তুবড়ি
এক বা একাধিক অবদানকারী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে এই নিবন্ধের বিষয়বস্তু উল্লেখযোগ্যতার সাধারণ নির্দেশাবলী অনুসরণ করে নাই। (এপ্রিল ২০১৪) |
তুবড়ি এক প্রকার আতশবাজি[১] যা নানান উৎসবে বিশেষ করে কালীপূজোর রাতে ফোটানো হয়। একটি গোলকাকৃতি ফাঁপা পোড়ামাটির খোলের মধ্যে স্তরে স্তরে বারুদ দিয়ে ঠাসা থাকে।তুবড়ির একটি সমতল ভিত্তি ও শীর্ষে একটি গর্ত থাকে।।[২] তুবড়ি জ্বালালে পরে তার থেকে আগুনের স্ফুলিঙ্গ ক্রমশ উপরে উঠতে থাকে এবং চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কালীপূজোর রাতে পশ্চিমবঙ্গের নানা স্থানে তুবড়ি প্রতিযোগিতা হয়।[৩]
তুবড়ি তৈরীর কলা কৌশল
সম্পাদনাবাজারে বিভিন্ন বছরে তুবড়ির মশলা বিভিন্ন বিশুদ্ধতায় পাওয়া যায়। ফলে তার থেকে তুবড়ি বানাতে হলে মশলাগুলোর আনুপাতিক ওজন দরকার মত একটু বদল করতে হয়। সোরা কিনে সোজা ব্যবহার করলে বা পরিশোধন করে নিলে তুবড়ির তেজের তারতম্য হয়। কেরোসিন দিয়ে ঠাসলে তুবড়ির তেজ বেড়ে যায়, খোল ভালো না হলে ফেটেও যেতে পারে। লোহাচুর কম বা বেশি দিলে কিম্বা লোহাচুরের ছোট বা বড় দানার আনুপাতিক অনুযায়ী তুবড়ির ঝাড়ের ধরনটাই পাল্টে যায়। এখানে একটা গড়পরতা হারের মিশেল দেখা যায়।
প্রক্রিয়া ও উপাদান
সম্পাদনাতুবড়ি উৎপাদনের জন্য লোহা, সোরা, গন্ধক ও কাঠকয়লার প্রয়োজন হয়। লোহা ফুলকি সৃষ্টি করতে, গন্ধক তাপ বৃদ্ধি করতে, সোরা খোলের মধ্যে উচ্চচাপ সৃষ্টি করে যাতে জ্বলন্ত লোহার ফুলগুলো আগ্নেয়গিরির লাভার মত সজোরে উৎক্ষিপ্ত হয় এবং কাঠকয়লা আগুন দীর্ঘস্থায়ী হতে সাহায্য করে। সোনালীসহ তুবড়ি বিভিন্ন প্রকার রঙের হয়ে থাকে। অ্যালুমিনিয়াম, শাঁখচুন, মোমছাল, পটাশ (Potash,KClO3), বেরিয়াম (Barium), স্ট্রন্শিয়াম (Strontium), ইত্যাদী নানাপ্রকার রাসায়নিক সহযোগে নানা রকম রঙের তুবড়ি তৈরি করা হয়।
উপাদান : ১ কিলো সোরা সহযোগে যা বাজি হয়, তার হিসাব দিলাম | বাজার থেকে এইগুলো কিনে নাও, এক কিলো সোরা দেড় কিলো লোহাচুর | লোহা কাটার দোকান থেকে পেলে ২ কিলো এন ৪০০ গ্রাম গন্ধক ৪০০ গ্রাম কাঠ কয়লা ১০ টা পোয়া খোল বা ২০ টা অধপোয়া খোল বা ৪০ টা ছটাক খোল পারস্পরিক মাপ সমানুপাতিক রেখে মশলা কম বা বেশি করে নেওয়া যেতে পারে।
খোল : বাজারে মশলা বিক্রি হয় কিলোতে, কিন্তু তুবড়ির খোল বিক্রি হয় সেই পুরনো পোয়া, ছটাক মাপে | খোল নানা মাপে পাওয়া যায় - ছটাক, আধ পোয়া, পোয়া | ০.৯৩৩১০ কিলো = ১ সের = ৪ পোয়া = ১৬ ছটাক। ১ কিলো সোরা (পরিশোধিত হলে ৮০০-৯০০ গ্রাম) দিয়ে মোটামুটি ২ কিলো মশলা তৈরী হবে | তার জন্য চাই সম পরিমাণ খোল | মানে, ২ কিলো মশলা দিয়ে ৯ / ১০ টা পোয়া খোল বা ৩৫ / ৪০ টা ছটাক খোল ভরা যাবে।
মশলা : লোহাচুরের তুবড়ি থেকে সোনালী রঙের ফুলের ফোয়ারা বেরয়, অনেক দূর ওঠে আবার মাটি পর্য্যন্ত নেমে আসে।
লোহাচুর : কেনা ১ কিলো লোহাচুরের জন্য ৬০০ থেকে ৮০০ গ্রাম পর্য্যন্ত ছাঁকা লোহাচুর ব্যবহার হতে পারে। লোহাকে আর্দ্র বাতাসে মরচে পড়া থেকে বাঁচাতে অল্প কেরোসিন ভালো করে মাখিয়ে দুই ভাঁজ polythene-এ মুড়ে রেখে দিতে হয়। দুটো চালুনিতে ছেঁকে বড়ো দানা, ছোট দানা আলাদা করতে হয়। এবার, বড়ো দানা আর ছোট দানা ১:১, ১:২ আর ১:৩ অনুপাতে অল্প অল্প মিশিয়ে তিনটে ছোট ছোট স্তুপ করে, আবার আগের মত হালকা কেরোসিন মাখিয়ে ডবল করে রাখা দরকার।
সোরা : বাজার থেকে কিনে গুঁড়ো করে নিলেও চলে। বাজারের সোরায় কিছু ময়লা থাকে। সেই সোরা শোধন করে নিলে আরও ভালো হয়, তার তেজ বাড়ে। ১ কিলো সোরা একটা বড়ো ডেকচিতে বসিয়ে সিকি লিটার মত জল দিতে হয়। আগুনে বসিয়ে কাঠের হাতা দিয়ে নেড়ে নেড়ে গরমে গুলতে হয়। প্রয়োজনে একটু একটু করে জল বাড়াতে হয়, যতক্ষণ না পর্য্যন্ত পুরো সোরাটা গুলে যায়। যথা সম্ভব কম জলে সোরা গুলতে হয়। গোলা সোরাটা নামিয়ে ঠান্ডা হতে দিতে হয়। এতক্ষণে সোরার গাদ বা ময়লাটা ভেসে উঠবে। একটা ঘন জালের ছাঁকনি দিয়ে আস্তে করে উপর থেকে গাদটা চেঁছে তুলে ফেলে দেওয়া দরকার। ঠান্ডা হলে সোরা আস্তে আস্তে কেলাসিত (crystalize) আর শুদ্ধ হয়ে যেতে থাকবে। শেষে অল্প জল পড়ে থাকবে, সেটা ডেকচি কাত করে আলাদা করে নিতে হয়। গাদ আর জল বেরিয়ে গিয়ে সোরা প্রায় ১০০-২০০ গ্রাম কমে যাবে। কেলাসিত সোরা হালকা আঁচে শুকিয়ে নিতে হয়।এর পরে প্রথমে হামন দিস্তায় গুঁড়িয়ে পরে শিলে বেটে নিতে হয়। ভালো গুঁড়ো হলেই চলবে, মিহি হবার দরকার নেই। গুঁড়ো সোরাটা বাকি মশলায় মেশাবার আগে পর্য্যন্ত সর্বদা চড়া রোদে দিয়ে খট খটে শুকনো রাখা দরকার।
গন্ধক : বাজারে চেনা দোকানদারের কাছে যে টুকরো বা গুঁড়ো গন্ধক পাওয়া যায় তা সাধারণত ভালই হয়। টুকরো গন্ধক হলে হামন দিস্তা ভালো করে গুঁড়ো করে নিতে হবে। মোটা কাপড়ে ছেঁকে ফেলতে হবে। গন্ধক একেবারে talcum powder-এর মত মিহি হতে হবে। একটা কাচ বা চিনামাটির পাত্রে ঢেলে রোদে রাখতে হয়। রোদ পড়ে গেলে, পরের দিন রোদ ওঠা পর্য্যন্ত পাত্রটার মুখ বন্ধ করে রাখতে হয়। ছাঁকার পর প্রায় ৩৫০ গ্রাম মিহি গুঁড়ো পাওয়া যাবে।
কাঠ কয়লা : কাঠ কয়লা হালকা হতে হবে। বাজির বাজারে শুধু সবচেয়ে হালকা কুল কাঠের কয়লাই পাওয়া যায়। যারা মফঃস্বল বা গ্রামাঞ্চলে কুল কাঠ যোগাড় করে কয়লা বানিয়ে নেওয়া যেতে পার। নিতান্ত না পেলে সেগুন কাঠের কয়লা চলতে পারে। কাঠকয়লা গুঁড়ো করে আর ছেঁকে একেবারে talcum powder-এর মত মিহি করে নিতে হয়। ছাঁকার পর প্রায় ২৫০-৩০০ গ্রাম মিহি গুঁড়ো পাওয়া যাবে।
মাটি : তুবড়ির তলাটা বন্ধ করতে ১ কিলো মত এঁটেল মাটি নিয়ে শুকিয়ে, ভেঙ্গে গুঁড়ো বা প্রায় গুঁড়ো করে নিতে হবে। তুবড়ি ঠাসার আগে পর্য্যন্ত মাটি সর্বদা চড়া রোদে দিয়ে খট খটে শুকনো রাখতে হয়। শেষে তুবড়ি মাটির উপর রেখে ঠাসতে হয়, তাই অনেকটা মাটি বেশি রাখতে হয়।
সূত্র
সম্পাদনা- ↑ "তুবড়ি"। বাংলা ডিকশনারি। এভারগ্রীন বাংলা। ৩০ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০১৪।
- ↑ Jacob, Hemant (১ নভেম্বর ২০১৩)। "600-year-old Dakat Kali temple still a crowd puller ?"। The Statesman। Kolkata। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০১৪।
- ↑ Banerjee, Sudeshna (৮ নভেম্বর ২০০২)। "Space crunch, ban take sparkle off tubri tale"। The Telegraph। Kolkata। ২৫ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০১৪।