ফারিস উদেহ (ডিসেম্বর ১৯৮৫-৮ ই নভেম্বর,২০০০ ইংরেজি) গাজা ভূখণ্ড'র একজন ফিলিস্তিনি কিশোর যাকে আল-আকসা ইন্তিফাদার সময় ইসরাইলী ট্যাংকে পাথর ছুড়ার অপরাধে ইসরাইলের সেনাবাহিনীর সদস্যরা গুলি করে হত্যা করেছিল। 

ফারিস উদেহ
বিখ্যাত এই ছবিতে দেখা যায় ফারিস উদেহ একা একটি ইসরাইলী ট্যাঙ্কের সামনে পাথর হাতে দাড়িয়ে ট্যাঙ্কে পাথর ছুড়ছে।
জন্মডিসেম্বর , ১৯৮৫
মৃত্যু৮ ই নভেম্বর,২০০০(বয়স ১৪)
জাতীয়তাফিলিস্তিনি

একটি বিখ্যাত ছবিতে দেখা যায় উদেহ একা একটি ইসরাইলী ট্যাঙ্কের সামনে পাথর হাতে দাড়িয়ে ট্যাঙ্কে পাথর ছুড়ছে।২০০০ সালের ২৯ শে অক্টোবর এই সাড়াজাগানো ছবিটি তুলেছিল এসোসিয়েটেড প্রেস এর একজন ফটোসাংবাদিক। দশদিন পর,৮ ই নভেম্বর ফারিস আবার গাজা বর্ডারের পাশে ইসরাইলী ট্যাঙ্কে পাথর ছুড়ে।তখন ইসরাইলী সেনারা তাকে গুলি করে।ফারিস উদেহ ইসরাইলী দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের প্রেরণার উৎস।ফারিস উদেহর ট্যাঙ্কের সামনে একা পাথর হাতে দাড়িয়ে থাকা ছবিটা স্বাধীনতাকামীদের প্রেরণার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।    

জীবনী  সম্পাদনা

ফারিস উদেহ গাজা সিটির  জায়তুন এলাকায় জন্মগ্রহণ করে।মা-বাবা ও আট ভাইবোন নিয়ে এখানেই সে বসবাস করছিল।দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট অনুসারে, উদেহ ডানপিঠে ও সাহসী কিশোর ছিল।একবার সে একটি ভবনের ছাদ থেকে আরেকটি  দুতলা ভবনের ছাদে লাফ দিয়ে পাড় হয়েছিল।দুইটি ভবনের দূরত্ব ছিল প্রায় ৮ ফিট। 

২০০০ সালের সেপ্টেম্বরে যখন  আল-আকসা রক্ষায় দ্বিতীয় ইন্তিফাদার শুরু হল তখন উদেহ স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়ে ইন্তিফাদায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করল।স্কুলের হেডমাস্টার তার স্কুলে না যাওয়ায় তার বাবা-মায়ের কাছে নালিশ করল।তার বাবা তাকে অনেক শাসালেন তাকে পাথর না ছুড়ে স্কুলে যাওয়ার জন্য তাগিদ দিলেন।এমনকি ফারিস উদেহকে ঘরেও বন্দী রাখা হল কিন্তু ফারিস জানালা দিয়ে পালিয়ে গিয়ে ইন্তিফাদায় যোগ দেয়।পরবর্তীতে ফারিসের বাবা ফায়েক তার দুশ্চিন্তায় তাকে কঠিন শাস্তি দেওয়ার জন্য তার হাত পা বেঁধে ছাঁদে রেখে আসে।পড়ে ফারিসের মা চুপি চুপি ছাঁদে তাকে রাতের খাবার দিয়ে আসে। 

কিন্তু এই কঠিন শাস্তি দিয়েও ফারিসকে ফেরানো যায়নি!তার মা তার দুশ্চিন্তায় তাকে খোজার জন্য যেত।কিন্তু প্রতিবারই তাকে দেখা যেত সে আন্দোলনের প্রথম সারিতে একেবারে ইসরাইলী সেনাদের সম্মুখে দাড়িয়ে আছে।তার মা দ্য ওয়াশিংটন পোস্টকে জানান,আমি তাকে প্রতিদিনই খোজার জন্য যেতাম।মাঝে মাঝে খেতে বসলে ছেলেরা এসে খবর দিত ফারিস আবার কারণি (গাজা বর্ডার) সীমান্তে গিয়েছে এবং ইসরাইলী সেনাদের উপর পাথর ছুড়ছে।আমি খাবার রেখে দৌড়ে ওখানে যেতাম।

সে টিভি ক্যামেরা দেখলে দূরে থাকত।কারণ তার বাবা টিভিতে তাকে দেখে ফেলবে এই ভয়ে।তার মা আরও জানান,একদিন আমি তাকে সংঘর্ষের স্থান থেকে টেনে নিয়ে আসি এবং তাকে বলি ,ঠিক আছে তুমি যদি পাথর ছুড়তেই চাও তাহলে কোন কিছুর আড়াল থেকে ছোড়।তুমি কেন একেবারে সম্মুখে চলে যাও যেখানে বড়রাও যেতে সাহস করেনা?ফারিস উদেহ তার মাকে উত্তর দেয়,আমি এসব ভয় পাইনা। 

২০০০ সালের ২৯ শে অক্টোবর ট্যাঙ্কের সামনে পাথর হাতে একা দাড়িয়ে থাকা উদেহ'র সাড়াজাগানো ছবিটি তুলেছিল এসোসিয়েটেড প্রেস এর ফটোসাংবাদিক লরেন্ট রিবরস। তাকে এসোসিয়েটেড প্রেস (AP) তে কারণির বিখ্যাত পাথর নিক্ষেপকারী হিসাবে শিরোনাম করা হয়।সাদি নামে উদেহর ১৭ বছরের এক কাজিন ইসরাইলী সৈন্যদের হাতে নিহত হয়।এর পর থেকেই ফারিস উদেহ এই খুনের বদলা নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে। 

মৃত্যু  সম্পাদনা

কারণি সীমান্তে ফারিস উদেহ ফিলিস্তিনি কিশোর ও যুবকদের বিক্ষোভের একেবারে সামনে ছিল।ফিলিস্তিনিরা সশস্ত্র ইসরাইলী সৈন্যদের লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ছিল।এমন সময় ইসরাইলী সৈন্যরা গুলি ছুড়তে শুরু করে।উদেহ'র এক বন্ধু জানায়,গুলি বর্ষণের সময় উদেহ নুয়ে পাথর সংগ্রহ করছিল।গুলি এসে তার ঘাড়ে বিদ্ধ হয়।সে ইসরাইলী ট্যাঙ্কের একেবারে নিকটে ছিল তাই গুলিবিদ্ধ উদেহকে উদ্ধার করতে তাদের প্রায় ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করতে হয়।হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মৃত্যু হয় এই সাহসী ফিলিস্তিনি কিশোরের। 

প্রতিক্রিয়া সম্পাদনা

ফারিস উদেহর জানাজায় প্রায় দশ হাজার মানুষ উপস্থিত হয়েছিল।তার বাবা ইউনাইটেড প্রেস ইন্টারন্যাশনালকে বলেন,সে একজন শহীদ এবং এই শহীদি মৃত্যুই সে সবসময় কামনা করত।সে আল আকসার জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছে।তৎকালীন ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হুসাইন উদেহর পরিবারকে দশ হাজার মার্কিন ডলার প্রদান করেন।

ফারিস উদেহর  মৃত্যুর পর থেকে তার ছবিটা ব্যাপক সাড়া ফেলে।ফিলিস্তিনিদের কাছে সে এক প্রেরনায় পরিণত হয়।তার পোস্টার ,গ্রাফিতিতে ছেয়ে যায় ফিলিস্তিন।২০০১ সালে শহীদদের স্মরণে রামাল্লায় অনুষ্ঠিত এক প্রোগ্রামে ইয়াসির আরাফাত তার ভূয়সী প্রশংসা করেন। ১২ বছরের ফিলিস্তিনি বালক মুহাম্মদ আল দুরারহ এবং ফারিস উদেহকে ফিলিস্তিনের কনিষ্ঠ শহীদ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। 

References সম্পাদনা