দুর্বল মহাকর্ষীয় পরকলায়ন

মহাকর্ষীয় লেন্স বা গ্র‍্যাভিটেশনাল লেন্স হলো একটি দূরবর্তী আলোক উৎস ও একটি পর্যবেক্ষকের মাঝে অবস্থিত ভরের এমন এক ধরনের বিন্যাস (যেমন ছায়াপথ স্তবক) যা উৎস হতে পর্যবেক্ষকের দিকে আলো যাওয়ার সময় একে বাঁকিয়ে দিতে পারে। এই প্রভাবটি মহাকর্ষীয় লেন্সিং হিসেবে পরিচিত।

সাধারণ আপেক্ষিকতা অনুযায়ী, আলো স্থান-কালের বক্রতাকে অনুসরণ করে। তাই একটি বিশাল বস্তুকে অতিক্রম করার সময় আলো বেঁকে যায়। অর্থাৎ উৎস থেকে আলো বেঁকে পর্যবেক্ষকের চোখে পৌঁছায়, ঠিক সাধারণ লেন্সের মত। তবে, সাধারণ অক্ষি কাঁচের মত না হয়ে, মহাকর্ষীয় লেন্সগুলি এদের কেন্দ্রের সবচেয়ে কাছ দিয়ে যাওয়া আলোক রশ্মির সর্বোচ্চ এবং কেন্দ্রের সবচেয়ে দূরবর্তী আলোক রশ্মির সর্বোনিম্ন বিচ্যুতি ঘটায়। ফলস্বরূপ, একটি মহাকর্ষীয় লেন্সের কোনও একক ফোকাস বিন্দু নেই, তবে একটি ফোকাস অক্ষ রয়েছে। মহাকর্ষীয় আলোক প্রতিসরণের ক্ষেত্রে "লেন্স" কথাটি প্রথম স্যার অলিভার জোসেফ লজ কর্তৃক ব্যবহৃত হয় যিনি এসম্পর্কে বলেন, "এটি বলা বৈধ নয় যে, সৌর মহাকর্ষ ক্ষেত্রটি লেন্সের মতো কাজ করে, কারণ এর কোনও ফোকাস দূরত্ব নেই।"যদি আলোক উৎস, লেন্স এবং পরযবেক্ষক একটি সরল রেখায় অবস্থান করে, তাহলে পর্যবেক্ষকের কাছে আলোক উৎসটিকে বৃহৎ লেন্সকে ঘিরে একটি বলয় মনে হবে। যদি, রেখায় কোনো ত্রুটি থাকে (সরল রৈখিক না হলে) তাহলে পর্যবেক্ষক একটি ধনু আকৃতি দেখতে পাবে। আরো সাধারণভাবে, যেখানে লেন্সিং ভরটি জটিল এবং স্থান-কাল স্থান-কালের বৃত্তাকার বিকৃতি না ঘটায় তাহলে উৎসটি লেন্সের চারপাশে আংশিক ধনু আকৃতির প্রতিরূপ সৃষ্টি করবে। সে ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষক একই উৎসেরই একাধিক বিকৃত বিম্ব দেখতে পারে; বিম্বের সংখ্যা এবং আকার উৎস, লেন্স ও পর্যবেক্ষকের আপেক্ষিক অবস্থান এবং লেন্স কর্তৃক স্থান-কালের বিকৃতির উপর নির্ভর করে।

মহাকর্ষীয় লেন্সিংএর তিনটি ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণি বিদ্যমান:

১. সবল মহাকর্ষীয় লেন্সিং : এখানে বিকৃতি যেমন আইনস্টাইন বলয়, ধনু এবং একাধিক বিম্বের সৃষ্টি সহজেই দৃশ্যমান হয়।

২. দূর্বল মহাকর্ষীয় লেন্সিং : এক্ষেত্রে উৎসের বিকৃতি অনেক ছোট এবং কেবলমাত্র কয়েক শতাংশের সুসংগত বিকৃতি খুঁজে পাওয়ার জন্য বিশাল পরিমাণ উৎসের তথ্যের পরিসংখ্যানমূলক বিশ্লেষণ করতে হয়। পরিসংখ্যানগতভাবে, লেন্সিংটি লেন্সের কেন্দ্রের দিকে উলম্বভাবে উৎসকে প্রসারিত হিসাবে দেখায়। বিশাল পরিমাণে দূরবর্তী ছায়াপথ সমূহের আকার ও ওরিয়েন্টেশনের বিশ্লেষণ করে এদের ওরিয়েন্টেশনের একটি গড় করা যায় যা ব্যবহার করে লেন্সিং ক্ষেত্রটির যেকোনো অবস্থানের শিয়ার হিসাব করা যায়। এটি, পালাক্রমে, এই অঞ্চলে ভর বিন্যাস পুনর্গঠন করতে ব্যবহার করা যেতে পারে: বিশেষত, তমোপদার্থের বিন্যাস পুনর্গঠন করা যেতে পারে। যেহেতু অন্তর্নিহিত ছায়াপথগুলি উপবৃত্তাকার এবং দূর্বল লেন্সিং সংকেত খুবই ক্ষীণ, তাই এ ধরনের জরিপে বহু সংখ্যক ছায়াপথকে পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন পড়ে। এক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে নিয়মানুগ ভুল এড়িয়ে চলতে হয়। ল্যামডা-সিডিএম নকশার বিকাশ, অন্যান্য মহাকর্ষীয় পর্যবেক্ষণের মাঝে সমন্বয় সাধনসহ আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্বল লেন্সিং এর গুরুত্ব অনেক।মহাবিশ্বে তমোপদার্থ তমোপদার্থের বিনিময় সম্পর্কীত গবেষণায় এদের ভূমিকা রয়েছে।