বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সংঘর্ষ

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সংঘর্ষ বলতে বুঝানো হয় বাংলাদেশ ও ভারতের সীমানারক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া যুদ্ধকে। বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে ৪,১৫৬ কিমি (২,৫৮২ মাইল) লম্বা আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে। এটা বিশ্বের পঞ্চম দীর্ঘতম ভূমি সীমানা, যার মধ্যে আছে আসাম ২৬২ কিমি (১৬৩ মাইল), ত্রিপুরা ৮৫৬ কিমি (২৭৫ মাইল), মিজোরাম ১৮০ কিমি (১১০ মাইল), মেঘালয় ৪৪৩ কিমি (২৭৫ মাইল) এবং পশ্চিমবঙ্গ ২,২১৭ কিমি (১,৩৭৮ মাইল)। এই সীমান্তে বিভিন্ন সময় দুই দেশ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে।

পাদুয়া যুদ্ধ ২০০১ সম্পাদনা

২০০১ সালের এপ্রিল মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশ রাইফেলস (বর্তমান বিজিবি) ও ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। যা দুই দেশের মধ্যকার দুর্বলভাবে চিহ্নিত আন্তর্জাতিক সীমান্তে সংগঠিত হয়েছিল। ২০০১ সালের ১৫ এবং ১৬ এপ্রিল সিলেট সীমান্তে পদুয়ায় এবং ১৯ এপ্রিল পুনরায় পদুয়া সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফের সাথে বিডিআরের সশস্ত্র সংঘর্ষ হয়। এই তিনটি যুদ্ধেই বাংলাদেশের সে সময়ের বিডিআরের জোয়ানরা বিজয় অর্জন করে। ১৯৭১ সালের পর থেকে বাংলাদেশের অধ্যুষিত এলাকা পাদুয়ায় বিএসএফ নানা অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়েছে বলে বাংলাদেশ অভিযোগ করে আসছিলো। সর্বশেষে বিএসএফ সেখানে অবৈধভাবে রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করে। কিন্তু আন্তর্জাতিক আইন এবং ভারত-বাংলা সীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী সেখানে রাস্তা বানানো আইন পরিপন্থি কাজ। বাংলাদেশ বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও তারা রাস্তা বানানোর কাজ চালাতে থাকে। এমতাবস্থায় তৎকালীন বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) পাদুয়া দখল করে নেয়। এই ঘটনার ২ দিন পর পাদুয়া থেকে ৮০০ কি.মি. দূরে বাংলাদেশের সীমান্তে ঢুকে বিডিআরের বারইবাড়ি ঘাঁটিতে ভারি অস্ত্রসহ হামলা চালায় বিএসএফ। কিছুক্ষণ পর বিডিআর পাল্টা আক্রমণ শুরু করলে যুদ্ধ শুরু হয়। প্রায় ২ দিন ব্যাপী এই যুদ্ধে দুই বাংলাদেশি বিডিআর সদস্য নিহত হন এবং এর বিপরীতে ১৮ জন বিএসএফ সদস্য নিহত হন বলে ঢাকা থেকে জানানো হয়। পরবর্তীতে দিল্লি এবং ঢাকার মধ্যস্থতায় বিষয়টি মীমাংসিত হয় এবং যুদ্ধ সমাপ্তি লাভ করে।[১]

বড়াইবাড়ী সীমান্ত যুদ্ধ ২০০১ সম্পাদনা

২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল কুড়িগ্রামের রৌমারীতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আবার সীমান্ত যুদ্ধ ঘটে। এই যুদ্ধে ১৮ জন ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী মারা যায়। কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্তের গ্রাম বড়াইবাড়িতে এই সংঘর্ষের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এক কঠিন সংকটের মুখে পড়ে। ভোররাত থেকে যুদ্ধ শুরু হয়ে টানা ছয়ঘণ্টা যুদ্ধ চলার পর ভারতীয় বাহিনী পিছু হটে। ওই সময় দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ে জরুরী কথাবার্তা চলছিল। কিন্তু তাতেও সংঘর্ষ থামেনি। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর বহু সদস্য নিহত হওয়ার পরই কেবল তারা পিছু হটে।[২] এই যুদ্ধে তিনজন বিজিবি সদস্য মারা যায়। তারা হলেন নায়েক সুবেদার ওয়াহিদুজ্জামান, সিপাহী মাহফুজার রহমান ও সিপাহী আব্দুল কাদের।[৩]

আখাউড়া যুদ্ধ ২০০৫ সম্পাদনা

২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল আখাউড়া উপজেলার বাংলাদেশ–ভারত সীমান্তের হীরাপুর গ্রামের সীমান্ত পিলার ২০২২/৩ এস এর নিকটে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত যুদ্ধ ঘটে। ২০/২৫ জন সশস্ত্র বিএসএফ সদস্য এবং ৬০/৭৫ জন ভারতীয় নাগরিক সেদিন বাংলাদেশ সীমানার ৩০০ গজ ভেতরে হীরাপুর গ্রামে প্রবেশ করে। বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকরা হিরাপুর গ্রামে ব্যাপক লুটতরাজ শুরু করে। গ্রামবাসী বাধা দিলে বিএসএফ গুলি করে। তখন উপস্তিত বিডিআর সদস্যদের সাথে গ্রামবাসী বিএসএফ এর সাথে সম্মুখ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। বিডিআর ও বিএসএফ এর মধ্যে সামনা-সামনি প্রায় ৪/৫ ঘণ্টা তীব্রভাবে গুলি বিনিময় হয়। এই যুদ্ধে বিএসএফ এর কোম্পানী কমান্ডার, এ্যাসিটেন্ট কমান্ড্যান্ট শ্রী জীবন কুমার গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এছাড়া কনষ্টেবল কে কে সুরেন্দার গুলিবিদ্ধ হয়। শেষে বিএসএফ কোম্পানী কমান্ডারের লাশ ও আহত কনষ্টেবলকে ফেলে রেখে বাংলাদেশের ভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। পরবর্তীতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ২ জনকে বাংলাদেশ রাইফেলস পদক, ৩ জনকে প্রেসিডেন্ট রাইফেলস পদক খেতাবে ভূষিত করেন। এটিই হলো বিডিআর এর সর্বোচ্চ সম্মান পদক। এছাড়া ৮ জনকে ডিজি’র কমেনডেশন মেডেল প্রদান করা হয়। ২৪ শে ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক রাইফেলস সপ্তাহ- ২০০৯ প্যারেড শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে বিডিআর এর সর্বোচ্চ পদক “বাংলাদেশ রাইফেলস্ পদক” (বিআরএম) দেওয়া হয়।[৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "বিএসএফ-এর পাদুয়া হত্যকান্ড"The Daily Sangram। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১৮ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. "চল্লিশে বাংলাদেশ"BBC News বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১৮ 
  3. "কাল রৌমারীর বড়াইবাড়ি দিবস | কালের কণ্ঠ"Kalerkantho। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১৮ 
  4. হিমু (২০১৮-০১-১৪)। "বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত যুদ্ধ ২০০৫"Frontline Bangladesh (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১৮ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]