যে কোন সুস্থ ও বিকাশশীল সমাজ তৈরীর প্রাথমিক কারিগর সেই সমাজের মেয়েরা। তাই মেয়েদের সুস্থ থাকা এবং সুস্থ রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আগামী ভবিষ্যৎ-এর কারণে। একটি মেয়ের জন্মের শুরু থেকেই তার ভেতরে তার ভবিষ্যৎ মাতৃসত্ত্বা লুকিয়ে থাকে। প্রতিদিনের বেড়ে ওঠার মাঝে সেই মাতৃসত্ত্বা ধীরে ধীরে পুষ্ট হতে থাকে। যে শরীরে প্রাণের সৃষ্টি হয় সেই শরীরের আন্তঃ কর্ম পদ্ধতি যে খুবই বিশেষ এবং বাকীদের থেকে আলাদা সে বিষয়ে আমাদের কারোরই সন্দেহ থাকা উচিত নয়।

এফআইআই উইকি প্রকল্প এবং থিয়েকার দ্বারা আয়োজিত ভারতের নয়াদিল্লিতে উইকিপিডিয়া সম্পাদনা মহিলাদের স্বাস্থ্য প্রচারে অংশ নেওয়া

নারী স্বাস্থ্যের গুরুত্ব

সম্পাদনা

জৈবিক এবং লিঙ্গ-সম্পর্কিত উভয় পার্থক্যের ফলে, একজন পুরুষ বা মহিলা হওয়ার স্বাস্থ্যের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়ে। নারী এবং মেয়েদের স্বাস্থ্য বিশেষ উদ্বেগের বিষয় কারণ, অনেক সমাজে, সামাজিক-সাংস্কৃতিক কারণগুলির কারণে তারা বৈষম্যের কারণে সুবিধাবঞ্চিত। উদাহরণস্বরূপ, নারী এবং মেয়েদের এইচআইভি/এইডসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। নারী ও মেয়েদের মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা থেকে উপকৃত হতে এবং সর্বোত্তম স্বাস্থ্যস্তর অর্জনে বাধাগ্রস্ত করে এমন কিছু সামাজিক-সাংস্কৃতিক কারণের মধ্যে রয়েছে:

  • নারী ও পুরুষের মধ্যে অসম ক্ষমতার সম্পর্ক।
  • সামাজিক রীতিনীতি যা শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ হ্রাস করে।
  • নারীর প্রজনন তথা সন্তান উৎপাদন ভূমিকার উপর একচেটিয়া দৃষ্টি নিবদ্ধ করা।
  • শারীরিক, যৌন এবং মানসিক হিংসতার শিকার।

যদিও দারিদ্র্য পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের জন্যই ইতিবাচক স্বাস্থ্য ফলাফলের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাধা। দারিদ্র্য নারী এবং মেয়েদের স্বাস্থ্যের উপর বেশি বোঝা চাপিয়ে দেয়। যেমন; খাওয়ানোর অভ্যাস (অপুষ্টি) এবং অনিরাপদ রান্নার জ্বালানি (COPD) ব্যবহারের কারণে।[]

সামাজিক সমস্যা

সম্পাদনা

নারী স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রসঙ্গ উঠলে সাধারণত কেবল প্রজনন সম্পর্কিত স্বাস্থ্য-এর কথা ধারণা করা হয়, যা নিয়ে যথেষ্ট বিবাদ বিদ্যমান সমাজে। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী স্বাস্থ্য বলতে বোঝায় - এমন একটি অবস্থা যাতে শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক দিকে সম্পূর্ণ ভাবে ভালো থাকাকে বোঝায় এবং যা শুধুমাত্র রোগ-এর অনুপস্থিতি বোঝায় না। এই কারণে সমাজ সংস্কারকরা চাইছেন বর্তমানে সমাজের দৃষ্টি নারী প্রজনন স্বাস্থ্য-এর বদলে নারী স্বাস্থ্য-এর দিকে ফেরাতে।

নারী স্বাস্থ্য যে শুধুমাত্র শারীরবৃত্তীয় পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল তা নয়, এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে দরিদ্রাবস্থা, দৈনন্দিন কর্মসূচী ও পারিবারিক দায়-দায়িত্ব। পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন অসুবিধা বহু বছর ধরে মোকাবিলা করে এগিয়ে চলা মেয়েদের স্বাস্থ্য-এর ক্ষেত্রে সবথেকে বেশি প্রভাব ফেলছে তাদের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক শক্তির অভাব। বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলিতে মহিলাদের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ন্যুনতম স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া খুবই কঠিন হয়ে উঠেছে। এই ধরনের প্রতিকূলতার আসল প্রভাব আরও স্পষ্ট বোঝা যায় বর্তমান সমাজের নারী পুরুষের লিঙ্গের আনুপাতিক মূল্যায়ন থেকে।

নারীর প্রজনন সম্পর্কিত স্বাস্থ্য এবং গর্ভধারণ সম্পর্কিত স্বাস্থ্য অত্যন্ত জটিল এবং সম্পূর্ণ আলাদা রকমের পদ্ধতি ব্যবস্থার প্রয়োজন হয় এই ক্ষেত্রে। উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি মাতৃত্বকালীন মৃত্যু গর্ভাবস্থা এবং প্রসবের। নারী স্বাস্থ্য ঠিকমতো বজায় রাখতে গেলে চাই উপযুক্ত শিক্ষা, সামাজিক ব্যবস্থা,এবং সুনির্দিষ্ট স্বাস্থ্য পরিষেবা।

নারী জীবনের আয়ু পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি এবং জাতি ও ভৌগোলিক অঞ্চল নির্বিশেষে, তাদের মৃত্যু হার কম। যদিও মাতৃমৃত্যুর হার নারীর স্বাভাবিক মৃত্যুর থেকে বেশি। শিল্পায়িত দেশগুলিতে, বিশেষ করে সবচেয়ে উন্নত, লিঙ্গ বৈষ্যম এবং শিল্প বিপ্লবের পরে বিপরীত হয়। এইসব পার্থক্য সত্ত্বেও, স্বাস্থ্যের অনেক ক্ষেত্রে, নারীরা আগেই মারাত্মক রোগ ভোগ করে এবং খুব অল্পই চিকিৎসা পায়। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে নারীদের জীবনযাত্রার প্রধানতম পার্থক্য হলও শিশুর বড় করারা সময়ে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "women-s-health"। WHO। সংগ্রহের তারিখ ১০ এপ্রিল ২০২৫