নেত্রকোণা

বাংলাদেশের মানব বসতি

নেত্রকোণা বাংলাদেশের ময়মনসিংহ বিভাগের একটি জেলা শহর। প্রশাসনিকভাবে শহরটি নেত্রকোণা জেলা এবং নেত্রকোণা সদর উপজেলার সদর দপ্তর। এটি নেত্রকোণা জেলার সবচেয়ে বড় এবং প্রধান শহর। শহরটির সবচেয়ে নিকটবর্তী আন্তর্জাতিক এবং আভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর যথাক্রমে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহ থেকে নেত্রকোণার দূরত্ব ৬০ কি.মি.।

Netrokona
নেত্রকোনা
Town and Municipality
Circuit House, Netrokona
Circuit House, Netrokona
লুয়া ত্রুটি মডিউল:অবস্থান_মানচিত্ এর 480 নং লাইনে: নির্দিষ্ট অবস্থান মানচিত্রের সংজ্ঞা খুঁজে পাওয়া যায়নি। "মডিউল:অবস্থান মানচিত্র/উপাত্ত/Bangladesh Mymensingh division" বা "টেমপ্লেট:অবস্থান মানচিত্র Bangladesh Mymensingh division" দুটির একটিও বিদ্যমান নয়।Location of Netrokona town in Bangladesh
স্থানাঙ্ক: ২৪°৫২′৫৫″ উত্তর ৯০°৪৩′৩৯″ পূর্ব / ২৪.৮৮১৮৭৪° উত্তর ৯০.৭২৭৪৯০° পূর্ব / 24.881874; 90.727490
Country Bangladesh
DivisionMymensingh
DistrictNetrokona
UpazilaNetrokona Sadar
সরকার
 • ধরনMunicipality
 • শাসকNetrokona Municipality
 • Paura MayorMd. Nazrul Islam Khan []
আয়তন
 • মোট২৯.৪ বর্গকিমি (১১.৪ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (2022)
 • মোট১,২২,২৭৯
 • জনঘনত্ব৪,২০০/বর্গকিমি (১১,০০০/বর্গমাইল)
সময় অঞ্চলBST (ইউটিসি+6)
National calling code+880

এক নজরে নেত্রকোণা

সম্পাদনা

নেত্রকোণা জেলা ১০টি উপজেলা

    • কলমাকান্দা
    • আটপাড়া
    • কেন্দুয়া
    • খালিয়াজুড়ি
    • দুর্গাপুর
    • নেত্রকোণা সদর
    • পূর্বধলা
    • বারহাট্টা
    • মদন
    • মোহনগঞ্জ

ইতিহাস

সম্পাদনা

ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত নেত্রকোণা জেলার ইতিহাস প্রাচীন ঐতিহ্যে টই-টুম্বুর ও ঐতিহ্যের বিচিত্র ঘটনা সম্ভারে গর্বিত। বিভিন্ন তাত্ত্বিক পর্যালোচনায় স্পষ্টতঃ প্রমাণ করে যে সাগর বা সমুদ্রগর্ভ থেকে জেগে ওঠায় এ অঞ্চলটি মানব বসবাসের যোগ্য ভূমিতে পরিণত হয়েছিল। গারো পাহাড়ের পাদদেশ লেহন করে এঁকেবেঁকে কংস, সোমেশ্বরী, গণেশ্বরী, মহেশ্বরী, গোরাউৎরা নদীসহ অন্যান্য শাখা নদী নিয়ে বর্তমান নেত্রকোণা জেলার জলধারার উদ্ভব। এ জেলার প্রত্যেক নদীই জেলার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত। ফলে সমগ্র জেলার ভূমি উত্তরাংশে উঁচু এবং ক্রমে দক্ষিণ-পূর্বাংশে ঢালু।

খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে এ অঞ্চল গুপ্ত সম্রাটগণের অধীন ছিল। ইতিহাস পাঠে জানা যায়, গুপ্তযুগে সমুদ্রগুপ্তের অধীনস্থ এ অঞ্চলসহ পশ্চিম ময়মনসিংহ কামরূপ রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। ৬২৯ খ্রিস্টাব্দে হিন্দুরাজ শশাংকের আমন্ত্রণে চৈনিক পরিব্রাজক হিউ এন সাঙ যখন কামরূপ অঞ্চলে আসেন, তখন পর্যন্ত নারায়ণ বংশীয় ব্রাহ্মণ কুমার ভাস্কর বর্মণ কর্তৃক কামরূপ রাজ্য পরিচালিত ছিল। খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষভাগে পূর্ব ময়মনসিংহের উত্তরাংশে পাহার মুল্লুকে বৈশ্যগারো ও দুর্গাগারো তাদের মনগড়া রাজত্ব পরিচালনা করতো। ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষ দিকে জনৈক মুসলিম শাসক পূর্ব ময়মনসিংহ অঞ্চল আক্রমণ করে অল্প কিছুদিনের জন্য মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। অতঃপর চতুর্দশ শতাব্দীতে জিতারা নামক জনৈক সন্ন্যাসী কর্তৃক কামরূপের তৎকালীন রাজধানী ভাটী অঞ্চল আক্রান্ত ও অধিকৃত হয়। সে সময় পর্যন্তও মুসলিম শাসক ও অধিবাসী স্থায়ীভাবে অত্রাঞ্চলে অবস্থান ও শাসন করতে পারেনি। খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগে আলাউদ্দিন হোসেন শাহের শাসনামলে (১৪৯৩-১৫১৯) সমগ্র ময়মনসিংহ অঞ্চল মুসলিম রাজত্বের অন্তর্ভূক্ত হয়।

আলাউদ্দিন হোসেন শাহ’র পুত্র নসরৎ শাহ’র শাসনামলে (১৫১৯-১৫৩২) দু'একবার বিদ্রোহ সংঘটিত হলেও বিদ্রোহীরা সফল হয়নি। সমগ্র ময়মনসিংহ অঞ্চলেই নসরৎ শাহ’র শাসন বলবৎ ছিল। নসরৎ শাহ’র পদচিহ্ন লোপ পেলেও তার অনেক স্মৃতিচিহ্ন কালের সাক্ষী হয়ে আছে। নসরৎ শাহ-র উত্তরাধিকারীরা (১৫৩৩-১৮৩৮) কিংবা তার পরবর্তী লক্ষ্মণাবতীর অন্য শাসকেরা ময়মনসিংহ অঞ্চলের উপর আধিপত্য বজায় রাখতে পারেনি। ময়মনসিংহের উত্তরাংশ কোচদের পুনরাধীন হয়ে পড়ে। বাকী অংশ দিল্লীর পাঠান সুলতান শেরশাহ-র (১৫৩৯-১৫৪৫) শাসনভুক্ত হয়েছিল। তৎপুত্র সেলিম শাহ’র শাসনের সময়টি (১৫৪৫-১৫৫৩) ছিল বিদ্রোহ ও অস্থিরতায় পূর্ণ। রাজধানী দিল্লী থেকে অনেক দূরে ও কেন্দ্রীয় রাজশক্তির দূর্বলতার সুযোগে প্রধান রাজস্ব সচিব দেওয়ান সুলায়মান খাঁ (যিনি পূর্বে কালিদাস গজদানী নামে পরিচিত ছিলেন) সম্রাটের বিরুদ্ধাচরণ করেন। এতে করে দেশী ও বিদেশী রাজ্যলিপ্সুরা এতদঞ্চল দখলের প্রয়াস পায়। এর মধ্যে ভাটী অঞ্চল (পূর্ব-উত্তরাংশ) সোলায়মান খাঁ-র দখলভুক্ত ছিল। কেন্দ্রীয় শাসকের প্রেরিত সৈন্যদের হাতে সোলায়মান খাঁ নিহত হলেও তার দু’পুত্রের মধ্যে জ্যেষ্ঠ পুত্র ঈশা খাঁ খিজিরপুর থেকে ভাটী অঞ্চলে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। ১৫৯৯ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে ঈশা খাঁ’র মৃত্যুর পর তৎপুত্র মুসা খাঁ ও আফগান সেনা খাজা উসমান খাঁ কর্তৃক অত্রাঞ্চল শাসিত ছিল। সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে (১৬০৫-১৬২৭) সমগ্র ময়মনসিংহ অঞ্চল মোঘল সাম্রাজ্যভুক্ত হয়।

মোগল সেনাদের যুদ্ধ কৌশল জনিত কারণে অনেক দূর্গ প্রতিষ্ঠা হয়। এছাড়া পূর্ববর্তী শাসকদের তৈরী ভগ্নদুর্গও তারা সংস্কার সাধন করে ব্যবহার করেছিল। ওই সকল ঐতিহাসিক যুদ্ধদূর্গের ধ্বংসাবশেষ এখনো দেখা যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রোয়াই বাড়ি দূর্গ যা পরবর্তীকালে ঈশা খাঁ’র পারিষদ মসজিদ জালাল এর আবাস বাটী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নেত্রকোণা সদরের অদূরে পুকুরিয়ার ধ্বংস প্রাপ্ত দূর্গসহ অনেক নিদর্শন মাটি চাপায় হারিয়ে গেছে। এরপরও কিছু নিদর্শন এখানকার ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। পাশাপাশি সে সময়কার শাসকদের অনেক জনহিতকর কাজের সন্ধান পাওয়া যায়। তন্মধ্যে উল্লেখ্য খোঁজার দিঘী নামে পরিচিত জলাশয়গুলো। অনেকে মনে করেন খাজাদের জায়গীর ভূমিতে জনহিতকর কাজের অন্যতম পানীয় জল ব্যবস্থায় খাঁ দিঘীগুলো খনন করেছিলেন। তাই খোয়াজ খাঁ’র দিঘী থেকে খোজার দিঘী। এর ভিন্ন মতামতও রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন খাজা উসমান খাঁ’র দিঘী থেকে খাজার দিঘী, সে থেকে খোজার দিঘী নামে পরিচিতি পায়। তৎকালীন সুসঙ্গ, নাসিরূজিয়াল, মৈমনসিংহ, সিংধা ও খালিয়াজুরী পরগণার ভূমি নিয়ে বর্তমান নেত্রকোণা জেলার অবস্থান।

ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৮০ খিস্টাব্দে নেত্রকোণা মহকুমা মঞ্জুর করে (কারণসমূহ নেত্রকোণা সদর অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে)। ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দের ৩ জানুয়ারি থেকে নেত্রকোণা মহকুমার কার্য শুরু হয়। ব্রিটিশ আমলে এ জেলায় কৃষক বিদ্রোহ, পাগলপন্থী বিদ্রোহ, টংক আন্দোলন ও তেভাগা আন্দোলন সংঘটিত হয়। ১৯৪৫ সালে জেলা সদরের নাগড়ায় তিনদিনব্যাপী সর্বভারতীয় কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

পাকিস্তান আমলে নেত্রকোণা মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করার জন্য গণদাবী ওঠে। সে দাবী পূরণের লক্ষ্যে ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে সরকার কেন্দুয়ায় জেলা সদর স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করেছিল। কিন্তু সরকারের সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জানুয়ারি নেত্রকোণা মহকুমাকে জেলা ঘোষণা করা হয়। (গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জারিকৃত প্রজ্ঞাপন নম্বর-এস-আর, ও ১৭-এল/৮৪/এম,ই,আর(জ,এ-২)/২৬৪/৮৩-৩০)। একই খ্রিস্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে নব প্রতিষ্ঠিত জেলার কার্যক্রম শুরু হয়।

নেত্রকোণার স্বাধীনচেতা জনগোষ্ঠী ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের সারাংশ শুনেই অনুধাবন করতে পেরেছিল তাদের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে যেতে হবে। তাই মুক্তিযুদ্ধের জন্য নেত্রকোণাবাসীর প্রস্তুতি গ্রহণে বেশি সময় ব্যয় হয়নি। ৭ মার্চ এর পর থেকেই নেত্রকোণার প্রত্যেক থানা শহরগুলোতে যুদ্ধে যাবার জন্য যুব সমাজ উদগ্রীব হয়ে ওঠে। প্রতিদিন থানা পর্যায়ে গ্রামগুলো থেকে হাজার হাজার মানুষ সশস্ত্র মিছিল করে আসতে থাকে। নেত্রকোণা শহরসহ থানা শহরগুলোর রাজনৈতিক প্রজ্ঞাবান মানুষগুলোও নীতি নির্ধারণের কাজ শুরু করে দেন। নেত্রকোণার রণাঙ্গনগুলোর দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় তৎকালীন নেত্রকোণা মহকুমার ৫০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাৎ বরণ করেছেন। নেত্রকোণা মহকুমার মুক্তিযোদ্ধাগণ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানের অনেক মুক্তিযোদ্ধা নেত্রকোণার বিভিন্ন রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন এবং অনেকে শহীদ হয়েছেন। তেমনি দেশের বিভিন্ন জেলার রণাঙ্গনগুলোতে নেত্রকোণা মুক্তিযোদ্ধারাও যুদ্ধ করেছেন এবং অনেকে শহীদ হয়েছেন। []

ঐতিহাসিক স্থাপত্য

সম্পাদনা

নেত্রকোণা জেলায় অনেক প্রাচীন স্থাপত্য রয়েছে। সে সকল স্থাপত্যগুলো অধিকাংশই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গেছে। কিছু স্থাপত্য এখনো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। নেত্রকোণার ঐতিহাসিক স্থাপত্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মদনপুরের হযরত শাহ্ সুলতান কমর উদ্দিন রুমি(র) মাজার, শাহ্ সুখূল আম্বিয়া মাজারের পাশে মোগল যুগের এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ, পুকুরিয়ার ধ্বংশপ্রাপ্ত দূর্গ, নাটেরকোণার ধ্বংসপ্রাপ্ত ইমারতের স্মৃতি চিহৃ, দূর্গাপুর মাসকান্দা গ্রামের সুলতানি যুগের এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ।

সুসং রাজ

সুসং রাজ রঘুনাথ সিংহ মাধবপুর ছোট পাহাড়ের উপর একটি শিব মন্দির স্থাপন করেছিলেন। সে মন্দিরটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গেছে। তবে মাধবপুরের সেই পাহাড়ে এখন পর্যন্ত অসংখ্য ভগ্ন ইট পাওয়া যায়। সুসল জমিদার বাড়ির শেষ অস্তিত্বও এখন বিলীন। ষোড়শ শতাব্দির প্রথম ভাগে সুসং রাজ জানকি নাথ মল্লিক এক বিশাল পুকুর খনন করেছিলেন। সে পুকুর স্থানীয় ভাবে কমলারাণী দীঘি নামে খ্যাত। একটি মাত্র পাড় ছাড়া কমলারাণীর দীঘির আর কোন চিহৃ নেই। কালে ভরাট হয়ে গেছে। সুসং রাজ পরিবারের প্রথম পুরুষ সুমেস্বর পাঠক একটি দশভূজা মন্দির স্থাপন করেছিলেন। সে মন্দিরটি কোথায় নির্মিত হয়েছিল তা এখন আর কেউ বলতে পারেন না।

পূর্বধলার জমিদার বাড়ি ও পাগল পন্থি

পূর্বধলার জমিদার বাড়ির অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়েছে স্বাধীনতার পূর্বেই। ঘাগড়া জমিদার বাড়ির প্রাচীন ইমারত গুলো ও বাঘবেড় এবং নারায়ন ডহর জমিদার বাড়ির ইমারতগুলো প্রায় বিলুপ্ত। সোনাইকান্দা, লেটিরকান্দা ও একই থানার লালচাপুর গ্রামের মোঘল যুগের মসজিদ গুলো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইচুলিয়া গ্রামের সুলতানি যুগের মসজিদ ও আগল সরকারের আক্রার মন্দিরটি ৭১ পরবর্তি কালে বিলুপ্ত হয়েছে। লেটিরকান্দা গ্রামে পাগল পন্থিদের পারিবারিক কবর রয়েছে। সে কবরস্থানে পাগলপন্থি করণ শাহ্, টিপু শাহ্, ছপাতি শাহ্ সহ তাঁদের বংশের অন্যান্যদের কবর রয়েছে। সে কবরস্থানের প্রাচীরটি বৃটিশ শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল, যা এখনো দাঁড়িছে আছে । কিন্তু পাগল পন্থিদের সমাধিগুলো আধুনিক টাইলসে বেঁধে দেয়ায় ঐতিহাসিক মূল্য হারিয়ে ফেলেছে।

সাত পুকুর ও হাসানকুলী খাঁর সমাধি

আটপাড়া থানার রামেশ্বরপুর ও সালকি গ্রামে সাতটি পুকুর রয়েছে। বিশাল এ পুকুরগুলো অতি প্রাচীনকালে খনন করা বলে মনে হয়। বড় পুকুরের পশ্চিম পাশে হাসানকুলী খাঁর সমাধি। সে সমাধিটি কালো শিলা দিয়ে বাঁধানো। হাসানকুলী খাঁ ছিলেন একজন পুঁথি লেখক। তার পুঁখির সুত্র ধরে বিচার করলে এ পুকুর ও সমাধিটি মোঘলযুগের বলে ধরে নিতে হয়। এ ছাড়া শুনই গ্রামের প্রাচীন দূর্গ এখন বিলুপ্ত।

রোয়াইল বাড়ির প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন

কেন্দুয়া থানার ঐতিহাসিক স্থাপত্যের সংখ্যা যেমন বেশি তেমনি প্রাচীন। রোয়াইল বাড়ির প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন অন্যতম। ১৯৯২ খৃস্টাব্দে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক রোয়াইল বাড়িতে খনন কাজ পরিচালিত হলে বেরিয়ে আসে মসজিদ, দূর্গ, রাস্তা, পরিখা, কবরস্থান ও অনেক অট্টালিকা। তারমধ্যে বারোদুয়ারী ঢিবির দক্ষিণাংশে সমতল ভূমি। খননে আরো পাওয়া গেছে কারুকার্যময় অট্টালিকার চিহ্ন ও দূর্গে সৈনিকদের কুচকাওয়াজের প্রসস্ত মাঠ। ঐ প্রাচীন চিহ্নবহ স্থানটি ৮ হেক্টর। এটি আয়তকার ছিল বলে ধারণা করা হয়। দক্ষিণে বেতাই নদীর তীর ঘেঁষে ভাঙ্গন অথবা নোঙ্গরঘাটের জন্য দেয়াল গাঁথুনি ছিল। মূল দুর্গের দৈঘ্য ৪৫০ মিটার ও প্রস্থ ১৫৭ মিটার। ইটের পরিমাণ ৩৭১৮৬ সেন্টিমিটার। সন্মুখভাগে জোড়াদিঘি। এর একটির দৈঘ্য ২৭০ মিটার ও প্রস্থ ৭০ মিটার, অপরটির দৈঘ্য ১৫০ মিটার ও প্রস্থ ৯০ মিটার। খননে বেরিয়ে আসা মসজিদটির কারুকাজ ও ইটের আকৃতি সুলতানী আমলের। সংস্কার ও কারুকাজ সংযোজন হয়েছিল মুঘল যুগে।

একই থানার জাফরপুর গ্রামে একটি মসজিদের ইটের নকশা ও কারুকাজে রোয়াইল বাড়ির মসজিদের ইট ও কারুকাজের সঙ্গে মিল রয়েছে। মনে হয় এ দুটি মসজিদ একই সময়ে প্রাতিষ্ঠা লাভ করেছিল। একই এলাকা পরিখা বেষ্টিত ছিল বলে প্রমাণ মিলে। নোয়াপাড়া গ্রামের জমিদার ও আশুলিয়া গ্রামের অনেক প্রাচীন স্থাপত্য আজ বিলুপ্ত।

নিদর্শন

মদন থানার ফতেপুর ও জাহাঙ্গীরপুরের দেওয়ানদের বাতিঘরের অস্তিত্ব এখন আর নেই। চাঁনগাও গ্রামে ১টি প্রচীন মসজিদ রয়েছে। ধারণা করা হয় মসজিদটি মোঘল যুগে নির্মিত হয়েছিল। জেলার মোঘল যুগে নির্মিত অন্যান্য মসজিদের আকৃতি ও প্রকৃতির সঙ্গে এর সাদৃশ্য রয়েছে। এছাড়া মদন সদরে শাহ্ সুফি সাধক সৈয়দ আহম্মদ বসরির মাজার শরীফ। বারহাট্রা থানার পিরিজপুর গ্রামে প্রাচীন জোড়া পুকুর। এর মধ্যে বড় পুকুরটি ৬ শতাংশ ও ছোট পুকুরটি ২ শতাংশ ভূমি নিয়ে গঠিত। প্রাচীন পাট্রা ইটের গাথুনীতে পুকুরের ঘাট বাঁধানো ছিল। তার ধ্বংসপ্রাপ্তের চিহ্ন এখনো পরিলক্ষিত হয়। বাড়ির নাম কোর্টবাড়ি, বাজার এখন না থাকলেও স্থানের নাম দেওয়ানের বাজার। সে এলাকায় ভগ্ন ইটের ছড়াছড়ি রয়েছে। বাড়ি নির্মাণের পরিবেশ এখনো চমৎকার। আমঘোয়াইল গ্রামের দক্ষিণের সাউথপুরে একটি ভাঙ্গা ইমারত রয়েছে। যা ৩৬০ বর্গফুট। এ ইমারতটি অতি প্রাচীন তা সহজেই অনুমিত হয়। সিংধা গ্রামে একটি প্রাচীন দেব মন্দির ছিল। মন্দিরটি এখন ধ্বংসপ্রাপ্ত। বারহাট্টা বাজারের মন্দিরটিও অতি প্রাচীন তা সহজেই অনুমিত হয়।

মোহনগঞ্জের সেখের বাড়ির মসজিদটি সুলতানি আমলে নির্মিত। মাঘান গ্রামে মোঘল যুগের আরো একটি মসজিদ রয়েছে। দৌলতপুর গ্রমে ৮৭৬ বঙ্গাব্দে নির্মিত পাশাপাশি দুটি মন্দির আছে। সেথায় ধ্বংসপ্রাপ্ত ইমারতগুলো এখন তার শেষ চিহ্নও ধরে রাখতে পারেনি।

খালিয়াজুরী থানার প্রাচীন স্থাপত্য বলতে শুধুমাত্র একটি পর্যবেক্ষণ ইমারতের ভাঙ্গা অংশ রয়েছে। সেই ইমারতটি প্রাচীন বলে অনুমান করা হয়।

দর্শনীয় স্থান

সম্পাদনা

কমলা রাণী দিঘী

স্থান দূর্গাপুর, নেত্রকোণা

  • কীভাবে যাওয়া যায়

ঢাকা থেকে বাস যোগে ময়মনসিংহ, ময়মনসিংহ ভায়া শ্যামগঞ্জ দুর্গাপুর অথবা ঢাকা থেকে বাসযোগে নেত্রকোণা, নেত্রকোণা থেকে দুর্গাপুর। উপজেলা পরিষদ থেকে রিক্সা বা মোটর সাইকেলে বিরিশিরি ব্রীজ পার হয়ে বামপাশে গুজরীকোণার পাকা রাস্তা দিয়ে ১.৫ কিলোমিটার পরে কমলা রাণী দিঘীর পাড়।

  • বিস্তারিত

উপজেলা সদর হতে ৩ কিলোমিটার দক্ষিণে বিরিশিরি ইউনিয়ন পরিষদের পাশেই কমলা রাণী দিঘী। এই কমলা রাণী দিঘী সাগর দিঘী নামে পরিচিত। দিঘীটি পুরোপুরি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেলেও এর দক্ষিণ পশ্চিম পাড় এখনও কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে।

কিংবদন্তি আছে যে, ১৫ শতকের শেষ দিকে সুসং দুর্গাপুরের রাজা জানকি নাথ বিয়ে করেন কমলা দেবী নামে এক সুন্দরী মহিলাকে। রাণী কমলা দেবী যেমনি রূপেগুণে সুন্দরী ছিলেন তেমনি ছিলেন পরম ধার্মিক।

রাজা জানকি নাথও ছিলেন পরম প্রজা হিতৈষী। রাণীর গর্ভে একপুত্র সন্তান জন্ম নিল। পুত্রের নাম রাখা হল রঘুনাথ। রাজা জানকি নাথ প্রজাদের মঙ্গলার্থে পানির অভাব নিবারণের জন্য একটি পুকুর খনন করেন কিন্তু পুকুরে আর পানি উঠল না। রাজা মহা চিন্তায় পড়লেন। একরাতে রাজা স্বপ্নে আদিষ্ট হন রাণী কমলা দেবী যদি পুকুরের মাঝখানে গিয়ে পূজো দেন তাহলে পুকুরে পানি উঠবে। রাণী কমলা দেবী প্রজাদের মঙ্গলার্থে পুকুরের মাঝখানে গিয়ে পূজোয় বসলেন। সহসা চারিদিক দিয়ে পানি উঠতে শুরু করল। পানি রাণী কমলা দেবীকে স্পর্শ করল। রাণী কমলা দেবী উঠে দাঁড়ালেন এবং কড়জোড়ে দেবতার উদ্দেশ্যে প্রণাম জানিয়ে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। পানি বেড়েই চলল, পানি বাড়তে বাড়তে হাঁটু পেরিয়ে কোমরে পৌঁছালো। রাজা জানকি নাথ অস্থির হয়ে গেলেন। রাণীকে পাড়ে ভিড়ার জন্য চিৎকার দিতে শুরু করলেন। ততক্ষণে পানি রাণীকে ডুবিয়ে ফেলল। রাণী আর পানি থেকে উঠে এলেননা। পানিতে একাকার হয়ে মিশে গেলেন। রাজা জানকি নাথ এ দৃশ্য দেখে বিচলিত হলেন। তিনি অস্থির হয়ে ঈশ্বরকে ডাকতে শুরু করলেন। কয়েক মাসের শিশু সন্তান রঘু যে মাতৃদুগ্ধ ছাড়া আর কিছুই খায় না। রাজা জানকি নাথ এই চিন্তায় কিংকর্তব্য বিমূঢ় হলেন। অবশেষে তিনি এক রাত্রে স্বপ্নে আদিষ্ট হলেন। শিশু সন্তান রঘুকে পুকুরের পাড়ে রেখে আসলে রাণী কমলা দেবী তাকে বুকের দুধ খাওয়াবেন তবে শর্ত যে, রাজা কখনো রাণীকে স্পর্শ করতে পারবেন না। রাজা জানকি নাথ গভীর রাতে শিশু সন্তানটিকে পুকুরের পাড়ে রেখে আসতেন আর রাণী কমলা দেবী তার সন্তানকে বুকের দুধ খাইয়ে আবার পানিতে চলে যেতেন। এই দৃশ্য রাজাকে খুব যন্ত্রনা দিত। একদিন মধ্যরাতে যখন রাণী কমলা দেবী তার সন্তানকে দুধ খাওয়াচ্ছিলেন তখন রাজা জানকি নাথ কমলা দেবীকে ধরার জন এগিয়ে গেলেন। রাণী রাজাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলেন। পরে রাজা রাণীর চুলে ধরলেন কিন্তু রাণীকে আর রাখতে পারলেন না। রাণী পানিতে নেমে পানির সাথে একাকার হয়ে গেলেন। পর থেকে আর শিশু সন্তানটিকে দুধ খাওয়াতে এলেননা। রাজা স্বপ্নে আদিষ্ট হন যদি আর ৭ দিন বুকের দুধ খাওয়ানো যেত তাহলে শিশু সন্তান রঘু দিক বিজয়ী, প্রতাপি বীর হিসাবে গণ্য হত। যতদুর জানা যায় রাজা রঘুর আমলেই সুসং দুর্গাপুর শক্তিশালী পরগনা হিসাবে গণ্য হয়েছিল। এই রাজা রঘুই জঙ্গল বাড়ী দূর্গ আক্রমণ করেন এবং বিক্রমপুরের জমিদার চাঁদ রায়, কেদার রায়কে পরাজিত করেন। পরে তিনি মুঘল সম্রাট এর নিকট থেকে মহারাজা উপাধি লাভ করেন।

টংক শহীদ স্মৃতি সৌধ

  • স্থান

দূর্গাপুর, নেত্রকোণা

  • কীভাবে যাওয়া যায়

উপজেলা পরিষদ থেকে ৫০০ মিটার দক্ষিণে এমকেসিএম সরকারী হাই স্কুল সংলগ্ন টংক স্মৃতি সৌধ।

  • বিস্তারিত

বৃটিশ ও জমিদারী প্রথা উচ্ছেদের দাবীতে বৃহত্তর উত্তর ময়মনসিংহের কৃষকগণের সংগ্রাম কৃষক বিদ্রোহ ও টংক আন্দোলন নামে পরিচিত। আন্দোলনের প্রাণ শক্তিই ছিল আদিবাসী কৃষকগণ। তাঁদের এ মহান আত্মত্যাগের স্বীকৃতি ও শ্রদ্ধা স্বরুপ সুসং দুর্গাপুরে এম.কে.সি.এম সরকারী স্কুলের পশ্চিম পার্শ্বে ৩২ শতাংশ জমির উপর টংক শহীদ স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করা হয়। এখানে প্রতি বছর ৩১শে ডিসেম্বর মহান নেতা বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কমরেড মনি সিং এর মৃত্যু বার্ষিকী পালন করা হয়। মনিমেলা নামে এ অনুষ্ঠান ৭ দিন যাবৎ চলে। বৃটিশ ও জমিদারী প্রথা উচ্ছেদের দাবীতে বৃহত্তর উত্তর ময়মনসিংহের কৃষকগণ ১৯৩৬ হতে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত সংগ্রাম আন্দোলন চালিয়ে যায়। এটি কৃষক বিদ্রোহ ও টংক আন্দোলন নামে পরিচিত। আন্দোলনের প্রাণ শক্তিই ছিল আদিবাসী কৃষকগণ, বিশেষ করে হাজং আদিবাসীগণ (ললিত সরকার হাজং, বিপিন গুন, পরেশ হাজং, রেবতী অস্বমনি ও রাশমনির নেতৃত্বে এ আন্দোলন সংগঠিত হয়)। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও মেহনতি মানুষের নেতা কমরেড মনি সিংহ ১৯৪০ সালে দশাল গ্রামের বাঙ্গালী কৃষকদেরকে নিয়ে এ আন্দোলন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। সূদীর্ঘ ১৩ বছর আন্দোলন সংগ্রামে এ অঞ্চলের বহু কৃষক প্রাণ হারান।

বিজয়পুর, দূর্গাপুর

  • স্থান

দূর্গাপুর, নেত্রকোণা

  • কীভাবে যাওয়া যায়

ঢাকা থেকে বাস যোগে ময়মনসিংহ, ময়মনসিংহ ভায়া শ্যামগঞ্জ দুর্গাপুর অথবা ঢাকা থেকে বাসযোগে নেত্রকোণা, নেত্রকোণা থেকে দুর্গাপুর। এরপর সোমেশ্বরী নদী পেরিয়ে রিক্সা বা মোটর বাইক যোগে অর্ধ কাঁচা-পাকা রাস্তা দিয়ে বিজয়পুরের সাদামাটি অঞ্চলে যাওয়া যায়।


  • বিস্তারিত


  • সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ

দূর্গাপুর উপজেলা পরিষদ থেকে ৭ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে কুল্লাগড়া ইউনিয়নের আড়াপাড়া ও মাইজপাড়া মৌজায় বিজয়পুরের সাদা মাটি অবস্থিত। বাংলাদেশের মধ্যে প্রকৃতির সম্পদ হিসেবে সাদা মাটির অন্যতম বৃহৎ খনিজ অঞ্চল এটি। ছোট বড় টিলা-পাহাড় ও সমতল ভূমি জুড়ে প্রায় ১৫.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৬০০ মিটার প্রস্থ এই খনিজ অঞ্চল। খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী ১৯৫৭ সালে এই অঞ্চলে সাদামাটির পরিমাণ ধরা হয় ২৪ লক্ষ ৭০ হাজার মেট্রিক টন, যা বাংলাদেশের ৩ শত বৎসরের চাহিদা পূরণ করতে পারে।

  • পটভূমি ও ইতিহাসঃ

চিনা মাটির প্রাচীন ইতিহাস না জানা গেলেও ১৯৫৭ সাল থেকে এ মাটি উত্তোলনের কাজ শুরু হয়। ১৯৬০ সালে সর্বপ্রথম কোহিনুর এলুমিনিয়াম ওয়ার্কস নামে একটি প্রতিষ্ঠান এই সাদামাটি উত্তোলনের কাজ শুরু করে। পরে ১৯৭৩ সালে বিসিআইসি সাদামাটি উত্তোলনে যোগ দেয়। বর্তমানে ৯টি কোম্পানী এই সাদামাটি উত্তোলনের কাজ করছে। প্রায় ৩০০ জন শ্রমিক এই মাটি উত্তোলনের সাথে জড়িত। বিভিন্ন রংয়ের মাটি, পানি ও প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য মনকে বিমোহিত করে। সাদা, গোলাপী, হলুদ, বেগুনি, খয়েরী, নিলাভ বিভিন্ন রংয়ের মাটির পাহাড় চোখকে জুড়িয়ে দেয়। সাদামাটি এলাকা জুড়ে আদিবাসীদের বসতি।

বিরিশিরি কালচারাল একাডেমী

  • স্থান

দূর্গাপুর, নেত্রকোণা

  • কীভাবে যাওয়া যায়

ঢাকা থেকে বাস যোগে ময়মনসিংহ, ময়মনসিংহ ভায়া শ্যামগঞ্জ দূর্গাপুর অথবা ঢাকা থেকে বাসযোগে নেত্রকোণা, নেত্রকোণা থেকে দূর্গাপুর।

  • বিস্তারিত

দূর্গাপুর উপজেলার বিরিশিরি কালচারাল একাডেমীতে একটি সুপরিসর দ্বিতল ভবন ও একটি রেষ্ট হাউস রয়েছে। এ একাডেমীতে উপজাতীয় সংস্কৃতি চর্চা করা হয়। এখানে প্রতি বছর উপজাতীয়দের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ অন্যান্য অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। প্রতিটি অনুষ্ঠানে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর জনসমাগম হয়।

সতর্কীকরণঃ বিশেষ কোন সতর্কীকরণের বিষয় নেই।

ভ্রমণের সময়সূচীঃসপ্তাহের রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার অফিস সময়ে যাদুঘর খোলা থাকে। এছাড়া এলাকার সৌন্দর্য সারাদিন উপভোগ করা যাবে।

রাণীমাতা রাশমণি স্মৃতি সৌধ

  • স্থান

দূর্গাপুর, নেত্রকোণা

  • কীভাবে যাওয়া যায়

ঢাকা থেকে বাস যোগে ময়মনসিংহ, ময়মনসিংহ ভায়া শ্যামগঞ্জ দুর্গাপুর অথবা ঢাকা থেকে বাসযোগে নেত্রকোণা, নেত্রকোণা থেকে দুর্গাপুর। সোমেশ্বরী নদী পাড় হয়ে রিক্সা বা হোন্ডায় অর্ধ কাচা-পাকা রাস্তা দিয়ে বহেড়াতলী রাশিমণি স্মৃতি সৌধে যাওয়া যায়।

  • বিস্তারিত

উপজেলা পরিষদ হতে ছয় কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বহেড়াতলী গ্রামে চৌ-রাস্তা মোড়ে রাশমণি স্মৃতি সৌধ অবস্থিত। রাশমনি হাজং ছিলেন টংক ও কৃষক আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী।

রাশমনি হাজং ছিলেন টংক ও কৃষক আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী। তিনি ১৮৯৮ সালে ধোবাউড়া উপজেলায় বেদীকুড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি জমিদার ও ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে কৃষক ও মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছিলেন। ১৯৪৬ সালে ৩১শে জানুয়ারী কুমদিনী হাজংকে বাচাতে গিয়ে মুখোমুখি সংগ্রামে ব্রিটিশ বাহিনীর গুলিতে বহেরাতলী গ্রামে তার সহযোদ্ধা সুরেন্দ্র হাজংসহ শহীদ হন। রাশমনি ও সুরেন্দ্র হাজং টংক আন্দোলনের প্রথম শহীদ। রাশমনির দায়ের আঘাতে দুজন ব্রিটিশ পুলিশ নিহত হয়। এই বীর যোদ্ধার স্মরণে হাজংলতা রাশমনি মেমোরিয়াল ট্রাস্ট একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেছেন। প্রতিবছর ৩১শে জানুয়ারী রাশমনি দিবস ও টংক শহীদ দিবস পালন করা হয়।


রানীখং মিশন

  • স্থান

দূর্গাপুর, নেত্রকোণা

  • কীভাবে যাওয়া যায়

ঢাকা থেকে বাস যোগে ময়মনসিংহ, ময়মনসিংহ ভায়া শ্যামগঞ্জ দুর্গাপুর অথবা ঢাকা থেকে বাসযোগে নেত্রকোণা, নেত্রকোণা থেকে দুর্গাপুর। এরপর সোমেশ্বরী নদী পেরিয়ে রিক্সা বা মোটর বাইক যোগে অর্ধ কাঁচা-পাকা রাস্তা দিয়ে রাণীখং মিশনে যাওয়া যায়।

  • বিস্তারিত

দূর্গাপুর উপজেলা পরিষদ থেকে ৬ কিলোমিটার উত্তরে কাল্লাগড়া ইউনিয়নের উত্তর পূর্ব সীমান্তে সোমেশ্বরী নদীর কোল ঘেঁষেই পুরো মিশনটি একটি উচু পাহাড়ে অবস্থিত। ১৯১০ সালে এ রাণীখং মিশনটি স্থাপিত হয়। ইহা খ্রীষ্টিয় ক্যাথলিক ধর্মপল্লী। ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের একটি উপাসনালয়। সুরম্য একটি গীর্জাসহ একটি দাতব্য চিকিৎসালয়, দুইটি স্কুল ও একটি পোষ্ট অফিস আছে। ইহা ছাড়া মিশনের ভিতরে শান্তিনিকেতন নামে একটি বিশ্রামাগার আছে, যেখান থেকে প্রকৃতিকে আরো নিবিড়ভাবে উপভোগ করা যায়।

রাণীখং নামকরণ নিয়ে কিংবদন্তি আছে যে, এ অঞ্চলে ‘‘খং-রাণী’’ নামে এক রাক্ষস বাস করত। গারো আদিবাসীরা এই রাক্ষসটিকে হত্যা করে এ অঞ্চলে শান্তি এনেছিল। যার ফলে এই অঞ্চলের নাম হয়েছিল রাণীখং। রানীখং নামক স্থানে প্রতিষ্ঠিত বলে এ মিশনটির নাম রানীখং মিশন।

প্রকৃতির অপরুপ লীলাভূমি রাণীখং মিশন। পাহাড় চুড়ায় গড়ে উঠা মিশনটির পূর্ব পার্শ্ব দিয়ে বয়ে গেছে খরস্রোতা পাহাড়ী নদী ‘সোমেশ্বরী’। মিশনটির সম্মুখে বিস্তীর্ণ সাদা সিলিকা বালি। ছোট বড় সারি সারি টিলা-পাহাড় মিশে গেছে দিগন্ত জুড়ে। পা বাড়ালেই ভারতের মেঘালয় রাজ্য। এখান থেকেই উপভোগ করা যায় পাহাড় আর মেঘের লুকোচুরি খেলা আর নীলিমায় ভেসে যাওয়া বনবিহার।


রোয়াইলবাড়ি দূর্গ

  • স্থান

রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়ন, কেন্দুয়া, নেত্রকোণা

  • কীভাবে যাওয়া যায়

ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোণা থেকে বাস বা যে কোন ধরনের ছোটোখাটো যানবাহন নিয়ে পৌঁছা যায় রোয়াইলবাড়িতে। ঢাকা থেকে বাসযোগে নেত্রকোণা, নেত্রকোণা থেকে কেন্দুয়া। কেন্দুয়া পৌরসভা থেকে বাস/রিকসা/সিএনজি যোগে সাহিতপুর বাজার যেতে হবে। সেখান থেকে অটো/ইঞ্জিনচালিত যন্ত্র দিয়ে সরাসরি রোয়াইলবাড়ী বাজারে যাওয়া যায়। বাজার থেকে পায়ে হেঁটে বা রিক্সায় যাওয়া যায়।


  • বিস্তারিত


রোয়াইলবাড়ি দূর্গ: বাংলার প্রাচীন শাসনকর্তাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যমন্ডিত এক ঐতিহাসিক স্থান। একসময় কত ঘটনাই না ঘটেছে এ দূর্গে। বাংলার সুলতান হুসেন শাহ, নছরত শাহ এবং ঈশা খাঁ’র অশ্বারোহী বাহিনীর ঠক ঠক শব্দে কীভাবেই না কেঁপেছে এই রোয়াইলবাড়ির মাটি; সে ইতিহাস আজ পুরোপুরি জানা না গেলেও তাঁদের অহংকার ও শৌর্য-বীর্যের সাক্ষী হয়ে আজো ঠাঁয় দাড়িয়ে আছে প্রাচীন দূর্গটি।

জানা গেছে ‘রোয়াইল’ একটি আরবী শব্দ। এর বাংলা অর্থ ‘ক্ষুদ্র অশ্বারোহী বাহিনী’। সুতরাং ‘রোয়াইলবাড়ি’ এর অর্থ দাঁড়ায় ‘অশ্বারোহী বাহিনীর বাড়ি’। কালক্রমে রোয়াইলবাড়ি এখন একটি পুরো গ্রাম এবং সমগ্র ইউনিয়নের নাম। নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে গ্রামটির অবস্থান। রোয়াইলবাড়ি দূর্গের পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে বেতাই নদী। ঈশা খাঁর স্মৃতি বিজড়িত আরেক ঐতিহাসিক স্থান কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উজেলার জঙ্গলবাড়ি দূর্গও রোয়াইলবাড়ি থেকে খুব বেশী দূরে নয়।

ঐতিহাসিকদের মতে, সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহ্ ১৪৯৮ খ্রিষ্টাব্দে কামরূপের রাজা নিলাম্বরের বিরুদ্ধে এক প্রচন্ড যুদ্ধ পরিচালনা করে কামরূপ রাজ্য দখল করেন। এরপর কিছুদিন তাঁর পুত্র নছরত শাহ্ কামরূপে শাসন করেন। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই প্রতিপক্ষের আক্রমণের মুখে তিনি বিতাড়িত হন এবং এক পর্যায়ে কামরূপ থেকে পালিয়ে আসতে হয়। কথিত আছে, নছরত শাহ্ কামরূপ থেকে পালিয়ে পূর্ব ময়মনসিংহের (বর্তমান নেত্রকোণার) রোয়াইলবাড়িতে এসে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তিনি এর নামকরণ করেন ‘নছরত ও জিয়াল’ (কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে- ‘নছরত আজিয়াল’)। পরবর্তীতে তাঁর শাসন অন্তর্গত সমগ্র প্রদেশটিই (বৃহত্তর ময়মনসিংহ) ‘নছরতশাহী পরগণা’ নামে পরিচিত হয় এবং আকবর শাহ্‌র সময় পর্যন্তও পরগণাটি এ নামেই পরিচিত ছিল। এরপর বাঙ্গালীর গৌরব, মসনদে আলী ঈশা খাঁ এ অঞ্চলে বিশাল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে কিশোরগঞ্জের জঙ্গলবাড়ি ও নেত্রকোণার রোয়াইলবাড়ি দূর্গের নিয়ন্ত্রণ নিজ হাতে নেন। জানা গেছে রোয়াইলবাড়ি থেকে জঙ্গলবাড়ি পর্যন্ত যাতায়াতের একটি রাস্তাও ছিল, যা ধ্বংস হতে হতে কিছুদিন আগে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এদিকে ঈশা খাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পারিষদ দেওয়ান জালাল এখানকার আধিপত্য গ্রহণ করেন। তিনি রোয়াইলবাড়ি দূর্গের ব্যাপক সংস্কার এবং দূর্গের বহিরাঙ্গনে একটি সুরম্য মসজিদ নির্মাণ করেন। এটি ‘মসজিদ- এ জালাল’ বা ‘জালাল মসজিদ’ নামে পরিচিত ছিল।

এসব কিংবদন্তি ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী রোয়াইলবাড়ি দূর্গের বিস্তীর্ণ অংশ দু’যুগ আগেও মাটির নীচে চাপা পড়া অবস্থায় ছিল। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে রোয়াইলবাড়ি দূর্গে খনন কাজ পরিচালনা করে। দীর্ঘ সময়ের এ খনন কাজে মাটির নীচ থেকে বেরিয়ে আসে প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ। উদ্ধার করা হয়- ইটের দেয়ালবেষ্টিত দূর্গ, মূল প্রবেশদ্বার (সিংহদ্বার), বহুকক্ষবিশিষ্ট একাধিক ইমারতের চিহ্ন, সানবাঁধানো ঘাটসহ দুটি বড় পুকুর, দুটি পরিখা, বুরুজ ঢিবি বা উঁচু ইমারত (টাওয়ার), বারদুয়ারী ঢিবি, কবরস্থান, মসজিদ, মিহরাব, চওড়া প্রাচীর, লতাপাতা ও ফুলে-ফলে আঁকা রঙিন প্রলেপযুক্ত কারুকাজ, পোড়ামাটির অলংকৃত ইট, টালি, জ্যামিতিক মোটিফ, টেরাকোটা, বর্শা, প্রস্তরখন্ড এবং লোহা ও চিনামাটির তৈরি নানা ধরনের জিনিসপত্র।

প্রায় ৪৬ একর ভূমির উপর রোয়াইলবাড়ির প্রাচীন সুরক্ষিত এলাকাটি অবস্থিত। এর মোট আয়তন প্রায় ৫৩৩ X ৪২৬ মিটার। সমস্ত দূর্গ এলাকাটি তিনটি ভাগে বিভক্ত। মূল দূর্গের পূর্বদিকের ইটের দেয়ালে রয়েছে সিংহদ্বার (লায়ন গেইট)। পুকুরদুটি রয়েছে দূর্গের সামনের অংশের পূর্বদিকে। সিংহদরজা বরাবর একটি উঁচু রাস্তা দ্বারা পুকুর দুটি বিচ্ছিন্ন করা ছিল। দক্ষিণ দিকের মাটির দেয়ালের দু’পাশে ছিল দুটি পরিখা। আভ্যন্তরীণ পরিখাটি একটি নালার মাধ্যমে পুকুর দু’টির সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। দক্ষিণ দিকের পরিখাটি বেতাই নদী থেকে আসা নৌযানসমূহ নোঙ্গর করার জন্য ব্যবহৃত হতো বলে অনুমান করা হয়। ধারণা করা হয়, দূর্গের উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে বড় বড় পাথর খন্ড দিয়ে নির্মিত আরও দুটি প্রবেশ পথ ছিল। দূর্গের আভ্যন্তরীণ সুরক্ষিত এলাকার উত্তরাংশে রয়েছে একটি বুরুজ ঢিবি (উঁচু ইমারত বা টাওয়ার), একটি প্রবেশপথ ও কবরস্থান। বুরুজ ঢিবিটির পরিমাপ প্রায় ২৫ মিটার X ২১ মিটার X ৭ মিটার। এছাড়াও বুরুজ ঢিবির পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে পাঁচ কক্ষ বিশিষ্ট একটি ভবনের ধ্বংসাবশেষ, সমান্তরাল তিনটি দেয়াল, প্রবেশদ্বার, ওয়াচ টাওয়ার (পর্যবেক্ষণ চিলেকোঠা) ও চওড়া সিঁড়ি। খননের সময় পর্যন্ত দূর্গের অভ্যন্তরের উত্তর ও পূর্ব দিকের প্রবেশ দেয়াল দুটি সাদা, নীল, সবুজ ও বাদামী রংয়ের চকচকে টালি দিয়ে বিভিন্ন ফুল-ফল, লতাপাতা এবং দড়ির নকশায় সজ্জিত ছিল। এখন এগুলো শেওলা ও ঝোপ ঝাড়ে ঢেকে গেছে। বারোদুয়ারী ঢিবিটির অবস্থান সিংহ দরজার দক্ষিণ প্রান্তে। এলাকায় এটি ‘বারো দরজার ইমারত’ নামে পরিচিত। খননের পর এখানে কারুকার্যমন্ডিত যে মসজিদের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়; ধারণা করা হয়- এটিই দেওয়ান জালাল নির্মিত ‘মসজিদ-এ জালাল’ বা ‘জালাল মসজিদ’। জানা যায়, এ মসজিদের ১৫টি গম্বুজ ছিল। এছাড়া মসজিদের কাঠামোতে ছিল ১২টি দরজা, ৫টি খুতবা পাঠের মেহরাব (মিম্বর) এবং মার্বেল পাথরের তৈরি বিশাল কয়েকটি খিলান। মসজিদের দেয়ালগুলো প্রায় সাত মিটার চওড়া। এতে ঝিনুকচুন ও সুড়কির প্রলেপযুক্ত ইট ব্যবহার করা হয়। চমৎকার সূর্যমূখী ফুলের নকশায় পরিপূর্ণ ছিল এটির দেয়ালগুলো। দূর্গের দক্ষিণ দিকের খোলা ময়দানটিকে সৈন্যবাহিনীল প্যারেড গ্রাউন্ড হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। এছাড়াও দূর্গের বিভিন্ন অংশে বেশ কয়েকটি ভবন বা ইমারতের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। কথিত আছে- এ দুর্গের একটি কবরে শুয়ে আছেন নেয়ামত বিবি। প্রত্নতত্ত্ব গবেষকদের মতে, রোয়াইলবাড়ি দুর্গের সমস্ত স্থাপনা সুলতানী আমলের স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত হলেও এর কারুকাজ ছিল অনেক বেশী নান্দনিক ও শিল্পসমৃদ্ধ।

দুর্গর ধ্বংসাবশেষের পাশের একটি স্থানে এলাকাবাসীর উদ্যোগে একটি মাদ্রাসা স্থাপন করা হয়েছে। দুর্গ এলাকার বেতাই নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে রোয়াইলবাড়ি বাজার। ঐতিহাসিক স্থানটির প্রাচীন নিদর্শনগুলোর সাথে পরিচিত হতে প্রায় প্রতিদিনই কিছু না কিছু লোক আসেন এখানে। এএলাকাটি দেশের একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটে পরিণত হতে পারে।

ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোণা থেকে বাস বা যে কোন ধরনের ছোটোখাটো যানবাহন নিয়ে পৌঁছা যায় রোয়াইলবাড়িতে। সেখানে গেলে অশ্বারোহী বাহিনীর সেই ঠক ঠক শব্দ আর কোনোদিনই শোনা যাবেনা যদিও, কিন্তু আপনার অন্তর্দৃষ্টি ঠিকই কিছুক্ষণের জন্য আপনাকে সুলতান- ঈশা খাঁ আমলের সেই হারানো দিনগুলোতে নিয়ে যাবে। এর সুদৃশ্য ইমারত, অপরূপ কারুকার্যখচিত পুরাকীর্তির ধ্বংসাবশেষ হাতছানি দিয়ে ডাকবে সবাইকে।

কলমাকান্দা, দূর্গাপুর

  • কীভাবে যাওয়া যায়

ঢাকা থেকে বাসযোগে নেত্রকোণা, নেত্রকোণা থেকে কলমাকান্দা।


  • বিস্তারিত

ঐতিহাসিক ০৭ (সাত) শহীদের মাজার কলমাকান্দা উপজেলাধীন লেঙ্গুরা ইউনিয়নের ফুলবাড়ি নামক স্থানে গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। এখানে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক বাহিনীর সাথে বন্ধুক যুদ্ধে ০৭ (সাত) জন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার সমাধি ও স্মৃতিসৌধ অবস্থিত।

১৯৭১ সনের ২৬ জুলাই মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নাজিরপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস সংলগ্ন তিন রাস্তার মিলনস্থলে পাক বাহিনীর সাথে বন্ধুক যুদ্ধে ০৭ (সাত) জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধাগণের মরদেহ বর্ণিত ফুলবাড়িয়া নামক স্থানে সমাহিত করা হয়। উক্ত সমাধি সাত শহীদের মাজার নামে পরিচিত।

হযরত শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রুমী (রাঃ)-এঁর মাজার শরীফ

  • নেত্রকোণা জেলা শহর হতে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে নেত্রকোণা-কেন্দুয়া সড়কের পাশে হযরত শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রুমী (রাঃ)-এঁর মাজার শরীফ অবস্থিত।
    • পরিচিত

বিভিন্ন কুসংস্কারের বেড়াজালে আবদ্ধ মানুষ যখন আল্লাহতায়ালাকে ভুলে নানা অনাচারে লিপ্ত ছিলো তখন ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে তুরস্কের সেলজুক প্রদেশ থেকে এই উপমহাদেশে আগমন করেন সুফি সাধক হজরত শাহ্ সুলতান কমর উদ্দীন রুমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।

আল্লাহর এই অলি এক রাজপরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু যখন তিনি এক আল্লাহর সত্তাকে মনেপ্রাণে অনুভব করলেন, তখন সমস্ত ভোগ-বিলাস পরিত্যাগ করে শুধু আল্লাহর সন্তষ্টি অর্জন ও ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে ঘর-বাড়ি ত্যাগ করেন। কঠোর সাধনার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জন করে নানা ঘাত-প্রতিঘাত, বাধা-বিপত্তি আর পদে পদে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে বন, জঙ্গল, পাহাড়, পর্বত পেরিয়ে তপ্ত রোদে পুড়ে, ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে মরুভূমি এবং সাগর পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রাম, বগুড়াসহ বিভিন্ন অঞ্চল হয়ে ৯৯৭ বছর আগে ৪৪৫ হিজরিতে নেত্রকোনার মদনপুরে আগমন করেন এই মহাসাধক।

তখন সেখানে মদন কোচ নামে এক প্রতাবশালী হিন্দু সামন্তরাজের শাসন চলছিল। সে সময় শাহ্ সুলতান (রহ.)-এর এই উপমহাদেশে আর কোনো ইসলাম প্রচারকের আগমন ঘটেনি।


নানা তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে জানা যায়, শাহ্ সুলতান আগমনের অন্তত ১১৬ বছর পর ভারতের আজমিরে হজরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতি (রহ.) এবং সাড়ে ৩০০ বছর পর সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.) এবং পর্যায়ক্রমে উপমহাদেশের নানা স্থানে ধর্ম প্রচারকদের আগমন ঘটে।

কাজেই এই উপমহাদেশে তিনিই প্রথম ইসলাম প্রচারক হিসেবে সমধিক বিবেচিত। উপমহাদেশে ইসলাম বিজয়ের অনেক আগেই তার আগমন ঘটেছিল বলে ইতিহাসবিদদের অনেকে মনে করেন।

নেত্রকোনায় আগমনের আগে বগুড়ায় রাজা পরশুরামকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ায় হজরত শাহ্ সুলতানের ওপর তিনি ক্ষিপ্ত হন। এক পর্যায়ে তার সঙ্গে যুদ্ধ হয়, যুদ্ধে রাজা পরশুরাম পরাজিত ও নিহত হন। নিহত রাজার উত্তরাধিকারী একমাত্র বোন পরমা সুন্দরী ও বুদ্ধিদীপ্ত শিলাদেবী ভ্রাতৃহত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সশস্ত্র হয়ে যখন যুবক সুলতানের মুখোমুখি হন তখন তার নূরানী মুখাবয়ব দেখে ক্ষিপ্ত শিলাদেবী সব ভুলে বিমোহিত হয়ে পড়েন। প্রতিশোধ না নিয়েই তিনি নিজ মহলে ফিরে যান। প্রচণ্ড আশেক হয়ে ধনসম্পদ, রাজ সিংহাসনসহ সব কিছুর বিনিময়ে তাকে পেতে চান। সব ভুলে দাসীর মাধ্যমে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব পাঠান সুলতানের কাছে। কিন্তু তিনি এই প্রস্তার প্রত্যাখ্যান করায় ঘৃণা, ক্ষোভ ও হতাশায় শেষে বিষপানে আত্মহত্যা করেন রাজকুমারী শিলাদেবী।

শাহ্ সুলতান কমর উদ্দীন রুমী (রহ.) ৪০ জন সহচর নিয়ে যখন কোচরাজ মদনের রাজ দরবারে হাজির হন তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল। ভিনদেশী ফকির আগন্তুকদের দেখে রাজা ও তার পরিষদবর্গ বিস্মিত হয়ে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে আগমনের কারণ জানতে চান। তিনি তাদেরকে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আসার আহবান জানিয়ে সমাগত আসর নামাজ আদায়ের জন্য জায়নামাজ বিছানোর অনুমতি চাইলেন। অভাবনীয় এই প্রস্তাবে রাজদরবারের সবাই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। কিন্তু বিচক্ষণ রাজা ফকিরদের একটু বাজিয়ে দেখতে চাইলেন। তাই প্রতারণা ও কৌশলের আশ্রয় নিয়ে শরবতের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে আগন্তুকদের হত্যার পরিকল্পনা আঁটতে লাগলেন। সুলতানকে উদ্দেশ্য করে কোচ রাজা বলেন, আমাদের প্রথানুযায়ী অতিথিকে প্রথমে শরবত পান করাতে হয়। শরবত পান করার পর আপনাদের সব প্রস্তাব মানা হবে। এই বলে তিনি বিষের পেয়ালা সুলতানের হাতে তুলে দিয়ে তা পান করার তাগিদ দিলেন। হলাহল নামের মারাত্মক এই এক ফোঁটা বিষপান করার সঙ্গে সঙ্গে যে কেউ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার কথা। গোটা রাজ দরবারে তখন থমথমে অবস্থা। উজির, নাজির, মন্ত্রী ও পাইক-পেয়াদা সবাই তাদের ঘিরে রেখেছে। পালাবার কোনো রাস্তা নেই, সবাই তাদের নিশ্চিত মৃত্যুর প্রহর গুনছে।


হজরত শাহ্ সুলতান কমর উদ্দীন রুমী রহ.-এর মাজার, ছবি: সংগৃহীত বিষয়টি আঁচ করতে পেরে আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী আল্লাহর অলি স্মিতহাস্যে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে বিষের পেয়ালা মুখে নিয়ে অর্ধেক পান করে অবশিষ্টাংশ শিষ্যদের পান করতে দিলেন। তারাও ‘বিসমিল্লাহ’ বলে নির্দ্বিধায় পান করলেন শরবত। কিন্তু না, কিছুতেই কিছু না হওয়ায় বিস্ময়ে সবাই হতভম্ভ হয়ে গেলেন।

এই অবিশ্বাস্য ঘটনা দেখে রাজা প্রমাদ গুনলেন। শর্তানুযায়ী শেষে জায়নামাজ বিছানোর অনুমতি দেন। জায়নামাজ বিছানোর সঙ্গে সঙ্গে তা প্রসারিত হতে লাগলো আর রাজাসহ সভাসদগণ পেছাতে লাগলেন। মুহূর্তে সব রাজ দরবার ঘিরে ফেলে জায়নামাজটি। সেখানে শাহ্ সুলতান কমর উদ্দীন রুমী (রহ.) সহচরদের নিয়ে নামাজ আদায় করে দ্বীন প্রচারের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলেন। একের পর এক অলৌকিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করার পর কোচ রাজাসহ সবার মনোবল ভেঙে পড়ল।

এ সময় ভয়ে এদের অনেকে ইসলাম গ্রহণ করলেন। শেষ পর্যন্ত রাজা নিজ রাজ্যে টিকতে না পেরে ধনসম্পদ নিয়ে উত্তরে গারো পাহাড়ের দিকে চলে যাওয়ার সময় ৫০ মণ সোনা সুলতানকে দিতে চাইলেন। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ না করায় পাশের পুকুরে ডুবিয়ে রাজা মদন কোচ পরিবারসহ দ্রুত চলে যান। যাওয়ার প্রাক্কালে তিনি আল্লাহর অলিকে অনুরোধ করলেন তার নামটি যেন স্মরণীয় করে রাখা হয়। তিনিও কথা রাখলেন। সেই থেকে ওই এলাকা মদনপুর ও পুকুরটি মদনলাল পুকুর নামে পরিচিতি লাভ করে। সেখানে আস্তানা গেড়ে ইসলাম প্রচারে মনোনিবেশ করেন শাহ সুলতান কমর উদ্দীন রুমী (রহ.)।

ভিনদেশী সাধকের কারামতের সংবাদ চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে তার সান্নিধ্যে ও মধুর ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে দলে দলে লোকজন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে লাগলেন। ইসলাম প্রচার ও প্রসারের জন্য তার জীবন, যৌবন উৎসর্গ করে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত চিরকুমার হজরত শাহ্ সুলতান কমর উদ্দীন রুমী (রহ.) সেখানে অবস্থান করে দূর-দূরান্তে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিতে লাগলেন। অন্ধকারাচ্ছন্ন বিশাল জনগোষ্ঠীর মাঝে তিনি ইসলামের যে আলো জ্বালিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন সেই বিজয় নিশান আজো উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো জ্বলছে।

নেত্রকোনা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে কেন্দুয়া সড়ক পথে মগড়া নদীর তীরে মদনপুরে হজরত শাহ্ সুলতান কমর উদ্দীন রুমী (রহ.)-এর মাজার অবস্থিত। প্রতি বছর ফাল্গুনের পূর্ণিমায় তিন দিনব্যাপী ওরস হয় এখানে। লাখো ভক্ত-অনুরাগীদের আগমন ঘটে তখন। বিশাল জায়গাজুড়ে মাজারের সম্পত্তি লাখেরাজ হওয়ায় তা রাজস্বমুক্ত। ১৮২৯ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মাজারের এই সম্পত্তি অধিগ্রহণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।

অতিব দুঃখের বিষয়, আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শিরক ও বাতিলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সব কিছু ত্যাগ করে যিনি সুদূর তুরস্ক থেকে এই জনপদে আগমন করে নিজেকে উৎসর্গ করে গেছেন। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এখন তারই মাজার প্রাঙ্গণে ধর্মের নামে এক শ্রেণীর ধর্ম ব্যবসায়ীর তত্ত্বাবধানে অতি উৎসাহী নারী-পুরুষ ওরস চলাকালীন অনৈসলামিক কার্যকলাপে লিপ্ত হন। উলামা-মাশায়েখগণ যদিও এমন অনৈসলামিক কার্যকলাপ বন্ধের জন্য সোচ্চার।

[]

নেত্রকোণা রাজধানী ঢাকা থেকে উত্তরে এবং বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহ থেকে উত্তর পূর্ব দিকে অবস্থিত, যার অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ হল ২৪°৫২′৪৮″ উত্তর ৯০°৪৩′৪৮″ পূর্ব / ২৪.৮৮০০০° উত্তর ৯০.৭৩০০০° পূর্ব / 24.88000; 90.73000। এর আয়তন ২৯.৩৯ বর্গকিলোমিটার, যার সম্পূর্ণটিই পৌরসভা দ্বারা শাসিত হয়।

জনসংখ্যা

সম্পাদনা

২০১১ বাংলাদেশের আদমশুমারি অনুযায়ী নেত্রকোণার জনসংখ্যা ছিল ৯১,৯৩৬ জন, যার মধ্যে পুরুষ ৪৬,৮৬৮ জন এবং নারী ৪৫,০৩৮ জন। স্বাক্ষরতার হার ৬৭.১%। শহরে ১৯৬২৭টি পরিবারের বসবাস।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা