ফুটন্ত গোলাপ বাংলাদেশের কাসেম বিন আবুবাকারের লিখিত একটি রোমান্টিক উপন্যাস।[১][২] লেখকের প্রথম উপন্যাস ফুটন্ত গোলাপ বইটি ১৯৮৬ প্রকাশিত হবার পরে, বইটি বাংলাদেশের প্রান্তিক গ্রামাঞ্চলের মানুষের নিকট বইটি তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠে,[৩] এবং বইটি তৎকালীন সময়ে বেস্ট সেলার বই হয়ে উঠে। এরপর ফ্রান্সের আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি লেখক ও এই বইটি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করার পরে লেখক ও বইটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কেন্দ্রে পরিণত হয়।[৪] এমনকি বইটি কাসেম বিন আবুবাকারের লেখা কিনা, সেটা নিয়েও সন্দেহ ও বিতর্ক তৈরি হয়।[৫] তবে কিছু পাঠক বইটি নিয়ে ব্যক্তিগত ব্লগিং ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা করেছেন। ২০১১ সালে বইটি ৩০ তম সংস্করণ বাজারে বের হয়েছে, এবং বইটি সর্বমোট ১.৫ লক্ষ কপি বিক্রি হয়েছে।

ফুটন্ত গোলাপ
বইয়ের প্রচ্ছদ
বইয়ের প্রচ্ছদ
লেখককাসেম বিন আবুবাকার
প্রচ্ছদ শিল্পীসমর মজুমদার
দেশবাংলাদেশ
বিষয়রোম্যান্টিক, প্রেম
প্রকাশিত১ ডিসেম্বর ১৯৮৬
প্রকাশকনূর-কাশেম পাবলিশার্স,
সঙ্গিতা পরিবেশক (যুক্তরাজ্য)
মিডিয়া ধরনমুদ্রিত গ্রন্থ (শক্তমলাট)
পৃষ্ঠাসংখ্যা১৩০
আইএসবিএন৯৮৪৭৬৩০০১১
পরবর্তী বইআমিও মানুষ 

কাহিনী সংক্ষেপ সম্পাদনা

এই উপন্যাসটি প্রেমের সাথে ইসলামি ভাবধারার সমন্বয় ঘটানো হয়েছে।[৬] উপন্যাসের শুরুতেই মূল দুই ব্যক্তিত্ব নায়ক সেলিম ও নায়িকা লাইলির দেখা হয়ে যায়। গল্পে লাইলিকে একজন ধর্মপ্রান যুবতী হিসাবে দেখানো হয়েছে, লাইলির বাবা একজন কেরানি। লাইলি নিজে ভালো ইসলামি গান জানে। লাইলিদের পরিবার গরিব, অসহায় ও দুস্থভাবে জীবনযাপন করে। অপরদিকে সেলিমের পিতা একজন ধনী পরিবারের একজন সন্তান, সেলিম নিজেও ধর্মকর্ম তেমন বেশি মানেনা। সেলিম খুব ভালো ফুটবল খেলোয়ার এবং জুডো ও কারাতে পারদর্শী। সে নিজের গাড়ি নিজেই ড্রাইভ করতে পারে। তবে লাইলি ও সেলিমের মধ্যে একটি বিষয়ে মিল রয়েছে, সেটি হলো তারা দুইজনই মেধাবী শিক্ষার্থী, তারা উভয়ই নিজ নিজ ক্লাসে প্রথম স্থানের অধিকারী হয়।

উপন্যাসে লেখক গল্পের মধ্যে নানা নীতিকথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। সামাজিক বিভিন্ন বিষয়ে ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত, সেটিও লেখক তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়েছেন। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের বিষয়ে কুরআন ও হাদিসে কি ধরনের নির্দেশনা দেওয়া আছে, সেটিও বইতে বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে।[৭]

বাস্তব উপজিব্য সম্পাদনা

লেখক মল্লিক ব্রাদার্সে চাকরি করার সময় এই উপন্যাসটি লিখেন। সেই সময়ে মল্লিক ব্রাদার্সে একটি শিক্ষিতা মেয়ে কাজের জন্য আসতো। মেয়েটি বাইরে কমদামী বোরকা পরলেও, ভিতরে দামি পোশাক পরিধান করে ছিলো। লেখক বিষয়টি বুঝতে পারলে, মেয়েটি জবাবে তাকে বলে, ইসলাম ধর্ম নারীদের নিরাপত্তা ও পর্দার বিধানের জন্য বাইরে বের হওয়ার সময় অনাকর্ষক পোশাক পরিধান করতে বলেছে। লেখক এই মেয়ের এই ধারণা শুনে অভিভূত হন, এবং এই উপন্যাসটি রচনা করেন। উপন্যাসটি লেখার পরে লেখক দৃঢ় বিশ্বাস নিয়েই বলেছিলেন, আমার এই উপন্যাস এক দিন না এক দিন সবাই গ্রহণ করবে।[৮]

