পরম তাপমাত্রা (ইংরেজি: Absolute temparature) বলতে বুঝানো হয় এমন এক তাপমাত্রা, যার চাইতে ঠান্ডা কোনো কিছু হতে পারে না।[][] এই তাপমাত্রায় যেকোনো গ্যাসের আয়তন গাণিতিকভাবে শূন্য হয়। এর মান শূন্য কেলভিন, -২৭৩.১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অথবা -৪৫৯.৬৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট। তাত্ত্বিকভাবে, পরম শূন্যের নিচে কোনো তাপমাত্রা থাকা সম্ভব নয়। এটা এমন একটা তাপমাত্রা, যেখানে পরমাণু নিজের গতি হারিয়ে ফেলে একেবারেই নিশ্চল হয়ে যায়। আর তাই পরম শূন্য তাপমাত্রায় আসে চরম স্থিতি, অর্থাৎ এনট্রপি হয় সর্বনিম্ন। তবে গবেষকরা সম্প্রতি এই ধারণাকে ভেঙে দিতে সক্ষম হয়েছেন।

পরম তাপমাত্রা বনাম পদার্থের অবস্থার গ্রাফ

ব্যাখ্যা

সম্পাদনা

জার্মানির মুনশেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন পদার্থবিদ একটি পরীক্ষা চালান, যেখানে উচ্চ গতি এবং নিম্ন গতিসম্পন্ন পরমাণু ব্যবহার করে তারা পরম শূন্যের নিচের তাপমাত্রা পেতে সক্ষম হয়েছেন। একে বলা হয় ঋণাত্মক তাপমাত্রা সিস্টেম। পাহাড় এবং উপত্যকার উচ্চতার তারতম্যের ধারণা ব্যবহার করে গবেষকরা এই ঘটনাটিকে ব্যাখ্যা করেন। কল্পনা করে দেখুন, শক্তির উচ্চ অবস্থা হলো পাহাড়ের চূড়া এবং নিম্ন অবস্থা হল উপত্যকা, এর মাঝে রয়েছে পাহাড়ের ঢাল যাতে ক্রমশ উপর থেকে নিচে কমতে থাকে শক্তি। পরম শূন্য তাপমাত্রায় একদল নিশ্চল পরমাণু যাদের কোনো শক্তি নেই, তারা থাকে উপত্যকার একেবারেই নিচু স্থানটিতে। তাপমাত্রা চরম শূন্য থেকে বাড়ানো শুরু করলে কিছু পরমাণু হঠাৎ করে খুব বেশি শক্তি গ্রহণ করে আবার কতগুলো পরমাণু কম শক্তি গ্রহণ করে। এমন অবস্থায় দেখা যায়, শক্তির বিচারে পাহাড়ের চূড়া থেকে উপত্যকা পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে পরমাণুগুলো। এমন অবস্থায় ধনাত্মক তাপমাত্রা স্কেলে যদি আরও বেশি শক্তি সরবরাহ করা হয়, তবে এই সিস্টেমটিতে এর এনট্রপি আরও কমে যাবে। ধনাত্মক তাপমাত্রা স্কেলে পাহাড়ের চূড়ার চাইতে বেশি পরিমাণে পরমাণু থাকে উপত্যকায়। তাই ঐ বিজ্ঞানীরা ঋণাত্মক তাপমাত্রা স্কেল নিয়ে আসার জন্য এই অবস্থাটিকে উল্টে দেন, অর্থাৎ উচ্চ শক্তির বেশি পরিমাণ পরমাণু স্থাপন করেন পাহাড়ের ওপরে। এর ফলাফলটি হয় অসাধারণ। এই সিস্টেমে যে থার্মোমিটার তৈরি হয়, তার উচ্চ মাত্রা হলো অসীম এবং নিম্ন মাত্রা হয় ঋণাত্মক পরম শূন্য। বলাই বাহুল্য যে, পৃথিবীতে প্রাকৃতিকভাবে এই তাপমাত্রা পাওয়া সম্ভব নয়। বিজ্ঞানীরা এর জন্য পরম শূন্যের একটু ওপরের তাপমাত্রায় একটি শূন্যস্থানে রাখেন পরমাণুগুলোকে, যাদের বেশিরভাগই ছিল কম শক্তি মাত্রায়। এরপর লেজার ব্যবহার করে বেশিরভাগ পরমাণুকে উচ্চ শক্তির দশায় নিয়ে যাওয়া হয়। এভাবেই তৈরি হয় একটি ঋণাত্মক তাপমাত্রা সিস্টেম। শুধুমাত্র পরম শূন্যের ধারণা ভাঙতে সক্ষম হয়েছে বলে নয়; বরং আবিষ্কারটির রয়েছে বিভিন্ন প্রয়োগ। একে ব্যবহার করা যাবে কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার সে সব গবেষণা চালাতে, যেগুলো সাধারণ তাপমাত্রায় করা সম্ভব নয়। এছাড়া পরমাণু এবং প্রতি-পরমাণু নিয়ে গবেষণায়ও এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।

ব্যবহারিক ধারণা

সম্পাদনা

তাপমাত্রার বিভিন্ন প্রকার মাপনী (স্কেল) অনুসারে এর মান:

  • শূন্য ক্যালভিন (০ কে.)
  • -২৭৩.১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (-২৭৩.১৫° সে.)
  • -৪৫৯.৬৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট (-৪৫৯.৬৭° ফা.)

অন্য ভাবে বলা যায় কেলভিন স্কেলটি তৈরি হয়েছে পরম শূন্য তাপমাত্রাকে শূন্য কেলভিন ধরে।

ব্যবহার

সম্পাদনা

চার্লসের সূত্রে এই ধারণাটি ব্যবহৃত হয়েছে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Rankine, W. J. M., "A manual of the steam engine and other prime movers", Richard Griffin and Co., London (1859), p. 306–307.
  2. William Thomson, 1st Baron Kelvin, "Heat", Adam and Charles Black, Edinburgh (1880), p. 39.

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা