নিষ্ঠানন্দ বজ্রাচার্য

নেপালি লেখক

নিষ্ঠানন্দ বজ্রাচার্য (দেবনাগরী: निष्ठानन्द बज्राचार्य) (৯ ডিসেম্বর ১৮৫৮ – ২৯ নভেম্বর ১৯৩৫) হলেন একজন নেপালি লেখক, যিনি ধ্রুপদি ধারার বদলে সমাসাময়িক ধারায় গদ্য রচনা করে নেপাল ভাষার সাহিত্যের যুগান্তর সাধন করেন।[১] তিনি নেপাল ভাষা পুনর্জাগরণের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তি।[২] এছাড়াও তিনি নেপালে সচল টাইপ মুদ্রণেরও পথিকৃৎ ছিলেন।[৩] তাকে নেপাল ভাষার চার স্তম্ভের অন্যতম হিসেবে সম্মানিত করা হয়।

নিষ্ঠানন্দ বজ্রাচার্য
নিষ্ঠানন্দ বজ্রাচার্যের প্রতিকৃতি
নিষ্ঠানন্দ বজ্রাচার্যের প্রতিকৃতি
জন্ম(১৮৫৮-১২-০৯)৯ ডিসেম্বর ১৮৫৮
ওম বহাল, কাঠমান্ডু
মৃত্যু২৯ নভেম্বর ১৯৩৫(1935-11-29) (বয়স ৭৬)
ভাষানেপাল ভাষা
সাহিত্য আন্দোলননেপাল ভাষা পুনর্জাগরণ
নিষ্ঠানন্দ বজ্রাচার্যের আবক্ষ ভাস্কর্য, ওম বহাল, কাঠমান্ডু

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

নিষ্ঠানন্দ কাঠমান্ডুর ওম বহাল নামক স্থানে বজ্রাচার্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মুক্তানন্দ এবং মায়ের নাম ঠাকুমতি বজ্রাচার্য। তার পরিবার ঐতিহ্যগতভাবে নেওয়ার বৌদ্ধদের পৌরোহিত্য করে থাকে, যারা পবিত্র ধর্মানুষ্ঠান পালন করে। তার প্রথম স্ত্রীর নাম রত্ন প্রভা। ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে রত্ন প্রভার মৃত্যুর পর তিনি দ্যহ মায়জু নামে আরেকজনকে বিবাহ করেন।

কর্মজীবন সম্পাদনা

১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষা সম্পন্ন করার পর তিনি ধর্মীয় বক্তৃতা করতে থাকেন। তার ধর্মকাহিনী বর্ণনার আসর দীর্ঘ চার মাসব্যাপী কাঠমান্ডুর পবিত্র দরবার ও অন্যান্য খোলা স্থানে অনুষ্ঠিত হয়। নিষ্ঠানন্দের পরিষ্কার বক্তৃতার ধারার জন্য তিনি জনপ্রিয়তা লাভ করেন। প্রাচীন পুঁথির প্রাচীন ভাষা সাধারণ শ্রোতাদের নিকট বুঝতে কষ্টকর হওয়ায়, তিনি দৈনন্দিন ব্যবহারিক ভাষায় পুঁথির কাহিনী বর্ণনা করতেন, যা শ্রোতারা সহজে বুঝতে পারতো।

১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে রাণা রাজবংশের উত্থানের সাথে সাথে নেপাল ভাষার উন্নয়ন স্থগিত হয়ে যায় এবং ভাষার লিখিত ও মৌখিক রূপের ভিন্নতা পরিলক্ষিত হতে থাকে। রাণারা নেপাল ভাষার ব্যবহার পছন্দ করতেন না এবং এই ভাষাকে অবদমিত করে রাখার প্রচেষ্টা শুরু হয়।[৪] সেই সময়ের মধ্যে নেপাল ভাষায় রেনেসাঁ বা পুনর্জাগরণের সূচনা হলে সাহিত্যিক কর্মকান্ডে বিপ্লবের সূচনা হয়,[৫] যার দরুণ পুরনো লিখন রূপ অনুসরণ করা কঠিন হয়ে যায়। বজ্রাচার্য পুরনো ও ঐতিহাসিক বানানরীতি উপেক্ষা করে মৌখিক রীতি অনুযায়ী লেখার প্রচলন করেন। বাক্য গঠনরীতিকে সহজীকরণ করে গদ্য লেখায় নতুন ধারার সূচনা করেন।[৬]

প্রকাশনা সম্পাদনা

১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে নিষ্ঠানন্দ এক বিশন্তি প্রজ্ঞাপারমিতা নামে একটি বই প্রকাশ করেন। এটি ছিল নেপাল ভাষার সচল টাইপে মুদ্রিত প্রথম গ্রন্থ। ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে ললিত বিস্তারস্বয়ম্ভূ পুরাণ নামে দুইটি বই প্রকাশ করেন।[৭] নিষ্ঠানন্দের সবচেয়ে জনপ্রিয় কাজ ললিত বিস্তার বুদ্ধের জীবন কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে রচিত।[৮][৯] কাঠমান্ডুতে মুদ্রণ সুবিধা না থাকায় নিষ্ঠানন্দ ভারতের কলকাতায় গমন করেন এবং একটি লেটারপ্রেস টাইপ যন্ত্র সংগ্রহ করেন। তিনি নিজেই টাইপসেটিং ও মুদ্রণের কাজ করতেন। ১৯২০ এর দশকে বৌদ্ধধর্মের নবজাগরণে ললিত বিস্তার-ও ভূমিকা রাখে।[১০]

সম্মাননা সম্পাদনা

১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ নভেম্বর অলিম্পাস ক্লাব (নিষ্ঠানন্দ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট) নিষ্ঠানন্দের জন্মস্থান ওম বহালে তার একটি আবক্ষ ভাস্কর্য স্থাপন করে।[১১] কাঠমান্ডু মহানগর কর্তৃপক্ষ তার সম্মানে কাঠমান্ডুর একটি সড়ককে "নিষ্ঠানন্দ মার্গ" নামকরণ করেন।[১২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Hridaya, Chittadhar (1982, third ed). Jheegu Sahitya ("Our Literature"). Kathmandu: Nepal Bhasa Parishad. Pages 25-36.
  2. "Contributions to Nepalese Studies, Volume 22"। Institute of Nepal and Asian Studies, Tribhuvan University। ১৯৯৫।  Page 74.
  3. M, Razen (November 2011). "Pioneer of Nepalbhasha printing", The Newarland. Page 8.
  4. Lienhard, Siegfried (1992). Songs of Nepal: An Anthology of Nevar Folksongs and Hymns. New Delhi: Motilal Banarsidas. আইএসবিএন ৮১-২০৮-০৯৬৩-৭. Page 1.
  5. Gellner, David N.। "Language, Caste, Religion and Territory: Newar Identity Ancient and Modern"। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১১  Page 128.
  6. Sudarshan, Bhikshu (1970). Lumanke Bahahpin ("Memorable Figures"). Kathmandu: Chwasa Pasa. Pages 1-5.
  7. Shakya, Bajra Raj; Bajracharya, Shanta Harsa (১৯৯৩)। "Newar Buddhist Culture: A Concept"। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ডিসেম্বর ২০১১  অজানা প্যারামিটার |name-list-style= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  8. LeVine, Sarah and Gellner, David N. (2005) Rebuilding Buddhism: The Theravada Movement in Twentieth-Century Nepal. Harvard University Press. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৬৭৪-০১৯০৮-৯. Page 258. Retrieved 25 December 2011.
  9. Gellner, David N.। "Language, Caste, Religion and Territory: Newar Identity Ancient and Modern"। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১১  Page 129.
  10. Gellner, David N. (২০০৮)। "Gyanmala Bhajan (Devotional songs)"। Lumbini Nepalese Buddha Dharma Society (UK)। ১৯ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১১ 
  11. Nepal Ritu Pau, Vol. 47 No. 88 (1998). Kathmandu: Nepal Bhasa Parisad. Page 2.
  12. "Addressed Road Network Map"। Kathmandu Metropolitan City। মার্চ ৬, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ডিসেম্বর ২০১১