জনপ্রিয়তা সম্পাদনা

লেখক এই বইটি ১৯৭৮ সালে লেখা শুরু করেন, এটিই লেখকের প্রথম বই হওয়ায় নানা প্রতিবন্ধকতায় বইটি ১৯৮৬ সালে ১ ডিসেম্বর তারিখে প্রকাশ করা হয়।[৯] বইটি প্রকাশের পর ফ্রান্সের আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর বইটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিতি লাভ করে।[১০] এরপর বই ও লেখককে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম ইয়াহু নিউজ, যুক্তরাজ্যের মিডিয়া ডেইলি মেইল, মধ্যপ্রাচ্যের আরব নিউজ, মালয়েশিয়ার দ্য স্টার ও মালয়মেইল পত্রিকা, ফ্রান্সের দ্য ডন পত্রিকা, ফ্রান্সের ফ্রান্স টুয়েন্টি ফোর ও রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনাল পত্রিকাসহ আরো নানা আন্তর্জাতিক পত্রিকা বইটি ও লেখককে নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।[১১] দেশের মধ্যেও বইটি সম্পর্কে বহু প্রতিবেদন এবং বিশাল জনপ্রিয়তা প্রকাশ পায়।[১২] বইটি গুডরিডস বুক রিভিউ ওয়েবসাইটে ২১০ রেটার ২.৬৭ রেটিংস দিয়েছে।[১৩]

সমালোচনা সম্পাদনা

বইটির তুমুল জনপ্রিয়তার পাশাপাশি অনেক সমালোচনাও রয়েছে।[১৪] সমালোচকগণ বইটিকে একটি নিম্নমানের সাহিত্য বলে উল্লেখ করেছে, তারা বলেছে এই বইয়ের বাচনভঙ্গি, তুলনামূলক উদাহরণ ও বাক্য রচনায় উচ্চ সাহিত্যের ছাপ পাওয়া যায়নি। তারা উল্লেখ করেছে বইটি নিম্নমানের অর্ধ-শিক্ষিত ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে রচনা করেছে। এছাড়াও কিছু ইসলামি ব্যক্তিত্বও বইটিতে ইসলামি রচনার মোড়কে অশ্লীলতা ও নগ্নতা ছড়ানোর অভিযোগ করেছে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "কাশেম বিন আবু বাকার : যার বইয়ের সংস্করণ ৩০, বিক্রি লাখ লাখ"DailyInqilabOnline (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৪ 
  2. "Islamic romance novels set hearts aflutter in Bangladesh"TODAY (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৪ 
  3. জাহেদ-উর-রহমান। "কাসেম বিন আবুবাকার আর 'ডিস্টিংসন: আ সোশ্যাল ক্রিটিক অব দ্য জাজমেন্ট অব টেইস্ট' এর প্রাথমিক পাঠ"bdnews24। ২০২২-১০-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৪ 
  4. "কাসেম বিন আবুবাকারের লেখা নিয়ে ইসলামপন্থীদের আপত্তি"BBC News বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৪ 
  5. "ফুটন্ত গোলাপ - কাসেম বিন আবুবাকার"www.rokomari.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৪ 
  6. "Back to the roots: Islamic romance novels set hearts aflutter in Bangladesh"Hindustan Times (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৫-০২। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৪ 
  7. "ফুটন্ত গোলাপ (ইসলামিক উপন্যাস)"গল্প বলি | Golpo Boli (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০৫-১২। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৪ 
  8. Pratidin, Bangladesh (২০১৭-০৪-২৯)। "ইসলামী উপন্যাস লিখিনি, পকেটে আমার দশ টাকা এর বেশি খরচ কীভাবে করি - কাসেম বিন আবুবাকার"বাংলাদেশ প্রতিদিন। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৪ 
  9. "আলোচনায় কাসেম বিন আবুবাকার | কালের কণ্ঠ"Kalerkantho। ২০১৭-০৪-২৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৪ 
  10. "Islamic romance novels set hearts aflutter in Bangladesh"The Express Tribune (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৪-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৪ 
  11. "Au Bangladesh, les romans d'amour islamiques font un tabac"Franceinfo (ফরাসি ভাষায়)। ২০১৭-০৪-২৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৪ 
  12. "'আমাকে বিয়ে করার জন্য এখনও অনেক তরুণী মরিয়া'"jagonews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৪ 
  13. "ফুটন্ত গোলাপ"www.goodreads.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৪ 
  14. "গঠনমূলক হওয়াটাই কাম্য"Protidiner Sangbad। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৪ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা