রাষ্ট্রদ্রোহিতা
রাষ্ট্রদ্রোহিতা বা রাষ্ট্রদ্রোহ বলতে এক ধরনের অপরাধকে বোঝায়, যেখানে অপরাধী প্রত্যক্ষ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে, যেমন অবৈধ উপায়ে নিজরাষ্ট্রের স্বীকৃত সরকারের পতন, বা সার্বভৌম রাষ্ট্রপ্রধানের দৈহিক ক্ষতিসাধন, অথবা শত্রুরাষ্ট্রকে নিজ দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহায়তা প্রদান জাতীয় কর্মকাণ্ড সম্পাদন করে বা করার চেষ্টা করে এবং ফলশ্রুতিতে নিজরাষ্ট্রের প্রতি তার আনুগত্য ভঙ্গ করে। রাষ্ট্রদ্রোহিতা একটি অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ এবং বিশ্বের বহু দেশে এর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।[১] যিনি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ সম্পাদন করেন, তাকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলা হয়। রাষ্ট্রদোহিতার সমার্থক পরিভাষা হিসেবে দেশদ্রোহিতা, রাজদ্রোহিতা শব্দগুলিও প্রচলিত।
নিজ দেশের সরকারের গোপন সংবেদনশীল কোনও তথ্য যা ফাঁস হলে দেশের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে, তা অন্য একটি শত্রুরাষ্ট্রকে প্রদান করা রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলে গণ্য হতে পারে। বিদেশী শত্রুশক্তির হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করা এবং সরকারের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা-সংক্রান্ত সংস্থাগুলির কর্মকাণ্ডে ক্ষতির সৃষ্টি করাও রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসেবে গণ্য হতে পারে।
রাষ্ট্রভেদে রাষ্ট্রদ্রোহিতার সংজ্ঞা ভিন্ন হতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের রচয়িতারা রাষ্ট্রদ্রোহিতার সংকীর্ণ একটি সংজ্ঞা প্রদান করেন, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা বা দেশটির শত্রুদের সাহায্য ও সুবিধা প্রদান করাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলা হয়েছে। এরূপ সংকীর্ণ সংজ্ঞার কারণ হল যেন কোনও ক্ষমতাসীন সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করতে না পারে। অধিকন্তু মার্কিন আইনসভার নিম্নকক্ষ কংগ্রেসকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার সংজ্ঞাটির ব্যাপ্তি বাড়ানোর বা এটিকে কোনও প্রকার নতুন রূপ দেবার অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে, যেমন যুক্তরাজ্যের আইনে রাজা বা রাণী হলেন রাষ্ট্রের প্রতীক, তাই উপর্যুক্ত শর্তগুলির পাশাপাশি রাজা বা রাণী বা তাঁর নিকট পরিবারের কোনও সদস্যকে হত্যা বা তাদের কোনও দৈহিক ক্ষতির প্রচেষ্টাকেও রাজদ্রোহিতা বা রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসেবে গণ্য করা হয়। এছাড়া রাণী বা রাজার জ্যেষ্ঠ অবিবাহিত কন্যার সাথে বিবাহ-বহির্ভূত যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া, কিংবা রাজার আইনিভাবে প্রতিষ্ঠিত উত্তরাধিকার সূত্রের কোনও রূপ অবমাননা করার প্রচেষ্টাকেও যুক্তরাজ্যে উচ্চ পর্যায়ের রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলে গণ্য করা হয়।[২]