নীলগঞ্জ হত্যাকাণ্ড

নীলগঞ্জ হত্যাকাণ্ড হল ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী কর্তৃক আজাদ হিন্দ ফৌজের বন্দী সৈন্যদের হত্যা করার ঘটনা। জাপানি সহযোগিতায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আজাদ হিন্দ ফৌজের সৈন্যরা সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে উপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকারের থেকে ভারতবর্ষকে স্বাধীন করতে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পতন ঘটে, এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের সৈন্যরা ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর দ্বারা বন্দী হয়। বন্দী সৈন্যদের ভারতের বিভিন্ন বন্দী-শিবিরে বন্দী করা হয়, এবং তাঁদের উপরে চালানো হয়েছিল নির্মম নির্যাতন। নীলগঞ্জ বন্দী-শিবিরে ১০২৪ জন সৈন্যকে বন্দি করা হয়েছিল। ব্রিটিশ সরকারের তথ্য অনুযায়ী, এই হত্যাকাণ্ডে ৫ জন সৈন্যের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু বেসরকারি তথ্য মতে, হত্যাকাণ্ডে কয়েক হাজার সৈন্যকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছিল। অনেকে এই হত্যাকাণ্ডকে কুখ্যাত জালিয়ানওয়ালাবাগ গণহত্যার থেকেও বড় হত্যাকাণ্ড হিসাবে উল্লেখ করেছেন।[১][২]

নীলগঞ্জ হত্যাকাণ্ড
স্থানবেঙ্গল প্রেসিডেন্সি
তারিখ২৫শে সেপ্টেম্বর ১৯৪৫
লক্ষ্যআজাদ হিন্দ ফৌজের বন্দি সৈন্য
হামলার ধরনগণহত্যা
নিহত৫ (সরকারি তথ্য)
২৩০০ (বেসরকারি)
আহত৯ (সরকারি তথ্য)
হামলাকারী দলব্রিটিশ ভারত ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী

হত্যাকাণ্ডের বিবরণ সম্পাদনা

ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর ২৬/৩ মাদ্রাজ রেজিমেণ্টের কম্যাণ্ডিং অফিসার এ.সি. গোপালন নাম্বেয়ার, ক্যাপ্টেন ই.আর.আর. মেনন, সুবেদার রামস্বামী থেবার ও জমাদার বিশ্বনাথ কোনার নীলগঞ্জ বন্দীশিবিরের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। সরকারি তথ্য মতে, শিবিরে আজাদ হিন্দ ফৌজের মোট ১০২৪ জন সৈন্য বন্দী ছিলেন। ২৫শে সেপ্টম্বর রাত্রি দশ ঘটিকার সময় শিবিরের সকল আলোই নিভিয়ে দেওয়া হয়। সেই সময়ে, সকলেই ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত হইতেছিলেন। এমন সময় ক্যাপ্টেন মেনন বন্দীদের গালাগালি করেন এবং তাহাদের দ্রুত শ্রেণীবদ্ধ হতে বলেন। বন্দীগণ সঙ্গে সঙ্গেই আদেশ পালন করে। অল্প সময়ের মধ্যেই বন্দীশিবিরে বিপদসূচক সংঙ্কেত ধ্বনি বাজানো হয়। এর পরে ক্যাপ্টেন মেনন ও জমাদার বিশ্বনাথ কোনার ৫০ জন সিপাহীসহ বন্দুক রাইফেল ও পিস্তল সহ উপস্থিত হন। মেনন তাঁহার লোকদের বন্দীদের উপর গুলীবর্ষণ করিতে আদেশ দেন। কিন্তু সিপাহীগণ তাঁহার আদেশ পালন করে নাই, কারণ পূর্ব্বেও বন্দীদের ভীতিপ্রদর্শনের জন্য অনুরূপ আদেশ দেওয়া হত। [৩] পূর্ব্ব রীতি অনুসারে ব্রিটিশ সৈন্যরা কয়েকবার ফাঁকা আওয়াজ করে, কিন্তু ক্যাপ্টেন তাহাদের গুলীবর্ষণ করিতে আদেশ দেন। ফলে ব্রিটিশ সৈন্যরা শ্রেণীবদ্ধ নিরস্ত বন্দী সৈন্যদের উপর গুলীবর্ষণ করে। বন্দী সৈন্যরা "নেতাজী কি জয়" ও "জয় হিন্দ" ধ্বনি করিতে করিতে মাটিতে শুয়ে পড়ে। পাঁচ মিনিটের অধিক গুলী চালান হয়। সরকারি তথ্যমতে, গুলীবর্ষণের পরে দেখা যায় যে বন্দী সৈন্যদের মধ্যে ২ জন নিহত ও ১২ জন সাংঘাতিক রূপে আহত হয়েছে। আজাদ হিন্দ ফৌজের মেডিকেল অফিসার মেজর রামকৃষ্ণপ্রসাদ ও ক্যাপ্টেন গাঙ্গুলী আহতদের শুশ্রূষা করেন। কিছুক্ষণ পরে একজন ইউরোপীয় অফিসার আহতদের আলিপুর সামরিক হাসপাতালে প্রেরণের ব্যবস্থা করেন। পরদিন ৩ জন হাসপাতালে মারা যান এবং ৯ জন আহত ব্যক্তি এক মাস কাল চিকিৎসাধীন থাকেন। যে কয় সৈন্য মারা গিয়াছেন তাঁহাদের নাম— কর্ণায়ল সিং, মহম্মদ কাশিম, কর্পূপিয়া, ইয়াপ্পন ও অপর এক ব্যক্তি (নাম জানা যায়নি)।[৪]

সকল বন্দী সৈন্যরা ২৬শে সেপ্টেম্বর মৃত সৈন্যদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য অনশন করেন এবং সন্ধ্যাকালে প্রার্থনা করেন।[৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Nilganj Genocide"Digital District Repository Detail (English ভাষায়)। Azadi Ka Amrit Mahotsav, Ministry of Culture, Government of India। সংগ্রহের তারিখ ২০ নভেম্বর ২০২৩ 
  2. সাহা ২০১১, পৃ. ৪৫।
  3. "পাতা:আজাদ হিন্দ ফৌজ - দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২৪৮ - উইকিসংকলন একটি মুক্ত পাঠাগার"bn.wikisource.org। সংগ্রহের তারিখ ২০ নভেম্বর ২০২৩ 
  4. "পাতা:আজাদ হিন্দ ফৌজ - দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২৪৯ - উইকিসংকলন একটি মুক্ত পাঠাগার"bn.wikisource.org। সংগ্রহের তারিখ ২০ নভেম্বর ২০২৩ 

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

  • সাহা, শিশির কুমার (১ সেপ্টেম্বর ২০১১)। All White's Not White (ইংরেজি ভাষায়)। Strategic Book Publishing। আইএসবিএন 978-1-60976-641-2। সংগ্রহের তারিখ ২০ নভেম্বর ২০২৩