নারী মুক্তির প্রশ্নে

নারী মুক্তির প্রশ্নে (অন দ্য কোয়েশ্চন অফ উইমেন'স লিবারেশন) হল চীনা নৈরাজ্যবাদী-নারীবাদী হি-ইয়িন ঝেনের (何殷震) একটি নিবন্ধ। লেখাটি ১৯০৭ সালে দ্য সোসাইটি ফর দ্য রিস্টোরেশন অফ উইমেনস রাইটস এর দাপ্তরিক পত্রিকা ন্যাচারাল জাস্টিস (তিয়ান্যি)-এ প্রকাশিত হয়েছিল।[১] অনেক কিছুর মধ্যে, নিবন্ধটি নারীর শ্রম, কনফুসীয় ঐতিহ্য, পশ্চিমী ও ইউরোপীয় নারীদের ভোটাধিকার আন্দোলন, পতিতাবৃত্তি এবং নারীর মুক্তিতে পুরুষদের ভূমিকা সম্পর্কে হে-ইয়িন ঝেনের দৃষ্টিভঙ্গি বিশদভাবে বর্ণনা করে। মুক্তির প্রকৃতি এবং আন্দোলনে নারীর সক্রিয় বনাম নিষ্ক্রিয় অংশগ্রহণের বিষয়ের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা হয়েছে।[২][৩]

লিউ শিপেইয়ের সাথে "অন দ্য কোয়েশ্চেন অফ উইমেন'স লিবারেশন" এর লেখক হে-ইয়িন ঝেন।

এটি এবং অন্যান্য লেখার মধ্যে, হে-ইয়িন জেন নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্যের একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন যেটি শ্রেণী ও জাতিগত বৈষম্যের ব্যবস্থার সাথে অনিবার্যভাবে সংযুক্ত, যার জন্য সমাজের ব্যাপক সামাজিক ও অর্থনৈতিক উত্থান এবং আমূল পুনর্গঠনের প্রয়োজন।[৪] এটি আসবে ঐতিহ্যগত পারিবারিক কাঠামো, ব্যক্তিগত সম্পত্তি, স্ত্রী পুরুষ ভেদ (নান্নু ইয়ুবি) এবং সমস্ত শ্রেণিবদ্ধ ব্যবস্থার বিলুপ্তি করা হলে।[৫]

হি-ইয়িন ঝেনের নারীবাদের শ্রেণিবিভাগ কিছু পণ্ডিতের বিতর্কের বিষয়। কেউ কেউ প্রস্তাব করেন যে তাঁর নারীবাদকে একচেটিয়াভাবে নৈরাজ্যবাদীর পরিবর্তে নারীর ঐতিহাসিক এবং বর্তমান অভিজ্ঞতার মধ্যে নিহিত একটি জৈব অবস্থান হিসাবে আরও ভালভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।[৬] অন্যরা বলেছেন যে শ্রেণী, বিদেশী-সাম্রাজ্য, এবং লিঙ্গ-ভিত্তিক নিপীড়নের আন্তঃসম্পর্ক সম্পর্কে হে-ইয়িন ঝেনের সচেতনতা, পাশাপাশি সমাজের একটি মৌলিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের প্রতি তাঁর অঙ্গীকার, তাঁকে একটি নৈরাজ্য নারীবাদী মতাদর্শে স্থান দেয়।[৭][৮][১]

