ধলা মানিকজোড়

পাখির প্রজাতি

ধলা মানিকজোড় (বৈজ্ঞানিক নাম: Ciconia ciconia) বা সাদা মানিকজোড় Ciconiidae (সাইকোনিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Ciconia (সাইকোনিয়া) গণের অন্তর্গত এক প্রজাতির শ্বেতকায় বৃহদাকৃতির পাখি।[২][৩][৪] ধলা মানিকজোড়ের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ মানিকজোড় (লাতিন: ciconia = মানিকজোড়)।[৩] পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও এশিয়া, আফ্রিকাইউরোপের বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এদের আবাস, প্রায় ৬৩ লাখ ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটার।[৫] বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।[১] বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৩]

ধলা মানিকজোড়
Ciconia ciconia qtl2.jpg
ধলা মানিকজোড়, জার্মানি
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: Chordatai
শ্রেণী: পক্ষী
বর্গ: Ciconiiformes
পরিবার: Ciconiidae
গণ: Ciconia
প্রজাতি: C. ciconia
দ্বিপদী নাম
Ciconia ciconia
(Linnaeus, 1758)
WhiteStorkMap.svg
বিস্তৃতি ও গতিবিধি

       প্রজননক্ষেত্র
       শীতকালীন বিচরণস্থল
                     পরিযায়ন পথ

প্রতিশব্দ

Ardea ciconia Linnaeus, 1758

বিস্তৃতি ও উপপ্রজাতিসম্পাদনা

গ্রীষ্মকালে, অর্থাৎ প্রজনন মৌসুমে ধলা মানিকজোড় মধ্য ও দক্ষিণ ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যের কিছু অংশ, মধ্য এশিয়ার পশ্চিমাংশ এবং আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে কাটায়। শীতের শুরুতে মধ্য এশিয়ার মানিকজোড়রা ছাড়া বাকি সবাই আফ্রিকার দক্ষিণাংশে নির্দিষ্ট পরিযান পথ ধরে চলে যায়। পথিমধ্যে কোথাও থামে না।[৬] মধ্য এশিয়ার মানিকজোড়রা চলে আসে দক্ষিণ এশিয়ায়

ধলা মানিকজোড়ের মোট দুইটি উপপ্রজাতির সন্ধান এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে[৭]। উপপ্রজাতি দু'টি হল:

  • Ciconia ciconia ciconia (Linnaeus, 1758) - ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া এবং আফ্রিকা জুড়ে এদের বিস্তৃতি। এ উপপ্রজাতির কিছু সদস্য শীতকালটা ভারতে কাটায়।[৮]
  • Ciconia ciconia asiatica (Severtsov, 1873) - মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়া এদের মূল আবাস। মনোনিত উপপ্রজাতি থেকে আকারে এরা কিছুটা বড়।[৯]

বিবরণসম্পাদনা

ধলা মানিকজোড় বেশ বড়সড় জলচর পাখি। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ১০৬ সেন্টিমিটার, ডানা ৫৭ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ২০.৫ সেন্টিমিটার, লেজ ২২.৭ সেন্টিমিটার ও পা ২২.৭ সেন্টিমিটার।[৩] ডানার বিস্তার ১৫৫-২১৫ সেমি। ওজন ২.৩-৪.৫ কেজি।[১০][১১] স্ত্রী ও পুরুষ পাখির মধ্যে কোন যৌন দ্বিচারীতা নেই। তবে পুরুষ পাখি গড়ে স্ত্রী পাখির থেকে একটু বড়। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির কাঁধ-ঢাকনিসহ দেহ সাদা। কেবল ডানার ওড়ার পালক কালো। পালকে মেলানিন থাকার কারণে পালক কালো দেখায়।[১২] লেজ ও লেজ-ঢাকনি সাদা। মুখের পালকহীন চামড়া কালচে-ধূসর। লম্বা পা ও পায়ের পাতা উজ্জ্বল লাল। চোখ বাদামি থেকে ধূসরাভ বাদামি, চোখের কোল লাল। লম্বা সোজা ঠোঁট উজ্জ্বল লাল। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির ডানার পালকের বড় ঢাকনি বাদামি। এছাড়া ঠোঁট অনুজ্জ্বল লাল বা কালচে।[১৩]

স্বভাবসম্পাদনা

ধলা মানিকজোড় ঘাসক্ষেত, জলাভূমি, পতিত জমি এবং ডোবাময় মাঠে বিচরণ করে। সচরাচর একা, জোড়ায় কিংবা ছোট ঝাঁকে থাকে। খাবারের সন্ধানে খুব ভোরে জলাভূমিতে নামে। হেঁটে হেঁটে ভেজা ঘাস ও জলাভূমিতে ঠোঁট ঢুকিয়ে এরা খাবার খুঁজে বেড়ায়। এরা মাংসাশী পাখি। এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে পোকামাকড়, শামুক, ব্যাঙ, ছোট সরীসৃপ, ছোট স্তন্যপায়ী ও মাছ। ধীরে ধীরে ডানা মেলে এরা উড়ে চলে। হালকা বাতাসে ভেসে থাকে। আশ্রয়ের জন্য এরা একটিমাত্র গাছকে বেছে নেয়। কোন ব্যাঘাত না ঘটলে ঐ গাছে এরা রাতের পর রাত আশ্রয় নেয়। শীতে সচরাচর নীরব থাকে। তবে প্রজনন মৌসুমে ঠোঁট দিয়ে ঠক-ঠক আওয়াজ তোলে।[৩]

প্রজননসম্পাদনা

মার্চ থেকে মে মাস এদের প্রজনন মৌসুম। এসময় লোকালয়ের উঁচু দালানে, খাড়া বাঁধ কিংবা উঁচু গাছে ডালপালা দিয়ে বড় মাচার মত আগোছালো বাসা বানায়। স্ত্রী ও পুরুষ দু'জনে মিলেই বাসা করে। বাসা বানাতে ৫-১৫ দিন সময় লাগে। বাসা বানানো শেষে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সংখ্যায় ৩-৫টি এবং সাদা রঙের। ডিমের মাপ ৭.৩ × ৫.৯ সেমি। ৩০ দিনে ডিম ফুটে ছানা বের হয়।[৩]

গ্যালারিসম্পাদনা

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. Ciconia ciconia ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে, The IUCN Red List of Threatened Species এ ধলা মানিকজোড় বিষয়ক পাতা।
  2. রেজা খান (২০০৮)। বাংলাদেশের পাখি। ঢাকা: বাংলা একাডেমী। পৃষ্ঠা ২০৮। আইএসবিএন 9840746901 
  3. জিয়া উদ্দিন আহমেদ (সম্পা.) (২০০৯)। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: পাখি, খণ্ড: ২৬। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩০৩। আইএসবিএন 9843000002860 |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid prefix (সাহায্য) 
  4. শরীফ খান (২০০৮)। বাংলাদেশের পাখি। ঢাকা: দিব্যপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ৪০৪–১১। আইএসবিএন 9844833310 
  5. Ciconia ciconia ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৯ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে, BirdLife International এ ধলা মানিকজোড় বিষয়ক পাতা।
  6. del Hoyo, J., Elliott, A. and Sargatal, J. (1992) Handbook of the Birds of the World. Volume 1: Ostrich to Ducks. Lynx Edicions, Barcelona.
  7. "European White Stork (Ciconia ciconia)"। The Internet Bird Collection। মার্চ ৪, ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ১৯, ২০১২ 
  8. Ali, Salim (২০০১)। Handbook of the Birds of India and Pakistan, Volume 1 (2 (paperback) সংস্করণ)। India: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 99–101। আইএসবিএন 0-19-565934-1  অজানা প্যারামিটার |coauthors= উপেক্ষা করা হয়েছে (|author= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)
  9. Rasmussen, Pamela C. (২০০৫)। Birds of South Asia: The Ripley Guide2। Washington: Smithsonian Institution and Barcelona: Lynx edicions। পৃষ্ঠা 63। আইএসবিএন 84-87334-66-0  অজানা প্যারামিটার |coauthors= উপেক্ষা করা হয়েছে (|author= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)
  10. Mead,C. and Ogilvie, M. (2007)The Atlas of Bird Migrations: Tracing the Great Journeys of the Worlds Birds
  11. Hancock & Kushan, Storks, Ibises and Spoonbills of the World. Princeton University Press (1992), আইএসবিএন ৯৭৮-০-১২-৩২২৭৩০-০.
  12. Grande, Juan Manuel (২০০৪)। "The evolution of bird plumage colouration; a role for feather-degrading bacteria?" (PDF)Ardeola51 (2): 375–383। সংগ্রহের তারিখ ২ এপ্রিল ২০১১  অজানা প্যারামিটার |coauthors= উপেক্ষা করা হয়েছে (|author= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)
  13. Negro, Juan José; Garrido-Fernandez, Juan (২০০০)। "Astaxanthin is the Major Carotenoid in Tissues of White Storks (Ciconia ciconia) Feeding on Introduced Crayfish (Procambarus clarkii )"। Comparative Biochemistry and Physiology Part B126 (3): 347–52। ডিওআই:10.1016/S0305-0491(00)00180-2 

বহিঃসংযোগসম্পাদনা

  উইকিমিডিয়া কমন্সে ধলা মানিকজোড় সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।