পুরুষ-খৎনার নৈতিকতা
পুরুষ লিঙ্গত্বকচ্ছেদন বা খৎনা হচ্ছে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে লিঙ্গত্বক অপসারণ করা হয়। খৎনা শিশুদের উপর চাপিয়ে দেয়া এক ধরনের প্রথা, তাই খৎনা/ ত্বকচ্ছেদের নৈতিকতা নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিন ধরে চলমান। [১][২][৩]
কিছু মেডিক্যাল সংস্থা অভিভাবকদের পক্ষে কথা বলে থাকেন যে, সন্তানদের ভাল-মন্দ পিতামাতারাই ঠিক করবেন। আবার আরেক দল দাবি করেন যে, ছেলে-শিশুদের খৎনা/ ত্বকচ্ছেদ যতটা সম্ভব নিষিদ্ধ করা উচিত এবং আরও উল্লেখ করেন যে, " এটা যৌক্তিক যে একটি ছেলে শিশু যতদিন না প্রাপ্তবয়স্ক না হচ্ছে ততদিন তাঁর খৎনা না করাই উচিত, কারণ তার নিজের ভালমন্দ নিজের বিচার করার অধিকার পাওয়া উচিত।"[৪]
চিকিৎসকমণ্ডলীর অভিমত
সম্পাদনাঅস্ট্রেলিয়া
সম্পাদনাঅস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসকরা বলেন যে(২০০৪), " খৎনা-অস্ত্রোপচারটির জটিলতা এই জায়গাতেই যে, এটি একদিকে মূত্রাশয়ের সংক্রমণের এবং শিশ্নের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, আবার অন্যদিকে এটি একটি শিশুর উপরে এক ধরনের নৃশংসতা। বাবা-মায়েরা শিশুর ভালোর জন্যই খৎনা করে থাকে, কিন্তু শিশুর ভাল তাঁর মানবাধিকার লঙ্ঘন করে করা উচিত নয়। কোন ব্যক্তির মতামত ব্যতীত তাঁর দেহের মূল্যবান কোন অংশকে কেটে ফেলে দেয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন।"
কানাডা
সম্পাদনানবজাতকের ত্বকচ্ছেদ কানাডায় একটি বিতর্কিত বিষয়। এই প্রক্রিয়াটি নৈতিক ও আইনগত দিক থেকে বিবেচনার দাবি রাখে, কারণ এর প্রভাব সাড়া জীবনব্যাপী এবং এটি শিশুর উপরে করা হয় যারা কিনা মত দিতে পারে না। শিশুর একজন বিকল্প সিধান্ত গ্রহণকারীর প্রয়োজন- সাধারণত তাঁদের পিতামাতা যারা শিশুর ভালোর জন্য করনীয় কাজটিই করবেন কিন্তু শিশুদের মানবাধিকার ক্ষুণ্ণ করে নয়। যে পর্যায়ে চিকিৎসকরা খৎনা করার ব্যাপারে মতামত না দিবেন সে পর্যন্ত খৎনা না করানোই ভাল।
ডেনমার্ক
সম্পাদনাডেনিশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (Lægeforeningen) আঠারো বছরের নিচের ছেলেদের ত্বকচ্ছেদ সম্বন্ধে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে (২০১৬) [৫] তাদের বিবৃতি অনুযায়ী, ছেলেদের খৎনা করা তাদের একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, যা প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর তারা নিজেরাই নিতে পারে। ডঃ লিজে বলেছেন, "ছেলেরা প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের খৎনা না করানো, ব্যক্তি অধিকার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সবচাইতে সামঞ্জস্যপূর্ণ"[৬]
স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশগুলোতে
সম্পাদনা২০১৩ সালে শিশুদের ন্যায়পাল থেকে সুইডেন, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্কএবং আইসল্যান্ড প্রভৃতি দেশের প্রতিনিধিগণ এক সভায় একত্রিত হন এবং বলেন "ছেলেদেরকেই ঠিক করতে দিন যে তারা তারা খৎনা করতে চায় কিনা।"[৭] তারা আরও ঘোষণা করেন যে,"কোন ধরনের চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ ব্যতীত অনুমতি প্রদানে অক্ষম ব্যক্তির খৎনা করা চিকিৎসাবিজ্ঞানের নীতিমালার সাথে সাংঘর্ষিক"[৮]
যুক্তরাজ্য
সম্পাদনাব্রিটিশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন-এর মেডিক্যাল এথিকস কমিটি উল্লেখ করেনঃ "অতীতে, ছেলে-শিশুদের লিঙ্গত্বকচ্ছেদন-কে চিকিৎসা ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে উপকারী বলে বিবেচনা করা হত, অন্তত কোন ক্ষতি হয় না বলে ভাবত। সাধারণ-মানুষের ধারণা হল যে খৎনা কোন উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করেনা। চিকিৎসা-দৃষ্টিকোণ থেকে যে উপকারিতা দাবি করা হত তাঁর কোন প্রমাণ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। যাইহোক না কেন, যেহেতু বিশ্বাসজনকভাবে এটা প্রমানিত হয়নি, এবং খৎনার যে স্বাস্থ্যগত ও মানসিক ঝুঁকি আছে তা প্রায় বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য।"[৯][১০]
অন্যান্য অভিমত
সম্পাদনাখৎনার উপর JME সিম্পোজিয়াম, জুন ২০০৪
সম্পাদনাহাটসন (২০০৪) বলেছেনঃ
"অস্ত্রোপচারের মূল নীতি হল যে, কোন রোগ না থাকলে কোন অস্ত্রোপচারও করা যাবে না, কারণ অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি সমর্থনযোগ্য হবে না যদি না রোগের ঝুঁকি ঐ ঝুঁকির তুলনায় ভারসাম্যপূর্ণ না হয়। এমনকি যখন রোগীদের বিশেষ কোন রোগ থাকেও, সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচার খুব সামান্যই সমর্থনযোগ্য যদি এইসব অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি রোগের তুলনায় বেশি থাকে। বাঁধা-ধরা খৎনার সমস্যাটা হচ্ছে যে যেহেতু এখানে কোন রোগ নেই, সেজন্যে কোন ধরনের অস্ত্রোপচার-জনিত জটিলতা বরদাস্ত করা হবে না, কারণ অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি রোগের ঝুঁকির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।"[১১]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Boyle G.J., Svoboda J.S., Price C. P., Turner J.N. (২০০০)। "Circumcision of healthy boys: Criminal assault?"। Journal of Law and Medicine। 7: 301–310। CS1 maint: Multiple names: authors list (link)
- ↑ "Policy Statement On Circumcision"। Royal Australasian College of Physicians। সেপ্টেম্বর ২০০৪। ২০০৮-০৭-২০ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০২-২৮।
The Paediatrics and Child Health Division, The Royal Australasian College of Physicians (RACP) has prepared this statement on routine circumcision of infants and boys to assist parents who are considering having this procedure undertaken on their male children and for doctors who are asked to advise on or undertake it. After extensive review of the literature the RACP reaffirms that there is no medical indication for routine neonatal circumcision. Circumcision of males has been undertaken for religious and cultural reasons for many thousands of years. It remains an important ritual in some religious and cultural groups.…In recent years there has been evidence of possible health benefits from routine male circumcision. The most important conditions where some benefit may result from circumcision are urinary tract infections, HIV and later cancer of the penis.…The complication rate of neonatal circumcision is reported to be around 1% and includes tenderness, bleeding and unhappy results to the appearance of the penis. Serious complications such as bleeding, septicaemia and may occasionally cause death (1 in 550,000). The possibility that routine circumcision may contravene human rights has been raised because circumcision is performed on a minor and is without proven medical benefit. Whether these legal concerns are valid will be known only if the matter is determined in a court of law. If the operation is to be performed, the medical attendant should ensure this is done by a competent operator, using appropriate anaesthesia and in a safe child-friendly environment. In all cases where parents request a circumcision for their child the medical attendant is obliged to provide accurate information on the risks and benefits of the procedure. Up-to-date, unbiased written material summarizing the evidence should be widely available to parents. Review of the literature in relation to risks and benefits shows there is no evidence of benefit outweighing harm for circumcision as a routine procedure in the neonate.
- ↑ Medical Ethics Committee. British Medical Association. The law and ethics of male circumcision - guidance for doctors; June 2006 [archived 2007-11-12; Retrieved 2006-07-01].
- ↑ Non-Therapeutic Circumcision of Male Minors ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৩ মে ২০১২ তারিখে. Utrecht: Royal Dutch Medical Association, 2010.
- ↑ Erin McCann. Danish Doctors’ Group Wants to End Circumcision for Boys. The New York Times. 8 December 2016.
- ↑ Danish doctors come out against circumcision. (The Local) 5 December 2016.
- ↑ Nordic Association of Ombudsmen. Adopted at Oslo, 30 September 2013.
- ↑ Nordic Association of Children's Ombudsmen. Let the boys decide for themselves; 30 September 2013 [Retrieved 22 October 2013].[] Tuesday, 1 October 2013
- ↑ Mussell, R. (জুন ২০০৪)। "The development of professional guidelines on the law and ethics of male circumcision"। Journal of Medical Ethics। 30 (3): 254–258। ডিওআই:10.1136/jme.2004.008615। পিএমআইডি 15173358। পিএমসি 1733857 ।
- ↑ name="BMA2006"
- ↑ Hutson JM. Circumcision: a surgeon’s perspective. J Med Ethics. 2004;30(3):238-40. doi:10.1136/jme.2002.001313. PMID 15173354. PMC 1733864.