উদ্ভব সম্পাদনা

তাঁর স্বামী লিউ শিপেইকে সঙ্গে নিয়ে, হে-ইয়িন ঝেন সোসাইটি ফর দ্য রিস্টোরেশন অফ উইমেনস রাইটস (নুজি ফুকুয়ান হুই) প্রতিষ্ঠা করেন। একই সঙ্গে তিনি এই সোসাইটির অনুবর্তী পত্রিকা, ন্যাচারাল জাস্টিস প্রকাশ করেছিলেন, যেখানে ১৯০৭ সালে নারী স্বাধীনতার প্রশ্নে (অন দ্য কোয়েশ্চন অফ উইমেন'স লিবারেশন) নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছিল। পত্রিকাটি ১৯০৭ থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত চলেছিল এবং সেটিতে নারীবাদী তত্ত্ব, নারীমুক্তি, নৈরাজ্যবাদ এবং সমাজতন্ত্রের উপর হে-ইয়িন ঝেনের অন্যান্য অনেক লেখা প্রকাশিত হয়েছিল।[৯] বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ১৯০৭ সালে পত্রিকার প্রতিষ্ঠা এবং চীনে বুদ্ধিজীবী ও বিপ্লবী উত্থান এই দুটি ঘটনা একসাথে মিলে গেছে।[১০] বাণিজ্য ও বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পশ্চিমী সাম্রাজ্যবাদ, চীনের রাজবংশীয় ব্যবস্থার উত্থান, এবং আলোকিত চিন্তাধারা ও মুক্ত-বাজার পুঁজিবাদের বিস্তারের মত বিষয়গুলি এই লেখাটি প্রকাশের সময় সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্যে দিয়ে চলেছিল। এছাড়াও, শুল্ক-সুরক্ষিত বিদেশী শিল্পদ্রব্য আমদানি এবং যান্ত্রিকীকরণের সাথে ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা অনেক চীনা মহিলাকে প্রতিকূলভাবে প্রভাবিত করেছিল, বিশেষ করে যাঁরা পরিবারের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য গৃহ-ভিত্তিক বস্ত্রশিল্প এবং হস্তশিল্প উৎপাদনের উপর নির্ভর করতেন তাঁদের সমস্যায় পড়তে হয়েছিল।[১১] এই মহিলারা কর্মক্ষেত্রে যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন তা হে-ইয়িন ঝেনের লেখায় বারে বারে ফিরে এসেছে। এই বিষয়টি নিয়ে তাঁর সময়ের অন্য কয়েকজন নারীবাদী পণ্ডিতও আলোচনা করেছিলেন।[১২] কার্ল মার্ক্সের কমিউনিস্ট ইস্তেহারের প্রথম চীনা অনুবাদও প্রকাশিত হয়েছিল ন্যাচারাল জাস্টিস পত্রিকায়। এই থেকেই চীনের সঙ্গে কমিউনিস্ট চিন্তাধারার পরিচয় হয়েছিল। যাইহোক, নারীবাদী চিন্তাধারা এবং চীনা কমিউনিজম উভয় ক্ষেত্রেই তাঁর প্রকাশনার উল্লেখযোগ্য প্রভাব থাকা সত্ত্বেও, হে-ইয়িন ঝেনের কাজগুলি চীনা বা নারীবাদী বৃত্তিতে ব্যাপকভাবে অধ্যয়ন করা হয় না।[১০] এছাড়াও, তাঁর অনেক কাজ তাঁর স্বামীর নামে ভুলভাবে দেওয়া হয়েছে।[১৩]

এই লেখা এবং অন্যান্য লেখাগুলিতে, হে-ইয়িন ঝেন তাঁর মায়ের প্রথম নাম হে কে তাঁর শেষ নামের সঙ্গে হাইফেন দিয়ে যোগ করেছেন, এটি তাঁর একটি বিশ্বাসের কারণে তিনি করেছিলেন, সেটি হল যে পিতৃতান্ত্রিক উপাধিটি আসলে পিতৃতান্ত্রিক নিপীড়নের একটি প্রকাশ।।[১৪] অন্যান্য প্রকাশনাগুলিতে, তাঁর নাম হে জেন ​​স্বাক্ষরিত হয়েছে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Dirlik 1986, p. 127
  2. Zarrow 1988, p. 803
  3. Xiaohong, Xia. (2008) Tianyi Bao and He Zhen’s views on "women’s revolution". Different Worlds of Discourse. China Studies Series. 16, 293–314.
  4. Huiying 2003, p. 781
  5. Zarrow 1988, p. 800
  6. Huiying 2003, p. 800
  7. Zarrow 1988, p. 802
  8. Follin 2017, p. 6
  9. Liu et al. 2013, p. 6
  10. Huiying, Liu (২০০৩)। "Feminism: An Organic or an Extremist Position? On Tien Yee As Represented by He Zhen"Positions: East Asia Cultures Critique11 (3): 779–800। ডিওআই:10.1215/10679847-11-3-779 – Duke University Press-এর মাধ্যমে। 
  11. Zarrow, Peter (১৯৮৮)। "He Zhen And Anarcho-Feminism in China" (পিডিএফ)Journal of Asian Studies47: 803। জেস্টোর 2057853ডিওআই:10.2307/2057853 
  12. Liu et al. 2013, p. 31
  13. Liu et al. 2013, p. 51
  14. He-Yin, Zhen (১৯০৭)। The Feminist Manifesto। Natural Justice (Tianyi)। পৃষ্ঠা 182, 184।