তুষারকটাহ হল অন্তঃহিমবাহ আগ্নেয়গিরিকে আচ্ছাদনকারী বরফের স্তর। সেগুলি বৃত্তাকার বা আয়তকার হতে পারে। তাদের পৃষ্ঠতলের মাপ কয়েক মিটার থেকে (বরফের মধ্যে গর্ত) শুরু করে এক বা তারও বেশি কিলোমিটার হতে পারে (বাটির আকারে অবনমন)।

২০০৯ সালে মির্ডালসোকুল হিমবাহের কাতলা আগ্নেয়গিরির তুষারকটাহ
২০১১ সালে অস্থিতিশীল অবস্থায় কাতলায় নতুনভাবে গঠিত তুষারকটাহ

বরফ-আগ্নেয়গিরির সঙ্গে তুষারকটাহের অস্তিত্ব দুটি সম্ভাব্য উপায়ে সংযুক্ত: এগুলি অন্তঃহিমবাহ বিস্ফোরণের সময়ে গঠিত হতে পারে বা একটি হিমবাহের ভেতর অবস্থিত অবিচ্ছিন্ন সক্রিয় উচ্চ তাপমাত্রার ভূতাপীয় অঞ্চলের শীর্ষে তৈরি হতে পারে।

উভয় ক্ষেত্রেই, য়োকুলহ্লাপ (হিমবাহে হড়পা বন্যা) সংঘটিত হতে পারে।

তুষারকটাহ গঠন এবং স্থায়িত্ব সম্পাদনা

তুষারকটাহ এবং অন্তঃহিমবাহ বিস্ফোরণ সম্পাদনা

যখন একটি বড় হিমবাহের নিচে কোনও অগ্নুৎপাত ঘটে, উদাহরণস্বরূপ একটি হিমছানির নিচে, এটি সাধারণত শুরু হয় অবাধে নির্গমনশীলপর্যায়ে। উত্তাপে হিমবাহের নিচের বরফ গলে গিয়ে একটি গুহা গঠিত হয় এবং উপাধান লাভা (বালিশের আকারে লাভা) উৎপাদিত হয়। কিছুক্ষণ পরে, বিস্ফোরণটি এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছে যায় যখন বরফের গুহায় চাপ কমে আসে এবং বিস্ফোরণ পরিবর্তিত হয় মহা বিস্ফোরণে। এরপর হাইলোক্লাস্টাইট (সরু লাঠির আকারে জমাট বাঁধা পদার্থ) উৎপাদিত হয় এবং তাপে বরফ গলতে থাকে। এই পর্যায়ে, গুহাপৃষ্ঠের বরফ ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। গুহায় সমকেন্দ্রীয় ফাটল ধরতে শুরু করে করে এবং গুহা নিচের দিকে ভেঙে আসে। এই অবস্থাকে তুষারকটাহ বলা হয়।[১]

যখন বিস্ফোরণ অব্যাহত থাকে, গলিত জলের পরিমান এত বেশি হয়ে যায় যে তুষারকটাহ অভ্যন্তরের দিকে ধসে পড়ে। নিচের জলাধার উন্মুক্ত হয়ে যায় এবং জলাশয় ও বিস্ফোরক লাভা দুটিই ছড়িয়ে পড়ে, গ্যাসের স্রোত এবং ফিনকি দিয়ে হাইলোক্লাস্টাইট বেরোতে শুরু করে। [১] তুষারকটাহ একটি বরফ গিরিখাতে পরিণত হতে পারে, ১৯৯৬ গিয়াল্প বিস্ফোরণে এমনই হয়েছিল। গলিত জল বিস্ফোরণস্থল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরেও তুষারকটাহ বিদ্যমান থাকতে পারে, কিন্তু বিস্ফোরণ এখানেই শেষ হয়ে যায়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, বরফ প্রবাহ এসে আবার তুষারকটাহ কে ভরাট করে দেয় এবং অগ্ন্যুৎপাতের ফলে নির্গত বস্তুগুলি ঠান্ডা হয়ে গেলে একে আর দেখা যায়না।।[২]

অন্তঃহিমবাহ ভূতাপীয় অঞ্চলের শীর্ষে তুষারকটাহ সম্পাদনা

আর একটি ক্ষেত্রে তুষারকটাহ দেখা যায়, সেটি হল ভূতাপীয় অঞ্চলের শীর্ষে। “(…) ম্যাগমা অঞ্চল থেকে জলতাপীয় তন্ত্র উত্তাপ গ্রহণ করে এবং বরফ ক্রমাগত জলে রূপান্তরিত হতে থাকে। এটি হিমবাহের তলায় সঞ্চিত থাকতে পারে যতক্ষণ না এটিতে অবাধে নির্গমনশীল বিস্ফোরণ হয়।”[৩]

কয়েক দশক ধরে এই জাতীয় তুষারকটাহের অস্তিত্বের অনেক উদাহরণ পাওয়া যায় আইসল্যান্ড অঞ্চলে।

বিশ্বজুড়ে তুষারকটাহ সম্পাদনা

আইসল্যান্ড থেকে উদাহরণ সম্পাদনা

 
ভাত্‌নাইয়োকুত্‌লের অন্তরীক্ষ দৃশ্য।
 
কাতলা জ্বালামুখ কুণ্ডতে তুষারকটাহ।

স্কাফটারকাটলার (স্কাফটা কটাহ) সম্পাদনা

ভাত্‌নাইয়োকুত্‌লের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দুটি অন্তঃহিমবাহ হ্রদের উপরে বরফের আচ্ছাদনে দুটি অবনমন দেখা যায়। [৪]

সামগ্রিকভাবে, ভাত্‌নাইয়োকুত্‌ল হিমবাহের (৮.১০০ বর্গ কিমি ২০১৫ সালে) মধ্যে অনেকগুলি কটাহ খুঁজে পাওয়া যায়, যার মধ্যে সবচেয়ে বড়টি বরফ ছানির পশ্চিম অংশে স্কাফটা কটাহ। [৫]

এই তুষারকটাহগুলি "অন্তঃহিমবাহ ভূতাপীয় অঞ্চল গলে তৈরি হয়েছে"। [৬] বরফ গলিত জল একটি হ্রদের আকারে জমা হতে থাকে “কটাহের নিচে যতক্ষণ না প্রতি ২-৩ বছর অন্তর য়োকুলহ্লাপ হয়ে এই জল বার হয়ে যায়” সাধারণত সর্বোচ্চ ২.০০০ ঘন মিটার/সেকেন্ড গতিবেগে।[৫]

২০১৫ সালে একটি অস্বাভাবিক বড় আকারের বন্যা (য়োকুলহ্লাপ) নথিবদ্ধ করা হয়েছিল। পূর্বের স্কাফটা কটাহে প্রায় ৫ বছর ধরে বরফগলা জল জমে ছিল। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে এই জল স্কাফটা নদীতে নির্গত হয়েছিল, প্রবাহের সর্বোচ্চ বেগ ছিল ৩.০০০ ঘন মিটার/সেকেন্ড বা তার বেশি। কটাহটি তখন আংশিকভাবে ভেঙে গিয়ে তার কেন্দ্রস্থলে ১১০ মিটার গভীর পর্যন্ত একটি অবনমন তৈরি হয়েছিল এবং এর সর্বাধিক বেধ ছিল ২.৭ কিমি।[৭]

কাতলা সম্পাদনা

আইসল্যান্ডের বিখ্যাত তুষারকটাহ দেখতে পাওয়া যায় কাতলা আগ্নেয় জ্বালামুখে।

আইসল্যান্ডের দক্ষিণ প্রান্তে পূর্ব আগ্নেয় অঞ্চলের দক্ষিণ অংশে মির্ডালসোকুল হিমবাহ ছানির নীচে অবস্থিত কাতলা একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালামুখ কুণ্ড এবং কেন্দ্রীয় আগ্নেয়গিরিহলোসিনের সময় এখানে ১৫০-২০০ অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল এবং এর মধ্যে ১৭টি ঘটেছিল অষ্টম শতকে আইসল্যান্ডের স্থিতিকালীন সময়ে। বেশিরভাগ অগ্ন্যুৎপাতের উৎস ছিল বরফে ঢাকা জ্বালামুখগুলি। সর্বশেষ বলার মত বড় বিস্ফোরণটি ঘটেছিল ১৯১৮ সালে এবং একটি য়োকুলহ্লাপ শুরু হয়েছিল যার আনুমানিক শীর্ষ প্রবাহ বেগ ছিল ৩০০.০০০ ঘন মিটার/ সেকেন্ড। [৮]

জ্বালামুখের মধ্যে ১২-১৭টি তুষারকটাহ হল ভূনিকটস্থ ম্যাগমা আধারের অধি- এবং অন্তঃহিমবাহের অদ্ভুত প্রকাশ।[৮] এমনকি কে. শারার ব্যাখ্যা করেছেন যে "কুড়িটি স্থায়ী এবং ৪টি আধা-স্থায়ী তুষারকটাহ মির্ডালসোকুলের তলদেশে দেখতে পাওয়া যায়, যা থেকে বোঝা যায় অন্তর্নিহিত জ্বালামুখে ভূতাপীয়ভাবে সক্রিয় অঞ্চল আছে” "[৯]

তাদের গভীরতা ১০-৪০ মিটার এবং প্রস্থ ০.৬ - ১.৬ কিমি। ১৯৫৫, ১৯৯৯ এবং ২০১১ সালে, কিছু নতুন তুষারকটাহ থেকে, ছোট থেকে মাঝারি আকারের য়োকুলহ্লাপের উদ্ভব হয়েছিল। তবে এটি এখনও আলোচনার বিষয় যে এই অগ্ন্যুৎপাতগুলি তুষারকটাহের নিচের ভূ-তাপীয় অঞ্চল উত্তপ্ত হবার কারণে হয়েছিল কিনা।[৮]”ভূতাত্ত্বিক তাপের উৎপাদন কয়েক শতাধিক মেগাওয়াট।"[১০]

অন্যান্য পরিবেশে তুষার কটাহ সম্পাদনা

 
চতুঃশিখর পর্বত, আলাস্কা

অবশ্যই তুষারকটাহ শুধুমাত্র আইসল্যান্ডেই তৈরি হয় তা নয়, এমন অনেক অন্যান্য স্থানে যেখানে অন্তঃহিমবাহ আগ্নেয়গিরির সক্রিয় রয়েছে, সেখানেও এদের দেখতে পাওয়া যায়। এর মধ্যে আছে আলাস্কা (রিডাউট পর্বত, স্পার পর্বত)।[১১]

তুষারকটাহ এবং আগ্নেয়গিরি পর্যবেক্ষণ সম্পাদনা

তুষারকটাহগুলির গভীরতা ও বেধ বৃদ্ধির (কাতলা আগ্নেয়গিরি) সঙ্গে সঙ্গে অঞ্চলগুলিতে ভূমিকম্পের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জ্বালামুখগুলিকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। [১০]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. S. E. Ackiss: Investing the Mineralogy and Morphology of Subglacial Volcanoes on Earth and Mars. Dissertation. Department of Earth, Atmospheric, & Planetary Sciences West Lafayette, Indiana May 2019. 28 August 2020.
  2. Pall Einarsson, Bryndis Brandsdottir, Magnus Tumi Gudmundsson, Helgi Bjornsson, Karl Gronvold and Freysteinn Sigmundsson: Center of the Icelandic Hospot experiences Volcanic Unrest. Eos, Vol. 78, No. 35, September 2, 1997 Retrieved 30 August 2020.
  3. Helgi Björnsson: Subglacial lakes and jökulhlaups in Iceland. Global and Planetary Change 35 (2002) 255–271 Retrieved 31 August 2020.
  4. For a map see: I. Galeczka, etal.: The effect of the 2002 glacial flood on dissolved and suspended chemical fluxes in the Skaftá river, Iceland. Journal of Volcanology and Geothermal Research 301 (2015) 253–276. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৭ মে ২০২১ তারিখে Retrieved 31 August 2020.
  5. I. Galeczka, etal.: The effect of the 2002 glacial flood on dissolved and suspended chemical fluxes in the Skaftá river, Iceland. Journal of Volcanology and Geothermal Research 301 (2015) 253–276. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৭ মে ২০২১ তারিখে Retrieved 31 August 2020.
  6. S. Jónsson etal.: Effects of Subglacial Geothermal Activity Observed by Satellite Radar Inferometry. Geophysical Research Letters, Vol. 25, No.7, pages 1059-1062, April 1, 1998. Retrieved 30 August 2020.
  7. Ultee L., Meyer C., Minchew B. (2020). Tensile strength of glacial ice deduced from observations of the 2015 eastern Skaftá cauldron collapse, Vatnajökull ice cap, Iceland. Journal of Glaciology 1–10. https://doi.org/10.1017/jog.2020.65
  8. McCluskey, O (2019) Constraining the characteristics of a future volcanogenic Jökulhlaup from Katla, Iceland, through seismic analysis and probabilistic hydraulic modelling, Master’s thesis, School of Earth and Environmental Sciences, University of Portsmouth
  9. K. Scharrer: Monitoring ice-volcano interactions in Iceland using SAR and other remote sensing techniques. Dissertation der Fakultät für Geowissenschaften der Ludwig-Maximilians-Universität München. 4 Sept. 2007 Retrieved 30 August 2020.
  10. Magnús T. Guðmundsson, etal.: Geothermal activity in the subglacial Katla caldera, Iceland, 1999–2005, studied with radar altimetry. Annals of Glaciology 45 2007. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ আগস্ট ২০২০ তারিখে Retrieved 30 August 2020.
  11. J. Barr. Volcanic impacts on modern glaciers: a global synthesis. Preprint. Manchester University. (2018)