দ্বাদশ শতাব্দীর রেনেসাঁ
উচ্চ মধ্যযুগের গোড়ার দিকে যে সময়ে নানাবিধ বিষয়ে পরিবর্তন দেখা গিয়েছিল, তাকে দ্বাদশ শতাব্দীর রেনেসাঁস বলে। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক পরিবর্তন ছাড়াও পশ্চিম-ইউরোপীয় দর্শনশাস্ত্র ও বিজ্ঞানের জাগরন ঘটে। এই পরিবর্তনের ফলে পরবর্তী পঞ্চদশ শতাব্দীতে ইতালীয় নবজাগরণের সাহিত্য ও শৈল্পিক আন্দোলন এবং সপ্তদশ শতকের বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনের মতো প্রগতির পথ প্রশস্ত হয়েছিল [১]।
মধ্যযুগীয় রেনেসাঁস
সম্পাদনাইউরোপের রাজতন্ত্রের রাজনৈতিক একীকরণ এবং কেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়ার দ্বারা শিক্ষার পুনর্জন্মের ভিত্তি স্থাপিত হয়[২]। কেন্দ্রীকরণের এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল শার্লেমাইন (৭৬৮-৮১৪) ফ্রাঙ্কের রাজা এবং পরে পবিত্র রোমান সম্রাটের (৮০০-৮১৪) শাসনকালে। শিক্ষার প্রতি শার্লেমেনের ঝোঁক, অনেক নতুন গীর্জা এবং স্কুল খুলতে সাহায্য করেছিল, যেখানে ছাত্রদের ল্যাটিন এবং গ্রিক শেখা বাধ্যতামূলক ছিল। একে "ক্যারোলিঞ্জিয়ান রেনেসাঁস" বলা হয়। দ্বিতীয় "পুনর্নবীকরণ" প্রথম ওটো (দ্য গ্রেট) (৯৩৬-৯৭৩) স্যাক্সন্সের রাজা [৩] এবং ৯৬২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের সম্রাটের সময়ে ঘটেছিল। যাজক ও উপযাজককে নিয়োগ করতে পারার ক্ষমতা প্রয়োগে ওটো তার রাজত্ব একীভূত করতে সফল হয়েছিল। এই সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ওটোকে তার রাজ্যের সবচেয়ে শিক্ষিত এবং সমর্থ বর্গের সংস্পর্শে আনে[৪] । এই ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থেকে স্যাক্সন রাজত্ব এবং পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যে অনেক নতুন সংস্কার চালু করা হয়েছিল। তাই, অটোর রাজত্বকে একরকম পুনর্নবীকরণই বলা হয়। অতএব, দ্বাদশ শতাব্দীর পুনর্জাগরণ মধ্যযুগীয় পুনর্নবীকরণের তৃতীয় এবং চূড়ান্ত হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। তবুও বারো শতকের নবজাগরণ ক্যারোলিঞ্জিয়ানের আগে বা ওটোনিয়ান সময়ের আগে পুনর্নবীকরণগুলির তুলনায় অনেক বেশি পুঙ্খানুপুঙ্খ ছিল[৫]। প্রকৃতপক্ষে, শার্লেমেনের "ক্যারোলিঞ্জিয়ান রেনেসাঁস" প্রকৃতপক্ষে শার্লেমেনের জন্যই বিশেষ ছিল, এবং সত্যিকারের পুনর্নবীকরণ সমাজের তুলনায় একটি পরিবর্তিত সমাজের "বাহ্যাবরণ" [৬] ছিল। একই কথাও ওটোনিয়ান রেনেসাঁর জন্যও বলা যেতে পারে।
ইতিহাস রচনা
সম্পাদনাচার্লস হাসকিনস ছিলেন প্রথম ঐতিহাসিক যিনি প্রায় ১০৭০ খ্রিষ্টাব্দে উচ্চ-মধ্যযুগ থেকে একটি নবজাগরণের বিষয়ে ব্যাপকভাবে লেখেন। ১৯২৭ সালে তিনি লিখেছিলেন:
[ইউরোপের দ্বাদশ শতাব্দী] অনেক ক্ষেত্রে নবীন ও সক্রিয় সময় ছিল। ক্রুসেডের যুগ, শহর এবং পশ্চিমের প্রাচীনতম আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলির উত্থান ছাড়াও এটি রোমানিয় শিল্পের চূড়ান্ত পরিণাম এবং গথিকের সূচনা দেখেছে; স্থানীয় ভাষাগুলির উদ্ভাবন; শাস্ত্রীয় লাতিন, লাতিন কবিতা এবং রোমান আইনের পুনর্জাগরণ; গ্রীক বিজ্ঞানের পুনরুদ্ধার, তার আরবীয় ও গ্রীক দার্শনিক সংযোজন; এবং প্রথম ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উৎপত্তি। ১২ শতকে শাস্ত্রীয় দর্শনে, উচ্চ শিক্ষায়, লাতিন ও স্বদেশীয় কবিতায়, ধর্মীয় নাটকে, আর্কিটেকচার ও ভাস্কর্যে ও ইউরোপীয় আইনের পদ্ধতিতে ব্যাপকভাবে পরিবর্তন এসেছে...[৭]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনাযথ