পরিতৃপ্তি

ক্ষুধার বিপরীত অবস্থা

পরিতৃপ্তি বা পরিতোষ (ইংরেজি: Satiety) বলতে মূলত ভোজনের শেষ পর্যায়ে অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণ সীমিত বা বন্ধ করার ইচ্ছাকে বোঝায়। অন্য ভাষায় খাবারের পরে "পেট ভরা"-র অনুভূতি এবং তার পরে নির্দিষ্ট সময় ধরে ক্ষুধার অনুপস্থিতিই হল পরিতৃপ্তি। পরিতৃপ্তি আসলে ক্ষুধা কমতে থাকে ও তারপরে বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী ভোজনের আগ পর্যন্ত এই পরিতৃপ্তি বজায় থাকে।[১] খাদ্য হজম বা শরীরে শোষিত হবার অনেক আগেই পরিতৃপ্তি আসে। ক্ষুধা অবস্থা থেকে পরিতৃপ্ত অবস্থা অর্জন করার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিকে পরিতৃপ্তিকরণ (Satiation) বলা হয়।[২]

কারণ সম্পাদনা

মানুষের মস্তিষ্ক তথা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের একটি অংশ হাইপোথ্যালামাস মানুষ কতটুকু খাবার খেতে ইচ্ছা করে, সেই ইচ্ছাকে নিয়ন্ত্রণ করে। ধারণা করা হয় খাদ্যগ্রহণ করলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং সেই সাথে হাইপোথ্যালামাসের তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পায়। এর ফলশ্রুতিতে খাওয়ার ইচ্ছা হ্রাস পেতে থাকে। অন্য আরও কয়েকটি কারণেও খাদ্যগ্রহণ সীমিত করতে হতে পারে। যেমন খাবার খেতে খেতে পাকস্থলী বা অন্ত্র পূর্ণ হয়ে টান পড়লে সেখান থেকে মস্তিষ্কে সংকেত আসে এবং এরপর আর খাবার খেতে ইচ্ছা করে না। রক্তপ্রবাহে অনেক চিনি থাকলে কিংবা দেহে অনেক মেদকলা জমলেও খাদ্যগ্রহণ সীমিত হয়। এছাড়া অনুভূতিগত বা মানসিক কারণেও পরিতৃপ্তি চলে আসতে পারে। মানসিকভাবে বিচলিত একজন ব্যক্তি হয়ত খুব স্বল্প পরিমাণ খাদ্য খেয়েই পরিতৃপ্তি অর্জন করতে পারেন।

মস্তিষ্ক ও অন্ত্রের হরমোনসমূহের ভূমিকা সম্পাদনা

মানুষের অন্ত্রে অবস্থিত বেশ কিছু হরমোন বা অন্তঃক্ষরিত পদার্থ পরিতৃপ্তি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কোলেসিস্টোকিনিন, গ্লুকাগন-সদৃশ পেপটাইড-১, অক্সিটোমডুলিন ও পেপটাইড ওয়াই ওয়াই (Peptide YY) নামক হরমোনগুলি ক্ষুধা কমিয়ে দেয়, পরিতৃপ্তি বৃদ্ধি করে এবং পাকস্থলী ও অন্ত্রে খাবারের প্রবাহ ধীর করে দেয়। গ্লুকাগন পরিতৃপ্তি বৃদ্ধি করে। স্নেহকোষগুলি থেকে নিঃসৃত লেপটিনের পরিমাণ রক্তপ্রবাহে বৃদ্ধি পেলে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসে লেপটিন গ্রাহকগুলি সক্রিয় হয় এবং খাদ্যগ্রহণের পরিমাণ কমে যায়। অন্যদিকে মস্তিষ্কের সেরাটোনিন হরমোন চিনি-জাতীয় খাবার খাওয়ার পর মাথাকে শান্ত করে।[৩]

অল্পাহার ও পরিতৃপ্তি সম্পাদনা

অল্পাহারী (dieting) ব্যক্তিরা তাদের খাদ্যগ্রহণের পরিমাণ কমানোর জন্য পরিতৃপ্তি অর্জনের আগেই খাবার খাওয়া বন্ধ করতে পারেন। শরীর বা মন হয়ত আরও খেতে চাবে, কিন্তু শরীর-মনের এই ইচ্ছাকে অবদমন করা সম্ভব।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Susan L. McElroy; David B. Allison; George A. Bray, সম্পাদকগণ (জানু ১৩, ২০০৬), Obesity and Mental Disorders, CRC Press 
  2. Beverly Tepper; Martin Yeomans, সম্পাদকগণ (২০১৭), Flavor, Satiety and Food Intake, Wiley and IFT Press 
  3. Marsha McCulloch, MS, RD, LD, "Appetite Hormones", Today's Dietitian, 17 (7): 26