বহনি হচ্ছে আসামের দেশীয় জনগোষ্ঠী মুসলমানদের পরম্পরাগত খাদ্য। অবিভক্ত গোয়ালপাড়া জেলার সাথে মেঘালয়ের গারোপাহাড়ের সমতল ভূমিতে বসবাস করা দেশী জনগোষ্ঠীর মুসলমানদের পরম্পরাগত খাদ্য। একে বকুনিও বলা হয়। বহনি তৈরি করা এবং খাওয়ার উপযুক্ত সময় ভাদ্র মাস যদিও ভিন্ন মাসেও খাওয়া যায়।

প্রস্তুতকরণ সম্পাদনা

বহনির কারণে বরো ধান বিশেষভাবে উপযোগী যদিও অবিভক্ত গোয়ালপাড়ায় উৎপন্ন হওয়া কাতারি, মালসিরা, গরিয়া ধানেরও ব্যবহার হয়। প্রথমে ধানটি জলে ভিজিয়ে (তিতাতে) দেওয়া হয়। ধানটি জল থেকে তুলে এনে ঘরে গজালি হ'তে রাখা হয়। ধান একরাত ভিজিয়ে দিয়ে পরদিন জল থেকে ধানটি তুলে মজিয়াতে কলাপাতার উপর ছড়িয়ে দিয়ে কলাপাতা মুড়ে ঢেকে দিতে হয়। তার উপর বস্তা দিয়ে ইট বা তেমন কোনো ওজন দিয়ে চাপ দিয়ে রাখলে ৩/৪ দিন পরে গজালি হয়। গজালি হওয়া ধানটি রোদে ভালকরে শুকাতে হয়। গজালি হওয়া ধানটি আবার রোদে শুকাতে হয়, শুকোবার পরে ধানটি ঢেঁকী, উখলি বা উরালে পার দিয়ে তুঁষ এবং চাল পৃথক করা হয়। তুঁষটি ভালমতো রাখা হয়। চালগুলি আবার জলে ভিজিয়ে দেওয়া হয়। তিতানো চালটি উখলি বা ঢেঁকীতে গুড়ো করা হয়। চালের গুড়োটি ভালমতো একটি ভিন্ন পাত্রে রাখা হয়। গজালি হওয়া ধানের তুঁষটি জলে তিতাতে দেওয়া হয় এবং সেই জলটি অন্য একটি পাত্রে রাখা হয়। পাত্রটির তলায় প্রথমে কঁাঠালপাতার একটি আস্তরণ দিয়ে তার উপর রান্না করা ভাতের সাথে তুঁষের জল এবং চাউলের গুড়ো মিশিয়ে রেখে দেওয়া হয়। বহনি রাখার দিনটিতে খাওয়া হয় না। তৃতীয় দিনে বহনির স্বাদ অতি মধুর হয় এবং এলানো ভাব হয়। চতুর্থ দিনে বহনি নিচাযুক্ত হয়।[১] ধর্মীয় কারণে 'বহনি'কে দেশীরা নিচা বলে অভিহিত করে খাদ্য তালিকাতে স্থান দিয়েছে। সেই সত্যতাকে অস্বীকার না করে অন্যদিকে ধর্মীয় প্রতিবন্ধকতাও উপেক্ষা না করে খাদ্যটিকে সরাসরি নিচা বা রাগিয়াল বলে না ভেবে মন মাতানো খাদ্য হিসাবে দেখা যায়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. ইসলাম, ছাহারুল (২০১৫–১৬)। "দেশী জনগোষ্ঠীর পরম্পরাগত খাদ্য 'বহনি'"। ছামরূপা, ছমরীয়া আঞ্চলিক মহাবিদ্যালয় আলোচনী: ২৮।