ন্যি-মা-গ্রাগ্স-পা

ন্যি-মা-গ্রাগ্স-পা (ওয়াইলি: nyi ma grags pa) (১৬৪৭-১৭১০) তিব্বতী বৌদ্ধধর্মের র্ন্যিং-মা ধর্মসম্প্রদায়ের লুক্কায়িত প্রাচীন গ্রন্থের আবিষ্কারক বা গ্তের-স্তোন ছিলেন। তিনি কিছু সময়ের জন্য ষষ্ঠ দলাই লামা ত্শাংস-দ্ব্যাংস-র্গ্যা-ম্ত্শোর শিক্ষক ইসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন।

প্রথম জীবন সম্পাদনা

ন্যি-মা-গ্রাগ্স-পা ১৬৪৭ খ্রিষ্টাব্দে তিব্বতের নাং-ছেন (ওয়াইলি: nang chen) নামক স্থানে ফ্যাগ-স্বাল (ওয়াইলি: phyag sbal) নামক গ্রামে দ্ব্রা-দ্কার-পো (ওয়াইলি: spu bo ra zhi) পরিবারগোষ্ঠীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল ব্যাম্স-মে-দ্বোন-পো-কার্মা-র্নাম-র্গ্যাল (ওয়াইলি: byams me dbon po karma rnam rgyal) এবং মাতার নাম ছিল ব্লা-জা-ব্সোদ-নাম্স-ম্ত্শো (ওয়াইলি: bla za bsod nams mtsho)। কৈশোরে তিনি স্প্যি-বুগ-পা-কার্মা-ব্যাং-ছুব (ওয়াইলি: spyi bug pa karma byang chub) নামক এক ভিক্ষুর নিকট শিক্ষালাভ করেন। এরপর তিনি ব্দুদ-'দুল-র্দো-র্জে (ওয়াইলি: bdud 'dul rdo rje) ও পে-মা-রিগ-'দ্জিন (ওয়াইলি: pe ma rig 'dzin) নামক দুই র্ন্যিং-মা ধর্মসম্প্রদায়ের পণ্ডিতের নিকট দীক্ষালাভ করেন।[১]

তিব্বত ভ্রমণ ও শিক্ষালাভ সম্পাদনা

১৬৬৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে আগামী পাঁচ বছর ধরে পে-মা-রিগ-'দ্জিনের সঙ্গে তিনি তিব্বতের বিভিন্ন স্থানের বৌদ্ধবিহারে যাত্রা করেন। গ্তের-ব্দাগ-গ্লিং-পা (ওয়াইলি: gter bdag gling pa), ম্ঙ্গা'-ব্দাগ-ছোস-ক্যি-দ্বাং-পো (ওয়াইলি: mnga' bdag chos kyi dbang po), ত্শুল-খ্রিম্স-র্দো-র্জে (ওয়াইলি: mnga' bdag chos kyi dbang po) প্রভৃতি বৌদ্ধ পণ্ডিত পে-মা-রিগ-'দ্জিন ও তার শিষ্য ন্যি-মা-গ্রাগ্স-পাকে শিক্ষাদান করেন। তিনি পে-মা-'ফ্রিন-লাস নামক চতুর্থ র্দো-র্জে-ব্রাগ-রিগ-'দ্জিন-ছেন-পোর নিকট হতে ব্যাং-গ্তের (ওয়াইলি: byang gter) বা উত্তর দিকের সম্পদ সম্বন্ধে অধ্যয়ন করেন। ১৬৬৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পরবর্তী তিন বছর তিনি ও পে-মা-রিগ-'দ্জিন সাধনায় লিপ্ত হন। ১৬৭১ থেকে ১৬৭৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি দ্পাল-গ্যি-খাম-শাগ-র্দো-র্জে-স্ন্যিং-র্দ্জোং (ওয়াইলি: dpal gyi kham shag rdo rje snying rdzong) নামক স্থানে একাকী সাধনা করেন। এরপর তিনি পশ্চিমে যাত্রা করে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্সাম-য়াস বৌদ্ধবিহার সংস্কারের জন্য অর্থ প্রদান করেন। গার-দ্বাং-র্দো-র্জে ওয়াইলি: gar dbang rdo rje) নামক এক গ্তের-স্তোন তাকে তার আবিষ্কৃত র্দো-সেম্স-থুগ্স-ক্যি-মে-লোং (ওয়াইলি: rdor sems thugs kyi me long) এবং থুগ্স-র্জে-ছেন-পো-র্ত্সা-গ্সুম-স্ন্যিং-থিগ (ওয়াইলি: thugs rje chen po rtsa gsum snying thig) গ্রন্থদুটি সম্বন্ধে শিক্ষাদান করেন। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য শিক্ষক ছিলেন 'জাম-দ্ব্যাংস-ছোস-র্গ্যাল-র্দো-র্জে (ওয়াইলি: 'jam dbyangs chos rgyal rdo rje) নামক সিক্কিমের এক পণ্ডিত, র্গ্যাল-থাং-পা-ঙ্গাগ-দ্বাং-জিল-গ্নোন-র্দো-র্জে (ওয়াইলি: rgyal thang pa ngag dbang zil gnon rdo rje) প্রভৃতি। ১৬৭৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মাঙ্গুল অঞ্চলের ব্যাম্স-স্প্রিন (ওয়াইলি: byams sprin) নামক মন্দির থেকে থুগ্স-র্জে-ছেন-পো-মা-রিগ-মুন-সেল (ওয়াইলি: thugs rje chen po ma rig mun sel) নামক গ্রন্থ আবিষ্কার করেন।[১]

