প্রভিডেন্স, রোড আইল্যান্ড

প্রভিডেন্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের রাজধানী ও এর বৃহত্তম শহর। এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম শহরগুলোর একটি।[১] ম্যাসাচুসেটস বে উপনিবেশ থেকে নির্বাসিত সংস্কারপন্থী ব্যাপ্টিস্ট ধর্মতাত্ত্বিক রজার উইলিয়ামস ১৬৩৬ সালে প্রভিডেন্স প্রতিষ্ঠা করেন। এরকম একটি স্বর্গতুল্য এলাকা রজার উইলিয়ামস ও তার অনুসারীদের প্রদর্শন করার জন্য তারা সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তাঁরা এর নাম দেন -" ঈশ্বরের অপূর্ব সুরক্ষা" বা প্রভিডেন্স। এটি প্রভিডেন্স নদীর উৎসমুখে,নারানগাসেট উপসাগরের উপরে অবস্থিত।

মানচিত্রে এটির অবস্থান

প্রভিডেন্স আমেরিকার প্রাচীনতম শিল্পায়িত শহরগুলোর একটি। বস্ত্রশিল্প, স্বর্ণশিল্প ও রৌপ্যশিল্পের গুণে এটি উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। [২][৩] শহরে বর্তমানে আটটি হাসপাতাল ও সাতটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

বস্টনউস্টারের পর প্রভিডেন্স জনসংখ্যায় নিউ ইংল্যান্ডের তৃতীয় বৃহত্তম শহর।

ইতিহাস সম্পাদনা

১৬৩৬ সালে ভিন্নমতাবলম্বী রজার উইলিয়াম ও তার পার্ষদরা প্রভিডেন্স নগরী প্রতিষ্ঠা শুরু করেন। প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্ন থেকেই শহরটি ভিন্নমতাবলম্বী ও সংস্কারপন্থীদের আশ্রয়স্থল ছিল। [৪]

উইলিয়ামস ও আদিবাসীদের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও নারানগাসেট উপজাতির লোক ১৬৭৬ সালে রাজা ফিলিপের যুদ্ধের সময় প্রভিডেন্স আবাদভূমি পুড়িয়ে দেয়। পরবর্তীতে রোড আইল্যান্ড বিধানসভা অন্যান্য উপনিবেশগুলোকে যুদ্ধে উসকানি প্রদানের দায়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নিন্দা জানায়।

১৭৭২ সালে গ্যাসপি জাহাজকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর দেশপ্রেমিকদের মধ্যে প্রথম প্রভিডেন্সের বাসিন্দারাই আত্মাহুতি দিয়েছিলেন।[৪] ১৭৭৬ সালের ৪ মে রোড আইল্যান্ড ব্রিটিশ সিংহাসনের প্রতি আনুগত্য প্রকাশে আনুষ্ঠানিক অসম্মতি জ্ঞাপন করে। [৫] "মানবাধিকার সনদ" বা বিল অব রাইটস সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে- এরূপ প্রতিশ্রুতি পেয়ে এটি ১৭৯০ সালের ২৯ মে সংবিধান অনুমোদন করে। [৬]

স্বাধীনতার পরে প্রভিডেন্স জনসংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের নবম বৃহত্তম শহর ছিল। এর জনসংখ্যা ছিল ৭,৬১৪। এখানে ব্রাউন অ্যান্ড শেপ, নিকোলসন ফাইলস ও গরহ্যামসহ অনেক উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থাপিত হয়।

শহরের জনসংখ্যা ১৮৩১ সালে ১৭,০০০ ছাড়িয়ে যাওয়ার পর প্রভিডেন্সের বাসিন্দারা নগর সনদ অনুমোদন করে। ১৮৩২-১৮৭৮ সাল পর্যন্ত নগরের মার্কেট সরণির[৭] মার্কেট ভবনে নগর সরকারের কার্যক্রম পরিচালিত হত। ১৮৪৫ সালে একটি স্থায়ী নগর ভবন প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গৃহীত হলেও সেটি ১৮৭৮ সালে বাস্তবায়িত হয়।

আমেরিকান গৃহযুদ্ধের সময় দাসত্বের প্রশ্নে রোড আইল্যান্ডের বাসিন্দাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। কিন্তু এখানকার অনেক অধিবাসী ইউনিয়ন বাহিনীতে যোগদান করেন। ইউনিয়নের অর্থনীতিতে প্রভিডেন্সের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। ১৮৬৫ সালে এর জনসংখ্যা ছিল ৫৪,৫৯৫; ১৯০০ সালে এর জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১,৭৫,৫৯৭।

১৯৭৫-১৯৮২ সাল পর্যন্ত শহরের উন্নয়নকাজে ৬০৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়। এ অর্থ দিয়ে রেলসড়কের উন্নয়ন, নদীর গতিপথ সুবিধাজনক অবস্থানে পরিবর্তন, ফ্লিট স্কেটিং সরণি ও প্রভিডেন্স প্লেস মল নির্মাণ করা হয়।

দারিদ্র্য শহরের অন্যতম প্রধান সমস্যা। শহরের ২৭.৪% বাসিন্দা এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে[৮], বিশেষত বাসা-বাড়ির অত্যধিক দাম শহরে আবাসন সমস্যা তীব্র করে তুলেছে।[৯]

ভূগোল সম্পাদনা

প্রভিডেন্স শহরের আয়তন ৫৩ বর্গকিলোমিটার। এর ৪৮ বর্গকিলোমিটার স্থল ও ৫ বর্গকিলোমিটার জল। শহরের মধ্য দিয়ে প্রভিডেন্স নদী প্রবাহিত হয়। [১০]

প্রভিডেন্স শহরে অনেকগুলো পাহাড় রয়েছে। এগুলো হলো-কনস্টিটিউশন, কলেজ, ফেডারেল, টকউটেন, স্মিথ, ক্রিস্টিয়ান ও ওয়েবোসেথ।[১১]

জলবায়ু সম্পাদনা

শহরের জলবায়ু আর্দ্র মহাদেশীয় ধরনের। আটলান্টিক মহাসাগরের নিকটবর্তী হওয়ায় এর তাপমাত্রা উষ্ণ প্রকৃতির হয়। জানুয়ারি প্রভিডেন্স শহরের শীতলতম মাস। এ সময় গড় তাপমাত্রা থাকে ২৯.২ ডিগ্রি ফারেনহাইট। জুলাই এর উষ্ণতম মাস; এ সময় গড় তাপমাত্রা থাকে ৭৩.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট। মার্চ মাসে গড়ে ৪.৪৩ ইঞ্চি ও জুলাই মাসে গড়ে ৩.১৭ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয়।[১২]

জনমিতি সম্পাদনা

টেমপ্লেট:Extension needed

২০১০ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী প্রভিডেন্স শহরের জনসংখ্যা ১,৭৮,০৪২। বাসিন্দাদের ৪৯.৮% শ্বেতাঙ্গ, ১৬% কৃষ্ণাঙ্গ অথবা আফ্রিকান আমেরিকান, ৬.৪% এশীয়। বাসিন্দাদের ৩৮.১% হিস্পানিক অথবা লাতিনো। [৮]

২০০০ সালের তথ্যমতে, শহরের মাথাপিছু আয় ১৫,৫২৫ ডলার। পরিবারগুলোর গড় আয় ৩২,০৫৮ ডলার। ২৯.১% বাসিন্দা ও ২৩.৯% পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। এদের মধ্যে ৪০.১% এর বয়স ১৮ এর নিচে।

তথ্যসূূত্র সম্পাদনা

  1. "Providence: Introduction"www.city-data.com। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  2. "Providence Architecture - Locations - Name Here"www.brown.edu। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  3. Kupperman, Karen Ordahl (২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৩)। "Providence Island, 1630-1641 : the other Puritan colony"। Cambridge ; New York : Cambridge University Press। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ – Internet Archive-এর মাধ্যমে। 
  4. "Providence: "THREE AND ONE-HALF CENTURIES AT A GLANCE""web.archive.org। ১৩ জানুয়ারি ২০০৬। Archived from the original on ১৪ মার্চ ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  5. "Civics And Education - Rhode Island - Nellie M. Gorbea"www.sos.ri.gov। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  6. "Rhode Island's Ratification - The U.S. Constitution Online - USConstitution.net"www.usconstitution.net। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  7. "History of City Hall"City of Providence। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  8. "Providence (city) QuickFacts from the US Census Bureau"web.archive.org। ২৭ জানুয়ারি ২০১৩। Archived from the original on ২৭ জানুয়ারি ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  9. "MONEY Magazine: Best places to live 2006: Top 25 Home appreciation"money.cnn.com। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  10. "Providence: Geography and Climate"www.city-data.com। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  11. https://books.google.com/?id=DdU9NHiX3OcC&pg=PA6&lpg=PA6&dq=providence+college+hill+constitution+federal+tockwotten+christian+smith&q=providence%20college%20hill%20constitution%20federal%20tockwotten%20christian%20smith[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  12. "National and Local Weather Radar, Daily Forecast, Hurricane and information from The Weather Channel and weather.com"The Weather Channel। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০