প্রচ্ছন্ন এবং প্রকট নাস্তিক্যবাদ
প্রচ্ছন্ন নাস্তিক্যবাদ (ইংরেজি: Implicit atheism) এবং প্রকট নাস্তিক্যবাদ (ইংরেজি: explicit atheism) হচ্ছে নাস্তিক্যবাদের একটি প্রকার।[১] জর্জ এইচ.স্মিথ' এথিজম: দ্য কেস এগেইন্সট গডে, "প্রচ্ছন্ন নাস্তিক্যবাদ" কে সংজ্ঞায়িত করেছেন "সচেতনভাবে ঐশ্বরিক বিশ্বাসকে প্রত্যাখান না করেই ঐশ্বরিক বিষয়কে অবিশ্বাস করা এবং "প্রকট নাস্তিক্যবাদ"কে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে সচেতনভাবে ঐশ্বরিক বিশ্বাসকে প্রত্যাখ্যান করা।[১] প্রকট নাস্তিকরা ঈশ্বরের ব্যাপারে সচেতন এবং সচেতনতার সাথেই তা প্রত্যাখান করে। প্রচ্ছন্ন নাস্তিকরা যদিও ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না কিন্তু ঈশ্বর বিশ্বাস কে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করে না এবং ঈশ্বর নিয়ে অধিকতর চিন্তা করে না।
প্রচ্ছন্ন নাস্তিক্যবাদ
সম্পাদনাসচেতনভাবে ধর্মীয় বিশ্বাসকে প্রত্যাখ্যান না করে "ধর্মীয় বিশ্বাসের অনুপস্থিতিই" হলো প্রচ্ছন্ন নাস্তিক্যবাদ। "ধর্মীয় বিশ্বাসের অনুপস্থিতি" বলতে বুঝানো হয় সকল প্রকার দৈবশক্তি তে অবিশ্বাস। যে সমস্ত প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষেরা দেব দৈত্যদের ব্যাপারে কোনো ধারণা রাখেন না অথবা যে সমস্ত প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষেরা এই বিষয়ে কোন চিন্তা ভাবনা করেন নি বা শুনেননি তারা প্রত্যেকেই প্রচ্ছন্ন নাস্তিক্যবাদের শ্রেণিবিভাগ এর অন্তর্গত শিশু এবং সংশয়বাদী (যারা নিজেদেরকে এমনকি নাস্তিক নন বলে দাবি করেন) তারাও এই প্রচ্ছন্ন নাস্তিক্যবাদের অন্তর্গত। ১৭৭২ সালে ব্যারন ডি হলব্যাচ বলেছেন "সমস্ত শিশুই জন্মগত ভাবে নাস্তিক কারণ তাদের ঈশ্বর সম্পর্কে কোন ধারনাই নেই"।[২] স্মিথ নবজাতক শিশুর ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকলেও তিনি পরিষ্কার ভাবে বলেছেন, "যেসব শিশুর দৈব শক্তির ব্যাপারে কোনো ধারনাই নেই তারা নাস্তিক":
যে ব্যক্তি বিশ্বাসের ব্যাপারে অজ্ঞাত তিনি নাস্তিক। কারণ তিনিতো ঈশ্বরে বিশ্বাসী করেন না। এই শ্রেণীর মধ্যে একজন শিশুও অন্তর্গত হবে, যদি না সে ঈশ্বর ব্যাপারে কোনো ধারণা রাখে। যেহেতু সে ঈশ্বরে বিশ্বাস করছে না তাই তার এই বৈশিষ্ট্য তাকে নাস্তিক হিসেবে প্রতিপন্ন করবে।[১]
প্রকট নাস্তিক্যবাদ
সম্পাদনাস্মিথ লক্ষ করেন প্রকট নাস্তিক্যবাদের কিছু প্রণোদনা যৌক্তিক এবং কিছু যৌক্তিক নয় যেসব প্রণোদনা যৌক্তিক তা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন:
দর্শন প্রকৃতিতে নাস্তিক্যবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকরণ হল প্রকট নাস্তিক্যবাদ। এই নাস্তিক্যবাদ ঈশ্বরে বিশ্বাসকে অযৌক্তিক মনে করে এবং ঈশ্বরের বিশ্বাসকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করাকেই যৌক্তিক মনে করে। এ নাস্তিক্যবাদ মুলত ধর্মবিশ্বাসের তীব্র সমালোচনা করে। তাই প্রকট নাস্তিক্যবাদকে "সমালোচনামূলক নাস্তিক্যবাদ" হিসেবে অভিহিত করে যথার্থরূপে বর্ণনা করা যায়।[১]
স্মিথ সমালোচনামূলক প্রকট নাস্তিক্যবাদ কে তিনটি ভাগে বিভক্ত করেন:[১]টেমপ্লেট:Ssup
- "বিশ্বাসের স্বপক্ষে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রমাণ দেখানোর না পারার দরুণে; এমন একপ্রকার দৃষ্টিভঙ্গির উত্থান ঘটা যার মতে "আমি কোন প্রকার ঈশ্বর অথবা অতিপ্রাকৃত শক্তিতে বিশ্বাস করি না। প্রমাণের অপর্যাপ্ততার কারণে প্রকট নাস্তিকেরা মনে করেন অতিপ্রাকৃত শক্তিতে বিশ্বাসের কোন কারণ নেই;
- "ক্রিস্টান ধর্মের মত সুনির্দিষ্ট ঈশ্বর সম্বন্ধে ধারণা লাভের পর" যখন ব্যক্তির বিচার মতে কিছু বিষয় আপাতবিরোধী বা অযৌক্তিক; তখন এমন একপ্রকার দৃষ্টিভঙ্গির উত্থান ঘটা যার মতে, "ঈশ্বরের কোন অস্তিত্ব নেই" বা "ঈশ্বরের অস্তিত্ব থাকা অসম্ভব";
- "ঈশ্বরের ধারণা টাই হলো এক প্রকার নির্বুদ্ধিতা" এরূপ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে "ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে কি নেই সে সম্পর্কে আলোচনা থেকে বিরত থাকা"।
আর্নেস্ট নাগেল তার "ফিলোসফিক্যাল এথিজম" নামক গবেষণাপত্রে প্রকট নাস্তিক্যবাদের সংজ্ঞা দেন এবং আলোচনা করেন:
আমি নাস্তিক্যবাদ বলতে যা বুঝি তা এই গবেষণা পত্রে উল্লেখ করব। আমি বুঝতে পারছি নাস্তিক্যবাদ হলো এক প্রকার সমালোচনা এবং ধর্মের সকল প্রকার দাবি কে প্রত্যাখ্যান করা। নাস্তিক্যবাদ নিছকই ধর্মের কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয়ের উপর অবিশ্বাস জ্ঞাপন করা নয়। যে শিশু ধর্মের ব্যাপারে কোন রূপ নির্দেশিকা পায়নি অথবা ঈশ্বরের ব্যাপারে কিছু শুনে পর্যন্ত নি, সে কোনভাবে নাস্তিক হতে পারে না-কারণ সে কোন বিশ্বাস সংক্রান্ত দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেনি। একইভাবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি যদি বিশ্বাসের প্রতি সুষ্পষ্ট ঔদাসীন্যতা প্রদর্শন করে অথবা তার পিতা যা বিশ্বাস করে, সে বিশ্বাসকে তার জীবনে প্রতিফলন ছাড়াই প্রত্যাখ্যান করে তবে সে নাস্তিক নয়- কারণ সে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করে নি এবং অবিশ্বাসের পক্ষে অকপটে কোন বিবৃতি প্রদান করেনি [...] আমি নাস্তিক্যবাদ দর্শনের কিছু বিষয়কে পরীক্ষা করার প্রস্তাবনা করছিI...[৩]
নাগেল তার "ফিলোসফিক্যাল এথিজম" এ স্মিথের "প্রকট নাস্তিক্যবাদ" এর তিনটি শ্রেণিবিভাগের সাথে মোটাদাগে সহমত থাকলেও তিনি গবেষণাপত্রে "প্রকট" শব্দটি ব্যবহার করেন নি।
আরো দেখুন
সম্পাদনাআরো পড়ুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Smith, George H. (১৯৭৯)। Atheism: The Case Against God। Buffalo, New York: Prometheus। পৃষ্ঠা 13–18। আইএসবিএন 0-87975-124-X। ২০০০-০৮-৩১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ d'Holbach, P. H. T. (১৭৭২)। Good Sense। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৫-১২।
- ↑ Nagel, Ernest (১৯৫৯)। "Philosophical Concepts of Atheism"। Basic Beliefs: The Religious Philosophies of Mankind। Sheridan House।
reprinted in Critiques of God, edited by Peter A. Angeles, Prometheus Books, 1997.