষেপ।
জীবনের লম্বা পথ বড় আঁকাবাঁকা উত্থান-পতনে মোড়া মানুষের জীবন।
জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর- বিবেকানন্দ জীবে দয়াই শ্রেষ্ট ধর্ম।
জুতো মেরে গরু দান অপমান করে পরে ক্ষমা প্রার্থনা।
জুতো মেরেছে, অপমান তো করে নি নির্লজ্জ বেহায়ার উক্তি; বিন্দুমাত্র মান-অপমানবোধ নেই।
জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সংসারের ছোটবড় ভালোমন্দ সবরকম কাজকর্ম।
জুয়াচোরের বাড়ি ফলার, না আঁচালে বিশ্বাস নেই। অনিশ্চয়তাসম্পর্কে সন্ধিহান; শেষ না হলে বিশ্বাস নেই; তুলনীয়- 'ঠগের বাড়ী নেমন্তন্ন না আঁচালে বিশ্বাস নেই'; 'ঠোট ও কাপের মাঝে বিস্তর ফারাক'।
জেলের পাছায় টেনা, নিকারীর কানে সোনা জেলে মাছ ধরে কিন্তু তার দারিদ্র যায় না, অপরদিকে এই মাছ নিয়ে যারা কারবার করে তারা সকলে ধনবান; তুলনীয়- চাষী করে চাষ, ফড়ে খায় ফসল'; 'যার ধন তার ধন নয়, নেপোয় মারে দই'।
জৈসা কা তৈসা যেমন তেমনি; যার যেমন তার তেমন; তুলনীয়-'যোগ্যং যোগ্যেন যুজ্যতে'।
জৈসা দেওগে বৈসা পাওগে যেমন দেবে তেমন পাবে; আয়নায় যেমন মুখ দেখাবে তেমন মুখ দেখবে; তুলনীয়- 'যেমন কর্ম তেমন ফল'।
জৈসা দেশ ঐসা বেশ সময়ানুসার ব্যবহার; অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে চলতে হয়; সমতুল্য- 'যখন তুমি রোমে তখন তুমি রোমান'; 'যস্মিন দেশে যদাচার' ইত্যাদি।
জ্যৈষ্ঠে খরা, আষাঢ়ে ভরা; শস্যের ভার সহে না ধরা- খনা জৈষ্ঠ্যেমাসে রৌদ্র থাকলে এবং আষাঢ়্মাসে বৃষ্টি হলে ফলন খুব ভাল হয় এবং শস্যের ভাণ্ডার পরিপূর্ণ হয়; পাঠান্তত- 'জৈষ্ঠ্য মারে আষাঢ়ে ভরে, কাটিয়া মাড়িয়া ঘর করে'।
জোঁকের মুখে চুন/নুন তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়লে দুর্দান্ত চরিত্রের লোকও নেতিয়ে যায়; সমতুল্য- 'সাপের মুখে ঈষার মূল'।
জোঁকের গায়ে জোঁক বসে না সমধর্মীরা পরস্পরের ক্ষতি করে না; তবে মানুষ তার ব্যতিক্রম; তুলনীয়- 'কাক কাকের মাংস খায় না'।
জো করে টোট্‌কা উন্‌হীকো ঘুমকে পরৈ ফট্‌কা পরের অনিষ্ট করতে গেলে নিজের অনিষ্ট হয়।
জো গরজ্‌তা বহ বরস্‌তা নহি যে মেঘ গর্জায় সে বর্ষায় না; বাংলা পাঠান্তর- বহু আড়ম্বরে লঘু ক্রিয়া'; সংস্কৃত পাঠান্তর- 'বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া'।
জোঘরে আগুন লেগেছে জতুগৃহে অ্যাগুন লেগেছে; বদরাগী লোকটাকে প্রচণ্ড ক্ষেপিয়ে দিয়েছে।
জোড়াতালি দিয়ে কাজ চালানো হাতের কাছে যা পাওয়া গেছে তাই দিয়ে কোনমতে কাজ চালানো।
জো পেলে জোলায় বোনে১ জলমগ্ন নিম্নভূমি চাষোপযোগী হলে চাষী সেই জমিতেও চাষ করে।
জো পেলে জোলায় বোনে২ জোলা কাপড় বোনে, চাষ করে না; কিন্তু সে যদি জো অর্থাৎ সুযোগ পায় তবে সে কাপড় না বুনে শস্য বুনে।
জোয়ার-ভাঁটা ও সময় কারও জন্য অপেক্ষা করে না জীবন সময়ের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে চলে।
জোয়ার থাকলে ভাঁটা আছে সুখ-দুঃখ মিলিয়ে জীবন; অবিমিশ্র কিছু হয় না।
জোয়ারের জল আর কতক্ষণ? সুখের দিনগুলি দীর্ঘস্থায়ী হয় না; আসলে মনে হয় হঠাৎ যেন ফুরিয়ে গেলো।
জোর যার মুল্লুক তার শক্তি থাকলে সবকিছু জয় করা যায়; শক্তিশালীরা নানাদিকে রাজা হয়; সমতুল্য-জিস্‌কী লাঠি উস্‌কী ভৈঁস'; 'জিস্‌দা তেগ উস্‌দা দেগ'; 'লাঠি যার মাটি তার'; 'শক্তি যার দখল তার' ইত্যাদি।
জোরে প্রশংসা কর এবং আস্তে দোষ দাও মুক্তকণ্ঠে পরের প্রশংসা করা উচিত এবং কারো দোষ ধরা উচিত নয়।
