ফরগ আজারাখশি

(ফরো আজারাকশি থেকে পুনর্নির্দেশিত)

ফরগ আজারাখশি [১] (ফার্সি: فروغ آذرخشی আরাক, ইরান ১৯০৪ – ১৯৬৩ মাশহাদ (?, ইরান) [২] ইরানের মাশহাদে মেয়েদের জন্য প্রথম প্রাথমিকমাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে, যার মধ্যে প্রাক্তনটি "ফরগ স্কুল" ("مدرسه فروغ") নামে পরিচিত।

জীবনী সম্পাদনা

তিনি রাজবংশীয় দ্বিতীয় রাজা ফতহ আলী শাহ কাজারের অসংখ্য নাতনীর মধ্যে একজন। তিনি এ রাজকীয় কাজার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার দাদা শোজা ওল-সালতানেহ ছিলেন ফতেহ আলি শাহের দ্বিতীয় সন্তান এবং তার মা মারজীহ খানুম কারাই ছিলেন খোরাসানের কারাই উপজাতির খান এর কন্যা। তার দৃঢ়সংকল্প ও লড়াইয়ের কারণে "কাহরামান [হিরো] মির্জা" ডাকনাম দেওয়া হয়েছিল । কাহরামান মির্জা সোকরা খানুম (বিবি জান) কে বিয়ে করেন এবং তাদের সন্তান ফরুগ ওল-সালতানেহ ১৮৮১ সালে আজগণ্ডে জন্মগ্রহণ করে। তার জন্মের সময়, মির্জা হাসান রোশদিহ স্কুল খোলার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়। রোশদিহ মাশহাদে দুটি স্কুল খোলার চেষ্টা করেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। তাই তিনি তেহরানে চলে যান। সেখানে তিনি রাজধানীর প্রথম স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। রোশদিহর প্রচেষ্টার পরে, সে অন্যান্য শহরে নতুন স্কুল খোলার চেষ্টা করেন যা আলেমদের দ্বারা পরিচালিত ইরানি ধর্মীয় বিদ্যালয়ের ছাঁচ ভেঙে দেয়। মেয়েরা তার এই সংস্কারগুলি থেকে উপকৃত হয়নি। তাদের শিক্ষার অধিকার স্বীকৃতি পায়নি বা তাদের এই অধিকারগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়নি। ফরগ ওল-সালতানেহ এবং তার বোন বানু উভয়েই ইরানের স্কুলে পড়ালেখা শিখেন। ১৭ বছর বয়সে, আজারাখশি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আকবর-খান আজারাখশিকে বিয়ে করেন। তিনি রাশিয়ান সাম্রাজ্যের অংশ জর্জিয়ার তবিলিসির এক যুবক ছিলেন। সে সময় তিনি রাশিয়ান কনস্যুলেটে টেলিগ্রাফ অফিসের প্রধান ছিলেন। এই দম্পতির চার ছেলে ও তিন মেয়ে। পারিবারিক জীবনে আজারাখশিকে মেয়েদের শিক্ষার উন্নতির দিকে কাজ করতে বাধা দেয়নি। তার প্রথম কন্যা আজিজ ওল-মলকের জন্ম তাকে লক্ষ্য অর্জনের জন্য অনুপ্রাণিত করে। তেহরানে নারী অধিকার কর্মীদের সাথে তার সম্পর্ক ছিল। তাদের মধ্যে ফখর আখাক পারসা অন্যতম। তিনি শিক্ষানীতি ও এর ব্যবহারিক প্রয়োগে একজন প্রখর গবেষক ছিলেন। তিনি ১৯১৭ সালে তার লক্ষ্যকে আরও গুরুত্ব সহকারে অনুসরণ করতে শুরু করেন্। তার স্বামী তাকে সমর্থন করে। তিনি হজ মোর্তেজা ও কাহরামান মির্জাসহ বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি শেকাস্তেহ নামে পরিচিত ছিলেন। তার সহায়তায় মাশহাদে প্রথম বালিকা বিদ্যালয় নির্মাণের কাজ শুরু হয়।[৩]

নারী শিক্ষার স্কুল প্রতিষ্ঠা সম্পাদনা

১৯১৭ সালে নারী শিক্ষার বিদ্যালয়টির নির্মাণ শুরু হয়। এটি সম্পন্ন হতে তিন বছরেরও বেশি সময় লাগে। আজারাখশীর মেয়ে আজিজ ওল-মলক আজারাখশি ভবন সম্পর্কে বলেন, "বিদ্যালয়ের ভবনে একটি উঁচু প্ল্যাটফর্মে পাঁচটি ঘর ছিল। জানালা ছিল কাঠের ও কাচের। ফলে পর্যাপ্ত আলো ছিল।" একটি ছোট বেলকুনি, যা পরে একটি গলিতে খোলা হয়। ছোট অফিসের করিডোরের মধ্যে আরেকটি রুম ছিল সেখানে তিনটি রুম ও উঠানের মাঝখানে একটি টয়লেট ছিল।" জানা যায়, তিনজন মেয়ে প্রথম শ্রেণীতে এবং চারজন দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হয়। যদিও স্কুলটি আলাদাভাবে স্থাপন করা হয়েছিল। তাড়াতাড়ি এটি খোলার খবর মাশহাদ শহরে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিরোধিতা শুরু হয়। স্কুলের বিরোধী আলেমরা আজারাখশি ও তার পরিবারকে স্কুল বন্ধ করার হুঁশিয়ারি দিয়ে তাকে এবং তার সহকর্মীদের হত্যার ও বিদ্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। তাদের হুমকি সত্ত্বেও, ফরগ আজারাখশি এক ঘন্টার জন্য স্কুল বন্ধ করতে অস্বীকৃতি জানায়। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী এবং তার পরিবারের সদস্যরা একসাথে স্কুলটি পাহারা দেয় এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ এটি করার সময় সশস্ত্র ছিল। এই হুমকি মোকাবেলা করে তিনি স্কুলটিকে রক্ষা করেন। আর এ অবস্থা দুই বছর ধরে চলে। মাশহাদের ধর্মীয় নেতাদের সাথে ফরগের আলোচনার ফলে সমস্যাটি শেষ পর্যন্ত সমাধান হয়। পড়াশোনা নারীদের জন্য ক্ষতিকর হবে না বলে নাগরিকদের বোঝানোর পর, মাশহাদে নারীদের জন্য স্কুল (مدرسه بانوان) আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। কয়েক মাস পরে, স্কুলটি প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেনি ছাড়াও তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম শ্রেণী খোলা হয়। পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষায় সাতজন পরীক্ষার্থী বসেছিল এবং তাদের সবাই পাস করে। চার বছর পর, ছাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, এবং স্কুলটিও ষষ্ঠ শ্রেণী শুরু করে। স্কুলের সম্প্রসারণ ফরগ আজারাখশির জন্য অনুপ্রেরণামূলক ছিল, তবে তা আরও সমস্যা তৈরি করেছিল। স্কুলটি বেসরকারিভাবে পরিচালিত হওয়ায় এটি ধীরে ধীরে বাজেট ঘাটতির সম্মুখীন হয় এবং সুযোগ-সুবিধার অভাবে ভুগতে থাকে। এর প্রতিকারের প্রচেষ্টায়, আজারাখশি খোরাসান সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের কাছে আর্থিক সহায়তার জন্য আবেদন করে। সেই সময় খোরাসানের গভর্নর আহমদ কাভাম (যিনি পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী হন) বিদ্যালয়কে ২ হাজার রিয়াল দান করেন।[৩]

সাফল্য এবং আরও স্কুল সম্পাদনা

স্কুলের সাফল্য অব্যাহত থাকে এবং ছাত্রদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯২৫ সালে, “ফরগ স্কুলে” ১৪৫ জন তরুণী পড়াশোনা করত, তাদের মধ্যে ২৭ জন বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করে। ফখর-আফাক পারসাসহ বিখ্যাত শিক্ষাবিদরা সেখানে শিক্ষকতা করতেন। তার মেয়ে ফারুকরু পারসা পরবর্তীতে শিক্ষা মন্ত্রী এবং পরে ইরানের প্রথম মহিলা মন্ত্রী হয়েছিলেন। তিনি ফরগ স্কুলে পড়াশোনা করেন। এটি খোলার এক বছর পর, আজারাখশি মাশহাদে আরেকটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার বোন রাজকুমারী বানু কাহরামানিকে এটির তত্ত্বাবধান করতে বলেন। এই স্কুলটি শেখ আব্দুল হোসাইন গলি পথের বালা স্ট্রিটে অবস্থিত। এটি আজারাখশি এবং তার বোন একজনের কাছ থেকে প্রতি মাসে ৩০০ রিয়াল ভাড়ায় ভাড়া করেন। দ্বিতীয় বিদ্যালয়টি খোলার ফলে অন্যান্য শিক্ষাবিদরাও অনুসরণ করতে উৎসাহিত হয় এবং কয়েক বছরের ব্যবধানে মাশহাদে আরজ আকদাস, ইসমাতিহ, এজাতিহ এবং গোহারীহ স্কুল খোলা হয়। ১৯৩২ সালে, খোরাসান শিক্ষা বিভাগের সাথে সমন্বয় করে ফরগ একটি উচ্চ বিদ্যালয় খোলার জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। এটিতে প্রস্তাব করা হয়েছিল যে স্কুলটি একটি রাষ্ট্রীয় স্কুল হিসাবে পরিচালিত হবে যাতে এটির জন্য বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয় না; এবং যাতে শিক্ষার্থীরা সেখানে রাষ্ট্রীয় পরীক্ষা দিতে পারে। এটাও আবেদন করা হয়েছিল যে এতে যারা স্কুল চালাচ্ছে তারা কম সমস্যার সম্মুখীন হবে। ১৯৩৪ সালের মধ্যে, স্কুলটি সম্প্রসারিত করা হয়েছিল, যেখানে প্রচুর সংখ্যক মেয়ে ছাত্রী ছিল। ১৯৪৮ সালে, মাশহাদের গণবাদ সাবজ স্ট্রিটের ফরগ প্রাথমিক বিদ্যালয়টি একটি রাষ্ট্রীয় বিদ্যালয়ে পরিণত হয়। এটির প্রবেশদ্বারে এখনও ফরগ নামটি আছে।[৩]

অন্যান্য অবদান সম্পাদনা

ফরগ আজারাখশির সম্প্রদায়ের অবদানের মধ্যে রয়েছে খোরাসানের শিশু অনাথ আশ্রমে তার সভাপতিত্ব, মা ও শিশুদের সুরক্ষা সংস্থার সাথে তার কাজ (বঙ্গাহ সমর্থন আজ মাদরান ও নুযাদান), এবং একটি চ্যারিটি কমিশনের সাথে তার কাজ করা। তিনি মাশহাদের রেড লায়ন অ্যান্ড সান সোসাইটি অব ইরানের (جمعیت شیرو خورشید سرخ ایران) সম্মানসূচক সভাপতিও ছিলেন।[৩]

আরো দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Forough (فروغ) is the Persian word for Brightness, Light, and Āzarakhsh (آذرخش) for Flash of Fire, Āzar (آذر) being the word for Fire; the suffix "i" in Āzarakhsh'i (آذرخشی) implies relationship to Āzarakhsh.
  2. The present contents of this biographical sketch is based on the article "Forough Āzarakhsh'i", in Persian, published on Wednesday 25 July 2007 (3 Mordard 1386) in Emshās'pandān .
  3. "Iranian Women You Should Know: Forough Azarakhshi"IranWire | خانه (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-১৯