পলাশীপাড়া
পলাশীপাড়া, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদিয়া জেলার তেহট্ট মহকুমার অন্তর্গত একটি প্রাচীন জনপদ ও রাজ্যের অন্যতম বিধানসভা কেন্দ্র।
বিবরণ
সম্পাদনাএই জায়গাটির অবস্থান বা ভৌগোলিক উপাত্ত হল ২৩.৪৭° উত্তর ৮৮.২৭° পূর্ব। সমুদ্র সমতল থেকে এর গড় উচ্চতা প্রায় ১৫ মিটার। আয়তন ৬২৮.৪৮ হেক্টর। এটি জলঙ্গী নদীর তীরে অবস্থিত একটি প্রাচীন জনপদ। ৩৪ নং জাতীয় সড়ক ও নিকটতম রেলযোগাযোগ পলাশী রেলওয়ে স্টেশন হতে পলাশীপাড়ার দুরত্ব ১৮ কিলোমিটার। ১১ নং রাজ্য সড়কের মাধ্যমে জেলা সদর কৃষ্ণনগরের সাথে এই স্থানের যোগাযোগ আছে।[১]
ইতিহাস
সম্পাদনাপলাশীপাড়া নামটি ঐতিহাসিক পলাশীর সাথে সংযুক্ত। ধারণা করা হয় পলাশীর সমসাময়িক জনপদ পলাশীপাড়া গড়ে ওঠে পলাশীর যুদ্ধ ও মারাঠা বর্গী হাংগামার কারণে সেখানকার বাসিন্দাদের আগমনের ফলে। পলাশীস্থ অধিবাসীরা এই পাড়া বা জনপদ গড়ে তোলেন।[২] জলঙ্গী তীরবর্তী পলাশীপাড়ার নিকটে ঐতিহাসিক নিশ্চিন্তপুর গ্রাম। যেখানকার নীলকুঠি ছিল নদীয়ার বৃহৎ নীলকুঠির একটি। বর্তমানে কুঠির ধ্বংসাবশেষটিও লুপ্ত হয়ে গেছে[৩]
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সঙ্গীত , কলা, ক্রীড়া:
সম্পাদনাশিক্ষা: পলাশীপাড়ায় দুটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একাধিক সরকারী, বেসরকারী প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। পলাশীপাড়া মহাত্মা গান্ধী স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এতদাঞ্চলের প্রাচীন ও নামী শিক্ষায়তন। দশম শ্রেণী পর্যন্ত এটি বালকদের জন্য। বালিকাদের জন্য পলাশীপাড়া মহাত্মা গান্ধী স্মৃতি বালিকা বিদ্যালয় । এখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ ক'রে দেশে -বিদেশে বহু সম্মানজনক পদে বহু মানুষ অধিষ্ঠিত আছেন ও ছিলেন।
এই ব্লকে সরকারী স্কুল আছে প্রায় ৮০ টা, এছাড়াও বেসরকারী ও এস এস কে মিলে প্রায় ৭০টা। হাই স্কুলের সংখ্যা এই ব্লকে প্রায় আরও গোটা দশেক। এম এস কেও আছে বেশ কয়েকটা ।
এখানে পড়াশোনা করে ডাঃ যাঁরা হয়েছেন, তাঁরা হলেন - রূপক কান্তি বিশ্বাস, মিহির বিশ্বাস , রজত কান্তি বিশ্বাস, বিবেকানন্দ মণ্ডল এবং আরও অনেকে। অধ্যাপক হয়েছেন- ডঃ সেতু চট্টোপাধ্যায়, ডঃ শুভজিৎ বিশ্বাস, শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং আরও কয়েকজন। এছাড়াও আছেন একাধিক বিজ্ঞানী। কম্পিউটার বিজ্ঞানী গুঞ্জন বিশ্বাসের দৌলতে স্মার্টফোন । তিনি পলাশীপাড়া এম জি এস বিদ্যাপীঠের ছাত্র । আছেন অসংখ্য শিক্ষক।
মোটের উপর এখানকার শিক্ষা দানের পদ্ধতি একেবারে অনুন্নত নয়।
স্বাস্থ্য : এখানে একটি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র (প্রীতিময়ী স্বাস্থ্য কেন্দ্র) বর্তমান।
সঙ্গীত : পলাশীপাড়ার সঙ্গীত বেশ উচ্চ মানের আছে ও ছিল। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ও শহর থেকে বহু যুগান্তকারী শিল্পী এসে এখানে অনুষ্ঠান ক'রে গেছেন এবং এখনও আসেন। মূলত: মুকুলবাবু ( প্রমথ চট্টোপাধ্যায়), অনন্ত বিশ্বাস, নীতীন বন্দোপাধ্যায় (কণ্ঠ সঙ্গীত শিল্পী) , সাধন দাস ও পণ্ডিত কল্লোল চট্টোপাধ্যায়ের (তবলিয়া) ডাকেই এই সব শিল্পীদের আগমন। যে সব শিল্পীরা এখানে তাঁদের সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন, তাঁরা হলেন - পণ্ডিত শ্যামল বোস, পণ্ডিত মণিলাল নাগ, পণ্ডিত বেঞ্জামিন গোমেজ, পণ্ডিত কমল বোস, পণ্ডিত কমল মল্লিক, উস্তাদ বাহাদুর খান, উস্তাদ আলি আহমেদ হোসেন, পণ্ডিত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, পণ্ডিত শ্রীকান্ত বাখরে, উস্তাদ এ দাউদ, পণ্ডিত হরপ্রসাদ বাগচী, পণ্ডিত মানস চক্রবর্তী, উস্তাদ বিদ্যুৎ খান, শ্রী শ্যাম বোস, শ্রী শ্যাম সেন, শ্রী মুকুল চক্রবর্তী, পণ্ডিতা তনিমা ঠাকুর, পণ্ডিত সমরেশ চৌধুরী , পণ্ডিত রবিন ঘোষ ও অসংখ্য নামজাদা শিল্পী। গ্রামের সমস্ত মানুষ এই অনুষ্ঠানে সাহায্য করতেন। বিজয় সংঘ এই অনুষ্ঠানগুলোকে পরিচালনা করত।
পলাশীপাড়ার নিজস্ব শিল্পীরা ছিলেন বা আছেন - শ্রী নীতীন বন্দোপাধ্যায় (খেয়াল ), অনন্ত বিশ্বাস (বাংলা গান), মুকুল চট্টোপাধ্যায় ( খেয়াল ও বাংলা গান), মিচু কয়াল (কীর্তনাঙ্গ), লিয়াকত শেখ ( তবলা), প্রবীর ঘোষ ( গান), সুভাষ বিশ্বাস (গান), আব্দুল গণি (তবলা, এছাড়াও অনেকে। এঁরা কেউই আজ আমাদের মধ্যে নেই।
বর্তমান নাম করা শিল্পীদের মধ্যে দু'জন যাঁরা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে সঙ্গীত পরিবেশন করছেন, তাঁরা হলেন - পণ্ডিত কল্লোল চট্টোপাধ্যায় (তবলা) ও শ্রীমতী নিবেদিতা চ্যাটার্জী (খেয়াল ও ঠুমরী) । এঁদের সুপুত্র কৃতী চট্টোপাধ্যায়ও এরই মধ্যে ভারতের বিভিন্ন শহরে খেয়াল পরিবেশন ক'রে সুনাম অর্জন করেছে। এছাড়াও আছেন তিনকড়ি প্রামাণিক ( গান), শর্মিষ্ঠা বিশ্বাস (রবীন্দ্র সংগীত), সুপ্রভা বিশ্বাস (গান), নীতীশ বিশ্বাস (গান) , উত্তম প্রামাণিক ( তবলা), সিরাজ শেখ (গান), ইমাদুল শেখ (তবলা), বাবলু প্রামাণিক (তবলা), তারক কর্মকার (তবলা) ও অনেকে। নাচে রয়েছেন- পিয়ালী মিশ্র, সাথী বিশ্বাস, দেবলীনা চক্রবর্তী (অধুনা অন্যত্র ), রমা বিশ্বাস ও সুশীল। নূপুর ডান্স একাডেমী, কবিতা ডান্স একাডেমী, সুশীল ডান্স একাডেমী এই সব নামে নাচের প্রতিষ্ঠানগুলো চলে।
অঙ্কন কলা: অঙ্কন কলা এখানকার খুব একটা পুরনো বিষয় নয়। প্রথম প্রথম প্রমথনাথ একটু আধটু আঁকতেন। এক সময় শ্রী কার্তিক চন্দ্র বিশ্বাস শিক্ষক হয়ে আসেন। তাঁর হাত ধরেই অঙ্কনের সূত্রপাত বলা যায়। পরবর্তীতে মনোজ দত্ত, কল্লোলবাবু, সঞ্জয় দাশ, দামোদর দাশ বৈরাগ্য, কাজল মণ্ডল, বাপী মালাকারের হাত ধরে বেশ একটা ভালো মানে উন্নীত হয়েছে।
ক্রীড়া: খেয়াল মাঠ আছে এবং এখানকার মানুষ তার মর্যাদা রেখেছেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে খেলোয়াড়রা তাঁদের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। এঁদের মধ্যে প্রথমেই নাম করতে হয় বিজয় বিশ্বাসের যাঁর নামানুসারে বিজয় সংঘ। রয়েছেন ফুটবলার হিসাবে নফর চন্দ্র ঘোষ, প্রমথনাথ চট্টোপাধ্যায়, সজল সিনহা, জহর বিশ্বাস, দিব্যেন্দু সান্তারা, মদন বিশ্বাস, সুনু, টেকো, রাজেন চ্যাটার্জী, প্রদ্যোৎ বিশ্বাস, বাচ্চু, প্রদ্যুৎ বিশ্বাস প্রমুখ।
জনসংখ্যা
সম্পাদনা২০১১ সালের জনগননা অনুসারে এখানকার জনসংখ্যা ১০৬৯৩। যার ৫১% পুরুষ, ৪৯% মহিলা[৪][৫]।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "INDIAN VILLAGE DIRECTORY"। villageinfo.in। সংগ্রহের তারিখ 16.02.2017। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ শান্তনু বিশ্বাস (২০০৫)। ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে পলাশীপাড়ার অতীত কাহিনী। পলাশীপাড়া: অনিন্দিতা লাইব্রেরী। পৃষ্ঠা ১৮।
- ↑ "মেহেরপুরের ইতিহাস"। সংগ্রহের তারিখ ২৭.০১.২০১৭। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ "Census 2011"। সংগ্রহের তারিখ 17.01.2017। Authors list-এ
|প্রথমাংশ1=
এর|শেষাংশ1=
নেই (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ "Indian Village Dictionary"। villageinfo.in। সংগ্রহের তারিখ 25.12.16। Authors list-এ
|প্রথমাংশ1=
এর|শেষাংশ1=
নেই (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)