ফরাসি বিপ্লবী যুদ্ধ

ফরাসী বিপ্লবী যুদ্ধ হলো ১৭৯২ থেকে ১৮০২ সাল এর মধ্যে সংঘটিত কতগুলো নির্বিচার সামরিক সংঘাত এর সমষ্টি, যার ফলস্বরূপ ফরাসি বিপ্লব হয়েছিল। এগুলো ফ্রান্সকে গ্রেট ব্রিটেন, অস্ট্রিয়া, প্রুশিয়া, রাশিয়াসহ আরও কতগুলো রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। এ সংঘাতগুলো দুটি পর্বে বিভক্ত: ১ম মোর্চার যুদ্ধ (১৭৯২-৯৭) এবং দ্বিতীয় মোর্চার যুদ্ধ (১৭৯৮-১৮০২)। প্রথমদিকে শুধুমাত্র ইউরোপের বিরুদ্ধে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরবর্তীকালে ধারাবাহিকভাবে এ যুদ্ধ বৈশ্বিক মাত্রা পায়। প্রায় এক দশক ধরে টানা সংঘর্ষ ও আক্রমণাত্মক কূটনীতির পর ফ্রান্স রাজ্যের একটি বড় অংশ জয় করে যার বিস্তার ছিল ইতালিয়ান উপদ্বীপ এবং ইউরোপের নিম্নভূমির দেশ থেকে শুরু করে উত্তর আমেরিকার লুইসিয়ানা অঞ্চল পর্যন্ত। ইউরোপের বেশিরভাগ অংশে বিপ্লবী নীতির বিস্তৃতি নিশ্চিত করে ফ্রান্স এ যুদ্ধে সাফল্য পায়।

১৭৯১ সালের শুরুর দিকে, ইউরোপের অন্যান্য রাজ্যগুলো ফরাসী বিপ্লব ও এর অভ্যূথ্থানকে চূড়ান্ত অবমাননার চোখে দেখত; এমনকি রাজা ষোড়শ লুই এর পক্ষাবলম্বী হয়েও তারা বিবেচনা করত যে এ বিপ্লব বিস্তারে তাদের হস্তক্ষেপ করে মধ্যস্থতা করা উচিত, না ফ্রান্সের বিশৃঙ্খলার সুযোগ নেয়া উচিত। একটি আক্রমণের পূর্বানুমান করে ১৭৯২ সালের বসন্তে ফ্রান্স প্রুশিয়া ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে তাদের উপর একটি জোটবদ্ধ বহিরাক্রমণ হয়, সেপ্টেম্বর মাসে যা শেষ পর্যন্ত বালমির যুদ্ধে পর্যবসিত হয়। এ যুদ্ধের জয় রাজতন্ত্র বিলোপকরণে জাতীয় সম্মেলনকে উৎসাহিত করে। নতুন ফরাসী সৈন্যদের মাধ্যমে প্রাপ্ত কতগুলো জয়ের ধারা হঠাৎই ১৭৯৩ সালের বসন্তে নিরউইনডেন এ পরাজয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। ফ্রান্স বছরের বাকি সময়ে আরেকটি পরাজয় বরণ করে এবং এ খারাপ সময়ের সুযোগ নিয়ে জ্যাকবিন শক্তি বৃদ্ধি করে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে সন্ত্রাসের রাজত্ব চাপিয়ে দেয়।

১৭৯৪ সালে নাটকীয়ভাবে ফরাসীদের অবস্থার উন্নতি হয়। ফ্লরাতে অস্ট্রিয়ানদের বিরুদ্ধে এবং ব্ল্যাক মাউন্টেইনে স্প্যানিশদের বিরুদ্ধে জয় ফরাসী বিপ্লবী যুদ্ধে নতুন ধাপ শুরুর সংকেত দেয়। ১৭৯৫ এর মধ্যে ফরসীরা অস্ট্রিয়ান নেদারল্যান্ড দখল করে নেয় এবং বেসেল শান্তি চুক্তির মাধ্যমে স্পেন ও প্রুশিয়াকে এ যুদ্ধ থেকে বের করে আনে। এযাবৎ নেপোলিয়ান বেনাপোর্ট নামেে একজন অপরিচিত সেনানায়ক ইতালিতে যু্দ্ধের প্রচারণা শুরু করেন ১৭৯৬ সালের এপ্রিলে। এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে নেপোলিয়ান এর অধীনে ফরাসি সেনারা হ্যাবসবার্গ বাহিনীকে ধ্বংস করে এবং তাদেরকে ইতালিয়ান উপদ্বীপ থেকে উৎখাত করে; জয় করে প্রায় প্রতিটি যুদ্ধ ও আটক করে প্রায় ১৫০,০০০ বন্দীকে। ফরাসী সৈন্যদের সাথে নিয়ে ভিয়েনার দিকে অগ্রসর হয়ে অস্ট্রিয়া সন্ধি দাবি করে এবং ক্যাম্পো ফরমিও চুক্তি করতে সম্মত হয়, আর এভাবেই শেষ হয় এ প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রথম সংঘাত।

ফরাসী বিপ্লবী যুদ্ধের দ্বিতীয় সংঘাত শুরু হয় ১৭৯৮ সালে নেপোলিয়ান কর্তৃক ফ্রান্সের ইজিপ্ট বহিরাক্রমণের মাধ্যমে। প্রথম সংঘাতে মধ্য প্রাচ্যের যে সকল অঞ্চল হারিয়েছিল, ফ্রান্স কর্তৃক সেগুলো পুনরুদ্ধারের চেষ্টাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়েছিল মিত্রশক্তি। ইউরোপের মিত্রশক্তির জন্য যুদ্ধ পুরোপুরি শুরু হয়ে গিয়েছিল, ম্যাগনানো, ক্যাসানো ও নোভির জয় ছিনিয়ে নিয়ে তারা পর্যায়ক্রমে ফ্রান্সকে ইতালি থেকে আলাদা করার জোড় চেষ্টা করছিল এবং সুইজারল্যান্ডকে আক্রান্ত করেছিল। যাই হোক, তাদের এ প্রচেষ্টা ১৭৯৯ সালের সেপ্টেম্বর এ ফ্রান্সের জুরিখ জয়ের পথ উন্মোচন করেছিল, যার ফলে রাশিয়া এ যুদ্ধ থেকে ছিটকে পরে। ইতিমধ্যে ফ্রান্স পর্যায়ক্রমে পিরামিড, মাউন্ট তাবরআবুকির এর যুদ্ধের মাধ্যমে ইজিপশিয়ান ও অটোম্যান সৈন্যদের বিলোপ করে দেয়।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা