তৃতীয় ভেঙ্কটা

(পেডা ভেঙ্কটা রায় থেকে পুনর্নির্দেশিত)

তৃতীয় ভেঙ্কটা (ওরফে পেডা ভেঙ্কটা রায়) আলিয়া রাম রায়ের নাতি ছিলেন।[১][২][৩][৪][৫][৬] তৃতীয় ভেঙ্কটা তেলুগু পরিবারের এবং ১৬৩২ থেকে ১৬৪২ সাল পর্যন্ত বিজয়নগর সাম্রাজ্যের রাজা ছিলেন। তাঁর শ্যালক ছিলেন দামলা ভেঙ্কটাপ্পা নায়কা এবং দামলারা চেন্নাপা নায়কাদুর। তারা দুই জনই ছিলেন দামারলা ভেঙ্কটাপ্পা নায়কার পুত্র।[৭][৮][৯][১০][১১]

ভেলোর জেলার ১৬০৫ সালের বিজয়নগর ভেংকাটিরায়ের তামিল লিপি। ভেলোর দূর্গের ভারতীয় আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে যাদুঘরে প্রদর্শিত

টিম্মা রাজা কর্তৃক অবরোধ সম্পাদনা

তার চাচা, টিম্মা রাজার আরেক ভাই ছিলেন দ্বিতীয় শ্রীরঙ্গ, নিজের বলে দাবি করে তিনি ভেলোর ফোর্ট সরকার দখল করে নেন। এরপর তৃতীয় ভেঙ্কটা তার জন্মভূমি আনাকোন্ডায় বাস করতে বাধ্য হন। গিঞ্জি, তানজোর এবং মাদুরাইয়ের নায়েকরা তৃতীয় ভেঙ্কটার প্রতি সমর্থন ঘোষণা করে। অন্যদিকে টিম্মা রাজা কারো কাছ থেকে সমর্থন পায় নি এবং তাকে একজন হামলাকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল।

তা সত্ত্বেও টিম্মা রাজা অনেক ঝামেলা সৃষ্টি করেন এবং ১৬৩৫ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত গৃহযুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন। প্রাথমিকভাবে তিনি বিজয়ী হন। যতক্ষণ না রাজা পেডা ভেঙ্কটার (তৃতীয় ভেঙ্কটা) ভাইয়ের ছেলে শ্রীরঙ্গ মাঠে নেমে আসেন এবং পুলিকাটে ডাচদের সাহায্যে টিম্মা রাজাকে পরাজিত করেন, ততক্ষণ এ জয় বজায় থাকে। যা তাকে তৃতীয় ভেঙ্কটার দাবি মেনে নিতে বাধ্য করে। টিম্মা রাজাকে তার নিয়ন্ত্রণাধীন কিছু অঞ্চলকে তার নিজের নিয়ন্ত্রণেই রাখার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু দ্বিতীয়বারের মত তিনি আবারো ঝামেলা সৃষ্টি করেন, ফলশ্রুতিতে ১৬৩৫ সালে তিনি গিঞ্জির নায়েক দ্বারা নিহত হন।

অবশেষে শান্তি পুনরুদ্ধার করা হয় এবং পেডা ভেঙ্কটা রায় বা তৃতীয় ভেঙ্কটা দায়িত্ব নিতে ভেলোরে ফিরে আসেন।

মাদ্রাসে ভূমি প্রদান সম্পাদনা

১৬৩৯ সালের ২২ আগস্ট ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ফ্রান্সিস দিবসে চন্দ্রগিরিতে পেডা ভেঙ্কটা রায়ের (ভেঙ্কটা তৃতীয়) কাছ থেকে কোরোমান্ডেল উপকূলে একটি ছোট জমি লাভ করে। অঞ্চলটি দামারলা ভেঙ্কটাদ্রি নায়াকুডু, কালাহস্তির রেচেরলা ভেলামা নায়েক এবং ভান্দাভাসির নিয়ন্ত্রণে ছিল। ভেঙ্কটাদ্রি নায়াকুডু দামেরলা চেন্নাপ্পা নায়াকুডুর ছেলে ছিলেন। এটি চেন্নাই (মাদ্রাজ) মহানগরী গঠনের প্রতিষ্ঠাতা অনুষ্ঠানে ব্যাপকভাবে বিবেচনা করা হয় এবং মাদ্রাজ দিবস হিসেবে পালিত হয়।

দক্ষিণ নায়েক কর্তৃক ঝামেলা সম্পাদনা

১৬৩৭ সালে তানজোর এবং মাদুরাইয়ের নায়েকরা থেকে ভেঙ্কটা তৃতীয়কে অবরোধ এবং ভেলোর আক্রমণ করার চেষ্টা করে কিছু জটিলতা সৃষ্টি করেন। কিন্তু তারা পরাজিত হয় এবং শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।

তৃতীয় শ্রীরঙ্গের বিদ্রোহ সম্পাদনা

রাজার অনুগত ভাইয়ের ছেলে তৃতীয় শ্রীরঙ্গ ১৬৩৮ সালে রাজার বিরুদ্ধাচারণ করে এবং বিজাপুর থেকে একটি সুকৌশলী আক্রমণ পরিচালনা করে। বিজাপুর - তৃতীয় শ্রীরাঙ্গা জোট প্রাথমিকভাবে একটি দামী চুক্তির পর রাজা তৃতীয় ভেঙ্কটা শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে ব্যাঙ্গালোর আক্রমণ করে। ১৬৪১ সালে একই জোট আরেকটি আক্রমণ শুরু করে এবং তারা ভেলোর দূর্গ থেকে মাত্র ১২ মাইল দূরে ছিল। কিন্তু তাদের শিবির পিছন থেকে দক্ষিণ নায়েকদের দ্বারা আক্রমণ করা হয়।

গোলকোন্ডা বাহিনী সম্পাদনা

পরের বছর (১৬৪১ সালে) গোলকোন্ডার কুতুব শাহী রাজবংশ বিশৃঙ্খলা পর্যবেক্ষণ করে, পূর্ব উপকূল বরাবর একটি বিশাল বাহিনী পাঠায়। মাদ্রাজের কাছে কালাহস্তির দামেরলা ভেঙ্কটাদ্রি নায়েক এবং গিঙ্গি নায়কের সমর্থনপুষ্ট তৃতীয় ভেঙ্কটার সেনাবাহিনীর কাছে গোলকোন্ডা সেনাবাহিনী একটি কঠোর প্রতিরোধের মুখোমুখি হওয়ার পর তারা দিক পরিবর্তন করে ভেলোর দুর্গের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু এরপর ভেঙ্কটা তৃতীয় সকল দিক থেকে হুমকির মুখে পতিত হয়ে চিত্তুর জঙ্গলের দিকে ফিরে যান এবং ১৬৪২ সালের অক্টোবর মাসে মারা যান।

তৃতীয় ভেঙ্কটার কোন পুত্র ছিল না এবং অবিলম্বে তার বিশ্বাসঘাতক ভ্রাতুষ্পুত্র তৃতীয় শ্রীরঙ্গ ক্ষমতা দখল করেন, যিনি বিজাপুর শিবির ত্যাগ করার পর ভেলোর দুর্গে আসেন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Books International, Ajit Mani (২০১৮)। The Nawab's Tears (ইংরেজি ভাষায়)। পৃষ্ঠা 266। আইএসবিএন 9781543704280 
  2. DS, deepak s (২০১৬)। Indian civilization (ইংরেজি ভাষায়)। পৃষ্ঠা 266। 
  3. AC, Amitava Chatterjee (২০১৪)। History: UGC-NET/SET/JRF (Paper II and III) (ইংরেজি ভাষায়)। পৃষ্ঠা 2। আইএসবিএন 9789332537040 
  4. Aryan Books Internationa, Sākkoṭṭai Krishṇaswāmi Aiyaṅgār (২০০০)। Vijayanagara: History and Legacy (ইংরেজি ভাষায়)। পৃষ্ঠা 186। আইএসবিএন 9788173051685 
  5. MH, Karnatak Historical Research Society (১৯৯২)। THE Karnatak Historical Review (ইংরেজি ভাষায়)। পৃষ্ঠা 2। 
  6. National Book Trust, India, Robert Sewell, Domingos Paes, Fernão Nunes, Vasundhara Filliozat (১৯৯৯)। Vijayanagar: As Seen by Domingos Paes and Fernao Nuniz (ইংরেজি ভাষায়)। পৃষ্ঠা 51। আইএসবিএন 9788123726588 
  7. Popular Prakashan, M. H. Rāma Sharma (১৯৭৮)। The history of the Vijayanagar Empire (ইংরেজি ভাষায়)। পৃষ্ঠা 203। 
  8. Books, Superintendent Government Printing (১৯৪২)। Proceedings of the Session, Volume 18 (ইংরেজি ভাষায়)। পৃষ্ঠা 20। 
  9. C. S. Srinivasachariar, V. Vriddhagirisan (১৯৯৫)। The Nayaks of Tanjore (ইংরেজি ভাষায়)। পৃষ্ঠা 2। আইএসবিএন 9788120609969 
  10. Tirumala Tirupati Devasthanams, T. K. T. Viraraghavacharya (১৯৯৭)। History of Tirupati: The Thiruvengadam Temple (ইংরেজি ভাষায়)। পৃষ্ঠা 599। 
  11. south India, Tamil University (১৯৮৩)। Tamil Civilization: Quarterly Research Journal of the Tamil University, Volume 1, Issues 2-4 (ইংরেজি ভাষায়)। পৃষ্ঠা 18।