দিয়াবাড়ি ডিপো
দিয়াবাড়ি ডিপো হলো এমআরটি লাইন ৬-এর যাত্রাপথে অবস্থিত একটি ঢাকা মেট্রো রেলওয়ে ডিপো, এটি বাংলাদেশের উত্তর ঢাকার উত্তরা উত্তর স্টেশনের আগে অবস্থিত। এটি ঢাকার মেট্রো লাইনগুলোর সর্বপ্রথম ডিপো যা ২০২২ সালে নির্মিত হয়েছিলো যখন এমআরটি লাইন ৬ নির্মাণাধীন ছিল।
![]() ডিপো এলাকার প্রবেশপথ | |
![]() | |
অবস্থান | |
---|---|
অবস্থান | দিয়াবাড়ি, ঢাকা, বাংলাদেশ |
স্থানাঙ্ক | ২৩°৫২′৪১″ উত্তর ৯০°২১′২১″ পূর্ব / ২৩.৮৭৮০১১২° উত্তর ৯০.৩৫৫৮২৩৭° পূর্ব |
বৈশিষ্ট্য | |
মালিকানা | সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ |
নিয়ন্ত্রক | ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড |
ধরন | ভূমিজ স্টক |
সড়ক | সোনারগাঁও জনপথ, মিরপুর সড়ক |
কোচ | কাওয়াসাকি রেলগাড়ি |
যাত্রাপথ | এমআরটি লাইন ৬ |
ইতিহাস | |
চালু | জুন ২০২২ |
ইতিহাস
সম্পাদনা২৭ মার্চ ২০১৬ সালে তোকিও কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের সাথে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এমআরটি লাইন ৬-এর ডিপো নির্মাণের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করে।[১] উত্তরা স্যাটেলাইট টাউন প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের ৫৯ একর জমির উপর ডিপো নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। ডিপো এলাকার ৩০ একর ভূমি নরম হওয়ায় বালু কনসেপশন পাইলিং পদ্ধতিতে ডিপো কাঠামো নির্মাণকালে সৃষ্ট কম্পনের কারণে আশেপাশের ৮টি ভবন ঝুঁকিতে পড়ার কথা ছিল। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে কোন ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হলে সংস্থাটি ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে।[২] ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে দিয়াবাড়িতে লাইনটির ডিপো নির্মাণের কাজ শুরু হয়।[৩] ২০১৭ সালে ডিপোর কাঠামোগত নির্মাণকাজ ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট এবং সিনোহাইড্রোর কাছে অর্পণ করা হয়।[৪] ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সালে ডিপোর কাঠামোগত নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ সালে ডিপোর ভূমি উন্নয়নের কাজ শেষ হয়।[৫] ২০২১ সালে ডিপোর প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণ সম্পন্ন হয়।[৬] ২০২২ সালের জুনে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়।[৭]
বিন্যাস
সম্পাদনাডিপো এলাকায় ওয়ার্কশপ, ওয়াশিং শেড ও স্টোরেজ সহ ৫২টি কাঠামো রয়েছে। ডিপোতে ১৮টি ট্রেন রাখা যায় যেগুলোকে ডিপোতে পৌঁছানোর জন্য উত্তরা উত্তর মেট্রো স্টেশন থেকে একটি ৩০০ মিটার দীর্ঘ ওয়ার্কশপ হয়ে উত্তর দিকে যেতে হবে।[৮] ডিপোতে একটি কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র রয়েছে যেখান থেকে নিয়ন্ত্রকের নির্দেশে লাইনে স্থাপিত রেডিও অ্যান্টেনা ব্যবহার করে ট্রেন চালকের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে ট্রেনগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।[৯] ডিপো এলাকাটিকে সবুজায়নের জন্য গাছ লাগানো হয়েছে।[১০]
মেট্রোরেল প্রদর্শনী ও তথ্যকেন্দ্র
সম্পাদনামেট্রো সেবা সম্পর্কে জনগণের অভিজ্ঞতা বাড়ানোর জন্য জাইকা একটি প্রদর্শনী ও তথ্যকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করেছিল। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পে কর্মরত জাপানি কর্মকর্তাদের স্মৃতি সংরক্ষণ করা যারা হোলি আর্টিজান হামলায় নিহত হয়েছিলেন। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে ডিএমটিসিএল ডিপোর প্রবেশপথের পাশে প্রস্তাবিত কেন্দ্রের জন্য স্থান নির্বাচন করে।[১১] ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রের জন্য একটি নমুনা ট্রেন ঢাকায় পৌঁছায়। কেন্দ্রটি ২০২০ সালের মার্চে উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা ছিল।[১২] পরবর্তীতে তারিখ পরিবর্তন করে জানুয়ারি ২০২২ সাল করা হয়।[১৩] ২৪ জুলাই ২০২২ সালে এমআরটি লাইন-৬ নির্মাণ প্রকল্পে কর্মরত ও হোলি আর্টিজান হামলায় নিহত সাতজন জাপানি কর্মকর্তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রদর্শনী ও তথ্যকেন্দ্রে একটি স্মারক ফলক উন্মোচন করা হয় যা সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উদ্বোধন করেন। ২০২২ সালের আগস্টে জানা যায় যে মেট্রোরেল প্রদর্শনী ও তথ্যকেন্দ্রটি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হতে পারে।[১৪] অবশেষে এটি ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে চালু হয়।[১৫]
বিতর্ক
সম্পাদনা১ মার্চ ২০২৪ সালে ডিএমটিসিএল ডিপোর ৭,৫৮০ বর্গফুটের স্টাফ ক্যান্টিন পরিচালনার উদ্দেশ্যে অপারেটর নিয়োগের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। মার্চে কোম্পানিটি ৳১২,০০০ বার্ষিক ভাড়ায় খন্দকার এন্টারপ্রাইজেসের কাছে দরপত্র দিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে।[১৬] দরপত্র ইস্যুর সংবাদটি সমালোচনার সৃষ্টি করে। তবে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে কোনো আগ্রহী ঠিকাদার পাওয়া না যাওয়ায় ২০২৪ সালের উন্মুক্ত দরপত্রে চূড়ান্ত ঠিকাদারকে কম মূল্যে ক্যান্টিন পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে ডিএমটিসিএলের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক জানিয়েছিল।[১৭] পরে এই সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরীকে আদালত এক মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়।[১৮] জুন মাসে জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে স্টাফ ক্যান্টিনটি অ-বাণিজ্যিক এবং এর ভাড়া গ্রাহক বিবেচনায় যথাযথ।[১৯]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Deal struck for part of metro rail project"। দ্য ডেইলি স্টার। ২৭ মার্চ ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩।
- ↑ "মেট্রোরেলের ডিপো নির্মাণে ঝুঁকিতে আট স্থাপনা"। বিডিনিউজ২৪.কম। ১১ জানুয়ারি ২০১৬। ১৩ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০২৪।
- ↑ ফেরদৌস, ফারহান (৩০ ডিসেম্বর ২০২২)। "মেট্রোরেল নির্মাণে দেশীয় একমাত্র প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম"। নিউজবাংলা২৪.কম। ১৬ মে ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০২৩।
- ↑ "মেট্রোরেলের পথ, স্টেশন, ডিপোর অবকাঠামো নির্মাণে চুক্তি সই"। প্রথম আলো। ৪ মে ২০১৭। ২৪ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ অক্টোবর ২০২৪।
- ↑ "মেট্রোরেল নির্মাণে সাত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান"। বণিক বার্তা। ২৮ ডিসেম্বর ২০২২। ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০২৪।
- ↑ হুদা, নাজমুল (১৬ অক্টোবর ২০২৪)। "মেট্রোরেলের সাবেক এমডি'র আয়েশে গচ্চা সাড়ে সাত কোটি"। মানবজমিন। ৬ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০২৪।
- ↑ ইসলাম, জাহিদুল (৭ জুলাই ২০২২)। "Uttara-Agargaon Metro Rail work nears completion"। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (ইংরেজি ভাষায়)। ৭ জুলাই ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জুলাই ২০২৩।
- ↑ "Metro rail depot nears completion"। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (ইংরেজি ভাষায়)। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১। ২৭ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০২৩।
- ↑ হোসেন, আনোয়ার (২৪ ডিসেম্বর ২০২২)। "প্রযুক্তির চমক মেট্রোরেলে"। প্রথম আলো। ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ডিসেম্বর ২০২২।
- ↑ মিঠু, আরিফুল ইসলাম (২৭ ডিসেম্বর ২০২২)। "মেট্রো রেল ডিপো ও বিভাজকে সবুজায়নের পরিকল্পনা"। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০২৪।
- ↑ সাদিক, মফিজুল (৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯)। "মেট্রোরেল ৬ কিমি দৃশ্যমান, হচ্ছে প্রদর্শনী সেন্টার"। বাংলানিউজ২৪.কম। ৫ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০২৪।
- ↑ "মেট্রোরেলের প্রথম নমুনা কোচ ঢাকায়"। ঢাকা টাইমস। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০। ১৫ আগস্ট ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০২৩।
- ↑ "Metro rail exhibition, info centre to open in January"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ১৭ নভেম্বর ২০২১। ২৪ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০২৩।
- ↑ "সেপ্টেম্বরে খুলতে পারে মেট্রোরেলের প্রদর্শনী ও তথ্যকেন্দ্র"। বাংলা ট্রিবিউন। ২ আগস্ট ২০২২। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০২৪।
- ↑ "Road Transport and Bridges Minister Obaidul Quader along with others offers a munajat after inaugurating Metro Rail Exhibition and Information Centre at Diabari in the capital on Tuesday. Ambassador of Japan to Bangladesh ITO Naoki was present. —SUN PHOTO"। ডেইলি সান (ইংরেজি ভাষায়)। ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২। ৩ জুলাই ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০২৩।
- ↑ "সাড়ে ৭ হাজার বর্গফুট স্টাফ ক্যান্টিন ১ হাজার টাকায় ভাড়া দিয়েছে ডিএমটিসিএল"। বাংলা ট্রিবিউন। ১৬ মার্চ ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০২৪।
- ↑ "সাড়ে ৭ হাজার বর্গফুটের ক্যানটিনের ভাড়া মাত্র ১ হাজার টাকা, যা বললেন মেট্রোরেল ব্যবস্থাপক"। আজকের পত্রিকা। ১৭ মার্চ ২০২৪। ২৪ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০২৪।
- ↑ "১ হাজার টাকায় মেট্রোরেলের ৭৫৮০ বর্গফুট ক্যান্টিন ভাড়া, অনুসন্ধানের নির্দেশ হাইকোর্টের"। দ্য ডেইলি স্টার। ২১ মার্চ ২০২৪। ১৮ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০২৪।
- ↑ "'সৌজন্য ভাড়া' হিসাবে মাসিক ১ হাজার টাকা অযৌক্তিক নয়: তদন্ত কমিটি"। প্রথম আলো। ১০ জুন ২০২৪। ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০২৪।