নলিনীকিশোর গুহ
নলিনীকিশোর গুহ (১৮৯২ —,২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯) ছিলেন খ্যাতনামা সাংবাদিক ও স্বাধীনতা সংগ্রামী। তিনি দীর্ঘদিন আনন্দবাজার পত্রিকার সহকারী সম্পাদক থেকে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের কয়েকমাস সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।[১]
নলিনীকিশোর গুহ | |
---|---|
জন্ম | ১৮৯২ বজ্রযোগিনী ঢাকা ব্রিটিশ ভারত বর্তমানে বাংলাদেশ |
মৃত্যু | ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭৭ কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ ভারত | (বয়স ৮৪–৮৫)
পেশা | স্বাধীনতাকর্মী ও সাংবাদিকতা |
ভাষা | বাংলা |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
নাগরিকত্ব | ভারতীয় |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | বাংলায় বিপ্লববাদ |
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনানলিনীকিশোর গুহের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের তৎকালীন ঢাকা জেলার বজ্রযেগিনী গ্রামে। পিতা রাজকিশোর গুহ। গ্রামের স্কুলে পড়ার সময়ই তিনি পুলিনবিহারী দাসের সংস্পর্শে এসে স্বদেশ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হন এবং ঢাকা অনুশীলন সমিতির সঙ্গে যুক্ত হন। ইতিমধ্যে তিনি তার মায়ের কাছ থেকেও দেশসেবার প্রেরণা পান। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় বিদ্যালয় হতে ম্যাট্রিক পাশের পর অনুশীলন সমিতির নির্দেশে তিনি চিকিৎসাবিদ্যা অধ্যয়ন করেন এবং এল এম এস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
- স্বাধীনতা আন্দোলনে ভূমিকা-
অনুশীলন সমিতিতে তার প্রধান কাজ ছিল ছাত্র ও যুবকদের দেশাত্মবোধে জাগিয়ে তোলা। তিনি সেই কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে শঙ্খ এবং স্বাধীন ভারত পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন। এদিকে ১৯১০ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে ঢাকা ষড়যন্ত্র মামলায় তাকে পনেরো মাস বিচারাধীন বন্দি করে রাখা হয়। আবার ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের অন্য আর একটি মামলায় তাকে এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। মুক্তিলাভের পরও নিবর্তনমূলক আইনের তিন ধারায় তাকে আটক রাখা হয় এবং শেষে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে মুক্তি লাভ করেন।
- সাংবাদিকতা ও লেখালেখির দুনিয়ায়-
বন্দিদশা হতে মুক্তি লাভের পর নলিনীকিশোর অনুশীলন সমিতির সাংগঠনিক কাজকর্ম ছেড়ে দিয়েও স্বদেশ চেতনা নিয়েই লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন। 'সোনার বাংলা' ও 'বাংলার বাণী'র সম্পাদক হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়ের সশস্ত্র বিপ্লবীদের বৈপ্লবিক কার্যকলাপ ও বিদ্রোহের যাবতীয় বিষয় অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে উপস্থাপন করেন বাংলার বিপ্পববাদ গ্রন্থে। ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের এই বইটি সে সময়ে অত্যন্ত সাড়া জাগিয়ছিল, ফলে ব্রিটিশ শাসক বাজেয়াপ্ত করে।[২] গ্রন্থটির প্রথম সংস্করণ ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে (১৩৩০ বঙ্গাব্দে) প্রকাশিত হয়। নলিনীকিশোর দীর্ঘকাল আনন্দবাজার পত্রিকার সহকারী সম্পাদক পদে ছিলেন।[৩] ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের কিছু সময়ে (২৫ জুন ১৯৫৪ - ৩ অক্টোবর ১৯৫৪) সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও, 'দৈনিক স্বরাজ', 'দৈনিক হিন্দুস্থান', ও 'জনসেবক' পত্রিকার সঙ্গেও যোগ ছিল।
গ্রন্থ
সম্পাদনাতার রচিত গ্রন্থসমূহ হল-
- বাংলার বিপ্পববাদ[৪]
- তরুণ বাংলা
- পথ ও পাথেয়
- বিপ্লবের পথে
- কাশ্মীর পরিক্রমা[৫]
- কত অজানা মানুষ
- ভারতের দাবী ইত্যাদি।
নলিনীকিশোর গুহ ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন ভারতে বৃদ্ধ ও নিরুপায় বিপ্লবীদের আশ্রয়কেন্দ্র- অনুশীলন ভবন প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ছিলেন।[১]
জীবনাবসান
সম্পাদনানলিনীকিশোর গুহ ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দের ২৯ সেপ্টেম্বর কলকাতায় প্রয়াত হন।[১]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ৩৪৯, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
- ↑ গুহ, নলিনীকিশোর (২০১৭)। "বাংলায় বিপ্লববাদ (অগ্নিযুগের গ্রন্থমালা সংস্করণ-৩১"। রাডিক্যাল, কলকাতা। আইএসবিএন 978-81-85459-27-4।
- ↑ Ghosh, Bijan Kumar। Sei Dinguli Raatguli (ইংরেজি ভাষায়)। THE CAFE TABLE।
- ↑ Guha, Nalinikishor (১৯৫৪)। Banglay Biplabbad।
- ↑ "Nalini Kishore Guha - নলিনীকিশোর গুহ Archives - Granthagara"। granthagara.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-০৩।