জ্ঞানস্যাভরণং ক্ষমা ক্ষমা জ্ঞানের আভরণস্বরূপ।
জ্ঞানহীন চিন্তা লাগাম ছেঁড়া ঘোড়ার মতো আবোলতাবোল চিন্তায় মনে বিকার উৎপন্ন হয়।
জ্ঞানহীনতা চরমতম দারিদ্রের লক্ষণ অজ্ঞানের সারাটা জীবন বৃথাই যায়।
জ্ঞানার্জন লবণাক্ত জলের মত, যত পান করবে তত জ্ঞানতৃষ্ণা বাড়বে যতই জ্ঞান অর্জন হয়, জ্ঞানপিপাসা ততই বাড়তে থাকে।
জ্ঞানী আগে চিন্তা করে পরে বলে, মূর্খ আগে বলে পরে চিন্তা করে জ্ঞানীরা ভেবে কাজ করে; মূর্খেরা কাজ করার পর ভাবে।
জ্ঞানী মূর্খকে চিনতে পারে, মূর্খ জ্ঞানীকে চিনতে পারে না জ্ঞানীর গুণ চিনতে পারা; মূর্খের গুণ চিনতে না পারা।
জ্ঞানী কথা বলে কম শোনে বেশি বোকা কথা বলে বেশি শোনে কম জ্ঞানীরা স্বল্পভাষী হয় বোকা বাচাল হয়।
জ্ঞানী শোনে বোকা বলে জ্ঞানীর শোনার আগ্রহ বেশী বোকার বলার আগ্রহ বেশি
জ্ঞানীর কান বড় আর জিভ ছোট হয় জ্ঞানীরা শোনেন বেশি, বলেন কম
জ্ঞানী যা শোনে যুক্তি দিয়ে বিচার করে, বোকা যা শোনে বিশ্বাস করে বুদ্ধিহীনের বিশ্বাসই সম্বল
জ্ঞানীর মন সদাপরিবর্তনশীল, বোকারা রক্ষণশীল জ্ঞানী বহমান নদীর মত; বোকা যেন বদ্ধ জলাশয়।
জ্ঞানীর জিভ জ্ঞানকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে জ্ঞানীরা সংযতভাবে কথাবার্তা বলে।
জ্ঞানীর সম্পদ তার জ্ঞান, মূর্খের সম্পদ তার অর্থ জ্ঞানী জ্ঞানের কাঙাল; মূর্খ অর্থের কাঙাল।
জ্ঞানেনহীনাঃ পশুভিসমানাঃ জ্ঞনহীন লোক পশুর সমান; অজ্ঞান ও মূর্খ পশুর সমান।
জ্যান্ত পোড়ে চিন্তায় মড়া পোড়ে চিতায় দুশ্চিন্তা মানুষকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায়।
জ্যান্ত মাছে পোকা পড়ানো মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সুচরিত্রকে কালিমালিপ্ত করা।
জ্যান্ত মাছে পোকা পড়ে না সতেজ মন পাপ এড়িয়ে চলে।
জ্যান্তে দেয় না চালভাজার খোলা (পাত্র) মরলে দেবে রামায়ণের পালা জীবিত অবস্থায় কাউকে কোনপ্রকার সাহায্য না করে মরার পর অনেক কিছু দেবার প্রতিশ্রুতি দেয়।
জ্বলন্ত আগুনে ঘি ঢালা অধিকতর উত্তেজিত করা। সমতুল্য- 'অগ্নিতে ঘৃতাহূতি'।

প্রবাদ-প্রবচন অর্থ
ঝকমারির মাসুল নির্বুদ্ধিতার দণ্ড; সমতুল্য- 'আক্কেল সেলামি'।
ঝড় উঠলে আশ্রয় খোঁজো সবসময় নিরাপদ অবস্থায় থাকার পক্ষে ওকালতি।
ঝড় থেমে গেলে সব কিছু শান্ত হয় যেকোন প্রকার উথালপাথালের পর প্রকৃতি শান্ত হয়; ঝড়ের পর শান্তি আসে; সমতুল্য- 'মেঘের আড়ালে সূর্য হাসে'; 'মেঘের পর রৌদ্র আসে' ইত্যাদি।
ঝড়ে কাক/বক মরে ফকিরের কেরামতি বাড়ে অন্যের কৃতিত্ব নিজের বলে জাহির করা; (উৎসকাহিনী- একসময় ঝড়ে এক কাক মারা পড়ে; একইসময়ে এক ফকির সেই গাছের তলায় বসে কাক মারার মন্ত্র পড়ছিল; সম্পূর্ণ কাকতালীয় ঘটনা; কিন্তু ফকির ভাবে তার মন্ত্রের জোরে কাক মরেছে; কাকতলীয়ভাবে কেউ কোন কাজের কৃতিত্ব পেলে এই প্রবাদ বলা হয়); সমতুল্য- 'হরি বাঁচান প্রাণ, বৈদ্যের বাড়ে মান'; 'কাক মরল ঝড়ে প্যাঁচা ভাবে আমার শাপ লাগল হাড়েহাড়ে'।
ঝড়োকাক ঝড়ে কাক যেমন দুর্দশাগ্রস্ত হয় তেমন উদভ্রান্ত বিপদগ্রস্ত বিপর্যস্ত ব্যক্তি
ঝাঁকের কই ঝাঁকে ফেরে/মেশ/যাক সমধর্মীরা একসাথে থাকতে ভালবাসে; (উৎসকাহিনী- জনৈক বদরাগী ব্রাহ্মণ চাকরসহ এক শিষ্যবাড়ী গিয়েছিল; শিষ্ট বড় বড় অনেক ডিমওয়ালা কইমাছ এনে দিয়েছিল; ব্রাহ্মণ রান্নাশেষে নিজে পাতে আটদশটা মাছ নেয় এবং চাকরকে একটা ডিমশূন্য মাছ দেয়; চাকর রেগে গিয়ে 'ঝাঁকের কই ঝাঁকে যাক' বলে মাছটা ব্রাহ্মণের পাতে ছুঁড়ে দেয়; এর ফলে চাকরের ভাগ্যেই সবকটি মাছ জুটে।
ঝাঁকি/ঝাঁঝরি বলে চালনি তুই বড় ছেঁদা নিজের দোষ দেখে না পরের দোষ খুঁজে বেড়ায়; নিজের দোষে নজর পড়ে না পরের দোষে তীক্ষ্ণদৃষ্টি; পরছিদ্রান্বেষী; সমতুল্য- 'আনারস বলে কাঁঠাল ভাই তুমি বড় খসখসে'; চালুনি বলে ছুঁচ তোর মার্গে কেন ছেঁদা'; 'চালুনি বলে ধুচুনিভাই তুমি বড় ফুটো'; 'হাঁড়ি বলে কড়াই তোর পিছনটা বড়া কালা' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'ঝাঁজরি বলে খৈ-চালা, তুই বড় ফোঁড়ওয়ালা'।
ঝাঁপাবার আগে দেখে নিও, ঝাঁপালে ফিরে দেখো না দেখেশুনে কাজ করার পক্ষে চেতাবনি।
ঝাড়ের দোষ আকরের/ বংশের দোষ।
ঝাড়ের বাঁশ পড়ে না সংঘবদ্ধ থাকলে বিপদের পড়তে হয় না।
ঝামেলায় না পড়লে ঝামেলার (দুশ্চিন্তা) পিছু নিও না অনাবশ্যক ঝামেলায় না জড়ানোর পক্ষে চেতাবনি।
ঝাল লঙ্কার লাল চামড়া দুর্জনের রঙটা সুন্দর বা সে সুন্দর দেখতে হয়।
ঝালে, ঝোলে, অম্বলে সবঠেকেই উপস্থিত; সমতুল্য- 'সর্বঘটের কাঁঠালী কলা'।
ঝিকে মেরে বৌকে শেখানো কন্যাকে শাসন করে পুত্রবধুকে শিক্ষা দান; পরোক্ষে তিরস্কার; ইঙ্গিতে কার্যসাধন।
ঝি জব্দ কিলে, বৌ জব্দ শিলে, পাড়াপড়শী জব্দ চোখে আঙুল দিলে প্রহারে কন্যা, বাটনা বাটতে দিলে বৌ এবং প্রত্যক্ষভাবে দেখিয়ে দিলে প্রতিবেশী ঠাণ্ডা হয়।
ঝিনুক দিয়ে সাগর ছেঁচা ক্ষুদ্র উপায়ে বিরাট কাজ করার চেষ্টা; সমতুল্য- 'কলার ভেলায় সাগর পার'; 'ঝিনুক দিয়ে পুকুর সেঁচা'; 'নরুণ দিয়ে তালগাছ কাটা'; 'মুড়া কোদালে পুকুর কাটা'; 'সাঁতার দিয়ে সিন্ধু পার' ইত্যাদি।
ঝিনুকমাত্রেই শুক্তি থাকে না সব ঝিনুকে মুক্তা হয় না; হাত পা থাকলেই মানুষ হয় না; সব মানুষ মানুষ নয়; সমতুল্য- 'চকচক করলেই সোনা হয় না'।
ঝির ঝি করবে কি? কন্যাই বড় উপকার করল এখন তার কন্যা এসে উপকার করবে; কোন উপকার পাওয়া যাবে না লক্ষণায়- ব্যঙ্গোক্তি।
ঝুঁকি না নিলে লাভ হয় না জীবনে ঝুঁকি আছে; ঝুঁকি না নিলে আখেরে লাভ হয় না।
ঝুটে কা মুঁহ কালা সচ্চে কা বোলওয়ালা শেষপর্যন্ত সত্যের জয় হয়; সমতুল্য- 'সত্যমেব জয়তে'।
ঝোপ বুঝে কোপ মারা অবসরে সুযোগগ্রহণ/কার্যসাধন; অবস্থাবুঝে ব্যবস্থাগ্রহণ; সুযোগমতো আঘাত করা; সুযোগ বুঝে কাজ করা।
ঝোল টানো নিজের পাতে নিজের স্বার্থ গুছিয়ে নাও।
ঝোল ভাত খাওয়া অনেকদিন ধরে রোগে ভুগে পথ্য করা
ঝোল ভাত খাওয়ানো১ দীর্ঘকাল ধরে রোগের কামনা করে গালি দেওয়া
ঝোল ভাত খাওয়ানো২ হাত পা ভেঙে বিছানায় ফেলে রাখার ভয় দেখানো
ঝোলে, ঝালে, অম্বলে- সবটেকে বেগুন চলে নানাগুণের গুণী; সমতুল্য- 'সব সাজে মোহিনীমোহন'; 'সর্বঘটের কাঁঠালী কলা'।
ঝোলে অম্বলে এক করা দুইই সুখাদ্য কিন্তু দুইয়ের মিশ্রণ অখাদ্য; যাদের পৃথক থাকা উচিত তাদের মিশ্রিত করলে এই প্রবাদ উক্ত হয়।

প্রবাদ-প্রবচন অর্থ
টক টসো আঁটিসারা শস্যশূন্য আঁশ ভরা, সেই আম বিলাবার ধারা বিলাবার জন্য নিকৃষ্ট দ্রব্যই নির্বাচন করা হয়।
টকের জ্বালায় দেশ ছাড়লাম তেঁতুল তলায় বাস ছোটযন্ত্রণা থেকে নিস্তার পেতে গিয়ে বড়যন্ত্রণায় পড়া; তুলনীয়- 'তপ্ত কড়া থেকে জলন্ত আগুনে ঝাঁপ'; 'বিছার ভয়ে পালিয়ে গিয়ে সাপের মুখে পতন'।
টাক, প্রকৃতি, গোদ মরণে হয় শোধ মাথাভরা টাক, স্বভাব ও পায়ের গোদ মরার আগে ছাড়ে না।
টাকা উড়ে চলে যায়, টাকা রাখা বিষম দায় লক্ষ্মী চঞ্চলা; যত্ন না নিলে লক্ষ্মী ঘর ছাড়ে; পাঠান্তর- 'টাকার ডানা আছে, উড়ে যেতে কতক্ষণ?'
