পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুওলজিক্যাল পার্ক
পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুওলজিক্যাল পার্ক (দার্জিলিং চিড়িয়াখানা হিসাবেও পরিচিত) হচ্ছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের দার্জিলিং এ ৬৭.৫৬ একর (২৭.৩ হেক্টর) স্থানজুড়ে অবস্থিত একটি চিড়িয়াখানা।[২] চিড়িয়াখানাটি ১৯৫৮ সালে চালু করা হয় এবং ৭,০০০ ফুট (২,১৩৪ মিটার) উচ্চতায় অবস্থানের কারণে ভারতের সর্বোচ্চ উচ্চতায় অবস্থিত চিড়িয়াখানা হিসাবে প্রসিদ্ধ।[১] চিড়িয়াখানাটিতে পাহাড়ী অঞ্চলের প্রাণী প্রজনন ব্যবস্থা রয়েছে এবং এখানে স্নো লেপার্ড, হিমালয় অঞ্চলের বিপন্ন প্রজাতির নেকড়ে এবং লাল পান্ডা প্রভৃতি প্রাণীর সফল কৃত্রিম প্রজনন সম্ভব হয়েছে। চিড়িয়াখানাটিতে প্রতিবছর প্রায় ৩,০০,০০০ দর্শনার্থী আসেন।[৩] পার্কটির নাম সরোজিনী নাইডুর মেয়ে পদ্মাজা নাইডু (১৯০০-১৯৭৫) এর নাম অনুসারে রাখা হয়। চিড়িয়াখানাটি রেড পান্ডা প্রোগ্রাম এর ক্ষেত্রে ভারতের সেন্ট্রাল জু অথরিটি এর কেন্দ্র হিসাবে কাজ করে এবং এটি ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব জু এন্ড অ্যাকুরিয়াম এর একজন সদস্য।[৪]
স্থাপিত | ১৯৫৮[১] |
---|---|
অবস্থান | দার্জিলিং, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত |
স্থানাঙ্ক | ২৭°০৩′৩১″ উত্তর ৮৮°১৫′১৬″ পূর্ব / ২৭.০৫৮৬০৯৯° উত্তর ৮৮.২৫৪৪০৫° পূর্ব |
আয়তন | ৬৭.৫৬ একর (২৭.৩ হেক্টর)[২] |
প্রাণীর সংখ্যা | ১৫৬ (২০০৬)[৩] |
বার্ষিক পরিদর্শক | ৩০০,০০০ (২০০৬)[৩] |
সদস্যপদ | CZA, WAZA |
ওয়েবসাইট | pnhzp |
ইতিহাস
সম্পাদনাচিড়িয়াখানাটি ১৯৫৮ সালের ১৪ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষা বিভাগের অধীনে দার্জিলিং শহরের পার্শ্ববর্তী বার্চ হিলে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল হিমালয় অঞ্চলের প্রাণীকূলের গবেষণা ও সংরক্ষণ। চিড়িয়াখানাটির প্রথম প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন দীলিপ কুমার দে, যিনি তৎকালীন সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিত্ত্ব করছিলেন যার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল হিমালয়ের প্রাণী ও উদ্ভিদকূলের উপর বিশেষিত একটি জুওলজিক্যাল পার্ক গড়ে তোলা। পার্কটিতে ১৯৬০ সালে সোভিয়েত রাশিয়ার নিকিতা খ্রুশ্চেভ কর্তৃক ভারত সরকারকে উপহার হিসাবে প্রদানকৃত একজোড়া সাইবেরিয়ান বাঘ স্থান পেয়েছিল। পরবর্তী সময়ে হিমালয় অঞ্চলের প্রাণী সংরক্ষণাগার হিসাবে চিড়িয়াখানাটি ব্যাপক খ্যাতি লাভ করেছে। বর্তমানে চিড়িয়াখানাটিতে বিপন্নপ্রায় বিভিন্ন প্রাণী, যেমন- স্নো লেপার্ড, লাল পান্ডা, গোরাল (পাহাড়ি ছাগল), সাইবেরিয়ান বাঘসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি রয়েছে। যাহোক, পাহাড়ি অঞ্চলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি হিমালয় অঞ্চলের প্রাণীদের জন্য একটি নতুন আশঙ্কা হিসাবে দেখা দিয়েছে।[৩]
১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে পার্কটি এর রক্ষণাবেক্ষন ব্যয়ভার বহনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের সাথে একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। এ সময় পার্কটিকে রেজিস্টারভূক্তও করা হয়। ১৯৯৩ সালের মে মাসে পার্কটিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বন বিভাগের অধীনে নেওয়া হয়। ১৯৭৫ সালেই পার্কটির নতুন নামকরণ করা হয়, এসময় তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পার্কটিতে ভ্রমণ করেন এবং সরোজিনী নাইডুর মেয়ে পদ্মাজা নাইডুর স্মৃতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে পার্কটির নামকরণ করেন।
প্রাণী সংরক্ষণ
সম্পাদনাচিড়িয়াখানাটিতে বিপন্ন প্রায় প্রাণী স্নো লেপার্ড এবং লাল পান্ডার প্রজনন করা হয়েছে। স্নো লেপার্ড এর প্রজনন ১৯৮৩ সালে শুরু করা হয়, এক্ষেত্রে জুরিখ, যুক্তরাষ্ট্র এবং লেহ-লাদাখ থেকে আনা স্নো লেপার্ড এর সাথে প্রজনন সম্পন্ন করা হয়। অপরদিকে লাল পান্ডা প্রজনন কর্মসূচী শুরু হয় ১৯৯৪ সালে। এসকল প্রাণী ছাড়াও চিড়িয়াখানাটিতে অন্যান্য প্রজাতির প্রাণী যেমন নীল ভেড়া, হিমালয়ের মোনাল, ধূসর ময়ূর, হিমালয়ের স্যালামাণ্ডার, তিব্বতীয় নেকড়ে, রক্ত রঙ্গীন পক্ষী ইত্যাদি প্রাণীর প্রজনন করা হয়। ২০১৯ সাল থেকে জার্মানির বার্লিন থেকে আনা ভূটানের জাতীয় প্রাণী মিশমি টাকিন সকলের দেখার জন্য আনা হয়, ভবিষ্যতে যাদের প্রজনন ঘটিয়ে বংশবৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে।[৫] চিড়িয়াখানাটি লাল পান্ডা, হিমালয়ের স্যালামাণ্ডার, তিব্বতীয় নেকড়ে এবং স্নো লেপার্ড প্রজনন ও সংরক্ষণের জন্য বিখ্যাত।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "Padmaja Naidu Himalayan Zoological Park"। darjeelingnews.net। Darjeeling News। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ আগস্ট ২০১০।
- ↑ ক খ "Darjeeling Zoo"। pnhzp.gov.in। Padmaja Naidu Himalayan Zoological Park। ২১ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ আগস্ট ২০১০।
- ↑ ক খ গ ঘ "Depleting Forests Threaten Animals in Darjeeling Zoo"। indiatraveltimes.com। India Travel Times। ডিসেম্বর ২০০২। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ৩, ২০১৭।
- ↑ "Zoos and Aquariums of the World"। waza.org।
- ↑ "দার্জিলিং চিড়িয়াখানায় দেখা মিলবে টাকিনের"। Eisamay। ২০১৯-০২-২২। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১৯।