তুলাইব ইবন উমাইর (মৃত্যু- ১৩ হিজরি) মুহাম্মদ এর একজন খ্যাতনামা সাহাবা। তিনি রাসুল এর মামাত ভাই ছিলেন ও রাসুলের ফুফু আরওয়া এর পুত্র ছিলেন।[১]

নাম ও বংশ পরিচয় সম্পাদনা

তুলাইব ইবনে উমাইর এর মুলনাম নাম তুলাইব ও ডাকনাম আবু আদী । তার পিতার নাম উমাইর ইবনে ওয়াহাব এবং নাম আরওয়া বিনতে আব্দুল মুত্তালিব,যিনি রাসূল এর ফুফু ছিলেন । তুলাইব ইবনে উমাইর কুরাইশ বংশের বনী-আবদী শাখার সন্তান ।[২]

ইসলাম গ্রহণ সম্পাদনা

তুলাইবের ইসলাম পূর্ব জীবন সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না । তবে তিনি ইসলামের প্রাথমিক পর্বেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তার ইতিহাস পাওয়া যায় । আল-হারেস আত-তাঈমী বলেন, রাসূলুল্লাহ মক্কার দারুল আরকাম বা আরকামের গৃহে অবস্থানকালে ‘তুলাইব’ ইবন উমাইর ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণের পরে তার মা আরওয়া বিনতে আব্দুল মুত্তালিব ইসলাম গ্রহণের জন্য অনুরোধ করে পরে তার মা ইসলাম গ্রহণ করে ।[৩][৪]

মক্কায় অবস্থান সম্পাদনা

ইসলাম গ্রহণকারী সবাই কুরাইশদের দ্বারা কম-বেশি শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার হয়েছিল মক্কায় অবস্থানকালে । একদিন তুলাইব ও হাতিব ইবনে আমর মক্কার ‘আজইয়াদে আসগার’ এলাকায় নামায আদায় করছইলেন। মক্কার তৎকালীন দুই অত্যাচারী ইবনুল আসদাইবনুল গায়তালা তা দেখে ফেলে এবং তারা তুলাইব ও হাতেবের ওপর পাথর নিক্ষেপ করে আক্রমণ চালায় । হাতেব ও তুলাইব প্রায় এক ঘণ্টা যাবত সে আক্রমণ প্রতিহত করেন এবং প্রাণ বাঁচিয়ে কোন রকমে পালিয়ে যান।[৫]

হাবশায় হিজরত সম্পাদনা

কিন্তু অত্যাচারের চরম মাত্রায় বেড়ে তিনি হাবশাগামী ২য় দলটির সাথে হাবশায় হিজরত করেন। সেখানে কিছুকাল সুস্থভাবে অবস্থান করছিলো । কিন্তু কিছুদিন পরে তারা একটি গুজব শুনে যে, মক্কাবাসীদের সকলে ইসলাম গ্রহণ করেছে । এমন গুজব শুনে যারা হাবশা থেকে মক্কায় ফিরে আসেন তাদের মধ্যে তুলাইবও ছিলেন।[৬]

মদিনায় হিজরত সম্পাদনা

এরপর তুলাইব মক্কাতেই কিছুকাল অবস্থান করেন । তারপর আবার মদীনায় হিজরত করেন। মদীনায় তিনি হযরত আবদুল্লাহ্ ইবন সালামা আল-আজলানীর অতিথি হন। এবং নাবী মুনজির ইবন আমর আস-সায়েদীর সাথে তার ইসলামী ভ্রাতৃ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে দেন ।

যুদ্ধে অংশগ্রহণ সম্পাদনা

মুহাম্মাদ ইবন উমারেরতাবারীর বর্ণনা মতে হযরত তুলাইব বদর যুদ্ধে যোগদান করেন। অবশ্য মূসা ইবন উকবা,মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক ও আবূ মাশার বদর যুদ্ধে যাঁরা যোগদান করেন তাদের নামের তালিকায় তুলাইবের নামটি উল্লেখ করেননি।[৩]

বদর যুদ্ধের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তার কর্মকান্ডের আর কোন বর্ণনা ইতিহাসে পাওয়া যায়না ।তবে ধারণা করা হয় তিনি আরো যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছেন ।

মৃত্যু সম্পাদনা

১৩ হিজরির জামাদিউল উলা মাসে আজনাদাইন যুদ্ধে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। তবে মুসয়াব ইবন আবদিল্লাহ বলেনঃ তিনি ইয়ারমুক যুদ্ধে শহীদ হন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর।[৭]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. লেখকঃ ড. মুহাম্মাদ আবদুল মাবুদ। (বইঃ আসহাবে রাসূলের জীবনকথা – দ্বিতীয় খন্ড) 
  2. [আনসাবুল আশরাফ-১/৮৮] 
  3. [তাবাকাত-৩/১২৩] 
  4. [আল ইসাবা - ২/২৩৩-২৩৪] 
  5. [আনসাবুল আশরাফ-১/১১৭] 
  6. [সীরাতু ইবন হিশাম-১/৩২৪, ৩৬৬] 
  7. [তাবাকাত-৩/১২৪, আল-ইসতীয়াব]