বৌদ্ধবিহার নির্মাণ সম্পাদনা

১৬৮৪ খ্রিষ্টাব্দে পে-মা-রিগ-'দ্জিন ও-র্গ্যান-ব্সাম-গ্তান-গ্লিং (ওয়াইলি: o rgyan bsam gtan gling) নামক একটি মঠ স্থাপন করলে ন্যি-মা-গ্রাগ্স-পাকে ঐ মঠের প্রধান হওয়ার অনুরোধ করলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ১৬৯০-এর দশকে তিনি গ্লাং-থাং অঞ্চলে রে-ঝেগ-ঝে-ছেন (ওয়াইলি: re zheg zhe chen) নামক পার্বত্য মঠের নির্মাণ করেন। ১৬৯৩ খ্রিষ্টাব্দে সাংস-র্গ্যাস-ব্স্তান-পা (ওয়াইলি: sangs rgyas bstan pa) নামক স্দে-দ্গে রাজ্যের রাজার অনুরোধে তিনি স্তাগ-মো-গ্সাং-ব্স্কাল-ব্জাং-ফুন-ত্শোগ্স-গ্লিং (ওয়াইলি: stag mo sgang bskal bzang phun tshogs gling) নামক ধর্মকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন।[১]

শেষ জীবন সম্পাদনা

১৬৯৭ খ্রিষ্টাব্দে ত্শাংস-দ্ব্যাংস-র্গ্যা-ম্ত্শোকে ষষ্ঠ দলাই লামা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরে রাজপ্রতিনিধি সাংস-র্গ্যাস-র্গ্যা-ম্ত্শোর অনুরোধে তিনি ষষ্ঠ দলাই লামার শিক্ষক নিযুক্ত হন। কিন্তু মোঙ্গল নেতা ল্হাজাং খান সাংস-র্গ্যাস-র্গ্যা-ম্ত্শোকে হত্যা করলে, ন্যি-মা-গ্রাগ্স-পা লাসা থেকে দক্ষিণ তিব্বতে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন। পরবর্তীকালে তিনি স্দে-দ্গে রাজ্যের ফিরে যান ও ১৭১০ খ্রিষ্টাব্দে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।[১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Cuevas, Bryan (2014-03)। "Nyima Drakpa"The Treasury of Lives: Biographies of Himalayan Religious Masters। সংগ্রহের তারিখ 2014-05-18  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)

আরো পড়ুন সম্পাদনা

  • Blondeau, Anne-Marie. 1988. "La controverse soulevée par l'inclusion de rituels bon po dans le Rin-chen gter-mdzod. Note préliminaire." In H. Uebach et J. L. Panglung, ed., Tibetan Studies. Proceedings of the 4th Seminar of the International Association for Tibetan Studies, pp. 59–76. München, Kommission für Zentralasiatische Studien, Bayerische Akademie der Wissenschaften, p. 60 n. 24.
  • Cuevas, Bryan. 2003. The Hidden History of the Tibetan Book of the Dead. Oxford: Oxford University Press, pp. 179–204.
  • Martin, Dan. 2001. Unearthing Bon Treasures: Life and Contested Legacy of a Tibetan Scripture Revealer, with a General Bibliography of Bon, pp. 137–140. Leiden: Brill.
  • Prats, Ramon. 1982. Contributo allo studio biografico dei primi gter-ston. Naples: Istituto universitario orientale, p. 73 n.14;