টাকা গাছের ফল নয় যে, ছিঁড়ে/পেড়ে নিলে হল অর্থ পরিশ্রমের ফল।
টাকা টাকা বল ভাই, টাকার মত জিনিস নাই, টাকা বিনে সংসারেতে সব যন্ত্রণা অর্থ না থাকলে সুখ ভোগ সম্ভব নয়।
টাকা চিটেগুড়- মক্ষি টানে অর্থ থাকলে পাশে অনেক উমেদার জুটে যায়।
টাকা তুমি যাচ্ছ কোথা? পিরিত যথা; আসবে কবে? বিচ্ছেদ যবে টাকা ধার দেওয়ার সময় পিরিত থাকে; টাকা ফেরত চাইলেই যত ঝগডাঝাটি, বন্ধু বিচ্ছেদ।
টাকা তোমারও নয়, টাকা আমারও নয়, টাকা প্রয়োজনের প্রয়োজনের সময় কাজে না লাগলে সেই অর্থ থাকা বা না-থাকা সমান কথা।
টাকা থাকলে অভাবের অভাব হয় অর্থশালী কিভবে অর্থ ব্যয় করবে ভেবে পায় না; অভাব না থাকায় অর্থশালী অসদুপায়ে অর্থ ব্যয় করে।
টাকা থাকলেই অপব্যয় অর্থশালী প্রয়োজনের তুলনায় আড়ম্বরে বেশি খরচ করে; দেখনদারী।
টাকা থাকলে ভদ্রলোক, না থাকলেই ছোটলোক সমাজে উচ্চবিত্তরা সম্মানার্থে ভদ্রলোক এবং নিম্নবিত্তেরা তুচ্ছার্থে ছোটলোক আখ্যায়িত হয়।
টাকা থাকলে ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ হয় অর্থ থাকলে নয়ছয় করা যায়; পাঠান্তর- টাকা থাকলে বেয়ানের বাপের শ্রাদ্ধ হয়
টাকা দিয়ে চিনি নারী, নারী দিয়ে নর যে নারী অর্থলোলুপ নয় এবং যে পুরুষ নারীলোলুপ নয় তারাই প্রকৃত সৎ নারী ও পুরুষ।
টাকা দিলে কাঠের পুতুলও হাঁ করে অর্থ অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে।
টাকা ধার চাইলে বন্ধু বিচ্ছেদ একবার ঋণ নিলে সে ঋণ আর শোধ হয় না।
টাকা না থাকলে ভাল কাজ করা যায় না অর্থের রূপালীরেখা হল- বহু ভালো কাজে অর্থ ব্যয়িত হয়।
টাকা বাড়লে দেমাক বাড়ে খুব কম অর্থশালীই বিনয়ী হয়।
টাকা মাটি, মাটি টাকা- রামকৃষ্ণ টাকা টাকা করে টাকার প্রতি বেশি নজর না দিতে ঠাকুরের হিতোপদেশ; টাকা ও মাটি দুইই সমান তুচ্ছ; উভয়ই আসক্তির বন্ধনে জড়ায়, ঈশ্বরের সন্ধান দেয় না।
টাকা যার মামলা/শক্তি তার অর্থের কাছে বিচার নতজানু হয়; অর্থের জোরে বিচার কেনা যায়; যে বেশি খরচ করে সে মকদ্দমায় জেতে; তুলনীয়- লাঠি যার মাটি তার'।
টাকায় টাকা আনে/টানে১ ব্যবসায়ে অর্থ বিনিয়োগ করলে লাভ হিসাবে অর্থ আয় হয়; সমতুল্য- 'বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী'।
টাকায় টাকা আনে/টানে২ যার অর্থ আছে তার অর্থাগম হয়; সমতুল্য- 'জলে জল বাঁধে'; পাঠান্তর- 'পয়সায় পয়সা আসে'।
টাকায় বাঘের দুধ মেলে অর্থে জোরে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়।
টাকায় সব দোষ ঢাকা পড়ে/যায় অর্থে সব সমালোচনায় মুখ বন্ধ করা যায়।
টাকার কোন গন্ধ নেই টাকা সবার কাছে সমান আদরণীয়।
টাকার নৌকা পাহাড় দিয়ে যায় অর্থ থাকলে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়।
টানবার যার সে না টানলে লাভ নাই কোন কাঁদলে যার দেখার কথা সে না দেখলে কেঁদে কেটে কোন লাভ হবে না।
টেকোমাথায় উঠলো চুল মরামালঞ্চে ফুটলো ফুল১ অতি হীন অবস্থা থেকে ভাল অবস্থায় উন্নীত হওয়া।
টেক মাথায় উঠলো চুল মরামালঞ্চে ফুটলো ফুল২ বুড়োবয়সে বিয়ে করতে যাওয়া।
টেনে বুনতে কুলোয় না অর্থের টানাটানি; অভাবের সংসার; এদিক আনতে ওদিক কুলায় না।
টোপ ফেললে খায় না সেই বা কেমন বঁড়শি, ইসারায় বোঝে না সেই বা কেমন পড়শি উভয়ই কোন কাজে আসে না।
ট্যাক খালি তো মুখ কালি অর্থের টানাটানিতে মন দুশ্চিন্তায় পোড়ে।
ট্যাক ভারি তো মন হালকা অর্থ থাকলে সব আকাঙ্খা মেটে, মেজাজ ফুরফুরে থাকে।
ট্যানা (ছেঁড়া টুকরা কাপড়) নাই ফ্যানা আছে শূন্যগর্ভ লোকের অহঙ্কার বেশি হয়।

প্রবাদ-প্রবচন অর্থ
ঠগ বাছতে গাঁঁ উজাড়/শূন্য ভালমন্দের বিচারে মন্দর সংখ্যাই বেশী; যেখানে প্রায় সবাই অসৎ সেখানে বাছাবাছি করা কঠিন; তুলনীয়- 'কম্বলের লোম বাছলে থাকে কি?'
ঠগের বাড়ী নেমন্তন্ন না আচাঁলে বিশ্বাস নেই অসাধুর দেওয়া কথাসম্পর্কে সন্ধিহান; কাজ হলেই তবে বিশ্বাস হয়; সমতুল্য 'জুয়াচোরের বাড়ি ফলার, না আঁচালে বিশ্বাস নেই'; 'বেল্লিকের নিমন্ত্রণ না আঁচালে বিশ্বাস নেই'; 'ঠোট ও কাপের মধ্যে বিস্তর ফারাক'।
ঠাঁট ঠমকে বিকোয় ঘোড়া গুণে নয় জমকে বাজারে জিনিসপত্র বিক্রি হয়; বাহ্যিক ভড়ং দেখে লোকে ভোলে; সমতুল্য- 'আগে দর্শনধারী পিছে গুণবিচারী'; 'যো দেখতা হ্যায় উয়ো বিক্‌তা হায়' ইত্যাদি; বিরুদ্ধ উক্তি- 'রূপের চেয়ে গুণের কদর বেশি'; 'শুধু দেখনাই ভাল হলেই চলে না গুণ থাকা চাই' ইত্যাদি ।
ঠাকুর ঘরে কে আমি কলা খাই নি অপরাধী দুর্বলচিত্তের হয়; চালাকি করতে গিয়ে ধরা পড়া; অতি সতর্কতায় দোষ-স্বীকার; এককথার অন্য উত্তর দিয়ে বদ মনোভাব প্রকাশ করে ফেলা; তূলনীয়- 'যে অজুহাত দেখায় সে দোষ স্বীকার করে'।
ঠাকুরকে দেখিয়ে কলা নৈবিদ্যি নিয়ে পালা প্রবঞ্চনা করা।
ঠাণ্ডা মাথায় বুদ্ধি খোলে মাথা গরম হলে বুদ্ধি গুলিয়ে যায়।
ঠুঁটো জগান্নাথ কাজ করতে বিমুখ ব্যক্তিকে ঠুঁটো জগান্নাথের সঙ্গে তুলনা করা হয়।
ঠেঁটা লোকের মুখে আঁট বাইরে থেকে কাটে গাঁট ধূর্তলোক মিষ্টিকথায় ভুলিয়ে প্রবঞ্চনা করে।
ঠেকে শেখে আর দেখে শেখে অজ্ঞানীরা নিজের কষ্ট থেকে শিক্ষা পায়; জ্ঞানীরা অপরের অজ্ঞতার ফল দেখে শিক্ষা নেয়।
ঠেলাঠেলির ঘর খোদায় রক্ষা কর দুই সতীনের ঝগড়ায় স্বামীবেচারা প্রাণ ওষ্ঠাগত, কাকে ছেড়ে কাকে রাখে।
ঠেলায় পড়লে ঠাকুরদাদি, নইলে তার নাকে পাঁদি (বাতকর্ম) বিপদে পড়ে কারো শরণ নেওয়া; বিপদ সরে গেলেই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা।
ঠেলায় পড়ে ঢেলায় সেলাম১ প্রকৃত বিষয় গোপন করে সম্ভ্রম রক্ষা করার চেষ্টা; গল্পে আছে- পা পিছলে পড়ে যেতে একজন বলল- কি পড়ে গেলে? উত্তরে সে বলল-পড়ব কেন, শিবকে প্রণাম করলাম।
ঠেলায় পড়ে ঢেলায় সেলাম১ বিপদে পড়ে ঈশ্বরকে স্মরণ; সমতুল্য- 'কারে পড়ে আল্লার নাম', 'বিপদে পড়লে শ্রীমধুসূদন' ইত্যাদি।
ঠেলায় না পড়লে বিড়াল গাছে ওঠে না বিপদে পড়লে যেকোনভাবে আত্মরক্ষা করতে হয়।
ঠেলায় পড়লে বাঘেও ঘাস খায় বাধ্য হলে অপছন্দকেও স্বীকার করতে হয়; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'পড়েছি যবনের হাতে খানা খেতে হবে সাথে'।
ঠেলায় পড়লে বেড়াল মান্দার গাছেও (একপ্রকার কাঁটাযুক্ত গাছ) উঠে বিপদে পড়লে কোন বাধাই বাধা নয়।
ঠেলায় পড়লে শালগ্রাম নইলে পাথরের ঢেলা ভয় থেকে ভগবানে ভক্তি।
ঠেলায় পড়লে বামণ শালগ্রামের পৈতা/সোনা বেঁচে খায় বিপদে পড়লে ভগবানে ভক্তি শিকেয় ওঠে।
ঠেলার নাম বাবাজী বিপদে পড়লে সবাই বাপ বাপ বলে; বিপদের সময় অবজ্ঞাতকে সমাদর করতে হয়; সমতুল্য- 'সাধে কি বাবা বলি গুতোর চোটে বাবা বলায়'।
ঠোঁক কাটা কাক সববিষয়ে ঠোক্কর মারা লোক; যে সববিষয়ে খুঁত ধরে।
ঠ্যাং থাকতে লাঠি কেন? দুর্বলের প্রতি বক্রোক্তি।

প্রবাদ-প্রবচন অর্থ
ডজনে তেরো ফাউয়ের হিসাব; অতি স্বাভাবিক ব্যাপার; একটা ফাউ সবাই চেয়ে থাকে এবং পেয়ে থাকে।
ডাইনে আনতে বাঁয়ে কুলোয় না (নেই) অর্থের টানাটানি; আয় থেকে ব্যয় বেশি; আয় অল্প কিছুতেই সংকুলান হয় না; সমতুল্য- 'খরচের আঁকে আনতে জমার আঁকে কুলায় না'; 'নুন আনতে পান্তা ফুরায়' ইত্যাদি; পাঠান্তর- 'ডাইনে আনতে বামে ফুরায়'।
ডাইনের মায়া বুঝা ভার কপটীর কপটতা বুঝা খুব কঠিন।
ডাইলের মধ্যে মুসুরি, সাগাইয়ের (আত্মীয়) মধ্যে শাশুড়ি। উভয়ে গুণে এবং উপকারিতায় শ্রেষ্ঠ।
ডাকয়ে পক্ষী না ছাড়ে বাসা; উড়িয়ে বৈসে খাবে করি আশা; ফিরে যায় বাসে না পায় দিশা খনা ডেকে বলে সেইতো ঊষা রাতের পাখীরা যখন বাসার মধ্যে থাকে; বাসা ছেড়ে উড়ার ইচ্ছা হয় তবু উড়তে পারে না; বার বার দেশে হারা হয়ে বাসায় ফিরে আসে; রাত্রিশেষের সেই সময়টাই ঊষাকাল।
ডাকলে ডাক, বসলে ক্রোশ, পথ বলে মোর কিসের দোষ অলসতার প্রতি বক্রোক্তি; চলার পথে কারো ডাক শুনে দাঁড়িয়ে পড়লে এক ডাকের পথ (যতদূর থেকে চিৎকার শোনা যায় ততটা একডাকে পথ) চলার সময় নষ্ট; একবার বসে পড়লে এক ক্রোশ পথ যাওয়া্র সময় নষ্ট হয়; পাঠান্তর- 'দাঁড়ালে পোয়া, বসলে ক্রোশ, পথ বলে মোর কিসের দোষ'।
ডাঙায় বাঘের ভয়, জলেতে কুমীর উভয়সঙ্কট; সমার্থক বাগধারা- এগুলে রাম পিছুলে রাবণ, শাঁখের করাত, যেতেও কাটে আসতেও কাটে; সাপের ছুঁচো গেলা ইত্যাদি।
ডান হাতখান দিলে বাম হাতখান পাওয়া যায় হাত বাড়ালেই বন্ধু পাওয়া যায়।
ডানপিটের মরণ গাছের আগায় গাছ থেকে পড়ে হাত পা ভাঙে; দুর্দান্ত লোকের প্রায়শঃই অপঘাতে মৃত্যু হয়।
ডানহাতের কাজ বামহাত যেন না জানে কোন গোপন কাজ দ্বিতীয়ব্যক্তি যেন না জানে।
ডাল যেমন বাঁকাবে গাছ তেমনি বাড়বে একজনব্যক্তির উপর প্রাথমিকশিক্ষা স্থায়ী প্রভাব ফেলে; সম্পর্কীত প্রবাদ- 'কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ, পাকলে করে টাঁশটাঁশ'।
ডালছাড়া বানর বানর যতক্ষণ ডালে থাকে ততক্ষণ তার বিক্রম; ডাল ছাড়লেই বিক্রম আর থাকে না; অনভ্যস্তস্থানে স্বাভাবিক হওয়া যায় না; সমতুল্য- জলছাড়া কুমির/মাছ; তুলনীয়- 'গোল গর্তে চৌকো পেরেেক'।
ডিডি ঢল্লে ধরা পড়ার ভয় থেকে রঙ্গচ্ছলে বলা হয়; উৎসকাহিনী- তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায় লিখিত স্বর্ণলতা উপন্যাসের অবলম্বনে রচিত গিরিশ ঘোষের নাটক 'সরলা'এর মুখ্য পুরুষচরিত্র গদাধর; নির্বোধ গদাধর দুষ্টুমিতে পটু; স্পষ্ট করে কথা বলতে পারে না; দ'কে 'ড' বলে; গদাধরকে গডাঢড় বলে; তাকে শাড়ী পরিয়ে তার দিদি নিয়ে যাচ্ছিল; তার চলনে সন্দেহ হওয়ায় পুলিশ থেকে দাঁড়াতে বলে; ঘোমটার আড়াল থেকে সে বলে ওঠে, 'ডিডি ঢল্লে'।
ডিমফোটার আগেই মুরগীর ছানা গোনা আগাম সুখকল্পনা; সাফল্যের সম্ভাবনা নিয়ে অতিরিক্ত আশাবাদী হওয়া; সমতুল্য- 'কাপ ও ঠোঁটের মাঝে বিস্তর ফারাক'; 'কালনেমির লঙ্কাভাগ'; 'গাছে না উঠতেই এককাঁদি';'রাবণের ছাদনাতলা'ইত্যাদি।
ডিমের খোলে চেপে সাগরপার করা অবাস্তব কল্পনা, যা হবার নয় তাই করার ব্যর্থ প্রয়াস; সমতুল্য- 'কলার ভেলায় সাগরপার'; 'শামুকের খোলে জল সেচা' ইত্যাদি।
ডুবন্ত মানুষ খড়কুটো ধরে বাঁচতে চায়'। খুব কঠিন অবস্থাতে পড়লে সামান্যতম সাহায্যকেও আঁকড়ে ধরে;
সঙ্কটকালে পাওয়া সামান্য সাহায্য বিরাট সাহায্য বলে মনে হয়; মরণাপন্ন মানুষের শেষচেষ্টা; হিন্দি পাঠান্তর- 'ডুবতে কো তিনকে (খড়, ঘাস) কা সহারা 
ডুবে ডুবে খাই পানি, আল্লা জানে আর আমি জানি গোপনে করা কাজ ধরা দুঃসাধ্য ব্যাপার; গোপনে যারা দুস্কর্ম করে তাদের উদ্দেশে বলা হয় (উৎস- রোজার দিনে জল খাওয়া নিষিদ্ধ; গাজনের সন্ন্যাসীর জল খাওয়া নিষিদ্ধ); পাঠান্তর- 'ডুবে ডুবে জল খায়, শিবের বাবাও টের না পায়'।
ডুবে ডুবে জল/পানি খাওয়া গোপনে কাজ করা; লোকচক্ষুর অগোচরে অন্যায় কাজ করা।
ডুবেছি না ডুবতে আছি, দেখি পাতাল কতদূর? বিপর্যয় লুকানোর প্রচেষ্ঠা।
ডুমুরের ফুল, সাপের পা, কল্পনা শুধু কল্পনা অশ্বডিম্ব, অমাবস্যার চাঁদ, কোকিলের বাসা, ডুমুরের ফুল, সাপের পা ইত্যাদি হয় অদৃশ্য নয় অবাস্তব কল্পনা।
ডেকে ডেকে খনা গান, রোদে ধান ছায়ায় পান রৌদ্রপূর্ণ জমিতে ধান এবং ছায়াপূর্ণ জমিতে পান চাস করতে হয়; তাতেই বেশি ফসল পাওয়া যায়।
ডেকে শাল নেওয়া শখের বিপদ; ইচ্ছা করে বিপদে পড়া।
ডোবা দেখলেই ব্যাঙ লাফায় প্রিয়বস্তু দেখলে সবারই আনন্দ হয়।
ডোলভরা আশা, কুলোভরা ছাই আশা অনেক কিন্তু কোন আশাই সফল হয় না; আশার শেষ নেই, নিরাশারও শেষ নেই।
ডোলী ন কহার বিবি বৈঁঠা হৈ তৈয়ার১ যাবার জন্য বধু সেজেগুজে বসে আছে, অথচ পালকী ও বাহকের দেখা নেই;
ডোলী ন কহার বিবি বৈঁঠা হৈ তৈয়ার২ কাজের যোগাড় নাই অথচ কাজের লোক প্রস্তুত; কারণের আগে কার্য; বিপরীতবুদ্ধির কাজ।
ডোলী ন কহার বিবি বৈঁঠা হৈ তৈয়ার যাবার জন্য সবাই সেজেগুজে বসে আছে অথচ যাবার কোন জায়গা নেই।

প্রবাদ-প্রবচন অর্থ
ঢাকঢাক গুড়গুড় প্রকৃত অবস্থা গোপন করার চেষ্টা; কলঙ্ক চাপা দেওয়ার অপচেষ্টা।
ঢাক বাজিয়ে ইঁদুর ধরা সাড়ম্বরে সামান্য কাজ করা।
ঢাকী শুদ্ধু বিসর্জন সমূলে বিনাশ।
ঢাকের কাছে টেমটেমি খুববড় ও খুবছোটর মধ্যে তুলনা হয় না; সমতুল্য- 'চাঁদের কাছে জোনাকি'।
ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রি১ আসল খরচ থেকে আড়ম্বরের খরচ বেশি; বাজে কাজে অযথা অর্থব্যয়।
ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রি২ অসার বাহ্যাড়ম্বর করতে গিয়ে আসল জিনিস হারানো।
ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রি৩ সামান্য বিষয়ে অসামান্য ব্যয়; তুলনীয়- 'গাড়ী কিনতে গিয়ে বাড়ী বিক্রি'।
ঢাকের বাঁয়া কাছে থাকে কিন্তু কাজে লাগে না।
ঢাকের বাদ্য থামলে মিষ্টি১ কর্ণজ্বালা থেকে মুক্তি; বিরক্তিকর একঘেয়েমির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি; যা অসহ্য তার ইতি হওয়াই ভালো; পাঠান্তর- 'ঢাকের বাদ্যি আর ঢেঁকির কচকচি চুপ করলেই ভাল'।
ঢাকের বাদ্য থামলে মিষ্টি২ ঝগড়া-বিবাদ থেমে গেলেই ভাল।
ঢাল নেই তলোয়ার নেই আদ্দিরাম/নিধিরাম সর্দার শূন্যহাতে বাহাদুরি; অক্ষমের আস্ফালন; নিজের অযোগ্যতাকে কথার মারপ্যাঁচে ঢাকা; পাঠান্তর- 'ধন নেই কড়ি নেই নিধিরাম পোদ্দার'; 'ধান নাই চাল নাই, আন্দিরাম মহাজন'।
ঢিল মারলে পাটকেল খেতে হয়১ আঘাতের উত্তরে আরও বড় প্রত্যাঘাত আসে; পাঠান্তর- 'ঢিল মারলে পাটকেল পড়ে'; 'ঢিলের বদলে পাটকেল'
ঢিল মারলে পাটকেল খেতে হয়২ পরের ক্ষতি করতে চাইলে নিজেরও ক্ষতি হয়।
ঢিল দিয়ে ঢিল ভাঙা কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা; সমতুল্য- 'কণ্টকেনৈব কণ্টকম'।
ঢিল মেরে ঢিল খাওয়া বিপদ ডেকে আনা; সমতুল্য- 'চড় মেরে চড় খাওয়া'।
ঢিলা দিয়ে টেনে আনা আগে আলগা দিয়ে পরে নিয়ন্ত্রণে আনা; সমতুল্য- 'ছেড়ে দিয়ে তেড়ে ধরা'।
ঢেঁকি অবতার আহাম্মক, নির্বোধ; হাবাগোবা।
ঢেঁকি কেন গাঁ বেড়াক না গড়ে পড়লে হল অন্য কাজ যা খুশি করুক, আমার কিছু যায় আসে না, আ্রমার কাজটা হলেই হল।
ঢেঁকি ভজে স্বর্গে যাওয়া নিস্ফল প্রচেষ্টায় মোক্ষ নেই।
ঢেঁকির কচকচি থামলেই মিষ্টি১ বিরক্তিকর একঘেয়েমির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি; পাঠান্তর- 'ঢেঁকির কচকচি আর ঢাকের বাদ্যি চুপ করলেই ভাল'।
ঢেঁকির কচকচি থামলেই মিষ্টি২ ঝগড়াঝাটি মিটে গেলেই ভাল।
ঢেঁকির তসুলি ঢেঁকির মধ্যবর্তী কীলক তসুলির একদিকে আঘাত করলে সেটা অন্যদিকে যায় লক্ষণায় যে দুদিকের মন জুগিয়ে চলে এমনব্যক্তি।শ্বেত
ঢেঁকির শব্দ বড় যার ভিতরে যার কিছুই নেই তার বাজে বেশি; সমতুল্য- 'ফাঁকা কলসি বাজে বেশি'; পাঠান্তর= 'ফোঁপরা ঢেঁকির চোপর বেশি'।
ঢেঁকিশাল/ঢেকশেল দিয়ে কটক যাওয়া ঘুর/বাঁকাপথে কাজ করা; সহজ কাজ জটিল উপায়ে করা; সমতুল্য- 'অমরকণ্টক হয়ে অমরনাথ যাওয়া';'কানপুর হয়ে নাগপুর যাওয়া'; 'কামাখ্যা হয়ে কাশীধাম যাওয়া' ইত্যাদি।
ঢেঁকিশালে/ঢেকশেলে যদি মানিক পাই, তবে কেন পর্বতে যাই১ ঘরে বসেই যদি সুখ পাই তবে সুখের অন্বেষণে অন্যত্র ঘোরাঘুরির প্রয়োজব নেই; তুলনীয়- 'আমড়াতলায় আম পেলে আমতলায় কেবা যায়'।
ঢেঁকিশালে/ঢেকশেলে যদি মানিক পাই, তবে কেন পর্বতে যাই২ কাছে অভীষ্ট সিদ্ধ হলে দূরে যাওয়া নেই; পরিশ্রমে অনিচ্ছা।
ঢেঁকি স্বর্গে গিয়ে/গেলেও ধান ভানে১ যার যা স্বভাব তা মরলেও ছাড়তে পারে না।
ঢেঁকি স্বর্গে গিয়ে/গেলেও ধান ভানে২ মন্দভাগ্যের কোনো অবস্থাতেই ভালো কিছু হতে পারে না; তুলনীয় ‘অভাগা যেদিকে চায় সাগর শুকায়ে যায়’; ‘আমি যাই বঙ্গে কপাল যায় সঙ্গে’।
ঢেঁকি স্বর্গে গিয়ে/গেলেও ধান ভানে৩ অবস্থার উন্নতি হলেও নিজের কাজ নিজেকেই করা উচিত।
ঢেউ দেখে লা (নৌকা) ডুবিও না ঢেউয়ের বহর দেখে ঘাবড়িয়ো না; বিপদে হতবুদ্ধি না হয়ে প্রতিকারের চেষ্টা করো।
ঢোল কা ভিতর পোল (ফাঁপা) আজকাল বেশিরভাগ লোকের বাইরের আড়ম্বর বেশি; সমতুল্য- বাইরে বাবুয়ানা ভেতরে খেড়'; 'ভিতরে ছুঁচোর কেত্তন'; 'বাইরে কোঁচার পত্তন' ইত্যাদি।
ঢোলের পাছে কাসি অপরিহার্য সঙ্গী।
ঢ্যাকার আগে চলা ধাক্কা দেবার আগেই যাওয়া ভালো।

প্রবাদ-প্রবচন অর্থ
তক্রান্তং খলু ভোজনম ভোজের শেষপাতে ঘোল খাওয়া ভাল।
তত্র মৌনং হি শোভনম বর্ষাকালে ব্যাঙেরা যখন বক্তা হয় তখন কোকিলেরা চুপ থাকে; সেই লক্ষণায় অজ্ঞানরে ভিড়ে মৌন থাকাই শোভন।
তথাপি কাকো চ ন রাজহংসঃ নানা মণিমাণিক্যের ভূষণে সাজালেও কাক কখনো রাজহাঁস হয় না।
তথাস্তু তথা অস্তু; তাই হউক।
তন দেখলে মন নাশ, তল দেখলে সাধু নাশ গল্পে ব্যাখ্যাটা ভাল হবে; একবনে এক ঋষি তেঁতুলগাছে উল্টা ঝুলে বহুবছর ধরে ধ্যান করছিলেন; রাজার ইচ্ছা হল উনার ধ্যান ভাঙাবেন। অনেক চেষ্টাতেও ভাঙাতে না পেরে ঘোষণা করে দিলেন যে ওই ঋষির ধ্যান ভাঙাতে পারবে তিনি তাকে পুরস্কৃত করবেন। এক মেয়ে এসে বললো, 'এটা কোন ব্যাপারই নয়; আমি ঋষির ধ্যান ভাঙিয়ে আপনার কাছে হাজির করাবো'; মেয়েটা কথা রেখেছিল কিছুদিন পর সে সাধুকে নিয়ে রাজার কাছে হাজির হল; সাধুর কাঁধে ছিল মেয়েটির গর্ভজাত ও সাধুর ঔরষজাত পুত্রসন্তান!
তন্নষ্টং যন্ন দীয়তে যাহা দান করা হয় না তাহাই নষ্ট হয়।
তপ্ত কড়া থেকে জলন্ত আগুনে ঝাঁপ ছোট বিপদ এড়াতে বড় বিপদে পড়া; সমতুল্য- 'টকের জ্বালায় দেশ ছাড়লাম তেঁতুল তলায় বাস'; 'বিছার ভয়ে পালিয়ে গিয়ে সাপের মুখে পতন'।
তপ্তজলে ঘর পোড়ে না জল গরম হলেও স্বাভাবিক শৈত্যগুণ হারায় না লক্ষণায়- ঠাণ্ডালোক রেগে গেলেও বেশি ক্ষতি করে না কিংবা সামান্য ভুলে বেশি ক্ষতি হয় না।
তপ্ত ভাতে ঘি ঢালা অপকার করার ভান করে উপকার করা; শাস্তি দেবার ছলে উপকার করা।
তপ্ত ভাতে নুন জোটে না, পান্তা ভাতে ঘি সামান্য বিষয় জোটে না অসামান্যের দাবী।
তমসোমা জ্যোতির্গময়, অসদোমা সদগময়, মৃত্যোর্মা অমৃতগময় আমাকে- অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে চল; অসৎপথ থেকে সৎপথে নিয়ে চল; মৃত্যু থেকে অমৃতের দিকে নিয়ে চল।
তমোগুণে অধোগতি মোহ থাকলে পতন অনিবার্য।
তর্কই জ্ঞানের উৎস বাদ থাকলে প্রতিবাদ হয়; প্রতিবাদ থেকে সম্বাদে উত্তীর্ণ হয়।
তর্কে জেতা নয়, তর্কে না জড়ানোই বুদ্ধিমানের কাজ বুদ্ধিমানেরা তর্কে জড়ায় না; কথায় বলে 'তর্কে তর্ক বাড়ে'।
তর্কে তর্ক বাড়ে তর্কের কোন মীমাংসা নেই।
তলোয়ার যার, দেশ তার বলশালী ক্ষমতা ভোগ করে; সমতুল্য- 'জিস্‌কি লাঠ উস্‌কি ভৈঁস'; 'জিস্দা‌ তেগ উস্‌দা দেগ'; 'জোর যার মুল্লুক তার'; 'লাঠি যার মাটি তার' ইত্যাদি।
তস্মিন্ তুষ্টে জগৎ তুষ্টঃ ঈশ্বরের সন্তোষে জগৎ তৃপ্ত।
তস্য তদেব মধুরং যস্য মনো যত্র সংলগ্নম যার মন যাতে অনুরক্ত তার কাছে সেটাই মনোহর; সমতুল্য- 'যার সাথে যার মজে মন, কিবা হাঁড়ি কিবা ডোম'।
তাঁতীকুলও গেল, বৈষ্ণবকুলও গেল দু’দিক সামালাতে গিয়ে দুদিকই হারালো; এইকাজ ওইকাজ করতে গিয়ে দুইকাজই নষ্ট হলো; (উৎসকাহিনী- তাঁত বোনার কাজে আর পয়সা নেই দেখে আরামে থাকতে এক তাঁতী বৈষ্ণবের ভেক নিল; আখড়ার মোহান্ত তাকে প্রথমেই ভিক্ষা করতে পাঠায়; সে দেখলো এ তো মহাজ্বালা; আগে ঘরে বসে কাজ করা যেত; এখন দ্বারেদ্বারে ভিক্ষার জন্য ঘুরতে হবে; সে বেঁকে বসল; ফলে মোহান্ত তাকে তাড়িয়ে দিলো; এদিকে ভেক নেওয়ার জন্য তাঁতীকুলেও আর তার স্থান হল না; এই ভাবে সে দুকুল হারালো;) তুলনীয়- 'একূল গেল ওকূল গেলও অকূল পারে গোকুল'।
তাঁতী রাগে কাপড় ছেঁড়ে, আপনার ক্ষতি আপনি করে রাগে অন্ধ হলে বুদ্ধি গলতে শুরু করে; নির্বোধলোক রাগে নিজেরই ক্ষতি করে।
তাজমহল একদিনে তৈরী হয় নি মহানসৃষ্টি অনেক পরিশ্রমের ফসল; তিলে তিলে গড়ে ওঠে; তুলনীয়- 'তিলে তিলে তিলোত্তমা'; 'রোমনগরী একদিনে সৃষ্টি হয় নি'।
তাড়াতাড়িতে বাড়াবাড়ি তাড়াতাড়ি করলে নজর এড়িয়ে কাজে অনেক ভুল থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তাড়াহুড়া করলে বিলম্ব হয় তাড়াআড়ি করলে ভুলভ্রান্তি হয় এবং শেষপর্যন্ত কাজে দেরী হয়; পাঠান্তর- 'তাড়াহুড়োয় সময় নষ্ট'।
তাত সয় তো বাত সয় না১ কথা শুনতে নারাজ; বাতাসের গরম সহ্য হয়, কিন্তু কথার গরম সহ্য হয় না।
তাত সয় তো বাত সয় না২ গরম বাতাস সহ্য করা যায় কিন্তু শীতল বাতাস সহ্য করা যায় না।
তাত সয় তো বাত সয় না৩ গরম হাওয়া খারাপ কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ হাওয়া আরও খারাপ।
তাতে কিছু যায় আসে না কত